রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পারিবারিক জীবন
-আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*
(১৫তম কিস্তি)
(জুলাই ২০২১ সংখ্যার পর)
নাতি-নাতনিদের সাথে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আচরণ
নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যেমন সাতজন সন্তান ছিল, তেমনি সাতজন নাতি-নাতনিও ছিল। তাঁর নাতি-নাতনিরা হলেন-
১. হাসান ইবনু আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) : তিনি লোকদের মধ্যে সর্বাধিক রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাদৃশ্যপূর্ণ ছিলেন। তিনি ছিলেন আলী ইবনু আবী তালিব ও ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র। তিনি হিজরী তৃতীয় বর্ষে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৪৯ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল প্রায় সাত বছর।
২. হুসাইন ইবনু আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) : তিনি ‘আলী ও ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর দ্বিতীয় সন্তান ছিলেন। তিনি চতুর্থ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৬১ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
৩. উম্মে কুলসূম বিনতে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) : তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বিবাহ করেন। তাঁর গর্ভে যায়েদ ইবনু ওমর ও রুক্বাইয়্যাহ জন্মগ্রহণ করেন। উম্মে কুলসূম ও তাঁর ছেলে যায়েদ ৭৫ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন।
৪. যয়নব বিনতে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) : তিনি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জীবদ্দশায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁকে তাঁর চাচাতো ভাই আব্দুল্লাহ ইবনু জা‘ফর বিবাহ করেন ও তাঁর ঔরস থেকে সন্তান জন্ম লাভ করে। তাঁর সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে থাকাবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। আব্দুল্লাহ ইবনু জা‘ফর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ঔরস থেকে যয়নব (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর অনেকগুলো সন্তান জন্ম লাভ করেছিল।
৫. আব্দুল্লাহ ইবনু ওছমান ইবনু ‘আফ্ফান (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) : তিনি রুক্বাইয়্যাহ বিনতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পুত্র ছিলেন। তিনি হাবশায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছয় বছর বেঁচে ছিলেন।
৬. উমামাহ বিনতে আবিল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) : তিনি যয়নব বিনতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কন্যা ছিলেন। ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর মৃত্যুর পর তাকে আলী ইবনু আবী তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বিবাহ করেন।
৭. আলী ইবনু আবিল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) : তিনি ছিলেন উমামাহ বিনতে যয়নব-এর ভাই। তিনি মৃত্যুবরণের আগে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্নেহভাজন হওয়ার সুযোগ লাভ করেন।
অনুরূপভাবে ফাতেমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ব্যতীত অন্য আর কারো ঔরস থেকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন নাতি-নাতনি ছিল না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নাতি হাসান ও হুসাইনের মাধ্যমেই শুধু তাঁর বংশ বিস্তার লাভ করেছিল। আর হাসান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর দিকে সম্পৃক্ত করে তাঁর বংশধরকে ‘হাসানী’ এবং হুসাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর দিকে সম্বোধন করে তার বংশধরকে বলা হয় ‘হুসাইনী’।[১]
নাতি-নাতনিদের সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আচরণ ছিল খুবই নরম, কমল ও মহানুভবতাপূর্ণ। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন মহান পিতৃত্বের ক্ষেত্রে একক দৃষ্টান্ত।
নাতি-নাতনিদের সাথে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আচরণে অনেক দয়া ও মহানুভবতাপূর্ণ মানবিক গুণাবলীর সমাবেশ ঘটেছিল। তিনি পরম আদরে তাদের যতœ নিতেন। এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বংশে কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করলে, তিনি তার ডান কানে আযান দিতেন; যাতে সেই সন্তানের দুনিয়াতে শোনা সর্বপ্রথম কথা হয় আল্লাহর মহিমা ও বড়ত্বের।
عَنْ أَبِيْ رَافِعٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَذَّنَ فِيْ أُذُنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ حِيْنَ وَلَدَتْهُ فَاطِمَةُ بِالصَّلَاةِ.
আবূ রাফি‘ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) যখন আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর পুত্র হাসান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে প্রসব করলেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে তার (হাসানের) কানে ছালাতের আযানের ন্যায় আযান দিতে দেখেছিলাম।[২] এজন্য অনেক আলেমই মুস্তাহাব মনে করেন যে, যখন কোন সন্তান জন্মগ্রহণ করবে, তখন তার কানে আযান দেয়া হবে, যাতে শয়তান তার থেকে বিতাড়িত হয় এবং তার শোনা প্রথম কথা যেন আল্লাহর যিকির হয়।
ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া সন্তানের কানে আযান দেয়ার রহস্য সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলাই অধিক অবগত। তবে এর মাধ্যমে সর্বপ্রথম মানুষের কানে মহান প্রতিপালকের বড়ত্ব ও সম্মান এবং যার মাধ্যমে সে ইসলামের মধ্যে প্রবেশ করে সেই কালেমায়ে শাহাদতের বাণী পৌঁছানো উদ্দেশ্য। এটি হল মানুষের পৃথিবীতে আগমনের সময়ে ইসলামের মৌলিক বিষয়ের তালক্বীন দেয়া, যেভাবে পৃথিবী থেকে প্রস্থানের সময়ে তালক্বীন দেয়া হয়। অন্তরে আযানের প্রভাব পৌঁছানোর বিষয়টি অনস্বীকার্য, যদিও তা বাস্তবে অনুভব করা যায় না। এর মধ্যে আরো উপকারিতা রয়েছে, যেমন- আযানের বাক্য শুনে শয়তানের পলায়ন করা... এভাবে আযান শ্রবণ শয়তানকে দুর্বল করে দেয় এবং সেই ব্যক্তির সাথে সংযুক্ত হওয়ার শুরুতেই আযান শয়তানকে রাগান্বিত করে তোলে’।[৩]
নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাতি-নাতনিদেরকে তাহনীক করাতেন
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا زَوْجِ النَّبِيِّ ﷺ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ يُؤْتَى بِالصِّبْيَانِ فَيُبَرِّكُ عَلَيْهِمْ وَيُحَنِّكُهُمْ.
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে শিশুদেরকে আনা হত। তিনি তাদের জন্য বরকত ও কল্যাণের দু‘আ করতেন এবং ‘তাহনীক’ (কিছু চিবিয়ে মুখে ঢুকিয়ে দেয়া) করাতেন।[৪]
(التحنيك) অর্থ হল, খেজুর বা অনুরূপ কিছু চিবিয়ে শিশুর মুখে দেয়া। যদি খেজুর ছাড়া অন্য কিছু দ্বারাও তাহনীক করা হয়, তবুও তাহনীক হয়ে যাবে। তবে খেজুর দিয়ে তাহনীক করা উত্তম।[৫] অর্থাৎ মিষ্টান্ন জাতীয় খাবার নবজাতকের জন্য খুবই উপযোগী।
‘হাইয়াতুল ই‘জাযুল ইলমী’-এর সদস্য ড. মুহাম্মাদ আলী আল-বার খুব গুরুত্বের সাথে বলেন যে, ‘নিশ্চয় আধুনিক বিজ্ঞান নবজাতক শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে তাহনীকের বিধানকে খুবই উপকারী হিসাবে প্রমাণ করেছে এবং এর চমৎকার ইলমী ব্যাখ্যা দিয়েছে’। অতঃপর তিনি আরো বলেন, ‘তাহনীকের ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, খেজুর অথবা মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারই সর্বপ্রথম শিশুর পেটে প্রবেশ করাতে হবে’।
আজ চৌদ্দশ’ বছর পর আধুনিক বিজ্ঞান তাহনীকের হিকমাহ প্রমাণ করেছে। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, দু’বছরের দুধের সন্তানের সাথে নি¤েœাক্ত দু’টির যেকোন একটি ঘটনা ঘটলে সে মৃত্যুবরণ করবে; রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে গেলে অথবা ঠা-া আবহাওয়ার কারণে শরীরের তাপমাত্রার লেভেল অস্বাভাবিক হারে কমে গেলে। এক্ষেত্রে কখনো মায়ের কারণে রক্তের গ্লুকোজের লেভেল কমে যেতে পারে, যাতে অনেক বিপদজনক রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন, শিশুর দুধপানে অনীহা, মাংসপেশী শিথিল হয়ে যাওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস থেমে যাওয়া, শরীর নীল বর্ণ ধারণ করা ইত্যাদি।
এছাড়াও শিশুর বৃদ্ধি বন্ধ হওয়া ও স্থূলবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়ার মত শরীরে নতুন নতুন নানান জটিল উপসর্গ দেখা দিতে পারে। এর চিকিৎসা খুবই সহজ। তাহল, গ্লুকোজ জাতীয় মিষ্টান্ন পানিতে মিশিয়ে মুখে অথবা শিরায় প্রবেশ করানো। এই প্রক্রিয়া তাহনীকের মধ্যেও বিদ্যমান। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, তাহনীকের মধ্যে শিশু মুখের জিহ্বা ও দুই চোয়াল নাড়ায়, যার মাধ্যমে নবজাতক তার মায়ের স্তন চোষার জন্য প্রস্তুত হয়।[৬]
অপরদিকে আজওয়াহ বরকতপূর্ণ ফল, যার মূল বীজ জান্নাত থেকে নাযিল হয়েছে। হাদীছে এসেছে,
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ العَجْوَةُ مِنَ الجَنَّةِ وَفِيْهَا شِفَاءٌ مِنَ السُّمِّ.
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আজওয়া হল জান্নাতী খেজুর। এতে আছে বিষের প্রতিষেধক।[৭] কিন্তু এই খেজুর দুনিয়ায় নাযিল হওয়ার পর নিঃসন্দেহে তার গুণাগুণ নষ্ট হয়ে গেছে। তাই দুনিয়ার এই খেজুর জান্নাতের খেজুর নয়।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নাতি-নাতনিদের ‘আক্বীকা দিয়েছিলেন
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ عَقَّ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عَنِ الْحَسَنِ وَالْحُسَيْنِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا بِكَبْشَيْنِ كَبْشَيْنِ.
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান এবং হুসাইনের আক্বীক্বায় দু’টি করে বকরী যব্হ করেন।[৮]
‘আক্বীক্বা
‘আক্বীক্বা হল, নবজাতকের জন্মের পর তার উদ্দেশ্যে যে পশু যব্হ করা হয়। ছেলে শিশুর জন্য দু’টি ছাগল এবং মেয়ে শিশুর জন্য একটি ছাগল। ‘আক্বীক্বার অনেক উপকারিতা রয়েছে। এটি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করার শামিল। ‘আক্বীক্বার মধ্যে রয়েছে বদান্যতা এবং এটি নবজাতককে বন্ধনমুক্ত করে। আর এটি অসম্ভব নয় যে, ‘আক্বীক্বা নবজাতকের সুন্দরভাবে বেড়ে উঠা, স্থায়ীভাবে তার নিরাপদে থাকা এবং শয়তানের খারাপী থেকে হেফাযতে থাকার একটি অন্যতম কারণ।[৯]
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আক্বীক্বাকে সপ্তম দিন পর্যন্ত বিলম্বিত করতেন
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ عَقَّ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ عَنْ حَسَنٍ وَحُسَيْنٍ يَوْمَ السَّابِعِ وَسَمَّاهُمَا.
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান ও হুসাইনের পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে ‘আক্বীক্বা করেছিলেন এবং তাদের নামকরণ করেছিলেন।[১০]
সপ্তম দিনে ‘আক্বীক্বা করা সুন্নাত। যখন শিশু শনিবারে জন্মগ্রহণ করবে, তখন পরবর্তী শুক্রবার দিন তার পক্ষ থেকে ‘আক্বীক্বা করা হবে। অর্থাৎ জন্মগ্রহণের বারের আগের দিন। এভাবে নবজাতক যখন বৃহস্পতিবার দিনে জন্মগ্রহণ করবে, তখন পরের বুধবার দিন ‘আক্বীক্বা করতে হবে; এটিই ‘আক্বীক্বার বার নির্ণয়ের নিয়ম।[১১] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, اَلغُلَامُ مُرْتَهَنٌ بِعَقِيْقَتِهِ يُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ السَّابِعِ وَيُسَمَّى ‘আক্বীক্বার সাথে শিশু বন্ধক থাকে। তার পক্ষ থেকে সপ্তম দিনে পশু যব্হ করা হবে এবং তার নাম রাখা হবে।[১২]
কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবজাতকের নাম তার জন্মের দিনেও রাখতেন। যেমন একদা তিনি বলেন, ‘দিবাগত রাতে আমার একটি সন্তান জন্মগ্রিহণ করেছে, আমি আমার পিতা ইবরাহীমের নামে তার নামকরণ করেছি’।[১৩]
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নবজাতকের মাথা মু-নের নির্দেশ দিতেন এবং মাথার চুল সমপরিমাণ চাঁদি ছাদাক্বাহ করার নির্দেশ দিতেন
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কৃতদাস আবূ রাফে‘ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নিশ্চয় হাসান ইবনু আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন তার মাতা ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তার পক্ষ থেকে দু’টি ছাগল ‘আক্বীক্বা করার ইচ্ছা করলে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘তুমি তার পক্ষ থেকে ‘আক্বীক্বা কর না, বরং তুমি তার মাথার চুল মু-ন করে দাও এবং চুলের সমপরিমাণ চাদি আল্লাহর রাস্তায় ছাদাক্বাহ করে দাও’। এরপর হুসাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) জন্মগ্রহণ করলে ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) অনুরূপ কাজ করেছিলেন।[১৪] এখানে ফাতিমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তি (لا تعقي عنه) ‘তুমি তার পক্ষ থেকে ‘আক্বীক্বা কর না’ দ্বারা উদ্দেশ্য হল, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসানের ‘আক্বীক্বা নিজের পক্ষ থেকে আদায় করার ইচ্ছা করেছিলেন।
আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান ও হুসাইনের জন্মের সপ্তম দিনে তাদের মাথা মু-ন ও চুলের সমপরিমাণ চাদি ছাদাক্বা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[১৫]
নবজাতকের মাথা মু-ন করা খুবই উপকারী। আধুনিক বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে, শিশুর মাথা মু-নের দ্বারা তার মাথার চুলের গোড়া ফেটে যায়, যা তার নতুন নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আজ শিশুর মাথা মু-নের পর জা‘ফরান দ্বারা তার মাথা মাসাহ করে দেয়া একটি পরিত্যক্ত সুন্নাতে পরিণত হয়েছে, যা আজকের সময়ে খুব কম মানুষই আদায় করে থাকে।
আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তারা জাহেলী যুগে যখন কোন শিশুর ‘আক্বীক্বা করত, তখন ‘আক্বীক্বার রক্ত দিয়ে তার কাপড়ে খিযাব লাগাত। আর যখন শিশুর মাথা মু-ন করত, তখন মু-নকৃত চুলকে মাথার উপরেই রেখে দিত। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘তোমরা রক্তের জায়গায় খালুক সুগন্ধি ছড়িয়ে দাও’।[১৬]
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শিশুদের জন্য উত্তম নাম চয়ন করতেন
প্রত্যেকের নামকরণের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উত্তম নাম চয়ন করতেন। এমনকি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কারো নাম অসুন্দর হলে তা পরিবর্তন করে সুন্দর নাম রাখতেন। আর নিশ্চয় পিতার উপর সন্তানের হক্ব হল, পিতা সন্তানের জন্য উত্তম নাম চয়ন করবেন। অবশ্যই তিনি অপরিচিত ও শিথিল প্রকৃতির নাম এবং মন্দ ও অপসন্দনীয় নাম রাখা থেকে বিরত থাকবেন।[১৭]
নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোন এক নাতি তাঁর কোলে পেশাব করে দিলেও তিনি রাগান্বিত হননি
عَنْ لُبَابَةَ بِنْتِ الْحَارِثِ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ الْحُسَيْنُ بْنُ عَلِيٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا فِيْ حِجْرِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَبَالَ عَلَيْهِ فَقُلْتُ الْبَسْ ثَوْبًا وَأَعْطِنِيْ إِزَارَكَ حَتَّى أَغْسِلَهُ قَالَ إِنَّمَا يُغْسَلُ مِنْ بَوْلِ الْأُنْثَى وَيُنْضَحُ مِنْ بَوْلِ الذَّكَرِ.
লুবাবা বিনতে হারিছ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা হুসাইন ইবনু ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোলে থাকাবস্থায় পেশাব করে দিলেন। আমি বললাম, আপনি অন্য একটি কাপড় পরে নিন এবং আপনার এই কাপড়টি আমাকে ধুতে দিন। তিনি বললেন, মেয়ে শিশু পেশাব করলে ধুতে হয়। আর ছেলে শিশু পেশাব করলে তাতে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট।[১৮]
আবুস সামহ্ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমত করতাম। তিনি গোসল করার ইচ্ছা করলে আমাকে বলতেন, তুমি পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়াও। তখন আমি পিঠ ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে তাঁকে আড়াল করে রাখতাম। একবার হাসান অথবা হুসাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে আনা হলে তাঁদের একজন তাঁর বুকে পেশাব করে দিলেন। আমি তা ধৌত করতে এলে তিনি বললেন, মেয়ে শিশুর পেশাব ধোয়া আবশ্যক হয়। আর ছেলে শিশুর পেশাবে পানি ছিটিয়ে দিলেই যথেষ্ট।[১৯]
আবূ লায়লা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে অবস্থান করছিলাম। এসময়ে হাসান অথবা হুসাইন তাঁর বুক অথবা পেটের উপরে অবস্থান করছিলেন। আবূ লায়লা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এসময় (হাসানকে) পেশাব করতে দেখে আমি তাকে ধরার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটবর্তী হলে, তিনি বললেন, ‘আমার নাতিকে ছেড়ে দাও, তার পেশাব করা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে বাধা দিও না। এরপর পেশাবের উপরে পানি ঢেলে দাও।[২০]
এসকল হাদীছ থেকে নাতি-নাতনিদের প্রতি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহৃদয়তা ও অপার ¯েœহ-ভালোবাসার কথাই ফুটে উঠে।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নাতি-নাতনিদের ঝাড়ফুঁক করে দিতেন
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ﷺ قَالَ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُعَوِّذُ الحَسَنَ وَالحُسَيْنَ يَقُوْلُ أُعِيْذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ وَيَقُوْلُ هَكَذَا كَانَ إِبْرَاهِيْمُ يُعَوِّذُ إِسْحَاقَ وَإِسْمَاعِيْلَ.
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাসান ও হুসাইনের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করতেন। তিনি বলতেন, ‘আল্লাহ তা‘আলার পরিপূর্ণ যাত ও ছিফাতের ওয়াসীলায় আমি তোমাদের উভয়ের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করছি প্রত্যেক শয়তান, জীবননাশ কর বিষ এবং প্রত্যেক ধরনের আপতিত বদ নযর থেকে’। অতঃপর তিনি বলেন, ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)ও (তাঁর পুত্রদ্বয়) ইসমাঈল ও ইসহাক্বের জন্য অনুরূপ আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।[২১]
উক্ত হাদীছে বর্ণিত, (بِكَلِمَاتِ اللهِ) দ্বারা উদ্দেশ্য কারো মতে, কুরআন। আবার কারো মতে, আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামসমূহ ও ছিফাতসমূহ।
(التَّامَّةِ) দ্বারা উদ্দেশ্য হল, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর কালামকে (التَّامَّةِ) বা ‘পরিপূর্ণতা’র গুণের সাথে উল্লেখ করেছেন। কেননা আল্লাহর কালামকে দোষ-ত্রুটির ছিফাতের সাথে উল্লেখ করা জায়েয নয়, যেমন মানুষের কালাম বা কথার সাথে ত্রুটির গুণ ব্যবহার করা যায়। কারো মতে, এখানে (التَّامَّةِ) বা ‘পরিপূর্ণতা’ অর্থ হল, এটি ঝাড়ফুঁককৃত ব্যক্তিকে উপকৃত করবে, তাকে বিপদাপদ থেকে রক্ষা করবে এবং এটি তার জন্য যথেষ্ট হবে।
(مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ) অর্থাৎ এর মধ্যে মানুষ ও জিন শয়তান উভয়ে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
(وَهَامَّةٍ) দ্বারা উদ্দেশ্য হল, প্রত্যেক বিষধর প্রাণী যাকে হত্যা করা বৈধ। এর বহুবচন (الهوام)। আর যেসব প্রাণী বিষধর নয় এবং যাদের হত্যা করাও বৈধ নয়, এমন প্রাণীকে (السامة) বলা হয়। যেমন- বিচ্চু (العقرب), ভীমরুল (الزنبور) ইত্যাদি।
(وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ) অর্থাৎ সব ধরনের বদ-নযর থেকে।[২২]
ইমাম খাত্তাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, প্রত্যেক এমন অসুস্থতা, যা মানসিক সমস্যা থেকে সৃষ্টি হয়।[২৩]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
[১]. ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৮২৩; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬৯৮৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৭৬৯-তে বর্ণিত হয়েছে, আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, হাসান ভূমিষ্ঠ হলে আমি তার নাম রাখলাম হারব (যুদ্ধ)। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বলেন, আমার নাতি আমাকে দেখাও, তোমরা তার কী নাম রেখেছ? আমরা বললাম, হারব। তিনি বলেন, বরং তার নাম হাসান। পরে হুসাইন ভূমিষ্ঠ হলে আমি তার নাম রাখলাম হারব। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বলেন, আমার নাতি আমাকে দেখাও, তোমরা তার কী নাম রেখেছ? আমরা বললাম, হারব। তিনি বলেন, বরং তার নাম হুসাইন। অতঃপর তৃতীয় সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আমি তার নামও রাখলাম হারব। অতঃপর নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এসে বলেন, আমার নাতিকে দেখাও, তোমরা তার কী নাম রেখেছ? আমরা বললাম, হারব। তিনি বলেন, বরং তার নাম মুহসিন। অতঃপর তিনি বলেন, আমি হারূন (আলাইহিস সালাম)-এর সন্তান শিবর, শুবায়র ও মুশাব্বির-এর নাম অনুসারে এদের নাম রাখলাম’। উক্ত হাদীছের সনদে হানী ইবনে হানী নামীয় একজন অপরিচিত রাবী থাকার কারণে হাদীছটি যঈফ; বিস্তারিত দ্র. : সিলসিলা যঈফাহ, ৮ম খ-, পৃ. ১৮২।
[২]. আবূ দাঊদ, হা/৫১০৫; তিরমিযী, হা/১৫১৪; ইমাম তিরযিমী, নববী, ইবনে মুলক্বিন প্রমুখ হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন। ইবনু হিব্বান হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) প্রথমে হাদীছটিকে হাসান আখ্যা দিয়েছিলেন; আলবানী, ইরওয়াউল গালীল, হা/১১৭৩। অতঃপর তিনি তার মত পরিবর্তন করেন এবং হাদীছটিকে যঈফ আখ্যা দেন; সিলসিলা যঈফাহ, হা/৬১২১। এবিষয়ে আরো বিস্তারিত রয়েছে- আল-মাজরূহীন, ২য় খ-, পৃ. ১১০; আল-মাজমূ‘ শরহে মুহাযযাব, ৮ম খ-, পৃ. ৪৩৪; আল-বাদরুল মুনীর, ৯ম খ-, পৃ. ৩৪৮; আল-কালিমুত তাইয়্যিব, পৃ. ২১১।
[৩]. তুহফাতুল মাওদূদ, পৃ. ৩১।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৬।
[৫]. ইমাম নববী, শরহে ছহীহ মুসলিম, ১৪ খ-, পৃ. ১২৪।
[৬]. মাওকা‘ (ইসলাম ওয়েব) থেকে মার্জিত ও সংক্ষিপ্তাকারে গৃহীত।
[৭]. তিরমিযী, হা/২০৬৬; ইবনু মাজাহ, হা/৩৪৫৫; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৪১২৬।
[৮]. নাসাঈ, হা/৪২১৯; সনদ ছহীহ, ইরওয়াউল গালীল, ৪র্থ খ-, পৃ. ৩৭৯।
[৯]. তুহফাতুল মাওদূদ বী আহকামিল মাওদূদ, পৃ. ৬৯।
[১০]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৩১১; ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) ছহীহ বলেছেন, ফাৎহুল বারী, ৯ম খ-, পৃ. ৫৮৯।
[১১]. উছায়মীন, শারহুল মুমতি‘, ৭ম খ-, পৃ. ৪৯৩।
[১২]. আবূ দাঊদ, হা/২৮৩৮; তিরমিযী, হা/১৫২২, সনদ ছহীহ।
[১৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৩১৫; আবূ দাঊদ, হা/৩১২৬।
[১৪]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৬৬৫৫; সনদ হাসান, ইরওয়ালুল গালীল, ৪র্থ খ-, পৃ. ৪০৩।
[১৫]. মুসনাদে বাযযার, হা/৬১৯৯; সনদ হাসান, হায়ছামী (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমাঊয যাওয়ায়িদ, ৪র্থ খ-, পৃ. ৮৯।
[১৬]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৩০৮; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৪৬৩; খালূক্ব (خلوق) হল, একটি প্রসিদ্ধ সুগন্ধি, যা জা‘ফরান ও অন্যান্য উপাদান দ্বারা তৈরি সুগন্ধিবিশেষ। এতে লাল ও হলুদ রঙের প্রাধান্য লক্ষ্য করা যায়। দ্র. : আন-নিহায়া, ২য় খ-, পৃ. ১৪৪।
[১৭]. নামের বিষয়বস্তু নিয়ে যত বিড়ম্বনা : একজন বিমান কর্মকর্তা একজন বৃদ্ধা আরোহীকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আপনার নামটা কী একটু বলবেন? বৃদ্ধা বললেন, ‘আছ-ছালাতু ‘আলান নবী’ (الصلاة علي النبي)। কর্মকর্তা বললেন, তাঁর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক। এবার আপনার নামটি বলুন। বৃদ্ধা বললেন, ‘আছ-ছালাতু ‘আলান নবী’ (الصلاة علي النبي)। বিমান কর্মকর্তা আবারো বললেন, তাঁর উপর দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক। এবার আপনার নামটি বলুন। অতঃপর রহস্য উন্মোচন হল- আসলে তার নামই হচ্ছে ‘আছ-ছালাতু ‘আলান নবী (الصلاة علي النبي)।
(আরেকটি ঘটনা হল) : একজন ব্যক্তিকে বলা হল, আপনার ছেলের নাম কী? জবাবে তিনি বললেন, আবূ আব্দিল মালিক আল-কারীম আল্লাযী ইয়ুমসিকুস সামা-য়া আন তাক্বা‘আ ‘আলাল আরয ইল্লা বিইযনিহী (أبو عبد الملك الكريم الذي يمسك السماء أن تقع علي الأرض إلا بإذنه)। উত্তরে জিজ্ঞেসকারী ব্যক্তি বললেন, মারহাবা! হে নিছফে কুরআন, আল্লাহ আপনাকে মর্যাদাবান করুন।
[১৮]. আবূ দাঊদ, হা/৩৭৫; ইবনু মাজাহ, হা/৫২২; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/২৩৮৩।
[১৯]. আবূ দাঊদ, হা/৩৭৬; নাসাঈ, হা/৩০৪; ইবনু মাজাহ, হা/৫২৬; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৮১১৭।
[২০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৫৮০; হায়ছামী, মাজমাঊয যাওয়ায়েদ, ১ম খ-, পৃ. ৬৩১; হাদীছের রিজাল বিশ্বস্ত; শু‘আইব আরনাউত্ব ছহীহ বলেছেন।
[২১]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৭১; তিরমিযী, হা/২০৬০; শব্দ তিরমিযীর।
[২২]. তুহফাতুল আহওয়াযী, ৬ষ্ট খ-, পৃ. ১৮৪।
[২৩]. ফাৎহুল বারী, ৬ষ্ট খ-, পৃ. ৪১০।