বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩২ অপরাহ্ন

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পারিবারিক জীবন

-মূল : শায়খ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ
-অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*


(১১তম কিস্তি) 

অপবাদ আরোপের হাদীছের শিক্ষনীয় বিষয়


রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বৈবাহিক জীবনে গৃহীত মূলনীতির মধ্যে অপবাদ আরোপের হাদীছে অনেক শিক্ষা রয়েছে। যেমন,

১). (সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে) ধীরস্থিরতা অবলম্বনের পদ্ধতি

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় স্ত্রীর প্রতি আরোপিত অপবাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্তে না গিয়ে ধীরস্থিরতা, প্রমাণ সংগ্রহ ও নিশ্চিত হওয়ার মূলনীতি গ্রহণ করেছেন। তিনি তাড়াহুড়ো না করে ধীরস্থিরতার সাথে সমস্যার সমাধান করেছেন, যাতে তাঁর সিদ্ধান্ত ইনছাফপূর্ণ হয়। অপবাদ আরোপের ঘটনায় দীর্ঘ একটি মাস অতিবাহিত হয়। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে এ ব্যাপারে কোন বিতর্ক না করে ধীরস্থিরতা অবলম্বন ও জিজ্ঞাসাবাদ করার মাধ্যমে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনিত হওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখেন।

২). বৈবাহিক আচরণে পরিবর্তন সাধন

অপবাদ আরোপের এহেন পরিস্থিতিতে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্কের পরিবর্তন এনেছিলেন। তিনি আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর কাছে বসতেন না এবং ইতিপূর্বে অসুস্থ হলে যেভাবে তার প্রতি মমতা দেখাতেন তা থেকে বিরত ছিলেন। এ ব্যাপারে আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)বলেন,

وَهُوَ يَرِيْبُنِيْ فِيْ وَجَعِيْ أَنِّيْ لَا أَعْرِفُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اللُّطْفَ الَّذِيْ كُنْتُ أَرَى مِنْهُ حِيْنَ أَشْتَكِيْ

‘তবে আমার সন্দেহ হচ্ছিল এবং তা আরো দৃঢ় হচ্ছিল আমার এ অসুখের সময়। কেননা এর পূর্বে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে যেরূপ স্নেহ-ভালবাসা পেতাম আমার এ অসুখের সময় তা আমি পাচ্ছিলাম না’।[১]

(সুধী পাঠক!) নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এমন পদক্ষেপ গ্রহণ তাঁর সমসাময়িক সমস্যা সমাধানে পূর্ণ কৌশলী হওয়ার প্রতি ইঙ্গিত করে। এখানে তিনি আয়েশা র-কে পুরোপরি পরিত্যাগ করেননি। কেননা আলাদাকরণ পাপী বা বিরুদ্ধাচরণকারীর জন্য শাস্তি স্বরূপ। এছাড়া তার ব্যাপারে এখনো এমন কিছু প্রমাণিত হয়নি, যে কারণে তাকে শাস্তি দেয়া যায়। এসময়ে তিনি স্ত্রীর খোঁজ খবর নিতেন, তার সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করতেন। যেমন তিনি (আয়েশার খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য) বলতেন, (كَيْفَ تِيْكُمْ) ‘তোমাদের আয়েশা কেমন আছে?’ তবে অপবাদ আরোপের ঘটনার পূর্বে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে যেমন আচরণ করতেন, তেমনটা করেননি। যাতে সে বুঝতে পারে, কিছু একটা ঘটেছে এবং সে সত্য উদ্ঘাটনের প্রয়োজন অনুভব করে।

ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আলোচ্য হাদীছের অনেকগুলো শিক্ষার মধ্যে একটি হল- স্ত্রীর সাথে কোমল ও সুন্দর আচরণ করা। তবে স্ত্রীর ত্রুটির কথা প্রকাশ পেলে তা প্রমাণিত না হলেও তার সাথে সম্পর্ক কমিয়ে দিতে হবে। এতে সে অবস্থার হঠাৎ পরিবর্তন বুঝতে পেরে ক্ষমা প্রার্থনা অথবা স্বীকারোক্তি দিবে’।[২]

ইমান নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘জেনে রাখ! অপবাদ আরোপের হাদীছে অনেক শিক্ষা রয়েছে। যেমন- যখন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সম্পর্কে (অন্যায়) কিছু শুনলেন বা এ ধরণের অন্য কোন ঘটনা ঘটল, তখন তিনি তাঁর সাথে কোমল আচরণ ও স্নেহ-মমতা কমিয়ে দিলেন, যাতে সে উপলব্ধি করতে পারে যে, এমনটা সে ঘটনার কারণে ঘটছে, অতঃপর সে যেন তার কারণ উদ্ঘাটনের চেষ্টা করে এবং ছেড়ে দেয়’।[৩]

৩). মতামত ও পরামর্শ গ্রহণ

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুপিসারে এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেন। পূর্ণ গোপনীয়তার সাথে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর কাছের লোকদের কাছে তার আখলাক্ব ও চালচলন সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। কেউ তাদের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু দেখেছে কিনা? নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওসামা ইবনু যায়েদ, আলী ইবনু আবী তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) ও দাসী বারীরাহ ও যয়নবকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে এই চারজনকে অনর্থক বেছে নেননি; এদের মধ্যে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন তার ঘনিষ্টজন এবং পরিবারের আপনজন। ওসামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন নবী পরিবারের একজন ঘনিষ্টজন এবং পূর্ণ গোপনীয়তা রক্ষাকারী। ইবনু হাজার ‘আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

‘আলী ও ওসামা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে পরামর্শের জন্য চয়ন করার উদ্দেশ্য হল, আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ছিলেন তাঁর নিকটে সন্তান সমতুল্য; কেননা শৈশবকাল থেকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার লালন-পালন করেছিলেন, কখনো তাকে দূরে সরে দেননি, বরং ফাতেমা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার মাধ্যমে সম্পর্ককে আরো শক্তিশালী করেছিলেন। যেহেতু আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)পারিবারিক ঘনিষ্টতার কারণে অভ্যন্তরীণ বিষয় সম্পর্কে বেশি খবর রাখতেন, এজন্য রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরামর্শের জন্য তাকেই নির্বাচন করেন। কেননা সে সাধারণ পরামর্শের ক্ষেত্রে আবূ বকর ও ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর মত আকাবির ছাহাবীদের সাথে অংশগ্রহণ করতেন। আর ওসামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)ছিলেন আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মতই দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ট ও অধিক স্নেহভাজন। লোকেরাও তাকে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভালোবাসার পাত্র হিসাবেই জানত এবং নবী করীম  (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও তাকে সন্তানের মত স্নেহ করতেন। এছাড়া সে আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মত যুবক হওয়ার কারণেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে বেছে নেন, যদিও আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)তাঁর চেয়ে বয়োজ্যৈষ্ঠ ছিলেন। এখানে যুবককে পরামর্শের জন্য বেছে নেয়ার কারণ হল, একজন যুবকের যতটা পরিষ্কার জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তা অন্য কারো থাকে না। তারা উত্তর দানের ক্ষেত্রে বয়ষ্কদের চেয়ে বেশি সাহসী হয়। কেননা বয়োবৃদ্ধরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে বিষয়টির পরিণতির কথা চিন্তা করেন। যার কারণে কখনো তিনি তার নিকটে স্পষ্ট হওয়া বিষয়কে জিজ্ঞেসকারীর দিকে লক্ষ্য করে গোপন করেন আবার কখনো যার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছে তার দিকে লক্ষ্য করে গোপন করেন।[৪]

জিজ্ঞাসাবাদের ধরন

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে নারীদেরকে দু’ভাগে বিভক্ত করেন। যেমন, প্রথমতঃ নবী পরিবারের অভ্যন্তরের লোকজনের মধ্যে তাঁর এমন স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করেন, যে সম্পর্কে তাঁর ফুফাতো বোন ছিলেন। দ্বিতীয়তঃ দাসীদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কেননা তারা আয়েশার (রাযিয়াল্লাহু আনহা)কাছের লোক এবং তার কাজকর্ম সম্পর্কে অধিক অবগত ছিল। শালিসের ক্ষেত্রে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদেরকে যে ইখতিয়ার প্রদান করেছিলেন তা নিঃসন্দেহে তাঁর বিচক্ষণতা ও প্রজ্ঞার পরিচায়ক।

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শান্তিপূর্ণভাবে গোপনীয় তদন্ত চালানোর পর চূড়ান্ত ফলাফলের সংকেত দিলেন। তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন, এই ফিতনা ছড়ানোর পিছনে মুনাফিক্ব সরদার আব্দুল্লাহ ইবনু উবাইয়ের হাত ছিল। তিনি বললেন, ‘হে মুসলিম সমাজ! আমার পরিবারের ব্যাপারে যে লোকের পক্ষ হতে কষ্টদায়ক বাক্যের খবর আমার নিকট পৌঁছেছে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করার মত কোন লোক এখানে আছে কি? আমি তো আমার স্ত্রীর ব্যাপারে উত্তম ছাড়া অন্য কোন কথা জানি না এবং যে লোকের ব্যাপারে তারা অপবাদ রটনা করছে তাঁকেও আমি সৎলোক বলে জানি। সে তো আমাকে ছাড়া আমার ঘরে কখনো প্রবেশ করত না’।[৫] মিম্বারে দাড়িয়ে স্ত্রীর পক্ষ সমর্থন করে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভাষ্য ছিল, فَوَاللّٰهِ مَا عَلِمْتُ عَلَى أَهْلِي إِلَّا خَيْرًا ‘আমি তো আমার স্ত্রীর ব্যাপারে উত্তম ছাড়া অন্য কোন কথা জানি না’।[৬]

আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সৎ হওয়ার ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছার পরেও অহী অবতীর্ণের অপেক্ষা করছিলেন, যাতে সিদ্ধান্ত অকাট্য হয়। দেরিতে অহী অবতীর্ণের পিছনে পূর্ণ হিকমাহ ছিল, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি হল- এই ঘটনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ উম্মাহকে কোন মুসলিম পরিবারের উপর এ ধরণের স্পর্শকাতর বিষয়ের অবতারণা হলে কিভাবে তা ছড়িয়ে পড়া থেকে রোধ করবে তা শিক্ষা দিতে চেয়েছেন।

৪). আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে ঘটনাটি নিয়ে সরাসরি কথা বলা

নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমস্যার সমাধানে পৌঁছা, সত্য উদ্ঘাটন ও একটি নাফসের নিষ্কলুষতা প্রমাণের জন্য স্বচ্ছতা ও স্পষ্টতার সাথে অপবাদের বিষয়টি নিয়ে আয়েশা সিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে খুলাখোলিভাবে কথা বলেন। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে উপদেশচ্ছলে বলেন, ‘হে আয়েশা! তোমার ব্যাপারে আমার কাছে এমন এমন খবর পৌঁছেছে। যদি তুমি এ বিষয়ে নিষ্পাপ এবং পবিত্র হও, তবে শীঘ্রই আল্লাহ তা‘আলা তোমার পবিত্রতার বিষয়ে ঘোষণা করবেন। আর যদি তোমার দ্বারা কোন পাপ হয়েই থাকে তবে তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা এবং তওবা কর। কেননা বান্দা পাপ স্বীকার করে তওবাহ করলে আল্লাহ তার তওবাহ গ্রহণ করেন’।[৭]

৫).  নির্দোশ প্রমাণ হলে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)অভিমানের স্বরে তার অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন

এ বিষয়ে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) নিজেই বলেন, ‘অতঃপর আমার মা আমাকে বললেন, তুমি উঠে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্মান প্রদর্শন কর। আমি বললাম, আমি তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করব না এবং আল্লাহ ব্যতীত আর কারো প্রশংসা করব না’।[৮] এ প্রসঙ্গে ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর অপবাদ থেকে মুক্তি লাভের বিষয়টি সরাসরি কুরআনের নছ দ্বারা অকাট্যভাবে প্রমাণিত ছিল। যদি কোন ব্যক্তি তাতে সন্দেহ পোষণ করত তাহলে (আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি) সে সকলের ঐকমত্যে দ্বীন ত্যাগী কাফির হয়ে যেত’।[৯]

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গৃহে স্ত্রীদের অতিরিক্ত খোরপোষের দাবী নিয়ে সৃষ্ট কিছু জটিলতা

এই ঘটনায় স্পষ্ট হয় যে, পরিবারে অর্থনৈতিক বিষয়ে সমস্যা দেখা দিলে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিভাবে তার সমাধান করতেন, যা স্ত্রীদের অতিরিক্ত খোরপোষের দাবী করা নিয়ে নবী গৃহে ঘটেছিল?

ঘটনাটি জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এসে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে উপস্থিত হওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তিনি তাঁর দরজায় অনেক লোককে উপবিষ্ট দেখতে পেলেন। তবে তাদের কাউকে ভেতরে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। তিনি (বর্ণনাকারী) বলেন, এরপর তিনি আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে প্রবেশের অনুমতি প্রদান করলে তিনি প্রবেশ করলেন। এরপর ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এলেন এবং তিনি অনুমতি প্রার্থনা করলেন। তখন তাকেও প্রবেশের অনুমতি প্রদান করা হল। তিনি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে চিন্তাযুক্ত ও নীরব বসে থাকতে দেখলেন আর তখন তার চতুস্পার্শ্বে তার সহধর্মিণীগণ উপবিষ্ট ছিলেন। তিনি [বর্ণনাকারী জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)] বলেন, ‘ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, নিশ্চয় আমি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এমন কথা বলব যা তাঁকে হাসাবে।

এরপর তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি যদি খারিজাহ এর কন্যাকে [ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর স্ত্রী] আমার কাছে খোরপোষ তলব করতে দেখতেন, তাহলে (তৎক্ষণাৎ) আপনি তার দিকে অগ্রসর হয়ে তার স্কন্ধে আঘাত করতেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে উঠলেন এবং বললেন, আমার চতুস্পার্শ্বে তোমরা যাদের দেখতে পাচ্ছ তারা আমার কাছে খোরপোষ দাবী করছে। অমনি আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর দিকে ছুটলেন এবং তার গর্দানে আঘাত করলেন। ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)ও দাঁড়িয়ে গেলেন এবং হাফছাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর দিকে অগ্রসর হয়ে তার ঘাড়ে আঘাত করলেন। তারা উভয়ে বললেন, তোমরা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এমন জিনিস দাবী করছ, যা তার কাছে নেই। তখন তাঁরা বললেন, আল্লাহর কসম আমরা আর কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এমন জিনিস চাইব না, যা তাঁর কাছে নেই। এরপর তিনি তাদের (তাঁর সহধর্মিণীগণের) থেকে এক মাস কিংবা উনত্রিশ দিন পৃথক রইলেন। এরপর তাঁর প্রতি এ আয়াত নাযিল হল-

یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ  قُلۡ  لِّاَزۡوَاجِکَ اِنۡ  کُنۡـتُنَّ تُرِدۡنَ  الۡحَیٰوۃَ  الدُّنۡیَا وَ زِیۡنَتَہَا فَتَعَالَیۡنَ اُمَتِّعۡکُنَّ وَ اُسَرِّحۡکُنَّ سَرَاحًا جَمِیۡلًا  - وَ اِنۡ کُنۡـتُنَّ تُرِدۡنَ اللّٰہَ  وَ رَسُوۡلَہٗ وَ الدَّارَ الۡاٰخِرَۃَ  فَاِنَّ اللّٰہَ  اَعَدَّ لِلۡمُحۡسِنٰتِ مِنۡکُنَّ  اَجۡرًا عَظِیۡمًا

‘হে নবী! আপনি আপনার সহধর্মিণীদের বলে দিন, তোমরা যদি পার্থিব জীবনের ভোগ ও এর বিলাসিতা কামনা কর, তাহলে এসো আমি তোমাদের ভোগ-বিলাসের ব্যবস্থা করে দেই এবং সৌজন্যের সাথে তোমাদের বিদায় করে দেই। আর যদি তোমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও পরকালকে কামনা কর তাহলে তোমাদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ আল্লাহ তাদের জন্য মহা প্রতিদান প্রস্তুত করে রেখেছেন’ (সূরা আল-আহযাব : ২৮-২৯)।

জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে দিয়ে (আয়াতের নির্দেশ তামীল করতে) শুরু করলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আয়েশা! আমি তোমার কাছে একটি (গুরুত্বপূর্ণ) বিষয়ে আলাপ করতে চাই। তবে সে বিষয়ে তোমার পিতামাতার সঙ্গে পরামর্শ না করে তোমার ত্বরিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করাই আমি পসন্দ করি। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার ব্যাপারে আমি কি আমার পিতা-মাতার কাছে পরামর্শ নিতে যাব? (এর কোন প্রয়োজন নেই)। না, বরং আমি আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও আখিরাতকেই বেছে নিয়েছি। তবে আপনার কাছে আমার একান্ত নিবেদন, আমি যা বলেছি সে সম্পর্কে আপনি আপনার অন্যান্য সহধর্মিণীগণের কারো কাছে ব্যক্ত করবেন না। তিনি বললেন, তাদের যে কেউ সে বিষয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলে আমি অবশ্যই তাঁকে তা বলে দিব। কারণ আল্লাহ আমাকে কঠোরতা আরোপকারী ও অত্যাচারীরূপে নয় বরং সহজপন্থায় (শিক্ষাদানকারী) হিসাবে প্রেরণ করেছেন।[১০] এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্যান্য স্ত্রীদেরকেও একই ধরনের কথা বললে, তারাও আয়েশার মতই উত্তর দিলেন।

উক্ত ঘটনায় স্ত্রীদের অতিরিক্ত খোরপোষ চাওয়ার ঘটনায় স্ত্রীদের সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেমন আচরণ করেছিলেন তার বর্ণনা রয়েছে। ঘটনার শুরুতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিশ্চুপ ছিলেন। স্ত্রীদের কোন কথার জবাব দেননি। যেমন জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘তিনি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে চিন্তাযুক্ত ও নীরব বসে থাকতে দেখলেন আর তখন তাঁর চতুস্পার্শ্বে তাঁর সহধর্মিণীগণ উপবিষ্টা ছিলেন’।

মূল সমস্যাকে জেনেও না জানার ভান করে থাকা ছিল উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গৃহীত প্রথম পদ্ধতি। কেননা স্ত্রীদের অনেক অবাধ্যতা কলহ-বিবাদের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব নয়, আর তাদের সাথে বিতর্ক করে কোন ফায়দাও নেই, বরং তাদের সাথে বিতর্ক সম্পর্ককে আরো জটিল করে তোলে। আর ‘ঐচ্ছিকতা প্রদান’ ছিল উদ্ভূত সমস্যা সমাধানে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গৃহীত দ্বিতীয় পদ্ধতি। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদেরকে বর্তমান খোরপোষে সন্তুষ্ট থেকে তাঁর সাথে থাকতে অথবা পৃথক হয়ে যাওয়ার ইখতিয়ার দিয়েছিলেন। এটিই হল ইসলামী শরী‘আত যে, স্বামী তার স্ত্রীকে সাথে থাকার অথবা তার চাহিদা পূরণ করতে অক্ষম হলে পৃথক হয়ে যাবার ইখতিয়ার দিবে। বৈবাহিক জীবনে দুনিয়াবী সমস্যা সমাধানে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদেরকে ইখতিয়ার প্রদানের বিষয়টি পরস্পর পরামর্শের ভিত্তিতে বৈবাহিক জীবন পরিচালনার পদ্ধতিগুলোর মধ্যে একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ছিল।

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদেরকে তারাহুড়া করে সিদ্ধান্ত না নিয়ে ধীরস্থিরতার সাথে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন

স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তি ছিল, إِنِّيْ ذَاكِرٌ لَكِ أَمْرًا فَلَا عَلَيْكِ أَنْ لَا تَسْتَعْجِلِيْ ‘আমি তোমার উদ্দেশ্যে একটি কথা বলব, তাড়াহুড়া করে উত্তর দিবে না’।[১১]

বর্তমান যুগের অধিকাংশ স্বামীর ক্ষেত্রেই এর উল্টোটা ঘটে, তারা প্রতিনিয়ত ত্বালাক্বের ব্যাপারে কঠোরতা করে। স্ত্রীর যে কোন ভুল হলেই স্বামী বলে উঠে, আমি অচিরেই তোমাকে ত্বালাক্ব দিব। স্বামীর কোন কাজে স্ত্রী অবহেলা দেখালে স্বামী বলে উঠে, আমি তোমাকে ত্বালাক্ব দিব। ‘তুমি যদি বাড়ি থেকে বের হও, তাহলে ত্বালাক্ব’। ‘যদি তুমি কারো ফোন রিসিভ কর, তাহলে ত্বালাক্ব’। ‘তুমি যদি উমুকের সাথে কথা বল তাহলে ত্বালাক্ব’ ইত্যাদি নানান কথা। হাদীছে বর্ণিত উক্ত ঘটনা থেকে বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভুল-ত্রুটির কারণে স্ত্রীদেরকে প্রহার অথবা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য না করে সমস্যার সমাধানে তাদের সাথে উত্তম পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। আবূ বকর ও ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ও হাফছা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে প্রহার করার জন্য দাঁড়ালে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে নিষেধ করেন। কেননা সব সময়ে প্রহার দ্বারা সমস্যার সমাধান হয় না; বরং অধিকাংশ ক্ষেত্রে আলোচনা ও পরস্পর সম্মতিতে দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়।

স্ত্রীর যে বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখা যরূরী

কখনো কখনো স্ত্রীরা ধনাঢ্যশালী স্বচ্ছল পরিবার থেকে এমন স্বামীর ঘরে আগমন করে, যে কৃপণ অথবা ছাত্র কিংবা অল্প বেতনের কোন চাকুরীজীবী হয়। ফলে স্ত্রীর জন্য পৃথক হয়ে যাওয়া যরূরী হয়ে পড়ে। এটি আল্লাহর পূর্ব নির্ধারিত বিধান। মহান আল্লাহ এরশাদ করেন,

نَحۡنُ قَسَمۡنَا بَیۡنَہُمۡ  مَّعِیۡشَتَہُمۡ فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا وَ رَفَعۡنَا بَعۡضَہُمۡ فَوۡقَ بَعۡضٍ دَرَجٰتٍ لِّیَتَّخِذَ بَعۡضُہُمۡ بَعۡضًاسُخۡرِیًّا

‘আমরাই দুনিয়ার জীবনে তাদের মাঝে তাদের জীবিকা বণ্টন করে দেই এবং তাদের একজনকে অপর জনের উপর মর্যাদায় উন্নত করি, যাতে একে অপরকে অধিনস্ত হিসাবে গ্রহণ করতে পারে’ (সূরা আয-যুখরুফ : ৩২)।

পরিবারের কাছে কন্যার অতিরিক্ত সোহাগ-ভালোবাসা পাওয়া এবং কন্যার জন্য পিতার প্রতিটি দিনকে বিসর্জন দেয়া, যেন তাকে ছাড়া পিতার একদম চলেই না, এ বিষয়গুলো তাকে স্বামীর গৃহে এসে সীমালঙ্ঘনে পতিত করে। স্ত্রীর অতিরিক্ত খোরপোষের দাবী দরিদ্র ¯¦ামীর জন্য বেশ অস্বস্তিকর। এর ফলে দুর্বল ঈমানের অধিকারী স্বামীগণ হারাম উপার্জনের দিকে ধাবিত হয়। এতে হারাম উপার্জনের পিছনে দৌঁড়াতে গিয়ে সে নিজের ও পরিবারের জন্য ক্ষতি ডেকে নিয়ে আসে। যেমন সে ঘুষ ও চুরির মত অন্যায় কাজে জড়ানোর কারণে চাকুরী থেকে বরখাস্ত হয় অথবা তাকে জেলে দেয়া হয়, ফলে সে তার পরকালীন ও দুনিয়াবী উভয় জীবনকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। এমন প্রেক্ষিতে স্বামীর জন্য যরূরী হল, স্ত্রী যেভাবে পিতার গৃহে সুখ-স্বাচ্ছন্দে বসবাস করেছে, সেভাবে সাধ্যমত স্ত্রীর শরী‘আতসম্মত সকল চাহিদাগুলো পূরণ করা।

নবী গৃহের সমস্যাগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হল, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে চালাকি করার মানসে কিছু স্ত্রীর একজোট হওয়া

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যয়নাব বিনতে জাহাশের নিকট কিছু বিলম্ব করতেন এবং সেখানে তিনি মধু পান করতেন। আমি ও হাফছা পরামর্শক্রমে ঠিক করলাম যে, আমাদের মধ্যে যার কাছেই নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রবেশ করবেন, সেই যেন বলি আমি আপনার থেকে মাগাফীরের গন্ধ পাচ্ছি। আপনি কি মাগাফীর খেয়েছেন? এরপর তিনি তাদের একজনের নিকট প্রবেশ করলে তিনি তাকে অনুরূপ বললেন। তিনি বললেন, বরং আমি যয়নাব বিনতে জাহাশের নিকট মধু পান করেছি। আমি পুনঃ এ কাজ করব না। অতঃপর আয়াত অবতীর্ণ হল, মহান আল্লাহ বলেন,

‘হে নবী! আল্লাহ আপনার জন্য যা হালাল করেছেন আপনার স্ত্রীদের সন্তুষ্টি কামনায় আপনি কেন তা হারাম করলেন? আর আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। আল্লাহ তোমাদের শপথ হতে মুক্তি লাভের ব্যবস্থা করেছেন; আর আল্লাহ তোমাদের অভিভাবক এবং তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান। স্মরণ কর, আর যখন নবী তাঁর এক স্ত্রীকে গোপনে একটি কথা বলেছিলেন; অতঃপর যখন সে (স্ত্রী) অন্যকে তা জানিয়ে দিল এবং আল্লাহ তাঁর (নবীর) কাছে এটি প্রকাশ করে দিলেন, তখন নবী কিছুটা তাঁর স্ত্রীকে অবহিত করলেন আর কিছু এড়িয়ে গেলেন। যখন সে তাকে বিষয়টি জানাল তখন সে বলল, আপনাকে এ সংবাদ কে দিল? নবী বললেন, ‘মহাজ্ঞানী ও সর্বজ্ঞ আল্লাহ আমাকে জানিয়েছেন। যদি তোমরা উভয়ে আল্লাহর কাছে তওবা কর (তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম)। কারণ তোমাদের উভয়ের অন্তর বক্র হয়েছে আর তোমরা যদি তার বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্য কর তবে আল্লাহই তার অভিভাবক এবং জিবরীল ও সৎকর্মশীল মুমিনরাও। তাছাড়া অন্যান্য ফেরেশতারাও তার সাহায্যকারী। যদি নবী তোমাদের সকলকে পরিত্যাগ করেন তবে আশা করা যায় তাঁর রব তোমাদের পরিবর্তে তোমাদের চাইতে উত্তম স্ত্রী তাঁকে দিবেন, যারা হবে মুসলিম, মুমিনা, অনুগত, তাওবাকারী, ইবাদতকারী, ছিয়াম পালনকারী, অকুমারী ও কুমারী’ (সূরা আত-তাহরীম : ১-৫)।[১২]

অত্র আয়াতে (وَ اِنۡ  تَظٰہَرَا عَلَیۡہِ) -এর অর্থ হল, তারা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে পরস্পরকে সাহায্য করল, এমনকি তিনি নিজের উপর যা হারাম করে নেয়ার তা হারাম করে নিলেন।

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৭০।
[২]. ইবনে হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৭৯।
[৩]. ইমান নববী, শরহে ছহীহ মুসলিম, ১৭তম খণ্ড, পৃ. ১১৭।
[৪]. ইবনে হাজার আসক্বালানী, ফাৎহুল বারী, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৪৬৯।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৭০।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৭০।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৭০।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৭০।
[৯]. ইমাম নববী, শরহু ছহীহ মুসলিম, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১১৭।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৭৮।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৭৮৫।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৬৭।




প্রসঙ্গসমূহ »: জীবন কথা
নববী আদর্শ (৯ম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৪র্থ পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৫তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (২০তম পর্ব) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১২তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৪তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৬ তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৯তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৮তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১১তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৭ম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ