সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৫:২১ পূর্বাহ্ন

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পারিবারিক জীবন

-মূল : শায়খ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ
-অনুবাদক : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*


নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক কর্মব্যস্ততা ও দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও স্ত্রীদের সাথে রাত্রি জেগে কুশল বিনিময় করতেন ও খোঁজ-খবর নিতেন :

আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে একটি দীর্ঘ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, ১১ জন মহিলা এক স্থানে একত্রিত বসল এবং সকলে মিলে এ কথার উপর একমত হল যে, তারা নিজেদের স্বামীর ব্যাপারে কোন কিছুই গোপন রাখবে না।

প্রথম মহিলা বলল, ‘আমার স্বামী হচ্ছে অত্যন্ত হালকা-পাতলা দুর্বল উঠের গোশতের মত, যেন কোন পর্বতের চূড়ায় রাখা হয়েছে এবং সেখানে উঠা সহজ কাজ নয় এবং গোশতের মধ্যে এত চর্বিও নেই, যে কারণে সেখানে উঠার জন্য কেউ কষ্ট স্বীকার করবে’। দ্বিতীয়জন বলল, ‘আমি আমার স্বামী সম্পর্কে কিছু বলব না, কারণ আমি ভয় করছি যে, তার সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেষ করা যাবে না। কেননা যদি আমি তার সম্পর্কে বলতে যাই, তাহলে আমাকে তার সকল দুর্বলতা এবং মন্দ দিকগুলো সম্পর্কেও বলতে হবে’।

তৃতীয় মহিলা বলল, ‘আমার স্বামী একজন দীর্ঘদেহী ব্যক্তি। আমি যদি তার বর্ণনা দেই (আর সে যদি তা শোনে), তাহলে সে আমাকে ত্বালাক্ব দিবে। আর যদি আমি কিছু না বলি, তাহলে সে আমাকে ঝুলন্ত অবস্থায় রাখবে। অর্থাৎ ত্বালাক্বও দেবে না, স্ত্রীর মত ব্যবহারও করবে না’। চতুর্থ মহিলা বলল, ‘আমার স্বামী হচ্ছে তিহামার রাতের মত মাঝামাঝি- অতি গরমও না, অতি ঠা-াও না, আর আমি তাকে ভয়ও করি না, আবার তার প্রতি অসন্তুষ্টও নই’। পঞ্চম মহিলা বলল, ‘যখন আমার স্বামী ঘরে ঢুকে তখন চিতা বাঘের মত থাকে। যখন বাইরে যায়, তখন সিংহের মত তার স্বভাব থাকে এবং ঘরের কোন কাজের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন তোলে না’।

৬ষ্ঠ মহিলা বলল, ‘আমার স্বামী যখন খেতে বসে, তখন সব খেয়ে ফেলে। যখন পান করে, তখন সব শেষ করে। যখন নিদ্রা যায়, তখন একাই চাদর বা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকে। এমনকি (একটিবারের জন্য) হাত বের করেও আমার খবর নেয় না’। সপ্তম মহিলা বলল, ‘আমার স্বামী হচ্ছে পথভ্রষ্ট অথবা দুর্বল মানসিকতা সম্পন্ন এবং চরম বোকা, সব রকমের দোষ তার আছে। সে তোমার মাথায় বা শরীরে অথবা উভয় স্থানে আঘাত করতে পারে’। অষ্টম মহিলা বলল, ‘আমার স্বামীর স্পর্শ হচ্ছে খরগোশের মত এবং তার দেহের সুগন্ধি হচ্ছে যারনাব (এক প্রকার বনফুল)-এর মত’।

নবম মহিলা বলল, ‘আমার স্বামী হচ্ছে অতি উচ্চ অট্টালিকার মত এবং তার তরবারি ঝুলিয়ে রাখার জন্য সে চামড়ার লম্বা ফালি পরিধান করে (অর্থাৎ সে দানশীল ও সাহসী)। তার ছাইভষ্ম প্রচুর পরিমাণের (অর্থাৎ প্রচুর মেহমান আছে এবং মেহমাহদারীও হয়) এবং মানুষের জন্য তার গৃহ অবারিত। এলাকার জনগণ তার সঙ্গে সহজেই পরামর্শ করতে পারে’। দশম মহিলা বলল, ‘আমার স্বামীর নাম হল মালিক। মালিকের কী প্রশংসা আমি করব। যা প্রশংসা করব সে তার চেয়েও ঊর্ধ্বে। তার অনেক মঙ্গলময় উট আছে, তার অধিকাংশ উটকেই ঘরে রাখা হয় (অর্থাৎ মেহমানদের যবাই করে খাওয়ানোর জন্য) এবং অল্প সংখ্যক মাঠে চরার জন্য রাখা হয়। বাঁশির শব্দ শুনলেই উটগুলো বুঝতে পারে যে, তাদেরকে মেহমাদের জন্য যব্হ করা হবে’।

একাদশতম মহিলা বলল, ‘আমার স্বামী আবূ যার‘আ। তার কথা আমি কী বলব। সে আমাকে এত অধিক গহনা দিয়েছে যে, আমার কান ভারী হয়ে গেছে, আমার বাজুতে মেদ জমেছে এবং আমি এত সন্তুষ্ট হয়েছি যে, আমি নিজেকে গর্বিত মনে করি। সে আমাকে এনেছে অত্যন্ত গরীব পরিবার থেকে, যে পরিবার ছিল মাত্র কয়েকটি বকরীর মালিক। সে আমাকে অত্যন্ত ধনী পরিবারে নিয়ে আসে, যেখানে ঘোড়ার হ্রেষাধ্বনি এবং উটের হাওদার আওয়াজ এবং শস্য মাড়াইয়ের খসখসানি শব্দ শোনা যায়। সে আমাকে ধন-সম্পদের মধ্যে রেখেছে। আমি যা কিছু বলতাম, সে বিদ্রƒপ করত না এবং আমি নিদ্রা যেতাম এবং সকালে দেরী করে উঠতাম এবং যখন আমি পান করতাম, অত্যন্ত তৃপ্তি সহকারে পান করতাম। আর আবূ যার‘আর আম্মার কথা কী বলব! তার পাত্র ছিল সর্বদা পরিপূর্ণ এবং তার ঘর ছিল প্রশস্ত। আবূ যার‘আর পুত্রের কথা কী বলব! সেও খুব ভাল ছিল। তার শয্যা এত সংকীর্ণ ছিল যে, মনে হত যেন কোষবদ্ধ তরবারি অর্থাৎ সে অত্যন্ত হালকা-পাতলা দেহের অধিকারী। তার খাদ্য হচ্ছে ছাগলের একখানা পা। আর আবূ যার‘আর কন্যা সম্পর্কে বলতে হয় যে, সে কতই না ভাল। সে বাপ-মায়ের সস্পূর্ণ বাধ্য সন্তান। সে অত্যন্ত সুস্বাস্থ্যের অধিকারিণী, যে কারণে সতীনরা তাকে হিংসা করে। আবূ যার‘আর ক্রীতদাসীরাও অনেক গুণী। সে আমাদের গোপন কথা কখনো প্রকাশ করত না, সে আমাদের সম্পদকে কমাত না এবং আমাদের বাসস্থানকে আবর্জনা দিয়ে ভরে রাখত না’। সে মহিলা আরও বলল, ‘একদিন দুধ দোহান করার সময় আবূ যার‘আ বাইরে বেরিয়ে এমন একজন মহিলাকে দেখতে পেল, যার দু’টি পুত্র-সন্তান রয়েছে। ওরা মায়ের স্তন নিয়ে চিতা বাঘের মত খেলছিল (দুধ পান করছিল)। সে ঐ মহিলাকে দেখে আকৃষ্ট হল এবং আমাকে ত্বালাক্ব দিয়ে তাকে বিয়ে করল। এরপর আমি এক সম্মানিত ব্যক্তিকে বিয়ে করলাম। সে দ্রুতগামী ঘোড়ায় চড়ত এবং হাতে বর্শা রাখত। সে আমাকে অনেক সম্পদ দিয়েছে এবং প্রত্যেক প্রকারের গৃহপালিত জন্তু থেকে এক এক জোড়া আমাকে দিয়েছে এবং বলেছে, হে উম্মু যার‘আ! তুমি এ সম্পদ থেকে খাও, পরিধান কর এবং উপহার দাও। মহিলা আরও বলল, সে আমাকে যা কিছু দিয়েছে, তা আবূ যার‘আর একটি ক্ষুদ্র পাত্রও পূর্ণ করতে পারবে না (অর্থাৎ আবূ যার‘আর সম্পদের তুলনায় তা খুবই সামান্য ছিল)’। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, ‘আবূ যার‘আ তার স্ত্রী উম্মু যার‘আর জন্য যেমন আমিও তোমরা প্রতি তেমন (তবে আমি কক্ষনো তোমাকে ত্বালাক্ব দিব না)’।[১]

স্বামীর জন্য যরূরী হল স্ত্রীর প্রয়োজন শোনা ও ঘনিষ্ট হয়ে তাদের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য নির্দিষ্ট একটি সময় নির্ধারণ করা।

আজকের যুগের অধিকাংশ স্ত্রী তাদের স্বামীদের ব্যাপারে অভিযোগ করে যে, তাদের স্বামী অনেক রাত করে কর্মস্থল থেকে ফিরে মধ্যরাত পর্যন্ত টিভির সামনে বসে যায়। তখন স্ত্রী তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে মরার মতো বিছানায় শুয়ে যায়। কখনো এমনো হয় যে, স্বামী হাতে রিমোট নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ে। ওদিকে বেচারী স্ত্রীর দিকে তার সামান্য কোন ভ্রƒক্ষেপ থাকে না। এদের মধ্যে কেউ কেউ এমন আছে যে, অফিস শেষে বাড়ি ফিরে দীর্ঘ সময় ধরে অফিসের ফাইলপত্র নাড়াচাড়া করতে থাকে। যেন দ্বিতীয়বারের মত বাড়িতেও তারা অফিস খুলে বসেছে। আর তখন তার পরিবার অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকে।

ক্ষুদে বার্তা কিংবা মুঠোফোনের মত আধুনিক বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে একজন স্বামী প্রতিনিয়ত স্ত্রীর খোঁজ-খবর রাখতে পারে। সন্তুষ্টির জন্য স্বামীর এক মিনিটের খোঁজ-খবর নেয়া স্ত্রীর অনেক বড় পাওয়া বলে মনে হয়।

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যথাযথভাবে স্ত্রীদের হক্ব আদায় করতেন

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَنَّ نَبِيَّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَطُوْفُ عَلَى نِسَائِهِ فِي اللَّيْلَةِ الوَاحِدَةِ وَلَهُ يَوْمَئِذٍ تِسْعُ نِسْوَةٍ قَالَ قَتَادَةَ قُلْتُ لِأَنَسٍ أَوَكَانَ يُطِيْقُهُ؟ قَالَ كُنَّا نَتَحَدَّثُ أَنَّهُ أُعْطِيَ قُوَّةَ ثَلَاثِيْنَ

আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একই রাতে পর্যায়ক্রমে তাঁর স্ত্রীদের সঙ্গে মিলিত হতেন। তখন তাঁর নয়জন স্ত্রী ছিলেন। ক্বাতাদা বলেন, আমি আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) -কে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কি এত শক্তি রাখতেন? তিনি বললেন, আমরা পরস্পর বলাবলি করতাম যে, তাঁকে ত্রিশজনের শক্তি দেয়া হয়েছে।[২] ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আল্লাহভীতি ও ইলম রাখা সত্ত্বেও অধিক বিবাহ করেছিলেন ¯্রফে দ্বীনি আহকাম সুন্দরভাবে মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য, যা পুরুষ ছাহাবীদের পক্ষে অবগত হওয়াই সম্ভবপর ছিল না। এছাড়া মানুষের সামনে সাধারণ নিয়ম বিরুদ্ধ মু‘জিযা প্রকাশের জন্য অধিক বিবাহ করেছিলেন। কেননা তার মধ্যে সাধারণ মানুষের তুলনায় বিশেষ কিছু ক্ষমতা ছিল, যার কারণে অধিক হারে ছিয়াম পালনের পরও একইরাতে সকল স্ত্রীদের কাছে গমন করতে পারতেন। যা কোন মানুষের শরীরে বিশেষ শক্তি থাকলেই কেবল পারা সম্ভব। নিজেদের পৌরুষত্ব প্রমাণের জন্য আরবের লোকেরা অধিক বিবাহের দ্বারা গর্ববোধ করত। অধিক স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে ইবাদত থেকে গাফেল করতে পারেনি।[৩]

ইবাদত-বন্দেগী রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে স্ত্রীদের সাথে ঘনিষ্ট হওয়া ও আলাপচারিতা থেকে বাধাগ্রস্ত করত না। যেমন হাদীছে এসেছে-

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا صَلَّى فَإِنْ كُنْتُ مُسْتَيْقِظَةً حَدَّثَنِي وَإِلَّا اضْطَجَعَ حَتَّى يُؤْذَنَ بِالصَّلَاةِ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ফজরের সুন্নাত) ছালাত আদায় করার পর আমি জেগে থাকলে, তিনি আমার সাথে কথাবার্তা বলতেন, নতুবা ছালাতের সময় হওয়া সম্পর্কে অবগত করানো পর্যন্ত শুয়ে থাকতেন।[৪]

বিভিন্ন সফরেও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের সাথে বসে আলাপ-আলোচনা করতেন। আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত,

أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ إِذَا خَرَجَ أَقْرَعَ بَيْنَ نِسَائِهِ فَطَارَتِ القُرْعَةُ لِعَائِشَةَ وَحَفْصَةَ وَكَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا كَانَ بِاللَّيْلِ سَارَ مَعَ عَائِشَةَ يَتَحَدَّثُ

‘যখনই নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সফরে যাবার ইচ্ছা করতেন, তখনই স্ত্রীগণের মাঝে লটারী করতেন। এক সফরের সময় আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এবং হাফছাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর নাম লটারীতে ওঠে। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রীতি ছিল যখন রাত হত, তখন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সঙ্গে এক সাওয়ারীতে আরোহণ করতেন এবং তাঁর সাথে কথা বলতে বলতে পথ চলতেন।[৫]

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের খোঁজ-খবর নেয়ার অভ্যাসটি কখনোই ছাড়েননি, এমনকি যে রাতে তাঁর সাথে বাসর যাপনের জন্য যয়নাব বিনতে জাহাশ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে প্রস্তুত করা হচ্ছিল সেদিনও তিনি সকল স্ত্রীদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। হাদীছে এসেছে-

عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بُنِيَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِزَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ بِخُبْزٍ وَلَحْمٍ فَأُرْسِلْتُ عَلَى الطَّعَامِ دَاعِيًا فَيَجِيءُ قَوْمٌ فَيَأْكُلُوْنَ وَيَخْرُجُوْنَ ثُمَّ يَجِيءُ قَوْمٌ فَيَأْكُلُوْنَ وَيَخْرُجُوْنَ فَدَعَوْتُ حَتَّى مَا أَجِدُ أَحَدًا أَدْعُو فَقُلْتُ يَا نَبِيَّ اللهِ مَا أَجِدُ أَحَدًا أَدْعُوْهُ قَالَ ارْفَعُوْا طَعَامَكُمْ وَبَقِيَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ يَتَحَدَّثُوْنَ فِي البَيْتِ فَخَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَانْطَلَقَ إِلَى حُجْرَةِ عَائِشَةَ فَقَالَ السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ البَيْتِ وَرَحْمَةُ اللهِ فَقَالَتْ وَعَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ كَيْفَ وَجَدْتَ أَهْلَكَ بَارَكَ اللهُ لَكَ فَتَقَرَّى حُجَرَ نِسَائِهِ كُلِّهِنَّ يَقُوْلُ لَهُنَّ كَمَا يَقُوْلُ لِعَائِشَةَ وَيَقُلْنَ لَهُ كَمَا قَالَتْ عَائِشَةُ

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, যয়নাব বিনতে জাহশের সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বাসর যাপন উপলক্ষে কিছু গোশত ও রুটির ব্যবস্থা করা হল। তারপর খানা খাওয়ানোর জন্য আমাকে লোকদের ডেকে আনতে পাঠালেন। একদল লোক এসে খেয়ে চলে গেল। তারপর আর একদল এসে খেয়ে চলে গেল। এরপর আবার আমি ডাকতে গেলাম, কিন্তু কাউকে আর ডেকে পেলাম না। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আর কাউকে ডেকে পাচ্ছি না। তিনি বললেন, খানা উঠিয়ে নাও। তখন তিন ব্যক্তি ঘরে রয়ে গেল, তারা কথাবার্তা বলছিল। তখন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর ঘরের দিকে গেলেন এবং বললেন, আসসালামু আলাইকুম ইয়া আহলাল বায়ত ওয়া রাহমাতুল্লাহ! আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, ওয়া আলাইকাস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ। আল্লাহ আপনাকে বারাকাত দিন, আপনার স্ত্রীকে কেমন পেলেন? এভাবে তিনি পর্যায়ক্রমে সব স্ত্রীর ঘরে গেলেন এবং আয়েশাকে যেমন বলেছিলেন তাদেরও তেমনি বললেন। আর তাঁরা তাঁকে সে জবাবই দিয়েছিলেন, যেমন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) দিয়েছিলেন।[৬]

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক স্ত্রীদের ঘরে গমন করে তাদের খোঁজ-খবর নেয়া, তাদের অন্তরের ব্যাধি সারিয়ে তোলা এবং বিবাহের কারণে তাদের অন্তরের যাবতীয় চাহিদা পূরণ করা প্রভৃতি ছিল মহান আদর্শের অন্তর্গত। এজন্য স্ত্রীদের পক্ষ থেকে তাঁকে (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উদ্দেশ্য করে খুনসুটি মাখা মধুর কথা ছিল, ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনার (নব) স্ত্রীকে কেমন পেলেন?!’

রাসূলুল্লাহ(ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের ঘরে অপসন্দনীয় বিষয় প্রবেশের প্রাক্কালে তাদের মুখ থেকে এধরনের খুনসুটিপূর্ণ কথা প্রকাশ পাওয়া তাদের বুদ্ধিমত্তা ও অসীম ধৈর্য ও উত্তম বৈবাহিক সম্পর্ক বিদ্যমান থাকার পরিচায়ক। অন্যথা এটা বিভ্রান্তি ও প্রবল ক্ষতির কারণ হতে পারত। কিন্তু তাঁর সহধর্মিণীগণ ছিলেন সর্বোত্তম ও পূত-পবিত্র। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে-

فَجَعَلَ يَمُرُّ عَلَى نِسَائِهِ فَيُسَلِّمُ عَلَى كُلِّ وَاحِدَةٍ مِنْهُنَّ سَلَامٌ عَلَيْكُمْ كَيْفَ أَنْتُمْ يَا أَهْلَ الْبَيْتِ؟ فَيَقُوْلُوْنَ بِخَيْرٍ يَا رَسُوْلَ اللهِ كَيْفَ وَجَدْتَ أَهْلَكَ؟ فَيَقُوْلُ بِخَيْرٍ

‘তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীগণের নিকট গেলেন এবং প্রত্যেককেই ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে অভিভাদন জানিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে গৃহবাসী! তোমরা কেমন আছ? উত্তরে প্রত্যেকেই বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা ভাল আছি, আপনি আপনার নব স্ত্রীকে কেমন পেলেন? তিনি বললেন, ভালই’।[৭] উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এই হাদীছ থেকে প্রমাণিত হয় যে, বাড়িতে প্রবেশকালে স্বামীর জন্য তার স্ত্রী ও পরিবার-পরিজনকে সালাম দেয়া মুস্তাহাব। যে বিধানকে অনেক দাম্ভিক জাহেল ব্যক্তি অবজ্ঞা করে থাকে’।[৮]

উল্লেখ্য, মাঝে মাঝে পরিবারকর্তা যদি পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞেস করেন, তাহলে ভয়ে বা লজ্জায় যে প্রয়োজনগুলো প্রকাশ করতে পারছে না, সেগুলো নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে পারে।

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের হক্ব পূর্ণাঙ্গভাবে আদায় করতেন এবং তাদের সাথে কৃত অঙ্গীকার ভঙ্গ করতেন না

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় স্ত্রী খাদীজার (রাযিয়াল্লাহু আনহা) জীবদ্দশায় ও মৃত্যুর পর সবর্দা তার প্রশংসা করতেন। খুব আগ্রহের সাথে তার মর্যাদা বর্ণনা করতেন। খাদীজার মৃত্যুর পরও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্তরে তার ভালবাসা ও মর্যাদার সামান্যতম ভাটা পড়েনি। একথার প্রমাণ মেলে নিম্নের হাদীছে :

عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ مَا غِرْتُ عَلَى أَحَدٍ مِنْ نِسَاءِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا غِرْتُ عَلَى خَدِيْجَةَ وَمَا رَأَيْتُهَا وَلَكِنْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ ذِكْرَهَا وَرُبَّمَا ذَبَحَ الشَّاةَ ثُمَّ يُقَطِّعُهَا أَعْضَاءً ثُمَّ يَبْعَثُهَا فِيْ صَدَائِقِ خَدِيْجَةَ فَرُبَّمَا قُلْتُ لَهُ كَأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ فِي الدُّنْيَا امْرَأَةٌ إِلَّا خَدِيْجَةُ فَيَقُوْلُ إِنَّهَا كَانَتْ وَكَانَتْ وَكَانَ لِيْ مِنْهَا وَلَدٌ

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অন্য কোন স্ত্রীর প্রতি এতটুকু ঈর্ষা করিনি যতটুকু খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর প্রতি করেছি। অথচ আমি তাঁকে দেখিনি। কিন্তু নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কথা বেশি সময় আলোচনা করতেন। কোন কোন সময় বকরী যব্হ করে গোশতের পরিমাণ বিবেচনায় হাড়-গোশতকে ছোট ছোট টুকরো করে হলেও খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর বান্ধবীদের ঘরে পৌঁছে দিতেন। আমি কোন সময় ঈর্ষা ভরে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতাম, মনে হয় খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ছাড়া দুনিয়াতে যেন আর কোন নারী নেই। উত্তরে তিনি বলতেন, হ্যাঁ। তিনি এমন ছিলেন, এমন ছিলেন, তাঁর গর্ভে আমার সন্তানাদি জন্মেছিল।[৯]

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক শেষ হওয়ার পরও কখনোই তাকে ভুলে যাননি এবং তার প্রশংসা করা থেকেও বিরত হননি। বরং তার মৃত্যুর পরও তার প্রতি ভালবাসা অব্যাহত ছিল। তিনি খাদীজা সম্পর্কে বলতেন (إِنَّهَا كَانَتْ وَكَانَتْ) ‘সে এমন ছিল, এমন ছিল’ অর্থাৎ ‘সে মর্যাদাশালী ও বুদ্ধিমতি নারী ছিল’। এখানে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তি, (وَكَانَ لِي مِنْهَا وَلَدٌ) ‘তার গর্ভে আমার সন্তানাদি জন্মেছিল’ দ্বারা উদ্দেশ্য, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সকল সন্তানাদি খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর গর্ভ থেকে জন্মলাভ করেছিল। তবে শুধু পুত্র ইবরাহীম তাঁর দাসী মারিয়াহ কিবতিয়্যাহ-এর গর্ভ থেকে জন্মলাভ করেছিল।

সর্বসম্মতিক্রমে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পুত্র ছিল কাসিম এবং চার কন্যা ছিল- যয়নাব, রুকাইয়্যাহ, উম্মে কুলছুম ও ফাতিমাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুন্না)। আব্দুল্লাহ নবুওয়ত লাভ পরবর্তী সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিল। তাকে ‘তাহির’ বা ‘তাইয়্যিব’ বলেও ডাকা হত।[১০]

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই খাদীজাহর কথা স্মরণ করতেন, তখন তার ভূয়সী প্রশংসা করতেন এবং তার জন্য ইস্তেগফার করতেন। আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বর্ণনা করেন,

كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا ذَكَرَ خَدِيْجَةَ لَمْ يَكُنْ يَسْأَمُ مِنْ ثَنَاءٍ عَلَيْهَا وَالِاسْتِغْفَارِ لَهَا

‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখনই খাদীজাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে স্মরণ করতেন, তার প্রশংসা করতেন এবং তার জন্য ইস্তেগফার করতেন’।[১১] অথচ আজকের যুগের মানুষের দিকে তাকালে বিস্মিত না হয়ে পারা যায় না। একজন ব্যক্তির স্ত্রী মারা গেছে। সে আরেকটি বিয়ে করেছে। অতঃপর সে মানুষের সাথে আলাচারিতার সময় নতুন স্ত্রীর প্রশংসা করে। আর মৃত স্ত্রীর বদনাম করে বলে, সে ভাল ছিল না, তার এই এই দোষ ছিল ইত্যাদি। অথবা ত্বালাক্বের মাধ্যমে স্ত্রীর সাথে বিচ্ছেদ ঘটেছে। এরপর সে এর ওর কাছে সেই স্ত্রীর নামে বদনাম করে। সে নাকি অনেক ধৈর্যধারণ করেছে। তার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গেছে বলেই কেবল তাকে ত্বালাক্ব দিয়েছে ইত্যাদি নানান কথা। যখনই সে স্ত্রীর কথা স্মরণ করে, কেবল তার দুর্নাম করে। আবার এমনও কিছু স্বামী রয়েছে, যারা কখনোই স্ত্রীদের থেকে কল্যাণকর কিছু দেখতে পায় না, যদিও তাদের উপর স্ত্রীর অনেক অনুগ্রহ থাকে।

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কাউকে খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর প্রশংসা করতে দেখলে প্রচ- আনন্দিত হতেন। আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর বোন হালাহ বিনতে খুয়াইলিদ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে প্রবেশের অনুমতি চাইলে, (তার কন্ঠ শুনে) তাঁর খাদীজার অনুমতি চাওয়ার কথা স্মরণ হলে তিনি প্রচ- খুশী হন। তিনি দু‘আ করেন, হে আল্লাহ! আপনি হালাহকে খাদীজাহর মত কর। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি খুব ঈর্ষা করে বললাম, আপনি কুরাইশের একজন বৃদ্ধা মহিলার কথা এত স্মরণ করছেন, অথচ বয়সের ভারে তার দাঁতগুলো পড়ে গিয়েছিল। যুগের আবর্তে সে বিদায় নিয়েছে। আল্লাহ আপনাকে তার চেয়ে উত্তম স্ত্রী দান করেছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রচ- রাগে অগ্নিশর্মা হলেন। ওহী অবতরণ বা আকাশে প্রচ- মেঘ হলেই কেবল তাঁকে এমন চেহারায় দেখতে পেতাম। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ আমাকে তার চেয়ে উত্তম কোন স্ত্রী দান করেননি। যখন মানুষরা আমাকে অস্বীকার করছিল, তখন সে আমার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছিল। মানুষরা যখন আমাকে মিথ্যুক বলছিল, তখন সে আমাকে সত্যায়ন করেছে। যখন লোকেরা আমাকে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করেছিল, সে তখন আমাকে তার সম্পদ দিয়ে সাহায্য করেছিল। যখন আমি সন্তানহীন ছিলাম, আল্লাহ তখন তার মাধ্যমে আমাকে সন্তান দান করেছিলেন। আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আল্লাহর শপথ! যিনি আপনাকে সত্য দ্বীন সহ প্রেরণ করেছেন, এরপর আর কোনদিনই আমি তার সম্পর্কে উত্তম ছাড়া কিছু বলব না।[১২]

উক্ত হাদীছ থেকে বুঝা যায়, মানুষ যখন কাউকে ভালবাসে, তখন সেই মানুষটির প্রিয়জন ও তার সাথে সম্পৃক্ত সকল বিষয়কে ভালবাসতে থাকে।[১৩] এখানে সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এখানে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী আয়েশা সিদ্দীক্বা এমন একজন নারীর বিষয়ে ঈর্ষা করছেন যে, তার সাথে বিবাহ হওয়ার বহু আগেই মৃত্যুবরণ করেছে।[১৪]

দুনিয়াতে খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সম্পর্কের গভীরতা এত বেশী ছিল যে, তিনি তার জীবদ্দশায় অন্য কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি। আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, لَمْ يَتَزَوَّجِ النَّبِيُّ ﷺ عَلَى خَدِيْجَةَ حَتَّى مَاتَتْ ‘খাদীজাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য স্ত্রী গ্রহণ করেননি’।[১৫] এবিষয়ে ওলামাদের মাঝে কোন মতপার্থক্য নেই। এছাড়া হাদীছ দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর বিশেষ অবস্থান ও মহান মর্যাদা থাকার প্রমাণ মেলে। কেননা তার জীবদ্দশায় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি।

খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর জন্য দ্বিগুণ মর্যাদা ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদীজাহকে বিবাহ করার পর ৩৮ বছর বেঁচে ছিলেন। এর মধ্যে খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এককভাবে ২৫ বছর বেঁচে ছিলেন। সুতরাং তাদের বৈবাহিক জীবন সর্বসাকল্যে ৩০ বছরে দাঁড়ায়। খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এর সাথে কাটানো এই দীর্ঘ বৈবাহিক জীবনে তার প্রতি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আবেগ ও শ্রদ্ধাবোধ পূর্ণাঙ্গ ছিল এবং তিনি সমস্ত দুঃখ-দুর্দশা থেকে মুক্ত ছিলেন।…. এজন্যই তার এতো মর্যাদা যে, তার জীবদ্দশায় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অন্য কোন স্ত্রী গ্রহণ করেননি।

খাদীজার প্রতি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্দর চুক্তি পূরণের আরেকটি দৃষ্টান্ত হল, তার মৃত্যুর পরও তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার বান্ধবীদের খোঁজ-খবর রাখতেন। আয়েশা সিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত,

كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُكْثِرُ ذِكْرَهَا وَرُبَّمَا ذَبَحَ الشَّاةَ ثُمَّ يُقَطِّعُهَا أَعْضَاءً ثُمَّ يَبْعَثُهَا فِيْ صَدَائِقِ خَدِيْجَةَ

‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কথা বেশি সময় আলোচনা করতেন। কোন কোন সময় বকরী যব্হ করে গোশতের পরিমাণ বিবেচনায় হাড়-গোশতকে ছোট ছোট টুকরো করে হলেও খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর বান্ধবীদের ঘরে পৌঁছে দিতেন’।[১৬] অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَإِنْ كَانَ لَيَذْبَحُ الشَّاةَ فَيُهْدِيْ فِيْ خَلَائِلِهَا مِنْهَا مَا يَسَعُهُنَّ ‘কোন দিন বকরী যব্হ হলে খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর বান্ধবীদের নিকট তাদের প্রত্যেকের প্রয়োজন মত গোশত নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপঢৌকন হিসাবে পাঠিয়ে দিতেন’।[১৭]

অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, وَإِنْ كَانَ لَيَذْبَحُ الشَّاةَ فَيَتَتَبَّعُ بِهَا صَدَائِقَ خَدِيْجَةَ فَيُهْدِيْهَا لَهُنّ ‘তিনি কখনো ছাগল যব্হ করলে খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর বান্ধবীদের খুঁজে খুঁজে তার গোশত উপহার স্বরূপ প্রদান করতেন’।[১৮] এই হাদীছে فَيَتَتَبَّعُ শব্দের অর্থ হচ্ছে- ‘তিনি খুঁজে বের করতেন’। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পক্ষ থেকে খাদীজাহর বান্ধবীদের গোশত হাদিয়া করা ছিল তার প্রতি সম্মান দেখানো ও উত্তমভাবে অঙ্গীকার পালনের নিমিত্তে।[১৯]

উপরিউক্ত হাদীছগুলো প্রমাণ করে উত্তম অঙ্গীকার পূরণ, হৃদ্যতা বজায় রাখা, স্ত্রীর সম্মান রক্ষা করা, মৃত্যুর আগে ও পরে উত্তমভাবে বৈবাহিক সম্পর্ক অটুট রাখা এবং স্ত্রীর মৃত্যুর পর তার পরিবারকেও সম্মান জানানো উত্তম আখলাকের অন্তর্গত।[২০] আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا أُتِيَ بالشَّيء يَقُوْلُ اذْهَبُوْا بِه إِلَى فُلَانَةٍ فَإنَّها كَانَت صَدِيْقةُ خَدِيْجةَ. اذْهَبُوْا بِه إلى فُلَانَةٍ فَإنَّها كَانَتْ تُحِبُّ خَدِيْجةَ

‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কিছু দেয়া হলে তিনি বলতেন, যাও, এটা অমুক নারীকে দিয়ে এসো। কেননা সে ছিল খাদীজার বান্ধবী। এটি নিয়ে অমুক মহিলার ঘরে যাও। কেননা সে খাদীজাকে মহব্বত করত’।[২১]

আয়েশা সিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে থাকাবস্থায় একজন বৃদ্ধা মহিলা আসলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, আপনি কে? সে বলল, আমি জাছ্ছামাহ আল-মাযানী। তিনি বললেন, না, আপনি বরং হাসসানাহ আল-মাযানী। কেমন আছেন? আপনাদের কী অবস্থা? আমার আসার পর আপনারা কেমন ছিলেন? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার জন্য আমার পিতা-মাতা কুরবান হোক, আমরা ভালই ছিলাম। সেই মহিলা প্রস্থান করলে আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এই সামান্য বৃদ্ধা মহিলাকে আপনি এভাবে সাদর সম্ভাষণ জানালেন! তিনি বললেন, হে আয়েশা! এই বৃদ্ধা মহিলা খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর জীবদ্দশায় একবার এসেছিল, নিশ্চয় সুন্দর সৌহার্দপূর্ণ আচরণ ঈমানের অঙ্গ’।[২২]

গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা

¹ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আগমনকারী খাদীজার বান্ধবী অতি বৃদ্ধা হলেও তিনি তার নাম পরিবর্তন করে আরো সুন্দর ও মুনোমুগ্ধকর নাম রাখলেন, কেননা ‘জাছছামাহ’ নামের অর্থ হল, ‘অতি অলস লোক, যে কোন কাজ-কর্ম করতে চায় না’। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর রাখা পরিবর্তিত নাম ‘হাসসানাহ’ এর অর্থ হল, অত্যন্ত সুন্দরী। এটি চমৎকার একটি নাম, আজকের যামানায় যে নামগুলোর দ্বারা মহিলাদের খুব কমই নামকরণ করা হয়ে থাকে।[২৩]

¹ সৌহার্দপূর্ণ উত্তম আচরণ ও অঙ্গীকার পূরণ মুমিন চরিত্রের অন্তর্ভুক্ত। আর খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর বান্ধবীকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উত্তমভাবে সম্ভাষণ জানানো, সুন্দর আচরণ করা, গভীর মমত্ববোধ দেখানো এসব কিছুই খাদীজার প্রতি তাঁর গভীর ভালাবাসা থাকার প্রমাণ। যে তাঁর হাতকে শক্তিশালী করেছিল, তাঁর কষ্ট লাঘব করেছিল এবং বিপদে সান্ত¦না দিয়েছিল। অথচ বর্তমান সময়ের অনেক স্বামী বিবাহের প্রাথমিক সময়ে স্ত্রীর কষ্ট সহ্য করা, তার হাতে হাত রেখে সাহায্য করা এবং বাড়ি নির্মাণে তাকে সহযোগিতা করা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে অস্বীকার করে থাকে। নিঃসন্দেহে এটি সৌহার্দপূর্ণ উত্তম আচরণের মধ্যে পড়ে না।

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীকে ভালবাসার ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি রাখতেন না। যেমন তিনি খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) সম্পর্কে বলেন, إِنِّيْ قَدْ رُزِقْتُ حُبَّهَا ‘তার ভালবাসা আমার মনে জায়গা করে নিয়েছে’।[২৪] এই হাদীছ ইঙ্গিত বহন করে যে, খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর প্রতি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অগাধ ভালবাসা ছিল।[২৫]

আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর প্রতিও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অগাধ ভালবাসা ছিল। তিনি একমাত্র তাকেই অল্প বয়স্কা নারী হিসাবে বিবাহ করেছিলেন এবং তার মত আর কাউকে ভালবাসেননি। আয়েশা (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এই ভালবাসা প্রকাশ্যে ছিল, তিনি তা গোপন করতেন না। একদা আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নিকটে সবচেয়ে প্রিয় কে? তিনি বললেন, আয়েশা। আমি বললাম, পুরুষদের মধ্য হতে কে? তিনি বললেন, তার বাবা আবু বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। [২৬] অথচ বর্তমানকালে লক্ষ্য করা যায় যে, অনেক স্বামী দীর্ঘ সময় যাবৎ একজন স্ত্রীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে জড়িত থাকার পরও একদিনের জন্যও তার কাছে ভালবাসার কথা প্রকাশ্যে নিবেদন করে না। অনেকেই আবার এটাকে ব্যক্তিত্বের খেলাফ কাজ বলে মনে করে। আবার অনেকে লজ্জার কারণে এই কাজ থেকে বিরত থাকে। অনেক মানুষ জানেই না যে, স্ত্রীর সামনে প্রকাশ্যে ভালবাসার কথা নিবেদন করা বৈবাহিক সম্পর্ককে দীর্ঘস্থায়ীভাবে মধুর ও সুখময় করে। এছাড়া পরস্পর বিশ্বস্ততা বৃদ্ধি করে। প্রতিটি স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে প্রকাশ্যে ভালবাসা পেতে চায় এবং বেশি বেশি পেতে চায়। অনেক স্ত্রীর ক্ষেত্রে অনাকাক্সিক্ষত খারাপ কাজ সংঘটিত হতে দেখা যায়, যখন তারা অন্যের কাছ থেকে এমন সুন্দর আচরণ পায়, যা স্বামীর কাছ থেকে পায় না।


* এম. এ, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. নাসাঈ, হা/৪৬৮৩; ইবনু মাজাহ, হা/৪২৪২; ছহীহুল জামে‘ হা/২৩৫৩।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৮, ২৮৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৩০৯।
[৩]. ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী, ৯ম খ-, পৃ. ১১৫।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/১১৬৭।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২১১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৪৫।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৭৯৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪২৮।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪২৮।
[৮]. ফাতহুল মুনঈম, ৫ম খ-, ৫৬৪ পৃ.।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৮১৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৩৫।
[১০]. ফাতহুল বারী, ৭ম খ-, পৃ. ১৩৭।
[১১]. ত্বাবারানী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/২১; আল্লামা হায়ছামী হাদীছটিকে হাসান বলেছেন, মাজমাউয যাওয়ায়িদ, ৯ম খ-, পৃ. ৩৬০।
[১২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৩৪৩; তাবারানী, মু‘জামুল কাবীর, ২৩তম খ-, পৃ. ১৪; সনদ ছহীহ।
[১৩]. ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী, ৭ম খ-, পৃ. ১৪০।
[১৪]. ইমাম যাহাবী, সিয়ারু ‘আলামিন নুবালা, ২য় খ-, পৃ. ১১২।
[১৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৩৬।
[১৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৮১৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৩৫।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৮১৬।
[১৮]. তিরমিযী, হা/২০১৭।
[১৯]. তুহফাতুল আহওয়াযী, ৬ষ্ট খ-, পৃ. ১৩৪।
[২০]. ইমাম নববী, শরহে ছহীহ মুসলিম, ১৫তম খ-, পৃ. ২০২।
[২১]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/২৩২; আলবানী ‘হাসান’ বলেছেন।
[২২]. মুসতাদরাক হাকেম, ১ম খ-, পৃ. ১৭; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২১৬।
[২৩]. শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহর অনুসরণে তার কোন এক কন্যার নাম রেখেছিলেন হাসসানাহ, সিলসিলা ছহীহাহ, ১ম খ-, পৃ. ২১৫।
[২৪]. ছহীহ মুসিলম, হা/২৪৩৫।
[২৫]. ইমাম নববী, শরহে ছহীহ মুসলিম, ১ম খ-, পৃ. ২০১।
[২৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬৬২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৮৪।




প্রসঙ্গসমূহ »: জীবন কথা নবী-রাসূল
নববী আদর্শ (১৮তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৭ম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৪তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৫তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৭তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৪র্থ পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (২০তম পর্ব) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৯ম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (২য় পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৫ম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১০ম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ