সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৯:৪৫ পূর্বাহ্ন

রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পারিবারিক জীবন

মূল : শায়খ মুহাম্মাদ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*


(১০ম কিস্তি) 

যেভাবে নবী গৃহে সমস্যার সমাধান হত


রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বীয় পবিত্র স্ত্রীদের সাথে সৌভাগ্যময় পবিত্র জীবন-যাপন করেছেন। যা নি¤েœাক্ত আল্লাহর বাণীটির বাস্তবরূপ ছিল। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ عَاشِرُوۡہُنَّ بِالۡمَعۡرُوۡفِ

‘আর তোমরা তাদের সাথে সদ্ভাবে বসবাস কর’ (সূরা আন-নিসা : ১৯)। তবে বিভিন্ন গৃহে যেমন কিছু কিছু সমস্যা ঘটে, নবীজির এ সম্মানিত গৃহেও তেমনি কিছু সমস্যা ঘটেছিল।

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সকল স্বামীদের আদর্শ হিসাবে ভাবা হয়। এজন্য নবীগৃহে যে সমস্যাগুলো ঘটেছে এবং এমন পরিস্থিতিতে নবীজি কিভাবে স্ত্রীদের সাথে সমস্যাগুলোর সমাধান করেছেন মহান আল্লাহ তা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন। আর এই মাসআলাটি সকল স্বামীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, বাড়ীতে যে কোন ধরণের সমস্যার সৃষ্টি হওয়া বিপদের কারণ নয়; কেননা কোন বাড়িই সমস্যা মুক্ত নয়। তবে প্রজ্ঞা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে সমস্যাগুলোর সমাধান না করতে পারাটা বিপদজনক। এতে এক পর্যায়ে অবস্থার এতই অবনতি হয় যে, তাতে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পরস্পর দূরত্ব তৈরি ও ত্বালাক্বের মত ঘটনাগুলো ঘটে যায়।

পরিবারে সমস্যা তৈরি হলে রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের সাথে কেমন আচরণ করতেন এং কিভাবেই বা তার সমাধান করতেন?

নবীগৃহ অনেক গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। যেমন স্ত্রীর উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ, স্ত্রীদের একজোট হয়ে ভরণ-পোষণের জন্য আবেদন করা ইত্যাদি। এখানে আমরা এমনই কিছু ঘটনা আলোচনা করব এবং দেখব কিভাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সমস্যাগুলোর সমাধান করতেন।

প্রথমে মিথ্যা অপবাদের ঘটনাটি উল্লেখ করব। এটি ছিল সবচেয়ে বড় বিপদ; যা উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর সাথে ঘটেছিল। নবী পরিবারের উপর আসা সকল পরীক্ষার মধ্যে এটি বড় বিপদ ও পরীক্ষা ছিল। এমনকি মহান আল্লাহ স্বয়ং সপ্তম আসমানের উপর থেকে আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে দোষমুক্ত ঘোষণা করেন। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) নিজে এই ঘটনাটি আমাদের জন্য বর্ণনা করেছেন।

আয়েশা ছিদ্দীকা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন সফরে যাওয়ার সংকল্প করতেন তখন তিনি তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে লটারী করতেন। যার নাম আসত তাকেই তিনি তার সাথে সফরে নিতেন। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, এক যুদ্ধ-সফরে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লটারী করলেন এবং এতে আমার নাম উঠল। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সে যুদ্ধে শরীক হই। পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পর এ যুদ্ধে আমি শরীক হয়েছিলাম। আরোহী অবস্থায় আমাকে ভিতরে রাখা হত এবং অবতরণের সময়ও হাওদার ভিতর থাকতাম। পরে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যুদ্ধ হতে অব্যাহতির পর ফিরে এসে মদীনার কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছার পর এক রাতে তিনি রওয়ানা হবার আদেশ দিলেন। লোকজন যখন রওয়ানা হবার ব্যাপারে ঘোষণা দিল, তখন আমি দাঁড়িয়ে চলতে লাগলাম, এমনকি আমি সৈন্যদেরকে ছাড়িয়ে দূরে চলে গেলাম।

এরপর আমি প্রাকৃতিক প্রয়োজন (পেশাব-পায়খানা) সেরে আরোহীর নিকট এলাম এবং নিজ বক্ষে হাত দিয়ে দেখলাম, যিফারী পুতির প্রস্তুত আমার হারটি হারিয়ে গেছে। তাই আগের স্থানে ফিরে গিয়ে আমি আমার হারটি সন্ধান করলাম। (এতে আমার দেরী হয়ে গেল।) এদিকে হাওদা বহনকারী লোকজন এসে দ্রব্য-সামগ্রী উঠিয়ে আমার বহনকারী উটের উপর রেখে দিল। তারা ধারণা করেছিল, আমি হাওদার ভিতরেই আছি। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, তখনকার মহিলারা হালকা-পাতলা গঠনেরই হত। না বেশি ভারী, না বেশি মোটা। কেননা তারা কম খানা খেত। তাই উঠানোর সময় হাওদার ওজন তাদের কাছে সাধারণ অবস্থা হতে ব্যতিক্রম মনে হয়নি। অধিকন্তু তখন আমি অল্প বয়সী ছিলাম। পরিশেষে লোকেরা উট দাঁড় করিয়ে পথ চলতে শুরু করে দিল। সৈন্যদের রওনা হয়ে যাবার পর আমি আমার হার খুঁজে পেলাম। এরপর আমি আগের স্থানে ফিরে এসে দেখলাম, তথায় কোন জন-মানুষের শব্দ নেই আর সাড়া দেয়ার মত কোন লোকও তথায় নেই। তখন আমি সংকল্প করলাম, আমি যেখানে বসা ছিলাম সেখানেই বসে থাকব এবং আমি ভাবলাম, লোকেরা যখন খুঁজে আমাকে পাবে না তখন নিশ্চয় তারা আমার খোঁজে আমার নিকট ফিরে আসবে।

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি আমার সে স্থানে বসা অবস্থায় ঘুম এল আর আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। সাফওয়ান ইবনু মুওয়াত্তাল আস-সুলামী আয-যাকওয়ানী নামক এক লোক ছিল। আরামের উদ্দেশে সৈন্যদের পেছনে শেষ রাত্রে সে আগের জায়গায়ই থেকে গিয়েছিল। পরে সে রওয়ানা হয়ে প্রত্যুষে আমার স্থানে পৌঁছল। দূর থেকে সে একটি মানব দেহ দেখতে পেয়ে আমার কাছে এল এবং আমাকে দেখে সে চিনে ফেলল। কেননা পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বে সে আমাকে দেখেছিল। আমাকে চিনে সে ‘ইন্না- লিল্লাহি ওয়া ইন্না- ইলাইহি রাজিউন’ পড়লেন তাঁর ‘ইন্না- লিল্লা-হ ...’ এর শব্দে আমার ঘুম ছুটে গেল। অকস্মাৎ আমি আমার চাদর দিয়ে স্বীয় মুখম-ল আবৃত করে নিলাম। আল্লাহর শপথ সে আমার সাথে কোন কথা বলেনি এবং ‘ইন্না- লিল্লাহ ...’ পাঠ ব্যতীত তার কোন কথাই আমি শুনিনি। এরপর সে তার উট বসিয়ে নিজ হাত বিছিয়ে দিলেন আমি তার উটের উপরে উঠলাম। আর সে পায়ে হেঁটে আমাকে সহ উট হাঁকিয়ে নিয়ে চলল। যেতে যেতে আমরা সৈন্য দলের কাছে গিয়ে পৌঁছলাম। তখন তারা দ্বি-প্রহরের প্রচ- রোদের মধ্যে সওয়ারী থেকে নেমে ভূমিতে অবস্থান করছিল।

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমার (অপবাদের) সম্পর্কে জড়িত হয়ে কতক লোক নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনেছে আর এ সম্পর্কে যে প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তার নাম ‘আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল। পরিশেষে আমরা মদীনায় পৌঁছলাম। মদীনায় পৌঁছার পর এক মাস যাবৎ আমি অসুস্থ ছিলাম। এদিকে মদীনার মানুষজন অপবাদ রটনাকারীদের কথা গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে লাগল। এ সম্পর্কে আমি কিছুই বুঝতে পারিনি। তবে এ অসুস্থ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তরফ থেকে পূর্বের ন্যায় স্নেহ না পাওয়ার ফলে আমার মনে সন্দেহের উদ্রেক হয়েছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে ঢুকে কেবল সালাম করে বলতেন, এই তুমি কেমন আছ? এ আচরণ আমাকে সন্দেহে ফেলে দিল। আমি সে (মন্দ) বিষয়টি সম্পর্কে জানতাম না। তারপর কিছুটা সুস্থ হবার পর আমি ও উম্মু মিসতাহ প্রয়োজন সারার উদ্দেশ্যে ময়দানে বের হলাম। তা আমাদের শৌচাগার ছিল। আমরা রাতে বের হতাম এবং রাতেই চলে আসতাম। এ হল আমাদের গৃহের নিকট শৌচাগার নির্মাণের পূর্ববর্তী সময়ের ঘটনা। তখন আগের দিনের আরব মানুষের মত মাঠে গিয়ে আমরা শৌচকার্য সারতাম। আর আমরা ঘরের কোণে শৌচাগার তৈরি করা পসন্দ করতাম না। অতএব আমি এবং মিসতাহ-এর মা যেতে লাগলাম। সে ছিল আবূ রুহম ইবনু মুত্তালিব ইবনু আবদে মান্নাফ এর কন্যা এবং তার মা ছিল আবূ বকর ছিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খালা সাখর ইবনু আমির-এর মেয়ে। তাঁর সন্তানের নাম ছিল মিসতাহ ইবনু উসাসাহ ইবনু ‘আব্বাদ ইবনু মুত্তালিব। মোটকথা, আমি ও বিনতে আবূ রুহম (মিসতাহ-এর মা) নিজ নিজ শৌচকার্য সেরে ঘরের দিকে রওয়ানা হলাম।

তখন মিসতাহ এর মা স্বীয় চাদরে পেচিয়ে হোঁচট খেয়ে মাটিতে পড়ে যায়। আর সে বলে উঠে মিসতাহ ধবংস হোক। তখন আমি বললাম, তুমি অন্যায় কথা বলেছ। তুমি কি বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী লোককে বকছ? সে বলল, হে অবলা নারী! মিসতাহ কী বলেছে, তুমি কি শোননি? আমি বললাম, সে কী বলেছে? আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, তারপর সে অপবাদ রটনাকারীরা যা বলেছে, সে সম্পর্কে আমাকে সংবাদ দিল। এতে আমার অসুস্থতা কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেল। আমি যখন ঘরে ফিরে আসলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার ঘরে প্রবেশ করে আমাকে সালাম দিলেন এবং বললেন, এই তুমি কেমন আছ? তখন আমি তাকে প্রশ্ন করলাম, আপনি কি আমাকে আমার বাবা-মায়ের বাড়ীতে যাওয়ার অনুমতি দিবেন? আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, তখন আমি আমার বাবা-মায়ের ঘরে গিয়ে এ বিষয়টির খোঁজ করার সংকল্প করেছিলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে অনুমতি দিলেন। আমি আমার মাতা-পিতার নিকট চলে আসলাম। তারপর আমি আমার মাকে বললাম, আম্মাজান! লোকেরা কী কথা বলছে? তিনি বললেন, মা! এদিকে কান দিয়ো না এবং একে মন্দ মনে কর না। আল্লাহর শপথ! কারো যদি কোন সুন্দর সহধর্মিণী থাকে ও সে তাকে ভালবাসে আর ঐ মহিলার কোন সতীনও থাকে তবে সতীনরা তার দোষচর্চা করবে না এমন খুব কমই হয়।

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, এ কথা শুনে আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ! লোকেরা এ কথা রটাতে শুরু করেছে? এরপর কেঁদে কেঁদে আমি সারারাত কাটালাম। এমনকি সকালেও অশ্রু বন্ধ হল না। আমি ঘুমাতে পারিনি। প্রভাতে আমি কাঁদছিলাম। এদিকে আমাকে ত্বালাক্ব দেয়ার ব্যাপারে পরামর্শ করার জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আলী ইবনু আবু তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এবং উসামাহ ইবনু যায়েদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ডাকলেন। তখন অহী স্থগিত ছিল। তিনি বলেন, উসামাহ ইবনু যায়েদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিবীদের সতীত্ব এবং তাদের সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ভালবাসার ক্ষেত্রে যা জানতেন সে দিকেই তিনি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ইশারা করলেন। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আয়েশা আপনার সহধর্মিণী, ভাল ছাড়া তার সম্পর্কে কোন কথাই আমাদের জানা নেই। আর আলী ইবনু আবূ তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আল্লাহ তো আপনার উপর কোন সংকীর্ণতা চাপিয়ে দেননি। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ব্যতীতও অনেক স্ত্রীলোক রয়েছে। আপনি যদি দাসী (বারীরাহ)-কে প্রশ্ন করেন তবে সে সত্য বলে দিবে।

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বারীরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে ডেকে বললেন, হে বারীরাহ! সন্দেহমূলক কোন কর্মে আয়েশাকে তুমি কখনো দেখেছ কি? বারীরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তাঁকে বললেন, ঐ সত্তার কসম! যিনি আপনাকে সত্য নবী হিসাবে পাঠিয়েছেন, আমি যদি তার মাঝে কোন কিছু দেখতাম তবে নিশ্চয় এর ত্রুটি আমি উল্লেখ করতাম। তবে সে একজন অল্প বয়সী কন্যা। পরিবারের জন্য আটার খামীর রেখেই সে ঘুমিয়ে থাকত আর বকরী এসে তা খেয়ে ফেলত। এ ত্রুটি ছাড়া বেশি কোন ত্রুটি আয়েশার মাঝে আছে বলে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মিম্বারে দাঁড়িয়ে আব্দুল্লাহ ইবনু উবাই ইবনু সালূল হতে প্রতিশোধ আশা করলেন। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, তিনি মিম্বারে দাঁড়িয়ে বললেন, হে মুসলিম সমাজ! আমার পরিবারের ব্যাপারে যে লোকের পক্ষ হতে কষ্টদায়ক বাক্যের খবর আমার নিকট পৌঁছেছে তার প্রতিশোধ গ্রহণ করার মত কোন লোক এখানে আছে কি? আমি তো আমার স্ত্রীর ব্যাপারে উত্তম ছাড়া অন্য কোন কথা জানি না এবং যে লোকের ব্যাপারে তারা অপবাদ রটনা করছে তাকেও আমি সংলোক বলে জানি। সে তো আমাকে ছাড়া আমার ঘরে কখনো প্রবেশ করত না।

এ কথা শুনে সা‘দ ইবনু মু‘আয আল-আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আপনার তরফ হতে প্রতিশোধ নিব। অপবাদ রটনাকারী লোক যদি আওস গোত্রের হয় তবে আমি তার গর্দান উড়িয়ে দিব। আর যদি সে আমাদের ভ্রাতা খাযরাজ গোত্রের হয় তবে আপনি আমাদেরকে আদেশ দিন। আমরা আপনার আদেশ পালন করব। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, তখন খাযরাজ সরদার সা‘দ ইবনু উবাদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দাঁড়ালেন। তিনি একজন নেককার লোক ছিলেন। তবে তখন বংশীয় আত্মমর্যাদা তাকে মূর্খ বানিয়ে ফেলেছিল। তাই তিনি সা‘দ ইবনু মু‘আযকে বললেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আল্লাহর শপথ! তুমি তাকে হত্যা করবে না। তুমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হবে না। এ কথা শুনে সা‘দ ইবনু মু‘তায (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর চাচাতো ভাই উসায়েদ ইবনু হুযায়র (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দাঁড়িয়ে সা‘দ ইবনু উবাদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বললেন, তুমি মিথ্যা বলছ। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয় আমরা তাকে হত্যা করব। নিশ্চয় তুমি মুনাফিক। তাই মুনাফিকদের পক্ষে কথা বলছ। এ সময় আওস ও খাযরাজ দু গোত্রের লোকেরা একে অপরের উপর উত্তেজিত হয়ে উঠল। এমনকি তারা যুদ্ধের ইচ্ছা করে বসল। অথচ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখনও তাদের সম্মুখে মিম্বারে দাঁড়ানো অবস্থায় ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে থামিয়ে শান্ত করলেন। তারা নীরব থাকল এবং তিনি নিজেও আর কোন কথা বললেন না।

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, সেদিন আমি সারাক্ষণ কান্নাকাটি করলাম। অবিরত ধারায় আমার অশ্রুপাত হচ্ছিল। রাত্রে একটুও আমার ঘুম আসল না। অতঃপর সামনের রাতেও আমি কেঁদে কাটালাম। এ রাতেও অবিরত ধারায় আমার অশ্রুপাত হল এবং একটুকুও নিদ্রা যেতে পারলাম না। এ দেখে আমার আব্বা আম্মা মনে করছিলেন যে, কান্নায় আমার কলিজা টুকর টুকর হয়ে যাবে। আমি কাঁদতে ছিলাম, আমার আব্বা-আম্মা আমার নিকটে বসা ছিলেন। এমন সময় একজন আনছার মহিলা আমার কাছে আসার অনুমতি চাইলে আমি তাকে অনুমতি দিলাম। সে এসে বসে কাঁদতে লাগল। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমাদের যখন এ অবস্থা এমন সময় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে প্রবেশ করলেন এবং আমাদেরকে সালাম করে বসলেন। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, অথচ আমার সম্বন্ধে যা বলাবলি হচ্ছে তারপর থেকে তিনি কখনো আমার কাছে বসেননি। এমনিভাবে এক মাস অতিক্রান্ত হল। আমার সম্পর্কে তার কাছে কোন অহী আসল না। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসে তাশাহহুদ পড়লেন। এরপর বললেন,

يَا عَائِشَةُ فَإِنَّهُ قَدْ بَلَغَنِىْ عَنْكِ كَذَا وَكَذَا فَإِنْ كُنْتِ بَرِيْئَةً فَسَيُبَرِّئُكِ اللهُ وَإِنْ كُنْتِ أَلْمَمْتِ بِذَنْبٍ فَاسْتَغْفِرِى اللهَ وَتُوْبِىْ إِلَيْهِ فَإِنَّ الْعَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ بِذَنْبٍ ثُمَّ تَابَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِ

‘হে আয়েশা! তোমার ব্যাপারে আমার কাছে এমন এমন খবর পৌঁছেছে। যদি তুমি এ বিষয়ে নিষ্পাপ এবং পবিত্র হও, তবে শীঘ্রই আল্লাহ তা‘আলা তোমার পবিত্রতার বিষয়ে ঘোষণা করবেন। আর যদি তোমার দ্বারা কোন পাপ হয়েই থাকে তবে তুমি আল্লাহর কাছে মার্জনা প্রার্থনা এবং তওবা কর। কেননা বান্দা পাপ স্বীকার করে তওবাহ করলে আল্লাহ তার তওবাহ গ্রহণ করেন’।

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তাঁর কথা সমাপ্ত করলেন, তখন আমার অশ্রুঝরা বন্ধ হয়ে গেল। এমনকি তারপর আর এক ফোটা অশ্রুও আমি অনুভব করলাম না। তারপর আমি আমার পিতাকে বললাম, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা বললেন, আমার তরফ হতে তার উত্তর দিন। তিনিও বললেন, আল্লাহর শপথ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কী উত্তর দিব, আমার তা অজানা। এরপর আমি আমার মাকে বললাম, আমার তরফ হতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উত্তর দিন। তিনি বললেন, আল্লাহর শপথ। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কী উত্তর দিব, আমি তা জানি না। আমি বললাম, তখন আমি ছিলাম কম বয়সী কিশোরী। কুরআন মাজীদও অধিক পাঠ করতে পারতাম না। এ অবস্থা দেখে আমিই তখন বললাম,

إِنِّىْ وَاللهِ لَقَدْ عَرَفْتُ أَنَّكُمْ قَدْ سَمِعْتُمْ بِهَذَا حَتَّى اسْتَقَرَّ فِىْ نُفُوْسِكُمْ وَصَدَّقْتُمْ بِهِ فَإِنْ قُلْتُ لَكُمْ إِنِّىْ بَرِيْئَةٌ وَاللهُ يَعْلَمُ أَنِّىْ بَرِيْئَةٌ لَا تُصَدِّقُوْنِىْ بِذَلِكَ وَلَئِنِ اعْتَرَفْتُ لَكُمْ بِأَمْرٍ وَاللهُ يَعْلَمُ أَنِّىْ بَرِيْئَةٌ لَتُصَدِّقُوْنَنِىْ وَإِنِّىْ وَاللهِ مَا أَجِدُ لِىْ وَلَكُمْ مَثَلًا إِلَّا كَمَا قَالَ أَبُوْ يُوسُفَ (فَصَبۡرٌ  جَمِیۡلٌ  وَ اللّٰہُ  الۡمُسۡتَعَانُ عَلٰی  مَا  تَصِفُوۡنَ)

‘আল্লাহর শপথ! আমি জানি, আপনারা এ অপবাদের কথা শুনেছেন, মনে তা গেঁথে গেছে এবং আপনারা তা বিশ্বাস করে নিয়েছেন। কাজেই এখন যদি আমি বলি, আমি নিষ্কলুষ তবে এ বিষয়ে আপনারা আমাকে বিশ্বাস করবেন না। আর যদি আমি মেনে নেই, যে সম্পর্কে আল্লাহ জানেন যে, আমি নিষ্পাপ, তবে আপনারা তা বিশ্বাস করবেন। আল্লাহর শপথ আমার ও আপনাদের জন্য (নবী) ইউসুফ (আলাইহিস সালাম)-এর পিতার কথার দৃষ্টান্ত ছাড়া ভিন্ন কোন দৃষ্টান্ত আমার দৃষ্টিতে পড়ে না। তিনি বলেছিলেন, ‘কাজেই পরিপূর্ণ ধৈর্যই উত্তম, তোমরা যা বলছ সে ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহই আমার আশ্রয়স্থল’।

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, অতঃপর আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম এবং বিছানায় শুয়ে পড়লাম। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আল্লাহর শপথ আল্লাহ তো ঐ সময়েও জানেন যে, নিশ্চয় আমি নিষ্পাপ এবং নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা আমার পবিত্রতা উন্মোচন করে দিবেন। কিন্তু আল্লাহর শপথ আমি মনে করিনি যে, আল্লাহ তা‘আলা আমার এ ব্যাপারে অহী অবতীর্ণ করবেন, যা পড়া হবে। কেননা আমার ব্যাপারে পড়ার মত আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন আয়াত অবতীর্ণ করা হবে আমার অবস্থা তার চেয়ে বেশি নি¤œমানের বলে আমি মনে করতাম। তবে আমি প্রত্যাশা করেছিলাম যে, স্বপ্নের মধ্যে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমন কোন বিষয় দেখবেন যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা আমার পবিত্রতা প্রকাশ করে দিবেন। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আল্লাহর শপথ! রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন তার জায়গা ছেড়ে যাননি এবং গৃহের লোকও কেউ বাইরে যায়নি। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা তঁর নবীর উপর অহী অবতীর্ণ করেন। অহী অবতীর্ণের প্রাক্কালে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর যে যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা দেখা দিত তার অনুরূপ অবস্থা দেখা দিল। এমনকি তাঁর প্রতি অবতীর্ণকৃত বাণীর ওযনের কারণে প্রচণ্ড শৈত্যপ্রবাহের দিনেও তার শরীর হতে মুক্তার মত বিন্দু বিন্দু ঘাম ঝরে পড়ত।

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে এ যন্ত্রণাদায়ক অবস্থা চলে গেলে তিনি হাসতে লাগলেন এবং প্রথমে যে কথাটি বললেন তা হল, হে আয়েশা! সুসংবাদ গ্রহণ কর। আল্লাহ তোমার পবিত্রতা ঘোষণা করেছেন। এ কথা শুনে আমার মা আমাকে বললেন, তুমি উঠে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্মান প্রদর্শন কর। আমি বললাম, আমি তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করব না এবং আল্লাহ ব্যতীত আর কার প্রশংসা করব না। তিনিই আমার পবিত্রতার ব্যাপারে আয়াত নাযিল করেছেন। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আমার পবিত্রতার ব্যাপারে দশটি আয়াত (আল্লাহ তা‘আলা বলেন) ‘যারা এই অপবাদ রচনা করেছে তারা তোমাদেরই একটি দল...’ (সূরা আন-নূর : ১১-২১) অবতীর্ণ করেছেন।

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আত্মীয়তার বন্ধন ও দারিদ্র্যের কারণে আবূ বকর ছিদ্দীক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মিসতাহকে আর্থিক সাহায্য করতেন। কিন্তু আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) সম্বন্ধে সে যা বলেছিল সে কারণে আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) শপথ করে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি আর কোন সময় মিসতাহকে আর্থিক সহযোগিতা দিব না। তখন আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করলেন, ‘তোমাদের মাঝে যারা ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারী তারা যেন কসম না করে যে, তারা দান করবে না আত্মীয়-স্বজন ও অভাবগ্রস্তদেরকে এবং আল্লাহর পথে যারা গৃহ ত্যাগ করেছে তাদেরকে কিছুই দিবে না; তারা যেন তাদেরকে ক্ষমা করে তাদের দোষ-ক্রটি উপেক্ষা করে; তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ তোমাদেরকে ক্ষমা করেন? এবং আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আন-নূর : ২২)।

তারপর আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই ভালবাসী যে, আল্লাহ আমাকে মাফ করে দিন। এরপর তিনি মিসতাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর জন্য যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতেন তা পুনরায় খরচ করতে শুরু করলেন। আর বললেন, তাকে আমি এ অর্থ দেয়া কোন সময় বন্ধ করব না।

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রী যয়নাব বিনতে জাহল (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-কে আমার সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি যয়নাবকে বলেছিলেন, ‘তুমি আয়েশা সম্বন্ধে কী জান বা দেখেছ? জবাবে তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আমার কান ও চোখকে হেফাযত করেছি। আল্লাহর শপথ! তাঁর ব্যাপারে আমি উত্তম ব্যতীত কিছুই জানি না।

আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের মাঝে তিনি আমার প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। কিন্তু আল্লাহভীতির মাধ্যমে আল্লাহ তাঁকে হেফাযত করেছেন। অথচ তাঁর বোন হামানাহ বিনতে জাহশ তাঁর পক্ষাবলম্বন করে ঝগড়া করে, আর এভাবে সে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়।[১]

 (চলবে ইনশাআল্লাহ)

* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র : 

[১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬৬১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৭০।




প্রসঙ্গসমূহ »: জীবন কথা
নববী আদর্শ (১০ম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৬ষ্ঠ পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৯তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৩য় পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৫ম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৮তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৯ম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (৮ম পর্ব) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (২০তম পর্ব) - আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৬ তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
নববী আদর্শ (১৭তম পর্ব) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ