রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পারিবারিক জীবন
-মূল : শায়খ মুহাম্মাদ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ
-অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*
(৫ম কিস্তি)
নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর থেকে সর্বক্ষণ সুগন্ধি বের হওয়াকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَشْتَدُّ عَلَيْهِ أَنْ تُوْجَدَ مِنْهُ الرِّيْحُ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাবে এটা ছিল তাঁর কাছে অতি অসহনীয় বিষয়’।[১] অন্য বর্ণনায় এসেছে, وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَشَدُّ شَيْءٍ عَلَيْهِ أَنْ يُوجَدَ مِنْهُ رِيْحُ شَيْءٍ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে দুর্গন্ধ পাওয়া যাবে এটা ছিল তাঁর কাছে অতি অসহনীয় বিষয়’।[২]
عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حُبِّبَ إِلَيَّ مِنَ الدُّنْيَا النِّسَاءُ وَالطِّيْبُ وَجُعِلَ قُرَّةُ عَيْنِيْ فِي الصَّلَاةِ
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমাদের দুনিয়ার মধ্যে আমার কাছে স্ত্রী ও খোশবুকে প্রিয় করা হয়েছে। আর ছালাতকে করা হয়েছে আমার চক্ষুশীতলতা’।[৩] অপসন্দনীয় গন্ধের কারণে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পেঁয়াজ, রসুনের মত মুবাহ জিনিসকে বর্জন করে চলতেন।
কী আশ্চর্য সেই স্বামীর অবস্থা! যে ধূমপান করে স্ত্রীর নিকটে গমন করে আর তার থেকে ধোয়ার দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। কী আশ্চর্য! স্ত্রী স্বামীর জন্য উত্তম সুগন্ধি ব্যবহার করে তার অপেক্ষায় বসে থাকে, আর স্বামীর নিকট থেকে ধূমপানের দুর্গন্ধ বের হতে থাকে!
নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের জন্য উত্তমভাবে নিজেকে সুসজ্জিত করতেন এবং চুল আঁচড়ানোকে গুরুত্ব দিতেন
তিনি ছাহাবীদেরকেও এমনটা করতে নির্দেশ দিতেন। হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَنْ كَانَ لَهُ شَعْرٌ فَلْيُكْرِمْهُ ‘যার মাথায় চুল থাকে, সে যেন তার পরিচর্যা করে’।[৪] অর্থাৎ এখানে ছাহাবীদেরকে গোসল, সুগন্ধি ব্যবহার, চুল আঁচড়ানো ইত্যাদি কাজের মাধ্যমে নিজেকে সজ্জিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেননা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও উত্তমভাবে সজ্জিতকরণ পসন্দনীয় স্বভাবের অন্তর্গত।[৫] অতএব স্বামীর জন্য যরূরী হল, সে তার স্ত্রীর সামনে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও সুসজ্জিত করে উপস্থাপন করবে।
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি যেভাবে স্ত্রীকে সুন্দর ও সুসজ্জিতভাবে দেখতে চাই, নিজেকেও তার সামনে সেভাবেই সুসজ্জিত করে মেলে ধরতে পসন্দ করি। কেননা মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, ‘আর নারীদের উপর তাদের যেরূপ অধিকার আছে, নারীদেরও তদ্রƒপ ন্যায়সঙ্গত অধিকার আছে এবং তাদের উপর পুরুষদের শ্রেষ্ঠত্ব রয়েছে; আল্লাহ হচ্ছেন মহা পরাক্রান্ত প্রজ্ঞাময়’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২২৮)।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চুল আঁচড়ানো ও সিঁথি করাকে গুরুত্ব দিতেন
عَنِ ابْنِ شِهَابٍ أَنَّ سَهْلَ بْنَ سَعْدٍ الْأَنْصَارِيَّ أَخْبَرَهُ أَنَّ رَجُلًا اِطَّلَعَ مِنْ جُحْرٍ فِيْ بَابِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِدْرًى يُرَجِّلُ بِهِ رَأْسَهُ
ইবনু শিহাব (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, সাহল ইবনু সা‘দ আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাকে বলেছেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর গৃহের একটি ছিদ্র দিয়ে তাকাল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাতে একটি চিরুনি ছিল, যা দিয়ে তিনি তাঁর মাথা আঁচড়াচ্ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, আমি যদি জানতাম যে, তুমি দেখছ, তাহলে এটা দিয়ে তোমার চোখে আঘাত করতাম। চোখের কারণেই আল্লাহ অনুমতি নেয়ার বিধান করেছেন।[৬]
মাঝে মাঝে স্ত্রীরা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চুল আঁচড়িয়ে দিতেন। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا اعْتَكَفَ يُدْنِيْ إِلَيَّ رَأْسَهُ فَأُرَجِّلُهُ وَأَنَا حَائِضٌ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফ অবস্থায় স্বীয় মাথা আমার নিকটবর্তী করতেন। আর আমি তাঁর মাথা আঁচড়িয়ে দিতাম এবং তিনি মানবীয় প্রয়োজন ছাড়া ঘরে প্রবেশ করতেন না’।[৭]
স্ত্রীরা তাঁকে গোসলও করিয়ে দিতেন। যেমন আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,كُنْتُ أَغْسِلُ رَأْسَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَنَا حَائِضٌ ‘আমি ঋতুবতী অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মাথা ধুয়ে দিতাম’।[৮]
নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের সাথে বৈবাহিক সম্পর্কে নরম ও কমল স্বভাবের ছিলেন
عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ عَائِشَةَ قَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّيْ أَجِدُ فِيْ نَفْسِيْ أَنِّيْ لَمْ أَطُفْ بِالْبَيْتِ حَتَّى حَجَجْتُ قَالَ جَابِرٍ وَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ رَجُلًا سَهْلًا إِذَا هَوِيَتِ الشَّيْءَ تَابَعَهَا عَلَيْهِ
জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, একদা আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, আমার অবস্থা এই যে, হজ্জ না করা পর্যন্ত আমি (ওমরার জন্য) বায়তুল্লাহ-এর ত্বাওয়াফ করতে পারিনি, কিন্তু হজ্জ আদায় করে নিয়েছি। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুলাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন নমনীয় স্বভাবের। অতএব আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) যখনই কোন কিছু আবদার ধরতেন, তিনি সে আবদার রক্ষা করতেন।[৯]
এখানে (رَجُلًا سَهْلًا) দ্বারা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নরম স্বভাব ও উত্তম গুণাবলী উদ্দেশ্য। তিনি সরল-সোজা ও নমনীয় স্বভাবের ছিলেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী’ (সূরা আল-ক্বালাম : ৪)। অথচ আজকের দিনে অধিকাংশ স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া, কলহ-বিবাদ লেগেই থাকে।
নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারকে বৈধ খেলা-ধুলা দেখার অনুমতি দিতেন
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا فَسَمِعْنَا لَغَطًا وَصَوْتَ صِبْيَانٍ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِذَا حَبَشِيَّةٌ تَزْفِنُ وَالصِّبْيَانُ حَوْلَهَا فَقَالَ يَا عَائِشَةُ تَعَالَيْ فَانْظُرِيْ فَجِئْتُ فَوَضَعْتُ لَحْيَيَّ عَلَى مَنْكِبِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَجَعَلْتُ أَنْظُرُ إِلَيْهَا مَا بَيْنَ المَنْكِبِ إِلَى رَأْسِهِ فَقَالَ لِيْ أَمَا شَبِعْتِ أَمَا شَبِعْتِ قَالَتْ فَجَعَلْتُ أَقُوْلُ لَا لِأَنْظُرَ مَنْزِلَتِيْ عِنْدَهُ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বসা ছিলেন। সে সময় আমরা একটা সোরগোল ও শিশুদের হৈচৈ শুনতে পেলাম। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উঠে গিয়ে দেখলেন, এক হাবশী নারী নেচেকুদে খেলা দেখাচ্ছে আর শিশুরা তার চারদিকে ভীড় জমিয়েছে। তিনি বললেন, হে আয়েশা! এসো এবং প্রত্যক্ষ কর। অতএব আমি গেলাম এবং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাঁধের উপর আমার চিবুক রেখে তার খেলা প্রত্যক্ষ করতে লাগলাম। আমার চিবুক ছিল তার মাথা ও কাঁধের মধ্যবর্তী জায়গায়। (কিছুক্ষণ পর) আমাকে তিনি বললেন, তুমি কি তৃপ্ত হওনি, তোমার কি তৃপ্তি পূর্ণ হয়নি। তিনি বলেন, আমি না বলতে থাকলাম। আমার লক্ষ্য ছিল, আমাকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কতটুকু খাতির করেন তা পর্যবেক্ষণ করা।[১০]
উপরিউক্ত হাদীছের মধ্যে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উত্তম চরিত্র ও তাঁর স্ত্রীদের সাথে সুন্দর আচরণের কথা ফুটে উঠেছে।[১১] ইবনু বাত্ত্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মত উত্তম চরিত্রের অধিকারী হয়ে পরিবারের প্রতি উত্তম আচরণ করা কারো পক্ষে সম্ভবপর নয়। তবে সাধ্যের মধ্যে তাদের চলার পথে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উত্তম আদর্শের প্রভাব প্রতিফলিত হওয়া যরূরী।[১২]
অন্য বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেনে, فَجَعَلْتُ أَنْظُرُ إِلَى لَعِبِهِمْ حَتَّى كُنْتُ أَنَا الَّتِي أَنْصَرِفُ عَنِ النَّظَرِ إِلَيْهِمْ ‘আমি তাদের (হাবশী গোলাম) অনুশীলন দেখতে লাগলাম। শেষ পর্যন্ত আমি নিজেই তাদের দেখা ক্ষান্ত করে চলে গেলাম।[১৩] অন্য আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন,
حَسْبُكِ فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَعْجَلْ فَقَامَ لِيْ ثُمَّ قَالَ حَسْبُكِ. فَقُلْتُ لَا تَعْجَلْ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَتْ وَمَا لِيْ حُبُّ النَّظَرِ إِلَيْهِمْ وَلَكِنِّيْ أَحْبَبْتُ أَنْ يَبْلُغَ النِّسَاءَ مَقَامُهُ لِيْ وَمَكَانِيْ مِنْهُ
‘(হে আয়েশা!) যথেষ্ট হয়েছে (অনুশীলন দেখা, এবার চল যাই)। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি তাড়াহুড়া করবেন না (আর কিছুক্ষণ অনুশীলন দেখতে দিন)। একটু পর আবার দাঁড়িয়ে বললেন, (চল) যথেষ্ট হয়েছে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি তাড়াহুড়া করবেন না। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, (হাবশী গোলামদের) অনুশীলন দেখা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আমার লক্ষ্য ছিল, আমার কাছে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মর্যাদা ও তাঁর কাছে আমার মর্যাদার গভীরতা তাঁর অপরাপর স্ত্রীদের কাছে স্পষ্ট করা।[১৪]
ইবনু বাত্ত্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘উত্তম বৈবাহিক সম্পর্ক হল, স্ত্রীদের বৈধ চাওয়া-পাওয়াকে মূল্যায়ন করা ও সমর্থন দেয়া। নিজের কাছে অপসন্দনীয় মনে হলেও ছবর করে স্ত্রীদের পসন্দের বৈধ খেলাধুলার প্রতি সমর্থন জানানো।[১৫]
নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের দিন তাঁর স্ত্রীকে বৈধ সংগীত শোনা থেকে বারণ করতেন না
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعِنْدِيْ جَارِيَتَانِ تُغَنِّيَانِ بِغِنَاءِ بُعَاثٍ فَاضْطَجَعَ عَلَى الْفِرَاشِ وَحَوَّلَ وَجْهَهُ فَدَخَلَ أَبُو بَكْرٍ فَانْتَهَرَنِيْ وَقَالَ مِزْمَارُ الشَّيْطَانِ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؟ فَأَقْبَلَ عَلَيْهِ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ دَعْهُمَا فَلَمَّا غَفَلَ غَمَزْتُهُمَا فَخَرَجَتَا وَكَانَ يَوْمَ عِيدٍ يَلْعَبُ السُّودَانُ بِالدَّرَقِ وَالْحِرَابِ فَإِمَّا سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِمَّا قَالَ تَشْتَهِيْنَ تَنْظُرِيْنَ؟ فَقُلْتُ نَعَمْ فَأَقَامَنِيْ وَرَاءَهُ خَدِّيْ عَلَى خَدِّهِ وَهُوَ يَقُوْلُ دُوْنَكُمْ يَا بَنِيْ أَرْفِدَةَ حَتَّى إِذَا مَلِلْتُ قَالَ حَسْبُكِ؟ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ فَاذْهَبِيْ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গৃহে প্রবেশ করলেন, তখন আমার কাছে দু’টি বালিকা ছিল। তারা বুয়াসের ঘটনাবলী সম্পর্কে গান গাচ্ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এরপর আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) প্রবেশ করলেন। তিনি আমাকে ধমকালেন এবং বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে শয়তানের বাজনা বাজানো হচ্ছে? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এদিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, এদেরকে গাইতে দাও। যখন আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নিশ্চুপ হলেন, তখন আমি তাদেরকে ইঙ্গিত করলাম এবং তারা বেরিয়ে গেল।
আর ঈদের দিনে সুদানীরা ঢাল-তলোয়ার জাতীয় যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে খেলাধুলা করছিল। হয়ত আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আবেদন করেছিলাম কিংবা তিনি নিজেই বলেছিলেন, তোমার দেখার আগ্রহ আছে? আমি বললাম, হ্যাঁ আছে। এরপর আমাকে তাঁর পিছনে দাঁড় করালেন। আমার গাল তার গালের উপর ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছিলেন, এভাবে অনুশীলন জারি রাখ হে আরাফিদার বংশধরগণ! শেষ পর্যন্ত আমি যখন ক্লান্ত হয়ে পড়লাম, তখন তিনি বললেন, তোমার দেখা শেষ হয়েছে কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তবে যাও।[১৬]
ইবনু হাজার (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এই হাদীছের মধ্যে অনেক উপকারিতা রয়েছে। ঈদের দিন পরিবারের প্রতি উদারতা দেখিয়ে তাদেরকে বৈধ সংগীত শোনা ও খেলাধুলায় অংশগ্রহণের অনুমতি দানের মাধ্যমে তাদের অন্তরগুলো প্রশস্ততা পায়। এর মাধ্যমে ইবাদতে একঘেয়ামী আসা ভাব থেকে শরীর বিশ্রাম লাভ করে...। এখানে স্ত্রীর প্রতি কোমলতা দেখানোর দ্বারা তার ভালবাসা অর্জনের কথা ফুটে উঠেছে।[১৭]
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারকে দুই ঈদ ও বিবাহ অনুষ্ঠানে দফ বাজিয়ে কবিতার সুরে পরিবেশিত সংগীত শোনার অনুমতি দিয়েছিলেন, অন্য ক্ষেত্রে নয়। রূম ও পারস্য সাম্রাজ্য বিজিত হলে ছাহাবীদের সামনে তাদের হারাম মদ ও গায়িকাদের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি ও বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে অন্তরে মন্দ প্রভাব সৃষ্টিকারী কবিতার সুরে নারীর সৌন্দর্য বর্ণনা করে সংগীত পরিবেশনের দ্বার উন্মুক্ত হলে, তাদেরকে এ থেকে নিষেধ করা হয় এবং এতে কঠোরতা আরোপ করা হয়।
এটা প্রমাণিত হয় যে, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাহাবীদেরকে যে সংগীত শোনা বৈধ করেছিলেন তা রূম ও পারস্যবাসীর সংগীত নয়। তাদের বাদ্যযন্ত্রগুলো ইসলামের বৈধ বাদ্য যন্ত্রগুলোর মত নয়। ছাহাবীদেরকে তৎকালীন আরবে প্রচলিত বাদ্যযন্ত্রের (দফ) সাহায্যে সংগীত পরিবেশনের অনুমতি দেয়া হয়েছিল।
অতঃপর অনারবদের বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে সংগীত পরিবেশনের অনুমতি দেয়া হয়নি। যদিও অনারবদেরটাকেও সংগীত হিসাবে ধরা হয়। তদুপরি এ দু’য়ের মাঝে অনেক পার্থক্য রয়েছে, যা বিবেকবান মাত্রই বুঝতে পারবেন। কেননা অনারবদের বাদ্যযন্ত্রের সাহায্যে পরিবেশিত সংগীত অন্তরে খারাপ প্রভাব ফেলে এবং তা পাপ ও ব্যভিচারের দিকে ধাবিত করে। তবে আরবদের বৈধ গান-বাজনার মধ্যে এধরণের ধ্বংসাত্মক প্রভাব মোটেও নেই। যে ব্যক্তি এখানে একটির উপর আরেকটিকে ক্বিয়াস করবে, সে চূড়ান্ত পর্যায়ের ভুল করবে। মূল ও শাখার মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হওয়ার পরেও একটির উপর অপরটির ক্বিয়াস ভ্রান্ত ক্বিয়াস, যা সত্য থেকে অনেক দূরবর্তী।[১৮]
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের জন্য যে সংগীত শোনার বৈধতা দিয়েছিলেন সেটা ছিল বৈধ ও সুস্থ বিনোদনের অংশ।
স্ত্রীদের প্রতি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হেদায়াত এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ ছিল না। এমনকি তিনি আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর নিকটে কিশোরীদের পাঠাতেন। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তাদের সাথে খেলাধুলা করতেন। এসব কিশোরীদেরকে তিনি কখনোই তাড়িয়ে দিতেন না। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كُنْتُ أَلْعَبُ بِالْبَنَاتِ عِنْدَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَ لِيْ صَوَاحِبُ يَلْعَبْنَ مَعِيْ فَكَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا دَخَلَ يَتَقَمَّعْنَ مِنْهُ فَيُسَرِّبُهُنَّ إِلَيَّ فَيَلْعَبْنَ مَعِي
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনেই আমি পুতুল বানিয়ে খেলতাম। আমার বান্ধবীরাও আমার সাথে খেলা করত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘরে প্রবেশ করলে তারা দৌড়ে পালাত। তখন তিনি তাদের ডেকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিতেন এবং তারা আমার সঙ্গে খেলত।[১৯] ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখান থেকে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কোমল আচরণ ও সুন্দর বৈবাহিক সম্পর্কের কথা ফুটে উঠে।[২০]
(একটু ভাবুন তো!) উম্মুল মুমিনীন আয়েশা ছিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) এসব কিশোরীদের সাথে পুতুল নিয়ে খেলাধুলা করতেন, অথচ তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার সাথে রসিকতা ও হাসি-তামাশা করতেন।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَدِمَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ غَزْوَةِ تَبُوْكَ أَوْ خَيْبَرَ وَفِيْ سَهْوَتِهَا سِتْرٌ فَهَبَّتْ رِيْحٌ فَكَشَفَتْ نَاحِيَةَ السِّتْرِ عَنْ بَنَاتٍ لِعَائِشَةَ لُعَبٍ فَقَالَ مَا هَذَا يَا عَائِشَةُ؟ قَالَتْ بَنَاتِيْ وَرَأَى بَيْنَهُنَّ فَرَسًا لَهُ جَنَاحَانِ مِنْ رِقَاعٍ فَقَالَ مَا هَذَا الَّذِيْ أَرَى وَسْطَهُنَّ؟ قَالَتْ فَرَسٌ قَالَ وَمَا هَذَا الَّذِيْ عَلَيْهِ؟ قَالَتْ جَنَاحَانِ قَالَ فَرَسٌ لَهُ جَنَاحَانِ؟ قَالَتْ أَمَا سَمِعْتَ أَنَّ لِسُلَيْمَانَ خَيْلًا لَهَا أَجْنِحَةٌ؟ قَالَتْ فَضَحِكَ حَتَّى رَأَيْتُ نَوَاجِذَهُ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাবূক অথবা খায়বারের যুদ্ধ থেকে প্রত্যাবর্তন করলেন। ঘরের তাকের উপর পর্দা ঝুলানো ছিল। বায়ু প্রবাহের ফলে তার এক পাশ সরে যায় যাতে তার খেলার পুতুলগুলো দৃশ্যমান হয়ে পড়ে। তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পুতুলগুলো দেখে বললেন, হে আয়েশা! এগুলো কী? উত্তরে তিনি বললেন, এগুলো আমার মেয়ে। আর তিনি এগুলোর মধ্যে কাপড়ের তৈরি দু’ ডানাবিশিষ্ট একটি ঘোড়াও দেখতে পেলেন। তিনি প্রশ্ন করলেন, এগুলোর মধ্যে ওটা কি দেখতে পাচ্ছি? তিনি বললেন, ঘোড়া। তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার উপর আবার ওটা কী? তিনি বললেন, দু’টো পাখা। তিনি বললেন, এ আবার কেমন ঘোড়া, যার পাখা আছে! আমি বললাম, আপনি কি শুনেননি যে, সুলাইমান (আলাইহিস সালাম)-এর ঘোড়ার কয়েকটি পাখা ছিল! আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, একথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হেসে দিলেন, যাতে আমি তাঁর সামনের সারির দাঁত দেখতে পেলাম।[২১]
(একবার খেয়াল করে দেখুন তো!) স্ত্রীর সাথে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর এমন হাসি-তামাশা করা, তার অন্তরে কতটা আনন্দের সঞ্চালন করতে পারে? আর বৈবাহিক সম্পর্কে এমন রসিকতাপূর্ণ আচরণ কতইনা সুন্দর প্রভাব ফেলতে পারে?
এমনকি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বামীদেরকে এভাবে স্ত্রীদের সাথে রসিকতাপূর্ণ আচরণ করার জন্য উৎসাহ দিতেন। কেননা এটি অন্তরে প্রশান্তি ও প্রফুল্লতার উদ্বেগ ঘটায়। একদা জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) একজন বিধবা নারীকে বিবাহ করলে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
هَلَّا جَارِيَةً تُلَاعِبُهَا وَتُلَاعِبُكَ أَوْ تُضَاحِكُهَا وَتُضَاحِكُكَ
‘কুমারী করলে না কেন? তুমি তার সাথে প্রমোদ করতে, সেও তোমার সাথে প্রমোদ করত। তুমিও তাকে হাসাতে, সেও তোমাকে হাসাত।[২২] রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন,
كُلُّ شَيْءٍ لَيْسَ مِنْ ذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فَهُوَ لَهْوٌ أَوْ سَهْوٌ إِلَّا أَرْبَعَ خِصَالٍ مَشْيُ الرَّجُلِ بَيْنَ الْغَرَضَيْنِ وَتَأْدِيْبُهُ فَرَسَهُ ومُلَاعَبَةُ أَهْلِهِ وَتَعَلُّمُ السِّبَاحَةِ
‘প্রত্যেক সেই জিনিস (খেলা) যা আল্লাহর স্মরণের পর্যায়ভুক্ত নয়, তা অসার ভ্রান্তি ও বাতিল। অবশ্য চারটি কর্ম এরূপ নয়; হাতের নিশানা ঠিক করার উদ্দেশ্যে তীর খেলা, ঘোড়াকে প্রশিক্ষণ দেয়া, নিজ স্ত্রীর সাথে প্রেমকেলি করা এবং সাঁতার শিক্ষা করা।[২৩]
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পরস্পর খেলাধুলা ও রসিকতাপূর্ণ আচরণ অন্তরকে খুশিতে ভরে তুলে। বাড়িকে ভালবাসা ও সৌহার্দে পূর্ণ করে তুলে। এতে স্বামী-স্ত্রীর পরস্পর বন্ধন আরো সুদৃঢ় ও গভীর হয়। ‘স্বামী-স্ত্রীর মাঝে পরস্পর রসিকতা ও খেল-তামাশাপূর্ণ আচরণ স্ত্রীর অন্তরকে সুবাসিত করে।[২৪]
ওমর ইবনু খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) কঠোর স্বভাবের হওয়া সত্ত্বেও বলতেন, ‘পুরুষের জন্য উচিত হল- সে তার পরিবারে বাচ্চাদের মত হয়ে থাকবে, তবে তার কাছে কোন পরামর্শ বা কাজের কথা বলা হলে, সে প্রকৃত পুরুষের মত করে কথা বলবে, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় দিবে’।[২৫]
ছাবিত ইবনু ওবাইদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, যায়েদ ইবনু ছাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার পরিবারে সবচেয়ে বুঝদার ব্যক্তি ছিলেন। তিনি যখন বাড়ির বাইরে যেতেন, তখন প্রকৃত পুরুষের পরিচয় দিতেন।[২৬] জনৈক আরব্য মহিলা তার মৃত স্বামীর বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন যে, ‘আল্লাহর শপথ! তিনি বাড়িতে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় প্রবেশ করতেন। চুপচাপ স্বভাব নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতেন। যা জুটতো তাই খেতেন। যা শেষ হয়ে গেছে তার জন্য কখনোই তাগাদা দিতেন না’।[২৭]
অথচ অনেক মানুষ এমন রয়েছে, যারা তাদের সঙ্গী-সাথী ও বন্ধু-বান্ধবদের সাথে মুচকি হেসে কথা বলে। কিন্তু বাড়িতে প্রবেশকালে সেই মুচকি হাসি আর থাকে না, সে কুঞ্চিত কপালে গোমড়ামুখ নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করে।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৯৭২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৭৪।
[২]. ত্বাবারানী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৮৭৬৪।
[৩]. নাসাঈ, হা/৩৯৩৯; আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে ‘ছহীহ’ বলেছেন, ছহীহুল জামে‘, হা/৩১২৪।
[৪]. আবূ দাঊদ, হা/৪১৬৩।
[৫]. আউনুল মা‘বুদ, ৯ম খণ্ড, পৃ. ১১৮৩।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯২৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৫৬।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/২০২৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৭।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৩০১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৭।
[৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৩।
[১০]. তিরমিযী, হা/৩৬৯১; আলবানী হাদীছ ছহীহ বলেছেন। অনুরূপ হাদীছ ছহীহ বুখারী, হা/৪৫৫, ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯২-তেও বর্ণিত হয়েছে।
[১১]. উমদাতুল ক্বারী, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৭৭।
[১২]. ইবনু বাত্ত্বাল, শরহে ছহীহিল বুখারী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫৪৮।
[১৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯২।
[১৪]. নাসাঈ, কুবরা, হা/৮৯০২; আলবানী হাদীছটি ছহীহ বলেছেন, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩২৭৭।
[১৫]. ইবনু বাত্ত্বাল, শরহে ছহীহিল বুখারী, ৭ম খণ্ড, পৃ. ২৯৮।
[১৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৫০; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯২।
[১৭]. ইবনু হাজার, ফাৎহুল বারী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৪৩।
[১৮]. ইবনু রাজাব, ফাৎহুল বারী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৭৮।
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১৩০; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৪০।
[২০]. শরহে নববী আলা ছহীহ মুসলিম, ১০ম খণ্ড, পৃ. ২০৫।
[২১]. আবূ দাঊদ, হা/৪৯৩২, আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন।
[২২]. ছহীহ বুখারী, হা/২০৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৭১৫।
[২৩]. ত্বাবারানী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১৭৮৫; আলবানী হাদীছটিকে ছহীহ বলেছেন, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩১৫; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১২৮২।
[২৪]. মাওঈযাতুল মুমিনীন, পৃ. ১৬৮।
[২৫]. মুজালাসাহ ওয়া জাওয়াহিরিল ইলম, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৪৩০।
[২৬]. বাগাভী, শারহুস সুন্নাহ, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১৮৩।
[২৭]. মাওঈযাতুল মুমিনীন, পৃ. ১০৬।