রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পারিবারিক জীবন
– মূল : শায়খ মুহাম্মাদ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ– অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*
(৮ম কিস্তি)
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদেরকে (ভাল কাজে উদ্বুদ্ধ করার জন্য) বলতেন, তাদের মধ্যে অধিক ছাদাক্বাহকারীগণই দ্রুত তাঁর সাক্ষাত পাবে
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْرَعُكُنَّ لَحَاقًا بِيْ أَطْوَلُكُنَّ يَدًا قَالَتْ فَكُنَّ يَتَطَاوَلْنَ أَيَّتُهُنَّ أَطْوَلُ يَدًا قَالَتْ فَكَانَتْ أَطْوَلَنَا يَدًا زَيْنَبُ لِأَنَّهَا كَانَتْ تَعْمَلُ بِيَدِهَا وَتَصَدَّقُ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের মাঝে সর্বপ্রথম তারই আমার সঙ্গে দেখা হবে যার হাত অধিক লম্বা। অতএব সব স্ত্রীরা নিজ নিজ হাত মেপে দেখতে লাগলেন, কার হাত অধিক লম্বা। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, পরিশেষে আমাদের মাঝে যয়নবের হাতই সবচেয়ে লম্বা বলে ঠিক হল। কেননা, তিনি হাত দ্বারা কাজ করতেন এবং দান করতেন।[১]
এ হাদীছের মর্মার্থ হল, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীগণ লম্বা হাত দ্বারা বাস্তবিকপক্ষের লম্বা হাত ধারণা করেছিলেন, যা শরীরের একটি অঙ্গ। তাই তারা বেতের দ- বিশেষ দ্বারা তাদের হাত মাপা আরম্ভ করলেন। তাদের মধ্যে সাওদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর হাত ছিল সবেেচয় লম্বা। আর যয়নব (রাযিয়াল্লাহু আনহা) ছিলেন ছাদাক্বাহ ও সৎকাজ করার দিক দিয়ে লম্বা হাতের। তাদের মধ্যে যয়নব (রাযিয়াল্লাহু আনহা) সর্বপ্রথম মৃত্যুবরণ করলে তারা বুঝতে পারেন যে, লম্বা হাত দ্বারা ছাদাক্বাহ ও বদান্যতার লম্বা হাতকে উদ্দেশ্য করা হয়েছিল।[২]
অতঃপর এই হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, সক্ষমতার সময়ে অন্যকে নিজের উপর প্রাধান্য দেয়া ও অধিকহারে ছাদাক্বাহ করা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে সাক্ষাতের কারণ হবে, যা ফযীলত লাভের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ।[৩]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদেরকে আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা ও সদাচারণের শিক্ষা দিতেন
عَنِ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ اسْتَأْذَنَ عَلَيَّ أَفْلَحُ أَخُوْ أَبِي القُعَيْسِ بَعْدَمَا أُنْزِلَ الحِجَابُ فَقُلْتُ لَا آذَنُ لَهُ حَتَّى أَسْتَأْذِنَ فِيْهِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَإِنَّ أَخَاهُ أَبَا القُعَيْسِ لَيْسَ هُوَ أَرْضَعَنِيْ وَلَكِنْ أَرْضَعَتْنِيْ امْرَأَةُ أَبِيْ القُعَيْسِ فَدَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ لَهُ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ أَفْلَحَ أَخَا أَبِي القُعَيْسِ اسْتَأْذَنَ فَأَبَيْتُ أَنْ آذَنَ لَهُ حَتَّى أَسْتَأْذِنَكَ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا مَنَعَكِ أَنْ تَأْذَنِيْ عَمُّكِ؟ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الرَّجُلَ لَيْسَ هُوَ أَرْضَعَنِيْ وَلَكِنْ أَرْضَعَتْنِيْ امْرَأَةُ أَبِي القُعَيْسِ فَقَالَ ائْذَنِيْ لَهُ فَإِنَّهُ عَمُّكِ تَرِبَتْ يَمِيْنُكِ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, পর্দার আয়াত অবতীর্ণ হওয়ার পর, আবুল কু’আয়স এর ভাই-আফলাহ আমার কাছে প্রবেশ করার অনুমতি চায়। আমি বললাম, এ ব্যাপারে যতক্ষণ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুমতি না দিবেন, ততক্ষণ আমি অনুমতি দিতে পারি না। কেননা তার ভাই আবূ কু‘আয়স নিজে আমাকে দুধ পান করাননি। কিন্তু আবুল কু’আয়সের স্ত্রী আমাকে দুধ পান করিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে আসলেন। আমি তাঁকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আবুল কু’আয়সের ভাই-আফলাহ আমার সঙ্গে দেখা করার অনুমতি চাইছিল। আমি এ বলে অস্বীকার করেছি যে, যতক্ষণ আপনি এ ব্যাপারে অনুমতি না দিবেন, ততক্ষণ আমি অনুমতি দিব না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার চাচাকে (দেখা করার) অনুমতি দিতে কিসে বাধা দিয়েছে? আমি বললাম, সে ব্যক্তি তো আমাকে দুধ পান করাননি; বরং আবুল কু’আয়াসের স্ত্রী আমাকে দুধ পান করিয়েছে। এরপর তিনি (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার হাত ধুলায় ধূসরিত হোক, তাকে অনুমতি দাও, কেননা, সে তোমার চাচা।[৪]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদেরকে বিনা ইলমে কথা বলতে নিষেধ করতেন
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর আরেকটি উত্তম আদর্শ হল, তিনি তাঁর স্ত্রীদেরকে বিনা ইলমে কথা বলতে নিষেধ করতেন। যাতে তারা কোন ফৎওয়া বা আহকামের ক্ষেত্রে বিনা ইলমে তাড়াহুড়া করে কিছু না বলে।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ دُعِىَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى جَنَازَةِ صَبِىٍّ مِنَ الْأَنْصَارِ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ طُوْبَى لِهَذَا عُصْفُوْرٌ مِنْ عَصَافِيْرِ الْجَنَّةِ لَمْ يَعْمَلِ السُّوْءَ وَلَمْ يُدْرِكْهُ فَقَالَ أَوَغَيْرَ ذَلِكَ يَا عَائِشَةُ إِنَّ اللهَ خَلَقَ لِلْجَنَّةِ أَهْلًا خَلَقَهُمْ لَهَا وَهُمْ فِىْ أَصْلَابِ آبَائِهِمْ وَخَلَقَ لِلنَّارِ أَهْلًا خَلَقَهُمْ لَهَا وَهُمْ فِىْ أَصْلَابِ آبَائِهِمْ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি আনছারী বালকের জানাযায় আহুত হলেন। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এর কি সৌভাগ্য! জান্নাতের চড়ুই পাখিগুলোর মধ্যে সেও একটি। কেননা সে কোন গুনাহ করেনি এবং গুনাহ করার বয়সও পায়নি। তখন তিনি বললেন, হে আয়েশা! এর কি বিপরীত হতে পারে না? আল্লাহ একদল লোককে জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাদের জান্নাতের জন্য সৃষ্টি করেছেন, যখন তারা তাদের পিতাদের মেরুদণ্ডে ছিল। অনুরূপভাবে জাহান্নামের জন্য একদলকে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাদের জাহান্নামের জন্য সৃষ্টি করেছেন, যখন তারা তাদের পিতাদের মেরুদণ্ডে ছিল।[৫]
ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুসলিম উলামাগণ এ বিষয়ে একমত যে, যেসব মুসলিম শিশু মৃত্যুবরণ করেছে তারা জান্নাতের অধিবাসী হবে। কেননা তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিল না। তারা আয়েশা সিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত উপরিউক্ত হাদীছের জবাবে বলেন যে, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাহাবীদেরকে অকাট্য কোন প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে উপনিত হতে নিষেধ করেছেন।[৬]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর পরিবারকে তাক্বওয়া ও মহান চরিত্র গঠনের নির্দেশ দিতেন
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ لِيْ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا عَائِشَةُ عَلَيْكِ بِتَقْوَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَالرِّفْقِ فَإِنَّ الرِّفْقَ لَمْ يَكُ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا زَانَهُ وَلَمْ يُنْزَعْ مِنْ شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا شَانَهُ
আয়েশা সিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে আয়েশা! আল্লাহ ভীতি অর্জন ও নম্র আচরণ কর। কারণ কোন কিছুর মধ্যে নম্রতা বিদ্যমান থাকলে তা সেটিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। আর কোনো কিছু থেকে তা অপসারণ করা হলে সেটিকে তা ক্ষতিগ্রস্থ করে।[৭]
এখানে (إِلَّا زَانَهُ) এর অর্থ হচ্ছে, সেটিকে সৌন্দর্যম-িত ও পরিপূর্ণতা দান করে। আর (إِلَّا شَانَهُ) এর অর্থ হচ্ছে, সেটিকে ত্রুটিযুক্ত ও ক্ষতিগ্রস্থ করে।[৮]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদেরকে ধৈর্যধারণ এবং কোমল ও সহনশীল আচরণের নির্দেশ দিতেন
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَهَا يَا عَائِشَةُ ارْفُقِيْ فَإِنَّ اللهَ إِذَا أَرَادَ بِأَهْلِ بَيْتٍ خَيْرًا دَلَّهُمْ عَلَى بَابِ الرِّفْقِ
আয়েশা সিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হে আয়েশা! তুমি কোমল আচরণ করবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা যখন কোন পরিবারের জন্য কল্যাণের ইচ্ছা করেন, তাদের সামনে নম্রতার দুয়ার খুলে দেন।[৯]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদেরকে সুন্দর ভাষায় কথা বলার শিক্ষা দিতেন এবং অমুসলিমদের সাথেও অশ্লীল ভাষায় কথা বলতে নিষেধ করতেন
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ اليَهُوْدَ أَتَوُا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالُوا السَّامُ عَلَيْكَ قَالَ وَعَلَيْكُمْ فَقَالَتْ عَائِشَةُ السَّامُ عَلَيْكُمْ وَلَعَنَكُمُ اللهُ وَغَضِبَ عَلَيْكُمْ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَهْلًا يَا عَائِشَةُ عَلَيْكِ بِالرِّفْقِ وَإِيَّاكِ وَالعُنْفَ أَوِ الفُحْشَ قَالَتْ أَوَلَمْ تَسْمَعْ مَا قَالُوْا؟ قَالَ أَوَلَمْ تَسْمَعِيْ مَا قُلْتُ رَدَدْتُ عَلَيْهِمْ فَيُسْتَجَابُ لِيْ فِيْهِمْ وَلَا يُسْتَجَابُ لَهُمْ فِيَّ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, একবার একদল ইয়াহূদী নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, ‘আসসামু আলাইকা’ (তুমি ধ্বংস হও)। তিনি বললেন, ‘ওয়াআলাইকুম’ (তোমাদের তাই হোক যা তোমরা বলেছ)। কিন্তু আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, ‘আসসামু আলাইকুম ওয়া লা‘য়ানাকুমুল্লাহ ওয়া গাযিবা আলাইকুম’ (তোমরা ধ্বংস হও, আল্লাহ তোমাদের উপর লা‘নত করুন, আর তোমাদের উপর গযব অবতীর্ণ করুন)। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আয়েশা তুমি থাম! তুমি নম্রতা অবলম্বন কর এবং কঠোরতা বর্জন কর। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, তারা কী বলেছে আপনি কি শুনেননি? তিনি বললেন, আমি যা বলেছি, তা কি তুমি শুননি? আমি তো তাদের কথাটা তাদের উপরই ফিরিয়ে দিলাম। কাজেই তাদের উপর আমার বদ্ দু‘আ কবূল হয়ে যাবে। কিন্তু আমার ব্যাপারে তাদের বদ্ দু‘আ কবূল হবে না।[১০] অপর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, مَهْ يَا عَائِشَةُ فَإِنَّ اللهَ لَا يُحِبُّ الْفُحْشَ وَالتَّفَحُّشَ ‘থাম, হে আয়েশা! কেননা আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীলতা ও অশ্লীলতার মহড়া পসন্দ করেন না।[১১]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের আক্বীদা শিক্ষা দিতেন
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদেরকে আক্বীদার বিষয়গুলো শিক্ষা দিতেন। তাদের মধ্যে আল্লাহর ভয় ঢুকিয়ে দিতেন। যখন আকাশে কালো মেঘ দেখতেন বা দমকা হাওয়া বইতো, তখন তিনি দ্রুত হাটাচালা করতেন এবং তার চেহারা পরিবর্তন হয়ে যেতো।
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ وَكَانَ إِذَا رَأَى غَيْمًا أَوْ رِيْحًا عُرِفَ ذَلِكَ فِي وَجْهِهِ فَقَالَتْ يَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرَى النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الْغَيْمَ فَرِحُوا رَجَاءَ أَنْ يَكُوْنَ فِيْهِ الْمَطَرُ وَأَرَاكَ إِذَا رَأَيْتَهُ عَرَفْتُ فِيْ وَجْهِكَ الْكَرَاهِيَةَ؟ قَالَتْ فَقَالَ يَا عَائِشَةُ مَا يُؤَمِّنُنِيْ أَنْ يَكُوْنَ فِيْهِ عَذَابٌ قَدْ عُذِّبَ قَوْمٌ بِالرِّيْحِ وَقَدْ رَأَى قَوْمٌ الْعَذَابَ فَقَالُوْا (ہٰذَا عَارِضٌ مُّمۡطِرُنَا) [اَلْأَحْقَافُ:24]ه
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কালো মেঘ বা দমকা হাওয়া দেখতেন, তার চেহারায় অস্থির ভাব ফুটে উঠত। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি দেখি লোকেরা মেঘ দেখে বেশ খুশী হয় এ আশায় যে এতে বৃষ্টি হবে। আর আপনাকে দেখি, আপনি যখন মেঘ দেখেন, আপনার চেহরায় আশঙ্কার ছাপ পরিলক্ষিত হয়। উত্তরে তিনি বলেন, হে আয়েশা! আমি এ কারণে নিরাপদ ও নিশ্চিন্তবোধ করি না যে, হতে পারে এর মধ্যে কোন আযাব থাকতে পারে। এক সম্প্রদায়কে দমকা হাওয়ার মাধ্যমে আযাব দেয়া হয়েছে। আরেক সম্প্রদায় আসমানী আযাব দেখে বলেছিল- ‘এই যে মেঘ তা আমাদের ওপর বর্ষিত হবে’ (সূরা আল-আহক্বাফ : ২৪)।[১২] এখানে (عَارِضٌ) অর্থ হচ্ছে, দিগন্ত বিস্তৃত মেঘ।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের সামনে মানুষের আক্বীদাগত ভ্রষ্টতাগুলো স্পষ্ট করে দিতেন
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ لَمَّا اشْتَكَى النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَكَرَ بَعْضُ نِسَائِهِ كَنِيْسَةً يُقَالُ لَهَا مَارِيَّةُ وَكَانَتْ أُمُّ سَلَمَةَ وَأُمُّ حَبِيْبَةَ أَتَتَا أَرْضَ الْحَبَشَةِ فَذَكَرْنَا مِنْ حُسْنِهَا وَتَصَاوِيْرَ فِيْهَا فَرَفَعَ رَأْسَهُ فَقَالَ أُولَئِكَ إِذَا مَاتَ فِيْهِمُ الرَّجُلُ الصَّالِحُ بَنَوْا عَلَى قَبْرِهِ مَسْجِدًا ثُمَّ صَوَّرُوْا فِيْهِ تِلْكَ الصُّوَرِ أُولَئِكَ شِرَارُ خَلْقِ اللهِ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসুস্থতার সময় তাঁর এক সহধর্মিনী হাবশা দেশে তাঁর দেখা ‘মারিয়া’ নামক গীর্জার কথা বললেন। উম্মে সালামাহ এবং উম্মু হাবীবাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হাবশায় গিয়েছিলেন। তাঁরা দু’জন ঐ গীর্জাটির সৌন্দর্য এবং তার ভিতরের চিত্রকর্মের বিবরণ দিলেন। তখন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর মাথা তুলে বললেন, সে সব দেশের লোকেরা তাদের কোন নেককার ব্যক্তি মারা গেলে তাঁর ক্ববরে মসজিদ নির্মাণ করত এবং তাতে ঐ সব চিত্রকর্ম অংকণ করত। তারা হল আল্লাহর নিকট নিকৃষ্ট সৃষ্টি।[১৩] আলোচ্য হাদীছে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কর্তৃক তাঁর পরিবারকে আক্বীদাগত ভুল-ত্রুটির ব্যাপারে সতর্ক করার বিষয়টি আলোচনা করা হয়েছে।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাড়িতে অসৎকাজ দেখে চুপ থাকতেন না, বরং তা দ্রুত সরানোর জন্য চেষ্টা করতেন
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَہۡلِیۡکُمۡ نَارًا ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও (সূরা আত-তাহরীম : ৬)। হাদীছে এসেছে,
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ دَخَلَ عَلَيَّ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَفِي البَيْتِ قِرَامٌ فِيْهِ صُوَرٌ فَتَلَوَّنَ وَجْهُهُ ثُمَّ تَنَاوَلَ السِّتْرَ فَهَتَكَهُ وَقَالَتْ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ مِنْ أَشَدِّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ القِيَامَةِ الَّذِيْنَ يُصَوِّرُوْنَ هَذِهِ الصُّوَرَ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার নিকট আসলেন। তখন ঘরে একখানা পর্দা ঝুলানো ছিল। যাতে ছবি ছিল। তা দেখে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চেহারার রং পরিবর্তিত হয়ে গেল। এরপর তিনি পর্দাখানা হাতে নিয়ে ছিঁড়ে ফেললেন। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের মধ্যে বললেন, ক্বিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হবে ঐসব লোকের যারা এ সব ছবি অঙ্কণ করে।[১৪] এখানে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কথা ও কর্মের মাধ্যমে স্ত্রীর কাজকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর স্ত্রীদের কাছ থেকে মানুষকে অবজ্ঞা করে কোন কথা প্রকাশ পেলে তা অপসন্দ করতেন
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ وَحَكَيْتُ لَهُ إِنْسَانًا فَقَالَ مَا أُحِبُّ أَنِّيْ حَكَيْتُ إِنْسَانًا وَأَنَّ لِيْ كَذَا وَكَذَا
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক ব্যক্তিকে অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নকল করলাম। তিনি বললেন, আমাকে এতো এতো সম্পদ দেয়া হলেও আমি কারো অনুকরণ পসন্দ করব না।[১৫] অর্থাৎ এটা আমার জন্য সহজ নয় যে, আমি কারো কথা বা কাজকে ব্যঙ্গ করে কিছু বলবো, যদিও আমাকে দুনিয়ার এতো এতো সম্পত্তি দেয়া হয়, অথবা এর চেয়েও বেশি কিছু দেয়া হয়।[১৬]
ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, কাউকে (কথা অথবা কাজের মাধ্যমে) অনুকরণ করে দেখানো নিষিদ্ধ গীবতের অন্তর্ভূক্ত। যেমন খোঁড়া হওয়ার ভান করে চলা, মাথা নোয়ায়ে (কুঁজোর ভান করে) চলা ইত্যাদি নানান অঙ্গভঙ্গি করা (গীবতের অন্তর্ভূক্ত)।[১৭]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বড় গোনাহ ছাড়াও ছোট ছোট গোনাহ থেকেও স্বীয় স্ত্রীদেরকে সতর্ক করতেন
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا عَائِشَةُ إِيَّاكِ وَمُحَقَّرَاتِ الْأَعْمَالِ فَإِنَّ لَهَا مِنَ اللهِ طَالِبًا
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে আয়েশা! ক্ষুদ্র গুনাহ থেকেও সাবধান হও। কারণ সেগুলোর জন্যও আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে।[১৮]
এখানে (مُحَقَّرَاتِ الْأَعْمَالِ) হল ঐসব পাপ, যেগুলোকে মানুষেরা তুচ্ছ মনে করে এবং সেগুলো করতে কোন কিছুর পরোয়া করে না। আর (طَالِبًا) অর্থ হল, জবাবদিহিতা করা। জবাবদিহিতা করার জন্য তাদের সামনে পাপগুলোকে উপস্থাপন করা হবে। এগুলোকে আল্লাহর দরবারে খুব গুরুত্বের সাথে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়, এমনকি এর জন্য আলাদা ফেরেশতা নির্ধারণ করে রাখা হয়েছে।[১৯]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীগণ কিছু কিছু জটিল মাস‘আলার ক্ষেত্রে তার শরণাপন্ন হতেন
عَنْ ابْنِ أَبِيْ مُلَيْكَةَ أَنَّ عَائِشَةَ زَوْجَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَتْ لَا تَسْمَعُ شَيْئًا لَا تَعْرِفُهُ إِلَّا رَاجَعَتْ فِيْهِ حَتَّى تَعْرِفَهُ وَأَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ حُوْسِبَ عُذِّبَ قَالَتْ عَائِشَةُ فَقُلْتُ أَوَلَيْسَ يَقُوْلُ اللهُ تَعَالَى (فَسَوۡفَ یُحَاسَبُ حِسَابًا یَّسِیۡرًا) [الانشقاق:8] قَالَتْ فَقَالَ إِنَّمَا ذَلِكِ العَرْضُ وَلَكِنْ مَنْ نُوْقِشَ الحِسَابَ يَهْلِكْ
ইবনু আবি মুলাইকাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রী আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) কোন কথা শুনে না বুঝলে বার বার প্রশ্ন করতেন। একদা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘(ক্বিয়ামতের দিন) যার কাছ থেকে হিসাব নেয়া হবে তাকে শাস্তি দেয়া হবে।’ আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, আল্লাহ তা‘আলা কি ইরশাদ করেননি, فَسَوۡفَ یُحَاسَبُ حِسَابًا یَّسِیۡرًا ‘তার হিসাব-নিকাশ সহজেই নেয়া হবে’ (সূরা আল-ইনশিক্বাক : ৮)। তখন তিনি বললেন, তা কেবল হিসাব প্রকাশ করা। কিন্তু যার হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে নেয়া হবে সে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।[২০]
নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের প্রতি ঈর্ষা করতেন
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ يَدْخُلُ عَلَى أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُخَنَّثٌ فَكَانُوْا يَعُدُّوْنَهُ مِنْ غَيْرِ أُوْلِي الْإِرْبَةِ قَالَ فَدَخَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا وَهُوَ عِنْدَ بَعْضِ نِسَائِهِ وَهُوَ يَنْعَتُ امْرَأَةً قَالَ إِذَا أَقْبَلَتْ أَقْبَلَتْ بِأَرْبَعٍ وَإِذَا أَدْبَرَتْ أَدْبَرَتْ بِثَمَانٍ فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَلَا أَرَى هَذَا يَعْرِفُ مَا هَاهُنَا لَا يَدْخُلَنَّ عَلَيْكُنَّ قَالَتْ فَحَجَبُوْهُ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক হিজড়া নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে প্রবেশ করত। লোকেরা তাকে যৌন কামনা রহিত (অনভিজ্ঞ)-দের অন্তর্ভুক্ত মনে করত। রাবী বলেন, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি ঘরে প্রবেশ করলেন, তখন সে তাঁর কোন স্ত্রীর কাছে ছিল আর সে এক নারীর (দেহ সৌষ্ঠবের) বিবরণ দিয়ে বলছিল, যখন সামনে এগিয়ে আসে তখন চার (ভাঁজ) নিয়ে এগিয়ে আসে এবং যখন ফিরে, তখন আটটি নিয়ে ফিরে যায়। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ তো দেখছি এখানকার (নারী রহস্যের) বিষয়াদি বুঝে। সে যেন তোমাদের কাছে কখনো প্রবেশ না করে। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, এরপর তারা তার থেকে পর্দা করতেন।[২১]
এই হিজড়া প্রথম দিকে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর স্ত্রীদের নিকটে প্রবেশের অনুমতি পেতেন, কারণ তখন তাকে যৌন কামনা রহিত (অনভিজ্ঞ)-দের অন্তর্ভুক্ত মনে করা হত। আর এ অবস্থায় তাদের নিকটে প্রবেশ করা বৈধ ছিল। কিন্তু নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন তার থেকে এমন উপরিউক্ত আপত্তিকর কথা শুনলেন তখন তিনি বুঝতে পারলেন যে, সে সন্দেহযুক্ত, তাই তাকে স্ত্রীদের নিকটে প্রবেশ করা হতে নিষেধ করলেন।
মূলত নবী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সেই হিজড়াকে তাঁর স্ত্রীদের নিকটে প্রবেশ করতে বারণ করেছিলেন, যখন তিনি তাকে অন্যান্য স্বাভাবিক পুরুষদের মতো নারীর বর্ণনা দিতে শুনলেন। যাতে করে সে মানুষের কাছে স্ত্রীদের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো বর্ণনা করতে না পারে, যাতে পর্দার উদ্দেশ্য ব্যহত হবে। এখান থেকে বুঝা যায়, নারীদের সৌন্দর্য সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ব্যক্তির জন্য পর্দার বিধান। সুতরাং এই হাদীছটি সন্দেহপূর্ণ মানুষ থেকে নারীদেরকে দূরে রাখার ব্যাপারে দলীল।[২২]
এভাবে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্ত্রীদের ব্যাপারে ঈর্ষা করতেন। অথচ তথাকথিত কিছু মুক্তমনা স্ত্রীদের ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ঈর্ষা করার বিষয়টি আমাদের সমাজ থেকে, এমনকি মানুষের অন্তর থেকে মুছে দেয়ার জন্য প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এজন্য তারা তাদের স্ত্রী, বোন বা কন্যার সাথে অপরিচিত কেউ মেলামেশা করলে সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করে না।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪২০; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৫২।
[২]. ইমাম নববী, শরহে ছহীহ মুসলিম, ১৬তম খণ্ড, পৃ. ৮ ।
[৩]. ফাতহুল বারী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ২৮৬।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৭৯৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৪৫।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৬২ ‘তাক্বদীর’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৬।
[৬]. ইমাম নববী, শরহে ছহীহ মুসলিম, ১৬তম খণ্ড, পৃ. ২০৭।
[৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৭৮৬; ছহীহুল জামে‘, হা/৭৯২৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৯৪।
[৮]. আউনুল মা‘বুদ, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১১৩।
[৯]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৭৩৪; সিলসিলা ছহীহা, হা/৫২৩; সনদ ছহীহ।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯৩৫, ৬৪০১; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬৫।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২১৬৫।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৮২৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯৯।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩৪১; ছহীহ মুসলি, হা/৫২৮।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১০৯।
[১৫]. আবূ দাউদ, হা/৪৮৭৫; তিরমিযী, হা/২৫০২।
[১৬]. আউনুল মা‘বুদ, ১৩তম খণ্ড, পৃ. ১৫১।
[১৭]. তুহফাতুল আহওয়াযী, ৭ম খন্ড, পৃ. ১৭৬।
[১৮]. ইবনে মাজাহ, হা/৪২৪৩; সনদ ছহীহ।
[১৯]. হাশিয়াতু সিন্দী আলা সুনানে ইবনে মাজাহ, ৮ম খণ্ড, পৃ. ৫৯।
[২০]. ছহীহ বুখারী, হা/১০৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৭৬।
[২১]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩২৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৮১।
[২২]. ফাতহুল বারী, ৯ম খণ্ড, পৃ. ৩৩৬।