শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৯ পূর্বাহ্ন
উত্তর : যদি কেউ তার স্ত্রীকে এক বৈঠকে তথা একসাথে তিন ত্বালাক্ব প্রদান করে, তাহলে তা এক ত্বালাক্ব হিসাবেই গণ্য হবে। এটাই শরী‘আতের সিদ্ধান্ত। তাই কেউ তার স্ত্রীকে এক সঙ্গে তিন ত্বালাক্ব দিলে সংসার করতে পারবে। তবে এক সঙ্গে তিন ত্বালাক্ব প্রদান করা শরী‘আত বিরোধী কাজ, গর্হিত অন্যায় এবং রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সুন্নাহকে অবজ্ঞা করার শামিল। সেজন্য কেউ এ ধরনের অন্যায় করলে তাকে তওবা করতে হবে।

আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, كَانَ الطَّلاَقُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِىْ بَكْرٍ وَسَنَتَيْنِ مِنْ خِلَافَةِ عُمَرَ طَلَاقُ الثَّلَاثِ وَاحِدَةً ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এবং আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে ও ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খিলাফাতের প্রথম দু’ বছর পর্যন্ত তিন ত্বালাক্ব এক ত্বালাক্বই সাব্যস্ত হত’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৭২)।

ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রুকানার পিতা ‘আবদু ইয়াযীদ ও তার ভ্রাতৃগোষ্ঠী উম্মু রুকানাকে ত্বালাক্ব দেন এবং মুযাইনাহ গোত্রের এক মহিলাকে বিয়ে করেন। একদা ঐ মহিলা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে বলল, তার স্বামী সহবাসে অক্ষম। যেমন আমার মাথার চুল অন্য চুলের কোন উপকারে আসে না। সুতরাং আপনি আমার ও তার মাঝে বিচ্ছেদ করিয়ে দিন। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এতে অসন্তুষ্ট হন এবং রুকানা ও তার ভ্রাতৃগোষ্ঠীকে ডেকে আনেন। এরপর তিনি সেখানে উপস্থিত লোকজনকে বলেন, তোমরা কি লক্ষ্য করেছ যে, এদের মধ্যে অমুক অমুকের অঙ্গের সাথে মিল রয়েছে? তারা বলল, হ্যাঁ। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদু ইয়াযীদকে বলেন, তুমি তাকে ত্বালাক্ব দাও। সুতরাং তিনি তাকে ত্বালাক্ব দিলেন। তিনি বলেন, তুমি রুকানার মা ও তার ভ্রাতৃগোষ্ঠীকে পুনরায় গ্রহণ কর। তিনি বলেন, আমি তো তাকে তিন ত্বালাক্ব দিয়েছি, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি বলেন, আমি তা জানি, তুমি তাকে গ্রহণ কর। এরপর তিনি তিলাওয়াত করলেন, ‘হে নাবী! যখন তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের ত্বালাক্ব দিবে, তখন তাদের ইদ্দতকালের প্রতি লক্ষ্য রেখে ত্বালাক্ব দিবে’ (সূরা আত-ত্বালাক্ব : ১)।

ইমাম আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, নাফি‘ ইবনু উজাইর ও ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘আলী ইবনু ইয়াযীদ ইবনু রুকানা হতে তার পিতা ও তার দাদার সূত্রে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, রুকানা তার স্ত্রীকে ত্বালাক্ব দিলে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে পুনরায় ঐ স্ত্রীকে গ্রহণ করতে আদেশ দেন। এটা অধিকতর সঠিক (আবূ দাঊদ, হা/২১৯৬, সনদ হাসান)।

অন্যত্র আবুস সাহ্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, একদা আবুস সাহ্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে বললেন,

أَتَعْلَمُ إِنَّمَا كَانَتِ الثَّلَاثُ تُجْعَلُ وَاحِدَةً عَلَى عَهْدِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبِىْ بَكْرٍ وَثَلَاثًا مِنْ إِمَارَةِ عُمَرَ قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ نَعَمْ

‘আপনি কি জানেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগে এবং আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে একত্রে তিন ত্বালাক্বকে এক ত্বালাক্ব গণ্য করা হত এবং ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে তিন ত্বালাক্ব গণ্য করা হত? ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, হ্যাঁ (আবূ দাঊদ, হা/২২০০, সনদ ছহীহ)।

উল্লেখ্য, ত্বালাক্বের পরিমাণ ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এমনটি করেছিলেন। আর এটা ছিল তাঁর ইজতিহাদ, যা থেকে পরে তিনি ফিরে এসেছিলেন। তাছাড়া ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ইজতিহাদের চেয়ে সুন্নাহকে গ্রহণ করা ছহীহ। যেমনটি আলিমগণ বলেছেন (ইবনু বায, মাজমূঊ ফাতাওয়া, ২১তম খণ্ড, পৃ. ২৭৪; আলবানী, মাজমূঊ ফাতাওয়া, পৃ. ১৫২-১৫৪)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া বোর্ডও অনুরূপ ফৎওয়া প্রদান করেছে (ফাতাওয়া লাজনা আদ-দায়েমাহ, ২০তম খণ্ড, পৃ. ১৬৩-১৬৪)।

উল্লেখ্য, ত্বালাক্ব মূলত ইদ্দতের ত্বালাক্ব, আকস্মিক বা যুগপৎ ত্বালাক্ব নয়। স্বামী-স্ত্রীকে অবশ্যই নির্ধারিত ইদ্দত গণনা করতে হবে। এজন্য কমপক্ষে তিন ঋতু মুক্তির তিন মাস স্বামী অবকাশ পাবেন যে, তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ঘর করতে পারবেন কি-না। এছাড়াও স্ত্রীকে স্বামীগৃহেই অবস্থান করতে হবে। এর দ্বারা উভয়কে পুনর্মিলনের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২২৯; সূরা আত-ত্বালাক্ব : ১)। অতএব স্ত্রীকে একসাথে তিন ত্বালাক্ব প্রদান করলে এক ত্বালাক্ব সংঘটিত হবে (উছায়মীন, ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, পৃ. ১৯)। এমতাবস্থায় তারা ঘর-সংসার করতে পারবে। তবে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ যেন না হয় তার জন্য সচেতন থাকতে হবে।


প্রশ্নকারী : মাসঊদ, সিলেট।





প্রশ্ন (২৩) : পাত্রী দ্বীনদার কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখা গেল পাত্রী ফেসবুক মেসেঞ্জারে অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলে। জানা সত্ত্বেও ওই পাত্রীকে বিয়ে করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : ছালাতে সিজদা থেকে দাঁড়িয়ে একটি সিজদা হয়েছে, না-কি দুটি সিজদা হয়েছে- এরূপ সন্দেহ হলে করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : পাত্রীর পরিবারে কারো কারো সন্তান হচ্ছে না, বিয়ের প্রস্তাবকারী ছেলেকে এ কথা অবহিত করা কি আবশ্যক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৮) : কুরআন তেলাওয়াতের সময় মহিলাদের মাথায় কাপড় দেয়া কি আবশ্যক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪৭) : ফরয কিংবা নফল ছালাতে যে সমস্ত জায়গায় দু‘আ করা হয়, সে সব জায়গায় কুরআনের দু‘আমূলক আয়াত পরা যাবে কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৬) : মুছল্লীদের সুবিধার্থে ও তাদের পরামর্শের ভিত্তিতে শুক্রবারে কোন সময়কে ইলম শিখার উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট করে নিলে বিদ‘আত হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : ছহীহ হাদীছের অনুসরণ করার কারণে অনেকে ‘জঙ্গী’ বলছে। এ জন্য পরিবারও চিন্তিত। তারাও চাপ সৃষ্টি করছে। এমন পরিস্থিতিতে কী করা উচিত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : যেকোন কাজ আল্লাহর জন্য করতে চাইলেও মনের মধ্যে রিয়া প্রভাব বিস্তার করে। যেমন ছালাতের ক্ষেত্রে, দান-ছাদাক্বার ক্ষেত্রে। এমতাবস্থায় কী করা উচিত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৮) : কিছু কিছু মসজিদে ক্বিবলার দিক নিয়ে সমস্যা রয়েছে। কম্পাস অনুযায়ী ঠিক ক্বিবলার দিকে পড়ে না। এক্ষণে করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : বিয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ শর্ত কী কী? স্বামীর আক্বীদা ছহীহ না হলে বিবাহ দেয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : ছিয়াম অবস্থায় শ্বাসকষ্টের কারণে ইনহেইলার গ্রহণ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২০) : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির টাকা ফেরত দেয়ার সক্ষমতা নেই। এক্ষেত্রে ঋণদাতা যদি তাকে পাফ করে দেয় তাহলে তার ফযীলত কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ