উত্তর : তিন কন্যা ও স্ত্রীর নির্ধারিত অংশ দেয়ার পর অবশিষ্ট অংশে ‘আস্বাবাহ’ সূত্রে এক বোন ও ভাতিজারা অংশীদার হবেন। কন্যাদের অংশ: এক্ষেত্রে কন্যারা মোট পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ (২/৩) পাবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘কিন্তু দু’এর অধিক কন্যা থাকলে, তাদের জন্য পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশ, আর মাত্র একজন কন্যা থাকলে, তার জন্য অর্ধাংশ’ (সূরা আন-নিসা: ১১)। তাহলে এখানে তিন কন্যা পাবে সমস্ত মালের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দুই ভাগ (১০০স্ট৩=৩৩.৩৩) মানে ৬৬.৬৬ শতাংশ। এবার ঐ ৬৬.৬৬ শতাংশ তিন কন্যার মধ্যে সমানভাবে ভাগ করতে হবে। তাহলে প্রত্যেকে (৬৬.৬৬স্ট৩) ২২.২২ শতাংশ করে পাবে। স্ত্রীর অংশ: সন্তানের উপস্থিতিতে স্ত্রী পরিত্যাক্ত সম্পত্তির এক-অষ্টমাংশ (১/৮) পাবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
‘তোমাদের সন্তান না থাকলে তাদের (স্ত্রীদের) জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ, আর তোমাদের সন্তান থাকলে তাদের (স্ত্রীদের) জন্য তোমাদের পরিত্যক্ত সম্পত্তির এক-অষ্টমাংশ। তোমরা যা ওয়াছিয়্যাত কর তা কার্যকর ও ঋণ পরিশোধ করার পর’ (সূরা আন-নিসা: ১২)।
অর্থাৎ যদি স্বামী মারা যায় এবং তার কোন সন্তান না থাকে, তবে ঋণ পরিশোধ ও ওয়াছিয়্যাত কার্যকর করার পর স্ত্রীরা মোট সম্পত্তির এক-চতুর্থাংশ পাবেন। আর যদি মৃত স্বামীর সন্তান থাকে, এ স্ত্রীর গর্ভজাত হোক কিংবা অন্য স্ত্রীর, তবে ঋণ পরিশোধ ও ওয়াছিয়্যাত কার্যকর করার পর স্ত্রীরা এক-অষ্টমাংশ পাবেন। স্ত্রী একাধিক হলেও উপরিউক্ত বিবরণ অনুযায়ী এক অংশ সকল স্ত্রীর মধ্যে সমহারে বণ্টন করা হবে। তাহলে এখানে স্ত্রী এক-অষ্টমাংশ (১০০স্ট৮) অর্থাৎ ১২.৫ শতাংশ পাবে।
স্ত্রীর অংশ দেয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকবে, তা তাদের অন্যান্য ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। তবে প্রথমে দেখা উচিত যে, স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করা হয়েছে কি-না, যদি না হয় তবে অন্যান্য ঋণের মতই প্রথমে মোট পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে মোহরানা পরিশোধ করার পরে ওয়ারিশদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। মোহরানা পরিশোধ করার পর যদি মৃত স্বামীর সম্পত্তি অবশিষ্ট না থাকে, তবে অন্যান্য ঋণের মত সম্পূর্ণ সম্পত্তি মোহরানা বাবদ স্ত্রীকে সমর্পণ করা হবে এবং কোন ওয়ারিশই অংশ পাবে না। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘শর্তসমূহের মধ্যে যা পূর্ণ করার সর্বাধিক দাবী রাখে তা হল সেই শর্ত যার দ্বারা তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের হালাল করেছ’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৭২১, ৫১৫১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪১৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩০৪; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ১৮/৩১; ই‘লামুল মুওয়াক্কিইন, ৩/৮১; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৯/৫৬; বাবুল লিক্বা আশ-শাহরী, ২/৩৬১-৩৬২ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৪৫৮৫৫; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-১৩১৩৪৬)। জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘সা‘দ ইবনু রাবী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর স্ত্রী সা‘দের ঔরসজাত তাঁর দুই কন্যাসহ রাসূল (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এরা সা‘দ ইবনু রাবীর দুই মেয়ে। এদের বাবা উহুদের যুদ্ধে আপনার সাথে অংশগ্রহণ করে শহীদ হয়েছেন। এদের সমস্ত ধন-সম্পদ এদের চাচা নিয়ে নিয়েছে, এদের জন্য সামান্য কিছুও রাখেনি। এদের কোন ধন-সম্পদ না থাকলে এদের বিয়েও তো হবে না। তিনি বললেন, এ বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলাই সমাধান করে দিবেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে মীরাছ বণ্টন বিষয়ক আয়াত অবতীর্ণ হয়। তাদের চাচাকে রাসূল (ﷺ) ডেকে এনে বললেন, সা‘দের দুই মেয়েকে দুই-তৃতীয়াংশ সম্পত্তি এবং তাদের মাকে এক-অষ্টমাংশ সম্পত্তি দিয়ে দাও, তারপর যেটুকু অবশিষ্ট থাকবে তা তোমার’ (তিরমিযী, হা/২০৯২; আবূ দাঊদ, হা/২৮৯১; ইবনু মাজাহ, হা/২৭২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৮৪০)।
শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘অতঃপর অবশিষ্ট সম্পত্তি ‘আছাবাহ সূত্রে’ অর্থাৎ সবচেয়ে নিকটাত্মীয় উত্তরাধিকারী হিসাবে ভাই ও বোনদের মধ্যে বণ্টন করা হবে। কিন্তু যেহেতু এখানে কোন ভাই জীবিত নেই, তাই অবশিষ্ট সম্পত্তি বোন পেয়ে যাবেন। আর বোনের উপস্থিতিতে ভাতিজারা বঞ্চিত হবে। যেমন ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) সূত্রে রাসূল (ﷺ) বলেন, সুনির্দিষ্ট অংশের অধিকারীদের নিকট মীরাছ পৌঁছে দাও। অতঃপর যা বাকী থাকবে তা (মৃতের) নিকটতম পুরুষের জন্য (ছহীহ বুখারী, হা/৬৭৩২, ৬৭৩৫, ৬৭৩৭, ৬৭৪৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬১৫)। হুযাইল ইবনু শুরাহবীল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে কন্যা, পুত্রের কন্যা এবং বোনের (মীরাছ) সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হল। তখন তিনি বললেন, কন্যার জন্য অর্ধেক আর বোনের জন্য অর্ধেক। তিনি বললেন, তোমরা ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর কাছে যাও, তিনিও হয়তো আমার মতই বলবেন। অতঃপর ইবনু মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে জিজ্ঞেস করা হল এবং আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যা বলেছেন সে সম্পর্কেও তাঁকে জানানো হল। তিনি বললেন, (ও রকম সিদ্ধান্ত দিলে) আমি তো পথভ্রষ্ট হয়ে যাব, হিদায়াতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত থাকব না। আমি এ ব্যাপারে ঐ ফায়সালাই দিচ্ছি, যে ফায়সালা নবী (ﷺ) প্রদান করেছিলেন। কন্যা পাবে অর্ধাংশ আর পৌত্রী পাবে ষষ্ঠাংশ। এভাবে দুই-তৃতীয়াংশ পূর্ণ হবে। বাকী এক তৃতীয়াংশ পাবে বোন। এরপর আমরা আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছে আসলাম এবং ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) যা বললেন, তা তাকে জানালাম। তখন তিনি বললেন, এই অভিজ্ঞ মনীষী যতদিন তোমাদের মাঝে জীবিত থাকবেন, ততদিন আমার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করো না (ছহীহ বুখারী, হা/৬৭৩৬, ৬৭৪২)। তাহলে এখন অবশিষ্ট ২০.৮৪ অংশ বোন পেয়ে যাবেন। আর ভাতিজারা বঞ্চিত হবেন (মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুশ শাইখ ইবনে বায, ২০/১৯৫-১৯৭; মাজাল্লাতুল বাহূছিল ইসলামিয়্যাহ সংখ্যা ১৮, সাল ১৪০৭ হি., ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ৩/৫৯ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৩০৯৬১)।
প্রশ্নকারী : আবু হুরায়রা সিফাত, মান্দা, নওগাঁ।