মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা
(৮ম কিস্তি)
যুহদ-৫৯ : জান্নাতবাসীদের দুনিয়াবিমুখতা।
আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, أَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِأَهْلِ الْجَنَّةِ كُلُّ ضَعِيْفٍ مُتَضَاعِفٍ ذِيْ طِمْرَيْنِ لَوْ يُقْسِمُ عَلَى اللهِ لأَبَرَّهُ ‘আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতবাসীদের সম্পর্কে অবহিত করব না? প্রত্যেক দুর্বল ও চরম অবহেলিত ব্যক্তি, দু’টুকরা জীর্ণ বস্ত্রের অধিকারী। সে যদি আল্লাহর নামে কোন কিছুর শপথ করে, আল্লাহ অবশ্যই তার শপথ বাস্তবায়ন করবেন’।[১]
যুহদ-৬০ : বিছানা।
হাসান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ فِرَاشُهُ عَبَاءَةً وَوِسَادَةً مُرَقَّعَةً حَشْوُهَا لِيْفٌ ‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিছানা ছিল উলের তৈরি আলখাল্লা-সদৃশ একটি কম্বল ও আঁশভর্তি একটি বালিশ, যা ছিল তালি দেয়া’।[২]
যুহদ-৬১ : অহঙ্কার মুক্ত থাকার উপায়।
আব্দুল্লাহ ইবনু শাদ্দাদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
مَنْ لَبِسَ الصُّوْفَ وَاعْتَقَلَ الشَّاةَ وَرَكِبَ الْحِمَارَ وَأَجَابَ دَعْوَةَ الرَّجُلِ الدُّوْنِ أَوِ الْعَبْدِ لَمْ يُكْتَبْ عَلَيْهِ مِنَ الْكِبْرِ شَيْءٌ
‘যে ব্যক্তি উলের বস্ত্র পরিধান করে, ভেড়া বাঁধে, গাধায় চড়ে ও দরিদ্র মানুষ কিংবা দাসের ডাকে সাড়া দেয়, তার বিরূদ্ধে অহঙ্কারসূচক কিছুই লিখা হয় না’।[৩]
যুহদ-৬২ : উম্মুল মুমিনীনগণ ছয়-সাত দিরহাম মূল্যের চাদর গায়ে দিতেন।
হাসান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُصَلِّي فِيْ مُرُوْطِ نِسَائِهِ وَكَانَ مُرُطُهُنَّ أَكْسِيَةً مِنْ صُوْفٍ لَهَا أَعْلَامٌ مِنْ صُوْفٍ أَثْمَانُ سِتَّةِ دَرَاهِمَ أَوْ سَبْعَةِ
‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার স্ত্রীদের চাদর গায়ে দিয়ে ছালাত আদায় করতেন। তাদের চাদর ছিল উলের। চাদরের মধ্যেই উল দিয়ে দাম লেখা থাকত, ছয় বা সাত দিরহাম’।[৪]
যুহদ-৬৩ : শুধু একটি তোশকে শয়ন করতেন।
ইসমাঈল ইবনু উমাইয়া (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত,
أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا صَنَعَتْ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِرَاشَيْنِ فَأَبَى أَنْ يَضْطَجِعَ إِلَّا عَلَى وَاحِدٍ
‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্য দু’টি তোশক বানালেন। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কেবল একটি তোশকের উপর শয়ন করলেন’।[৫]
যুহদ-৬৪ : আরামদায়ক বিছানা ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
دَخَلَتْ عَلَيَّ امْرَأَةٌ مِنَ الْأَنْصَارِ فَرَأَتْ فِرَاشَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَبَاءَةً مُثَنَّاةً فَانْطَلَقَتْ فَبَعَثَتْ إِلَيَّ بِفِرَاشٍ حَشْوهُ الصُّوْفُ فَدَخَلَ عَلَيَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ مَا هَذَا؟ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ فُلَانَةُ الْأَنْصَارِيَّةُ دَخَلَتْ عَلَيَّ فَرَأَتْ فِرَاشَكَ فَانْطَلَقَتْ فَبَعَثَتْ إِلَيَّ بِهَذَا قَالَ رُدِّيهِ فَلَمْ أَرُدَّهُ وَأَعْجَبَنِيْ أَنْ يَكُوْنَ فِيْ بَيْتِيْ حَتَّى قَالَ ذَلِكَ مِرَارًا قَالَ وَاللهِ يَا عَائِشَةَ لَوْ شِئْتُ لَأَجْرَى اللهُ مَعِي جِبَالَ الذَّهَبِ وَالْفِضَّةِ فَرَدَدْتُهُ إِلَيْهَا
‘এক আনছার মহিলা আমার কক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পেল, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর তোশক হল- দুই ভাজ করা আলখাল্লা-সদৃশ একটি উলের কম্বল। এ দৃশ্য দেখে সে তার ঘরে গিয়ে উলভর্তি একটি তোশক আমার নিকট পাঠিয়ে দিল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কক্ষে এসে জিজ্ঞেস করলেন, এটি কী? আমি বললাম, অমুক আনছার মহিলা আমার কক্ষে প্রবেশ করেছিল। সে আপনার বিছানা দেখে এটি পাঠিয়েছে। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটি ফেরত পাঠিয়ে দাও। তবে আমি ফেরত পাঠাইনি; তোশকটি আমাকে মুগ্ধ করেছিল; আমি চাচ্ছিলাম, এটি আমার ঘরে থাকুক। শেষ পর্যন্ত এটি ফেরত পাঠাতে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে তিনবার নির্দেশ দিয়ে বললেন, আয়েশা! এটি ফেরত দিয়ে দাও। আল্লাহর শপথ! আমি চাইলে, আল্লাহ তা‘আলা স্বর্ণ ও রৌপ্যের পাহাড়কে আমার সাথে চলমান করে দিতেন। পরিশেষে আমি তা ফেরত পাঠিয়ে দিই’।[৬]
যুহদ-৬৫ : তুচ্ছ পাপের ব্যাপারেও সাবধান।
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বলতেন, يَا عَائِشَةُ إِيَّاكِ وَمُحَقَّرَاتِ الْأَعْمَالِ فَإِنَّ لَهَا مِنَ اللهِ طَالِبًا ‘হে আয়েশা! সেসব পাপের ব্যাপারে সাবধান হও-লোকেরা যেগুলোকে তুচ্ছ মনে করে; কারণ সে সেগুলোর জন্যও আল্লাহরও পক্ষ থেকে কৈফিয়ত তলব করা হবে’।[৭]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
[১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৭৫০; সনদ ছহীহ, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৯৬।
[২]. ইমাম আহমাদ, কিতাবুল যুহ্দ, হা/৭১।
[৩]. আদ-দুররুন মানছূর, ৫ম খণ্ড , পৃ. ১২৪; ইমাম আহমাদ, কিতাবুল যুহ্দ, হা/৭৩।
[৪]. সুবুলুল হাদী ওয়ার রাশাদ, ৭ম খণ্ড, পৃ. ৭৯।
[৫]. কিতাবুয যুহ্দ, হা/৭৫।
[৬]. তারকাতুন নাবী, হা/৪২।
[৭]. ইবনু মাজাহ, হা/৪২৪৩; মিশকাত, হা/৫৩৫৬; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৫১৩।