যুহ্দ-১০৪ : জাহান্নামে মাত্র ক্ষণিকের জন্য দেয়া হলে দুনিয়ার চরম বিলাসী মানুষও সারাজীবনের জৌলুসের কথা সম্পূর্ণরূপে ভুলে যাবে
১১৫). আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
يُؤْتَى بِأَنْعَمِ أَهْلِ الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُصْبَغُ فِى النَّارِ صَبْغَةً ثُمَّ يُقَالُ يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ خَيْرًا قَطُّ هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيْمٌ قَطُّ فَيَقُوْلُ لَا وَاللهِ يَا رَبِّ. وَيُؤْتَى بِأَشَدِّ النَّاسِ بُؤْسًا فِى الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيُصْبَغُ صَبْغَةً فِى الْجَنَّةِ فَيُقَالُ لَهُ يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ بُؤْسًا قَطُّ هَلْ مَرَّ بِكَ شِدَّةٌ قَطُّ فَيَقُوْلُ لَا وَاللهِ يَا رَبِّ مَا مَرَّ بِىْ بُؤُسٌ قَطُّ وَلَا رَأَيْتُ شِدَّةً قَطُّ.
‘ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হবে, যে পৃথিবীতে অত্যন্ত আরাম-আয়েশের সাথে জীবন-যাপন করেছে। অতঃপর তাকে ক্ষণিকের জন্য জাহান্নামে রেখে আবার বের করে আনা হবে। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি পৃথিবীতে কোন সুখ-শান্তি দেখেছ? তুমি কি কোন নে‘মত ভোগ করেছ? সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনার শপথ, কখনো না। অতঃপর জান্নাতীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হবে, যে পৃথিবীতে জীবনব্যাপী দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছে। তারপর তাকে ক্ষণিকের জন্য জান্নাতে রেখে আবার বের করে আনা হবে এবং জিজ্ঞেস করা হবে, হে বনী আদম! তুমি কি পৃথিবীতে কখনো দুঃখ-কষ্ট দেখেছ? তোমার জীবনে কি কখনো দুঃখ-কষ্ট এসেছিল? সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনার শপথ, কখনো তা আসিনি। আমি কখনো দুঃখ-কষ্টে জীবন কাটাইনি’।[১]
যুহ্দ-১০৫ : সর্বোত্তম হল- কারো নিকট কিছু না চাওয়া
১১৬). ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)!
أَلَيْسَ قَدْ قُلْتَ لِيْ إِنَّ خَيْرًا لَكَ أَنْ لَا تَسْأَلَ أَحَدًا شَيْئًا قَالَ إِنَّمَا ذَاكَ أَنْ تَسْأَلَ النَّاسَ وَمَا آتَاكَ اللهُ مِنْ غَيْرِ مَسْأَلَةٍ فَإِنَّمَا هُوَ رِزْقٌ رَزَقَكَهُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ
‘আপনি কি আমাকে ইতোপূর্বে বলেননি যে, তোমার জন্য সর্বোত্তম কাজ হল তুমি কারো নিকট কোন কিছু চাইবে না। তিনি আরো বললেন, ‘সেটি ঐ সময় প্রযোজ্য, যখন তুমি নিজে থেকে মানুষের নিকট কোন কিছু চাইবে। পক্ষান্তরে চাওয়া ব্যতিরেকেই আল্লাহ তা‘আলা যা কিছু তোমাকে দিবেন, তাকে মনে করবে মহান আল্লাহ কর্তৃক তোমাকে সরবরাহ করা জীবনোপকরণ’।[২]
১১৭). উসামা ইবনু যাইদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
نَظَرْتُ إِلَى الْجَنَّةِ فَإِذَا أَكْثَرُ أَهْلِهَا الْمَسَاكِيْنُ وَنَظَرْتُ فِي النَّار فَإِذَا أَكْثَرُ أَهْلِهَا النِّسَاءُ وَإِذَا أَهْلُ الْجَدِّ مَحْبُوْسُوْنَ وَإِذَا الْكُفَّارُ قَدْ أُمِرَ بِهِمْ إِلَى النَّارِ.
‘আমি জান্নাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম, সেখানকার বেশিরভাগ অধিবাসী হল মিসকীন ব্যক্তি। জাহান্নামের দিকে তাকিয়ে দেখি, সেখানকার বেশিরভাগ বাসিন্দা নারী। আর ধনাঢ্য ব্যক্তিরা আটকে গেছে এবং কাফিরদেরকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে’।[৩]
যুহ্দ-১০৬ : আল্লাহর ক্ষমা লাভের প্রত্যাশা ও পাপের ভয়ে আশঙ্কা, দু’টি মুমিন হৃদয়ে জাগরুক থাকা
১১৮). আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
دَخَلَ النَّبِيُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى شَابٍّ وَّهُوَ فِى الْمَوْتِ فَقَالَ كَيْفَ تَجِدُكَ؟ قَالَ أرْجُو اللهَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَإِنِّي أَخَافُ ذُنُوْبِيْ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا يَجْتَمِعَانِ فِى قَلْبِ عَبْدٍ فِىْ مِثْلِ هَذَا الْمَوْطِنِ إِلَّا أَعْطَاهُ اللهُ مَا يَرْجُوْ وَآمَنَهُ مِمَّا يَخَافُ.
‘একবার নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি যুবকের নিকট পৌঁছলেন, যুবকটির তখন মুমূর্ষু অবস্থা। তখন তিনি বললেন, কেমন বোধ করছ? সে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আল্লাহর রহমতের আশা রাখি আর আমার গুনাহসমূহের কারণে ভয়ও করি। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরূপ স্থানে কোন বান্দার অন্তরে এই দু’টি বিষয় একত্র হতে পারে না কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাকে দান করেন, যার সে আশা রাখে এবং নিরাপদে রাখেন তাকে যা হতে সে ভয় করে’।[৪]
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩১৩৪; মিশকাত, হা/৫৬৬৯।
[২]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৫৪৬; সনদ হাসান ছহীহ, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮৪৭।
[৩]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৭৪৫৬, সনদ ছহীহ।
[৪]. তিরমিযী, হা/৯৮৩; ইবনু মাজাহ হা/৪২৬১; মিশকাত, হা/১৬১২, সনদ হাসান।