শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৯ অপরাহ্ন

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা


(২০তম কিস্তি)

যুহ্দ-১২১ : একাধারে কয়েক রাত অভুক্ত থাকতেন

১৩৩. ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত,

أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ كَانَ يَبِيْتُ اللَّيَالِىَ الْمُتَتَابِعَةَ طَاوِيًا وَأَهْلُهُ لَا يَجِدُوْنَ عَشَاءً قَالَ وَكَانَ عَامَّةُ خُبْزِهِمْ خُبْزَ الشَّعِيْرِ

‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পরপর অনেক রাত অভুক্ত থাকতেন। তার পরিবারবর্গের নিকটও সকাল ও রাতে খাওয়ার মত কিছু থাকত না। তারা সাধারণত যবের রুটি খেতেন’।[১]  

১৩৪. আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত,

أَنَّهُ مَشَى إِلَى النَّبِيِّ ﷺ بِخُبْزِ شَعِيْرٍ وَإِهَالَةٍ سَنِخَةٍ وَلَقَدْ رَهَنَ النَّبِيُّ ﷺ دِرْعًا لَّهُ بِالْمَدِيْنَةِ عِنْدَ يَهُوْدِيٍّ وَأَخَذَ مِنْهُ شَعِيْرًا لِأَهْلِهِ وَلَقَدْ سَمِعْتُهُ يَقُوْلُ مَا أَمْسَى عِنْدَ آلِ مُحَمَّدٍ صَاعُ بُرٍّ وَلَا صَاعُ حَبٍّ وَإِنَّ عِنْدَهُ لَتِسْعُ نِسْوَةٍ

‘একদা তিনি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খেদমতে কিছু যবের রুটি ও গন্ধময় পুরাতন চর্বি নিয়ে আসলেন। এদিকে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনার এক ইহুদীর কাছে নিজের লৌহ বর্মটি বন্ধক রেখে পরিবারবর্গের জন্য কিছু যব ধার নিয়েছিলেন। রাবী বলেন, আমি আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে এ কথা বলতেও শুনেছি যে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারের কাছে কোন সন্ধ্যাকালেই এক ছা‘ গম বা এক ছা‘ কোন খাদ্য দানাও অবশিষ্ট থাকত না। অথচ তাঁর স্ত্রী ছিলেন নয়জন।[২]

যুহ্দ-১২২ : একমাস পর্যন্ত ঘরে রুটি বানানো হয়নি

১৩৫. আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,

أَرْسَلَ إِلَيْنَا آلُ أَبِىْ بَكْرٍ بِقَائِمَةِ شَاةٍ لَيْلًا فَأَمْسَكْتُ وَقَطَعَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَوْ قَالَتْ أَمْسَكَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَقَطَعْتُ قَالَتْ تَقُوْلُ لِلَّذِىْ تُحَدِّثُهُ هَذَا عَلَى غَيْرِ مِصْبَاحٍ قَالَ قَالَتْ عَائِشَةُ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا إِنَّهُ لَيَأْتِىْ عَلَى آلِ مُحَمَّدٍ الشَّهْرُ مَا يَخْتَبِزُوْنَ خُبْزًا وَلَا يَطْبُخُوْنَ قِدْرًا

‘একবার আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাদের নিকট ভেড়ার একটি পা পাঠালেন। আমি তা ধরে রাখলাম, আর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এটি কাটলেন। অথবা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা ধরলেন এবং আমি তা কাটলাম। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)  বললেন, যিনি এটা বর্ণনা করেছেন তিনি বললেন, এই (ঘটনাটি) বাতি ছাড়ায় ছিল। অতঃপর আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারবর্গের উপর এক মাস পর্যন্ত এমন অতিবাহিত হয়েছে, যখন তারা রুটিও বানাননি এবং হাড়িও চড়াননি’।[৩]

যুহ্দ-১২৩ : ক্ষুধার যন্ত্রণায় ন্যুব্জ (বাঁকা) হয়ে যেতেন

১৩৬. নু‘মান ইবনু বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এক বক্তৃতায় বলেন, মানুষকে দুনিয়া কীভাবে পেয়ে বসেছে- তা উল্লেখ করে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছিলেন,

لَقَدْ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَظَلُّ الْيَوْمَ يَلْتَوِىْ مَا يَجِدُ دَقَلًا يَمْلَأُ بِهِ بَطْنَهُ

‘আমি একদিন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ক্ষুধার যন্ত্রণায় ন্যুব্জ হয়ে যেতে দেখেছি। পেট ভরার মত নিম্ন মানের খেজুরও তাঁর নিকট ছিল না’।[৪]

যুহ্দ-১২৪ : পরপর দু’দিন পেট ভরে যবের রুটি খেতে পাননি

১৩৭. আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন,

مَا شَبِعَ آلُ مُحَمَّدٍ مِنْ خُبْزِ الشَّعِيْرِ يَوْمَيْنِ مُتَتَابِعَيْنِ حَتَّى قُبِضَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ

‘মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারবর্গ লাগাতার দুই দিন যবের রুটি খেয়ে পরিতৃপ্ত হননি। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওফাত হয়েছে’।[৫]

যুহ্দ-১২৫ : কখনো যবের রুটি উদ্বৃত্ত থাকত না

১৩৮. আবূ উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, مَا كَانَ يَفْضُلُ مِنْ أَهْلِ بَيْتِ النَّبِىِّ ﷺ خُبْزُ الشَّعِيْرِ ‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর পরিবারবর্গের নিকট কখনো যবের রুটি উদ্বৃত্ত থাকত না’।[৬]

যুহ্দ-১২৬ : মুমিনদের বৈশিষ্ট্য হল- রাত্রিতে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করা

১৩৯. মু‘আয ইবনু জাবাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ হতে বর্ণনা করেছেন যে, আল্লাহ তা‘আলার বাণী- تَتَجَافٰی جُنُوۡبُہُمۡ عَنِ الۡمَضَاجِعِ ‘(মুমিন তো তারাই) যাদের পার্শ্বদেশ বিছানা এড়িয়ে চলে’ (সূরা আস-সাজদাহ : ১৬)-এর ব্যাখ্যায় নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, قِيَامُ الْعَبْدِ مِنَ اللَّيْلِ ‘তারা সেসব বান্দা যারা রাতে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করে’।[৭]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)


তথ্যসূত্র :
[১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩০৩; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২১১৯; ছহীহুল জামে‘, হা/৪৮৯৫।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/২০৬৯; মিশকাত, হা/৫২৩৯।
[৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৬৭৫; সনদ ছহীহ, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩২৭৬।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৭৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৫৩।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৩৭৪; মুসলিম, হা/২৯৭০; মিশকাত, হা/৫২৩৭।
[৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২৯৮, সনদ ছহীহ।
[৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২০৭৫, সনদ ছহীহ।




প্রসঙ্গসমূহ »: কিতাবুয যুহদ
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৩য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (২১তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৫ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর দুনিয়াবিমুখতা (১৫তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১০ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৮তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৪র্থ কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৭তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৯ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (২০তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৮ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ