মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১১ পূর্বাহ্ন

মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা


(১০ম কিস্তি)

যুহদ-৭৪. মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করা

৮৭. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, أَكْثِرُوْا مِنْ ذِكْرِ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ ‘সকল স্বাদ ধ্বংসকারী (মৃত্যু)-কে বেশি বেশি স্মরণ কর’।[১]

যুহদ-৭৫ : মৃত্যুকে স্মরণ করা মানুষের প্রশংসনীয় গুণ

৮৮. ইবনু সাবিত্ব (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

ذُكِرَ رَجُلٌ عِنْدَ النَّبِيِّ ﷺ فَأُحْسِنَ عَلَيْهِ الثَّنَاءُ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ كَيْفَ ذِكْرُهُ لِلْمَوْتِ فَلَمْ يُذْكَرْ ذَلِكَ مِنْهُ فَقَالَ مَا هُوَ كَمَا تَذْكُرُوْنَ

‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সামনে এক ব্যক্তির প্রশংসা করা হলে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, মৃত্যুকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে তার কী অবস্থা? তারা বললেন, ততটা নয়। তখন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে তোমরা যেমনটি বলছ, সে ততটা নয়’।[২]

যুহদ-৭৬ : একটি আয়াত তেলাওয়াত করে তিনি রাত অতিবাহিত করেছেন

৮৯. আবূ যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত,

أَنَّهُ رَدَّدَ هَذِهِ الْآيَةَ حَتَّى أَصْبَحَ { اِنۡ تُعَذِّبۡہُمۡ فَاِنَّہُمۡ عِبَادُکَ وَ اِنۡ تَغۡفِرۡ لَہُمۡ فَاِنَّکَ اَنۡتَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ }

‘একটি আয়াতের পুনরাবৃত্তি করতে করতে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সারা রাত কাটিয়ে দিয়েছেন, (আল্লাহ তা‘আলা বলেন,) ‘আপনি যদি তাদেরকে শাস্তি দেন, তাহলে তারা তো আপনারই বান্দা; আর যদি তাদেরকে ক্ষমা করে দেন, তাহলে আপনি তো প্রবল পরাক্রমশালী, মহাবিজ্ঞ’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ১১৮)’।[৩]

যুহদ-৭৭ : অধিক ছালাত আদায়ের ফলে তাঁর দু’পা ফেটে যেত

৯০. আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ نَبِىَّ اللهِ ﷺ كَانَ يَقُوْمُ مِنَ اللَّيْلِ حَتَّى تَتَفَطَّرَ قَدَمَاهُ فَقَالَتْ عَائِشَةُ لِمَ تَصْنَعُ هَذَا يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ وَقَدْ غَفَرَ اللهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَفَلَا أُحِبُّ أَنْ أَكُوْنَ عَبْدًا شَكُوْرًا

‘আল্লাহ‌র নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতে এত অধিক ছালাত আদায় করতেন যে, তাঁর পদযুগল ফেটে যেত। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, হে আল্লাহ‌র রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহ তো আপনার আগের ও পরের ত্রুটিসমূহ ক্ষমা করে দিয়েছেন? তবুও আপনি কেন তা করছেন? তিনি বললেন, আমি কি আল্লাহ‌র কৃতজ্ঞ বান্দা হওয়া পসন্দ করব না?’[৪]

যুহদ-৭৮ : ধারাবাহিকভাবে আমল করা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়

৯১. আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ كَانَ يَحْتَجِرُ حَصِيْرًا بِاللَّيْلِ فَيُصَلِّى وَيَبْسُطُهُ بِالنَّهَارِ فَيَجْلِسُ عَلَيْهِ فَجَعَلَ النَّاسُ يَثُوْبُوْنَ إِلَى النَّبِىِّ ﷺ فَيُصَلُّوْنَ بِصَلَاتِهِ حَتَّى كَثُرُوْا فَأَقْبَلَ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ خُذُوْا مِنَ الْأَعْمَالِ مَا تُطِيْقُوْنَ فَإِنَّ اللهَ لَا يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوْا وَإِنَّ أَحَبَّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللهِ مَا دَامَ وَإِنْ قَلَّ

‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাতের বেলা চাটাই দিয়ে ঘিরে দিয়ে ছালাত আদায় করতেন। আর দিনের বেলা তা বিছিয়ে তার উপর বসতেন। লোকজন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট একত্রিত হয়ে তাঁর সঙ্গে ছালাত আদায় করতে লাগল। এমনকি বহু লোক একত্রিত হল। তখন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, হে লোক সকল! তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আমল করতে থাক। কারণ আল্লাহ তা‘আলা ক্লান্ত হন না, বরং তোমরাই ক্লান্ত হয়ে পড়বে। আর আল্লাহ‌র নিকট ঐ আমল সবচেয়ে প্রিয়, যা সর্বদা করা হয়, যদিও তা কম হয়’।[৫]

যুহদ-৭৯ : অতি সাধারণ ব্যক্তিও তাঁকে সঙ্গে নিয়ে যেতে পারত

৯২. আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

إِنْ كَانَتِ الْأَمَةُ مِنْ أَهْلِ الْمَدِيْنَةِ لَتَأْخُذُ بِيَدِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَمَا يَنْزِعُ يَدَهُ مِنْ يَدِهَا حَتَّى تَذْهَبَ بِهِ حَيْثُ شَاءَتْ مِنَ الْمَدِيْنَةِ فِىْ حَاجَتِهَا

‘মদীনার কোন দাসী নিজ প্রয়োজনে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাত ধরে তাঁকে নিজ ইচ্ছামত মদীনার কোন স্থানে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি তার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতেন না অর্থাৎ তার সাথে যেতেন’।[৬]

যুহদ-৮০ : নিয়মিত ইবাদত অধিক পসন্দনীয়

৯৩. আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ النَّبِىَّ ﷺ دَخَلَ عَلَيْهَا وَعِنْدَهَا امْرَأَةٌ قَالَ مَنْ هَذِهِ قَالَتْ فُلَانَةُ تَذْكُرُ مِنْ صَلَاتِهَا قَالَ مَهْ عَلَيْكُمْ بِمَا تُطِيْقُوْنَ فَوَاللّٰهِ لَا يَمَلُّ اللهُ حَتَّى تَمَلُّوْا وَكَانَ أَحَبَّ الدِّيْنِ إِلَيْهِ مَا دَامَ عَلَيْهِ صَاحِبُهُ

‘নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার তাঁর নিকট আসেন, তখন সেখানে এক মহিলা ছিলেন। আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, ইনি কে? আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) উত্তর দিলেন, অমুক মহিলা, এ বলে তিনি তাঁর ছালাতের কথা উল্লেখ করলেন। আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘থাম, তোমরা যতটুকু সামর্থ্য রাখ, ততটুকুই তোমাদের করা উচিত। আল্লাহর শপথ! আল্লাহ তা‘আলা ততক্ষণ পর্যন্ত ছওয়াব দিতে বিরত হন না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরা পরিশ্রান্ত হয়ে পড়। আল্লাহর নিকট অধিক পসন্দনীয় আমল সেটাই, আমলকারী যা নিয়মিত করে থাকে’।[৭]

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

তথ্যসূত্র :
[১]. তিরমিযী, হা/২৩০৭; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৯৯৬, সনদ হাসান।
[২]. মুছান্নাফু ইবনে আবী শায়বা, হা/৩৫৪৬৯, হাদীছ মুরসাল তবে সকল বর্ণনাকারী ছিক্বাহ।
[৩]. নাসাঈ, হা/১০১০; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৫০; মিশকাত, হা/১২০৮, সনদ ছহীহ।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৮৩৭।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৮৬১।
[৬]. ইবনু মাজাহ, হা/৪১৭৭, সনদ ছহীহ।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৩; নাসাঈ, হা/১৬৪২; ইবনু মাজাহ, হা/৪২৩৮।




প্রসঙ্গসমূহ »: কিতাবুয যুহদ
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৮ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর দুনিয়াবিমুখতা (১২তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৭তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (২০তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৪র্থ কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা (২য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৯তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৯ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৮তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
আদম (আলাইহিস সালাম) -এর দুনিয়াবিমুখতা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৬তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ