শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৪ অপরাহ্ন

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা


(১৭তম কিস্তি)

যুহ্দ-১০৭ : সফরে মানুষের প্রয়োজনীয় পাথেয়সমূহ

১১৮. আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ إِنِّيْ أُرِيْدُ سَفَرًا فَزَوِّدْنِيْ فَقَالَ زَوَّدَكَ اللهُ التَّقْوَى قَالَ زِدْنِيْ قَالَ وَغَفَرَ ذَنْبَكَ قَالَ زِدْنِيْ بِأَبِيْ أَنْتَ وَأُمِّيْ قَالَ وَيَسَّرَ لَكَ الْخَيْرَ حَيْثُمَا كُنْتَ

‘এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি সফরের ইচ্ছা করেছি, আমাকে কিছু পাথেয় বা উপদেশ দান করুন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমাকে আল্লাহ কারও নিকট সওয়াল করা হতে বাঁচিয়ে রাখুন। সে বলল, আমায় আরও কিছু দিন। তিনি বললেন, আল্লাহ তোমার গুনাহ মাফ করুন। সে বলল, আমার মা-বাপ আপনার উপর কুরবান হোক। আমাকে আরও কিছু দিন। তিনি বললেন, তুমি যেখানেই থাক না কেন, আল্লাহ তোমার জন্য কল্যাণকে সহজ করুন’।[১]

যুহ্দ-১০৮ : আল্লাহ তা‘আলা যাদের কসম পূরণ করেন

১১৯. আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

كَمْ مِنْ أَشْعَثَ أَغْبَرَ ذِيْ طِمْرَيْنِ لَا يَؤُبَّهُ لَهُ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ مِنْهُمُ الْبَرَاءُ بْنُ مَالِكٍ

‘অনেক লোক এমনও আছে, যার মাথার চুল এলোমেলো, ধুলা-বালি মিশ্রিত, দু’টি পুরাতন কাপড় পরিহিত, যার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করা হয় না, যদি সে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে কোন বিষয়ের উপর শপথ করে, আল্লাহ তার কসমকে পূরণ করেন। এই সকল লোকের মধ্যে হতে বারা ইবনু মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হলেন অন্যতম’।[২]

যুহ্দ-১০৯ : ক্বিয়ামত সন্নিনিকটে

১২০. জাবির ইবনু সামুরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,

رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يُشِيْرُ بِإِصْبَعَيْهِ وَيَقُوْلُ بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَذِهِ مِنْ هَذِهِ

‘আমি নবী করীম (ﷺ)-এর দু’টি আঙ্গুলের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। তিনি তর্জনী ও তৎসংলগ্ন (মধ্যমা) আঙ্গুলদ্বয়ের দিকে ইশারা করে বলছিলেন, আমার আগমন ও ক্বিয়ামত এ দু’টি আঙ্গুলের ব্যবধানের ন্যায়’।[৩]

যুহ্দ-১১০ : ইন্তেকালের সময় পরিধেয় বস্ত্র

১২১. আবূ বুরদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

دَخَلْتُ عَلَى عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا فَأَخْرَجَتْ إِلَيْنَا إِزَارًا غَلِيْظًا مِمَّا يُصْنَعُ بِالْيَمَنِ وَكِسَاءً مِنَ الَّتِىْ يُسَمُّوْنَهَا الْمُلَبَّدَةَ قَالَ فَأَقْسَمَتْ بِاللهِ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قُبِضَ فِىْ هَذَيْنِ الثَّوْبَيْنِ

‘একদা আমি আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর নিকট প্রবেশ করলে তিনি ইয়ামানের তৈরি একটি মোটা লুঙ্গি ও মুলাব্বাদা নামক একটি মোটা চাঁদর বের করে এনে আল্লাহর কসম করে বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়ার সময় এ দু’টি কাপড় তাঁর পরিধানে ছিল’।[৪]

যুহ্দ-১১১ : আহলুছ ছুফ্ফার সদস্য ছাহাবীদের জীবনযাত্রা

১২২. ত্বালহা আন-নাছরী আল-বাছরী (রাযিয়াল্লাহ আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি যখন মদীনায় আসলাম, তখন এখানে আমার পরিচিত কেউ ছিল না। আমরা যেখানে থাকতাম সেখানে প্রতি দু’দিন এক মুদ্দ পরিমাণ খেজুর আসত। অতঃপর একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদেরকে নিয়ে ছালাত আদায় করলেন। ছালাত শেষে পেছন থেকে একজন চিৎকার করে বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! শুকনো খেজুর খেয়ে আমাদের পেট জ্বলে গিয়েছে, আর আমাদের চটের জামাও ছিলে গিয়েছে! এসব অনুযোগ শুনে নবী করীম (ﷺ) একটি ভাষণ দেন। ভাষণে আল্লাহ তা‘আলার স্তুতি ও প্রশংসা করে তিনি বলেন,

وَاللهِ لَوْ أَجِدُ لَكُمُ اللَّحْمَ وَالْخُبْزَ لِأَطْعَمْتُكُمُوْهُ وَلَيَأْتِيَنَّ عَلَيْكُمْ زَمَانٌ يُغْدَا عَلَى أَحَدِكُمْ بِالْجِفَانِ وَيُرَاحُ وَلَتَلْبَسُنَّ مِثْلَ أَسْتَارِ الْكَعْبَةِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ نَحْنُ الْيَوْمَ خَيْرٌ مِنَّا أَوْ يَوْمَئِذٍ قَالَ أَنْتُمُ الْيَوْمَ خَيْرٌ مِنْكُمْ يَوْمَئِذٍ أَنْتُمُ الْيَوْمَ خَيْرٌ مِنْكُمْ يَوْمَئِذٍ يَضْرِبُ بَعْضُكُمْ رِقَابَ بَعْضٍ

‘আল্লাহর কসম! তোমাদের জন্য গোশত ও রুটির ব্যবস্থা করার সামর্থ্য থাকলে আমি তোমাদেরকে অবশ্যই তা খাওয়াতাম। তোমাদের উপর এমন একটি সময় আসবেই, যখন তোমাদের কারো কারো সামনে সকাল-সন্ধ্যায় খাবারের বিশাল ডিশ পরিবেশন করা হবে, আর তোমাদের গায়ে থাকবে কা‘বার গিলাফ সদৃশ পোশাক। তারা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আজকের সময় ও সেই সময় এতদুভয়ের মধ্যে আমাদের জন্য কোনটি উত্তম? জবাবে তিনি বলেন, সে সময়ের তুলনায় বর্তমান সময় তোমাদের জন্য অধিক উত্তম। সে সময় তোমাদের একদল অপরদলের গর্দানে আঘাত করবে’।[৫]

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

তথ্যসূত্র :
[১]. তিরমিযী, হা/৩৪৪৪; মিশকাত, হা/২৪৩৭, সনদ হাসান।
[২]. তিরমিযী, হা/৩৮৫৪; মিশকাত, হা/৬২৩৯, সনদ ছহীহ।
[৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২০৯০০, সনদ হাসান।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০৮০; আবূ দাঊদ, হা/৪০৩৬।
[৫]. আল-আহাদ ওয়াল মাছানী, হা/১৪৩৫, সনদ ।




প্রসঙ্গসমূহ »: জীবন কথা নবী-রাসূল
মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর দুনিয়াবিমুখতা (১২তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর দুনিয়াবিমুখতা (৭ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৪তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (২১তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১০ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৭তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৮তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৮ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর দুনিয়াবিমুখতা (১৫তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
আদম (আলাইহিস সালাম) -এর দুনিয়াবিমুখতা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ