বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৮ অপরাহ্ন
যুহদ-১০০ : শিশুদের প্রতি সর্বাধিক দয়ালু

১১১). আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرْحَمَ النَّاسِ بِالْعِيَالِ وَكَانَ لَهُ ابْنٌ مُسْتَرْضَعٌ فِيْ نَاحِيَةِ الْمَدِيْنَةِ وَكَانَ ظِئْرُهُ قَيْنًا وَكُنَّا نَأْتِيْهِ وَقَدْ دَخَنَ الْبَيْتُ بِإِذْخِرٍ فَيُقَبِّلُهُ وَيَشُمُّهُ.

‘মানুষের মধ্যে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন পরিবার-পরিজনের প্রতি সর্বাধিক দয়ালু। তাঁর একটি পুত্র ছিল মদীনার উপকণ্ঠে  এক মহিলার দুগ্ধপোষ্যরূপে। তার স্বামী ছিল কামার। আমরা সেখানে যেতাম। ঘরটি ইযখির ঘাসের ধোঁয়ায় ভরে যেত। তিনি তাকে চুমু দিতেন এবং নাকে নাগিয়ে ঘ্রাণ নিতেন’।[১]

যুহদ-১০১ : মুহাররম মাসের ছিয়াম ফযীলত

১১২). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الْفَرِيْضَةِ صَلَاةُ اللَّيْلِ

‘রামাযান মাসের পর সর্বোত্তম ছিয়াম হল আল্লাহর মাস মুহাররম মাসের ছিয়াম আর ফরয ছালাতের পর সর্বোত্তম ছালাত হল রাতের ছালাত’।[২]

যুহদ-১০২ : কুরআন অধ্যায়ন ও ইলম অন্বেষণের মর্যাদা

১১৩). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مَا مِنْ قَوْمٍ يَجْتَمِعُوْنَ فِيْ بَيْتٍ مِنْ بُيُوْتِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ يَتَعَلَّمُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَيَتَدَارَسُوْنَهُ بَيْنَهُمْ إِلَّا حَفَّتْ بِهِمُ الْمَلَائِكَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيْمَنْ عِنْدَهُ وَمَا مِنْ رَجُلٍ يَسْلُكُ طَرِيْقًا يَلْتَمِسُ فِيْهِ الْعِلْمَ إِلَّا سَهَّلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ بِهِ طَرِيْقًا إِلَى الْجَنَّةِ

‘যখন একদল লোক আল্লাহ তা‘আলার কোন একটি গৃহে সমবেত হয়ে কুরআন শিখে ও তা নিয়ে পরস্পর আলোচনা করে, তখন ফেরেশতারা তাদেরকে ঘিরে রাখে, আল্লাহর রহমত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে নেয় এবং তার নিকট যারা আছে তাদের সাথে তিনি সেসব লোকের প্রশংসা করতে থাকেন। আর যে ব্যক্তিই ইলম অনুসন্ধানের লক্ষ্যে কোন একটি পথে চলতে শুরু করে, এর বিনিময়ে জান্নাতে যাওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা তার রাস্তা সুগম করে দেন’।[৩]

যুহদ-১০৩ : রহমতের সাদৃশ্যে গযবের আশঙ্কা

১১৪). নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর স্ত্রী আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

مَا رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مُسْتَجْمِعًا ضَاحِكًا حَتَّى أَرَى مِنْهُ لَهَوَاتِهِ إِنَّمَا كَانَ يَتَبَسَّمُ قَالَتْ وَكَانَ إِذَا رَأَى غَيْمًا أَوْ رِيْحًا عُرِفَ ذَلِكَ فِىْ وَجْهِهِ فَقَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَرَى النَّاسَ إِذَا رَأَوُا الْغَيْمَ فَرِحُوْا رَجَاءَ أَنْ يَكُوْنَ فِيْهِ الْمَطَرُ وَأَرَاكَ إِذَا رَأَيْتَهُ عَرَفْتُ فِىْ وَجْهِكَ الْكَرَاهِيَةَ قَالَتْ فَقَالَ يَا عَائِشَةُ مَا يُؤَمِّنُنِىْ أَنْ يَكُوْنَ فِيْهِ عَذَابٌ قَدْ عُذِّبَ قَوْمٌ بِالرِّيْحِ وَقَدْ رَأَى قَوْمٌ الْعَذَابَ فَقَالُوْا ہٰذَا عَارِضٌ مُّمۡطِرُنَا

‘আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে কখনো আলজিহ্বা দেখা যায় এমনভাবে মুখ জুড়ে হাসি দিতে দেখিনি; তবে তিনি মুচকি হাসি দিতেন। মেঘমালা অথবা বায়ুপ্রবাহ দেখলে তার চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠত। ফলে আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মানুষ তো মেঘমালা দেখে এই ভেবে খুশি হয় যে, এখন বৃষ্টি হবে! অথচ আপনাকে দেখি, মেঘমালা দেখলে আপনার চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ স্পষ্ট হয়ে উঠে! জবাবে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে আয়েশা! এর মধ্যে শাস্তি থাকবে না-এ নিশ্চয়তা আমাকে কে দিবে? অতীতে একটি জাতিকে বায়ু প্রবাহের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয়েছিল। অথচ ঐ জাতিটি (বায়ুপ্রবাহ সদৃশ) শাস্তি দেখে বলেছিল, এই তো মেঘমালা! যা আমাদের জন্য বৃষ্টি বর্ষণ করবে’ (সূরা আল-আহক্বাফ : ২৪)।

যুহদ-১০৪ : জাহান্নামে মাত্র একবার চুবানি দেয়া হলে দুনিয়ার চরম বিলাসী মানুষও সারাজীবনের জৌলুসের কথা সম্পূর্ণরূপে ভুলে যাবে

১১৫). আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

يُؤْتَى بِأَنْعَمِ أَهْلِ الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيُصْبَغُ فِى النَّارِ صَبْغَةً ثُمَّ يُقَالُ يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ خَيْرًا قَطُّ هَلْ مَرَّ بِكَ نَعِيْمٌ قَطُّ فَيَقُوْلُ لَا وَاللهِ يَا رَبِّ. وَيُؤْتَى بِأَشَدِّ النَّاسِ بُؤْسًا فِى الدُّنْيَا مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ فَيُصْبَغُ صَبْغَةً فِى الْجَنَّةِ فَيُقَالُ لَهُ يَا ابْنَ آدَمَ هَلْ رَأَيْتَ بُؤْسًا قَطُّ هَلْ مَرَّ بِكَ شِدَّةٌ قَطُّ فَيَقُوْلُ لَا وَاللهِ يَا رَبِّ مَا مَرَّ بِىْ بُؤُسٌ قَطُّ وَلَا رَأَيْتُ شِدَّةً قَطُّ

‘ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হবে, যে পৃথিবীতে অত্যন্ত আরাম-আয়েশের সাথে জীবন-যাপন করেছে। অতঃপর তাকে ক্ষণিকের জন্য জাহান্নামে রেখে আবার বের করে আনা হবে। তারপর তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, হে আদম সন্তান! তুমি কি পৃথিবীতে কোন সুখ-শান্তি দেখেছ? তুমি কি কোন নে‘মত ভোগ করেছ? সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনার শপথ, কখনো না। অতঃপর জান্নাতীদের মধ্য হতে এমন এক ব্যক্তিকে আনা হবে, যে পৃথিবীতে জীবনব্যাপী দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেছে। তারপর তাকে ক্ষণিকের জন্য জান্নাতে রেখে আবার বের করে আনা হবে এবং জিজ্ঞেস করা হবে, হে বনী আদম! তুমি কি পৃথিবীতে কখনো দুঃখ-কষ্ট দেখেছ? তোমার জীবনে কি কখনো দুঃখ-কষ্ট এসেছিল? সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আপনার শপথ, কখনো তা আসিনি। আমি কখনো দুঃখ-কষ্টে জীবন কাটাইনি’।[৪]


তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৩১৬; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৭৬, সনদ ছহীহ।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৩৬; মিশকাত, হা/২০৩৯।
[৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৯২৬৩, সনদ ছহীহ।
[৪].  ছহীহ মুসলিম, হা/২৮০৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩১৩৪; মিশকাত, হা/৫৬৬৯।




প্রসঙ্গসমূহ »: জীবন কথা শিষ্টাচার
মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর দুনিয়াবিমুখতা (৭ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (২০তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৬ষ্ঠ কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৮ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৪র্থ কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর দুনিয়াবিমুখতা (১৩তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৯ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৫ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৪তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১০ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৭তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ