শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ অপরাহ্ন

আদম (আলাইহিস সালাম) -এর দুনিয়াবিমুখতা


যুহ্দ-১ : বান্দাদের মাঝে মর্যাদাগত পার্থক্যের কারণ হল আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা

১). বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আদম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) -এর সামনে তার সন্তানদের হাজির করা হলে তিনি দেখতে পান যে, তাদের কেউ কেউ অপরের তুলনায় শ্রেষ্ঠ। তিনি জিজ্ঞেস করেন, يَا رَبِّ فَهَلَّا سَوَّيْتَ بَيْنَهُمْ؟ قَالَ يَا آدَمُ إِنِّيْ أَحْبَبْتُ أَنْ أُشْكَرَ ‘হে আমার রব! আপনি তাদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠা করলেন না কেন? আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আদম! আমি চেয়েছি আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হোক’।[১]

যুহ্দ-২ : ইবলীসের অহংকার

২). আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

لَمَّا صَوَّرَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى آدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ تَرَكَهُ فَجَعَلَ إِبْلِيْسُ يَطُوْفُ بِهِ يَنْظُرُ إِلَيْهِ فَلَمَّا رَآهُ أَجْوَفَ قَالَ ظَفِرْتُ بِهِ خَلْقٌ لَا يَتَمَالَكُ

‘আল্লাহ তা‘আলা আদম (আলাইহিস সালাম) -কে আকৃতি দেয়ার পর রেখে দেন। অতঃপর ইবলীস তাকে প্রদক্ষিণ করতে শুরু করে। সে তার দিকে তাকিয়ে থাকত। তাকে শূন্য-গহ্বর দেখে ইবলীস বলল, আমি ওর তুলনায় শ্রেষ্ঠ ও এমন এক সৃষ্টি যে তার নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে না’।[২]

যুহ্দ-৩ : জান্নাতে থাকার সময়কাল

৩). সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, مَا كَانَ آدَمُ فِي الْجَنَّةِ إِلَّا مِقْدَارَ مَا بَيْنَ الظُّهْرِ وَالْعَصْرِ ‘আদম (আলাইহিস সালাম) জান্নাতে যোহর ও ‘আছর  ছালাতের মধ্যবর্তী সময়কাল অবস্থান করেন’।[৩]

যুহ্দ-৪ : ইস্তিগফার ও তাওবাই হলো পাপ থেকে উত্তরণের উপায়

৪). উবাই ইবনু কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন,

إِنَّ آدَمَ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ رَجُلًا طُوَالًا كَأَنَّهُ نَخْلَةٌ سَحُوْقٌ كَثِيْرَ شَعْرِ الرَّأْسِ فَلَمَّا وَقَعَ بِمَا وَقَعَ بِهِ بَدَتْ لَهُ عَوْرَتُهُ وَكَانَ لَا يَرَاهَا قَبْلَ ذَلِكَ فَانْطَلَقَ هَارِبًا فَأَخَذَتْ بِرَأْسِهِ شَجَرَةٌ مِنْ شَجَرِ الْجَنَّةِ فَقَالَ لَهَا أَرْسِلِيْنِيْ قَالَتْ لَسْتُ مُرْسِلَتَكَ قَالَ فَنَادَاهُ رَبُّهُ عَزَّ وَجَلَّ أَمِنِّيْ تَفِرُّ قَالَ أَيْ رَبِّ لَا أَسْتَحْيِيْكَ قَالَ فَنَادَاهُ وَإِنَّ الْمُؤْمِنَ يَسْتَحْيِيْ رَبَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنَ الذَّنْبِ إِذَا وَقَعَ بِهِ ثُمَّ يَعْلَمُ بِحَمْدِ اللهِ أَيْنَ الْمَخْرَجُ يَعْلَمُ أَنَّ الْمَخْرَجَ فِي الاسْتِغْفَارِ وَالتَّوْبَةِ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ

‘আদম (আলাইহিস সালাম) ছিলেন ঘনকেশী ও দীর্ঘদেহী এক পুরুষ। অনেকটা সুউচ্চ খেজুর গাছের ন্যায়। তার জীবনে যা ঘটার তা যখন ঘটে গেল অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘিত হল। তখন তার গোপনীয় অংশ তার সামনে প্রকাশিত হয়ে গেল, যা এর আগে যা তার নজরে পড়েনি। ফলে তিনি পালাতে শুরু করলেন। আর অমনি বাগানের একটি বৃক্ষ তার মাথা ধরে ফেলে। তিনি বৃক্ষটিকে বললেন, আমাকে ছেড়ে দাও। বৃক্ষ বলল, আমি তোমাকে ছাড়ব না। এ সময় তার মহান রব তাকে ডেকে বললেন, তুমি কি আমার কাছ থেকে পালাচ্ছ? আদম (আলাইহিস সালাম) বললেন, হে আমার রব! না (আমি পালাচ্ছি না); বরং আপনাকে লজ্জা পাচ্ছি। আল্লাহ তাকে ডেকে বললেন, কোন পাপ সংঘটিত হওয়ার পর মুমিন তার রবকে লজ্জা পেলে, সে পাপ থেকে উত্তরণের উপায় জেনে যাবে। সকল প্রশংসা কেবল আল্লাহর! সে জানবে যে, ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে আসা-ই হল পাপ থেকে উত্তরণের উপায়’।[৪]

যুহদ-৫ : আদম (আলাইহিস সালাম) -এর বয়স

৫. ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ঋণচুক্তির আয়াত নাযিল হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সর্বপ্রথম অস্বীকারকারী ব্যক্তি হলেন আদম (আলাইহিস সালাম) । কথাটি তিনি তিনবার বললেন। অতঃপর তিনি বললেন, ‘আল্লাহ আদম (আলাইহিস সালাম) -কে সৃষ্টি করার পর তার পৃষ্ঠদেশ স্পর্শ করে তার সন্তানদেরকে বের করে আনেন, যারা ক্বিয়ামত পর্যন্ত দুনিয়ায় আসবে। আল্লাহ তা‘আলা আদম (আলাইহিস সালাম)-এর সামনে তার সন্তানদেরকে তুলে ধরলে তিনি তাদের মধ্যে একজন উজ্জ্বল ব্যক্তিকে দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আমার রব! এটি কে? আল্লাহ বললেন, এটি তোমার ছেলে দাঊদ। তিনি জানতে চাইলেন, হে আমার রব! তার আয়ুষ্কাল কত? আল্লাহ বললেন, ষাট বছর। তিনি বললেন, হে আমরা রব! তার আয়ুষ্কাল বাড়িয়ে দিন। আল্লাহ বললেন, না। তবে তোমার আয়ুষ্কাল থেকে নিয়ে তাকে বাড়িয়ে দিতে পারি। আদমের আয়ুষ্কাল ছিল এক হাজার বছর। আল্লাহ দাঊদের আয়ুষ্কাল চল্লিশ বছর বাড়িয়ে দিয়ে বিষয়টি লিপিবদ্ধ করেন এবং এর উপর ফেরেশতাদের সাক্ষী রাখেন। অতঃপর আদম (আলাইহিস সালাম) মৃত্যুর উপকণ্ঠে উপনীত হলে ফেরেশতারা তার প্রাণ নিতে আসেন। তিনি বলেন, আমার আয়ুষ্কাল এখনো চল্লিশ বছর অবশিষ্ট আছে। তাকে বলা হল, আপনি তো আপনার ছেলে (দাঊদ)-কে তা দিয়ে দিয়েছেন। তখন আল্লাহ তা‘আলা তার সামনে লিখিত প্রমাণ তুলে ধরেন আর ফেরেশতারা এ বিষয়ে সাক্ষ্যদান করে।[৫]


তথ্যসূত্র :
[১]. ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল, কিতাবুয যুহদ, হা/২৫৪।
[২]. আল-মুস্তাদরাক হাকিম, হা/৩৯৯২; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২১৫৮।
[৩]. আদ-দুররুল মানছূর, ১ম খ-, পৃ. ১২৭।
[৪]. আল-মুসতাদরাক হাকিম, হা/৩০৩৮, সনদ ছহীহ।
[৫]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭১৩, সনদ হাসান লি গাইরিহি।




প্রসঙ্গসমূহ »: কিতাবুয যুহদ
মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর দুনিয়াবিমুখতা (১২তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৯তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৪তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১০ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১১তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (২০তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৩য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৮ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (২১তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর দুনিয়াবিমুখতা (১৩তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৬তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ