শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:১৮ পূর্বাহ্ন

মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা

(৯ম কিস্তি)


যুহদ-৬৬ : একত্রিত ছোট পাপসমূহ ধ্বংসাত্মক।
(৭৫). আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِيَّاكُمْ وَمُحَقَّرَاتِ الذُّنُوْبِ فَإِنَّهُنَّ يَجْتَمِعْنَ عَلَى الرَّجُلِ حَتَّى يُهْلِكْنَهُ وَإِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ضَرَبَ لَهُنَّ مَثَلًا كَمَثَلِ قَوْمٍ نَزَلُوْا أَرْضَ فَلَاةٍ فَحَضَرَ صَنِيْعُ الْقَوْمِ فَجَعَلَ الرَّجُلُ يَنْطَلِقُ فَيَجِىءُ بِالْعُوْدِ وَالرَّجُلُ يَجِىءُ بِالْعُوْدِ حَتَّى جَمَعُوْا سَوَادًا فَأَجَّجُوْا نَارًا وَأَنْضَجُوْا مَا قَذَفُوْا فِيْهَا

‘সে সব পাপের ব্যাপারে সাবধান হও- যেগুলোকে লোকেরা তুচ্ছ মনে করে। কারণ সেগুলো একত্রিত হয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ধ্বংস করে ছাড়বে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেসব পাপের জন্য একটি উদাহরণ পেশ করেছেন- একদল লোক একটি মরু অঞ্চলে প্রবেশ করল। কাজের পালা আসলে কয়েকজন গিয়ে কিছু কাঠ নিয়ে আসল; অপর কয়েকজন গিয়ে আরো কাঠ সংগ্রহ করল। এভাবে তারা বিপুল পরিমাণ কাঠ একত্রিত করে আগুন জ্বালাল এবং ভালোভাবে রান্না সম্পন্ন করে নিল’।[১]

যুহদ-৬৭ : কথা বলার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা।

(৭৬). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِنَّ أَحَدَكُمْ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ وَمَا يَرَى أَنَّهَا تَبْلُغُ حَيْثُ بَلَغَتْ يَهْوِي بِهَا فِي النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا

‘তোমাদের মধ্যে কেউ এমন কথা বলে, যার ব্যাপারে সে অনুমান করতে পারে না তা কোথায় পৌঁছে যাচ্ছে। কেননা এই কথার কারণে তাকে জাহান্নামের ভেতর সত্তর বছর দূরত্বে নিক্ষেপ করা হবে’।[২]

(৭৭). বিলাল ইবনুল হারিছ মুযানী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

إِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ رِضْوَانِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مَا يَظُنُّ أَنْ تَبْلُغَ مَا بَلَغَتْ يَكْتُبُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لَهُ بِهَا رِضْوَانَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مِنْ سَخَطِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ مَا يَظُنُّ أَنْ تَبْلُغَ مَا بَلَغَتْ يَكْتُبُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ بِهَا عَلَيْهِ سَخَطَهُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ. قَالَ فَكَانَ عَلْقَمَةُ يَقُوْْلُ كَمْ مِنْ كَلَامٍ قَدْ مَنَعَنِيْهِ حَدِيْثُ بِلَالِ بْنِ الْحَارِثِ

‘কোনো ব্যক্তি এমন কথা বলে, যার ফলে আল্লাহ তা‘আলা সন্তুষ্টি হন। সে ধারণা করতে পারবে না, তার কথা কোথায় কোথায় পৌঁছে যাবে। উক্ত কথার কারণে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য ক্বিয়ামত পর্যন্ত নিজের সন্তুষ্টির কথা লিখতে থাকবেন। আর কোন ব্যক্তি এমন কথা বলে যা আল্লাহর ক্রোধের উদ্রেক ঘটায়; সে ধারণা করতে পারবে না, তার কথা কোথায় কোথায় পৌঁছে যাবে। উক্ত কথার কারণে ক্বিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা তার বিরুদ্ধে নিজের ক্রোধের কথা লিখতে থাকবেন’।[৩]

যুহ্দ-৬৮ : পরকালে মুক্তি লাভের উপায়।
(৭৮). আবূ উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) জিজ্ঞেস করলেন,

يَا رَسُوْلَ اللهِ مَا النَّجَاةُ قَالَ أَمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ وَابْكِ عَلَى خَطِيئَتِكَ

‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! নাজাত বা মুক্তি কিসে? নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার জিহ্বাকে আটকে রাখো, ঘরে যা কিছু আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকো, আর নিজের পাপ স্মরণ করে কাঁদো’।[৪]

যুহ্দ-৬৯ : ফজরের ছালাত শেষে সূর্যোদয় পর্যন্ত মুছাল্লায় বসে থাকা।
(৭৯). জাবির ইবনু সামুরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

كَانَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى الْفَجْرَ قَعَدَ فِيْ مُصَلَاهُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ

‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের ছালাত আদায় শেষে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত সালাতের জায়গায় বসে থাকতেন’।[৫]

যুহ্দ-৭০ : এক রাক‘আত হলেও রাতের ছালাত আদায় করা।
(৮০). ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, عَلَيْكُمْ بِصَلَاةِ اللَّيْلِ وَلَوْ رَكْعَةً وَاحِدَةً ‘এক রাক‘আত হলেও রাতের ছালাত আদায় করো’।[৬]

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

তথ্যসূত্র :
[১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৩৮১৮; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৮৯।
[২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৬৪৩, শু‘আইব আরনাঊত বলেন, ছহীহ। এই হাদীছের সনদের সকল রাবী ছিকাহ এবং ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিমের রাবী।
[৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৮৯০; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৮৮৮।
[৪]. তিরমিযী, হা/২৪০৬, সনদ ছহীহ।
[৫]. তিরমিযী, হা/৫৮৫; নাসাঈ, হা/১৩৫৭, সনদ ছহীহ।
[৬]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত, হা/৬৮২১, সনদ ছহীহ।




প্রসঙ্গসমূহ »: জীবন কথা
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৬তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (২০তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১০ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ) -এর দুনিয়াবিমুখতা (১৩তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৮ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১১তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৩য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৮তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৯তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (৯ম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা (১৪তম কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ