রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা
(২১তম কিস্তি)
যুহ্দ-১২৭ : প্রাপ্ত নে‘মতের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে
১৪০. আবূ ক্বিলাবা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, আল্লাহ তা‘আলার বাণী, ثُمَّ لَتُسۡـَٔلُنَّ یَوۡمَئِذٍ عَنِ النَّعِیۡمِ ‘তারপর সেদিন তোমাদেরকে বিভিন্ন অনুগ্রহের ব্যাপারে প্রশ্নের মুখোমুখি করা হবে’ (সূরা আত-তাকাছূর : ৮)-এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে নবী করীম (ﷺ) বলেন, نَاسٌ مِنْ أُمَّتِيْ يُعْقِدُوْنَ السَّمْنَ وَالْعَسَلَ بِالنِّقْيِ فَيَأْكُلُوْنَهُ ‘আমার উম্মতের কিছু লোক যবের মসৃণ গুড়ার সাথে ঘি ও মধু মিশিয়ে খায়’।[১]
যুহ্দ-১২৮ : আল্লাহ তা‘আলা প্রদত্ত নে‘মত সুস্থ দেহ সম্পর্কে ক্বিয়ামতের দিন জিজ্ঞেস করা হবে
১৪১. আবূ হুরায়রা (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি,
إِنَّ أَوَّلَ مَا يُسْأَلُ عَنْهُ الْعَبْدُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ مِنَ النَّعِيْمِ أَنْ يُقَالَ لَهُ أَلَمْ أُصِحَّ لَكَ الْجِسْمَ وَأُرْوِكَ مِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ
‘ক্বিয়ামতের দিন নে‘মত সম্পর্কে বান্দাকে সর্বপ্রথম যে প্রশ্ন করা হবে তাহল, তাকে জিজ্ঞেস করা হবে, আমি কি তোমাকে সুস্বাস্থ্য দান করিনি, আমি কি তোমাকে ঠা-া পানি দিয়ে পরিতৃপ্ত করিনি? [২]
যুহ্দ-১২৯ : মানুষের নিজের সম্পদ কোনটি?
১৪২. মুতাররিফ (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,
أَتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ وَهُوَ يَقْرَأُ (اَلۡہٰکُمُ التَّکَاثُرُ) قَالَ يَقُوْلُ ابْنُ آدَمَ مَالِيْ مَالِيْ قَالَ وَهَلْ لَكَ يَا ابْنَ آدَمَ إِلَّا مَا أَكَلْتَ فَأَفْنَيْتَ أَوْ لَبِسْتَ فَأَبْلَيْتَ أَوْ تَصَدَّقْتَ فَأَمْضَيْتَ؟
‘একদা আমি নবী করীম (ﷺ)-এর কাছে আসলাম, এ সময় তিনি সূরা اَلۡہٰکُمُ التَّکَاثُرُ ‘ধন-সম্পদের প্রাচুর্য তোমাদেরকে গাফেল করে রেখেছে’ (সূরা আত-তাকাছুর : ১) পাঠ করছিলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আদম সন্তান বলে, আমার সম্পদ, আমার সম্পদ। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, হে আদম সন্তান! তোমার সম্পদ তো সেটিই, যা তুমি খেয়ে শেষ করে ফেলেছ অথবা পরিধান করে ছিঁড়ে ফেলেছ অথবা ছাদাক্বাহ করে সঞ্চয় করেছ।[৩]
যুহ্দ-১৩০ : এক সময় ছাহাবীদের নিকট হুবলা পাতা ও ঝাউগাছ ব্যতীত অন্য কোন খাবার ছিল না।
১৪৩. ক্বায়স (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সা‘দ ইব্নু আবী ওয়াক্কাছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি যে,
إِنِّىْ لَأَوَّلُ الْعَرَبِ رَمَى بِسَهْمٍ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ وَرَأَيْتُنَا نَغْزُوْ وَمَا لَنَا طَعَامٌ إِلَّا وَرَقُ الْحُبْلَةِ وَهَذَا السَّمُرُ وَإِنَّ أَحَدَنَا لَيَضَعُ كَمَا تَضَعُ الشَّاةُ مَا لَهُ خِلْطٌ ثُمَّ أَصْبَحَتْ بَنُوْ أَسَدٍ تُعَزِّرُنِىْ عَلَى الْإِسْلَامِ خِبْتُ إِذًا وَضَلَّ سَعْيِى
‘আমিই সর্বপ্রথম আরব যে আল্লাহর পথে তীর নিক্ষেপ করেছে। যুদ্ধের সময় আমাদের অবস্থা দেখেছি যে, হুবলা পাতা ও ঝাউগাছ ব্যতীত খাবারের কিছুই ছিল না। আমাদের মল বকরীর মলের মত হয়ে গিয়েছিল। যা ছিল সম্পূর্ণ শুকনো। আর এখন আবার বনূ আসাদ এসে ইসলামের উপর চলার জন্য আমাকে তিরস্কার করছে। এখন আমি শংকিত যে, আমার পূর্বেকার চেষ্টা সাধনা ব্যর্থ হয়ে গেল’।[৪]
১৪৪. খালিদ ইবনু ‘উমায়র (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ‘উতবাহ ইবনু গাযওয়ান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি যে,
لَقَدْ رَأَيْتُنِىْ سَابِعَ سَبْعَةٍ مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ مَا طَعَامُنَا إِلَّا وَرَقُ الْحُبْلَةِ حَتَّى قَرِحَتْ أَشْدَاقُنَا
‘এক সময় আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গী সাতজনের সপ্তম ব্যক্তি ছিলাম। সে সময় হুবলা গাছের পাতা ব্যতীত আমাদের নিকট কোন খাবার ছিল না। পাতা খেতে খেতে অবশেষে আমাদের মুখে ঘা হয়ে যায়’।[৫]
যুহ্দ-১৩১ : জনৈক ব্যক্তি বস্ত্রের অভাবে শীতকালে গর্তে লুকিয়ে থাকতেন
১৪৫. ক্বাতাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
لَقَدْ ذُكِرَ لَنَا أَنَّ الرَّجُلَ كَانَ يَعْصِبُ عَلَى بَطْنِهِ الْحَجَرَ لِيُقِيْمَ بِهِ صُلْبَهُ مِنَ الْجُوْعِ وَكَانَ الرَّجُلُ يَتَّخِذُ الْحُفَيْرَةَ فِي الشِّتَاءِ مَا لَهُ دِثَارٌ غَيْرُهَا
‘আমাদেরকে বলা হল- এক ব্যক্তি ক্ষুধার তাড়নায় পেটের সাথে পাথর বেঁধে রাখে, যেন এর মাধ্যমে মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারে। লোকটি শীতকালে একটি গর্ত খুঁড়ে সেখানে থাকে; এ ছাড়া তার আর কোন দেহাবরণ নেই’।[৬]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
তথ্যসূত্র :
[১]. ইমাম শাওকানী, ফাৎহুল ক্বাদীর, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৬৯৬, সনদ মুরসাল।
[২]. তিরমিযী, হা/৩৩৫৮; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/২০২২।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৫৮; নাসাঈ, হা/৩৬১৩; মিশকাত, হা/৫১৬৯।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৫৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৯৮।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৬৭; ইবনু মাজাহ, হা/৪১৫৬।
[৬]. আবূ হাফছ ওমর ইবনু আলী ইবনু আদিল আদ-দামেস্কী আল-হাম্বালী, আল-লুবাবু ফী ‘ঊলুমিল কিতাব (বৈরূত : দারুল কুতুবিল ‘ইলমিয়্যাহ, ১ম সংস্করণ, ১৪১৯ হি./১৯৯৮, ১৮তম খণ্ড, পৃ. ৫৮৩, সনদ হাসান।
প্রসঙ্গসমূহ »:
কিতাবুয যুহদ