যুহদ-৯৬ : আখেরাতমুখী মানুষের দুনিয়াবী বিষয় দেখভালের দায়িত্ব মহান আল্লাহর
১০৮). আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যদি আলেমগণ ইলমের মর্যাদা রক্ষা করতেন এবং উপযুক্ত লোকদের হাতে তা সোপর্দ করতেন, তাহলে অবশ্যই ইলম দ্বারা তারা নিজেদের যুগের লোকদের নেতৃত্ব দিতেন। কিন্তু তারা তা দুনিয়াদারদের জন্য নিয়োজিত করেছেন। যাতে করে তারা তাদের নিকট হতে দুনিয়ার কিছু লাভ করতে পারেন। ফলে তারা দুনিয়াদারের নিকট মর্যাদাহীন হয়ে গেছেন। আমি তোমাদের নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,
مَنْ جَعَلَ الْهُمُوْمَ هَمًّا وَاحِدًا هَمَّ آخِرَتِهِ كَفَاهُ اللهُ هَمَّ دُنْيَاهُ وَمَنْ تَشَعَّبَتْ بِهِ الْهُمُوْمُ فِىْ أَحْوَالِ الدُّنْيَا لَمْ يُبَالِ اللهُ فِىْ أَيِّ أَوْدِيَتِهَا هَلَكَ
‘যে ব্যক্তি নিজের সব চিন্তাকে এক চিন্তায় অর্থাৎ আখেরাতের চিন্তায় পরিণত করবে, তাহলে আল্লাহই তাঁর দুনিয়ার চিন্তার জন্য যথেষ্ট হবেন। অপরপক্ষে যাকে দুনিয়ার নানা চিন্তা ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে, তাঁর জন্য আল্লাহর কোন মনোযোগ নেই। সে দুনিয়ার যেকোন ময়দানে ধ্বংস হয়ে যাক না কেন’।[১]
যুহদ-৯৭ : আল্লাহ তা‘আলা যালিমকে প্রথমে ঢিল দিয়ে থাকেন
১০৯). আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ يُمْلِىْ لِلظَّالِمِ فَإِذَا أَخَذَهُ لَمْ يُفْلِتْهُ. ثُمَّ قَرَأَ (وَ کَذٰلِکَ اَخۡذُ رَبِّکَ اِذَاۤ اَخَذَ الۡقُرٰی وَ ہِیَ ظَالِمَۃٌ ؕ اِنَّ اَخۡذَہٗۤ اَلِیۡمٌ شَدِیۡدٌ)
‘আল্লাহ তা‘আলা যালিমকে ঢিল দিয়ে থাকেন; পরিশেষে যখন তাকে পাকড়াও করেন, তখন পালানোর কোন সুযোগ দেন না’। অতঃপর তিনি পাঠ করে শোনান, (আল্লাহ তা‘আলা বলেন), ‘আর এরূপেই তখন তিনি কোন জনপদের অধিবাসীদেরকে পাকড়াও করেন যখন তারা অত্যাচার করে; নিঃসন্দেহে তাঁর পাকড়াও হচ্ছে অত্যন্ত যন্ত্রনাদায়ক, কঠিন’ (সূরা হূদ : ১০২)।[২]
যুহদ-৯৮ : অহংকারী লোকদেরকে ক্বিয়ামতের দিন পিপীলিকার ন্যায় একত্রিত করা হবে এবং তাদেরকে ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ নামক নোংরা পুঁজ পান করানো হবে
১১০). আমর ইবনু শু‘আইব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,
يُحْشَرُ الْمُتَكَبِّرُوْنَ أَمْثَالَ الذَّرِّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيْ صُوَرِ الرِّجَالِ يَغْشَاهُمُ الذُّلُّ مِنْ كُلِّ مَكَانٍ يُسَاقُوْنَ إِلَى سِجْنٍ فِيْ جَهَنَّمَ يُسَمَّى بُوْلَسَ تَعْلُوْهُمْ نَارُ الْأَنْيَارِ يُسْقَوْنَ مِنْ عُصَارَةِ أَهْلِ النَّارِ طِيْنَةَ الْخَبَالِ
‘ক্বিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে পিপীলিকার ন্যায় একত্রিত করা হবে। অবশ্য তাদের গঠন হবে মানুষের ন্যায়। অপমান তাদেরকে চারদিক হতে বেষ্টন করে রাখবে। ‘বূলাস’ নামক জাহান্নামের কারাগারের দিকে তাদেরকে হাঁকিয়ে নেয়া হবে। আগুনের অগ্নিশিখা তাদের উপর ছেয়ে যাবে। আর তাদেরকে জাহান্নামীদের দেহ নিংড়ানো ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ নামক নোংরা পুঁজ পান করানো হবে।[৩]
যুহদ-৯৯ : দুনিয়া মৃত বকরির বাচ্চার চেয়েও তুচ্ছ
১১০). মুসতাওরিদ ইবনু শাদ্দাদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাফেলার সাথে ছিলাম। তিনি রাস্তার পাশে ফেলে রাখা একটি বকরীর মৃত ছানার নিকট এসে দাঁড়ালেন। তিনি বলেন, তোমরা কি জান, এই বকরির মৃত বাচ্চাটি তার মালিকের নিকট কত তুচ্ছ? বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! মূল্যহীন হওয়ার দরুনই তারা এটাকে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন,
فَوَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِهِ لَلدُّنْيَا أَهْوَنُ عَلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ عَلَى أَهْلِهَا
‘সে সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! এটা তার মালিকের নিকট যতটা মূল্যহীন, দুনিয়াটা আল্লাহর নিকট তার চেয়েও অধিক মূল্যহীন ও তুচ্ছ’।[৪]
তথ্যসূত্র :
[১]. ইবনু মাজাহ, হা/২৫৭, সনদ হাসান; মিশকাত, হা/২৬৩।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮৩; ইবনু মাজাহ, হা/৪০১৮।
[৩]. তিরমিযী, হা/২৪৯২, সনদ হাসান; মিশকাত, হা/৫১১২।
[৪]. তিরমিযী, হা/২৩২১; ইবনু মাজাহ, হা/৪১১১; সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৪৮২।
প্রসঙ্গসমূহ »:
জীবন কথা