মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুনিয়াবিমুখতা
-আল-ইখলাছ ডেস্ক
যুহ্দ-৫০ : আল্লাহর নিকট সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মুমিনের দৃষ্টিতে দুনিয়া।
আবূ উমামা বাহিলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ أَغْبَطَ أَوْلِيَائِيْ عِنْدِيْ مُؤْمِنٌ خَفِيْفُ الْحَاذِ ذُوْ حَظٍّ مِنْ صَلَاةٍ أَحْسَنَ عِبَادَةَ رَبِّهِ وَكَانَ غَامِضًا فِي النَّاسِ لَا يُشَارُ إِلَيْهِ بِالْأَصَابِعِ فَعُجِّلَتْ مَنِيَّتُهُ وَقَلَّ تُرَاثُهُ وَقَلَّتْ بَوَاكِيْهِ. قَالَ أَبُوْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ عَبْدُ اللهِ سَأَلْتُ أَبِيْ مَا تُرَاثُهُ قَالَ مِيرَاثُهُ
‘আমার বন্ধুদের মধ্যে আমার নিকট সবচেয়ে সৌভাগ্যবান মুমিন সেই ব্যক্তি, যার পার্থিব অবস্থা অতি নগণ্য, ছালাতের পরিমাণ অধিক, উত্তমরূপে তার রবের দাসত্বকারী, মানুষের নিকট সুপ্ত- যার ফলে লোকেরা তাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না, যার মৃত্যু দ্রুত হয়, উত্তরাধিকার অল্প থাকে ও (মৃত্যুর পর) কান্নাকাটি করার লোক থাকে কম। আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ বলেন, আমি আমার পিতাকে জিজ্ঞেস করলাম, তার উত্তরাধিকার কী? তিনি বললেন, তার রেখে যাওয়া সম্পদ’।[১]
তাহক্বীক্ব : হাদীছটির সনদ যঈফ।[২]
যুহ্দ-৫১ : প্রকৃত মুমিন ব্যক্তি দুনিয়াবিমুখ থাকে।
মাহমূদ ইবনু লাবীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত,
أَنّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ لَيَحْمِي عَبْدَهُ الْمُؤْمِنَ مِنَ الدُّنْيَا وَهُوَ يُحِبُّهُ كَمَا تَحْمُوْنَ مَرِيْضَكُمُ الطَّعَامَ وَالشَّرَابَ تَخَافُوْنَ عَلَيْهِ
‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মুমিন বান্দাকে দুনিয়ার সেসব বস্তু থেকে বঞ্চিত রাখবেন, যা ঐ বান্দার নিকট প্রিয়, ঠিক যেভাবে তোমরা তোমাদের অসুস্থ ব্যক্তিকে সেসব খাবার ও পানীয় থেকে বঞ্চিত রাখ, যা তোমরা তার জন্য ক্ষতিকর মনে কর’।[৩]
ক্বাতাদা ইবনু নু‘মান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, إِنَّ اللهَ إِذَا أَحَبَّ عَبْدًا حَمَاهُ الدُّنْيَا كَمَا يَظَلُّ أَحَدُكُمْ يَحْمِي سَقِيْمَهُ الْمَاءَ ‘আল্লাহ তা‘আলা কোন বান্দাকে পসন্দ করলে তাকে দুনিয়া থেকে এমনভাবে বঞ্চিত রাখেন, যেভাবে তোমাদের কেউ অসুস্থ ব্যক্তিকে পানি থেকে বঞ্চিত রাখে’।[৪]
যুহ্দ-৫২ : কোন্টি মানুষের নিজস্ব সম্পদ?
মুর্ত্বারিফ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণনা করেছেন যে,
اِنْتَهَيْتُ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ يَقُوْلُ أَلْهَاكُمُ التَّكَاثُرُ قَالَ يَقُوْلُ ابْنُ آدَمَ مَالِيْ وَمَا لَكَ مِنْ مَالِكَ إِلَّا مَا أَكَلْتَ فَأَفْنَيْتَ أَوْ لَبِسْتَ فَأَبْلَيْتَ أَوْ تَصَدَّقْتَ فَأَمْضَيْتَ
‘আমি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম, তখন তিনি اَلۡہٰکُمُ التَّکَاثُرُ ‘অধিক ঐশ্বর্যশীল হওয়ার প্রতিযোগিতা তোমাদেরকে বিপথে পরিচালিত করেছে’ পাঠ করে বললেন, আদমসন্তান বলে, আমার সম্পদ! তোমার সম্পদের কোন্টি তোমার সম্পদ? যা খেয়েছ তা তো নিঃশেষ করে ফেলেছ এবং যা পরিধান করেছ তা তো মলিন করে ফেলেছ। আর যা দান করেছ তা তো করেই ফেলেছ’।[৫]
যুহ্দ-৫৩ : সে নিঃস্ব নয়, যার পরিবার ও ঘর আছে।
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল আ‘ছ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল,
أَلَسْنَا مِنْ فُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِينَ فَقَالَ لَهُ عَبْدُ اللَّهِ أَلَكَ امْرَأَةٌ تَأْوِى إِلَيْهَا قَالَ نَعَمْ قَالَ أَلَكَ مَسْكَنٌ تَسْكُنُهُ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَلَسْتَ مِنْ فُقَرَاءِ الْمُهَاجِرِيْنَ
‘আমরা কি মুহাজিরদের মধ্যে নিঃস্ব নই? আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তাকে বললেন, তোমার কি স্ত্রী আছে? যার কাছে তুমি প্রশান্তি লাভ কর? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি পুনরায় বললেন, তোমার থাকার ঘর আছে কি, যেখানে তুমি অবস্থান কর? সে বলল, হ্যাঁ। তখন আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, তাহলে তুমি নিঃস্ব মুহাজির নও’।[৬]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
তথ্যসূত্র :
[১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২২১; তিরমিযী, হা/২৩৪৭।
[২]. শু‘আইব আরনাঊত্ব (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, নিতান্তই যঈফ এবং জাল হাদীছের সাদৃশ্য রয়েছে, মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২২১; আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতে, যঈফ, যঈফ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৮৬৪।
[৩]. হাকিম, হা/৭৪৬৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৭৭; সনদ ছহীহ, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৭৯।
[৪]. তিরমিযী, হা/২০৩৬; হাকিম, হা/৭৪৬৪; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৪২৯৬; সনদ ছহীহ লি গাইরিহি, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৩১৮০।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৫৮; মিশকাত, হা/৫১৬৯।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৭৯; মিশকাত, হা/৫২৫৭।
প্রসঙ্গসমূহ »:
জীবন কথা