মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা
(৭ম কিস্তি)
যুহ্দ-৫৪ : ‘ঊছমান ইবনু মায‘ঊন (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে দুনিয়ার সম্পর্ক।
ইবনু সাঈদ মাদানী (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত,
أَنّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم دَخَلَ عَلَى عُثْمَانَ بْنِ مَظْعُوْنٍ وَهُوَ فِي الْمَوْتِ فَأَكَبَّ عَلَيْهِ يُقَبِّلُهُ وَيَقُوْلُ رَحِمَكَ اللهُ يَا عُثْمَانُ مَا أَصَبْتَ مِنَ الدُّنْيَا وَلَا أَصَابَتْ مِنْكَ
‘উছমান ইবনু মায‘ঊন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন মৃত্যুশয্যায় শায়িত, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার নিকট যান এবং তার দিকে ঝুঁকে তাকে চুম্বন করেন এবং বলেন, ‘হে ‘ঊছমান! আল্লাহ তোমার প্রতি সদয় হোন! তুমি দুনিয়ার নিকট থেকে কিছু পাওনি, আর দুনিয়াও তোমার নিকট থেকে কিছু পায়নি’।[১]
যুহ্দ-৫৫ : দুনিয়া সবুজ উদ্যানের ন্যায়।
মুছ‘আব ইবনু সা‘দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, اِحْذَرُوا الدُّنْيَا فَإِنَّهَا خَضِرَةٌ حُلْوَةٌ ‘দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও! কেননা নিশ্চয় দুনিয়া সবুজ উদ্যানের ন্যায় সুমিষ্ট’।[২]
যুহ্দ-৫৬ : পাপ করা সত্ত্বেও প্রিয় জিনিসগুলো পাওয়া ধ্বংসের কারণ।
‘উক্ববাহ ইবনু ‘আমির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِذَا رَأَيْتَ اللهَ يُعْطِى الْعَبْدَ مِنَ الدُّنْيَا عَلَى مَعَاصِيْهِ مَا يُحِبُّ فَإِنَّمَا هُوَ اسْتِدْرَاجٌ. ثُمَّ تَلَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم (فَلَمَّا نَسُوۡا مَا ذُکِّرُوۡا بِہٖ فَتَحۡنَا عَلَیۡہِمۡ اَبۡوَابَ کُلِّ شَیۡءٍ حَتّٰۤی اِذَا فَرِحُوۡا بِمَاۤ اُوۡتُوۡۤا اَخَذۡنٰہُمۡ بَغۡتَۃً فَاِذَا ہُمۡ مُّبۡلِسُوۡنَ
‘যখন তুমি দেখবে আল্লাহ তা‘আলা কোন ব্যক্তিকে তার পাপাচার সত্ত্বেও পার্থিব জীবনে তার প্রিয় বস্তুগুলো দিচ্ছেন, তখন বুঝবে তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্য একটি টোপমাত্র। তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন,
فَلَمَّا نَسُوۡا مَا ذُکِّرُوۡا بِہٖ فَتَحۡنَا عَلَیۡہِمۡ اَبۡوَابَ کُلِّ شَیۡءٍ حَتّٰۤی اِذَا فَرِحُوۡا بِمَاۤ اُوۡتُوۡۤا اَخَذۡنٰہُمۡ بَغۡتَۃً فَاِذَا ہُمۡ مُّبۡلِسُوۡنَ
‘অতঃপর তাদেরকে যা কিছু উপদেশ ও নসীহত করা হয়েছিল তা যখন তারা ভুলে গেল, তখন আমরা তাদের জন্য প্রতিটি বস্তুর দরজা উন্মুক্ত করে দিলাম, শেষ পর্যন্ত যখন তারা তাদেরকে দানকৃত বস্তু লাভ করে খুব আনন্দিত ও উল্লাসিত হল, তখন হঠাৎ একদিন আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম, আর তারা সেই অবস্থায় নিরাশ হয়ে পড়ল’।[৩]
যুহ্দ-৫৭ : দুনিয়া হল গ্রীষ্মকালীন সফরের অল্প বিরতির চেয়ে বেশি নয়।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
نَامَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى حَصِيْرٍ فَقَامَ وَقَدْ أَثَّرَ فِىْ جَنْبِهِ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَوِ اتَّخَذْنَا لَكَ وِطَاءً فَقَالَ مَا لِىْ وَمَا لِلدُّنْيَا مَا أَنَا فِى الدُّنْيَا إِلَّا كَرَاكِبٍ اسْتَظَلَّ تَحْتَ شَجَرَةٍ ثُمَّ رَاحَ وَتَرَكَهَا
‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি মাদুরে ঘুমিয়েছিলেন, যার ফলে তার পার্শ্বদেশে মাদুরের ছাপ লেগে গিয়েছিল। আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি কি আমাদেরকে অনুমতি দিবেন না, যে আমরা আপনার নীচে এর চেয়ে অধিক কোমল কিছু বিছিয়ে দেই? তখন তিনি বললেন, এ দুনিয়ার সাথে আমার কিসের সম্পর্ক। এ দুনিয়ার সাথে আমার সম্পর্ক হল- এমন এক অশ্বারোহীর ন্যায় যে প্রচ- গরমের একদিন ভ্রমণে বের হয়ে একপর্যায়ে একটি গাছের নীচে কিছু সময় নিদ্রা গেল, তারপর কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে সেখান থেকে আবার চলে গেল’।[৪]
যুহ্দ-৫৮ : আল্লাহর প্রিয় বান্দার পার্থিব অবস্থা
সালিম ইবনু আবুল জা‘দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
إِنَّ مِنْ أُمَّتِيْ مَنْ لَوْ أَتَى بَابَ أَحَدِكُمْ فَسَأَلَهُ دِيْنَارًا لَمْ يُعْطِهِ وَإِذَا سَأَلَهُ دِرْهَمًا لَمْ يُعْطِهِ وَلَوْ سَأَلَهُ فِلْسًا لَمْ يُعْطِهِ وَلَوْ سَأَلَ اللهَ الْجَنَّةَ أَعْطَاهَا اللهُ إِيَّاهُ وَلَوْ سَأَلَ الدُّنْيَا لَمْ يُعْطِهَا إِيَّاهُ لِهَوَانِهَا عَلَيْهِ ذُوْ طِمْرَيْنِ لَا يُؤْبَهُ لَهُ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللهِ لَأَبَرَّهُ
‘আমার উম্মতের মধ্যে এমন ব্যক্তি আছে, যদি সে তোমাদের কারো দরজায় এসে স্বর্ণমুদ্রা চায়, সে তাকে তা দিবে না; রৌপ্যমুদ্রা চাইলেও দিবে না; এমনকি পয়সা চাইলেও দিবে না। অথচ সে যদি আল্লাহর নিকট জান্নাত চায় আল্লাহ তাকে অবশ্যই দিবেন; কিন্তু সে যদি আল্লাহর নিকট দুনিয়া চায়, তাহলে আল্লাহ তাকে দিবেন না। তাকে দুনিয়া থেকে বঞ্চিত করার কারণে (দিবেন না) তা নয়, বরং তার পদমর্যাদা আল্লাহর নিকট তুচ্ছ। (ঐ ব্যক্তি) দু’খ- জীর্ণ বস্ত্রের অধিকারী, পোশাকের ব্যাপারে তার কোন বিশেষ আকর্ষণ নেই। তবে সে যদি আল্লাহর নামে কোন কিছুই শপথ করে, তাহলে আল্লাহ অবশ্যই তার শপথ বাস্তবায়ন করবেন’।[৫]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
তথ্যসূত্র :
[১]. হিলইয়াতুল আওলিয়া, ১ম খণ্ড, পৃ. ১০৫; জামি‘ঊল আহাদীছ, হা/১২৭৩৭।
[২]. আয-যুহ্দ, হা/৬১; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৯১০; ছহীহুল জামে‘, হা/১৯২।
[৩]. সূরা আল-আন‘আম : ৪৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৩৪৯; মিশকাত, হা/৫২০১; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৪১৩।
[৪]. তিরমিযী, হা/২৩৭৭; ইবনু মাজাহ, হা/৪১০৯; মিশকাত, হা/৫১৮৮; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৪৩৮।
[৫]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৭৫৪৮; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৬৪৩।
প্রসঙ্গসমূহ »:
বিবিধ