মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দুনিয়াবিমুখতা
(১১তম কিস্তি)
যুহদ-৮১ : আল্লাহর উপর যথাযথ ভরসা করা
৯৪. ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,
لَوْ أَنَّكُمْ تَتَوَكَّلُوْنَ عَلَى اللهِ حَقَّ تَوَكُّلِهِ لَرَزَقَكُمْ كَمَا يَرْزُقُ الطَّيْرَ تَغْدُوْ خِمَاصًا وَتَرُوْحُ بِطَانًا
‘যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি যথাযথ ভরসা কর, তাহলে তিনি তোমাদেরকে অনুরূপ রিযিক দান করবেন, যেরূপ পাখীকে রিযিক দিয়ে থাকেন। তারা ভোরে খালি পেটে বের হয় এবং দিনের শেষে ভরা পেটে ফিরে আসে’।[১]
যুহদ-৮২ : আল্লাহর অনুগ্রহকে মূল্যায়ন করা
৯৫. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন,
اُنْظُرُوْا إِلَى مَنْ هُوَ أَسْفَلَ مِنْكُمْ وَلَا تَنْظُرُوْا إِلَى مَنْ هُوَ فَوْقَكُمْ فَهُوَ أَجْدَرُ أَنْ لَّا تَزْدَرُوْا نِعْمَةَ اللهِ عَلَيْكُمْ
‘তোমরা নিজেদের অপেক্ষা নিম্ন অবস্থার লোকের প্রতি তাকাও। এমন ব্যক্তির দিকে তাকিয়েও না, যে তোমাদের চেয়ে উচ্চ পর্যায়ের। যদি এই নীতি অবলম্বন কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে যে নে‘মত দান করেছেন, তাকে ক্ষুদ্র বা হীন মনে করবে না’।[২]
যুহদ-৮৩ : মনের প্রশস্ততাই প্রকৃত প্রাচুর্য
৯৬. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন,
لَيْسَ الْغِنَى عَنْ كَثْرَةِ الْعَرَضِ وَلَكِنْ إِنَّمَا الْغِنَى غِنَى النَّفْسِ
‘সম্মানের আধিক্যে প্রাচুর্য নেই, মনের প্রশস্ততাই প্রকৃত প্রাচুর্য’।[৩]
যুহদ-৮৪ : জান্নাত ও জান্নাতীদের বৈশিষ্ট্য
৯৭. ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেছেন, জান্নাতে কিছু কক্ষ রয়েছে যার বাহির থেকে ভিতরে দেখা যাবে এবং ভিতর থেকে বাহির দেখা যাবে। এ কথা শুনে একজন বেদুঈন বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এসব কার জন্য? রাসূলুল্লাহ (ﷺ)বলেন,
لِمَنْ أَطَابَ الْكَلاَمَ وَأَطْعَمَ الطَّعَامَ وَأَدَامَ الصِّيَامَ وَصَلَّى لِلهِ بِاللَّيْلِ وَالنَّاسُ نِيَامٌ
‘যে সুন্দরভাবে কথা বলে, মানুষকে খাবার খাওয়ায়, নিয়মিত ছিয়াম পালন করে এবং মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন আল্লাহ তা‘আলার উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় করে’।[৪]
যুহদ-৮৫ : পরকালে প্রকৃত নিঃস্ব ব্যক্তি
৯৮. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ)বলেছেন, তোমরা কি জানো, নিঃস্ব কে? তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাদের মধ্যে সেই তো নিঃস্ব, যার কাছে টাকা পয়সা ও জীবনোপকরণ কিছুই নেই। নবী করীম (ﷺ)বললেন,
إِنَّ الْمُفْلِسَ مِنْ أُمَّتِىْ مَنْ يَأْتِىْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَيَامٍ وَصَلَاةٍ وَزَكَاةٍ وَيَأْتِيْ قَدْ شَتَمَ عِرْضَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا وَأَكَلَ مَالَ هَذَا فَيُقْعَدُ فَيَقْتَصُّ هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يَقْضِىَ مَا عَلَيْهِ مِنَ الْخَطَايَا أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَتْ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِى النَّارِ
‘আমার উম্মতের মধ্যে সেই নিঃস্ব যে ক্বিয়ামতের দিন (নিজের আমলনামায়) প্রচুর ছালাত ও ছিয়াম নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু (দুনিয়াতে) সে গালমন্দ করে কারো সম্মানহানি করে এসেছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে এবং কাউকে আঘাত করেছে। সে (বিচারের অপেক্ষায়) বসে থাকবে; এমন সময় (দুনিয়াতে তার কাজের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের) একজন এসে তার কিছু ছওয়াব নিয়ে যাবে; আরেকজন এসে আরো কিছু ছওয়াব নিয়ে যাবে। পাপের দেনা শোধ হওয়ার আগেই যদি তার সওয়াব ফুরিয়ে যায়, তাহলে তাদের পাপ এনে তার উপর নিক্ষেপ করা হবে; পরিশেষে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে’।[৫]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
তথ্যসূত্র :
[১]. তিরমিযী, হা/২৩৪৪; ইবনু মাজাহ, হা/৪১৬৪; সনদ ছহীহ; মিশকাত, হা/৫২৯৯।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হ/২৯৬৩; ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৯০।
[৩]. মুসনাদে আহমাদ, হ/৭৩১৪; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬৭৯; সনদ ছহীহ।
[৪]. তিরমিযী, হা/২৫২৭; মুসনাদে আহমাদ, হ/১৩৩৭; সনদ হাসান।
[৫]. মুসনাদে আহমাদ, হ/৮০১৬; সনদ ছহীহ।
প্রসঙ্গসমূহ »:
কিতাবুয যুহদ