বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন

অহীর সূচনা


আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি সর্বপ্রথম যে অহী আসে, তা ছিল ঘুমের মধ্যে সত্য স্বপ্নরূপে। যে স্বপ্নই তিনি দেখতেন তা একেবারে ভোরের আলোর ন্যায় প্রকাশ পেত। তারপর তাঁর কাছে নির্জনতা প্রিয় হয়ে পড়ে এবং তিনি ‘হেরা’ গুহায় নির্জনে থাকতেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসা এবং কিছু খাদ্যসামগ্রী সঙ্গে নিয়ে যাওয়া। এইভাবে সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। তারপর খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর কাছে ফিরে এসে আবার অনুরূপ সময়ের জন্য কিছু খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যেতেন। এমনিভাবে ‘হেরা’ গুহায় অবস্থানকালে একদিন তাঁর কাছে অহী এলো। তাঁর কাছে ফিরিশতা এসে বললেন, ‘পড়ুন’। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমি বললাম, ‘আমি পড়তে জানি না’।

তিনি বলেন, তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলেন যে, আমার খুব কষ্ট হল। তারপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’। আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। তিনি দ্বিতীয়বার আমাকে জড়িয়ে ধরে এমনভাবে চাপ দিলেন যে, আমার খুব কষ্ট হল। এরপর তিনি আমাকে ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন’। আমি বললাম, আমি তো পড়তে জানি না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তারপর তৃতীয়বার তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে চাপ দিলেন। এরপর ছেড়ে দিয়ে বললেন, ‘পড়ুন, আপনার রবের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত পিণ্ড থেকে। পড়ুন, আর আপনার রব অতিশয় দয়ালু’ (সূরা আল-‘আলাক্ব : ১-৩)

অতঃপর এ আয়াত নিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফিরে এলেন। তাঁর অন্তর তখন কাঁপছিল। তিনি খাদীজা বিনতু খুওয়ায়লিদ (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর নিকট এসে বললেন, ‘আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও’। তাঁরা তাঁকে চাদর দিয়ে ঢেকে দিলেন। অবশেষে তাঁর ভয় দূর হল। তখন তিনি খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর কাছে সকল ঘটনা জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি নিজের উপর আশংকাবোধ করছি। খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বললেন, আল্লাহর কসম! কখনো নয়। আল্লাহ আপনাকে কখনো অপমানিত করবেন না। আপনিতো আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করেন, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সাহায্য করেন, মেহমানের মেহমানদারী করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করেন।

এরপর তাঁকে নিয়ে খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তাঁর চাচাতো ভাই ওয়ারাকাহ ইবনু নাওফাল ইবনু ‘আব্দুল আসাদ ইবনু ‘আব্দুল ‘উযযার কাছে গেলেন, যিনি জাহিলী যুগে ‘ঈসায়ী’ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি ‘ইবরানী’ ভাষা লিখতে জানতেন এবং আল্লাহর তাওফীক অনুযায়ী ‘ইবরানী’ তথা হিব্রুভাষায় ‘ইনজীল’ থেকে অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বয়োবৃদ্ধ এবং অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। খাদীজা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) তাঁকে বললেন, ‘হে চাচাতো ভাই! আপনার ভাতিজার কথা শুনুন’। ওয়ারাকাহ তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ভাতিজা! তুমি কী দেখ?’ আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যা দেখেছিলেন, সবই খুলে বললেন।

তখন ওয়ারাকাহ তাঁকে বললেন, ‘এটা সেই বার্তাবাহক যাঁকে আল্লাহ মূসা ন-এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। অফসোস! আমি যদি সেদিন থাকতাম। আফসোস! আমি যদি সেদিন জীবিত থাকতাম, যেদিন তোমার কওম তোমাকে বহিস্কার করবে’। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাঁরা কি আমাকে বের করে দিবে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি যা নিয়ে এসেছো অনুরূপ (অহী) কিছু যিনিই নিয়ে এসেছেন তাঁর সঙ্গেই বৈরিতাপূর্ণ আচরণ করা হয়েছে। সেদিন যদি আমি থাকি, তবে তোমাকে জোরালোভাবে সাহায্য করব’। এর কিছুদিন পর ওয়ারাকাহ ইন্তিকাল করেন। আর অহীর বিরতি ঘটে (ছহীহ বুখারী, হা/৩ ‘অহীর সূচনা’ অধ্যায়-১, ‘আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি কীভাবে অহী শুরু হয়েছিল’ অনুচ্ছেদ-৩)।

ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, মহান আল্লাহর বাণী, ‘অহী দ্রুত আয়ত্ত করার জন্য আপনি অহী নাযিল হওয়ার সময় আপনার জিহ্বা নাড়বেন না’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ১৬)-এর ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অহী অবতরণের সময় তা আয়ত্ত করতে বেশ কষ্ট করতেন এবং প্রায়ই তিনি তাঁর উভয় ঠোঁট নড়াতেন। ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘আমি তোমাকে দেখানোর জন্য ঠোঁট দু’টি নাড়ছি যেভাবে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা নড়াতেন।

সা‘ঈদ (তাঁর শিষ্যদের) বলেন, ‘আমি ইবনু ‘আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে যেরূপে তাঁর ঠোঁট দু’টি নড়াতে দেখেছি, সেভাবেই আমার ঠোঁট দু’টি নড়াচ্ছি’। এই বলে তিনি তাঁর ঠোঁট দু’টি নড়ালেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা অবতীর্ণ করলেন, ‘অহী দ্রুত আয়ত্ত করার জন্য আপনি অহী নাযিল হবার সময় আপনার জিহ্বা নড়াবেন না, এর সংরক্ষণ ও পাঠ করানোর দায়িত্ব আমাদেরই’ (সূরা আল-ক্বিয়ামাহ : ১৬; (ছহীহ বুখারী, হা/৫ ‘অহীর সূচনা’ অধ্যায়-১, ‘আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি কীভাবে অহী শুরু হয়েছিল’ অনুচ্ছেদ-৪)


শিক্ষা
ক. কুরআন-হাদীছ অধ্যয়ন করে অজানা জ্ঞান জেনে নেয়া।
খ. অহী আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ।
গ. স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে (বিপদ-আপদে) সান্ত্বনা দেয়া।
ঘ. আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করা, অসহায় দুর্বলের দায়িত্ব বহন করা, নিঃস্বকে সাহায্য করা, মেহমানদারী করা এবং দুর্দশাগ্রস্তকে সাহায্য করা।
ঙ. অহীর বিধান মেনে চলার কারণে বৈরিতাপূর্ণ আচরণ এবং নির্যাতিত হতে হবে।
চ. অহী সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহর।
ছ. ছাহাবীগণ অহীকে যথাযথভাবে সংরক্ষণ করেছেন।




কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১১তম পর্ব) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১২তম পর্ব) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ১০ম সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
যিনাকারীর পরিণাম - আবূ মাহী
আত্মত্যাগের নযীরবিহীন ঘটনা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৯ম সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মাযলূমের বদদু‘আ ও তোমার সাক্ষ্যের ভিত্তি কী? - আল-ইখলাছ ডেস্ক
শিক্ষনীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৩য় সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ - মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৮ম সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ