শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৮ অপরাহ্ন

যিনাকারীর পরিণাম

-আবূ মাহী*


বুরায়দা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, মা‘ইয ইবনু মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বললেন, আক্ষেপ তোমার প্রতি, ফিরে যাও, আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও এবং তওবা কর। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলে গেলেন এবং সামান্য একটু দূরে গিয়ে পুনরায় ফিরে আসলেন। অতঃপর বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবারও তাঁকে পূর্বের ন্যায় বললেন। যখন তিনি চতুর্থবার এসে বললেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, আমি তোমাকে কোন্ জিনিস হতে পবিত্র করব? তিনি বললেন, যিনা হতে। তাঁর কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই লোকটি কি পাগল? ছাহাবীগণ বললেন, তিনি পাগল নন। তিনি বললেন, লোকটি কি মদ পান করেছে? তখন এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তার মুখ শুকে দেখেন; কিন্তু মদের কোন গন্ধ তাঁর মুখ হতে পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি যিনা করেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। এরপর তিনি রজমের নির্দেশ দিলেন, তখন তাঁকে রজম করা হল। এ ঘটনার দু’তিন দিন পর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছাহাবীদেরকে বললেন, ‘তোমরা মা‘ইয ইবনু মালেকের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর। কেননা সে এমন তওবা করেছে, যদি উহা সমস্ত উম্মতের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হয়, তবে তা সকলের জন্য যথেষ্ট হবে।

অতঃপর ‘আযদ্’ বংশের ‘গামেদী’ গোত্রীয় এক মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে পবিত্র করুন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার প্রতি আক্ষেপ! ফিরে যাও, আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তওবা কর। তখন মহিলাটি বলল, আপনি মা‘ইয ইবনু মালেককে যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন আমাকেও কি সেভাবে ফিরিয়ে দিতে চান? দেখুন আমার এই গর্ভ যিনার! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি গর্ভবতী? মহিলা বলল, হ্যাঁ। অতঃপর তিনি বললেন, যাও, তোমার পেটের বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। বর্ণনাকারীর বলেন, তখন আনছারী এক লোক মহিলাটির সন্তান প্রসব হওয়ার সময় পর্যন্ত তাকে নিজের তত্ত্বাবধায়নে নিয়ে গেলেন। সন্তান প্রসব হওয়ার পর ঐ লোকটি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, ‘গামেদী’ মহিলাটির বাচ্চা প্রসব করেছে। এবার তিনি বললেন, এ শিশু বাচ্চাটিকে রেখে আমরা মহিলাটিকে রজম করতে পারব না। এমতাবস্থায় যে, তাকে দুধ পান করার মত কেউ নেই। এমন সময় আর একজন আনছারী দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি তার দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করব। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে রজম করলেন (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭০৩; মিশকাত, হা/৩৫৬২)

অন্য বর্ণনাতে আছে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মহিলাটিকে বললেন, তুমি চলে যাও এবং সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। অতঃপর যখন সন্তান প্রসব করল। তখন বললেন, চলে যাও এবং তাকে দুধ পান করাও এবং দুধ ছাড়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। যখন বাচ্চাটির দুধ খাওয়া বন্ধ হল, তখন মহিলাটি বাচ্চার হাতে এক খ- রুটির টুকরা দিয়ে তাকে সঙ্গে করে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে উপস্থিত হল। মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! দেখুন বাচ্চাটিকে দুধ খাওয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করেছি। এমনকি সে নিজের হাতে খানা খাচ্ছে। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বাচ্চাটিকে একজন মুসলিমের হাতে তুলে দিলেন। পরে মহিলাটির জন্য গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন। তার জন্য বক্ষ পর্যন্ত গর্ত খনন করা হল। অতঃপর লোকদেরকে নির্দেশ দিলেন, তারা মহিলাটিকে রজম করল। খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তার মাথায় এক খ- পাথর নিক্ষেপ করতেই রক্ত ছিটে এসে তার মুখম-লের উপর পড়ল। তখন তিনি মহিলাটিকে তিরষ্কার করে গাল-মন্দ করলেন। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে খালিদ থাম! সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! মহিলাটি এমন তওবা করেছে, যদি কোন বড় যালেমও এ ধরনের তওবা করে, অবশ্যই তাকে ক্ষমা করা হবে। অতঃপর তিনি তার জানাযা পড়ার আদেশ করলেন। তিনি তার জানাযার ছালাতও আদায় করলেন। তারপর তাকে দাফন করা হল (ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৯৫; মিশকাত, হা/৩৫৬২)

ওয়ায়েল ইবনু হুজর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যামানায় এক নারী ছালাতের জন্য বের হল। এমন সময় এক ব্যক্তি তাকে কাপড় মোড়ান দিয়ে জড়িয়ে ধরল এবং তার উদ্দেশ্য হাসিল করে ফেলল। তখন মহিলাটি চীৎকার করলে লোকটি চলে যেতে লাগল। এমন সময় একদল মুহাজির সে স্থান দিয়ে অতিক্রম করতে দেখে মহিলাটি বলল, এ লোকটি আমার সঙ্গে এই এই কাজ করেছে। তারা লোকটিকে ধরে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট নিয়ে গেল। অতঃপর তিনি মহিলাটিকে লক্ষ্য করে বললেন, তুমি চলে যাও, আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করেছেন। আর যে লোকটি তার সঙ্গে কুকর্ম করেছে, তার সম্পর্কে লোকদেরকে বললেন, যাও এ লোকটিকে রজম কর এবং তিনি বললেন, অবশ্য এ লোকটি এমন তওবা করেছে, যদি মদীনাবাসী এরূপ তওবা করত তাহলে তাদের পক্ষ হতে তা কবুল হত (তিরমিযী, হা/১৪৫৪; আবূ দাঊদ, হা/৪৩৭৯)

শিক্ষা
১. যিনাকারীর ক্ষমা প্রার্থনা, তওবা করার ও পবিত্র হওয়ার সুযোগ লাভ।
২. অপরাধীর উপর শাস্তি প্রয়োগ করে অপরাধ প্রবণতার হ্রাস করা।
৩. গুনাহ থেকে পবিত্রতা লাভ করা।
৪. সম্মিলিত প্রচেষ্টায় যিনাকারীকে শারঈ শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।




কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৯ম সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মূসা ও খাযির (আলাইহিমাস সালাম)-এর কাহিনী - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৭ম সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মাযলূমের বদদু‘আ ও তোমার সাক্ষ্যের ভিত্তি কী? - আল-ইখলাছ ডেস্ক
যিনাকারীর পরিণাম - আবূ মাহী
শিক্ষনীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৩য় সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১১তম পর্ব) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ১০ম সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১২তম পর্ব) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ - মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম

ফেসবুক পেজ