শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৩:২৩ অপরাহ্ন

(ক) রূযীর মালিক একমাত্র আল্লাহই

জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কুরাইশদের একটি কাফেলাকে পাকড়াও করতে আমাদেরকে অভিযানে পাঠালেন। তিনি আবূ ‘উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে আমাদের নেতা বানালেন এবং তিনি আমাদের সাথে এক ব্যাগ খেজুরও দিলেন। এছাড়া আর কিছু আমাদের সাথে ছিল না। আবূ ‘উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) প্রতিদিন আমাদের প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দিতেন। আমরা বাচ্চাদের মত তা চুষে খেতাম। অতঃপর পানি পান করতাম। এভাবে আমরা রাত পর্যন্ত সারাদিন কাটিয়ে দিতাম। আমরা নিজেদের লাঠি দিয়ে গাছের পাতা ঝড়িয়ে তা পানিতে ভিজিয়ে খেয়েছি। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমরা সমুদ্রের কিনারা দিয়ে অগ্রসর হলাম। অতঃপর সমুদ্র তীরে বালুর ঢিভির ন্যায় একটি বস্তু দেখা গেল। আমরা গিয়ে দেখলাম, সেটা একটা সামুদ্রিক প্রাণী, যার নাম ‘তিমি মাছ’। আবূ ‘উবাইদাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এটা মৃত প্রাণী, আমাদের জন্য হালাল নয়। অতঃপর তিনি মত পাল্টিয়ে বললেন, না! বরং আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতিনিধি এবং আমরা আল্লাহর রাস্তায় বের হয়েছি। তোমরাও সংকটাপন্ন অবস্থার সম্মুখীন হয়েছ। সুতরাং এটা খাও। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমরা সেখানে দীর্ঘ একমাস অবস্থান করছিলাম। আমরা সংখ্যায় ছিলাম তিনশ’। প্রতিদিন তা খেয়ে মোটাতাজা হয়ে গেলাম। আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিকট ফিরে এসে তাঁকে ঘটনাটি বললাম। তিনি বললেন, এটা রিযিক, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য পাঠিয়েছিলেন। তোমাদের সাথে এর গোশত অবশিষ্ট আছে কি? থাকলে আমাকে খাওয়াও। আমরা মাছের কিছু অংশ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট পৌঁছালাম এবং তিনি তা খেলেন (আবূ দাঊদ, হা/৩৮৪০ ‘খাদ্যদ্রব্য’ অধ্যায়-২২, ‘সমুদ্রে বিচরণশীল প্রাণী সম্পর্কে’ অনুচ্ছেদ-৪৭, সনদ ছহীহ)।

(খ) রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর মহাউপদেশ


আবু জুরায়ই জাবির ইবনু সুলাইম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এমন এক ব্যক্তিকে দেখেছি, যার কথা সবাই মেনে চলে এবং তিনি যা কিছু বলেন সবাই তা পালন করে। আমি বললাম, তিনি কে? তারা বলল, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। আমি দু’বার বললাম, ‘আলাইকাস সালাম ইয়া রাসূলুল্লাহ’! তিনি বললেন, ‘আলাইকাস সালাম’ বল না। কেননা ‘আলাইকাস সালাম’ দ্বারা মৃত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া হয়। বরং তুমি বল, ‘আস্‌সালামু ‘আলাইকা’। বর্ণনাকারী বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, আপনি কি আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, আমি সেই আল্লাহর রাসূল, যাকে তুমি বিপদে পড়ে ডাকলে তোমার বিপদ দূর করেন, দুর্ভিক্ষের সময়ে তাঁকে ডাকলে তোমার জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদন করেন, ঘাস-পানিহীন মরু প্রান্তরে তোমার সওয়ারী হারিয়ে গেলে তাঁকে ডাকলে তিনি তোমার নিকট তা ফিরিয়ে দেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমি তাঁকে আমাকে উপদেশ প্রদানের অনুরোধ জানালাম। তিনি বললেন, ‘তুমি কখনো কাউকে গালি দিবে না। বর্ণনাকারী বলেন, এর পরে আমি কখনো স্বাধীন, গোলাম, উট ও ছাগল কোন কিছুকেই গালি দেইনি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ভাল কাজে অবজ্ঞা প্রদর্শন কর না। তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে কথা বলাটা নিঃসন্দেহে ভাল কাজের অন্তর্ভুক্ত। তোমার কাপড় পায়ের নলার মাঝামাঝি পর্যন্ত উঠিয়ে রাখ, যদি এতে সন্তুষ্ট না হও তবে টাখনু পর্যন্ত রাখ। টাখনুর নীচে ঝুলিয়ে পরা হতে সাবধান! কারণ তা করা অহংকারের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ অহংকারকে পসন্দ করেন না। কেউ যদি তোমার মধ্যকার জানা কোন দোষ উল্লেখ করে তোমাকে মন্দ কথা বলে এবং লজ্জিত করে তবে তুমি কিন্তু তাঁর জ্ঞাত দোষ উল্লেখ করে তাকে লজ্জা দিবে না। কেননা এর কৃতকর্মের প্রতিফল তাকে ভোগ করতেই হবে (আবূ দাঊদ, হা/৪০৮৪ ‘পোশাক-পরিচ্ছেদ’ অধ্যায়-২৭, অনুচ্ছেদ-২৭, সনদ ছহীহ)।

(গ) ছবিযুক্ত পর্দা/কাপড় ছিঁড়ে ফেলা


যায়েদ ইবনু খালীল আল-জুহানী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, আবূ ত্বালহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ঘরে কুকুর ও ছবি থাকে সেই ঘরে ফেরেশতা প্রবেশ করেন না’। অতঃপর বর্ণনাকারী বলেন, চল আমরা উম্মুল মুমিনীন ‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর নিকট গিয়ে এ সম্পর্কে প্রশ্ন করি। আমরা তার নিকট পৌঁছে বললাম, হে উম্মুল মুমিনীন! আবূ ত্বালহা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমাদের কাছে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে এরূপ হাদীছ বর্ণনা করেন। আপনি কি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ বিষয়ে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বলেন, না। তবে আমি তাঁকে যা করতে দেখেছি, সে সম্পর্কে একটি হাদীছ আপনাদের বলছি। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক যুদ্ধাভিযানে গেলেন। আমি তাঁর ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিলাম। আমি আমাদের একটি পশমী কাপড় দরজার চৌকাঠে পর্দা হিসাবে ঝুলিয়ে রাখলাম। তিনি যখন ফিরে এলেন, আমি স্বাগতম জানিয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ‌র জন্য, যিনি আপনাকে সম্মানিত ও মর্যাদাসম্পন্ন করেছেন। তিনি ঘরের দরজার দিকে তাকাতেই পশমী পর্দা দেখেন, কিন্তু আমার কথার কোন জবাব দিলেন না। আমি তাঁর চেহারায় অসন্তুষ্টির ছাপ দেখতে পেলাম। তিনি পশমী (ছবিযুক্ত) কাপড়টির নিকট গিয়ে তা ছিঁড়ে ফেলে বললেন, আল্লাহ‌ আমাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছেন, তা পাথর ও ইটকে পরানোর আদেশ দেননি। ‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমি কাপড়টা কেটে দু’টি বালিশ তৈরি করলাম এবং ভেতরে খেজুরের ছাল-বাকল ভরে দিলাম। কিন্তু তিনি আমার এ কাজ অপসন্দ করেননি’ (আবূ দাঊদ, হা/৪১৫৩ অধ্যায়-২৭, অনুচ্ছেদ-৪৭, সনদ ছহীহ)।

শিক্ষণীয় বিষয়
ক. স্বচ্ছল-অস্বচ্ছল কিংবা সংকটাপন্ন অবস্থায় আল্লাহ তা‘আলাই রূযীর ব্যবস্থা করেন।
খ. নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্যের পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন।
গ. আল্লাহ হলেন বিপদ থেকে উদ্ধারকারী, দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্য-শস্য উৎপাদনকারী এবং হারানো বস্তু ফেরত দানকারী।
ঘ. ভাল কাজে অবজ্ঞা প্রদর্শন না করা, টাখনুর নীচে কাপড় পরিধান না করা এবং গীবত ও চোগলখুরী না করা।
ঙ. কখনো ছবিযুক্ত কাপড় ব্যবহার না করা, বরং ছিঁড়ে ফেলা।
চ. স্বামী বাইরে থেকে আসলে স্ত্রীর উচিত হল- তাকে হাস্যোজ্জ্বল চেহারায় স্বাগত জানানো ও তার জন্য কল্যাণের দু‘আ করা।




শিক্ষনীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৩য় সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ১০ম সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১১তম পর্ব) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৬ষ্ঠ সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৫ম সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
আত্মত্যাগের নযীরবিহীন ঘটনা - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৮ম সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৭ম সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-ই একমাত্র সুপারিশকারী - আল-ইখলাছ ডেস্ক
বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ - মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম
কুরআন-সুন্নাহর শিক্ষণীয় ঘটনা (১ম বর্ষ, ৯ম সংখ্যা) - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ