(ক) খাওয়ার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা
হুযাইফাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে খেতে বসলে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খাওয়া আরম্ভ করার পূর্বে আমাদের কেউ খাদ্যের দিকে হাত বাড়াত না। একদা আমরা তাঁর সাথে খেতে বসি। তখন এক বেদুঈন এমনভাবে দৌড়ে এল, যেন কেউ তাকে পিছন হতে তাড়া করছে। সে খাওয়ার পাত্রে হাত দিতে যাচ্ছিল, তখনই রাসূলূল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত ধরে ফেললেন। অতঃপর একটি বালিকা দৌড়িয়ে আসল, যেন তাকেও কেউ পিছন হতে তাড়া করছে। সেও খাদ্যের মধ্যে হাত ঢুকাতে চাচ্ছিল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাতও ধরে ফেললেন। তিনি বললেন, যে খাদ্য আল্লাহর নাম নিয়ে খাওয়া হয় না, তাতে শয়তান শরীক হয়। সে প্রথমে বেদুঈনকে নিয়ে এসেছিল তার সঙ্গে খাদ্যে অনুপ্রবেশ করতে। আমি তার হাত ধরে ফেলি। ঐ সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ! শয়তানের হাত এখন এই দু’জনের হাতের সাথে আমার হাতে মধ্যে বন্দী (আবূ দাঊদ, হা/৩৭৬৬ ‘খাদ্যদ্রব্য’ অধ্যায়-২২, ‘খাওয়ার সময় আল্লাহর নাম নেয়া’ অনুচ্ছেদ-১৬, সনদ ছহীহ)।
(খ) সত্য ঝাড়ফুঁক দ্বারা রোজগার করা জায়েয
খারিজাহ ইবনুছ ছাল্ত আত-তামীমী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে তার চাচার সূত্রে বর্ণিত, তিনি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলেন। অতঃপর তাঁর নিকট হতে ফেরার পথে তিনি এক গোত্রের পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। সেই গোত্রের এক পাগল লোহার শিকলে বাঁধা ছিল। গোত্রের লোকেরা তাকে বলল, আমরা জানতে পারলাম যে, তোমাদের এক সাথী অর্থাৎ নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) না-কি কল্যাণ নিয়ে এসেছেন? তোমাদের এমন কিছু জানা আছে কি, যাতে তোমরা এর চিকিৎসা করতে পার? অতএব আমি সূরা আল-ফাতিহা পড়ে তাকে ফুঁক দিলাম। সে সুস্থ হয়ে গেল। এর জন্য তারা আমাকে একশ’টি বকরী দিল। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে ঘটনাটি জানালে তিনি বললেন, এ সূরা ছাড়া অন্য কিছু পড়ে ফুঁক দিয়েছ কি? মুছাদ্দাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এ সূরা ছাড়া অন্য কিছু বলেছ কি? আমি বললাম, না। তিনি বলেন, তবে এ উপহার নিতে পার। আমার জীবনের কসম! লোকেরা বাতিল মন্ত্র পড়ে রোজগার করে! আর তুমি তো সত্য ঝাড়ফুঁক দ্বারা রোজগার করেছ (আবূ দাঊদ, হা/৩৮৯৬ ‘চিকিৎসা’ অধ্যায়-২৩, ‘ঝাড়ফুঁক করার পদ্ধতি’ অনুচ্ছেদ-১৯, সনদ ছহীহ)।
(গ) পুরুষের জন্য স্বর্ণ ও রেশম নিষিদ্ধ এবং হিংস্র প্রাণীর চামড়া ব্যবহার ও তৈরি আসনে বসা নিষেধ
খালিদ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আল-মিক্বদাম ইবনু মা‘দীকারিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু), ‘আমর ইবনুল আসওয়াদ ও কিন্নাসিরীনবাসী বনী আসাদের এক লোক মু‘আবিয়াহ ইবনু আবূ সুফিয়ান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিকট গেলেন। মু‘আবিয়াহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মিক্বদাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বললেন, জানতে পারলাম, হাসান ইবনু আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মারা গেছেন। একথা শুনে মিক্বদাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন’ পড়লেন। অমুক ব্যক্তি মু‘আবিয়াহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বললেন, এর মৃত্যুকে আপনি কি বিপদ মনে করেন? তিনি বললেন, আমি এটাকে কেন বিপদ মনে করব না, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যাকে নিজের কোলে নিয়ে বলতেন, হাসান আমার এবং হুসাইন আলীর। আমাদী বলল, তিনি ছিলেন এক জ্বলন্ত কয়লা, যাকে আল্লাহ নিভিয়ে দিয়েছেন। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর মিক্বদাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আজ আমি আপনাকে অসন্তুষ্ট না করে ছাড়ব না। তিনি বললেন, হে মু‘আবিয়াহ! আমি যদি সত্য বলি তবে আমাকে সমর্থন করবেন আর মিথ্যা বললে আমাকে মিথ্যাবাদী বলবেন। তিনি বললেন, ঠিক আছে। তিনি বলেন, আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আপনি কি শুনেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) স্বর্ণ (পুরুষদের) ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ।
তিনি আবার বললেন, আপনাকে আল্লাহর কসম দিয়ে বলছি, আপনি কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রেশমী পোশাক (পুরুষদের) ব্যবহার করতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি আবারও বললেন, আল্লাহর কসম দিয়ে আপনাকে প্রশ্ন করছি, আপনি কি জানেন যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হিংস্র জন্তুর চামড়া ব্যবহার করতে এবং এর চামড়ার তৈরি আসনে আরোহী হতে নিষেধ করেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি আপনার প্রাসাদে এসবের কিছুই দেখছি না। মু‘আবিয়াহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, হে মিক্বদাম! আমি জানতাম যে, তোমার কাছ থেকে রক্ষা পাব না। খালিদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, অতঃপর মু‘আবিয়াহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার জন্য এত পরিমাণ সম্পদ দেয়ার আদেশ দেন, যা অপর দু’জন সাথীর জন্য দেননি। আর তার ছেলের জন্য দুইশ’ দীনার প্রদান করেন। মিক্বদাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এগুলো তার সাথীদের মাঝে বণ্টন করে দিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আসাদী এখানে যা পেয়েছে তা থেকে কাউকে কিছু দেয়নি। এ সংবাদ মু‘আবিয়াহ্র নিকট পৌঁছলে তিনি বলেন, মিক্বদাম হল লম্বা হাতের দানশীল লোক, আর আসাদী নিজের জন্য আটকিয়ে রাখার লোক (আবূ দাঊদ, হা/৪১৩১ ‘পোশাক-পরিচ্ছেদ’ অধ্যায়-২৭, ‘চিতা বাঘ ও হিংস্র জন্তুর চামড়া সম্পর্কে’ অনুচ্ছেদ-৪২, সনদ ছহীহ)।
শিক্ষা :
১. সম্মিলিতভাবে খাওয়ার সময় নেতা বা মুরুব্বীদের পূর্বে খাওয়া শুরু না করা।।
২. খাওয়ার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা। কেননা যে খাবারে ‘বিসমিল্লাহ’ বলা হয় না, সে খাবারে শয়তান অংশগ্রহণ করে।
৩. সত্য ঝাড়ফুঁক করার মাধ্যমে রোজগার করা বৈধ।
৪. পুরুষের জন্য স্বর্ণ ও রেশমের পোশাক পরিধান করা হারাম। অনুরূপভাবে হিংস্র প্রাণীর চামড়া ব্যবহার করা ও তার দ্বারা তৈরি আসনে বসাও নিষেধ।