(ক) গরীব লোক ও ছিয়ামের কাফফারা
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট বসে ছিলাম। এমন সময় তাঁর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। তিনি বললেন, তোমাকে কিসে ধ্বংস করল? সে বলল, আমি রামাযানের ছিয়াম অবস্থায় আমার স্ত্রীর সাথে সহবাস করেছি। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি একটি দাস মুক্ত করার সামর্থ্য রাখ? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাহলে তুমি কি ক্রমাগত দু’মাস ছিয়াম পালন করতে পারবে? সে বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি ষাটজন মিসকীনকে খাওয়াতে পারবে? সে বলল, না। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি বস। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট খেজুর ভর্তি একটা পাত্র নিয়ে আসা হল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই পাত্রের খেজুরগুলো তুমি ছাদাক্বাহ করে দাও। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি কি এগুলো আমার চেয়েও গরীবকে ছাদাক্বাহ করব? আল্লাহর কসম! মদীনার উভয় প্রান্তে এমন কোন পরিবার নেই, যারা আমার চেয়ে বেশী অভাবী। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এমনভাবে হেসে উঠলেন, যাতে তাঁর সামনের দাঁতগুলো দেখা গেল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি এটা নিয়ে যাও এবং তোমার পরিবারের লোকদের খাওয়াও (ছহীহ বুখারী, হা/১৯৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১১১১; মিশকাত, হা/২০০৪)।
(খ) রামাযানের চাঁদ দর্শন
তাবেঈ আবুল বাখ্তারী (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার আমরা ওমরাহ করার জন্য বের হলাম। যখন আমরা ত্বায়েফ ও মক্কার মধ্যস্থলে অবস্থিত বাতনে নাখ্লা নামক স্থানে অবতীর্ণ হলাম, তখন সকলে মিলে চাঁদ দেখতে লাগলাম। লোকদের মধ্যে কেউ বলল, এটা তিন দিনের চাঁদ আর কেউ বলল, দুই দিনের। পরে আমরা ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম, আমরা রামাযানের চাঁদ দেখেছি। কিন্তু লোকের মধ্যে কেউ বলে, এটা তিন দিনের চাঁদ আর কেউ বলে, তা দুই দিনের। তিনি বললেন, তোমরা কোন্ রাতে চাঁদ দেখেছ? আমরা বললাম, অমুক রাতে। তখন তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তারিখ ধরতেন যে রাতে দেখতেন। সুতরাং তা সে রাতেরই চাঁদ, যে রাতে তোমরা তা দেখেছ। অপর এক বর্ণনায় তাঁর হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, আমরা রামাযানের চাঁদ দেখলাম, তখন আমরা বাতনে নাখলার নিকট র্ইক্ব নামক স্থানে। অতঃপর আমরা এক ব্যক্তিকে ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর নিকট পাঠালাম এ সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞেস করার জন্য। তখন ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা চাঁদ দেখার সাথে মাস নির্ধারণ করেছেন। যদি তোমাদের প্রতি চাঁদ অপ্রকাশিত থাকে, তবে তোমরা শা‘বানকে পূর্ণ করবে (ছহীহ মুসলিম হা/১০৮৮; মিশকাত, হা/১৯৮১)।
(গ) নফল ছিয়ামের ফযীলত
আবু ক্বাতাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি কিভাবে ছিয়াম রাখেন? তখন তিনি তার কথার কারণে তার উপর রাগান্বিত হলেন। অতঃপর উপস্থিত ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যখন তাঁর রাগ দেখলেন, তখন বললেন, আমরা আল্লাহকে পালনকর্তা হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে নবী হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছি। আমরা আল্লাহ্র নিকট তাঁর গযব এবং তাঁর রাসূলের অসন্তুষ্টি হতে আশ্রয় চাচ্ছি। ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এই বাক্যগুলো বারবার বলতে থাকলেন, যাতে তাঁর ক্রোধ থেমে গেল। অতঃপর ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হে আল্লাহ্র রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যে সারা বছর ছিয়াম রাখে সে কেমন? রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, সে ছিয়াম রাখে না এবং ছিয়াম ছাড়াও থাকে না অথবা তিনি বললেন, সে ছিয়াম রাখেওনি এবং ছিয়াম ছাড়েওনি। পুনরায় ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, যে দুইদিন ছিয়াম রাখে এবং এক দিন ছিয়াম ছাড়ে, সে কেমন? রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কেউ এরূপ রাখতে সক্ষম হয় কি? অতঃপর ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, যে একদিন ছিয়াম রাখে আর এক দিন ছিয়াম ছাড়ে, সে কেমন? রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এটা দাঊদ (আলাইহিস সালাম)-এর ছিয়াম। পুনরায় ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, যে একদিন ছিয়াম রাখে এবং দুইদিন ছাড়ে, সে কেমন? তিনি বললেন, আমি কামনা করি যে, আমাকে এরূপ শক্তি দেয়া হোক। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, প্রত্যেক মাসের তিন দিন এবং এক রামাযান হতে অপর রামাযান- এটা হল পূর্ণ বছরের ছিয়াম। আর আরাফার দিনের ছিয়াম- আমি আশা করি, আল্লাহ্র নিকট তা তার পূর্বের এক বছর ও পরের এক বছরের গুনাহর কাফ্ফারা হবে এবং আশূরার ছিয়াম- আমি আশা করি, আল্লাহ্র নিকট তা তার পূর্বের এক বছরের গুনাহর কাফ্ফারা হবে (ছহীহ মুসলিম হা/১১৬২; মিশকাত, হা/২০৪৪)।
শিক্ষণীয় বিষয় :
(ক) দরিদ্র হলেও ছিয়ামের কাফফারা আদায় করা ওয়াজিব।
(খ) চাঁদ দেখে ছিয়াম রাখা এবং চাঁদ দেখে ছিয়াম ভঙ্গ করা।
(গ) মেঘাচ্ছন্ন দিনে চাঁদ অপ্রকাশিত থাকলে শা‘বান মাসকে পূর্ণ করবে ।
(ঘ) বেশী বেশী নফল ছিয়াম পালন করা। বিশেষ করে ‘আরাফা ও ‘আশূরার ছিয়াম।