বান্দার প্রতি আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহ
-মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম*
ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, সবার শেষে এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে একবার সম্মুখে হাঁটবে আবার একবার উপুড় হয়ে পড়ে যাবে। জাহান্নামের আগুন তাকে ঝাপটা দিবে। অগ্নিসীমা অতিক্রম করার পর সে তার দিকে ফিরে দেখবে এবং বলবে, ‘সে সত্তা কত মহিমাময় যিনি আমাকে তোমার থেকে নাজাত দিয়েছেন। তিনি আমাকে এমন জিনিস দান করেছেন, যা পূর্বে বা পরে কাউকেও প্রদান করেননি’।
এরপর তার সামনে একটি গাছ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। (যা দেখে) সে বলবে, ‘হে প্রতিপালক! আমাকে এ গাছটির নিকটবর্তী করে দিন, যেন আমি এর ছায়া গ্রহণ করতে পারি এবং এর নিচে প্রবাহিত পানি থেকে পিপাসা নিবারণ করতে পারি’। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! যদি আমি তোমাকে তা দান করি, তবে হয়ত তুমি আবার অন্য একটির প্রার্থনা করে বসবে’। তখন সে বলবে, ‘না, হে প্রভু! এর অতিরিক্ত কিছু চাইব না’। এই বলে সে আল্লাহ তা‘আলার নিকট কসম করবে এবং আল্লাহও তাঁর ওযর গ্রহণ করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে, যা দেখে ধৈর্যধারণ করা যায় না। অতএব আল্লাহ তা‘আলা তাকে ঐ গাছটির নিকটবর্তী করে দিবেন। আর সে তার ছায়া গ্রহণ করবে ও পানি পান করবে। তারপর সেখানে আবার একটি গাছ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। যেটি প্রথমটি অপেক্ষা অধিক সুন্দর। এটি দেখেই সে প্রার্থনা করবে, ‘হে প্রভু! আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করে দিন, যেন আমি তা থেকে পানি পান করতে পারি এবং এর ছায়া গ্রহণ করতে পারি। এরপর আর কিছুর প্রার্থনা করব না’।
আল্লাহ তা‘আলা তখন বলবেন, ‘আদম সন্তান! তুমি না আমার কসম করে বলেছিলে, আর কোনটির প্রার্থনা জানাবে না’। তিনি আরো বলবেন, ‘যদি আমি তোমাকে তার নিকটবর্তী করে দিই, তবে তুমি হয়ত আরও কিছুর জন্য প্রার্থনা করবে’। তখন সে আর কিছু চাইবে না বলে কসম করবে। আল্লাহ তা‘আলা তার এ ওযর কবুল করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে, যা দেখে ধৈর্যধারণ করা যায় না। যাহোক তিনি তাকে তার নিকটবর্তী করে দিবেন। আর সে এর ছায়া গ্রহণ করবে ও পানি পান করবে। এরপর আবার জান্নাতের দরজার কাছে আরেকটি গাছ উদ্ভাসিত হয়ে উঠবে। এটি পূর্বের দু’টি গাছ অপেক্ষাও অধিকতর সুন্দর। তাই সে বলে উঠবে, ‘হে প্রতিপালক! আমাকে এ গাছের নিকটবর্তী করে দিন, যেন আমি এর ছায়া গ্রহণ করতে পারি ও পানি পান করতে পারি। আমি আর কিছুই প্রার্থনা করব না’। আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি আমার নিকট আর কিছু চাইবে না বলে কসম করনি?’ সে উত্তরে বলবে, ‘অবশ্যই করেছি। হে প্রভু! তবে এটিই (শেষ)। আর কিছু চাইব না’। আল্লাহ তার ওযর গ্রহণ করবেন। কারণ সে এমন সব জিনিস প্রত্যক্ষ করেছে, যা দেখে ধৈর্যধারণ করা যায় না। তিনি তাকে এর নিকটবর্তী করে দিবেন।
যখন তাকে নিকটবর্তী করে দেয়া হবে আর জান্নাতীদের কণ্ঠস্বর তার কানে ধ্বনিত হবে। তখন সে বলবে, ‘হে প্রতিপালক! আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দিন’। আল্লাহ বলবেন, ‘হে আদম সন্তান! তোমার কামনা কোথায় গিয়ে শেষ হবে? আমি যদি তোমাকে পৃথিবী এবং তার সমপরিমাণ বস্তু দান করি তবে কি তুমি পরিতৃপ্ত হবে?’ সে বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমার সাথে ঠাট্টা-বিদ্রপ করছেন! অথচ আপনি তো সারা জাহানের প্রতিপালক’। একথাটি বর্ণনা করতে গিয়ে বর্ণনাকারী ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হেসে ফেললেন। আর বললেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও অনুরূপ হেসেছিলেন। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেছিলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! কেন হাসছেন? রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘এজন্য যে, ঐ ব্যক্তিটির এ উক্তি ‘আপনি ঠাট্টা-বিদ্রুপ করছেন, আপনিতো সারা জাহানের প্রতিপালক’ শুনে আল্লাহ তা‘আলা হেসেছেন বলে আমিও হাসলাম। যাহোক আল্লাহ তাকে বলবেন, ‘তোমার সাথে ঠাট্টা করছি না। মনে রেখ, আমি সকল ইচ্ছার উপর ক্ষমতাবান’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৭ ‘নিম্ন শ্রেণীর জান্নাতী’ অনুচ্ছেদ-৮৩, ‘ঈমান’ অধ্যায়-১)।
অন্য বর্ণনায় রয়েছে, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘ইহা তোমার জন্য এবং এর অনুরূপ আরো দশগুণ দেয়া হবে’। অতঃপর তিনি বলেন, ‘তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যেখানে তাদের জন্য থাকবে দু’জন স্ত্রী, যারা হবে সুন্দর ডাগর ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট। তারা উভয় তাকে বলবে, যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আপনাকে আমাদের জন্য জীবিত রেখেছেন এবং আমাদেরকে আপনার জন্য জীবিত রেখেছেন। অতঃপর জান্নাতী ব্যক্তিটি বলবে, ‘হে আল্লাহ! তুমি যা দিয়েছ, তার অনুরূপ আর কেউ দিতে পারবে না’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১১২৩২; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৫৩০৩, সনদ ছহীহ)।
শিক্ষা :
১). বান্দার উপর আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ অফুরন্ত।
২). আল্লাহ তা‘আলা সম্পর্কে সঠিক আক্বীদা স্পষ্টকরণ। যেমন, তিনি কথা বলেন, তিনি হাসেন ইত্যাদি।
৩). সর্বশেষ জান্নাতে প্রবেশকারীর বিবরণ।
৪). মানুষের আকাক্সক্ষার কোন শেষ নেই। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার দয়া ও অনুগ্রহ অফুরন্ত।
৫). জান্নাতের নে‘মতসমূহের বর্ণনা।
৬). আল্লাহ তা‘আলাই সকল ইচ্ছার উপর ক্ষমতাবান।