(ক) মিসকীনদের জন্য খরচ করার ফযীলত
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সূত্রে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন এক লোক কোন এক মরুপ্রান্তরে সফর করছিলেন। এমন সময় অকস্মাৎ মেঘের মধ্যে একটি আওয়াজ শুনতে পেলেন যে, অমুকের বাগানে পানি দাও। সাথে সাথে ঐ মেঘ খ-টি একদিকে সরে যেতে লাগল। এরপর এক প্রস্তরময় ভূমিতে বৃষ্টি বর্ষিত হল। ঐ স্থানের নালাসমূহের একটি নালা ঐ পানিতে সম্পূর্ণরূপে পূর্ণ হয়ে গেল। তখন সে লোকটি পানির অনুগমন করে চলল। চলার পথে সে এক লোককে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখতে পেল যিনি কোদাল দিয়ে পানি বাগানে সবদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এ দেখে সে তাকে বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তোমার নাম কী? সে বলল, আমার নাম অমুক, যা তিনি মেঘখ-ের মাঝে শুনতে পেয়েছিলেন। তারপর বাগানের মালিক তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি আমার নাম জানতে চাইলে কেন? উত্তরে সে বলল, যে মেঘের এ পানি, এর মাঝে আমি এ আওয়াজ শুনতে পেয়েছি, তোমার নাম নিয়ে বলছে যে, অমুকের বাগানে পানি দাও। এরপর বলল, তুমি এ বাগানের ব্যাপারে কী কর? মালিক বলল, যেহেতু তুমি জিজ্ঞেস করছ তাই বলছি, প্রথমে আমি এ বাগানের উৎপন্ন ফসলের হিসাব করি। অতঃপর এর এক তৃতীয়াংশ ছাদাক্বাহ করি, এক তৃতীয়াংশ আমি ও আমার পরিবার-পরিজনের জন্য রাখি এবং এক তৃতীয়াংশ বাগানের উন্নয়নের কাজে খরচ করি’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৮৪ ‘যুহ্দ ওয়ার রিকাক’ অধ্যায়-৫৫, ‘মিসকীনদের জন্য ছাদাক্বাহ করা’ অনুচ্ছেদ-৪)।
(খ) অভাবগ্রস্তকে সুযোগ দেয়া বা ক্ষমা করে দেয়া আল্লাহর ছায়া লাভের উপায়
উবাদাহ ইবনু ওয়ালীদ ইবনু উবাদাহ ইবনু ছামিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘একদিন আমি এবং আমার পিতা আনছারী ছাহাবীগণের মৃত্যুর পূর্বে আনছারী ছাহাবীদের এ এলাকায় ‘ইলমে দ্বীন শিক্ষা করার উদ্দেশে বের হলাম। প্রথমে আমাদের যার সাথে দেখা হল, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবী আবুল ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। এক বোঝা কিতাব নিয়ে তাঁর সাথে ছিলেন এক গোলাম। তখন আবুল ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর শরীরে ছিল একটি চাদর এবং একটি মু‘আফিরী কাপড়। অনুরূপভাবে তাঁর গোলামের গায়েও একটি চাদর এবং একটি মু‘আফিরী কাপড় বিদ্যমান ছিল। অতঃপর আমার আব্বা তাঁকে বললেন, হে চাচাজান! আপনার চেহারায় যে ক্রোধের নিদর্শন লক্ষ্য করছি। তিনি বললেন, হ্যাঁ; কারণ বানী হারাম গোত্রের অমুকের পুত্র অমুকের কাছে আমি মাল পাওনা আছি। তাগাদার উদ্দেশ্যে আমি তার বাড়ীতে গেছি। অতঃপর আমি সালাম দিয়ে বললাম, অমুক কোথায়, সে বাড়ী আছে কি? গৃহের ভিতর হতে তারা বলল, সে গৃহে নেই। এমতাবস্থায় তার এক শিশু ছেলে বাইরে আমার কাছে এল। আমি তাকে বললাম, তোমার বাবা কোথায়? সে বলল, আপনার আওয়াজ শুনে আমার আম্মার খাটের ভেতর পালিয়ে রয়েছে। আমি তাকে বললাম, আমার কাছে এস। অবশ্যই আমি জানি তুমি কোথায় রয়েছ। অতঃপর সে বেরিয়ে আসল। আমি তাকে বললাম, আমার থেকে আত্মগোপন করার বিষয়ে কিসে তোমাকে অনুপ্রাণিত করেছে। সে বলল, আল্লাহর শপথ! আমি আপনাকে যা বলব, তা মিথ্যা বলব না। আল্লাহর শপথ, আপনি তো রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ছাহাবী, তাই এ বিষয়টিকে আমি ভয়ানক মনে করেছি যে, আমি আপনার সঙ্গে মিথ্যা কথা বলব অথবা প্রতিশ্রুতি করে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করব। আল্লাহর শপথ! আমি একজন অভাবগ্রস্ত লোক। আমি বললাম, আল্লাহর শপথ করে বলছ? সে বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর শপথ করে বলছি। আমি আবার বললাম, আল্লাহর শপথ করে বলছ? সে বলল, হ্যাঁ আল্লহার শপথ করে বলছি। অতঃপর এতদসংশ্লিষ্ট দলীল আনা হল এবং আবুল ইয়াসার স্বীয় হাতে সেটা মুছে দিলেন। তারপর তিনি বললেন, আমার ঋণ পরিশোধ করার টাকা যদি তোমার হস্তগত হয়, তবে তুমি তা পরিশোধ করবে। অন্যথা তুমি আমার পক্ষ থেকে এ ঋণ হতে মুক্ত। অতঃপর আবুল ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) দু’টি আঙ্গুল তার চক্ষুদ্বয়ের উপর রেখে বললেন, আমার উভয় চোখের দৃষ্টি প্রত্যক্ষ করেছে, আমার উভয় কান শ্রবণ করেছে এবং হৃদয় ধমণীর প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বললেন, আমার অন্তর তা সংরক্ষণ করেছে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَنْ أَنْظَرَ مُعْسِرًا أَوْ وَضَعَ عَنْهُ أَظَلَّهُ اللهُ فِىْ ظِلِّهِ ‘যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্তকে সুযোগ দেয় বা ক্ষমা করে দেয় আল্লাহ তা‘আলা তাকে তাঁর স্বীয় ছায়ার নীচে আশ্রয় দিবেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৩০০৬ ‘যুহ্দ ওয়ার রিক্বাক্ব’ অধ্যায়-৫৫, ‘জাাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর দীর্ঘ হাদীছ ও আবুল ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর ঘটনা’ অনুচ্ছেদ-১৮)।
শিক্ষণীয় বিষয় :
(ক). আল্লাহর অনুগ্রহ অফুরন্ত।
(খ). উপার্জন থেকে নিয়মিত আল্লাহর জন্য কিছু দান করা।
(গ). মিসকীনদেরকে ছাদাক্বাহ করার অভ্যাস গড়ে তোলা।
(ঘ). দ্বীনি ইলম অর্জনের জন্য সফর করা।
(ঙ). শিশুরা কোমল। তাদের সম্মুখে মিথ্যা ও অযাচিত কোন আচরণ করা ঠিক নয়।
(চ). সম্মানিত ব্যক্তির সাথে কখনো মিথ্যা কথা না বলা।
(ছ). আল্লাহর শপথ করে কিছু বললে বিশ্বাস করা।
(জ). ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে অবকাশ দেয়া অথবা ক্ষমা করে দেয়া উত্তম।