(ক) রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মু‘জিযা
-আল-ইখলাছ ডেস্ক
জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘(খন্দকের যুদ্ধে) যখন পরিখা খনন করা হল, তখন আমি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ক্ষুধার্ত দেখলাম। অতঃপর আমি আমার স্ত্রীর নিকট গিয়ে বললাম, তোমার নিকট কোন (খাবার) জিনিস আছে কি? কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রচণ্ড ক্ষুধার্ত দেখলাম’। সুতরাং সে একটি চামড়ার থলি বের করল, যাতে এক ছা‘ (আড়াই কেজি) যব ছিল। আর আমাদের নিকট একটি গৃহপালিত ছাগলের বাচ্চা ছিল। আমি তা যবহ করলাম এবং আমার স্ত্রী যব পেষল। আমার (গোশত বানানোর কাজ সম্পন্ন করা পর্যন্ত) সেও যব পেষার কাজ সেরে নিল। পুনরায় আমি গোশত টুকরা টুকরা করে হাঁড়িতে রাখলাম। তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট যেতে লাগলাম। সে বলল, আপনি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথীদের কাছে আমাকে লাঞ্ছিত করবেন না। সুতরাং আমি তাঁর নিকট এলাম এবং চুপি চুপি বললাম, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আমাদের একটি ছাগল যবহ করেছি এবং আমার স্ত্রী এক ছা‘ যব পেষেছে। সুতরাং আপনি আসুন এবং আপনার সাথে কিছু লোক। এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চিৎকার করে বললেন, ‘হে পরিখা খননকারীরা! জাবির খাবার তৈরি করেছে, তোমরা এসো’। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, ‘যে পর্যন্ত আমি না আসি, সে পর্যন্ত তুমি চুলা থেকে ডেকচি নামাবে না এবং আটার রুটি তৈরি করবে না’। অতঃপর আমি এলাম এবং নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও এলেন। তিনি লোকেদের আগে আগে হাঁটতে লাগলেন। পরিশেষে আমি আমার স্ত্রীর নিকট এলাম (এবং তাকে সকলের আসার সংবাদ দিলাম)। সে আমাকে ভর্ৎসনা করতে লাগল। আমি বললাম ‘(এতে আমার দোষ কী?) আমি তো তা-ই করেছি, যা তুমি আমাকে বলেছিলে’। (যাই হোক) সে খামীর বের করে দিল। তিনি তাতে থুক মারলেন এবং বরকতের দু‘আ করলেন। তারপর তিনি আমাদের ডেকচির নিকট গিয়ে তাতেও থুক মারলেন এবং বরকতের দু‘আ করলেন। আর তিনি (আমার স্ত্রীকে) বললেন, ‘একজন মহিলা ডাক, সে তোমার সাথে রুটি তৈরি করুক এবং তুমি ডেকচি থেকে (গোশত) পাত্রে দিতে থাক, কিন্তু চুলা থেকে তা নামাবে না’। তারা সংখ্যায় এক হাজার ছিলেন। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘আমি আল্লাহর কসম খেয়ে বলছি যে, সকলেই খাবার খেলেন এমনকি শেষ পর্যন্ত তারা কিছু অবশিষ্ট রেখে চলে গেলেন। আর আমাদের ডেকচি আগের মত ফুটতেই থাকল এবং আমাদের আটা থেকে রুটি প্রস্তুত হতেই থাকল’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪১০২ ‘মাগাযী’ অধ্যায়-৬৪, অনুচ্ছেদ-৩০; ছহীহ মুসলিম, হা/২০৩৯)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘তোমরা সকলেই প্রবেশ কর এবং ভিড় করো না’। এ বলে তিনি রুটি টুকরা করে তার উপর গোশত দিয়ে ছাহাবীদের মাঝে বিতরণ করতে শুরু করলেন। (এগুলো পরিবেশন করার সময়) তিনি ডেকচি ও চুলা ঢেকে রেখেছিলেন। এভাবে তিনি রুটি টুকরা করে হাত ভরে বিতরণ করতে লাগলেন। এতে সকলে তৃপ্তি সহকারে খাবার পরেও কিছু বাকী রয়ে গেল। তিনি (জাবিরের স্ত্রীকে) বললেন, ‘এগুলো তুমি খাও এবং অন্যকে উপহার দাও। কেননা, অন্য লোকেদেরও ক্ষুধা পেয়েছে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৪১০১)।
সাপে কাটার মহৌষধ সূরা আল-ফাতিহা
আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর একদল ছাহাবী একবার এক সফরে যান। অবশেষে তারা আরবের গোত্রগুলোর মধ্যে এক গোত্রের নিকট এসে মেহমান হতে চান। কিন্তু সে গোত্র তাঁদের মেহমানদারী করতে প্রত্যাখ্যান করে। ঘটনাচক্রে সে গোত্রের সরদারকে সাপে দংশন করে। তারা তাকে সুস্থ করার জন্য সবরকম চেষ্টা করে, কিন্তু কোন ফল হয় না। তখন তাদের কেউ বলল, তোমরা যদি ঐ দলের কাছে যেতে, যারা তোমাদের মাঝে এসেছিল। হয়ত তাদের কারও কাছে কোন ঔষধ থাকতে পারে। তখন তারা সে দলের কাছে এসে বলল, হে দলের লোকেরা! আমাদের সরদারকে সাপে দংশন করেছে। আমরা সব রকম চেষ্টা করেছি, কিন্তু কোন ফল হয়নি। তোমাদের কারও নিকট কি কোন তদবীর আছে? একজন বললেন, হ্যাঁ। আল্লাহর কসম, আমি ঝাড়-ফুঁক করি। তবে আল্লাহর কসম! আমরা তোমাদের নিকট মেহমান হতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তোমরা আমাদের মেহমানদারী করনি। তাই আমি ততক্ষণ পর্যন্ত ঝাড়-ফুঁক করব না, যতক্ষণ না তোমরা আমাদের জন্য মজুরী নির্ধারণ করবে। তখন তারা তাদের একপাল ছাগল দিতে রাজী হল। তারপর সে ছাহাবী সেখানে গেলেন এবং আল-হামদুলিল্লা-হি রাব্বিল ‘আলামীন (সূরা ফাতিহা) পড়ে ফুঁক দিতে থাকলেন। অবশেষে সে ব্যক্তি এমন সুস্থ হল, যেন বন্ধন থেকে মুক্তি পেল। সে চলাফেরা করতে লাগল, যেন তাঁর কোন রোগই নেই। রাবী বলেন, তখন তারা যে মজুরী চুক্তি করেছিল, তা আদায় করল। এরপর ছাহাবীদের মধ্যে একজন বললেন, এগুলো বণ্টন করে দাও। এতে যিনি ঝাড়-ফুঁক করেছিলেন তিনি বললেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গিয়ে যতক্ষণ না এসব ঘটনা জানাব এবং তিনি আমাদের কী আদেশ দেন তা না জানব, ততক্ষণ তোমরা তা ভাগ কর না। তারপর তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে ঘটনা জানাল। তিনি বললেন, তুমি কী করে জানলে যে, এর দ্বারা ঝাড়-ফুঁক করা যায়? তোমরা ঠিকই করেছ। তোমরা এগুলো বণ্টন করে নাও এবং আমার জন্য একটা ভাগ রাখ’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৪৯ ‘চিকিৎসা’ অধ্যায়, ‘ঝাড়-ফুঁকে থুক দেয়া’ অনুচ্ছেদ)।
শিক্ষণীয় বিষয়
ক. রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মু‘জিযার বহিঃপ্রকাশ।
খ. কর্মীদের কাজে নেতার সহযোগিতা করা।
গ. অভুক্তদের খাবারের ব্যবস্থা করা।
ঘ. পারিবারিক জীবনে স্ত্রীর সাথে পরামর্শ করা।
ঙ. সূরা আল-ফাতিহার উপকারিতা।