ফাযায়েলে তাওহীদ
-মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-উবাইলান
-অনুবাদ : আল-ইখলাছ ডেস্ক
(৩য় কিস্তি)
যমীনে নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ প্রকাশ এবং মানুষে মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ দূর করার ক্ষেত্রে তাওহীদের ফযীলত।
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ لَوۡ اَنَّ اَہۡلَ الۡقُرٰۤی اٰمَنُوۡا وَ اتَّقَوۡا لَفَتَحۡنَا عَلَیۡہِمۡ بَرَکٰتٍ مِّنَ السَّمَآءِ وَ الۡاَرۡضِ وَ لٰکِنۡ کَذَّبُوۡا فَاَخَذۡنٰہُمۡ بِمَا کَانُوۡا یَکۡسِبُوۡنَ
‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নে‘মতসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৯৬)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ اَلۡقَیۡنَا بَیۡنَہُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَ الۡبَغۡضَآءَ اِلٰی یَوۡمِ الۡقِیٰمَۃِ کُلَّمَاۤ اَوۡقَدُوۡا نَارًا لِّلۡحَرۡبِ اَطۡفَاَہَا اللّٰہُ وَ یَسۡعَوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ فَسَادًا وَ اللّٰہُ لَا یُحِبُّ الۡمُفۡسِدِیۡنَ
‘আমি তাদের পরস্পরের মধ্যে ক্বিয়ামত পর্যন্ত শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চারিত করে দিয়েছি। তারা যখনই যুদ্ধের আগুন প্রজ্জ্বলিত করে, তখনই আল্লাহ তা নির্বাপিত করে দেন। তারা দেশে অশান্তি উৎপাদন করে বেড়ায়। আল্লাহ অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদেরকে পসন্দ করেন না’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ৬৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, اَلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ لَمۡ یَلۡبِسُوۡۤا اِیۡمَانَہُمۡ بِظُلۡمٍ اُولٰٓئِکَ لَہُمُ الۡاَمۡنُ وَ ہُمۡ مُّہۡتَدُوۡنَ ‘যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শিরকের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যই শাস্তি এবং তারাই সুপথগামী’ (সূরা আল-আন‘আম : ৮২)।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاللهِ لَيَنْزِلَنَّ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا عَادِلًا فَلَيَكْسِرَنَّ الصَّلِيْبَ وَلَيَقْتُلَنَّ الْخِنْزِيْرَ وَلَيَضَعَنَّ الْجِزْيَةَ وَلَتُتْرَكَنَّ الْقِلَاصُ فَلَا يُسْعَى عَلَيْهَا وَلَتَذْهَبَنَّ الشَّحْنَاءُ وَالتَّبَاغُضُ وَالتَّحَاسُدُ وَلَيَدْعُوَنَّ إِلَى الْمَالِ فَلَا يَقْبَلُهُ أَحَدٌ
২১. আবূ হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহর কসম! ‘ঈসা ইবনু মারইয়াম (আলাইহিস সালাম) অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ শাসকরূপে আসবেন এবং ক্রুশ চূর্ণ করবেন, শুকর হত্যা করবেন, জিয্য়াহ তথা কর রহিত করবেন। মোটা তাজা উটগুলো বন্ধনমুক্ত করে দেয়া হবে কিন্তু তা নেয়ার জন্য কেউ চেষ্টা করবে না। পরস্পর শত্রুতা, হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না এবং সম্পদ গ্রহণের জন্য মানুষকে ডাকা হবে কিন্তু তা কেউ গ্রহণ করবে না।[১]
عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَقُوْمُ السَّاعَةُ حَتَّى لَا يُقَالَ فِي الْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ
২২. আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত পৃথিবীতে ‘লা ইলাহা ইল্লাহ’ বলার মত লোক থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্বিয়ামত হবে না।[২]
তাওহীদের ইলম অর্জনের ফযীলত
তাওহীদের ইলম অর্জনের অর্থ হল, হ্যাঁ ও না বাচক অর্থসহ কালেমা ‘লা ইলাহা ইল্লাহ’ এর অর্থ অবগত হওয়া। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
فَاعۡلَمۡ اَنَّہٗ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا اللّٰہُ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لِذَنۡۢبِکَ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتِ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ مُتَقَلَّبَکُمۡ وَ مَثۡوٰىکُمۡ
‘জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমাপ্রার্থনা করুন, আপনার ক্রটির জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত’ (সূরা মুহাম্মাদ : ১৯)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, قُلۡ اَفَغَیۡرَ اللّٰہِ تَاۡمُرُوۡٓنِّیۡۤ اَعۡبُدُ اَیُّہَا الۡجٰہِلُوۡنَ ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, হে মূর্খরা! তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করতে আদেশ করছ?’ (সূরা আয-যুমার : ৬৪)। আল্লাহ বলেন, وَ مِنۡہُمۡ اُمِّیُّوۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ الۡکِتٰبَ اِلَّاۤ اَمَانِیَّ وَ اِنۡ ہُمۡ اِلَّا یَظُنُّوۡنَ ‘তোমাদের কিছু লোক নিরক্ষর। তারা মিথ্যা আকাঙ্ক্ষা ছাড়া আল্লাহর গ্রন্থের কিছুই জানে না। তাদের কাছে কল্পনা ছাড়া কিছুই নেই’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৭৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَمِ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِہٖۤ اٰلِہَۃً قُلۡ ہَاتُوۡا بُرۡہَانَکُمۡ ہٰذَا ذِکۡرُ مَنۡ مَّعِیَ وَ ذِکۡرُ مَنۡ قَبۡلِیۡ بَلۡ اَکۡثَرُہُمۡ لَا یَعۡلَمُوۡنَ الۡحَقَّ فَہُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ
‘তারা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য গ্রহণ করেছে? (হে নবী!) আপনি বলুন, তোমরা তোমাদের প্রমাণ আন। এটাই আমার সঙ্গীদের কথা এবং এটাই আমার পুর্ববর্তীদের কথা। বরং তাদের অধিকাংশই সত্য জানে না; অতএব তারা টালবাহানা করে’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ২৪)।
মহান আল্লাহ বলেন, وَ لَا یَمۡلِکُ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِہِ الشَّفَاعَۃَ اِلَّا مَنۡ شَہِدَ بِالۡحَقِّ وَ ہُمۡ یَعۡلَمُوۡنَ ‘তিনি ব্যতীত তারা যাদের পূজা করে, তারা সুপারিশের অধিকারী হবে না, তবে যারা সত্য স্বীকার করত ও বিশ্বাস করত’ (সূরা আয-যুখরূফ : ৮৬)। মহান আল্লাহ বলেন,
اَمَّنۡ ہُوَ قَانِتٌ اٰنَآءَ الَّیۡلِ سَاجِدًا وَّ قَآئِمًا یَّحۡذَرُ الۡاٰخِرَۃَ وَ یَرۡجُوۡا رَحۡمَۃَ رَبِّہٖ قُلۡ ہَلۡ یَسۡتَوِی الَّذِیۡنَ یَعۡلَمُوۡنَ وَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ اِنَّمَا یَتَذَکَّرُ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ
‘যে ব্যক্তি রাত্রিকালে সিজদার মাধ্যমে অথবা দাঁড়িয়ে ইবাদত করে, পরকালের ভয় রাখে এবং তার পালনকর্তার রহমত প্রত্যাশা করে, সে কি তার সমান, যে এরূপ করে না; (হে নবী!) আপনি বলুন, যারা জানে এবং যারা জানে না; তারা কি সমান হতে পারে? চিন্তা-ভাবনা কেবল তারাই করে, যারা বুদ্ধিমান’ (সূরা আয-যুমার : ৯)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَا یُؤۡمِنُ اَکۡثَرُہُمۡ بِاللّٰہِ اِلَّا وَ ہُمۡ مُّشۡرِکُوۡنَ ‘অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে’ (সূরা ইউসুফ : ১০৬)।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا (وَ مَا یُؤۡمِنُ اَکۡثَرُہُمۡ بِاللّٰہِ) [يوسف: 106] الْآيَةَ قَالَ مِنْ إِيْمَانِهِمْ إِذَا قِيْلَ لَهُمْ مَنْ خَلَقَ السَّمَاءَ وَمَنْ خَلَقَ الْأَرْضَ وَمَنْ خَلَقَ الْجِبَالَ؟ قَالُوا اللهُ وَهُمْ مُشْرِكُوْنَ
২৩. ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি আল্লাহর বাণী ‘অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে’ (সূরা ইউসুফ : ১০৬)-এর অর্থ সম্পর্কে বলেন, (মুশরিকদের) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস ছিল। যখন তাদের বলা হত, আসমান কে সৃষ্টি করেছে? যমীন কে সৃষ্টি করেছে? পাহাড় কে সৃষ্টি করেছে? তারা বলে, আল্লাহ। অথচ তারা মুশরিক’।[৩]
عَنْ عِكْرَمَةَ وَمُجَاهِدٍ وَعَامِرٍ أّنَّهُمْ قَالُوْا فِيْ هَذِهِ الْآيَةِ (وَ مَا یُؤۡمِنُ اَکۡثَرُہُمۡ بِاللّٰہِ اِلَّا وَ ہُمۡ مُّشۡرِکُوۡنَ) قَالَ لَيْسَ أَحَدٌ إِلَّا وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّ اللهِ خَلَقَهُ وَخَلَقَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ فَهَذَا إِيْمَانُهُمْ وَيَكْفُرُوْنَ بمَا سِوَى ذَلِكَ
২৪. ইকরামা, মুজাহিদ ও ‘আমির (রাহিমাহুমুল্লাহ) আল্লাহর বাণী ‘অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে’ (সূরা ইউসুফ : ১০৬) প্রসঙ্গে বলেন, যে ব্যক্তি অবগত আছে যে, আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আসমান-যমীনকেও সৃষ্টি করেছেন- এটা তাদের ঈমান ও আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে কুফরী করার পরিচায়ক।[৪]
عَنْ مُجَاهِدٍ (وَ مَا یُؤۡمِنُ اَکۡثَرُہُمۡ بِاللّٰہِ اِلَّا وَ ہُمۡ مُّشۡرِکُوۡنَ) إِيْمَانُهُمْ قَوْلَهُم اللهُ خَالِقُنَا وَيَرْزُقُنَا وَيُمِيْتُنَا فَهَذَا إِيْمَانُ مَعَ شِرْكُ عِبَادَتِهِمْ غَيْرَهُ
২৫. মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি ‘অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে’ (সূরা ইউসুফ : ১০৬) আয়াত প্রসঙ্গে বলেন, ‘(মুশরিকদের) ঈমানের কথা হল, আল্লাহ আমাদের সৃষ্টিকর্তা, তিনি আমাদের রিয্ক দেন এবং মৃত্যু দেন। এটা ছিল তাদের আল্লাহর ইবাদতের সাথে গাইরুল্লাহর ইবাদত মিশ্রিত ঈমান’।[৫]
عن قتادة قوله: (وَ مَا یُؤۡمِنُ اَکۡثَرُہُمۡ بِاللّٰہِ اِلَّا وَ ہُمۡ مُّشۡرِکُوۡنَ) في إيمانهم هذا. إنك لست تلقى أحدًا منهم إلا أنبأك أن الله ربه وهو الذي خلقه ورزقه وهو مشرك في عبادته
২৬. ক্বাতাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি ‘অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে’ (সূরা ইউসুফ : ১০৬) আয়াত প্রসঙ্গে বলেন, ‘এটা তাদের ঈমানের পরিচায়ক। নিশ্চয় তুমি, তাদের সকলকেই তাদের রব আল্লাহ বলে স্বীকৃতি করতে দেখবে। তিনিই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং রিযক দেন। তবে তারা তার ইবাদতে গাইরুল্লাহকে শরীক করে’।[৬]
عن بن زيد يقول: (وَ مَا یُؤۡمِنُ اَکۡثَرُہُمۡ بِاللّٰہِ ) الآية قال: ليس أحدٌ يعبد مع الله غيره إلا وهو مؤمن بالله ويعرف أن الله ربه وأن الله خالقه ورازقه وهو يشرك به. ألا ترى كيف قال إبراهيم:
[75-77:قَالَ اَفَرَءَیۡتُمۡ مَّا کُنۡتُمۡ تَعۡبُدُوۡنَ – اَنۡتُمۡ وَ اٰبَآؤُکُمُ الۡاَقۡدَمُوۡنَ – فَاِنَّہُمۡ عَدُوٌّ لِّیۡۤ اِلَّا رَبَّ الۡعٰلَمِیۡنَ) [سورة الشعراء)
قد عرف أنهم يعبدون رب العالمين مع ما يعبدون. قال: فليس أحد يشرك به إلا وهو مؤمن به. ألا ترى كيف كانت العرب تلبِّي تقول: لبيك اللهم لبيك لبيك لا شريك لك إلا شريك هو لك تملكه وما ملك؟ المشركون كانوا يقولون هذا
২৭. ইবনু যায়েদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি ‘অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে’ (সূরা ইউসুফ : ১০৬) আয়াত প্রসঙ্গে বলেন, যে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার পরও তার ইবাদতে গাইরুল্লাহকে শরীক করে, সে জানে যে, একমাত্র আল্লাহই তার রব। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই তার সৃষ্টিকর্তা ও রিয্কদাতা। অথচ সে আল্লাহর সাথে শরীক স্থাপন করে। তুমি লক্ষ্য কর না যে, ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) কী বলেছিলেন? আল্লাহর ভাষায়- ‘তোমরা কি তাদের সম্পর্কে ভেবে দেখেছ, যাদের পূজা করে আসছ তোমরা এবং তোমাদের পূর্ববর্তী পিতৃপুরুষেরা? বিশ্বপালনকর্তা ব্যতীত তারা সবাই আমার শত্রু’ (সূরা আশ-শু‘আরা : ৭৫-৭৭)। তারা যে গাইরুল্লাহর পাশাপাশি বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহরও ইবাদত করে মহান আল্লাহ সে স্বীকৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী কেউ তাঁর সাথে শরীক স্থাপন করতে পারে না। তোমরা কি লক্ষ্য করো না যে, আরবের লোকেরা কিভাবে তালবিয়্যাহ পাঠের সময় বলত, ‘আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে উপস্থিত হয়েছি, হে আল্লাহ! আমি উপস্থিত হয়েছি, আমি উপস্থিত হয়ে ঘোষণা করছি যে, আপনার কোন শরীক নেই। আমরা যাকে শরীক স্থাপন করি, তারও মালিক আপনিই, সে কোন ক্ষমতা রাখে না?’ আরবের মুশরিকেরা এসব কথা বলত।[৭]
عَنْ عُثْمَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ مَاتَ وَهُوَ يَعْلَمُ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ دَخَلَ الْجَنَّةَ
২৮. ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি ‘আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই’ স্বীকৃতি দেয়ার পর মৃত্যুবরণ করল, সে জান্নাতে প্রবেশ করল’।[৮]
عَن زِيَادِ بنِ لَبِيْدٍ ঃ قَالَ ذَكَرَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا فَقَالَ ذَاكَ عِنْدَ أَوَانِ ذَهَابِ الْعِلْمِ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَيْفَ يَذْهَبُ الْعِلْمُ وَنَحْنُ نَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَنُقْرِئُهُ أَبْنَاءَنَا وَيُقْرِئُهُ أَبْنَاؤُنَا أَبْنَاءَهُمْ إِلَىْ يَوْمِ الْقِيَامَةِ فَقَالَ ثَكِلَتْكَ أُمُّكَ زِيَادُ إِنْ كُنْتُ لَأُرَاكَ مِنْ أَفْقَهِ رَجُلٍ بِالْمَدِيْنَةِ أَوَلَيْسَ هَذِهِ الْيَهُوْدُ وَالنَّصَارَى يَقْرَءُوْنَ التَّوْرَاةَ وَالْإِنْجِيْلَ لَا يَعْمَلُوْنَ بِشَيْءٍ مِّمَّا فِيْهِمَا
২৯. যিয়াদ ইবনু লাবীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি বিষয় উল্লেখ করলেন এবং বললেন, সেটি ইলম উঠে যাওয়ার সময়ই সংঘটিত হবে। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! ইলম কী করে উঠে যাবে, অথচ আমরা নিজেরা কুরআন শিক্ষা করছি এবং আমাদের সন্তানদেরও শিক্ষা দিচ্ছি; অতঃপর আমাদের সন্তানরা ক্বিয়ামত পর্যন্ত তাদের সন্তানদের শিক্ষা দিতে থাকবে। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যিয়াদ তোমার মা তোমাকে হারাক! এতদিন তো আমি তোমাকে মদীনার একজন বেশ জ্ঞানী ব্যক্তি বলেই মনে করতাম। এই ইহুদী-খ্রিষ্টানরাও তো তাওরাত-ইঞ্জীল পড়ছে? কিন্তু তাতে যা আছে তার উপর তারা আমল করছে না।[৯]
ইয়াক্বীনের ফযীলত, নিশ্চয় তা প্রশান্তির চাবিকাঠি
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡکَ وَ مَاۤ اُنۡزِلَ مِنۡ قَبۡلِکَ وَ بِالۡاٰخِرَۃِ ہُمۡ یُوۡقِنُوۡنَ
‘এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সেসব বিষয়ের উপর যা কিছু তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেসব বিষয়ের উপর যা তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে। আর আখেরাতকে যারা নিশ্চিত বলে বিশ্বাস করে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৪)। মহান আল্লাহ বলেন,
قُلۡ یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اِنۡ کُنۡتُمۡ فِیۡ شَکٍّ مِّنۡ دِیۡنِیۡ فَلَاۤ اَعۡبُدُ الَّذِیۡنَ تَعۡبُدُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ وَ لٰکِنۡ اَعۡبُدُ اللّٰہَ الَّذِیۡ یَتَوَفّٰىکُمۡ وَ اُمِرۡتُ اَنۡ اَکُوۡنَ مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ
‘(হে নবী!) আপনি বলুন, হে মানবকুল! তোমরা যদি আমার দ্বীনের ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে থাক, তবে (জেনো) আমি তাদের ইবাদত করি না যাদের ইবাদত তোমরা কর আল্লাহ ব্যতীত। কিন্তু আমি ইবাদত করি আল্লাহ তা‘আলার, যিনি তুলে নেন তোমাদেরকে। আর আমার প্রতি নির্দেশ হয়েছে যাতে আমি ঈমানদারদের অন্তর্ভুক্ত থাকি’ (সূরা ইউনুস : ১০৪)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন, وَ اِذَا وَقَعَ الۡقَوۡلُ عَلَیۡہِمۡ اَخۡرَجۡنَا لَہُمۡ دَآبَّۃً مِّنَ الۡاَرۡضِ تُکَلِّمُہُمۡ اَنَّ النَّاسَ کَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا لَا یُوۡقِنُوۡنَ ‘যখন প্রতিশ্রুতি (ক্বিয়ামত) সমাগত হবে, তখন আমি তাদের সামনে ভূগর্ভ থেকে একটি জীব নির্গত করব। সে মানুষের সাথে কথা বলবে। এ কারণে যে মানুষ আমার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস করত না’ (সূরা আন-নামল : ৮২)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, وَ جَعَلۡنَا مِنۡہُمۡ اَئِمَّۃً یَّہۡدُوۡنَ بِاَمۡرِنَا لَمَّا صَبَرُوۡا وَ کَانُوۡا بِاٰیٰتِنَا یُوۡقِنُوۡنَ ‘তারা ছবর করত বিধায় আমি তাদের মধ্য থেকে নেতা মনোনীত করেছিলাম, যারা আমার আদেশে পথ প্রদর্শন করত। তারা আমার আয়াতসমূহে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিল’ (সূরা আস-সিজদাহ : ২৪)।
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْ مَسِيْرٍ قَالَ فَنَفِدَتْ أَزْوَادُ الْقَوْمِ قَالَ حَتَّى هَمَّ بِنَحْرِ بَعْضِ حَمَائِلِهِمْ قَالَ فَقَالَ عُمَرُ يَا رَسُوْلَ اللهِ لَوْ جَمَعْتَ مَا بَقِيَ مِنْ أَزْوَادِ الْقَوْمِ فَدَعَوْتَ اللهَ عَلَيْهَا قَالَ فَفَعَلَ قَالَ فَجَاءَ ذُو الْبُرِّ بِبُرِّهِ وَذُو التَّمْرِ بِتَمْرِهِ قَالَ وَقَالَ مُجَاهِدٌ وَذُو النَّوَاةِ بِنَوَاهُ قُلْتُ وَمَا كَانُوْا يَصْنَعُوْنَ بِالنَّوَى؟ قَالَ كَانُوْا يَمُصُّوْنَهُ وَيَشْرَبُوْنَ عَلَيْهِ الْمَاءَ قَالَ فَدَعَا عَلَيْهَا قَالَ حَتَّى مَلَأَ الْقَوْمُ أَزْوِدَتَهُمْ قَالَ فَقَالَ عِنْدَ ذَلِكَ أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنِّيْ رَسُوْلُ اللهِ لَا يَلْقَى اللهَ بِهِمَا عَبْدٌ غَيْرَ شَاكٍّ فِيْهِمَا إِلَّا دَخَلَ الْجَنَّةَ
আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে একটি সফরে ছিলাম। এক পর্যায়ে দলের খাদ্যসামগ্রী শেষ হয়ে গেল। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের কিছু সংখ্যক উট যব্হ করার মনস্থ করলেন। রাবী বলেন যে, এতে ‘উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আপনি যদি সকলের খাদ্য সামগ্রী একত্রিত করে আল্লাহর নিকট দু‘আ করতেন তবে উত্তম হত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সেটাই করলেন। যার নিকট গম ছিল সে গম নিয়ে এবং যার নিকট খেজুর ছিল তা নিয়ে উপস্থিত হল। (ত্বালহা ইবনু মুর্সারিফ বলেন) মুজাহিদ আরো বর্ণনা করেন যে, যার নিকট খেজুরের আঁটি ছিল সে আঁটি নিয়েই উপস্থিত হল। আমি (ত্বালহা) জিজ্ঞেস করলাম আঁটি দিয়ে কী করতেন? তিনি বললেন, সেটা চুষে পানি পান করতেন। রাবী বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সংগৃহীত খাদ্য সামগ্রীর উপর দু‘আ করলেন। রাবী বলেন, অতঃপর লোকেরা তাদের পাত্রসমূহ খাদ্য দ্বারা পূর্ণ করে নিল। রাবী বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল। যে এ বিষয় দু’টোর প্রতি নিঃসন্দেহে বিশ্বাস রেখে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।[১০]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كُنَّا قُعُوْدًا حَوْلَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَعَنَا أَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ فِيْ نَفَرٍ فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ بَيْنِ أَظْهُرِنَا فَأَبْطَأَ عَلَيْنَا وَخَشِيْنَا أَنْ يُقْتَطَعَ دُوْنَنَا وَفَزِعْنَا فَقُمْنَا فَكُنْتُ أَوَّلَ مَنْ فَزِعَ فَخَرَجْتُ أَبْتَغِيْ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَتَّى أَتَيْتُ حَائِطًا لِلْأَنْصَارِ لِبَنِي النَّجَّارِ فَدُرْتُ بِهِ هَلْ أَجِدُ لَهُ بَابًا؟ فَلَمْ أَجِدْ فَإِذَا رَبِيْعٌ يَدْخُلُ فِيْ جَوْفِ حَائِطٍ مِنْ بِئْرٍ خَارِجَةٍ- وَالرَّبِيْعُ الْجَدْوَلُ- فَاحْتَفَزْتُ فَدَخَلْتُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ أَبُوْ هُرَيْرَةَ فَقُلْتُ نَعَمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ مَا شَأْنُكَ؟ قُلْتُ كُنْتَ بَيْنَ أَظْهُرِنَا فَقُمْتَ فَأَبْطَأْتَ عَلَيْنَا فَخَشِيْنَا أَنْ تُقْتَطَعَ دُوْنَنَا فَفَزِعْنَا فَكُنْتُ أَوَّلَ مَنْ فَزِعَ فَأَتَيْتُ هَذَا الْحَائِطَ فَاحْتَفَزْتُ كَمَا يَحْتَفِزُ الثَّعْلَبُ وَهَؤُلَاءِ النَّاسُ وَرَائِيْ فَقَالَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ وَأَعْطَانِيْ نَعْلَيْهِ قَالَ اذْهَبْ بِنَعْلَيَّ هَاتَيْنِ فَمَنْ لَقِيْتَ مِنْ وَرَاءِ هَذَا الْحَائِطَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ فَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ فَكَانَ أَوَّلَ مَنْ لَقِيْتُ عُمَرُ فَقَالَ مَا هَاتَانِ النَّعْلَانِ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟ فَقُلْتُ هَاتَانِ نَعْلَا رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَعَثَنِي بِهِمَا مَنْ لَقِيْتُ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ بَشَّرْتُهُ بِالْجَنَّةِ فَضَرَبَ عُمَرُ بِيَدِهِ بَيْنَ ثَدْيَيَّ فَخَرَرْتُ لِاسْتِي فَقَالَ ارْجِعْ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ فَرَجَعْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَجْهَشْتُ بُكَاءً وَرَكِبَنِيْ عُمَرُ فَإِذَا هُوَ عَلَى أَثَرِي فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا لَكَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ؟ قُلْتُ لَقِيْتُ عُمَرَ فَأَخْبَرْتُهُ بِالَّذِيْ بَعَثْتَنِيْ بِهِ فَضَرَبَ بَيْنَ ثَدْيَيَّ ضَرْبَةً خَرَرْتُ لِاسْتِيْ قَالَ ارْجِعْ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا عُمَرُ مَا حَمَلَكَ عَلَى مَا فَعَلْتَ؟ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ بِأَبِيْ أَنْتَ وَأُمِّيْ أَبَعَثْتَ أَبَا هُرَيْرَةَ بِنَعْلَيْكَ مَنْ لَقِيَ يَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ مُسْتَيْقِنًا بِهَا قَلْبُهُ بَشَّرَهُ بِالْجَنَّةِ؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَلَا تَفْعَلْ فَإِنِّيْ أَخْشَى أَنْ يَتَّكِلَ النَّاسُ عَلَيْهَا فَخَلِّهِمْ يَعْمَلُوْنَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَخَلِّهِمْ
৩০. আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, একদা আমরা (ছাহাবীগণ) রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে ঘিরে বসেছিলাম। আমাদের জামা‘আতে আবুবকর এবং ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-ও ছিলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝ থেকে ওঠে গেলেন। দীর্ঘক্ষণ অতিক্রান্তের পর আমরা শঙ্কিত হলাম যে, তিনি কোথাও কোন বিপদের সম্মুখীন কিনা। তাই আমরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লাম। আর আমি সর্বপ্রথম বিচলিত হলাম। তাই আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খোঁজে বের হয়ে পড়লাম। আমি বানু নাজ্জারের জনৈক আনছারীর বাগানের নিকট এসে উপনীত হলাম। আর বাগানের অভ্যন্তরে প্রবেশের কোন পথ খুঁজে পাওয়া যায় কিনা সেজন্য চারদিকে ঘুরলাম। কিন্তু পেলাম না। হঠাৎ দেখতে পেলাম বাইরের একটি কুয়া থেকে একটি নালা বাগানের অভ্যন্তরে প্রবাহিত হচ্ছে। সংকীর্ণ নালাকে ‘জাদওয়াল’ বলা হয়। অতঃপর আমি নিজেকে শেয়ালের ন্যায় সংকুচিত করে নর্দমার মধ্য দিয়ে গিয়ে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট উপনীত হলাম। তিনি বললেন, আবু হুরায়রা নাকি? আমি বললাম, জী-হ্যাঁ, হে আল্লাহ রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার? আমি বললাম, আপনি আমাদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন। হঠাৎ উঠে চলে আসলেন, আর দীর্ঘক্ষণ পরও ফিরে না যাওয়ায় আমরা বিচলিত হয়ে পড়েছি। আমাদের অনুপস্থিতিতে কোথাও বিপদের সম্মুখীন হলেন কিনা আমাদের এ আশঙ্কা হল। আর আমি সর্বপ্রথম বিচলিত হয়ে পড়ি। আমি এ দেয়ালের কাছে এসে শেয়ালের ন্যায় সঙ্কুচিত হয়ে নালার ভিতর দিয়ে এখানে উপস্থিত হলাম। অন্যান্যরা আমার পেছনে আছে। তিনি তাঁর জুতা জোড়া আমাকে দিয়ে বললেন, হে আবু হুরায়রা! আমার জুতা জোড়া সাথে নিয়ে যাও। এ বাগানের বাইরে যার সাথেই তোমার সাক্ষাৎ হয় তাকে বল, ‘যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এ সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই’ তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও’। বর্ণনাকারী [আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)] বলেন, সর্বপ্রথম ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাথে আমার সাক্ষাৎ হল। তিনি আমাকে বললেন, হে আবু হুরায়রা! জুতা জোড়া কার? আমি বললাম, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর। তিনি আমাকে এ জুতা জোড়াসহ এই বলে পাঠিয়েছেন যে, ‘যে ব্যক্তি প্রশান্ত মনে এ সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই, তাকে তুমি জান্নাতের সুসংবাদ দিবে’। আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমার এ কথা শুনে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমার বুকের উপর এমন জোরে চপেটাঘাত করলেন যে, আমি পেছন দিকে পড়ে গেলাম। আর তিনি বললেন, হে আবু হুরায়রা! তুমি (রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর) নিকট ফিরে চল। তাই আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কাঁদো কাঁদো অবস্থায় ফিরে আসলাম। আমার পেছনে পেছনে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সেখানে উপস্থিত হলেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, হে আবু হুরায়রা! তোমার কী হয়েছে? আমি বললাম, আমার সাথে ওমরের সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং আপনি আমাকে যে সুসংবাদ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন তাঁকে এটা জানালে তিনি আমার বুকে এমন জোরে ঘুষি মারলেন যে, আমি পিছন দিকে পড়ে যাই। তিনি এটাও বলেছেন যে, আমি যেন (আপনার নিকট) ফিরে আসি। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হে ওমর! কোন্ বস্তু তোমাকে এমন কাজ করতে উদ্যত করল? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমার পিতা-মাতা আপনার উপর কুরবান হোক। আপনি কি আপনার জুতা জোড়াসহ আবু হুরায়রাকে এ বলে পাঠিয়েছেন যে, যার সাথে তোমার সাক্ষাৎ হয় তাকে বল, যে ব্যক্তি সর্বান্তঃকরণে এ সাক্ষ্য দিবে যে, ‘আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই’ তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, হ্যাঁ। ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, এরূপ করবেন না, কেননা আমার আশংকা হচ্ছে এতে লোকেরা (আমল বর্জন করে) এর উপর ভরসা করে বসে থাকবে। কাজেই লোকদেরকে আমল করার সুযোগ দিন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আচ্ছা তাদেরকে ছেড়ে দাও।[১১]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৫; মিশকাত, হা/৫৫০৬।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৮; মুসনাদে আহমাদ হা/১৩৮৩৩।
[৩]. ইবনু জারীর আত-তাবারী, জামি‘উল বায়ান ফী তা’বীলিল কুরআন, হা/১৯৯৫৪, সনদ ছহীহ।
[৪]. প্রাগুক্ত, হা/১৯৯৬৬, সনদ ছহীহ।
[৫]. প্রাগুক্ত, হা/১৯৯৬২; সনদ ছহীহ।
[৬]. প্রাগুক্ত, হা/১৯৯৬৭; সনদ ছহীহ।
[৭]. প্রাগুক্ত, হা/১৯৯৭৩; সনদ ছহীহ।
[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬; মিশকাত, হা/৩৭।
[৯]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৫০৮; ইবনু মাজাহ, হা/৪০৪৮; মিশকাত, হা/২৭৭, সনদ ছহীহ।
[১০]. ছহীহ মুসলিম হা/২৭।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/৩১; মিশকাত, হা/৩৯।