সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০২:৩৭ অপরাহ্ন

ফাযায়েলে তাওহীদ

-মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘আবীলান
-অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ


(৭ম কিস্তি)

ছবর তথা ধৈর্য ধারণের ফযীলত, নিশ্চয় তা সাহায্য ও সফলতার চাবিকাঠি

মহান আল্লাহ বলেন,   وَ اصۡبِرۡ وَمَا صَبۡرُکَ  اِلَّا بِاللّٰہِ ‘আর আপনি ধৈর্যধারণ করুন। আপনার ধৈর্য তো হবে শুধু আল্লাহর তাওফীকেই’ (সূরা আন-নাহল : ১২৭)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اسۡتَعِیۡنُوۡا بِالصَّبۡرِ وَ الصَّلٰوۃِ  وَ اِنَّہَا لَکَبِیۡرَۃٌ اِلَّا عَلَی الۡخٰشِعِیۡنَ

‘আর তোমরা ধৈর্য ও ছালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও। নিশ্চয় তা বিনয়ী ব্যতীত অন্যদের উপর কঠিন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৪৫)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ بِشَیۡءٍ مِّنَ الۡخَوۡفِ وَ الۡجُوۡعِ وَ نَقۡصٍ مِّنَ الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَنۡفُسِ وَ الثَّمَرٰتِ  وَ بَشِّرِ الصّٰبِرِیۡنَ

‘এবং নিশ্চয় আমরা তোমাদেরকে ভয়, ক্ষুধা এবং ধন ও প্রাণ এবং ফল শস্যের অভাবের দ্বারা পরীক্ষা করবো এবং ঐসব ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ প্রদান করুন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৫)। মহান আল্লাহ বলেন,

فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوۡتُ بِالۡجُنُوۡدِ  قَالَ  اِنَّ اللّٰہَ مُبۡتَلِیۡکُمۡ بِنَہَرٍ فَمَنۡ شَرِبَ مِنۡہُ فَلَیۡسَ مِنِّیۡ وَ مَنۡ لَّمۡ یَطۡعَمۡہُ فَاِنَّہٗ مِنِّیۡۤ  اِلَّا مَنِ اغۡتَرَفَ غُرۡفَۃًۢ بِیَدِہٖ  فَشَرِبُوۡا مِنۡہُ اِلَّا قَلِیۡلًا مِّنۡہُمۡ  فَلَمَّا جَاوَزَہٗ ہُوَ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مَعَہٗ   قَالُوۡا  لَا طَاقَۃَ لَنَا الۡیَوۡمَ بِجَالُوۡتَ وَ جُنُوۡدِہٖ  قَالَ الَّذِیۡنَ یَظُنُّوۡنَ اَنَّہُمۡ مُّلٰقُوا اللّٰہِ کَمۡ مِّنۡ فِئَۃٍ قَلِیۡلَۃٍ غَلَبَتۡ فِئَۃً  کَثِیۡرَۃًۢ بِاِذۡنِ اللّٰہِ  وَ اللّٰہُ مَعَ  الصّٰبِرِیۡنَ

‘অতঃপর যখন তালুত সৈন্যবাহিনী নিয়ে বের হল, তখন বলল, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদেরকে একটি নদী দ্বারা পরীক্ষা করবেন। অতএব যে তা হতে পান করবে, সে আমার দলভুক্ত নয়। আর যে তা খাবে না, তাহলে নিশ্চয় সে আমার দলভুক্ত। তবে যে তার হাত দিয়ে এক আঁজলা পরিমাণ খাবে, সে ব্যতীত। কিন্তু তাদের মধ্য থেকে স্বল্পসংখ্যক ব্যতীত তা থেকে তারা পান করল। অতঃপর যখন সে ও তার সাথী মুমিনগণ তা অতিক্রম করল, তারা বলল, আজ আমাদের জালুত ও তার সৈন্যবাহিনীর সাথে লড়াই করার ক্ষমতা নেই। যারা দৃঢ় ধারণা রাখত যে, তারা আল্লাহর সাথে মিলিত হবে, তারা বলল, কত ছোট দল আল্লাহর হুকুমে বড় দলকে পরাজিত করেছে! আর আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৪৯)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ لَنَبۡلُوَنَّکُمۡ  حَتّٰی نَعۡلَمَ الۡمُجٰہِدِیۡنَ مِنۡکُمۡ وَ الصّٰبِرِیۡنَ  وَ نَبۡلُوَا۠ اَخۡبَارَکُمۡ

‘আর আমরা অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব যতক্ষণ না আমরা প্রকাশ করে দেই তোমাদের মধ্যে কারা জিহাদকারী ও ধৈর্যশীল এবং আমরা তোমাদের কথা-কাজ পরীক্ষা করে নেব’  (সূরা মুহাম্মাদ : ৩১)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مَا یُلَقّٰہَاۤ  اِلَّا الَّذِیۡنَ صَبَرُوۡا  وَ مَا یُلَقّٰہَاۤ  اِلَّا  ذُوۡحَظٍّ  عَظِیۡمٍ

‘আর এটি তারাই প্রাপ্ত হবে যারা ধৈর্যধারণ করবে, আর এর অধিকারী তারাই হয় কেবল যারা মহাভাগ্যবান’ (সূরা ফুছছিলাত : ৩৫)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اَوۡرَثۡنَا الۡقَوۡمَ  الَّذِیۡنَ کَانُوۡا یُسۡتَضۡعَفُوۡنَ  مَشَارِقَ  الۡاَرۡضِ وَ مَغَارِبَہَا الَّتِیۡ  بٰرَکۡنَا فِیۡہَا  وَ تَمَّتۡ کَلِمَتُ رَبِّکَ الۡحُسۡنٰی عَلٰی بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ  بِمَا صَبَرُوۡا  وَ دَمَّرۡنَا مَا کَانَ یَصۡنَعُ فِرۡعَوۡنُ وَ قَوۡمُہٗ  وَ مَا کَانُوۡا  یَعۡرِشُوۡنَ

‘আর যে জাতিকে দুর্বল মনে করা হত আমরা তাদেরকে যমীনের পূর্ব ও তার পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানালাম, যেখানে আমরা বরকত দিয়েছি এবং বনী ইসরাঈলের উপর আপনার রবের উত্তম বাণী পরিপূর্ণ হল। কারণ তারা ধৈর্য ধারণ করেছে। আর ধ্বংস করে দিলাম যা কিছু তৈরি করেছিল ফির‘আওন ও তার কওম এবং তারা যা নির্মাণ করেছিল’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ১৩৭)।

عَنْ أَبِيْ سَعِيْدِ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ إِنَّ أُنَاسًا مِّنَ الْأَنْصَارِ سَأَلُوْا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَفَأَعْطَاهُمْ ثُمَّ سَأَلُوْهُ فَأَعْطَاهُمْ حَتَّى نَفِدَ مَا عِنْدَهُ. فَقَالَ مَا يَكُوْنُ عِنْدِيْ مِنْ خَيْرٍ فَلَنْ أَدَّخِرَهُ عَنْكُمْ وَمَنْ يَّسْتَعِفَّ يُعِفَّهُ اللهُ وَمَنْ يَّسْتَغْنِ يُغْنِهِ اللهُ وَمَنْ يَّتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللهُ وَمَا أُعْطِيَ أَحَدٌ عَطَاءً هُوَ خَيْرٌ وَأَوْسَعُ مِنَ الصَّبْرِ
৬৮). আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনছারদের কর্তৃক লোক রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট কিছু চাইল এবং রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে দিলেন। অতঃপর তারা আবার চাইল, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদেরকে আবার দিলেন। এমনকি তাঁর নিকট যা ছিল তা শেষ হয়ে গেল। এ সময় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আমার নিকট যে মাল থাকে আমি তা তোমাদেরকে না দিয়ে কখনও জমা করে রাখি না। (কিন্তু মনে রেখ) যে চাওয়া হতে বেঁচে থাকতে চায়, আল্লাহ তাকে বেঁচে থাকার উপায় করে দেন এবং যে কারো মুখাপেক্ষী না হয়ে থাকতে চায় আল্লাহ তাকে কারো মুখাপেক্ষী না করেই রাখেন। আর যে র্ধৈয ধারণ করতে চায় আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণ করার তাওফীক্ব প্রদান করেন। মনে রেখ ধৈর্য অপেক্ষা উত্তম ও প্রশস্ততর কোন দান কেউ লাভ করতে পারে না’।[১]
---------

عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَرَّ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِامْرَأَةٍ تَبْكِيْ عِنْدَ قَبْرٍ فَقَالَ اتَّقِي اللهَ وَاصْبِرِيْ قَالَتْ إِلَيْكَ عَنِّي فَإِنَّكَ لَمْ تُصَبْ بِمُصِيْبَتِيْ وَلَمْ تَعْرِفْهُ فَقِيْلَ لَهَا إِنَّهُ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَتْ بَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمْ تَجِدْ عِنْدَهُ بَوَّابِيْنَ فَقَالَتْ لَمْ أَعْرِفْكَ فَقَالَ إِنَّمَا الصَّبْرُ عِنْدَ الصَّدْمَةِ الْأُوْلٰى
৬৯). আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কবরের পার্শ্বে কাঁদছিল এমন এক মহিলার নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আল্লাহকে ভয় কর এবং ধৈর্য ধর’! তখন মহিলা বলল, আমর নিকট হতে চলে যান, কেননা আমার এ বিপদ আপনার উপর আপতিত হয়নি। সে তাঁকে চিনতে পারেনি। অতঃপর তাকে বলা হল, তিনি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। সে নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরজায় আসল এবং তিনি তার নিকট কোন পাহারাদার পেলেন না। অতঃপর সে বলল, আমি আপনাকে চিনতে পারিনি। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘প্রকৃত ধৈর্য হল বিপদের প্রথম সময়’।[২]
--------

عَنْ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَسَمَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قِسْمَةً كَبَعْضِ مَا كَانَ يَقْسِمُ فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ وَاللهِ إِنَّهَا لَقِسْمَةٌ مَا أُرِيْدَ بِهَا وَجْهُ اللهِ قُلْتُ أَمَّا أَنَا لَأَقُوْلَنَّ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَتَيْتُهُ وَهُوَ فِي أَصْحَابِهِ فَسَارَرْتُهُ فَشَقَّ ذَلِكَ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَتَغَيَّرَ وَجْهُهُ وَغَضِبَ حَتَّى وَدِدْتُ أَنِّي لَمْ أَكُنْ أَخْبَرْتُهُ ثُمَّ قَالَ قَدْ أُوْذِيَ مُوْسَى بِأَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ فَصَبَرَ
৭০). আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) গণীমতের মাল বণ্টন করলেন। তখন এক আনছারী ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! এ বণ্টনে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করা হয়নি। তখন আমি বললাম, জেনে রেখো, অবশ্যই আমি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এ কথা বলব। সুতরাং আমি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে আসলাম। তখন তিনি তাঁর ছাহাবীগণের মধ্যে ছিলেন। এজন্য তাঁর কাছে কথাটা চুপে চুপে বললাম। এ কথাটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে খুবই কষ্টদায়ক মনে হল, তাঁর চেহারার রং বদলে গেল এবং তিনি এতই রাগান্বিত হলেন যে, আমি ভাবলাম, হায়! যদি আমি তাঁর কাছে এ খবর না দিতাম, তবে কতই না ভাল হত! এরপর তিনি বললেন, ‘মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে এর চেয়েও অধিক কষ্ট দেয়া হয়েছে। তারপরও তিনি ধৈর্যধারণ করেছেন’।[৩]
--------

عَنْ سَالِمٍ أَبِي النَّضْرِ مَوْلَى عُمَرَ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ وَكَانَ كَاتِبًا لَهُ قَالَ كَتَبَ إِلَيْهِ عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِيْ أَوْفَى رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا فَقَرَأْتُهُ إِنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِيْ بَعْضِ أَيَّامِهِ الَّتِي لَقِيَ فِيْهَا انْتَظَرَ حَتَّى مَالَتِ الشَّمْسُ ثُمَّ قَامَ فِي النَّاسِ خَطِيْبًا قَالَ أَيُّهَا النَّاسُ لَا تَتَمَنَّوْا لِقَاءَ الْعَدُوِّ وَسَلُوا اللهَ الْعَافِيَةَ فَإِذَا لَقِيْتُمُوْهُمْ فَاصْبِرُوْا وَاعْلَمُوْا أَنَّ الجَنَّةَ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوفِ ثُمَّ قَالَ اَللَّهُمَّ مُنْزِلَ الْكِتَابِ وَمُجْرِيَ السَّحَابِ وَهَازِمَ الْأَحْزَابِ اهْزِمْهُمْ وَانْصُرْنَا عَلَيْهِمْ
৭১). ওমর ইবনু উবাইদুল্লাহর আযাদকৃত গোলাম ও তার কাতিব সালিম আবূ নাযর (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আব্দুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তার মনিবের নিকট পত্র লিখেন যা আমি পাঠ করলাম, তাতে ছিল যে, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কোন এক অভিযানে শত্রু পক্ষের মুখোমুখি হয়ে অপেক্ষায় থাকলেন, অবশেষে যখন সূর্য ঢলে পড়ল, তখন তিনি লোকদের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে লোকসকল! শত্রুর মোকাবিলার আকাঙ্খা কর না; বরং আল্লাহর কাছে নিরাপত্তার প্রার্থনা কর। তবে মোকাবিলা সংঘটিত হয়ে গেলে তখন ধৈর্যধারণ কর এবং জেনে রাখ, তলোয়ারের ছায়ার নিচেই জান্নাত রয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু‘আ করলেন, হে আল্লাহ! কিতাব নাযিলকারী, মেঘমালা পরিচালনকারী এবং শত্রুদলকে পরাস্তকারী! আপনি তাদেরকে পরাস্ত করে দিন এবং তাদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন’।[৪]
--------

عَنْ أَبِىْ مَالِكِ الْأَشْعَرِىِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الطُّهُوْرُ شَطْرُ الْإِيْمَانِ وَالْحَمْدُ لِلهِ تَمْلَأُ الْمِيْزَانَ وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ تَمْلَآنِ أَوْ تَمْلَأُ مَا بَيْنَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ وَالصَّلَاةُ نُوْرٌ وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ كُلُّ النَّاسِ يَغْدُوْ فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوْبِقُهَا
৭২). আবূ মালিক আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক (اَلْحَمْدُ لِلهِ) ‘আল-হামদুলিল্লা-হ’ মীযানের পাল্লা পূর্ণ করে দেয় এবং  (سُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ) ‘সুবহানাল্লা-হি ওয়াল হামদুলিল্লা-হি’ নেকীতে পরিপূর্ণ করে দেয় অথবা আসমান ও যমীনসমূহের ফাঁকা স্থান পূর্ণ করে দেয়। ছালাত হল জ্যোতি, দান হল দলীল, ধৈর্য হল উজ্জ্বলতা, কুরআন তোমার পক্ষের অথবা বিপক্ষের প্রমাণ। প্রত্যেক মানুষ সকালে উঠে নিজেকে ক্রয়-বিক্রয় করে। অতঃপর সে নিজেকে জাহান্নাম থেকে মুক্ত করে অথবা নিজেকে ধ্বংস করে’।[৫]
--------

عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيْدٍ قَالَ سَمِعْتُ أَنَسًا رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَرَادَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يُقْطِعَ مِنَ البَحْرَيْنِ فَقَالَتِ الْأَنْصَارُ حَتَّى تُقْطِعَ لِإِخْوَانِنَا مِنَ المُهَاجِرِيْنَ مِثْلَ الَّذِيْ تُقْطِعُ لَنَا قَالَ سَتَرَوْنَ بَعْدِيْ أَثَرَةً فَاصْبِرُوْا حَتَّى تَلْقَوْنِيْ.
৭৩). ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনছারদেরকে বাহরাইনে কিছু জায়গীর দিতে চাইলেন। তারা বলল, আমাদের মুহাজির ভাইদেরও আমাদের মত জায়গীর না দেয়া পর্যন্ত আমাদের জন্য জায়গীর দিবেন না। তিনি বলেন, ‘আমার পরে শীঘ্রই তোমরা দেখবে, তোমাদের উপর অন্যদেরকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে। তখন তোমরা ধৈর্যধারণ করবে, যে পর্যন্ত না তোমরা আমার সঙ্গে মিলিত হও’।[৬]
--------
আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ফযীলত, নিশ্চয় তা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হওয়ার কারণ

মহান আল্লাহ বলেন, 

وَ اِذۡ  تَاَذَّنَ  رَبُّکُمۡ  لَئِنۡ شَکَرۡتُمۡ لَاَزِیۡدَنَّکُمۡ  وَ لَئِنۡ کَفَرۡتُمۡ  اِنَّ عَذَابِیۡ لَشَدِیۡدٌ

‘আর যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয় আমার আযাব বড় কঠিন’ (সূরা ইবরাহীম : ৭)।

মহান আল্লাহ বলেন, فَاذۡکُرُوۡنِیۡۤ اَذۡکُرۡکُمۡ  وَ اشۡکُرُوۡا لِیۡ وَ لَا تَکۡفُرُوۡنِ ‘অতএব, তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। আর আমার শোকর আদায় কর, আমার সাথে কুফরী করো না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫২)।

মহান আল্লাহ বলেন, مَا یَفۡعَلُ اللّٰہُ بِعَذَابِکُمۡ  اِنۡ شَکَرۡتُمۡ وَ اٰمَنۡتُمۡ  وَ کَانَ اللّٰہُ شَاکِرًا عَلِیۡمًا ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও ও বিশ্বাস স্থাপন কর তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে আযাব দিয়ে কী করবেন? আল্লাহ গুণগ্রাহী, মহাজ্ঞানী’ (সূরা আন-নিসা : ১৪৭)।

মহান আল্লাহ বলেন, اِنَّا ہَدَیۡنٰہُ  السَّبِیۡلَ  اِمَّا شَاکِرًا وَّ اِمَّا کَفُوۡرًا  ‘অবশ্যই আমরা তাকে পথ প্রদর্শন করেছি, হয় সে কৃতজ্ঞ হবে অথবা অকৃতজ্ঞ হবে’ (সূরা আল-ইনসান : ৩)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ کَذٰلِکَ فَتَنَّا بَعۡضَہُمۡ بِبَعۡضٍ لِّیَقُوۡلُوۡۤا اَہٰۤؤُلَآءِ مَنَّ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ مِّنۡۢ بَیۡنِنَا  اَلَیۡسَ اللّٰہُ  بِاَعۡلَمَ بِالشّٰکِرِیۡنَ

‘আর এভাবেই আমরা একজন দ্বারা অপরজনকে পরীক্ষা করেছি, যাতে তারা বলে, এরাই কি (ঐসব লোক), আমাদের মধ্য থেকে যাদের উপর আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন? আল্লাহ কি কৃতজ্ঞদের ব্যাপারে পূর্ণ জ্ঞাত নন?’ (সূরা আল-আন‘আম : ৫৩)। মহান আল্লাহ বলেন,

قَالَ الَّذِیۡ عِنۡدَہٗ  عِلۡمٌ  مِّنَ  الۡکِتٰبِ اَنَا اٰتِیۡکَ بِہٖ قَبۡلَ  اَنۡ یَّرۡتَدَّ اِلَیۡکَ طَرۡفُکَ فَلَمَّا رَاٰہُ مُسۡتَقِرًّا عِنۡدَہٗ  قَالَ ہٰذَا مِنۡ فَضۡلِ رَبِّیۡ   لِیَبۡلُوَنِیۡۤ  ءَاَشۡکُرُ اَمۡ  اَکۡفُرُ  وَ مَنۡ شَکَرَ فَاِنَّمَا یَشۡکُرُ  لِنَفۡسِہٖ  وَ مَنۡ  کَفَرَ  فَاِنَّ رَبِّیۡ غَنِیٌّ  کَرِیۡمٌ

‘যার কাছে কিতাবের এক বিশেষ জ্ঞান ছিল সে বলল, আমি চোখের পলক পড়ার পূর্বেই তা আপনার নিকট নিয়ে আসব। অতঃপর যখন সুলায়মান তা তার সামনে স্থির দেখতে পেলেন, তখন তিনি বললেন, এটি আমার রবের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করেন যে, আমি কি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি না কি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। আর যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে তো তার নিজের কল্যাণেই তা করে, আর যে কেউ অকৃতজ্ঞ হবে। তবে নিশ্চয় আমার রব অভাবমুক্ত, অধিক দাতা’ (সূরা আন-নামল : ৪০)। মহান আল্লাহ বলেন, 

ثُمَّ لَاٰتِیَنَّہُمۡ مِّنۡۢ بَیۡنِ اَیۡدِیۡہِمۡ وَ مِنۡ خَلۡفِہِمۡ  وَ عَنۡ اَیۡمَانِہِمۡ وَ عَنۡ شَمَآئِلِہِمۡ  وَ لَا  تَجِدُ اَکۡثَرَہُمۡ شٰکِرِیۡنَ

‘অতঃপর আমরা (পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে) তাদের সম্মুখ দিয়ে, পিছন দিয়ে, ডান দিক দিয়ে এবং বাম দিক দিয়ে তাদের কাছে আসবো, আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞরূপে পাবেন না’ (সূরা আল-‘আরাফ : ১৭)। মহান আল্লাহ বলেন,

یَعۡمَلُوۡنَ لَہٗ  مَا یَشَآءُ  مِنۡ مَّحَارِیۡبَ وَ تَمَاثِیۡلَ وَ جِفَانٍ کَالۡجَوَابِ وَ قُدُوۡرٍ رّٰسِیٰتٍ  اِعۡمَلُوۡۤا  اٰلَ دَاوٗدَ شُکۡرًا  وَ قَلِیۡلٌ  مِّنۡ عِبَادِیَ  الشَّکُوۡرُ

‘তারা সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী তাঁর জন্য প্রাসাদ, ভাস্কর্য, হাউজ সদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং সুদৃঢ়ভাবে স্থাপিত বৃহদাকার ডেগ নির্মাণ করত (আমরা বলেছিলাম) হে দাউদ পরিবার! কৃতজ্ঞতার সাথে তোমরা কাজ করতে থাকো। আমার কৃতজ্ঞ বান্দা খুবই কম’ (সূরা সাবা : ১৩)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ وَصَّیۡنَا  الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ حَمَلَتۡہُ  اُمُّہٗ  وَہۡنًا عَلٰی وَہۡنٍ وَّ فِصٰلُہٗ  فِیۡ عَامَیۡنِ  اَنِ اشۡکُرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیۡکَ  اِلَیَّ  الۡمَصِیۡرُ

‘আর আমরা মানুষকে তার মাতা-পিতার ব্যাপারে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করেছে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতা-মাতার শুকরিয়া আদায় কর’ (সূরা লুক্বমান : ১৪)।

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ اللهَ تَعَالَى لَيَرْضَى عَنِ الْعَبْدِ أَنْ يَّأْكُلَ الْأَكْلَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهِ أَوْ يَشْرَبَ الشَّرْبَةَ فَيَحْمَدَهُ عَلَيْهَا.
৭৪). আনাস ইবনে মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা তাঁর সেই বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হন, যে এক লোকমা খাদ্য খেয়ে তাঁর প্রশংসা করে অথবা এক ঢোক পানি পান করে তাঁর শুকরিয়া আদায় করে’।[৭]
--------

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الطَّاعِمُ الشَّاكِرُ بِمَنْزِلَةِ الصَّائِمِ الصَّابِرِ
৭৫). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘খাবার খেয়ে শুকরিয়া আদায়কারী ধৈর্যশীল ছওমপালনকারীর ন্যায়’।[৮]
--------

عَنْ صُهَيْبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَجَبًا لِأَمْرِ الْمُؤْمِنِ كُلِّهِ خَيْرٌ وَلَيْسَ ذَلِكَ لِأَحَدٍ إِلَّا لِلْمُؤْمِنِ إِنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ وَإِنْ أَصَابَتْهُ ضَرَّاءُ صَبَرَ فَكَانَ خَيْرًا لَهُ
৭৬). সুহাইব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ঈমানদারের ব্যাপারটাই অদ্ভুত। বস্তুত তার প্রতিটি কাজই কল্যাণকর। আর এটা একমাত্র মুমিনদেরই বৈশিষ্ট্য। তার স্বচ্ছলতা অর্জিত হলে সে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, এটা তার জন্য কল্যাণকর। তার উপর কোন বিপদ আসলে সে ধৈর্যধারণ করে, এটাও তার জন্য কল্যাণকর’।[৯]
--------

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ وَلَيْلَةٍ فَإِذَا هُوَ بِأَبِيِ بَكْرٍ وَعُمَرَ فَقَالَ مَا أَخْرَجَكُمَا مِنْ بُيُوْتِكُمَا هَذِهِ السَّاعَةَ؟ قَالَا الْجُوْعُ قَالَ وَأَنَا وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَأَخْرَجَنِي الَّذِيْ أَخْرَجَكُمَا قُوْمُوْا فَقَامُوْا مَعَهُ فَأَتَى رَجُلًا مِنَ الْأَنْصَارِ فَإِذَا هُوَ لَيْسَ فِيْ بَيْتِهِ فَلَمَّا رَأَتْهُ الْمَرْأْةُ قَالَتْ مَرْحَبًا وَأَهْلًا فَقَالَ لَهَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيْنَ فُلَانٌ؟ قَالَتْ ذَهَبَ يَسْتَعْذِبُ لَنَا مِنَ الْمَاءِ إِذْ جَاءَ الْأَنْصَارِيُّ فَنَظَرَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَاحِبَيْهِ ثُمَّ قَالَ الْحَمْدُ لِلهِ مَا أَحَدٌ الْيَوْمَ أَكْرَمَ أَضْيَافًا مِنِّيْ قَالَ فَانطَلَقَ فَجَاءَهُمْ بِعِذْقٍ فِيْهِ بُسْرٌ وَتَمْرٌ وَرُطَبٌ فَقَالَ كُلُوْا مِنْ هَذِهِ وَأَخَذَ الْمُدْيَةَ فَقَالَ لَهُ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِيَّاكَ وَالْحَلُوْبَ فَذَبَحَ لَهُمْ فَأَكَلُوْا مِنَ الشَّاةِ وَمِنْ ذَلِكَ الْعِذْقِ وَشَرِبُوْا فَلَمَّا أَنْ شَبِعُوْا وَرَوُوْا قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِأَبِيْ بَكْرٍ وَعُمَرَ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَتُسْأَلُنَّ عَنْ هَذَا النَّعِيْمِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَخْرَجَكُمْ مِنْ بُيُوْتِكُمُ الْجُوْعُ ثُمَّ لَمْ تَرْجِعُوْا حَتَّى أَصَابَكُمْ هَذَا النَّعِيْمُ
৭৭). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, কোন একটি দিনে বা রাত্রিতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়েই আবূ বকর ও ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে দেখতে পেলেন। তিনি বললেন, কোন্ জিনিসে তোমাদের উভয়কে এই মুহূর্তে ঘর হতে বের হয়ে আসতে বাধ্য করেছে? তাঁরা উভয়ে বললেন, ক্ষুধা। তখন তিনি বললেন, সেই মহান সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! যে জিনিস তোমাদের দু’জনকে বের করেছে আমাকেও সেই জিনিস বাইরে বের করেছে। অতঃপর তিনি বললেন, উঠ। তারা সবাই রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সঙ্গে চললেন এবং জনৈক আনছারীর বাড়ীতে আসলেন। তখন তিনি তার ঘরে ছিলেন না। অতঃপর যখন আনছারীর স্ত্রী রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে দেখতে পেলেন, তখন তিনি তাঁকে সাদর সম্ভাষণ জানালেন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, অমুক (তথা তার স্বামী) কোথায়? সে বলল, তিনি আমাদের জন্য মিঠা পানি নিয়ে আসার জন্য গেছেন। এমতাবস্থায় আনছারী এসে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সঙ্গীদ্বয়কে দেখলেন এবং বললেন, আল-হামদুলিল্লাহ! সকল প্রশংসা মহান আল্লাহর জন্য। আজকের দিনে আমার মত সম্মানিত মেহমানের সৌভাগ্য লাভকারী আর কেউই নেই। বর্ণনাকারী বলেন, এ কথা বলে তিনি চলে গেলেন এবং একটি ডাল সঙ্গে নিয়ে আসলেন, যাতে পাকা, শুকনা ও কাঁচা খেজুর ছিল। অতঃপর তিনি বললেন, এগুলো হতে খান। একথা বলে তিনি একটি ছুরি নিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে তাকে বললেন, সাবধান! দুধওয়ালা বকরী যবহ্ করবে না। অতঃপর আনছারী লোকটি একটি বকরী যবহ্ করলেন। অতঃপর তাঁরা সবাই বকরীর গোশত এবং খেজুরের ছড়া হতে খেতে লাগলেন এবং পানি পান করলেন। তারপর যখন তাঁরা পরিতৃপ্ত হলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আবূ বকর ও ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বললেন, ‘সেই মহান সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে! ক্বিয়ামতের দিন এ নে‘মতের ব্যাপারে তোমাদেরকে জিজ্ঞাসিত হতে হবে। ক্ষুধা তোমাদেরকে তোমাদের বাড়ী থেকে বের করেছিল। অতঃপর ঘরে ফিরে যাওয়ার পূর্বেই তোমরা এ সমস্ত নে‘মত লাভ করলে’।[১০]
--------

عَنْ مُعَاذِ بْنِ جَبَلٍ أَنَّ رَسُوْلَ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَخَذَ بِيَدِهِ وَقَالَ يَا مُعَاذُ، وَاللهِ إِنِّيْ لَأُحِبُّكَ وَاللهِ إِنِّي لَأُحِبُّكَ فَقَالَ أُوصِيْكَ يَا مُعَاذُ لَا تَدَعَنَّ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ تَقُوْلُ اَللّٰهُمَّ أَعِنِّيْ عَلَى ذِكْرِكَ وَشُكْرِكَ وَحُسْنِ عِبَادَتِكَ
৭৮).  মু‘আয ইবনু জাবাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, একদা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার হাত ধরে বললেন, ‘হে মু‘আয! আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি, আল্লাহর শপথ! আমি অবশ্যই তোমাকে ভালবাসি। তিনি বললেন, হে মু‘আয! আমি তোমাকে অছীয়ত করছি, তুমি প্রত্যেক ছালাতের পর এ দু‘আটি কখনো পরিহার করবে না। তুমি বলবে, ‘আল্লাহুম্মা আঈন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুকরিকা ওয়া হুসনি ইবাদাতিকা’ (অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার স্মরণে, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশে এবং আপনার উত্তম ‘ইবাদতে আমাকে সাহায্য করুন)। [১১]

(চলবে ইনশাআল্লাহ)

*এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। 

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪৬৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৫৩; মিশকাত, হা/১৮৪৪।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/১২৮৩; ছহীহ মুসলিম, হা/৯২৬; মিশকাত, হা/১৭২৮।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৬১০০; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৬২।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯৬৫, ২৯৬৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৪২; মিশকাত হা/৩৯৩০।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২২৩; মিশকাত, হা/২৮১।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/২৩৭৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৫।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৩৪; মিশকাত, হা/৪২০০।
[৮]. তিরমিযী, হা/২৪৮৬; সনদ ‘ছহীহ’; মিশকাত, হা/৪২০৫।
[৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৯৯; মিশকাত, হা/৫২৯৭।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০৩৮।
[১১]. আবূ দাউদ, হা/১৫২২; সনদ ‘ছহীহ’।




ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে জিহাদ (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : শাস্তি প্রয়োগ ও অন্যান্য বিধান - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৪তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : আহার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : বিবাহ ও এ সংক্রান্ত বিষয়াদীর ফযীলত - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছাদাক্বাহ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : আহার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৩তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
যিলহজ্জ মাসের আমল ও ফযীলত - মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ত্বাহারাত (৯ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ