বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২২ অপরাহ্ন

ফাযায়েলে জিহাদ

- মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান
- অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*


(৩য় কিস্তি)

আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা, মুজাহিদদের জন্য যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করা ও তাদের অবর্তমানে পরিবারকে দেখাশোনা করার ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

وَ لَا یُنۡفِقُوۡنَ نَفَقَۃً صَغِیۡرَۃً وَّ لَا کَبِیۡرَۃً  وَّ لَا یَقۡطَعُوۡنَ وَادِیًا اِلَّا کُتِبَ لَہُمۡ لِیَجۡزِیَہُمُ اللّٰہُ  اَحۡسَنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ

‘আর তারা স্বল্প কিংবা অধিক যা-ই ব্যয় করে এবং অতিক্রম করে যে প্রান্তরই, তা তাদের জন্য লিখে দেয়া হয়। যাতে তারা যা করত, আল্লাহ তাদেরকে তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেন’ (সূরা আত-তওবাহ : ১২১)। মহান আল্লাহ বলেন,

مَثَلُ الَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَہُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ کَمَثَلِ حَبَّۃٍ اَنۡۢبَتَتۡ سَبۡعَ سَنَابِلَ فِیۡ کُلِّ سُنۡۢبُلَۃٍ مِّائَۃُ حَبَّۃٍ وَ اللّٰہُ یُضٰعِفُ لِمَنۡ یَّشَآءُ  وَ اللّٰہُ  وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ

‘যারা আল্লাহর পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি বীজের মত, যা উৎপন্ন করল সাতটি শীষ, প্রতিটি শীষে রয়েছে একশ’ দানা। আর আল্লাহ যাকে চান তার জন্য বাড়িয়ে দেন। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৬১)।

 عَنْ خُرَيْمِ بْنِ فَاتِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ أَنْفَقَ نَفَقَةً فِيْ سَبِيْلِ اللهِ كُتِبَتْ بِسَبْعِمِائَةِ ضِعْفٍ

২৩. খুরায়ম ইবনু ফাতিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় কিছু ব্যয় করে, তার আমলনামায় সাতশ’ গুণ নেকি লেখা হয়।[১]
-----

 وَعَنْ زَيْدِ بْنِ خَالِدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ جَهَّزَ غَازِيًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَقَدْ غَزَا وَمَنْ خَلَفَ غَازِيًا فِيْ أَهْلِهِ فَقَدْ غَزَا

২৪. যায়েদ ইবনু খালেদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কোন মুজাহিদকে যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ করে তাকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে দেয়, সে নিজেই যেন জিহাদে অংশগ্রহণ করল। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর পথের কোন মুজাহিদের অনুপস্থিতিতে তার পরিবার পরিজনকে উত্তমরূপে দেখাশোনা করে, সেও যেন নিজেই জিহাদে অংশগ্রহণ করল।[২]
-----

وَعَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ بَعَثَ إِلَى بَنِيْ لَحْيَانَ لِيَخْرُجْ مِنْ كُلِّ رَجُلَيْنِ رَجُلٌ ثُمَّ قَالَ لِلْقَاعِدِ أَيُّكُمْ خَلَفَ الْخَارِجَ فِيْ أَهْلِهِ وَمَالِهِ بِخَيْرٍ كَانَ لَهُ مِثْلُ نِصْفِ أَجْرِ الْخَارِجِ

২৫. আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, একদা নবী করীম (ﷺ) লাহইয়ান গোত্রের বিরুদ্ধে একটি বাহিনী প্রেরণ করলেন। তখন তিনি বললেন, প্রতি দু’ব্যক্তির মধ্যে একজন অবশ্যই (যুদ্ধে) বেরিয়ে যাওয়া উচিত। তারপর তিনি বাড়ীতে অবস্থানকারীদেরকে বললেন, তোমাদের মধ্যকার যে কেউ যুদ্ধে গমনকারীর পরিবার-পরিজন ও তার সহায়-সম্পদের দেখাশুনা করবে সেও যুদ্ধে গমনকারীর অর্ধেক ছাওয়াব লাভ করবে।[৩]

লোক দেখানোর উদ্দেশ্য ছাড়া জিহাদের জন্য ঘোড়াকে বেধে রাখার ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

وَ الۡعٰدِیٰتِ ضَبۡحًا - فَالۡمُوۡرِیٰتِ قَدۡحًا- فَالۡمُغِیۡرٰتِ صُبۡحًا- فَاَثَرۡنَ بِہٖ نَقۡعًا- فَوَسَطۡنَ بِہٖ جَمۡعًا

‘হেৃসাধ্বনি তুলে ছুটে যাওয়া অশ্বরাজির শপথ। যারা ক্ষুরাঘাতে অগ্নি-স্ফুলিঙ্গ ছড়ায়। যারা প্রত্যুষে হানা দেয়। এবং সে সময়ে ধূলি উড়ায়। অতঃপর তখনই শত্রুদলের ভেতরে ঢুকে পড়ে’ (সূরা আল-আদিয়াত : ১-৫)।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ مَنِ احْتَبَسَ فَرَسًا فِيْ سَبِيْل اللهِ إِيْمَانًا بِاللهِ وَتَصْدِيْقًا بِوَعْدِهِ فَإِنَّ شِبَعَهُ وَرِيَّهُ وَرَوْثَهُ وبَوْلَهُ فِيْ مِيْزَانِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَعْنِيْ حَسَنَاتٍ

২৬. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি পূর্ণ ঈমান এবং তাঁর প্রতিশ্রুতির ওপর পূর্ণ বিশ্বাস রেখে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য ঘোড়া লালন-পালন করে, ক্বিয়ামতের দিন ঘোড়ার পরিতৃপ্ত খানা-পিনা, গোবর ও পেশাব ঐ ব্যক্তির ছওয়াবের পাল্লায় ওজন করা হবে।[৪]


وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قِيْلَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَالْخَيْلُ؟ قَالَ الْخَيْلُ ثَلَاثَةٌ هِيَ لِرَجُلٍ وِزْرٌ وَهِيَ لِرَجُلٍ سِتْرٌ وَهِيَ لِرَجُلٍ أَجْرٌ فَأَمَّا الَّتِيْ هِيَ لَهُ وِزْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا رِيَاءً وَفَخْرًا وَنِوَاءً عَلَى أَهْلِ الْإِسْلَامِ فَهِيَ لَهُ وِزْرٌ وَأَمَّا الَّتِيْ هِيَ لَهُ سِتْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ لَمْ يَنْسَ حَقَّ اللهِ فِيْ ظُهُوْرِهَا وَلَا رِقَابِهَا فَهِيَ لَهُ سِتْرٌ وَأَمَّا الَّتِيْ هِيَ لَهُ أَجْرٌ فَرَجُلٌ رَبَطَهَا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ لِأَهْلِ الْإِسْلَامِ فِيْ مَرْجٍ وَرَوْضَةٍ فَمَا أَكَلَتْ مِنْ ذَلِكَ الْمَرْجِ أَوِ الرَّوْضَةِ مِنْ شَيْءٍ إِلَّا كُتِبَ لَهُ عَدَدَ مَا أَكَلَتْ حَسَنَاتٌ وَكُتِبَ لَهُ عَدَدَ أَرْوَاثِهَا وَأَبْوَالِهَا حَسَنَاتٌ وَلَا تَقْطَعُ طِوَلَهَا فَاسْتَنَّتْ شَرَفًا أَوْ شَرَفَيْنِ إِلَّا كَتَبَ اللهُ لَهُ عَدَدَ آثَارِهَا وَأَوْرَاثِهَا حَسَنَاتٍ وَلَا مَرَّ بِهَا صَاحِبُهَا عَلَى نَهْرٍ فَشَرِبَتْ مِنْهُ وَلَا يُرِيْدُ أَنْ يَّسْقِيَهَا إِلَّا كَتَبَ اللهُ لَهُ عَدَدَ مَا شَرِبَتْ حَسَنَاتٍ

২৭. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (রাযিয়াল্লাহু আনহু)! ঘোড়ার (মালিকের) কী অবস্থা হবে? তিনি বললেন, ঘোড়া তিন প্রকার। ১. ঘোড়া তার মালিকের জন্য গুনাহের কারণ হয় ২. ঘোড়া তার মালিকের পক্ষে আবরণ স্বরূপ এবং ৩. ঘোড়া মালিকের জন্য ছাওয়াবের কারণ স্বরূপ। বস্তুত সে ঘোড়াই তার মালিকের জন্য বোঝা বা গুনাহের কারণ হবে, যা সে লোক দেখানোর জন্য, অহঙ্কার প্রকাশের জন্য এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে শত্রুতা করার উদ্দেশ্যে লালন-পালন করে। আর যে ব্যক্তি তার ঘোড়াকে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য লালন-পালন করে এবং এর পিঠে সওয়ার হওয়া এবং খাবার ও ঘাস দেয়ার ব্যাপারে আল্লাহর হক্ব ভুলে না, এ ঘোড়া তার দোষ-ক্রটি গোপন রাখার জন্য আবরণ হবে। আর যে ব্যক্তি মুসলিমদের সাহায্যের জন্য আল্লাহর রাস্তায় ঘোড়া লালন-পালন করে এবং কোন চারণভূমি ও ঘাসের বাগানে লালন-পালন করতে দেয় তার এ ঘোড়া তার জন্য ছাওয়াবের কারণ হবে। তার ঘোড়া চারণভূমি অথবা বাগানে যা কিছু খাবে তার সমপরিমাণ তার জন্য ছাওয়াব লেখা হবে। এমনকি এর গোবর ও পেশাবের সমপরিমাণ ছাওয়াব লেখা হবে। আর যদি তা রশি ছিঁড়ে একটি বা দু’টি মাঠেও বিচরণ করে তাহলে তার পদচিহ্ন ও গোবরের সমপরিমাণ নেকি তার জন্য লেখা হবে। এছাড়া মালিক যদি কোন নদীর তীরে নিয়ে যায়, আর সে নদী থেকে পানি পান করে অথচ তাকে পানি পান করানোর ইচ্ছা মালিকের ছিল না তথাপি পানির পরিমাণ তার আমলনামায় ছাওয়াব লেখা হবে।[৫]
-----

وَعَنْ رَجُلٍ مِنَ الْأَنْصَارِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ الْخَيْلُ ثَلَاثَةٌ فَرَسٌ يَرْبِطُهُ الرَّجُلُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فَثَمَنُهُ أَجْرٌ وَرُكُوْبُهُ أَجْرٌ وَعَارِيَتُهُ أَجْرٌ وَفَرَسٌ يُغَالِقُ عَلَيْهِ الرَّجُلُ وَيُرَاهِنُ فَثَمَنُهُ وِزْرٌ وَرُكُوْبُهُ وِزْرٌ وَفَرَسٌ لِلْبِطْنَةِ فَعَسَى أَنْ يَكُوْنَ سَدَادًا مِنَ الْفَقْرِ إِنْ شَاءَ اللهُ

২৮. জনৈক আনছারী ছাহাবী থেকে বর্ণিত, তিনি নবী করীম (ﷺ) থেকে এমর্মে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেছেন, ঘোড়া তিন রকমের হয়। ১. যে ঘোড়াকে মানুষ আল্লাহর রাস্তার ব্যবহারের জন্য লালন-পালন করে। ফলে তার মূল্যতে নেকী রয়েছে, আরোহণে নেকী রয়েছে, খাদ্য খাওয়ানোতে নেকী রয়েছে। ২. এক ধরনের ঘোড়া, যা দ্বারা জুয়া খেলে ও বাজি ধরে, তার মূল্যতে পাপ রয়েছে ও তাতে আরোহণে পাপ রয়েছে। ৩. আরেক প্রকার ঘোড়া রয়েছে, যাকে জীবিকার জন্য লালন-পালন করা হয়, আশা করা যায় এটি তার দারিদ্র্য দূর করবে ইনাশাআল্লাহ।[৬]
-----
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الْخَيْرُ مَعْقُوْدٌ بِنَوَاصِي الْخَيْلِ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَثَلُ الْمُنْفِقِ عَلَيْهَا كَالْمُتَكَفِّفِ بِالصَّدَقَةِ

২৯. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ক্বিয়ামত পর্যন্ত ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে বরকত ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে। এর পিছনে খরচকারী ব্যক্তির দৃষ্টান্ত আল্লাহর রাস্তায় ছাদাক্বাহকারীর ন্যায়।[৭]
-----
وَعَنْ أَبِيْ كَبْشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ صَاحِبَ النَّبِيِّ ﷺ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ الْخَيْلُ مَعْقُوْدٌ فِيْ نَوَاصِيْهَا الْخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَأَهْلُهَا مُعَانُوْنَ عَلَيْهَا وَالْمُنْفِقُ عَلَيْهَا كَالْبَاسِطِ يَدَهُ بِالصَّدَقَةِ

৩০. নবী করীম (ﷺ)-এর ছাহাবী আবূ কাবশাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে বরকত ও কল্যাণ নিহিত রয়েছে ক্বিয়ামত পর্যন্ত। তার প্রতি মালিকের খরচ ও সহযোগিতা ছাদাক্বাহ করার সমতুল্য।[৮]
-----
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ الْخَيْلُ مَعْقُوْدٌ فِيْ نَوَاصِيْهَا الْخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ.

৩১. ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে কল্যাণ রয়েছে কিয়ামত পর্যন্ত।[৯]
------
وَعَنْ جَرِيْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَلْوِيْ نَاصِيَةَ فَرَسٍ بِأَصْبَعِهِ وَهُوَ يَقُوْلُ الْخَيْلُ مَعْقُوْدٌ بِنَوَاصِيْهَا الْخَيْرُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ الْأَجْرُ وَالْغَنِيْمَةُ

৩২. জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে তাঁর হাতের আঙ্গুল দিয়ে একটি ঘোড়ার ললাটের কেশ বিন্যাস করতে দেখলাম আর তিনি তখন বলছিলেন, ঘোড়ার কপালের কেশগুচ্ছে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদান (ছাওয়াব) ও গনীমত।[১০]
-----
وَعَنْ أَبِيْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا مِنْ فَرَسٍ عَرَبِيٍّ إِلَّا يُؤْذَنُ لَهُ عِنْدَ كُلِّ سَحَرٍبِكَلِمَاتٍ يَدْعُوْ بِهِنَّ اللهم خَوَّلْتَنِيْ مَنْ خَوَّلْتَنِيْ مِنْ بَنِيْ آدَمَ وَجَعَلْتَنِيْ لَهُ فَاجْعَلْنِيْ أَحَبَّ أَهْلِهِ وَمَالِهِ أَوْ مِنْ أَحَبِّ مَالِهِ وَأَهْلِهِ إِلَيْهِ

৩৩. আবূ যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আরবী ঘোড়াকে প্রতি ভোর রাতে কতিপয় কালেমা দ্বারা দু‘আ করার অনুমতি দেয়া হয়। হে আল্লাহ! যে মানুষের হাতে আপনি আমাকে সোপর্দ করেছেন, আমাকে তার নিকট তার মালের এবং তার পরিবারের মধ্যে অধিক প্রিয় করে দিন, অথবা তিনি বলেছেন, তার মালের এবং পরিবারের অধিক প্রিয়দের অন্তর্ভূক্ত করে দিন।[১১]
-----
وَعَنِ  ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يُمْنُ الْخَيْلِ فِيْ شُقْرِهَا

৩৪. ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, লাল রং এর ঘোড়াসমূহে বরকত নিহিত রয়েছে।[১২]

জিহাদের ময়দানে সৎ আমল করার ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِذَا لَقِیۡتُمۡ فِئَۃً فَاثۡبُتُوۡا وَ اذۡکُرُوا اللّٰہَ کَثِیۡرًا لَّعَلَّکُمۡ  تُفۡلِحُوۡنَ

‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা কোন দলের মুখোমুখি হও, তখন অবিচল থাক, আর আল্লাহকে অধিক স্মরণ কর, যাতে তোমরা সফল হও’ (সূরা আল-আনফাল : ৪৫)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ لَا یُنۡفِقُوۡنَ نَفَقَۃً صَغِیۡرَۃً وَّ لَا کَبِیۡرَۃً  وَّ لَا یَقۡطَعُوۡنَ وَادِیًا اِلَّا کُتِبَ لَہُمۡ لِیَجۡزِیَہُمُ اللّٰہُ  اَحۡسَنَ مَا کَانُوۡا یَعۡمَلُوۡنَ

‘আর তারা স্বল্প কিংবা অধিক যা-ই ব্যয় করে এবং অতিক্রম করে যে প্রান্তরই, তা তাদের জন্য লিখে দেয়া হয়। যাতে তারা যা করত, আল্লাহ তাদেরকে তার চেয়ে উত্তম প্রতিদান দেন’ (সূরা আত-তওবাহ : ১২১)। মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا  الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا  لِمَ  تَقُوۡلُوۡنَ مَا لَا  تَفۡعَلُوۡنَ -کَبُرَ  مَقۡتًا عِنۡدَ  اللّٰہِ  اَنۡ  تَقُوۡلُوۡا مَا  لَا تَفۡعَلُوۡنَ- اِنَّ اللّٰہَ یُحِبُّ الَّذِیۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِہٖ  صَفًّا کَاَنَّہُمۡ  بُنۡیَانٌ  مَّرۡصُوۡصٌ

‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা তা কেন বল, যা তোমরা কর না?! তোমরা যা কর না, তা বলা আল্লাহর নিকট বড়ই ক্রোধের বিষয়। নিশ্চয় আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে যেন তারা শীশা ঢালা প্রাচীর’ (সূরা আছ-ছফ্ফ : ২-৪)।

وَعَنْ أَبِيْ عَبْسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ هُوَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنِ جَبْرٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَا اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ

৩৫. আবূ ‘আবস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আর তিনি হলেন, আব্দুর রহমান ইবনে জাব্র। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তির পদদ্বয় আল্লাহর পথে ধূলিমলিন হয় তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না।[১৩]
-----
وَعَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ  رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا مِنْ عَبْدٍ يَصُوْمُ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ إِلَّا بَاعَدَ اللهُ بِذَلِكَ الْيَوْمِ وَجْهَهُ عَنِ النَّارِ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا

৩৬. আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় এক দিনও ছিয়াম পালন করে, আল্লাহ তাঁর মুখম-লকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের রাস্তা দূরে সরিয়ে নেন।[১৪]
-----
وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ صَامَ يَوْمًا فِيْ سَبِيْلِ اللهِ جَعَلَ اللهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ خَنْدَقًا كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ

৩৭. আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে একদিন ছিয়াম পালন করবে আল্লাহ তা‘আলা সেই ব্যক্তি ও জাহান্নামের মাঝে একটি খন্দক সৃষ্টি করে দিবেন। যার প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের দূরত্বের পরিমাণ।[১৫]
-----
وَعَنْ أَبِيْ مَسْعُوْدٍ الْأنْصَارِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ بِنَاقَةٍ مَخْطُوْمَةٍ فَقَالَ هَذِهِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَكَ بِهَا يَوْمَ الْقِيَامَةِ سَبْعُمِائَةِ نَاقَةٍ كُلُّهَا مَخْطُوْمَةٌ

৩৮. আবূ মাসঊদ আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এক ব্যক্তি লাগাম সহকারে একটি উষ্ট্রী নিয়ে নবী করীম (ﷺ)-এর খেদমতে উপস্থিত হল এবং বলল, এটা আল্লাহর রাস্তায় দান করলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এর বিনিময়ে তুমি ক্বিয়ামতের দিন লাগামবিশিষ্ট সাতশ’ উষ্ট্রী লাভ করবে।[১৬]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. নাসাঈ, হা/৩১৮৬; তিরমিযী, হা/১৬২৫; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৬৪৭; মিশকাত, হা/৩৮২৬, সনদ  ছহীহ।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৪৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৯৫; মিশকাত, হা/৩৭৯৭।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৯৬।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৫৩; মিশকাত, হা/৩৮৬৮।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/৯৮৭; মিশকাত, হা/১৭৭৩।
[৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৬৪৫, সনদ ছহীহ।
[৭]. মুসনাদে আবী ইয়ালা, হা/৬০১৪; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৩০৮৮, সনদ ছহীহ।
[৮]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/১০৮৪; ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৪৬৭৪, সনদ ছহীহ।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৪৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৭১।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৭২।
[১১]. সুনান নাসাঈ, হা/৩৫৭৯, সনদ ছহীহ।
[১২]. আবূ দাঊদ, হা/২৫৪৫; তিরমিযী, হা/১৬৯৫, সনদ হাসান।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮১১।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৪০; ছহীহ মুসলিম, হা/১১৫৩।
[১৫]. তিরমিযী, হা/১৬২৪, সনদ হাসান ছহীহ।
[১৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৯২।




প্রসঙ্গসমূহ »: আমল দাওয়াত ও জিহাদ
ফাযায়েলে আমল : কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : আহার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ত্বাহারাত (১০ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৪র্থ কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৫তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৩য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৪তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল: ফাযায়েলে তাওহীদ (৭ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে হজ্জ ও ওমরাহ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ