কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত
-মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান
-অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*
ছালাত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یَتۡلُوۡنَ کِتٰبَ اللّٰہِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اَنۡفَقُوۡا مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ سِرًّا وَّ عَلَانِیَۃً یَّرۡجُوۡنَ تِجَارَۃً لَّنۡ تَبُوۡرَ
‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর কিতাব অধ্যয়ন করে, ছালাত কায়েম করে এবং আল্লাহ যে রিযিক দিয়েছেন তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারা এমন ব্যবসার আশা করতে পারে যা কখনো ধ্বংস হবে না’ (সূরা আল-ফাতির : ২৯)।
عَنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَرَأَ حَرْفًا مِنْ كِتَابِ اللهِ فَلَهُ بِهِ حَسَنَةٌ وَالْحَسَنَةُ بِعَشْرِ أَمْثَالِهَا لَا أَقُوْلُ آلم حَرْفٌ وَلَكِنْ أَلِفٌ حَرْفٌ وَلَامٌ حَرْفٌ وَمِيْمٌ حَرْفٌ
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কুরআনের কোন একটি হরফ পাঠ করবে, তার জন্য একটি নেকী রয়েছে। আর এক নেকী হচ্ছে দশগুণ। আমি বলছি না যে, আলিফ-লাম-মীম একটি হরফ। বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ এবং মীম একটি হরফ।[১]
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الْمَاهِرُ بِالْقُرْآنِ مَعَ السَّفَرَةِ الْكِرَامِ الْبَرَرَةِ وَالَّذِيْ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ وَيَتَتَعْتَعُ فِيْهِ وَهُوَ عَلَيْهِ شَاقٌّ لَهُ أَجْرَانِ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কুরআন পাঠে দক্ষ ব্যক্তি সম্মানিত লেখক ফেরেশতাদের সাথে থাকবেন। আর যে কুরআন পড়ে কিন্তু আটকায় এবং কুরআন পড়া তার পক্ষে খুব কষ্টদায়ক হয়, তাহলে তার জন্য দুইগুণ নেকী রয়েছে’।[২] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, وَالَّذِي يَقْرَأُ وَهُوَ يَشْتَدُّ عَلَيْهِ لَهُ أَجْرَانِ ‘আর যে ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত করে এবং তা তার জন্য কঠিন অনুভূত হয়, তার জন্য রয়েছে দ্বিগুণ ছওয়াব’।[৩]
عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ اَلْقُرْآنُ شَافِعٌ مُشَفِّعٌ وَمَاحِلٌ مُصَدِّقٌ مَنْ جَعَلَهُ أَمَامَهُ قَادَهُ إِلَى الْجَنَّةِ وَمَنْ جَعَلَهُ خَلْفَ ظَهْرِهِ سَاقَهُ إِلَى النَّارِ
জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, (ক্বিয়ামতের দিন) কুরআন তার তেলাওয়াতকারীর পক্ষে সুপারিশকারী, ঝগড়াকারী ও সত্যায়নকারী হবে। যে ব্যক্তি কুরআনকে তার সামনে রাখবে, তা তাকে জান্নাতের দিকে হাকিয়ে নিয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি কুরআনকে তার পশ্চাতে ফেলে রাখবে, তা তাকে জাহান্নামের দিকে হাকিয়ে নিয়ে যাবে।[৪]
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ يَجِيءُ صَاحِبُ الْقُرْآنِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَيَقُوْلُ الْقُرْآنُ يَا رَبِّ حَلِّهِ فَيُلْبَسُ تَاجَ الْكَرَامَةِ ثُمَّ يَقُوْلُ يَا رَبِّ زِدْهُ فَيُلْبَسُ حُلَّةَ الْكَرَامَةِ ثُمَّ يَقُوْلُ يَا رَبِّ ارْضَ عَنْهُ فَيَرْضَى عَنْهُ فَيُقَالُ لَهُ اقْرَأْ وَارْقَ وَيَزْدَادُ بِكُلِّ آيَةٍ حَسَنَةً
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন কুরআনের পাঠক উপস্থিত হবে। অতঃপর কুরআন বলবে, হে প্রভু! তাকে অলংকৃত করুন। তখন তাকে সম্মানের মুকুট পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে প্রভু! আরো দিন। তখন তাকে সম্মানের পোশাক পরানো হবে। সে আবার বলবে, হে প্রভু! তার উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান। তখন তিনি সন্তুষ্ট হবেন। তখন বলা হবে, পড় আর উপরে আরোহণ করতে থাক। এক একটি আয়াতের বদলায় এক একটি নেকী (মর্যাদা) বৃদ্ধি করে দেয়া হবে।[৫]
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَقُوْلُ الصِّيَامُ رَبِّ إِنِّيْ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّرَابَ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِيْ فِيْهِ وَيَقُوْلُ الْقُرْآنُ رَبِّ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِيْ فِيْهِ فَيُشَفَّعَانِ
আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ছিয়াম এবং কুরআন ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। ছিয়াম বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তাকে দিনে পনাহার হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কুরআন বলবে, হে প্রতিপালক! আমি তাকে রাত্রে নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। অতঃপর উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।[৬]
কুরআন নিয়ে গবেষণা করার ফযীলত, যা অন্তরকে বাঁচিয়ে রাখার চাবিকাঠি
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَفَلَا یَتَدَبَّرُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ وَ لَوۡ کَانَ مِنۡ عِنۡدِ غَیۡرِ اللّٰہِ لَوَجَدُوۡا فِیۡہِ اخۡتِلَافًا کَثِیۡرًا
‘তারা কি কুরআন নিয়ে গবেষণা করে না? আর যদি তা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো পক্ষ থেকে হত, তবে অবশ্যই তারা এতে অনেক বৈপরীত্য দেখতে পেত’ (সূরা আন-নিসা : ৮২)। মহান আল্লাহ বলেন,
اَفَلَا یَتَدَبَّرُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ اَمۡ عَلٰی قُلُوۡبٍ اَقۡفَالُہَا
‘তারা তবে কি কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা-ভাবনা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে? (সূরা মুহাম্মাদ : ২৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
اَلَمۡ یَاۡنِ لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اَنۡ تَخۡشَعَ قُلُوۡبُہُمۡ لِذِکۡرِ اللّٰہِ وَ مَا نَزَلَ مِنَ الۡحَقِّ وَ لَا یَکُوۡنُوۡا کَالَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ مِنۡ قَبۡلُ فَطَالَ عَلَیۡہِمُ الۡاَمَدُ فَقَسَتۡ قُلُوۡبُہُمۡ وَ کَثِیۡرٌ مِّنۡہُمۡ فٰسِقُوۡنَ
‘যারা ঈমান এনেছে তাদের হৃদয় কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য নাযিল হয়েছে তার কারণে বিগলিত হওয়ার সময় হয়নি? আর তারা যেন তাদের মত না হয়, যাদেরকে ইতোপূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারপর তাদের উপর দিয়ে দীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হল, অতঃপর তাদের অন্তরসমূহ কঠিন হয়ে গেল। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক’ (সূরা আল-হাদীদ : ১৬)।
اَللّٰہُ نَزَّلَ اَحۡسَنَ الۡحَدِیۡثِ کِتٰبًا مُّتَشَابِہًا مَّثَانِیَ تَقۡشَعِرُّ مِنۡہُ جُلُوۡدُ الَّذِیۡنَ یَخۡشَوۡنَ رَبَّہُمۡ ثُمَّ تَلِیۡنُ جُلُوۡدُہُمۡ وَ قُلُوۡبُہُمۡ اِلٰی ذِکۡرِ اللّٰہِ ذٰلِکَ ہُدَی اللّٰہِ یَہۡدِیۡ بِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ وَ مَنۡ یُّضۡلِلِ اللّٰہُ فَمَا لَہٗ مِنۡ ہَادٍ
‘আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম বাণী, সাদৃশ্যপূর্ণ একটি কিতাব (আল-কুরআন), যাতে পুনরাবৃত্তি রয়েছে। যারা তাদের রবকে ভয় করে, তাদের গা এতে শিহরিত হয়, তারপর তাদের গাত্র ও মন আল্লাহর স্মরণে বিনম্র হয়ে যায়। এটা আল্লাহর হেদায়াত, তিনি যাকে চান তাকে এর দ্বারা হেদায়াত দেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন, তার জন্য কোন হেদায়াতকারী নেই’ (সূরা আয-যুমার : ২৩)।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ لِي النَّبِيُّ ﷺ إِقْرَأْ عَلَيَّ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ آقْرَأُ عَلَيْكَ وَعَلَيْكَ أُنْزِلَ؟ قَالَ نَعَمْ فَقَرَأْتُ سُوْرَةَ النِّسَاءِ حَتَّى أَتَيْتُ إِلَى هَذِهِ الْآيَةِ " فَکَیۡفَ اِذَا جِئۡنَا مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍۭ بِشَہِیۡدٍ وَّ جِئۡنَا بِکَ عَلٰی ہٰۤؤُلَآءِ شَہِیۡدًا " قَالَ حَسْبُكَ الْآنَ فَالْتَفَتُّ إِلَيْهِ فَإِذَا عَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, তুমি আমার সামনে কুরআন পড়। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনার সামনে আমি কুরআন পড়ব! অথচ এটা আপনার উপরই নাযিল হয়েছে? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ। সুতরাং আমি সূরা ‘আন-নিসা’ পড়তে আরম্ভ করলাম। যখন আমি এই আয়াত পর্যন্ত পৌঁছলাম, فَکَیۡفَ اِذَا جِئۡنَا مِنۡ کُلِّ اُمَّۃٍۭ بِشَہِیۡدٍ وَّ جِئۡنَا بِکَ عَلٰی ہٰۤؤُلَآءِ شَہِیۡدًا ‘তবে কেমন হবে, যখন আমি প্রত্যেক উম্মতের বিরুদ্ধে একজন সাক্ষী উপস্থিত করব এবং আপনাকে এদের বিরুদ্ধে সাক্ষীরূপে উপস্থিত করব’ (সূরা আন-নিসা : ৪১), তখন তিনি বললেন, এবার বন্ধ কর। এ সময় আমি তাঁর দিকে তাকালাম; দেখি তাঁর দুই চক্ষু হতে অশ্রু প্রবাহিত হচ্ছে।[৭]
কুরআন রক্ষণাবেক্ষণ ও সুললীত সুরে তেলাওয়াত করার ফযীলত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ قُرۡاٰنًا فَرَقۡنٰہُ لِتَقۡرَاَہٗ عَلَی النَّاسِ عَلٰی مُکۡثٍ وَّ نَزَّلۡنٰہُ تَنۡزِیۡلًا
‘আর কুরআন নাযিল করেছি কিছু কিছু করে, যেন আপনি তা মানুষের কাছে পাঠ করতে পারেন ধীরে ধীরে এবং আমরা তা নাযিল করেছি পর্যায়ক্রমে’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ১০৬)।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مُغَفَّلٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ رَأَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ يَقْرَأُ وَهُوَ عَلَى نَاقَتِهِ أَوْ جَمَلِهِ وَهِيَ تَسِيْرُ بِهِ وَهُوَ يَقْرَأُ سُوْرَةَ الْفَتْحِ أَوْ مِنْ سُوْرَةِ الْفَتْحِ قِرَاءَةً لَيِّنَةً يَقْرَأُ وَهُوَ يُرَجِّعُ
আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-কে চলন্ত উষ্ট্রের পিঠে অথবা উটের পিঠে আরোহণ করা অবস্থায় তেলাওয়াত করতে দেখেছি। তিনি ‘সূরা ফাতহ’ অথবা ‘সূরা ফাতহ’-র অংশ বিশেষ অত্যন্ত নরম এবং মধুর ছন্দময় সুরে পাঠ করছিলেন।[৮]
عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ زَيِّنُوا الْقُرْآنَ بِأَصْوَاتِكُمْ
বারা ইবনে আযিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা সুমধুর স্বর দ্বারা কুরআনকে সুন্দর কর।[৯]
কুরআন নিজে শিক্ষা করা ও অপরকে শিক্ষা দেয়ার ফযীলত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اَلرَّحۡمٰنُ - عَلَّمَ الۡقُرۡاٰنَ
‘পরম করুণাময়। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন কুরআন’ (সূরা আর-রাহমান : ১-২)।
عَنْ عُثْمَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ خَيْرُكُمْ مَنْ تَعَلَّمَ الْقُرْآنَ وَعَلَّمَهُ
ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী (ﷺ) হতে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে সেই সর্বশ্রেষ্ঠ, যে কুরআন শিক্ষা করে ও তা অপরকে শিক্ষা দেয়।[১০]
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَا اجْتَمَعَ قَوْمٌ فِيْ بَيْتٍ مِنْ بُيُوْتِ اللهِ يَتْلُوْنَ كِتَابَ اللهِ وَيَتَدَارَسُوْنَهُ فِيْمَا بَيْنَهُمْ إِلَّا نَزَلَتْ عَلَيْهِمِ السَّكِيْنَةُ وَغَشِيَتْهُمُ الرَّحْمَةُ وَحَفَّتْهُمُ الْمَلَائِكَةُ وَذَكَرَهُمُ اللهُ فِيْمَنْ عِنْدَهُ
আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন কোন সম্প্রদায় আল্লাহর গৃহসমূহের কোন একটি গৃহে একত্রিত হয়ে আল্লাহর কিতাব পাঠ করে এবং একে অপরের সাথে মিলে (কুরআন) অধ্যয়নে লিপ্ত থাকে তখন তাদের উপর শান্তিধারা অবতীর্ণ হয়। রহমত তাদেরকে আচ্ছন্ন করে ফেলে এবং ফেরেশতাগণ তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখেন। আর আল্লাহ তা‘আলা তার নিকটবর্তীদের (ফেরেশতাগণের) মধ্যে তাদের কথা আলোচনা করেন।[১১]
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَنَحْنُ فِيْ الصُّفَّةِ فَقَالَ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَّغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلٰى بُطْحَانَ أَوْ إِلَى الْعَقِيْقَ فَيَأْتِيْ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِيْ غَيْرِ إِثْمٍ وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ نُحِبُّ ذَلِكَ قَالَ أَفَلَا يَغْدُوْ أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَسْجِدِ فَيَعْلَمُ أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ ثَلَاثٍ وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْإِبِلِ
ওক্ববা ইবনু আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ বের হয়ে আসলেন। আর আমরা মসজিদের একটি স্থানে উপবিষ্ট ছিলাম। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে চায় যে, প্রত্যহ সকালে বুত্বহান অথবা ‘আক্বীক্ব নামক বাজারে যাবে আর বড় কুঁজের অধিকারী দু’টি উটনী নিয়ে আসবে, কোন অপরাধ না করে ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা তো এমন সুযোগ গ্রহণ করতে চাই। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তবে কেন তোমাদের কোন ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাবের দু’টি আয়াত জেনে নেয় না বা শিক্ষা গ্রহণ করে না? অথচ একাজ তার জন্য একটি অথবা দু’টি উটনী অপেক্ষা উত্তম! তিন আয়াত তিনটি উটনী অপেক্ষা উত্তম এবং চার আয়াত চারটি উটনী অপেক্ষা উত্তম। আর যত আয়াত পড়বে তত উটনী অপেক্ষা উত্তম হবে।[১২]
রাতে ও দিনে কুরআনের কতিপয় আয়াত তেলাওয়াত করার ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
عَلِمَ اَنۡ لَّنۡ تُحۡصُوۡہُ فَتَابَ عَلَیۡکُمۡ فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ
‘তিনি জানেন যে, তোমরা তা করতে সক্ষম হবে না। তাই তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরবশ হয়েছেন। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়’ (সূরা আল-মুয্যাম্মিল : ২০)।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَامَ بِعَشْرِ آيَاتٍ لَمْ يُكْتَبْ مِنَ الْغَافِلِيْنَ وَمَنْ قَامَ بِمِائَةِ آيَةٍ كُتِبَ مِنَ الْقَانِتِيْنَ وَمَنْ قَامَ بِأَلْفِ آيَةٍ كُتِبَ مِنَ الُمقَنْطِرِيْنَ
আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি রাত্রিতে ছালাতে দাঁড়িয়ে দশটি আয়াত পাঠ করবে, তাকে গাফেলদের মধ্যে গণ্য করা হবে না এবং যে ব্যক্তি একশ’ আয়াত পাঠ করবে তাকে বিনয়ীদের মধ্যে গণ্য করা হবে, আর যে ব্যক্তি এক হাজার আয়াত পাঠ করবে, তাকে অধিক কার্যকারীদের মধ্যে গণ্য করা হবে।[১৩]
عَنْ فَضَالَةَ بْنِ عُبَيْدٍ وَتَمِيْمٍ الدَّارِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَنْ قَرَأَ عَشْرَ آيَاتٍ فِيْ لَيْلَةٍ كُتِبَ لَهُ قِنْطَارٌ وَالْقِنْطَارُ خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيْهَا فَإِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ يَقُوْلُ رَبُّكَ عَزَّ وَجَلَّ اقْرَأْ وَارْقَ بِكُلِّ آيَةٍ دَرَجَةً حَتَّى يَنْتَهِيَ إِلَى آخِرِ آيَةٍ مَعَهُ يَقُوْلُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ لِلْعَبْدِ اقْبِضْ فَيَقُوْلُ الْعَبْدُ بِيَدِهِ يَا رَبُّ! أَنْتَ أَعْلَمُ فَيَقُوْلُ بِهَذِهِ الْخُلْدَ وَبِهَذِهِ النَّعِيْمَ
ফুযালা ইবনে উবাইদ ও তামীম দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতে দশটি আয়াত পাঠ করবে, তার জন্য ‘ক্বিনত্বার’ পরিমাণ ছওয়াব লিখা হবে। আর ক্বিনত্বার হচ্ছে দুনিয়া এবং তার মধ্যস্থিত সকল বস্তু হতে উত্তম। ক্বিয়ামত দিবসে মহান আল্লাহ বলবেন, একটি করে আয়াত পড় এবং একটি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠ। এভাবে তার সাথে যত আয়াত আছে তার শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। মহামহিম আল্লাহ বান্দাকে বলবেন, আঁকড়ে ধর। তখন বান্দা বলবে, হাত দিয়ে হে আমার প্রতিপালক! আপনি অধিক জ্ঞান রাখেন। তিনি বলবেন, এই (ডান) হাত দিয়ে চিস্থায়ীত্ব আঁকড়ে ধর এবং এই (বাম) হাত দিয়ে চিরকালীন সুখ চেপে ধর’।[১৪]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* পিএইচ-ডি. গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. তিরমিযী, হা/২৯১০, সনদ ছহীহ।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯৮।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯৮।
[৪]. ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/১২৪; সনদ জাইয়্যিদ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২০১৯।
[৫]. তিরমিযী, হা/২৯১৫; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৮০৩০।
[৬]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/১৯৯৪, সনদ ছহীহ; ছহীহুল জামে‘, হা/৩৮৮২।
[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৫৮২; ছহীহ মুসলিম, হা/৮০০।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০৪৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৭৯৪।
[৯]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৫১৭; আবূ দাঊদ, হা/১৪৬৮; ইবনু মাজাহ, হা/১৩৪২; দারেমী হা/৩৫০০, সনদ ছহীহ।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০২৭।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৯।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৩।
[১৩]. আবূ দাঊদ, হা/১৩৯৮, সনদ ছহীহ।
[১৪]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হ/১২৫৩; সনদ হাসান, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৩৮।