সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৯:৩৩ অপরাহ্ন

আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ 

- মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান 
- অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ* 


পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ, তাদের আনুগত্য ও তাদের প্রতি ইহসান করার গুরুত্ব এবং তাদের মৃত্যুর পর তাদের বন্ধু বান্ধবদের প্রতি সদাচরণের ফযীলত

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ اِذۡ اَخَذۡنَا مِیۡثَاقَ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ لَا تَعۡبُدُوۡنَ اِلَّا اللّٰہَ  وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا وَّ ذِی ‌الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ قُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا وَّ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ ثُمَّ تَوَلَّیۡتُمۡ  اِلَّا قَلِیۡلًا مِّنۡکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ

‘আর যখন আমরা বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদত করবে না এবং সদাচরণ করবে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সাথে। আর মানুষকে উত্তম কথা বল, ছালাত কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে স্বল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা ফিরে গেলে। আর তোমরা (স্বীকার করে অতঃপর তা থেকে) বিমুখ হও’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৮৩)। আল্লাহ বলেন,

وَ قَضٰی رَبُّکَ اَلَّا تَعۡبُدُوۡۤا اِلَّاۤ  اِیَّاہُ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا  اِمَّا یَبۡلُغَنَّ عِنۡدَکَ الۡکِبَرَ اَحَدُہُمَاۤ  اَوۡ  کِلٰہُمَا فَلَا تَقُلۡ لَّہُمَاۤ  اُفٍّ  وَّ لَا  تَنۡہَرۡہُمَا وَ قُلۡ  لَّہُمَا  قَوۡلًا کَرِیۡمًا

‘আর তোমার রব আদেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করবে না এবং পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করবে। তাদের একজন অথবা উভয়েই যদি তোমার নিকট বার্ধক্যে উপনীত হয়, তবে তাদেরকে ‘উফ’ বল না এবং তাদের ধমক দিও না। আর তাদের সাথে সম্মানজনক কথা বল’ (সূরা বনী ইসরাঈল : ২৩)। আল্লাহ বলেন,

وَ وَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ حَمَلَتۡہُ  اُمُّہٗ وَہۡنًا عَلٰی وَہۡنٍ وَّ فِصٰلُہٗ فِیۡ عَامَیۡنِ اَنِ اشۡکُرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیۡکَ اِلَیَّ  الۡمَصِیۡرُ

‘আর আমরা মানুষকে তার মাতা-পিতার ব্যাপারে (সদাচরণের) নির্দেশ দিয়েছি। তার মা কষ্টের পর কষ্ট ভোগ করে তাকে গর্ভে ধারণ করে। আর তার দুধ ছাড়ানো হয় দু’বছরে; সুতরাং আমার ও তোমার পিতামাতার শুকরিয়া আদায় কর। প্রত্যাবর্তন তো আমার কাছেই’ (সূরা লুক্বমান : ১৪)। মহান আল্লাহ বলেন, وَبَرًّۢا بِوَالِدَیۡہِ وَ لَمۡ یَکُنۡ جَبَّارًا عَصِیًّا ‘এবং সে ছিল তার পিতা-মাতার সাথে সদাচরী, আর ছিল না অহংকারী, অবাধ্য’ (সূরা মারইয়াম : ১৪)। মহান আল্লাহ বলেন, وَ بَرًّۢا بِوَالِدَتِیۡ وَ لَمۡ  یَجۡعَلۡنِیۡ جَبَّارًا شَقِیًّ ‘আর আমাকে মায়ের প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে অহঙ্কারী, অবাধ্য করেননি’ (সূরা মারইয়াম : ৩২)। আল্লাহ বলেন,

وَ وَصَّیۡنَا الۡاِنۡسَانَ بِوَالِدَیۡہِ حُسۡنًا وَ  اِنۡ جَاہَدٰکَ لِتُشۡرِکَ بِیۡ  مَا لَیۡسَ لَکَ بِہٖ عِلۡمٌ  فَلَا تُطِعۡہُمَا اِلَیَّ  مَرۡجِعُکُمۡ فَاُنَبِّئُکُمۡ  بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ

‘আর আমরা মানুষকে নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা-মাতার সাথে সদাচরণ করতে। তবে যদি তারা তোমাকে আমার সাথে এমন কিছুকে শরীক করতে প্রচেষ্টা চালায় যার সম্পর্কে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের অনুগত্য করবে না। আমার দিকেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন। অতঃপর তোমরা যা করছিলে আমি তা তোমাদের জানিয়ে দেব’ (সূরা আল-আনকাবূত : ৮)।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَأَلْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَيُّ العَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ؟ قَالَ الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا قُلْتُ ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ بِرُّ الْوَالِدَيْنِ قُلْتُ ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ

১. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে প্রশ্ন করলাম, আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় আমল কোন্টি? তিনি বললেন, ছালাত সঠিক সময়ে আদায় করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, তারপর পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, আর কোন্টি হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা।[১]
-----

وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ  رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَا يَجْزِيْ وَلَدٌ وَالِدهِ إِلَّا أَنْ يَجِدَهُ مَمْلُوْكًا فَيَشْتَرِيْهِ فَيُعْتَقَهُ

২. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কোন সন্তান তার পিতার ঋণ (হক্ব) পরিশোধ করতে পারবে না, তবে যদি তার পিতা কারও দাসত্বে আবদ্ধ থাকে, আর সন্তান তাকে খরিদ করে মুক্ত করে দেয় (তা হলেই সে পিতার ইহসান পরিশোধ করতে পারবে)।[২] 
-----
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى نَبِيِّ اللهِ ﷺ فَاسْتَأْذَنَهُ فِي الْجِهَادِ فَقَالَ أَحَيٌّ وَالِدَاكَ؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَفِيْهِمَا فَجَاهِدْ

৩. আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর কাছে এল। এরপর সে তাঁর কাছে জিহাদে অংশগ্রহণের অনুমতি চাইল। তখন তিনি বললেন, তোমার মাতা-পিতা কি জীবিত আছে? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তাদের উভয়ের সন্তুষ্টি অর্জনের জিহাদ-সাধনা (চেষ্টা) কর।[৩] অন্য বর্ণনায় এসেছে,

قَالَ أَقْبَلَ رَجُلٌ إِلَى نَبِيِّ اللهِ ﷺ فَقَالَ أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَالْجِهَادِ أَبْتَغِي الْأَجْرَ مِنَ اللهِ قَالَ فَهَلْ مِنْ وَالِدَيْكَ أَحَدٌ حَيٌّ؟ قَالَ نَعَمْ بَلْ كِلَاهُمَا قَالَ فَتَبْتَغِي الْأَجْرَ مِنَ اللهِ؟ قَالَ نَعَمْ قَال فَارْجِعْ إِلَى وَالِدَيْكَ فَأَحْسِنْ صُحْبَتَهُمَا.

তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর কাছে এল। এরপর সে বলল, আমি আপনার হাতে হিজরত ও জিহাদের জন্য বায়‘আত গ্রহণ করব। এতে আমি আল্লাহর কাছে পুরস্কার ও বিনিময় আশা করি। তিনি বললেন, তোমার মাতা-পিতার মধ্যে কেউ জীবিত আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ উভয়ে জীবিত আছেন। তিনি বললেন, তাহলে তুমি আল্লাহর কাছে বিনিময় আকাক্সক্ষা করছ? সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তাহলে তুমি তোমার পিতা-মাতার কাছে ফিরে যাও এবং তাদের দু’জনের সঙ্গে সদাচরণপূর্ণ জীবন-যাপন কর।[৪]
----
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ جِئْتُ أُبَايِعُكَ عَلَى الْهِجْرَةِ وَتَرَكْتُ أَبَوَيَّ يَبْكِيَانِ فَقَالَ ارْجِعْ عَلَيْهِمَا فَأَضْحِكْهُمَا كَمَا أَبْكَيْتَهُمَا

৪. আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, আমি হিজরত করে (আপনার সাথে যুদ্ধে গমনের জন্য) আপনার হাতে বায়‘আত করতে এসেছি। কিন্তু আমার মাতা-পিতা নারায বিধায় কাঁদছেন। তিনি বললেন, তুমি তোমার পিতা-মাতার নিকট ফিরে যাও। যেভাবে তাদেরকে কাঁদিয়েছ সেভাবে তাঁদেরকে হাসিয়ে তোল।[৫]
-----
 وَعَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا هَاجَرَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ مِنَ الْيَمَنِ فَقَالَ هَلْ لَكَ أَحَدٌ بِالْيَمَنِ؟ قَالَ أَبَوَايَ قَالَ أَذِنَا لَكَ؟ قَالَ لَا قَالَ ارْجِعْ إِلَيْهِمَا فَاسْتَأْذِنْهُمَا فَإِنْ أَذِنَا لَكَ فَجَاهِدْ وَإِلَّا فَبِرَّهُمَا

৫. আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একজন লোক ইয়ামান হতে হিজরত করে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট পৌঁছল। তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ইয়ামানে তোমার কেউ রয়েছে কি? সে বলল, আমার পিতা-মাতা রয়েছেন। তিনি বললেন, তাদের কাছ অনুমতি নিয়েছ? সে বলল, না। তিনি বললেন, তুমি তোমার পিতা-মাতার নিকট ফিরে গিয়ে তাঁদের উভয়ের অনুমতি প্রার্থনা কর। যদি তাঁরা উভয়ে তোমাকে হিজরত করার ও যুদ্ধ করার অনুমতি দেন তবে ফিরে এসে জিহাদ কর, অন্যথা তাঁদের উভয়ের খিদমত কর।[৬] ত্বালহা ইবনু মু‘আবিয়া আস-সুলামী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত হাদীছে এসেছে,

قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ إِنِّيْ أُرِيْدُ الْجِهَادَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ قَالَ أُمُّكَ حَيَّةٌ؟ فَقُلْتُ نَعَمْ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ الْزَمْ رِجْلَهَا فَثَمَّ الْجَنَّةُ

তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকেট উপস্থিত হয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি জিহাদে যাওয়ার ইচ্ছা করেছি। নবী করীম (ﷺ) বললেন, তোমার মা কি জীবিত রয়েছেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। নবী করীম (ﷺ) বললেন, যাও মায়ের খেদমতে নিজেকে আত্মনিয়োগ কর। কেননা জান্নাত সেখানেই।[৭]
-----
 وَعَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ جَاهِمِةَ السَّلَمِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ جَاهِمَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ جَاءَ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَرَدْتُ أَنْ أَغْزُوَ وَقَدْ جِئْتُ أَسْتَشِيْرُكَ فَقَالَ هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَالْزَمْهَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ رِجْلِهَا

৬. মু‘আবিয়া ইবনু জাহিমা আস-সালামী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, জাহিমা নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি জিহাদে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছা করেছি। তাই এ ব্যাপারে আপনার সাথে পরামর্শ করতে চাই। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা জীবিত আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ আছেন। তিনি বললেন, যাও মায়ের খেদমতে নিজেকে আত্মনিয়োগ কর। কেননা জান্নাত তার পায়ের কাছেই।[৮] অন্য বর্ণনায় এসেছে,

قَالَ أَتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ أَسْتَشِيْرُهُ فِي الْجِهَادِ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ أَلَكَ وَالِدَانِ؟ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ الْزَمْهُمَا فَإِنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ أَرْجُلِهِمَا

তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট এসে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি জিহাদে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছা করেছি। তখন তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার পিতা-মাতা জীবিত আছে কি? সে বলল, হ্যাঁ আছেন। তিনি বললেন, যাও তাদের দু’জনের খেদমতে নিজেকে আত্মনিয়োগ কর। কেননা জান্নাত তাদের পায়ের কাছেই।[৯]
-----
 وَعَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا أَتَاهُ فَقَالَ إِنَّ لِيْ اِمْرَأَةً وَإِنَّ لِيْ أُمِّيْ تَأْمُرُنِيْ بِطَلَاقِهَا؟ فَقَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ  يَقُوْلُ الْوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ فَإِنْ شِئْتَ فَأَضِعْ هَذَا الْبَابَ أَوْ احْفَظْهُ

৭. আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি তার নিকটে এসে বলল, আমার স্ত্রী আছে এবং আমার মা আমাকে আদেশ করেছেন যে, আমি যেন তাকে ত্বালাক্ব দেই। তখন আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, পিতা-মাতা হলেন জান্নাতের দরজাসমূহের মধ্যবর্তী দরজা। এখন তোমার ইচ্ছা দরজাটিকে নষ্ট কর অথবা তাকে রক্ষা কর।[১০] অন্য বর্ণনায় এসেছে,

أَنَّ رَجُلًا أَتَى أَبَا الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فقَالَ إِنَّ أَبِيْ لَمْ يَزَلْ بِيْ حَتَّى تَزَوَّجْتُ وَإِنَّهُ الْآنَ يَأْمُرُنِيْ بِطَلَاقِهَا قَالَ مَا أَنَا بِالَّذِيْ آمُرُكَ أَنْ تَعُقَّ وَالِدَكَ وَلَا أَنَا بِالَّذِيْ آمُرُكَ أَنْ تُطَلِّقَ امْرَأَتَكَ غَيْرَ أَنَّكَ إِنْ شِئْتَ حَدَّثْتُكَ مَا سَمِعْتُ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ سَمِعْتُهُ يَقُوْلُ  الْوَالِدُ أَوْسَطُ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ فَحَافِظْ عَلَى ذَلِكَ إِنْ شِئْتَ أَوْ دَعْ قَالَ فَأَحْسِبُ عَطَاءً قَالَ فَطَلَّقَهَا

জনৈক ব্যক্তি আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিকটে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার পিতা বিবাহের ব্যাপারে আমার সাথে সর্বদা লেগে ছিলেন এমনকি আমি বিবাহ করি। অথচ তিনিই এখন আমাকে ত্বালাক্ব দিতে বলছেন। আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমি আপনাকে পিতার অবাধ্য হতে অথবা স্ত্রীকে ত্বালাক্ব দিতে বলার অধিকার রাখি না। তবে আপনি চাইলে আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছ থেকে শ্রবণ করা একটি হাদীছ বর্ণনা করতে পারি। আমি নবী করীম (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি (ﷺ) বলেছেন, পিতা হচ্ছে জান্নাতের মধ্যস্থলের দরজা। তুমি চাইলে একে সংরক্ষণ করতে পার অথবা বিসর্জন দিতে পার। তিনি বলেন, আমি অবশ্য পুরস্কারের আশা করি। রাবী বলেন, অতঃপর সেই ব্যক্তিটি স্ত্রীকে ত্বালাক্ব দিয়ে দিল।[১১]
-----
وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كَانَتْ تَحْتِيْ امْرَأَةٌ أُحِبُّهَا وَكَانَ عُمَرُ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَكْرَهُهَا فَقَالَ لِيْ طَلِّقْهَا فَأَبَيْتُ فَأَتَى عُمَرُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَذَكَرَ ذَلِكَ لَهُ فَقَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ طَلِّقْهَا

৮. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমার অধীনে এমন একজন স্ত্রী ছিল, যাকে আমি ভালোবাসতাম। অথচ ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাকে অপসন্দ করতেন। একদা তিনি আমাকে বললেন, তুমি তাকে ত্বালাক্ব দাও, কিন্তু আমি অস্বীকার করলাম। অতঃপর ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) -এর নিকটে এসে তাঁকে ঘটনাটি বললেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, তুমি তাকে ত্বালাক্ব দিয়ে দাও।[১২]
-----
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ رَغِمَ أَنْفُهُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُهُ قِيْلَ مَنْ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ ؟ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدُهُمَا أَوْ كِلَاهُمَا ثُمَّ لَمْ يَدْخُلِ الْجنَّةَ

৯. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তার নাক ধূলি ধূসরিত হোক। তার নাক ধূলি ধূসরিত হোক। তার নাক ধূলি ধূসরিত হোক। জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! কে সেই ব্যক্তি? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি তার মাতা-পিতার কোন একজনকে অথবা উভয়কে তাদের বার্ধক্য অবস্থায় পেল, অথচ সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারল না।[১৩]
-----
وَعَنْ سَلْمَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ لَا يَرُدُّ الْقَضَاءَ إِلَّا الدُّعَاءُ وَلَا يَزِيْدُ فِي الْعُمْرِ إِلَّا الْبِرُّ

১০. সালমান ফারেসী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দু‘আ ব্যতীত তাক্বদীরকে ফিরাতে পারে না এবং নেকী ছাড়া অপর কিছু বয়স বাড়াতে পারে না।[১৪]

 وَعَنْ أُبَيِّ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ أَنَّهُ قَالَ مَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ أَوْ أَحَدَهُمَا ثُمَّ دَخَلَ النَّارَ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ فَأَبْعَدَهُ اللهُ وَأَسْحَقَهُ

১১. উবাই ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে জীবিত অবস্থায় পাওয়ার পরও জাহান্নামে প্রবেশ করে, আল্লাহ তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দেন এবং ধ্বংস করেন।[১৫]
-----
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ انْطَلَقَ ثَلَاثَةُ رَهْطٍ مِمَّنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حَتَّى أَوَوْا المَبِيْتَ إِلَى غَارٍ فَدَخَلُوْهُ فَانْحَدَرَتْ صَخْرَةٌ مِنَ الْجَبَلِ فَسَدَّتْ عَلَيْهِمُ الْغَارَ فَقَالُوْا إِنَّهُ لَا يُنْجِيْكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللهَ بِصَالِحِ أَعْمَالِكُمْ فَقَالَ رَجُلٌ مِنْهُمْ اللهم كَانَ لِيْ أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيْرَانِ وَكُنْتُ لَا أَغْبِقُ قَبْلَهُمَا أَهْلًا وَلَا مَالًا فَنَأَى بِيْ فِيْ طَلَبِ شَيْءٍ يَوْمًا فَلَمْ أُرِحْ عَلَيْهِمَا حَتَّى نَامَا فَحَلَبْتُ لَهُمَا غَبُوْقَهُمَا فَوَجَدْتُهُمَا نَائِمَيْنِ وَكَرِهْتُ أَنْ أَغْبِقَ قَبْلَهُمَا أَهْلًا أَوْ مَالًا فَلَبِثْتُ وَالْقَدَحُ عَلَى يَدَيَّ أَنْتَظِرُ اسْتِيْقَاظَهُمَا حَتَّى بَرَقَ الْفَجْرُ فَاسْتَيْقَظَا فَشَرِ بَا غَبُوْقَهُمَا اللهم إِنْ كُنْتُ فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَفَرِّجْ عَنَّا مَا نَحْنُ فِيْهِ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ فَانْفَرَجَتْ شَيْئًا لَا يَسْتَطِيْعُوْنَ الْخُرُوْجَ قَالَ النَّبِيُّ ﷺ وَقَالَ الْآخَرُ اللهم كَانَتْ لِيْ بِنْتُ عَمٍّ كَانَتْ أَحَبَّ النَّاسِ إِلَيَّ فَأَرَدْتُهَا 

১২. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে তিন ব্যক্তি সফরে বের হয়ে তারা রাত কাটাবার জন্য একটি গুহায় আশ্রয় নেয়। হঠাৎ পাহাড় হতে এক খণ্ড পাথর পড়ে গুহার মুখ বন্ধ হয়ে যায়। তখন তারা নিজেদের মধ্যে বলতে লাগল তোমাদের সৎকার্যাবলীর ওয়াসীলা নিয়ে আল্লাহর কাছে দু‘আ করা ছাড়া আর কোন কিছুই এ পাথর হতে তোমাদেরকে মুক্ত করতে পারে না।

তখন তাদের মধ্যে একজন বলতে লাগল, হে আল্লাহ! আমার পিতা-মাতা খুব বৃদ্ধ ছিলেন। আমি কখনো তাদের আগে আমার পরিবার-পরিজনকে কিংবা দাস-দাসীকে দুধ পান করাতাম না। একদিন কোন একটি জিনিসের তালাশে আমাকে অনেক দূরে চলে যেতে হয়; কাজেই আমি তাঁদের ঘুমিয়ে পড়ার পূর্বে ফিরতে পারলাম না। আমি তাঁদের জন্য দুধ দোহন করে নিয়ে এলাম। কিন্তু তাঁদেরকে ঘুমন্ত পেলাম। তাদের আগে আমার পরিবার-পরিজন ও দাস-দাসীকে দুধ পান করতে দেয়াটাও আমি পসন্দ করিনি। তাই আমি তাঁদের জেগে উঠার অপেক্ষায় পেয়ালাটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এভাবে ভোরের আলো ফুটে উঠল। তারপর তাঁরা জাগলেন এবং তাদের (জন্য নির্ধারিত) দুধ পান করলেন। হে আল্লাহ! যদি আমি আপনার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশে এ কাজ করে থাকি, তবে এ পাথরের কারণে আমরা যে বিপদে পড়েছি, তা আমাদের হতে দূর করে দিন। ফলে পাথর সামান্য সরে গেল, কিন্তু তাতে তারা বের হতে পারল না। নবী করীম (ﷺ) বলেন, তারপর দ্বিতীয় ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহ! আমার এক চাচাতো বোন ছিল। সে আমার খুব প্রিয় ছিল। আমি তার সাথে একান্তে মিলিত হতে চাইলাম। ...[১৬] অন্য বর্ণনায় এসেছে,

قَالَ بَيْنَمَا ثَلَاثَةُ نَفَرٍ يَمْشُوْنَ أَخَذَهُمُ الْمَطَرُ فَأَوَوْا إِلَى غَارٍ فِيْ جَبَلٍ فَانْحَطَّتْ عَلَى فَمِ غَارِهِمْ صَخْرَةٌ مِنَ الْجَبَلِ فَانْطَبَقَتْ عَلَيْهِمْ فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ انْظُرُوْا أَعْمَالًا عَمِلْتُمُوْهَا صَالِحَةً لِلهِ فَادْعُوْا اللهَ بِهَا لَعَلَّهُ يُفَرِّجُهَا عَنْكُمْ قَالَ أَحَدُهُمْ اللهم إِنَّهُ كَانَ لِيْ وَالِدَانِ شَيْخَانِ كَبِيْرَانِ وَلِيْ صِبْيَةٌ صِغَارٌ كُنْتُ أَرْعَى عَلَيْهِمْ فَإِذَا رُحْتُ عَلَيْهِمْ حَلَبْتُ فَبَدَأْتُ بِوَالِدَيَّ أَسْقِيْهِمَا قَبْلَ بَنِيَّ وَإِنِّي اسْتَأْخَرْتُ ذَاتَ يَوْمٍ فَلَمْ آتِ حَتَّى أَمْسَيْتُ فَوَجَدْتُهُمَا نَامَا فَحَلَبْتُ كَمَا كُنْتُ أَحْلُبُ فَقُمْتُ عِنْدَ رُءُوْسِهِمَا أَكْرَهُ أَنْ أُوْقِظَهُمَا وَأَكْرَهُ أَنْ أَسْقِيَ الصِّبْيَةَ وَالصِّبْيَةُ يَتَضَاغَوْنَ عِنْدَ قَدَمَيَّ حَتَّى طَلَعَ الْفَجْرُ فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّيْ فَعَلْتُهُ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ فَافْرُجْ لَنَا فَرْجَةً نَرَى مِنْهَا السَّمَاءَ فَفَرَجَ اللهُ فَرَأَوُا السَّمَاءَ

নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, একবার তিনজন লোক পথ চলছিল, তারা বৃষ্টিতে আক্রান্ত হল। অতঃপর তারা এক পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নিল। হঠাৎ পাহাড় থেকে এক খণ্ড পাথর পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। তখন তারা একে অপরকে বলল, নিজেদের কৃত কিছু সৎকাজের কথা চিন্তা করে বের কর, যা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা হয়েছে এবং তার ওয়াসীলা করে আল্লাহর নিকট দু’আ কর। তাহলে হয়ত আল্লাহ তোমাদের উপর থেকে পাথরটি সরিয়ে দিবেন।

তাদের একজন বলতে লাগল, হে আল্লাহ! আমার আব্বা-আম্মা খুব বৃদ্ধ ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট সন্তানও ছিল। আমি তাদের ভরণ-পোষণের জন্য পশু পালন করতাম। সন্ধ্যায় যখন আমি বাড়ি ফিরতাম তখন দুধ দোহন করতাম এবং আমার সন্তানদের আগে আমার আব্বা-আম্মাকে পান করাতাম। একদিন আমার ফিরতে দেরী হয় এবং সন্ধ্যা হওয়ার আগে আসতে পারলাম না। এসে দেখি তারা ঘুমিয়ে পড়েছেন। তখন আমি দুধ দোহন করলাম, যেমন প্রতিদিন দোহন করি। তারপর আমি তাঁদের শিয়রে (দুধ নিয়ে) দাঁড়িয়ে রইলাম। তাদেরকে জাগানো আমি পসন্দ করিনি এবং তাঁদের আগে আমার বাচ্চাদেরকে পান করানোও অসঙ্গত মনে করি। অথচ বাচ্চাগুলো আমার পায়ের কাছে পড়ে কান্নাকাটি করছিল। এভাবে ভোর হল। হে আল্লাহ! আপনি জানেন আমি যদি শুধু আপনার সন্তুষ্টির জন্যই এ কাজটি করে থাকি তবে আপনি আমাদের থেকে পাথরটা খানিক সরিয়ে দিন, যাতে আমরা আসমানটা দেখতে পাই। তখন আল্লাহ পাথরটাকে একটু সরিয়ে দিলেন এবং তারা আসমান দেখতে পেল।[১৭]
-----
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ مَنْ أَحَقُّ النَّاسِ بِحُسْنِ صَحَابَتِيْ؟ قَالَ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ أُمُّكَ قَالَ ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ أَبُوْكَ

১৩. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এক লোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার কাছে কে উত্তম ব্যবহার পাওয়ার বেশি হক্বদার? তিনি বললেন, তোমার মা। লোকটি বলল, তারপর কে? নবী করীম (ﷺ) বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তোমার মা। সে বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, তারপর তোমার পিতা।[১৮]
-----
 وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ أَبِيْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَتْ قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّيْ وَهِيَ مُشْرِكَةٌ فِيْ عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَاسْتَفْتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قُلْتُ قَدِمَتْ عَلَيَّ أُمِّيْ وَهِيَ رَاغِبَةٌ أَفَأَصِلُ أُمِّيْ؟ قَالَ نَعَمْ صِلِيْ أُمَّكِ

১৪. আসমা বিনতে আবূ বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর যুগে আমার আম্মা মুশরিক অবস্থায় আমার নিকট এলেন। আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট ফৎওয়া চেয়ে বললাম, আমার মা আমার কাছে এসেছেন। আর তিনি আমার প্রতি খুবই আকৃষ্ট, এমতাবস্থায় আমি কি তার সঙ্গে সদাচরণ করব? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তুমি তোমার মায়ের সঙ্গে সদাচরণ কর।[১৯]
-----
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ رِضَا اللهِ فِيْ رِضَا الْوَالِدِ وَسَخَطُ اللهِ فِيْ سَخَطِ الْوَالِدِ

১৫. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, পিতা-মাতার সন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি এবং পিতা-মাতার অসন্তুষ্টির মধ্যেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে।[২০]
-----
 وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ إِنِّيْ أَصَبْتُ ذَنْبًا عَظِيْمًا فَهَلْ لِيْ مِنْ تَوْبَةٍ؟ قَالَ هَلْ لَكَ مِنْ أُمٍّ؟ قَالَ لَا قَالَ  هَلْ لَكَ مِنْ خَالَةٍ؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَبِرَّهَا

১৬. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, এক লোক নবী করীম ফ-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি একটি খুব জঘন্য পাপ করেছি, আমার জন্য তওবার কোন ব্যবস্থা আছে কি? তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তোমার মা আছে কি? লোকটি বলল, না। তিনি আবার জিজ্ঞেস করলেন, তোমার কোন খালা আছে কি? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তখন নবী করীম (ﷺ) বললেন, যাও, তাঁর খেদমত কর।[২১]
-----
 وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ دِيْنَارٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلًا مِنَ الْأَعْرَابِ لَقِيَهُ بِطَرِيْقِ مَكَّةَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ عَبْدُ اللهِ وَحَمَلَهُ عَلَى حِمَارٍ كَانَ يَرْكَبُهُ وَأَعْطَاهُ عِمَامَةً كَانَتْ عَلَى رَأْسِهِ فَقَالَ ابْنُ دِيْنَارٍ فَقُلْنَا لَهُ أَصْلَحَكَ اللهُ إِنَّهُمُ الْأَعْرَابُ وَإِنَّهُمْ يَرْضَوْنَ بِالْيَسِيْرِ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ إِنَّ أَبَا هَذَا كَانَ وُدًّا لِعُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ وَإِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ إِنَّ أَبَرَّ الْبِرِّ صِلَةُ الْوَلَدِ أَهْلَ وُدِّ أَبِيْهِ

১৭. আব্দুল্লাহ ইবনু দীনার হতে বর্ণিত, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণনা করেছেন। ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, মক্কার এক রাস্তায় আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) -এর সঙ্গে এক বেদুঈনের সাক্ষাৎ হল। আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) তাঁকে সালাম দিলেন এবং তিনি যে গাধার পিঠে সাওয়ার হতেন তাতে তাকে বহন করলেন ও তিনি তাঁর মাথার পাগড়ী তাকে দিলেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবনু দ্বীনার (রাহিমাহুল্লাহ) তাকে বললেন যে, আমরা তাকে বললাম, আল্লাহ আপনার কল্যাণ করুন। বেদুঈনরা তো অল্পতেই তুষ্ট হয়ে যায়। (এত দেয়ার প্রয়োজন কী ছিল?) তখন আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, এই ব্যক্তির পিতা ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এর বন্ধু ছিলেন। আর আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি যে, কোন ব্যক্তির সর্বোত্তম নেকীর কাজ হচ্ছে তার পিতার বন্ধুজনের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা।[২২]
-----
 وَعَنْ أَبِيْ بُرْدَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَدِمْتُ الْمَدِيْنَةَ فَأَتَانِيْ عَبْدُ اللهِ بْنُ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا فقَالَ أَتَدْرِيْ لِمَ أَتَيْتُكَ؟ قَالَ قُلْتُ لَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ  مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَصِلَ أَبَاهُ فِيْ قَبْرِهِ فَلْيَصِلْ إِخْوَانَ أَبِيْهِ بَعْدَهُ وَإِنَّهُ كَانَ بَيْنَ أَبِيْ عُمَرَ وَبَيْنَ أَبِيْكَ إِخَاءٌ وَوُدٌّ فَأَحْبَبْتُ أَنْ أَصِلَ ذَاكَ

১৮. আবূ বুরদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি মদীনায় আগমন করলে আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আমার নিকটে এসে বললেন, আপনি কি জানেন, আমি কেন আপনার নিকটে এসেছি? রাবী বলেন, আমি বললাম, না। ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি চায় তার পিতার কবরে সদাচরণ করা হোক, সে যেন তার পিতার ভাইদের সাথে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন অটুট রাখে। আর যেহেতু আমার পিতা ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও আপনার পিতার মাঝে ভ্রাতৃত্ব ও ভালোবাসার বন্ধন ছিল, আর এজন্য আমি পসন্দ করি তাদের প্রতি সদাচরণ করার।[২৩]


*পিএইচ.ডি গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৫।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৫১০।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৩০০৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৪৯।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৪৯।
[৫]. আবূ দাঊদ, হা/২৫২৮, সনদ ছহীহ।
[৬]. আবূ দাঊদ, হা/২৫৩০, সনদ ছহীহ।
[৭]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৮১৬২; সনদ হাসান লি-গাইরিহী, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮১৬২।
[৮]. নাসাঈ, হা/৩১০৪, সনদ হাসান ছহীহ; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৫৭৭; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৭৮৩৩।
[৯]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/২২০২; সনদ জাইয়্যিদ, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৪৮৫।
[১০]. তিরমিযী, হা/১৯০০; ইবনু মাজাহ, হা/৩৬৬৩, সনদ ছহীহ।
[১১]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪২৫; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৯১৪।
[১২]. তিরমিযী, হা/১১৮৯; আবূ দাঊদ, হা/৫১৩৮; ইবনু মাজাহ, হা/২০৮৮, সনদ ছহীহ।
[১৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৫১।
[১৪]. তিরমিযী হা/২১৩৯, সনদ হাসান।
[১৫]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০৪৯, সনদ ছহীহ।
[১৬]. ছহীহ বুখারী, হা/২২৭২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৪৩।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/২৩৩৩।
[১৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৭১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৪৮।
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬২০; ছহীহ মুসলিম, হা/১০০৩।
[২০]. তিরমিযী, হা/১৮৯৯, সনদ ছহীহ।
[২১]. তিরমিযী, হা/২০২৭; সনদ ছহীহ, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫০৪।
[২২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৫২।
[২৩]. ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৪৩২, সনদ হাসান।




প্রসঙ্গসমূহ »: আমল
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে জিহাদ (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৪র্থ কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৪তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ত্বাহারাত (১০ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৩তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : শাস্তি প্রয়োগ ও অন্যান্য বিধান - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে হজ্জ ও ওমরাহ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (২য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১২ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ