সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০৯:২৭ অপরাহ্ন

যিলহজ্জ মাসের আমল ও ফযীলত

-মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম*


ভূমিকা

মুসলিমদের জন্য মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত কিছু দিন, মাস এবং সময় রয়েছে, সেইদিন বা সেই সময়ের আমল বা কাজের মধ্যে রয়েছে অনেক ফযীলত। এরূপ একটি মাস হল মুসলিম ঐতিহ্য কুরবানীর স্মৃতি বিজড়িত যিলহজ্জ মাস। এ মাসের মধ্যে অন্যতম বিষয় হল হজ্জ, কুরবানী এবং আরাফার দিনের মর্যাদা। সব মিলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস হল যিলহজ্জ মাস। যিলহজ্জ মাসের আগমনের সাথে সাথে মুসলিমগণ তাওহীদী চেতনায় উজ্জীবিত হয়। বনু আদমের সন্তানগণ স্মরণ করে মুসলিম জাতির পিতা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর চেতনাকে। যে চেতনার মাধ্যমে পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্র সংস্কার ও সংশোধন করার শিক্ষা গ্রহণ করে। পাশাপাশি এই মাসের ফযীলত ও তাৎপর্য উপলব্ধির প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে। যিলহজ্জ মাসে অনেক আমল রয়েছে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং তার ফযীলতও অত্যধিক। নি¤েœ ‘যিলহজ্জ মাসের আমল ও ফযীলত’ আলোকপাত করা হল।

যিলহজ্জ মাসের আমল ও ফযীলত

আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পসন্দনীয় মাস হল পবিত্র মাস সমূহ। আর পবিত্র মাস সমূহের মধ্যে সর্বাধিক পসন্দনীয় হল যিলহজ্জ মাস। যিলহজ্জের প্রথম দশদিন সর্বোত্তম দিন। এই দিনগুলোর ব্যাপারে মহান আল্লাহ শপথ করেছেন। তিনি বলেন, وَ  لَیَالٍ عَشۡرٍ . وَ  الۡفَجۡرِ  ‘শপথ ঊষার সময়ের ও শপথ দশ রাত্রির’ (সূরা আল-ফজর : ১-২)। উক্ত আয়াতের وَ لَیَالٍ عَشۡرٍ ‘শপথ দশ রাত্রির’-এর ব্যাখ্যায় ইবনু আব্বাস, ইবনু যুবায়র, মুজাহিদ এবং সালাফে ছালেহীনগণ বলেন, اَلْمُرَادُ بِاللَّيْالِ الْعَشْرِ عَشْرُ ذِيْ الْحِجَّةِ ‘দশ রাত্রি’-এর অর্থ হল যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন’।[১] যিলহজ্জ মাসের ফযীলত অপরিসীম। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,

مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيْهَا أَحَبُّ إِلَى اللهِ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ يَعْنِىْ أَيَّامَ الْعَشْرِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ  وَلَا الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ قَالَ وَلَا الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ إِلَّا رَجُلٌ خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَىْءٍ

‘আল্লাহর নিকট যিলহজ্জ মাসের দশ দিনের আমলের চাইতে অধিক পসন্দের আমল আর নেই। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও কি নয়? রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, না; আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে ঐ ব্যক্তি ব্যতীত, যে স্বীয় জান ও মাল নিয়ে জিহাদে বের হয়েছে কিন্তু সে নিজে এবং তার মাল কিছুই ফিরে আসেনি (অর্থাৎ শহীদ হয়েছে)’।[২] অন্য হাদীছে এসেছে, ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, مَا مِنْ عَمَلٍ أَزْكَى عِنْدَ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلَا أَعْظَمَ أَجْرًا مِنْ خَيْرٍ تَعْمَلُهُ فِىْ عَشْرِ الْأَضْحَى ‘যে সমস্ত আমল করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায় এবং সর্বোত্তম মর্যাদা লাভ করা যায় যিলহজ্জর মাসের দশদিনের আমল তার অনুরূপ’।[৩]

উল্লেখ্য যে, ‘যিলহজ্জ মাসের প্রতিটি দিনের ছিয়াম এক বছরের ছিয়ামের সমতুল্য। এর প্রতিটি রাতের ইবাদত লায়লাতুল ক্বদরের ইবাদতের সমতুল্য’[৪] মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ।[৫]

১). সর্বশ্রেষ্ঠ দিন

যিলহজ্জের প্রথম দশদিন পৃথিবীর সকল দিন অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতম দিন। হাদীছে এসেছে, জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, أَفْضَلُ أَيَّامِ الدُّنْيَا أَيَّامُ الْعَشْرِ ‘দুনিয়ার দিন সমূহের মধ্যে যিলহজ্জের প্রথম দশদিন সর্বোত্তম দিন’।[৬] অতএব এই দশদিন অবহেলা, অলসতা কিংবা দুনিয়াবী ব্যবস্তার অযুহাতে অতিবাহিত করা উচিত নয়।

২). বেশী বেশী তাকবীর, তাহমীদ ও তাসবীহ পাঠ করা

যিলহজ্জ মাসের এই দিনগুলোতে বেশী বেশী আল্লাহর স্মরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে তাকবীর, তাসবীহ ও তাহমীদ পাঠ করতে হবে। কারণ এই দিনগুলোর আমল আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় ও পসন্দের আমল। হাদীছে এসেছে,

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا مِنْ أَيَّامٍ أَعْظَمُ عِنْدَ اللهِ وَلَا أَحَبُّ إِلَيْهِ مِنْ الْعَمَلِ فِيْهِنَّ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ الْعَشْرِ فَأَكْثِرُوْا فِيْهِنَّ مِنْ التَّهْلِيْلِ وَالتَّكْبِيْرِ وَالتَّحْمِيْدِ

ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘এই দিনসমূহ আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাপূর্ণ এবং এই দশদিনের মধ্যে সম্পাদিত আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। সুতরাং এই দিনগুলোতে তোমরা বেশী বেশী তাসবীহ, তাকবীর ও তাহমীদ পাঠ কর’।[৭]

৩). নফল ছিয়াম রাখা

যিলহজ্জের এক তারিখ থেকে নয় তারিখ পর্যন্ত ছিয়াম রাখা সুন্নাত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দিনগুলোতে ছিয়াম রাখতেন। তাছাড়া যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশদিন অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ।[৮] হাদীছে এসেছে,

عَنْ هُنَيْدَةَ بْنِ خَالِدٍ عَنِ امْرَأَتِهِ عَنْ بَعْضِ أَزْوَاجِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَصُوْمُ تِسْعًا مِنْ ذِى الْحِجَّةِ

হুনায়দা ইবনু খালেদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জনৈকা স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যিলহজ্জ মাসে নয়টি ছিয়াম পালন করতেন।[৯]

৪). ‘আরাফার দিনের ছিয়াম

‘আরাফার দিনের অনেক ফযীলত রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা এ দিন মানুষকে সবচেয়ে বেশী জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেন এবং ফেরেশতাগণের সামনে গৌরব করে বলেন, আরাফার মাঠের এ সকল মানুষ কী চায়? অর্থাৎ যা চায় তাই দান করা হবে।[১০] কিন্তু যারা হজ্জ করতে যাননি, তাদের জন্য রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ ছিয়াম পালন করার সুযোগ করে দিয়েছেন, যাতে করে উক্ত ফযীলতের কিছু অংশ তারাও পেতে পারে। যদিও রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরাফাতের ময়দানে অবস্থানকারী ব্যক্তিকে আরাফার ছিয়াম রাখতে নিষেধ করেছেন।[১১] একদা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে আরাফা দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُّكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِىْ قَبْلَهُ وَالسَّنَةَ الَّتِىْ بَعْدَهُ 

‘আরাফা দিবসের ছিয়াম সম্পর্কে আল্লাহর কাছে আমি আশা করি যে, তা বিগত এক বছর ও আগত এক বছরের (ছগীরা) গুনাহর কাফফারা হবে’।[১২] আর যদি আরাফার দিন জুম‘আর দিনও হয়, তবুও ছিয়াম রাখা যাবে।[১৩]

৫). হজ্জ ও ওমরাহ পালন করা  

এ মাসের একটি মৌলিক গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল হজ্জ ও ওমরাহ সম্পাদন করা। এটি সামর্থ্যবান মুসলিম ব্যক্তির জন্য আবশ্যকীয় পালনীয় ইবাদত। সকল ‘আম ব্যক্তির জন্য এই ইবাদত প্রযোজ্য নয়। মহান আল্লাহ বলেন, وَ لِلّٰہِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الۡبَیۡتِ مَنِ اسۡتَطَاعَ اِلَیۡہِ سَبِیۡلًا ‘মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে, তাকে আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে ঐ গৃহে হজ্জ করা অবশ্যই কর্তব্য’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ৯৭)।

হজ্জ ও ওমরার ফযীলত বর্ণনায় হাদীছে এসেছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سُئِلَ أَىُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ فَقَالَ إِيْمَانٌ بِاللهِ وَرَسُوْلِهِ قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ الْجِهَادُ فِىْ سَبِيْلِ اللهِ قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُوْرٌ

‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, কোন্ আমলটি সর্বোত্তম? তিনি বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। আবার তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। পুনরায় তাকে জিজ্ঞেস করা হল, তারপর কোন্টি? তিনি বললেন, কবুলযোগ্য হজ্জ’।[১৪]

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, الْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا وَالْحَجُّ الْمَبْرُوْرُ لَيْسَ لَهُ جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ ‘এক ওমরাহ থেকে অপর ওমরা মধ্যবর্তী সময়ের কাফ্ফারা স্বরূপ। উভয়ের কবুলযোগ্য হজ্জের একমাত্র প্রতিদান হল জান্নাত’।[১৫]

৬. চুল, নখ প্রভৃতি কর্তন না করা

যিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী দাতা চুল, নখ ইত্যাদি কাটতে পারবে না। উম্মে সালামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,

إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ وَأَرَادَ بَعْضُكُمْ أَنْ يُّضَحِّيَ فَلَا يَمَسَّ مِنْ شَعْرِهِ وَبَشَرِهِ شَيْئًا. وَفِيْ رِوَايَةٍ فَلَا يَأْخُذَنَّ شَعْرًا وَلَا يَقْلِمَنَّ ظُفْرًا. وَفِيْ رِوَايَةٍ مَّنْ رَأَى هِلَالَ ذِي الْحِجَّةِ وَأَرَادَ أَنْ يُّضَحِّيَ فَلَا يَأْخُذْ مِنْ شَعْرِهِ وَلَا مِنْ أَظْفَارِهِ

‘যখন যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ তারিখ শুরু হয়, আর তোমাদের মধ্যে কেউ কুরবানী করার ইচ্ছা করে, তখন সে যেন নিজের চুল বা শরীরের কোন অংশ স্পর্শ না করে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, সে যেন চুল না কাটে এবং নখ না কাটে। অন্যত্র রয়েছে, যে ব্যক্তি যিলহজ্জের নতুন চাঁদ দেখে এবং কুরবানী করার ইচ্ছা করে, সে যেন নিজের চুল না ছাঁটাই করে এবং নখসমূহ না কাটে’।[১৬]

৭). কুরবানী করা

যিলহজ্জ মাসের আরো একটি মহৎ কাজ হল- পশু কুরবানী করা। মহান আল্লাহ বলেন, فَصَلِّ  لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ   ‘আপনি আপনার প্রতিপালকের জন্য ছালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন’ (সূরা আল-কাওছার : ২)। অন্যত্র আল্লাহ বলেন, وَلِکُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَکًا ‘প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমরা কুরবানীর বিধান রেখেছিলাম’ (সূরা আল-হজ্জ : ৩৪)। ১০ যিলহজ্জকে কুবানীর দিন বলা হয়। এ দিন ঈদুল আযহার ছালাত আদায়ের শেষে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনার্থে তাঁর নামে পশু কুরবানী করতে হয়।[১৭]

৮). যিলহজ্জের ৯ তারিখ ফজর হতে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করা  

উত্তম হল ৯ তারিখ ‘আরাফার দিন সকাল হতে ১৩ তারিখ আছর পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করা।[১৮] তবে যিলহজ্জের প্রথম দিন হতে কুরবানীর পরের তিনদিন পর্যন্তও তাকবীর পাঠ করা যায়।[১৯] উল্লেখ্য, ঈদুল ফিতরের দিন ফজর হতে ঈদের ছালাত পর্যন্ত তাকবীর পাঠ করা সুন্নাত।[২০] তাকবীরের শব্দগুলো নি¤œরূপ :

اَللّٰہُ أَكْبَرُ اَللّٰهُ أَكْبَرُ لَا إِ لٰہَ إِلَّا اللّٰهُ وَ اللّٰهُ أَكْبَرُ اَللّٰهُ أَكْبَرُ وَ لِلّٰهِ الْحَمْدُ

উচ্চারণ : ‘আল্লা-হু আকবার আল্লা-হু আকবার লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু, আল্লা-হু আকবার আল্লা-হু আকবার ওয়া লিল্লা-হিল হাম্দ’।

অর্থ :  আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই। আল্লাহ মহান, আল্লাহ মহান। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।[২১] পুরুষের জন্য উচ্চৈঃস্বরে তাকবীর পাঠ করা সুন্নাত।[২২] তবে মহিলারা নিঃশব্দে তাকবীর পাঠ করবে।[২৩]  

৯). আইয়ামে তাশরীক্বের দিনে ছিয়াম না রাখা

ঈদুল আযহার পরবর্তী তিনদিন তথা ১১, ১২ ও ১৩ ই যিলহজ্জ তারিখকে আইয়ামে তাশরীক্বের দিন বলা হয়। এই দিনগুলোতে ছিয়াম রাখা নিষেধ।[২৪] অপর বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, أَيَّامُ التَّشْرِيْقِ أَيَّامُ أَكْلٍ وَّشُرْبٍ ‘আইয়ামে তাশরীক্বের দিনগুলো হচ্ছে পানাহারের দিন’।[২৫]

উল্লেখ্য যে, যারা প্রতি মাসে নিয়মিত তিনটি করে নফল ছিয়াম পালন করে থাকেন, তারা যিলহজ্জ মাসে ২ দিন ছিয়াম পালন করতে পারবেন। অর্থাৎ ১৪ ও ১৫ তারিখ। কারণ ১৩ তারিখ আইয়ামে তাশরীক্বের দিন। তাছাড়া প্রতি মাসে ছিয়াম দু’টিও রাখা যায়। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তিকে বললেন, তুমি প্রতি মাসে একদিন ছিয়াম পালন কর। লোকটি বলল, আমি এর চেয়ে বেশী পারব। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি প্রতি মাসে দু’দিন ছিয়াম পালন কর। লোকটি বলল, আমি এর চেয়ে বেশী পারব। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি প্রতি মাসে তিনদিন ছিয়াম পালন কর।[২৬] তবে চাইলে ১৪, ১৫ ও ১৬ এই তিন দিনও রাখতে পারে।[২৭]

পরিশেষে বলা যায়, যিলহজ্জ মাস একটি পবিত্র ও অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ মাস। এ মাসের প্রথম দশদিন আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার জন্য উপরিউক্ত আমলগুলো সম্পাদন করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর যরূরী। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সেই তাওফীক্ব দান করুন-আমীন!!



* এম. এ, ইসলামী আবরী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

তথ্যসূত্র : 
[১]. জামেঊল বায়ান ফী তাবীলিল কুরআন, ২৪তম খণ্ড, পৃ. ৩৯৬; তাফসীরে কুবতুবী, ২০ তম খণ্ড, পৃ. ৩৯; মুহাম্মাদ বিন ছালেহ বিন মুহাম্মাদ আল-ঊছায়মীন, তাফসীরুল আল্লামা মুহাম্মাদ আল-উছায়মীন, ২৭তম খণ্ড, পৃ. ৩।
[২]. আবূ দাঊদ, হা/২৪৩৮; ইবনু মাজাহ, হা/১৭২৭; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৬৮; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১২৪৮; ইরওয়াউল গালীল, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৯৭, সনদ ছহীহ।
[৩]. দারেমী, হা/১৭৭৪; বায়হাক্বী-শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৪৭৬; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১২৪৮; ইরওয়াউল গালীল, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৯৮, সনদ হাসান।
[৪]. তিরমিযী, হা/৭৫৮; মিশকাত, হা/১৪৭১; সিলসিলা যঈফাহ, হা/৫১৪২; যঈফুল জামে‘, হা/৫১৬১।
[৫]. কিতাবুল যু‘আফা ওয়াল মাতরূকীন, ১ম খণ্ড, পৃ. ২৪৩, রাবী নং-৫৯৮; মুখতারুল কামেল ফীয যু‘আফা, ১ম খণ্ড, পৃ. ৭৬৮, রাবী নং ১৯৮৭।
[৬]. ছহীহুল জামে‘, হা/১১৩৩, সনদ ছহীহ।
[৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৫১৮৯; বায়হাক্বী-শু‘আবুল ঈমান, হা/৩৭৫১; ত্বাবারাণী-মু‘জামুল কাবীর, হা/১১১১৬; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১২৪৮, সনদ জাইয়েদ।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৬৯; মিশকাত, হা/১৪৬০।
[৯]. নাসাঈ, হা/২৪১৭, সনদ হাসান।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৪৮।
[১১]. মুস্তাদরাক আলাছ ছহীহাইন লিল হাকিম, হা/১৫৮৭।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৮০৩; আবূ দাঊদ, হা/২৪২৫; মিশকাত, হা/২০৪৪।
[১৩]. শায়খ আব্দুল্লাহ আল-ফাওযান, আল-আহকাম ওয়াল আদাব আল-মুতা‘আল্লাক্বাতু বি‘আশরি যিলহিজ্জা ওয়া আইয়ামিত তাশরীক্ব, পৃ. ১৭।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫১৯ ‘কবুলযোগ্য হজ্জের ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৪, ‘হজ্জ’ অধ্যায়-২৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৩; নাসাঈ, হা/৩১৩০; মিশকাত, হা/২১০৬।
[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/১৭৭৩ ‘ওমরাহ ওয়াজিব হওয়া ও তার ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-১, ‘ওমরাহ’ অধ্যায়-২৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৪৯; নাসাঈ, হা/২৬২৯; মিশকাত, হা/২৫০৮।
[১৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯৭৭; মিশকাত, হা/১৪৫৯।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৮৫; মিশকাত, হা/১৪৭২।
[১৮]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৫৬৭৮, সনদ ছহীহ; ইরওয়াউল গালীল, হা/৬৫৩-এর আলোচনা দ্র., ৩য় খণ্ড, পৃ. ১২৫।
[১৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৯৬৯-এর অনুচ্ছেদ দ্র.।
[২০]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ, হা/৫৬৬৭; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৬৩৪৯, সনদ ছহীহ; ইরওয়াউল গালীল, হা/৬৫০-এর আলোচনা দ্র., ৩য় খণ্ড, পৃ. ১২৩।
[২১]. মুছান্নাফ ইবনে আবী শায়বা, হা/৫৬৯৭; দারাকুৎনী হা/১৭৫৬, সনদ ছহীহ; ইরওয়াউল গালীল, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১২৫; আবুল হাসান মুহাম্মাদ ইবনু হাসান আশ-শায়খ, জামিঊ ছহীহিল আযকার লিল আলবানী, হা/৬২০।
[২২]. ছহীহ বুখারী, হা/১৫৪৮।
[২৩]. তাফসীরে কুরতুবী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩০৭ ও ৩য় খণ্ড, পৃ. ২-৪; বায়হাক্বী, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩১৬; শায়খ মুহাম্মাদ ছালেহ আল-মুনাজ্জিদ, ফাতাওউল ইসলাম সাওয়াল ও জাওয়াব, পৃ. ৩১২৭, প্রশ্ন নং-১৫৯৯।
[২৪]. আবূ দাঊদ, হা/২৪১৮, সনদ ছহীহ।
[২৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১১৪১; মিশকাত, হা/২০৫০।
[২৬]. নাসাঈ, হা/২৪৩৪, ২৩৯৪, সনদ ছহীহ।
[২৭]. আবূ দাঊদ, হা/২৪৫৩, সনদ ছহীহ।




প্রসঙ্গসমূহ »: আমল
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ত্বাহারাত (৯ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১২ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১১ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে রামাযান - মুহাম্মাদ আবূ সাঈদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে জিহাদ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : শাস্তি প্রয়োগ ও অন্যান্য বিধান - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ