আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
- মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান
- অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*
(৩য় কিস্তি)
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ الرَّحِمُ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ تَقُوْلُ مَنْ وَصَلَنِيْ وَصَلَهُ اللهُ وَمَنْ قَطَعَنِيْ قَطَعَهُ اللهُ
২৭. আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, আত্মীয়তার বন্ধন আল্লাহর আরশে ঝুলন্ত অবস্থায় থাকে এবং সে বলে, যে ব্যক্তি আমাকে গ্রহণ করবে অর্থাৎ পারস্পরিক সম্পর্ক বজায় রাখবে আল্লাহ তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবেন। আর যে ব্যক্তি আমার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবে আল্লাহও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন।[১]
وَعَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ عَوْفٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنَا اللهُ وَأَنَا الرَّحْمَنُ خَلَقْتُ الرَّحِمَ وَشَقَقْتُ لَهَا مِنِ اسْمِيْ فَمَنْ وَصَلَهَا وَصَلْتُهُ وَمَنْ قَطَعَهَا قَطَعْتُهُ أَوْ قَالَ بَتَّتُهُ
২৮. আব্দুর রহমান ইবনু আওফ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, আমি আল্লাহ, আমি রহমান, রেহেমকে আমিই সৃষ্টি করেছি। আর ‘রেহেম’ শব্দটি আমি আমার নাম হতে নির্গত করেছি। সুতরাং যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে, আমিও তার সাথে সম্পর্ক অটুট রাখব। আর যে তা ছিন্ন করবে, আমিও তাকে বিচ্ছিন্ন করে দিব।[২]
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ خَلَقَ الْخَلْقَ حَتَّى إِذَا فَرَغَ مِنْهُمْ قَامَتِ الرَّحِمُ فَقَالَتْ هَذَا مَقَامُ الْعَائِذِ مِنَ الْقَطِيْعَةِ قَالَ نَعَمْ أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ أَصِلَ مَنْ وَصَلَكِ وَأَقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ؟ قَالَتْ بَلَى قَالَ فَذَاكِ لَكِ ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اقْرَءُوْا إِنْ شِئْتُمْ (فَہَلۡ عَسَیۡتُمۡ اِنۡ تَوَلَّیۡتُمۡ اَنۡ تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ وَ تُقَطِّعُوۡۤا اَرۡحَامَکُمۡ- اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ لَعَنَہُمُ اللّٰہُ فَاَصَمَّہُمۡ وَ اَعۡمٰۤی اَبۡصَارَہُمۡ- اَفَلَا یَتَدَبَّرُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ اَمۡ عَلٰی قُلُوۡبٍ اَقۡفَالُہَا ) [محمد: ২২-২৪].
২৯. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যখন মাখলুক সৃষ্টি করে তা সমাপ্ত করলেন, তখন ‘রেহেম’ (আত্মীয়তা ও রক্ত সম্বন্ধ) দাঁড়িয়ে বলল, এ হচ্ছে আত্মীয়তার সম্পর্ক বিছিন্ন করা থেকে আশ্রয় প্রার্থনাকারীর স্থান। তিনি বললেন, হ্যাঁ। তুমি কি এতে তুষ্ট নও, যে তোমাকে সংযুক্ত রাখবে আমিও তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখব, আর যে তোমাকে বিচ্ছিন্ন করে দেবে, আমিও তাকে আলাদা করে দেব? তখন সে বলল, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তোমার জন্য তাই হবে। এরপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, যদি তোমরা চাও তাহলে তেলাওয়াত করতে পার, ‘তোমরা কি অস্বীকার করতে পারবে যে, তাদের উপর দায়িত্বপ্রাপ্ত করা হলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ফাসাদ সৃষ্টি করবে এবং তোমাদের আত্মীয়তার সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেবে, এরাই তারা যাদের উপর আল্লাহ অভিশাপ বর্ষণ করেছেন। এরপর তিনি তাদের বধির করে দিয়েছেন ও তাদের চোখগুলো দৃষ্টিহীন করে দিয়েছেন। তারা কি কুরআন সম্পর্কে অভিনিবেশ সহকারে চিন্তা করে না, না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?’ (সূরা মুহাম্মাদ : ২৩)।[৩]
৩০. وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ إِنَّ الرَّحِمَ شُجْنَةٌ مِنَ الرَّحْمَنِ تَقُوْلُ يَا رَبِّ إِنِّيْ قُطِعْتُ يَا رَبِّ إِنِّيْ أُسِيْءَ إِلَيَّ يَا رَبِّ إِنِّيْ ظُلِمْتُ يَا رَبِّ يَا رَبِّ قَالَ فَيُجِيْبُهَا أَمَا تَرْضَيْنَ أَنْ أَصِلَ مَنْ وَصَلَكِ وَأَقْطَعَ مَنْ قَطَعَكِ؟
৩০. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, রেহেম (রক্তের বাঁধন) রহমানের অংশবিশেষ। সে বলবে, ‘হে প্রভু! আমাকে ছিন্ন করা হয়েছে, হে প্রভু! আমার সাথে খারাপ আচরণ করা হয়েছে, হে প্রভু! আমাকে যুলুম করা হয়েছে। হে প্রভু! হে প্রভু!...। তিনি বলেন, তখন আল্লাহ তাকে জবাব দিবেন, তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে, তোমাকে যে ছিন্ন করবে, আমিও তাকে ছিন্ন করব এবং তোমাকে যে সংযুক্ত রাখবে, আমিও তাকে সংযুক্ত রাখব?।[৪]
৩১. وَعَنْ عَبْدِ اللهِ ابْنِ عَمْرٍو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ لَيْسَ الْوَاصِلُ بِالْمُكَافِىءِ وَلَكِنَّ الْوَاصِلَ الَّذِيْ إِذَا قُطِعَتْ رَحِمُهُ وَصَلَهَا.
৩১. আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, সেই ব্যক্তি আত্মীয়তা রক্ষাকারী নয়, যে শুধু বিনিময়ের জন্য আত্মীয়তা রক্ষা করে। বরং সেই ব্যক্তি আত্মীয়তা রক্ষাকারী, যার সাথে আত্মীয়তা ছিন্ন করা হলে সে পুনরায় স্থাপন করে।[৫]
৩২. وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ إِنَّ لِيْ قَرَابةً أَصِلُهُمْ وَيَقْطَعُوْنِيْ وَأُحْسِنُ إِلَيْهِمْ وَيُسِيْؤُوْنَ إِلَيّ وَأَحْلُمُ عَنْهُمْ وَيَجْهَلُوْنَ عَلَيَّ فَقَالَ لَئِنْ كُنْتَ كَمَا قُلْتَ فَكَأَنَّمَا تُسِفُّهُمُ الْمَلَّ وَلَا يَزَالُ مَعَكَ مِنَ اللهِ ظَهِيْرٌ عَلَيْهِمْ مَا دُمْتَ عَلَى ذَلِكَ.
৩২. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমার এমন কতিপয় আত্মীয়-স্বজন আছে, তাদের সাথে আমি সদাচরণ করি, কিন্তু তারা আমার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে। আমি তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করি, অথচ তারা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। আমি তাদের ব্যবহারে ধৈর্যধারণ করি, কিন্তু তারা আমার সাথে মূর্খতা প্রদর্শন করে। তখন উত্তরে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি যেরূপ বললে, যদি তুমি এরূপ আচরণই করে থাক, তবে তুমি তাদের মুখের উপর যেন গরম ছাই নিক্ষেপ করেছ। আর যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি এই নীতির উপর অটল থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তোমার সাথে একজন সাহায্যকারী থাকবেন, যিনি তাদের ক্ষতিকে প্রতিরোধ করবেন।[৬]
৩৩. وَعَنْ أُمِّ كُلْثُوْمٍ بِنْتِ عُقْبَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ أَفْضَلُ الصَّدَقَةِ الصَّدَقَةُ عَلَى ذِي الرَّحِمِ الْكَاشِحِ.
৩৩. উম্মে কুলছূম বিনতে উক্ববা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, সর্বোত্তম ছাদাক্বাহ হচ্ছে, অন্তরে শত্রুতা পোষণকারী নিকটাত্মীয়কে ছাদাক্বাহ করা।[৭]
৩৪. وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ ثُمَّ لَقِيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَأَخَذْتُ بِيَدِهِ فَقُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَخْبِرْنِيْ بِفَوَاضِلِ الْأَعْمَالِ؟ فَقَالَ يَا عُقْبَةُ بْنَ عَامِرٍ صِلْ مَنْ قَطَعَكَ وَأَعْطِ مَنْ حَرَمَكَ وَأَعْرِضْ عَمَّنْ ظَلَمَكَ وَ فِيْ رِوايَةٍ وَاعْفُ عَمَّنْ ظَلَمَكَ.
৩৪. উক্ববা ইবনু আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর হাত ধরে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাকে ফযীলতপূর্ণ কিছু আমলের কথা বলুন? নবী করীম (ﷺ) বললেন, যে তোমার সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করেছে তার সাথে সম্পর্ক দৃঢ় কর। যে তোমাকে বঞ্চিত করেছে, তাকে দান কর। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যে তোমার প্রতি যুল্ম করেছে তাকে ক্ষমা কর।[৮]
ইয়াতীমের রক্ষণাবেক্ষণ, ভরণপোষণ করা এবং অসহায়-গরীবদের প্রতি দান করার ফযীলত
আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ اِذۡ اَخَذۡنَا مِیۡثَاقَ بَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ لَا تَعۡبُدُوۡنَ اِلَّا اللّٰہَ وَ بِالۡوَالِدَیۡنِ اِحۡسَانًا وَّ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنِ وَ قُوۡلُوۡا لِلنَّاسِ حُسۡنًا وَّ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ ثُمَّ تَوَلَّیۡتُمۡ اِلَّا قَلِیۡلًا مِّنۡکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ مُّعۡرِضُوۡنَ.
‘আর যখন আমরা বনী ইসরাঈলের অঙ্গীকার গ্রহণ করলাম যে, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত কারো ইবাদত করবে না এবং সদাচার করবে পিতা-মাতা, আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম ও মিসকীনদের সাথে। আর মানুষকে উত্তম কথা বল, ছালাত কায়েম কর এবং যাকাত প্রদান কর। অতঃপর তোমাদের মধ্য থেকে স্বল্প সংখ্যক ব্যতীত তোমরা ফিরে গেলে। আর তোমরা (স্বীকার করে অতঃপর তা থেকে) বিমুখ হও’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৮৩)। আল্লাহ বলেন,
لَیۡسَ الۡبِرَّ اَنۡ تُوَلُّوۡا وُجُوۡہَکُمۡ قِبَلَ الۡمَشۡرِقِ وَ الۡمَغۡرِبِ وَ لٰکِنَّ الۡبِرَّ مَنۡ اٰمَنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ الۡمَلٰٓئِکَۃِ وَ الۡکِتٰبِ وَ النَّبِیّٖنَ وَ اٰتَی الۡمَالَ عَلٰی حُبِّہٖ ذَوِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡیَتٰمٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنَ وَ ابۡنَ السَّبِیۡلِ وَ السَّآئِلِیۡنَ وَ فِی الرِّقَابِ وَ اَقَامَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَی الزَّکٰوۃَ وَ الۡمُوۡفُوۡنَ بِعَہۡدِہِمۡ اِذَا عٰہَدُوۡا وَ الصّٰبِرِیۡنَ فِی الۡبَاۡسَآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ حِیۡنَ الۡبَاۡسِ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ صَدَقُوۡا وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُتَّقُوۡنَ.
‘ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে। বরং ভালো কাজ হল যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দিমুক্তিতে এবং যে ছালাত কায়েম করে, যাকাত আদায় করে এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করেছে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাক্বী’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৭৭)। মহান আল্লাহ বলেন,
اَمَّا السَّفِیۡنَۃُ فَکَانَتۡ لِمَسٰکِیۡنَ یَعۡمَلُوۡنَ فِی الۡبَحۡرِ فَاَرَدۡتُّ اَنۡ اَعِیۡبَہَا وَ کَانَ وَرَآءَہُمۡ مَّلِکٌ یَّاۡخُذُ کُلَّ سَفِیۡنَۃٍ غَصۡبًا.
‘নৌকাটির বিষয় হল, তা ছিল কিছু দরিদ্র লোকের যারা সমুদ্রে কাজ করত। আমি নৌকাটিকে ত্রুটিযুক্ত করতে চেয়েছি কারণ তাদের পেছনে ছিল এক রাজা, যে নৌকাগুলো জোরপূর্বক ছিনিয়ে নিচ্ছিল’ (সূরা আল-কাহফ : ৭৯)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ لَا یَاۡتَلِ اُولُوا الۡفَضۡلِ مِنۡکُمۡ وَ السَّعَۃِ اَنۡ یُّؤۡتُوۡۤا اُولِی الۡقُرۡبٰی وَ الۡمَسٰکِیۡنَ وَ الۡمُہٰجِرِیۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ لۡیَعۡفُوۡا وَ لۡیَصۡفَحُوۡا اَلَا تُحِبُّوۡنَ اَنۡ یَّغۡفِرَ اللّٰہُ لَکُمۡ وَ اللّٰہُ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ.
‘আর তোমাদের মধ্যে যারা মর্যাদা ও প্রাচুর্যের অধিকারী, তারা যেন এমন শপথ না করে যে, তারা নিকটাত্মীয়দের, মিসকীনদের ও আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের কিছুই দেবে না। আর তারা যেন তাদের ক্ষমা করে এবং তাদের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে। তোমরা কি পসন্দ কর না যে, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করে দেন? আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আন-নূর : ২২)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ یُطۡعِمُوۡنَ الطَّعَامَ عَلٰی حُبِّہٖ مِسۡکِیۡنًا وَّ یَتِیۡمًا وَّ اَسِیۡرًا.
‘তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে’ (সূরা আদ-দাহর : ৮)। আল্লাহ বলেন,
فَلَا اقۡتَحَمَ الۡعَقَبَۃَ- وَ مَاۤ اَدۡرٰىکَ مَا الۡعَقَبَۃُ- فَکُّ رَقَبَۃٍ - اَوۡ اِطۡعٰمٌ فِیۡ یَوۡمٍ ذِیۡ مَسۡغَبَۃٍ - یَّتِیۡمًا ذَا مَقۡرَبَۃٍ - اَوۡ مِسۡکِیۡنًا ذَا مَتۡرَبَۃٍ.
‘তবে সে দুর্গম গিরিপথটি অতিক্রম করতে সচেষ্ট হয়নি। আর কিসে তোমাকে জানাবে, দুর্গম গিরিপথটি কী? তা হচ্ছে, দাস মুক্ত করণ। অথবা খাদ্য দান করা দুর্ভিক্ষের দিনে। ইয়াতীম আত্মীয়-স্বজনকে। অথবা ধূলি-মলিন মিসকীনকে’ (সূরা আল-বালাদ : ১১-১৬)।
৩৫. وَعَنْ سَهْلِ بْنِ سَعْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيْمِ لَهُ وَلِغَيْرِهِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى وَفرَّجَ بَيْنَهُمَا شَيْئًا.
৩৫. সাহল ইবনু সা‘দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমি আর ইয়াতীমের লালন-পালনকারী; ইয়াতীম নিজের হোক কিংবা অন্যের হোক জান্নাতে এভাবে থাকব। তিনি তার তর্জনী ও মধ্যমা আঙ্গুলের মধ্যে সামান্য ফাঁকা রেখে ইশারা করে দেখালেন।[৯]
৩৬. وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ كَافِلُ الْيَتِيْمِ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ أَنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ فِي الْجَنَّةِ وَأَشَارَ مَالِكٌ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى.
৩৬. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নিজের (আত্মীয়) বা অনাত্মীয় ইয়াতীমের তত্ত্বাবধানকারী ও আমি জান্নাতে এ দুই আঙ্গুলের মত থাকব। রাবী মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) (হাদীস বর্ণনার সময়) শাহাদত ও মধ্যমা আঙ্গুলীর দ্বারা ইশারা করেছেন।[১০]
৩৭. وَعَنْ زُرَارَةَ بْنِ أَبِيْ أَوْفَى عَنْ رَجُلٍ مِنْ قَوْمِهِ يُقَالُ لَهُ مَالِكٍ أَوِ ابْنُ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ سَمِعَ النَّبِيَّ ﷺ يَقُوْلُ مَنْ ضَمَّ يَتِيْمًا بَيْنَ مُسْلِمِيْنَ فِيْ طَعَامِهِ وَشَرَابِهِ حَتَّى يَسْتَغْنِيَ عَنْهُ وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ الْبَتَّةَ وَمَنْ أَدْرَكَ وَالِدَيْهِ أَوْ أَحَدَهُمَا ثُمَّ لَمْ يَبَرَّهُمَا ثُمَّ دَخَلَ النَّارَ فَأَبْعَدَهُ اللهُ وَأَيُّمَا مُسْلِمٍ أَعْتَقَ رَقَبَةً مُسْلِمَةً كَانَتْ فَكَاكَهُ مِنَ النَّارِ.
৩৭. যুরারা ইবনে আবূ আওফা তার সম্প্রদায়ের একজন লোক হতে বর্ণনা করেছেন। তার নাম মালিক অথবা ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছেন, যে ব্যক্তি মুসলিমদের মধ্য হতে দু’জন ইয়াতীমের অমুখাপেক্ষী না হওয়া পর্যন্ত খাবার, পানীয় প্রদান সহ সব ধরনের লালন পালনের দায়িত্ব নেয়, আবশ্যিকভাবে তার জন্য জান্নাত অবধারিত হবে। যে ব্যক্তি তার পিতা-মাতা উভয়কে অথবা একজনকে জীবিতাবস্থায় পায়, অতঃপর তাদের সাথে সদাচরণ না করার কারণে জাহান্নামে প্রবেশ করে, আল্লাহ তার উপর রাগান্বিত হন। যদি কোন মুসলিম ব্যক্তি কোন মুসলিম নারীকে আযাদ করে দেয়, তবে সে তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে।[১১]
৩৮. وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا شَكَا إِلَى النَّبِيِّ ﷺ قَسْوَةَ قَلْبِهِ فَقَالَ امْسَحْ رَأْسَ الْيَتِيْمِ وَأَطْعِمِ الْمِسْكِيْنَ.
৩৮. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একদা এক ব্যক্তি নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট এসে নিজের হৃদয়ের কাঠিন্যতা সম্পর্কে অভিযোগ করল। তিনি বললেন, ইয়াতীমের মাথায় হাত বুলাও এবং মিসকীনকে খানা খাওয়াও।[১২]
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
* পিএইচ.ডি গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৯৮৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৫৫।
[২]. তিরমিযী, হা/১৯০৭; আবু দাউদ, হা/১৬৯৪, সনদ ছহীহ।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৮৩০; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৫৪।
[৪]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৮৯৭৫; সনদ জাইয়্যিদ; ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৪৪১; আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৬৫, সনদ হাসান।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৯৯১; আবূ দাউদ, হা/১৬৯৭; তিরমিযী, হা/১৯০৮।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৫৮।
[৭]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/২০৪; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/২৩৮৬; মুসতাদরাক হাকেম, হা/১৪৭৫, হাদীছটি ইমাম মুসলিমের শর্তে ছহীহ; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৮৯৪।
[৮]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৮৮, সনদ হাসান।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৩০৪।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৮৭।
[১১]. মুসনাদু আবী ই‘য়ালা, হা/৯২৬; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৬৬৮; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫৪৩, সনদ হাসান লি-গাইরিহী।
[১২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৯০০৬; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৫৪৫, সনদ হাসান লি-গাইরিহী।