ফাযায়েলে আমল : আহার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান
- অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*
খাওয়ার শুরুতে বিসমিল্লাহ বলার ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
تَبٰرَکَ اسۡمُ رَبِّکَ ذِی الۡجَلٰلِ وَ الۡاِکۡرَامِ.
‘আপনার রবের নাম বরকতময়, যিনি মহামহিম ও মহানুভব’ (সূরা আর-রহমান : ৭৮)। মহান আল্লাহ বলেন,
یَسۡـَٔلُوۡنَکَ مَاذَاۤ اُحِلَّ لَہُمۡ قُلۡ اُحِلَّ لَکُمُ الطَّیِّبٰتُ وَ مَا عَلَّمۡتُمۡ مِّنَ الۡجَوَارِحِ مُکَلِّبِیۡنَ تُعَلِّمُوۡنَہُنَّ مِمَّا عَلَّمَکُمُ اللّٰہُ فَکُلُوۡا مِمَّاۤ اَمۡسَکۡنَ عَلَیۡکُمۡ وَ اذۡکُرُوا اسۡمَ اللّٰہِ عَلَیۡہِ وَ اتَّقُوا اللّٰہَ اِنَّ اللّٰہَ سَرِیۡعُ الۡحِسَابِ.
‘তারা আপনাকে প্রশ্ন করে, তাদের জন্য কী বৈধ করা হয়েছে? বলুন, তোমাদের জন্য বৈধ করা হয়েছে সব ভাল বস্তু এবং শিকারী পশু-পাখী, যাদেরকে তোমরা শিকার প্রশিক্ষণ দিয়েছ; সেগুলোকে তোমরা শেখাও, যা আল্লাহ তোমাদেরকে শিখিয়েছেন। সুতরাং তোমরা তা থেকে খাও, যা তোমাদের জন্য ধরে এনেছে এবং তাতে তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ কর এবং আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ হিসাব গ্রহণে দ্রুত’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৪)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ اسۡتَفۡزِزۡ مَنِ اسۡتَطَعۡتَ مِنۡہُمۡ بِصَوۡتِکَ وَ اَجۡلِبۡ عَلَیۡہِمۡ بِخَیۡلِکَ وَ رَجِلِکَ وَ شَارِکۡہُمۡ فِی الۡاَمۡوَالِ وَ الۡاَوۡلَادِ وَ عِدۡہُمۡ وَ مَا یَعِدُہُمُ الشَّیۡطٰنُ اِلَّا غُرُوۡرًا.
‘তোমার কণ্ঠ দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে পার প্ররোচিত কর, তাদের উপর ঝাপিয়ে পড় তোমার অশ্বারোহী ও পদাতিক বাহিনী নিয়ে এবং তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে অংশীদার হও এবং তাদের ওয়াদা দাও। আর শয়তান প্রতারণা ছাড়া তাদেরকে কোন ওয়াদাই দেয় না’ (সূরা বানী ইসরাইল : ৬৪)।
১. عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ يَأْكُلُ طَعَامَهُ فِيْ سِتَّةٍ مِنْ أَصْحَابِهِ فَجَاءَ أَعْرَابِيٌّ فَأَكَلَهُ بِلُقْمَتَيْنِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَمَا إِنَّهُ لَوْ سَمَّى لَكَفَاكُمْ.
১. আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর ছয়জন ছাহাবী নিয়ে আহার করছিলেন, এ সময় এক বেদুঈন এল এবং সে দুই লোকমায় তা খেয়ে ফেলল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এ যদি বিসমিল্লাহ বলত তবে এ খানা তোমাদের সকলের জন্য যথেষ্ট হত।[১] অপর বর্ণনায় এসেছে,
فَإِذَا أَكَلَ أَحَدُكُمْ طَعَامَهُ فَلْيَذْكُرِ اسْمَ اللهِ عَلَيْهِ فَإِنْ نَسِيَ فِيْ أَوَّلِهِ فَلْيَقُلْ بِسْمِ اللهِ أَوَّلَهُ وَآخِرَهُ.
যখন তোমাদের কেউ খাবার খাবে, তখন সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। যদি শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে সে যেন বলে, ‘বিসমিল্লাহি আউয়ালাহু ওয়া আখিরাহ’।[২]
২. وَعَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ سَمِعَ النَّبِيَّ ﷺ يَقُوْلُ إِذَا دَخَلَ الرَّجُلُ بَيْتَهُ فَذَكَرَ اللهَ عِنْدَ دُخُوْلِهِ وَعِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ لَا مَبِيْتَ لَكُمْ وَلَا عَشَاءَ وَإِذَا دَخَلَ فَلَمْ يَذْكُرِ اللهِ عِنْدَ دُخُوْلِهِ قَالَ الشَّيْطَانُ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيْتَ وَإِذَا لَمْ يَذْكُرِ اللهَ عِنْدَ طَعَامِهِ قَالَ أَدْرَكْتُمُ الْمَبِيْتَ وَالْعَشَاءَ.
২. জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি নবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছেন, যখন কোন ব্যক্তি তার ঘরে প্রবেশ করে এবং প্রবেশকালে ও খাওয়ার সময় আল্লাহকে স্মরণ করে, তখন শয়তান বলে, এই ঘরে তোমাদের জন্য রাত্রি যাপনের সুযোগ নেই এবং খাদ্যও পাওয়া যাবে না। আর যখন কেউ ঘরে প্রবেশ করে এবং প্রবেশের সময় আল্লাহর নাম না নেয়, তখন শয়তান বলে, তোমরা রাত্রি যাপনের স্থান পেয়েছ। আর যখন সে খাওয়ার সময়ও আল্লাহর নাম না নেয়, তখন সে বলে, তোমরা রাত্রি যাপন ও খাওয়া উভয়টির সুযোগ লাভ করেছ।[৩]
৩. وَعَنْ حُذَيْفَةَ هُوَ ابْنُ الْيَمَانِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ كُنَّا إِذَا حَضَرْنَا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ طَعَامًا لَمْ يَضَعْ أَحَدُنَا يَدَهُ حَتَّى يَبْدَأَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ وَإِنَّا حَضَرْنَا مَعَهُ طَعَامًا فَجَاءَ أَعْرَابِيٌّ كَأَنَّمَا يُدْفَعُ فَذَهَبَ لِيَضَعَ يَدَهُ فِي الطَّعَامِ فَأَخَذَ رَسُولُ اللهِ ﷺ بِيَدِهِ ثُمَّ جَاءَتْ جَارِيَةٌ كَأَنَّمَا تُدْفَعُ فَذَهَبَتْ لِتَضَعَ يَدَهَا فِي الطَّعَامِ فَأَخَذَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ بِيَدِهَا وَقَالَ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَسْتَحِلُّ الطَّعَامَ الَّذِيْ لَمْ يُذْكَرِ اسْمُ اللهِ عَلَيْهِ وإِنَّهُ جَاءَ بِهَذَا الْأَعْرَابِيِّ يَسْتَحِلُّ بِهِ فَأَخَذْتُ بِيَدِهِ وَجَاءَ بِهَذِهِ الْجَارِيَةِ يَسْتَحِلُّ بِهَا فَأَخَذْتُ بِيَدِهَا فَوَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ إِنَّ يَدَهُ لَفِيْ يَدِيْ مَعَ أَيْدِيهِمَا.
৩. হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সঙ্গে কোন খাবার মজলিসে উপস্থিত হতাম, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শুরু করার আগে আমাদের কেউ তার হাত খাবারে রাখতো না। একবার আমরা তাঁর সঙ্গে এক খাওয়াতে উপস্থিত ছিলাম। সে সময় এক বেদুঈন আসল। তাকে কে যেন তাড়িয়ে এনেছে। সে তার হাত খাবারের মধ্যে হাত রাখতে উদ্যত হলে তিনি তার হাত ধরে ফেললেন। অতঃপর একটি মেয়ে আসল, যেন তাকেও তাড়িয়ে আনা হয়েছে এবং সে খাদ্যের মধ্যে হাত রাখতে উদ্যত হল। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার হাতও ধরে ফেললেন। অতঃপর বললেন, নিশ্চয় শয়তান তখনই খানাকে হালাল মনে করে, যখন তাতে আল্লাহর নাম নেয়া হয় না। তাই সে প্রথমে ঐ বেদুঈনকে নিয়ে এসেছিল, যেন তার দ্বারা খানাটি তার জন্য হালাল করতে পারে। তাই আমি তার হাত ধরে ফেললাম। অতঃপর সে ঐ মেয়েটিকে নিয়ে এসে খাদ্যটি নিজের জন্য হালাল করতে চেয়েছিল। তাই আমি তার হাতও ধরে ফেললাম। সেই সত্তার কসম, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তাদের দুজনের হাতের সাথে শয়তনের হাতটিও আমার মুঠোয় রয়েছে।[৪]
পাত্রের মাঝ থেকে না খেয়ে এক পাশ থেকে খাওয়ার ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
فَلَمَّا جَآءَہَا نُوۡدِیَ اَنۡۢ بُوۡرِکَ مَنۡ فِی النَّارِ وَ مَنۡ حَوۡلَہَا وَ سُبۡحٰنَ اللّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ.
‘তারপর সে যখন সেখানে এসে পৌঁছল, তখন ডেকে বলা হল, বরকতময় হবে যা এ আলোর মধ্যে ও এর চারপাশে আছে। আর বিশ্ব জগতের রব আল্লাহ মহা পবিত্র, মহিমান্বিত’ (সূরা আন-নামল : ৮)। মহান আল্লাহ বলেন,
یَعۡمَلُوۡنَ لَہٗ مَا یَشَآءُ مِنۡ مَّحَارِیۡبَ وَ تَمَاثِیۡلَ وَ جِفَانٍ کَالۡجَوَابِ وَ قُدُوۡرٍ رّٰسِیٰتٍ اِعۡمَلُوۡۤا اٰلَ دَاوٗدَ شُکۡرًا وَ قَلِیۡلٌ مِّنۡ عِبَادِیَ الشَّکُوۡرُ.
‘তারা তৈরি করত সুলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী তার জন্য প্রাসাদ, ভাস্কর্য, সুবিশাল হাওযের মত বড় পাত্র ও স্থির হাড়ি। হে দাউদ পরিবার! তোমরা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আমল করে যাও এবং আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ’ (সূরা সাবা : ১৩)।
৪. عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُسْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ لِلنَّبِيِّ ﷺ قَصْعَةٌ يُقَالُ لَهَا الْغَرَّاءُ يَحْمِلُهَا أَرْبَعَةُ رِجَالٍ فَلَمَّا أَضْحَوْا وَسَجَدُوا الضُّحَى أُتِيَ بِتِلْكَ الْقَصْعَةِ يَعْنِيْ وَقَدْ أُثْرِدَ فِيْهَا فَالْتَفُّوْا عَلَيْهَا فَلَمَّا كَثُرُوْا جَثَا رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَقَالَ أَعْرَابِيٌّ مَا هَذِهِ الْجِلْسَةُ؟ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ اللهَ جَعَلَنِيْ عَبْدًا كَرِيْمًا وَلَمْ يَجْعَلْنِيْ جَبَّارًا عَنِيْدًا ثُمَّ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ كُلُوْا مِنْ جَوَانِبِهَا وَدَعُوْا ذِرْوَتَهَا يُبَارَكْ فِيْهَا.
৪. আব্দুল্লাহ ইবনু বুসর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ﷺ)-এর ‘গাররা’ নামের একটি পাত্র ছিল, যা চারজন লোক উঠাতেন। অতঃপর যখন চাশতের সময় হল এবং ছাহাবীগণ চাশতের ছালাত আদায় করলেন, তখন উক্ত পাত্রটি আনা হল এবং তন্মধ্যে ছারীদ প্রস্তুত করা হল এবং ছাহাবীগণ সমবেতভাবে তার চতুষ্পার্শ্বে খেতে বসেন। অতঃপর যখন লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পা গুটিয়ে বসলেন। এক বেদুঈন বলল, এটা কোন ধরনের বসা? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে বিনয়ী বান্দা বানিয়েছেন। তিনি আমাকে অহংকারী নাফরমান বানাননি। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমরা প্রত্যেকে তার পার্শ্ব হতে খাও এবং তার মধ্যস্থল ছেড়ে দাও। কেননা সেখানে বরকত রয়েছে।[৫]
৫. وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ الْبَرَكَةُ تَنْزِلُ وَسَطَ الطَّعَامِ فَكُلُوْا مِنْ حَافَتَيْهِ وَلَا تَأْكُلُوْا مِنْ وَسَطِهِ.
৫. ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ﷺ) বর্ণনা করেছেন, তিনি (ﷺ) বলেন, বরকত নাযিল হয় খানার মাঝখানে। সুতরাং তোমরা এর পাশ থেকে খাবে, এর মাঝখান থেকে খাবে না।[৬]
খাল (ভিনেগার জাতীয় পানীয়) ও যায়তুন আহারের ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
اَللّٰہُ نُوۡرُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ مَثَلُ نُوۡرِہٖ کَمِشۡکٰوۃٍ فِیۡہَا مِصۡبَاحٌ اَلۡمِصۡبَاحُ فِیۡ زُجَاجَۃٍ اَلزُّجَاجَۃُ کَاَنَّہَا کَوۡکَبٌ دُرِّیٌّ یُّوۡقَدُ مِنۡ شَجَرَۃٍ مُّبٰرَکَۃٍ زَیۡتُوۡنَۃٍ لَّا شَرۡقِیَّۃٍ وَّ لَا غَرۡبِیَّۃٍ یَّکَادُ زَیۡتُہَا یُضِیۡٓءُ وَ لَوۡ لَمۡ تَمۡسَسۡہُ نَارٌ نُوۡرٌ عَلٰی نُوۡرٍ یَہۡدِی اللّٰہُ لِنُوۡرِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ وَ یَضۡرِبُ اللّٰہُ الۡاَمۡثَالَ لِلنَّاسِ وَ اللّٰہُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمٌ.
‘আল্লাহ আসমান ও যমীনের নূর। তাঁর নূরের উপমা একটি তাকের মত। তাতে রয়েছে একটি প্রদীপ, প্রদীপটি রয়েছে একটি চিমনির মধ্যে। চিমনিটি উজ্জ্বল তারকার মত। প্রদীপটি বরকতময় যাইতূন গাছের তেল দ্বারা জ্বালানো হয়। যা পূর্ব দিকেরও নয় এবং পশ্চিম দিকেরও নয়। এর তেল যেন আলো বিকিরণ করে, যদিও তাতে আগুন স্পর্শ না করে। নূরের উপর নূর। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হেদায়াত করেন তাঁর নূরের দিকে। আর আল্লাহ মানুষের জন্য উপমাসমূহ উপস্থাপন করেন। আর আল্লাহ প্রতিটি বস্তু সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত’ (সূরা আন-নূর : ৩৫)।
৬. عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا فِيْ قَوْلِهِ "تَتَّخِذُوْنَ مِنْهُ سَكَرًا وَرِزْقًا حَسَنًا " [النحل: ৬৭] قَالَ فَحَرَّمَ اللهُ بَعْدَ ذَلِكَ السَّكَرَ مَعَ تَحْرِيْمِ الْخَمْرِ لِأَنَّهُ مِنْهُ ثُمَّ قَالَ "ورِزْقًا حَسَنًا" [النحل: ৬৭] فَهُوَ الْحَلَالُ مِنَ الْخَلِّ وَالزَّبِيْبِ وَالنَّبِيْذِ وَأَشْبَاهِ ذَلِكَ فَأَقَرَّهُ اللهُ وَجَعَلَهُ حَلَالًا لِلْمُسْلِمِيْنَ.
৬. ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি (تَتَّخِذُوْنَ مِنْهُ سَكَرًا) ‘আর খেজুর গাছের ফল ও আঙ্গুর থেকে তোমরা মাদক (যা হারাম হওয়ার পূর্বে) ও উত্তম খাদ্য গ্রহণ করে থাক’[৭] (সূরা আন-নাহল : ৬৭) এর ব্যাখ্যায় বলেন, মহান আল্লাহ মাদকের সাথে সকল ধরণের নেশাদার দ্রব্যকেও হারাম করেন। কেননা নেশাদার সকল দ্রব্য মাদকেরই অন্তর্ভূক্ত। এবং (ورِزْقًا حَسَنًا) ‘উত্তম রিযক গ্রহণ কর’ (সূরা আন-নাহল : ৬৭)-এর ব্যাখ্যায় বলেন, এর মধ্য থেকে তোমাদের জন্য খাল তথা সিরকা, যাবীব তথা কিশমিশের সিরকা, নাবীয জাতীয় সকল পানীয় বৈধ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ এসকল পানীয়কে স্বীকৃতি দিয়েছেন এবং মুসলিমদের জন্য হালাল করেছেন।[৮]
৭. وَعَنِ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ سَأَلَ أَهْلَهُ الْأُدُمَ؟ فَقَالُوْا مَا عِنْدَنَا إِلَّا الْخَلَّ فَدَعَا بِهِ فَجَعَلَ يَأْكُلُ بِهِ وَيَقُوْلُ نِعْمَ الْإِدَامُ الْخَلُّ نِعْمَ الْإِدَامُ الْخَلُّ نِعْمَ الْإِدَامُ الْخَلُّ قَالَ جَابِرٌ فَمَا زِلْتُ أُحِبُّ الْخَلَّ مُنْذُ سَمِعْتُهَا مِنْ نَبِيِّ اللهِ ﷺ قَالَ طَلْحَةُ بْنُ نَافِعٍ وَمَا زِلْتُ أُحِبُّ الْخَلَّ مُنْذُ سَمِعْتُهَا مِنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ.
৭. জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তার পরিবারের কাছে রুটি খাওয়ার তরকারি চাইলেন। তারা বলল, আমাদের কাছে সিরকা ছাড়া আর কিছুই নেই। ফলে তিনি তাই নিয়ে আসতে বললেন। অতঃপর (নিয়ে আসলে) তিনি খেতে খেতে বলতে লাগলেন, সিরকা কতই না উত্তম তরকারী, সিরকা কতই না উত্তম তরকারী, সিরকা কতই না উত্তম তরকারী। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর নবী (ﷺ) থেকে এ কথা শুনার পর আমি সিরকা পসন্দ করতে থাকি। তালহা বিন নাফে‘ বলেন, আমিও জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছে এ কথা শুনার পর হতে সিরকা পসন্দ করতে লাগলাম।[৯]
৮. وَعَنْ أُمِّ هَانِئٍ بِنْتِ أَبِيْ طَالِبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَتْ دَخَلَ عَلَيَّ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَقَالَ هَلْ عِنْدَكُمْ شَيْءٌ؟ فَقُلْتُ لَا إِلَّا كِسَرٌ يَابِسَةٌ وَخَلٌّ فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ قَرِّبِيْهِ فَمَا أَقْفَرَ بَيْتٌ مِنْ أُدْمٍ فِيْهِ خَلٌّ.
৮. উম্মে হানী বিনতে আবূ তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন আমার কাছে এলেন এবং বললেন, তোমাদের কাছে কিছু আছে কি? আমি বললাম, শুকনো রুটির কয়েকটি টুকরা ও সিরকা ছাড়া আর কিছুই নেই। নবী করীম (ﷺ) বললেন, তা-ই নিয়ে আস, যে বাড়িতে সিরকা আছে, সে বাড়িতে তরকারীর কোন অভাব আছে বলে বলা যায় না।[১০]
৯. وَعَنْ أَبِيْ أُسَيْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ كُلُوا الزَّيْتَ وَادَّهِنُوْا بِهِ فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ.
৯. আবূ উসায়ীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, তোমরা যয়তুন খাবে এবং তা মালিশ করবে। কারণ এ হল এক বরকতময় বৃক্ষ।[১১]
১০. وَعَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ كُلُوا الزَّيْتَ وَادَّهِنُوْا بِهِ فَإِنَّهُ مِنْ شَجَرَةٍ مُبَارَكَةٍ.
১০. ওমর ইবনে খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তোমরা যয়তুন খাবে এবং এ দিয়ে মালিশ করবে। কেননা এ হল বরকতময় বৃক্ষ।[১২]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* পিএইচ.ডি গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
[১]. তিরমিযী, হা/১৮৫৮, সনদ হাসান ছহীহ; আবূ দাঊদ, হা/৩৭৬৭, সনদ ছহীহ।
[২]. ইবনু মাজাহ, হা/৩২৬৪; ইবনু হিব্বান, হা/৫২১৪; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত-তারহীব, হা/২১০৭ সনদ ছহীহ লিগায়রিহী ।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০১৮।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০১৭।
[৫]. আবূ দাঊদ, হা/৩৭৭৩, সনদ ছহীহ।
[৬]. আবূ দাঊদ, হা/৩৭৭২; তিরমিযী, হা/১৮০৫, সনদ ছহীহ।
[৭]. ইমাম ত্বাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন : আয়াতটি মাদক নিষিদ্ধ হওয়ার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে।
[৮]. ইবনু জারীর, তাফসীরে ত্বাবারী, ১৪তম খ-, পৃ. ২৮২; বায়হাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/১৭৪৭২।
[৯]. ছহীহ মুসলিম, হা/২০৫২।
[১০]. তিরমিযী, হা/১৮৪১, সনদ হাসান।
[১১]. তিরমিযী, হা/১৮৫২, সনদ হাসান লি-গাইরিহী।
[১২]. তিরমিযী, হা/১৮৫১, সনদ ছহীহ।
প্রসঙ্গসমূহ »:
আমল