বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ অপরাহ্ন

ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত

মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*


(শেষ কিস্তি)

ঋণ গ্রহীতার ঋণ পরিশোধের ইচ্ছা পোষণ ও মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে ঋণ পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করার ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ عَلٰی سَفَرٍ وَّ لَمۡ تَجِدُوۡا کَاتِبًا فَرِہٰنٌ مَّقۡبُوۡضَۃٌ فَاِنۡ اَمِنَ بَعۡضُکُمۡ بَعۡضًا فَلۡیُؤَدِّ الَّذِی اؤۡتُمِنَ اَمَانَتَہٗ وَ لۡیَتَّقِ اللّٰہَ رَبَّہٗ وَ لَا تَکۡتُمُوا الشَّہَادَۃَ وَ مَنۡ یَّکۡتُمۡہَا فَاِنَّہٗۤ اٰثِمٌ قَلۡبُہٗ وَ اللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ

‘আর যদি তোমরা সফরে থাক এবং কোন লেখক না পাও, তাহলে হস্তান্তরিত বন্ধক রাখবে। আর যদি তোমরা একে অপরকে বিশ্বস্ত মনে কর, তবে যাকে বিশ্বস্ত মনে করা হয়, সে যেন স্বীয় আমানত আদায় করে এবং নিজ রব আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করে। আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না এবং যে কেউ তা গোপন করে, অবশ্যই তার অন্তর পাপী। আর আল্লাহ, তোমরা যা আমল কর, সে ব্যাপারে সবিশেষ অবহিত’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৮৩)। মহান আল্লাহ বলেন, وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ لِاَمٰنٰتِہِمۡ وَ عَہۡدِہِمۡ رٰعُوۡنَ ‘আর যারা নিজেদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকার সম্পর্কে যত্নবান’ (সূরা আল-মুমিনুন : ৮)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مَنۡ یُّہَاجِرۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ یَجِدۡ فِی الۡاَرۡضِ مُرٰغَمًا کَثِیۡرًا وَّ سَعَۃً وَ مَنۡ یَّخۡرُجۡ مِنۡۢ بَیۡتِہٖ مُہَاجِرًا  اِلَی اللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ ثُمَّ  یُدۡرِکۡہُ الۡمَوۡتُ فَقَدۡ وَقَعَ اَجۡرُہٗ عَلَی اللّٰہِ وَ کَانَ اللّٰہُ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا

‘আর যে আল্লাহর রাস্তায় হিজরত করবে, সে যমীনে বহু আশ্রয়ের জায়গাও সচ্ছলতা পাবে। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যে মুহাজির হয়ে নিজ ঘর থেকে বের হয় তারপর তাকে মৃত্যু পেয়ে বসে, তাহলে তার প্রতিদান আল্লাহর উপর অবধারিত হয়। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আন-নিসা : ১০০)।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ أَخَذَ أَمْوَالَ النَّاسِ يُرِيْدُ أَدَاءَهَا أَدَّى اللهُ عَنْهُ وَمَنْ أَخَذَ يُرِيْدُ إِتْلَافَهَا أَتْلَفَهُ اللهُ

৪৬. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অপর লোকের মাল গ্রহণ করে এবং তা পরিশোধ করার নিয়ত রাখে, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা তার ঋণ পরিশোধ করার ব্যবস্থা করবেন। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করে ঋণদাতার মাল বিনষ্ট করার নিয়তে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে ধ্বংস করবেন।[১]
-----
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَطْلُ الْغَنِيِّ ظُلْمٌ وَإِذَا أُتْبِعَ أَحَدُكُمْ عَلَى مَلِيْءٍ فَلْيَتْبَعْ

৪৭. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, সক্ষম ব্যক্তির জন্য টাল বাহানা করা অন্যায়। তোমাদের মধ্যে সক্ষম কারও উপর যদি ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব দেয়, তাহলে তা গ্রহণ করা কর্তব্য।[২]
-----
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا أَنَّهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ حَمَلَ مِنْ أُمَّتِيْ دَيْنًا ثُمَّ جَهَدَ فِيْ قَضَائِهِ ثُمَّ مَاتَ قَبْلَ أَنْ يَقْضِيَهُ فَأَنَا وَلِيُّهُ

৪৮. আয়েশা সিদ্দীক্বা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, রাসূলূল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমার উম্মতের যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্থ হবে এবং ঋণ পরিশোধের সর্বাত্বক চেষ্টা করেও ঋণ পরিশোধ করার পূর্বে মারা যাবে, আমি তার যিম্মাদার হব।[৩]
-----
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ أَنَّهُ ذَكَرَ رَجُلًا مِنْ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ سَأَلَ بَعْضَ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ أَنْ يُسْلِفَهُ أَلْفَ دِيْنَارٍ فَقَالَ ائْتِنِيْ بِالشُّهَدَاءِ أُشْهِدُهُمْ فَقَالَ كَفَى بِاللهِ شَهِيْدًا قَالَ فَأْتِنِيْ بِالْكَفِيْلِ قَالَ كَفَى بِاللهِ كَفِيْلًا قَالَ صَدَقْتَ فَدَفَعَهَا إِلَيْهِ إِلَى أَجَلٍ مُسَمًّى فَخَرَجَ فِي الْبَحْرِ فَقَضَى حَاجَتَهُ ثُمَّ الْتَمَسَ مَرْكَبًا يَرْكَبُهَا يَقْدَمُ عَلَيْهِ لِلْأَجَلِ الَّذِيْ أَجَّلَهُ فَلَمْ يَجِدْ مَرْكَبًا فَأَخَذَ خَشَبَةً فَنَقَرَهَا فَأَدْخَلَ فِيْهَا أَلْفَ دِيْنَارٍ وَصَحِيْفَةً مِنْهُ إِلَى صَاحِبِهِ ثُمَّ زَجَّجَ مَوْضِعَهَا ثُمَّ أَتَى بِهَا إِلَى الْبَحْرِ فَقَالَ اَللهم إِنَّكَ تَعْلَمُ أَنِّيْ كُنْتُ تَسَلَّفْتُ فُلَانًا أَلْفَ دِيْنَارٍ فَسَأَلَنِيْ كَفِيْلًا فَقُلْتُ كَفَى بِاللهِ كَفِيْلًا فَرَضِيَ بِكَ وَسَأَلَنِيْ شَهِيْدًا فَقُلْتُ كَفَى بِاللهِ شَهِيْدًا فَرَضِيَ بِكَ وَأَنِّيْ جَهَدْتُ أَنْ أَجِدَ مَرْكَبًا أَبْعَثُ إِلَيْهِ الَّذِيْ لَهُ فَلَمْ أَقْدِرْ وَإِنِّيْ أَسْتَوْدِعُكَهَا فَرَمَى بِهَا فِيْ الْبَحْرِ حَتَّى وَلَجَتْ فِيْهِ ثُمَّ انْصَرَفَ وَهُوَ فِيْ ذَلِكَ يَلْتَمِسُ مَرْكَبًا يَخْرُجُ إِلَى بَلَدِهِ فَخَرَجَ الرَّجُلُ الَّذِيْ كَانَ أَسْلَفَهُ يَنْظُرُ لَعَلَّ مَرْكَبًا قَدْ جَاءَ بِمَالِهِ فَإِذَا بِالْخَشَبَةِ الَّتِيْ فِيْهَا الْمَالُ فَأَخَذَهَا لِأَهْلِهِ حَطَبًا فَلَمَّا نَشَرَهَا وَجَدَ الْمَالَ وَالصَّحِيْفَةَ ثُمَّ قَدِمَ الَّذِيْ كَانَ أَسْلَفَهُ فَأَتَى بِالْأَلْفِ دِيْنَارٍ فَقَالَ وَاللهِ مَا زِلْتُ جَاهِدًا فِيْ طَلَبِ مَرْكَبٍ لِآتِيَكَ بِمَالِكَ فَمَا وَجَدْتُ مَرْكَبًا قَبْلَ الَّذِيْ أَتَيْتُ فِيْهِ قَالَ هَلْ كُنْتَ بَعَثْتَ إِلَيَّ بِشَيْءٍ؟ قَالَ أُخْبِرُكَ أَنِّيْ لَمْ أَجِدْ مَرْكَبًا قَبْلَ الَّذِيْ جِئْتُ فِيْهِ قَالَ فَإِنَّ اللهَ قَدْ أَدَّى عَنْكَ الَّذِيْ بَعَثْتَ فِي الْخَشَبَةِ فَانْصَرِفْ بِالْأَلْفِ الدِّيْنَارِ رَاشِدًا

৪৯. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) বলেছেন, বনী ইসরাঈলের কোন এক ব্যক্তি বনী ইসরাঈলের অপর এক ব্যক্তির নিকট এক হাজার দীনার ঋণ চাইল। তখন সে (ঋণদাতা) বলল, কয়েকজন সাক্ষী আন, আমি তাদেরকে সাক্ষী রাখব। সে বলল, সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। তারপর (ঋণদাতা) বলল, তা হলে একজন যামিনদার উপস্থিত কর। সে বলল, যামিনদার হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট। ঋণদাতা বলল, তুমি সত্যই বলেছ। এরপর নির্ধারিত সময়ে পরিশোধের শর্তে তাকে এক হাজার দীনার দিয়ে দিল। তারপর ঋণ গ্রহীতা সামুদ্রিক সফর করল এবং তার প্রয়োজন সমাধা করে সে যানবাহন খুঁজতে লাগল, যাতে সে নির্ধারিত সময়ের ভেতর ঋণদাতার কাছে এসে পৌঁছতে পারে। কিন্তু সে কোন যানবাহন পেল না। তখন সে এক টুকরো কাঠ নিয়ে তা ছিদ্র করল এবং ঋণদাতার নামে একখানা পত্র ও এক হাজার দীনার তার মধ্যে ভরে ছিদ্রটি বন্ধ করে সমুদ্র তীরে এসে বলল, হে আল্লাহ! তুমি তো জান আমি অমুকের নিকট এক হাজার দীনার ঋণ চাইলে সে আমার কাছে যামিনদার চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আল্লাহই যামিন হিসাবে যথেষ্ট। এতে সে রাজী হয়। তারপর সে আমার কাছে সাক্ষী চেয়েছিল, আমি বলেছিলাম সাক্ষী হিসাবে আল্লাহই যথেষ্ট, তাতে সে রাজী হয়ে যায়। আমি তার ঋণ (যথাসময়ে) পরিশোধের উদ্দেশে যানবাহনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি, কিন্তু পাইনি। তাই আমি তোমার নিকট সোপর্দ করলাম, এই বলে সে কাষ্ঠখণ্ডটি সমুদ্রে নিক্ষেপ করল। আর কাষ্ঠখণ্ডটি সমুদ্রে প্রবেশ করল। অতঃপর লোকটি ফিরে গেল এবং নিজের শহরে যাওয়ার জন্য যানবাহন খুঁজতে লাগল। ওদিকে ঋণদাতা এই আশায় সমুদ্রতীরে গেল যে, হয়তো ঋণগ্রহীতা কোন নৌযানে করে তার মাল নিয়ে এসেছে। তার দৃষ্টি কাষ্ঠখণ্ডটির উপর পড়ল, যার ভিতরে মাল ছিল। সে কাষ্ঠখণ্ডটি তার পরিবারের জ্বালানীর জন্য বাড়ী নিয়ে গেল। যখন সে তা চিরল, তখন সে মাল ও পত্রটি পেয়ে গেল। কিছুদিন পর ঋণগ্রহীতা এক হাজার দীনার নিয়ে এসে হাযির হল এবং বলল, আল্লাহর কসম! আমি আপনার মাল যথাসময়ে পৌঁছিয়ে দেয়ার উদ্দেশে সব সময় যানবাহনের খোঁজে ছিলাম। কিন্তু আমি যে নৌযানে এখন আসলাম, তার আগে আর কোন নৌযান পাইনি। ঋণদাতা বলল, তুমি কি আমার নিকট কিছু পাঠিয়েছিলে? ঋণগ্রহীতা বলল, আমি তো তোমাকে বললামই যে, এর আগে আর কোন নৌযান আমি পাইনি। সে বলল, তুমি কাঠের টুকরোর ভিতরে যা পাঠিয়েছিলে, তা আল্লাহ তোমার পক্ষ হতে আমাকে আদায় করে দিয়েছেন। তখন সে আনন্দচিত্তে এক হাজার দ্বীনার নিয়ে ফিরে চলে এল।[৪]
----
ঋণগ্রস্ত, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও বিপদগ্রস্ত এবং কারারুদ্ধ ব্যক্তির পঠিতব্য দু‘আর ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

وَ ذَاالنُّوۡنِ  اِذۡ ذَّہَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ اَنۡ لَّنۡ نَّقۡدِرَ عَلَیۡہِ فَنَادٰی فِی الظُّلُمٰتِ  اَنۡ  لَّاۤ  اِلٰہَ   اِلَّاۤ  اَنۡتَ  سُبۡحٰنَکَ اِنِّیۡ  کُنۡتُ  مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ

‘আর স্মরণ কর যুন-নূন এর কথা, যখন সে রাগান্বিত অবস্থায় চলে গিয়েছিল, এবং মনে করেছিল যে, আমি তার উপর ক্ষমতা প্রয়োগ করব না। তারপর সে অন্ধকার থেকে ডেকে বলেছিল, ‘আপনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই’। আপনি পবিত্র। নিশ্চয় আমি ছিলাম যালিম’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৮৭)। মহান আল্লাহ বলেন, فَاسۡتَجَبۡنَا لَہٗ وَ نَجَّیۡنٰہُ مِنَ الۡغَمِّ وَ کَذٰلِکَ  نُــۨۡجِی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ ‘অতঃপর আমরা তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম এবং দুশ্চিন্তা থেকে তাকে উদ্ধার করেছিলাম। আর এভাবেই আমি মুমিনদেরকে উদ্ধার করে থাকি’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৮৮)। মহান আল্লাহ বলেন, وَ اَیُّوۡبَ اِذۡ نَادٰی رَبَّہٗۤ  اَنِّیۡ مَسَّنِیَ الضُّرُّ وَ اَنۡتَ  اَرۡحَمُ  الرّٰحِمِیۡنَ ‘আর স্মরণ কর আইউবের কথা, যখন সে তার রবকে আহ্বান করে বলেছিল, আমি দুঃখ-কষ্টে পতিত হয়েছি। আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৮৩)। মহান আল্লাহ বলেন,

فَاسۡتَجَبۡنَا لَہٗ فَکَشَفۡنَا مَا بِہٖ مِنۡ ضُرٍّ وَّ اٰتَیۡنٰہُ  اَہۡلَہٗ  وَ مِثۡلَہُمۡ مَّعَہُمۡ  رَحۡمَۃً مِّنۡ عِنۡدِنَا وَ ذِکۡرٰی  لِلۡعٰبِدِیۡنَ

‘তখন আমরা তাঁর ডাকে সাড়া দিলাম। আর তাঁর যত দুঃখ-কষ্ট ছিল তা দূর করে দিলাম এবং তাঁর পরিবার-পরিজন তাকে দিয়ে দিলাম। আর তাদের সাথে তাদের মত আরো তাকে দিলাম; আমার পক্ষ থেকে রহমত এবং ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ’ (সূরা আল-আম্বিয়া : ৮৪)। মহান আল্লাহ বলেন, فَسَقٰی لَہُمَا ثُمَّ تَوَلّٰۤی اِلَی الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ اِنِّیۡ لِمَاۤ  اَنۡزَلۡتَ اِلَیَّ مِنۡ خَیۡرٍ  فَقِیۡرٌ ‘তখন মূসা তাদের পক্ষে (পশুগুলোকে) পানি পান করিয়ে দিল। তারপর ছায়ায় ফিরে গেল এবং বলল, হে আমার রব, নিশ্চয় আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাযিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী’ (সূরা আল-ক্বাছাছ : ২৪)।

عَنْ عَلِيٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ مُكَاتَبًا جَاءَهُ فَقَالَ إِنِّيْ قَدْ عَجَزْتُ عَنْ مُكَاتَبَتِيْ فَأَعِنِّيْ قَالَ أَلَا أُعَلِّمُكَ كَلِمَاتٍ عَلَّمَنِيْهِنَّ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ لَوْ كَانَ عَلَيْكَ مِثْلُ جَبَلِ صَبِيْرٍ دَيْنًا أَدَّاهُ اللهُ عَنْكَ قُلْ - اَللّٰهُمَّ اكْفِنِيْ بِحَلَالِكَ عَنْ حَرَامِكَ وَأَغْنِنِيْ بِفَضْلِكَ عَمَّنْ سِوَاكَ

৫০. আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একটি চুক্তিবদ্ধ গোলাম তার নিকটে এসে বলে, আমার চুক্তির অর্থ পরিশোধ করতে আমি অপরাগ হয়ে পড়েছি। আমাকে আপনি সহযোগিতা করুন। তিনি বললেন, আমি তোমাকে কি এমন একটি বাক্য শিখিয়ে দিব না যা আমাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) শিখিয়েছিলেন? যদি তোমার উপর ছাবীর পর্বত পরিমাণ ঋণও থাকে তবে আল্লাহ তা‘আলা তোমাকে তা পরিশোধের ব্যবস্থা করে দিবেন। তুমি বল, ‘হে আল্লাহ! তোমার হালালের মাধ্যমে আমাকে তোমার হারাম হতে বিরত রাখ বা দূরে রাখ এবং তোমার দয়ায় তুমি ব্যতীত অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া হতে আমাকে আত্মনির্ভরশীল কর’।[৫]
----
وَعَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَا أَصَابَ مُسْلِمًا هَمٌّ وَلَا حُزْنٌ فَقَالَ (اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ عَبْدُكَ وَابْنُ عَبْدِكَ وَابْنُ أَمَتِكَ نَاصِيَتِيْ بِيَدِكَ مَاضٍ فِيَّ حُكْمُكَ عَدْلٌ فِيَّ قَضَائُكَ أَسْأَلُكَ بِكُلِّ اسْمٍ هُوَ لَكَ سَمَّيْتَ بِهِ نَفْسَكَ أَوْ أَنْزَلْتَهُ فِيْ كِتَابِكَ أَوْ عَلَّمْتَهُ أَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ أَوِ اسْتَأْثَرْتَ بِهِ فِيْ عِلْمِ الْغَيْبِ عِنْدَكَ أَنْ تَجْعَلَ الْقُرْآنَ رَبِيْعَ قَلْبِيْ وَجِلَاءَ حُزْنِيْ وَذَهَابَ هَمِّيْ وَغَمِّي) إِلَّا أَذْهَبَ اللهُ عَنْهُ هَمَّهُ وَأَبْدَلَهُ مَكَانَ هَمِّهِ فَرَحًا قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ أَلَا نَتَعَلَّمُ هَذِهِ الْكَلِمَاتِ؟ قَالَ بَلَى يَنْبَغِيْ لِمَنْ سَمِعَهُنَّ أَنْ يَتَعَلَّمَهُنَّ.

৫১. ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, কোন ব্যক্তির উপর যখন কোন বিপদাপদ বা দুশ্চিন্তা ভর করে এবং সে বলে, ‘হে আল্লাহ আমি তোমার বান্দা। তোমার বান্দা ও বান্দীর ছেলে। আমার ভাগ্য তোমার হাতে। আমি তোমার নির্দেশের উপর অটল। তোমার ফয়সালা গ্রহণে নিরপেক্ষ। তুমি নিজের জন্য যে সকল নাম নির্ধারণ করেছ, অথবা তোমার কিতাবে অবতীর্ণ করেছ, অথবা তোমার সৃষ্টির কাউকে শিক্ষা দিয়েছ, অথবা যার দ্বারা তুমি গায়েবের জ্ঞানকে নিজের করে নিয়েছ, সে সকল নামের ওছিলায় প্রার্থনা করছি। তুমি কুরাআনকে কর আমার অন্তরের জন্য বসন্তকালীন বৃষ্টির ন্যায়, দুশ্চিন্তা দুরকারী, বিষণ্ণতা দুরকারী’। তবে এর বিনিময়ে আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দুর করে তার অন্তরকে খুশিতে ভরে দিবেন। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা কি এই বাক্যগুলো শিক্ষা করব না? তিনি বললেন, হ্যাঁ যে ব্যক্তি এ বাক্যগুলো শুনবে তারই এগুলো শিক্ষা করা উচিত।[৬]
-----
 وَعَنْ أَبِيْ بَكْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ كَلِمَاتُ الْمَكْرُوبِ - اَللّٰهُمَّ رَحْمَتَكَ أَرْجُوْ فَلَا تَكِلْنِيْ إِلَى نَفْسِيْ طَرْفَةَ عَيْنٍ وَأَصْلِحْ لِيْ شَأْنِيْ كُلَّهُ

৫২. আবূ বাকরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, বিপদগ্রস্ত লোকের দু‘আ হল, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমতের প্রত্যাশী, আপনি আমাকে আমার নাফসের হাতে সমর্পণ করবেন না এক মুহূর্তের জন্য। আর আপনি আমার সব ব্যাপার সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দিন। আর আপনি ব্যতীত কোন সত্যিকারের ইলাহ নেই’।[৭]
-----
وَعَنْ أَسْمَاءَ بِنْتِ عُمَيْسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ لِيْ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَلَا أُعَلِّمُكِ كَلِمَاتٍ تَقُوْلِيْنَهُنَّ عِنْدَ الْكَرْبِ أَوْ فِي الْكَرْبِ؟ - اَللّٰهُ اَللّٰهُ رَبِّيْ لَا أُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا

৫৩. আসমা বিনতে উমায়েস (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, আমি কি তোমাকে এমন কয়েকটি বাক্য শিক্ষা দিব না, যা তুমি বিপদাপদের সময় পাঠ করতে পার? অতঃপর তিনি বলেন, " اَللّٰهُ اَللّٰهُ رَبِّيْ لَا أُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا " ‘আল্লাহু, আল্লাহু রাব্বী, লা উশরিকু বিহি শায়আন’। অর্থাৎ আল্লাহ, আল্লাহই আমার রব, আমি তার সাথে কাউকে শরীক করি না।[৮]
-----
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ يَقُوْلُ عِنْدَ الْكَرْبِ - لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ الْحَلِيْمُ الْعَظِيْمُ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ

৫৪. ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বিপদ ও কষ্টের সময় এই দু‘আ পড়তেন,
-----
لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ الْحَلِيْمُ الْعَظِيْمُ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ رَبُّ السَّمَوَاتِ الْأَرْضِ وَرَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيْمِ

‘আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই; যিনি সুমহান, সহিষ্ণু। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য উপাস্য নেই; যিনি সুবৃহৎ আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বুদ নেই; যিনি আকাশমণ্ডলী, পৃথিবী ও সম্মানিত আরশের অধিপতি’।[৯]

 وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ دَعْوَةُ ذِي النُّوْنِ إِذَا دَعَا وَهُوَ فِيْ بَطْنِ الْحُوْتِ "لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ"[الأنبياء : 87] فَإِنَّهُ لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِيْ شَيْئٍ قَطُّ إِلَّا اسْتَجَابَ اللهُ لَهُ

৫৫. সা‘দ  ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, মাছওয়ালা নবী ইউনুস (আলাইহিস সালাম)-এর দু‘আ হল এই যে, যখন তিনি মাছের পেট থেকে দু‘আ করেছিলেন, لَا إِلٰهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّيْ كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِيْنَ ‘আপনি ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই, আপনি পবিত্র আর আমি অত্যাচারী অপরাধী। যখন কোন মুসলিম কোন ব্যাপারে কখনো এই দু‘আ করবে, তখন নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তার দু‘আ কবুল করবেন।[১০]

* পিএইচ-ডি. গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৩৮৭।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/২২৮৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৬৪।
[৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৫২১১, সনদ ছহীহ; মুসনাদে আবী ইয়া‘লা, হা/৪৮৩৮; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৯৩৩৮।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২২৯১; নাসাঈ, সুনানুল কুবরা, হা/৫৮০০।
[৫]. মুসতাদরাক হাকেম, হা/১৯৭৩; তিরমিযী, হা/৩৫৬৩, সনদ হাসান।
[৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৪৩১৮; ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৯৭২; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৯৯।
[৭]. মুছান্নাফে ইবনু আবী শায়বা, হা/২৯১৫৪; ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৯৭০, সনদ হাসান।
[৮]. আবূ দাঊদ, হা/১৫২৫, সনদ ছহীহ।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৩৪৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৩০।
[১০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৬২; তিরমিযী, হা/৩৫০৫, সনদ ছহীহ।




প্রসঙ্গসমূহ »: আমল
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৪তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৪র্থ কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (২য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : আহার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : বিবাহ ও এ সংক্রান্ত বিষয়াদীর ফযীলত - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : আহার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৩য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ