সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০২:৩২ অপরাহ্ন

ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত

-মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান
-অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*


(৩য় কিস্তি)

وَعَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا هَمَّهُ وَسَدَمَهُ لَهَا يَشْخَصُ وَإِيَّاهَا يَنْوِيْ جَعَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ الْفَقْرَ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَشَتَّتَ عَلَيْهِ ضَيْعَتَهُ وَلَمْ يَأْتِهِ مِنْهَا إِلَّا مَا كُتِبَ لَهُ وَمَنْ كَانَتِ الْآخِرَةُ هَمَّهُ وَسَدَمَهُ لَهَا يَشْخَصُ وَإِيَّاهَا يَنْوِيْ جَعَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ الْغِنَى فِيْ قَلْبِهِ وَجَمْعَ عَلَيْهِ ضَيْعَتَهُ وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ صَاغِرَةٌ

১৭. আনাস ইবনু মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তির একমাত্র চিন্তার বিষয় দুনিয়া, একমাত্র লক্ষ্য দুনিয়া অর্জন, আল্লাহ তা‘আলা সেই ব্যক্তির গরীবি ও অভাব-অনটন দু’চোখের সামনে লাগিয়ে রাখবেন এবং তার কাজগুলো এলোমেলো ও ছিন্নভিন্ন করে দিবেন। তার জন্য যা নির্দিষ্ট রয়েছে, দুনিয়াতে সে এর চাইতে বেশি পাবে না। অতঃপর যে ব্যক্তির চিন্তার বিষয় হবে শুধু পরকাল, তার লক্ষ্য হবে পরকাল অর্জন, আল্লাহ তা‘আলা সেই ব্যক্তির অন্তরকে অভাবমুক্ত করে দিবেন এবং তার যাবতীয় বিচ্ছিন্ন কাজ একত্রিত করে সুসংযত করে দিবেন, তখন তার নিকট দুনিয়াটা নগণ্য হয়ে দেখা দিবে।[১]

وَعَنْ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلَا فِيْ غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ الْمَرْءِ عَلَى الْمَالِ وَالشَّرَفِ لِدِيْنِهِ

১৮. কা‘ব ইবনু মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দু’টি ক্ষুধার্ত বাঘকে বকরীর পালের মধ্যে ছেড়ে দিলে ততটুকু ক্ষতিসাধন করে না, যতটুকু কোন ব্যক্তির ধন-সম্পদের মোহ ও মর্যাদার লালসা তার দ্বীনের ক্ষতি করে থাকে।[২]

১৯. وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ قَلْبُ الشَّيْخِ شَابٌّ عَلَى حُبِّ اثْنَتَيْنِ حُبِّ الْعَيْشِ أَوْ قَالَ طُوْلُ الْحَيَاةِ وَحُبُّ الْمَالِ

১৯. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, বৃদ্ধ মানুষের হৃদয় দু’টি বস্তুর ভালোবাসার ব্যাপারে অত্যন্ত তরুণ। ১. জীবনের মায়া অথবা তিনি বলেছেন, দীর্ঘ জীবনের মায়া ও ২. ধন সম্পদের মায়া।[৩] তিরমিযীর বর্ণনায় এসেছে, তিনি (ﷺ) বলেছেন, قَلْبُ الشَّيْخِ شَابٌّ عَلَى حُبِّ اثْنَتَيْنِ طُوْلِ الْحَيَاةِ وَكَثْرَةِ الْمَالِ ‘বৃদ্ধের মন দু‘টো বিষয়ের ভালোবাসার ক্ষেত্রে যুবক, দীর্ঘ জীবন এবং সম্পদের আধিক্য’।[৪]

وَعَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ كَانَ يَقُوْلُ (اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لَا يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لَا تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لَا يُسْتَجَابُ لَهَا)

২০. যায়দ ইবনু আরক্বাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলতেন, اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنْ عِلْمٍ لَا يَنْفَعُ وَمِنْ قَلْبٍ لَا يَخْشَعُ وَمِنْ نَفْسٍ لَا تَشْبَعُ وَمِنْ دَعْوَةٍ لَا يُسْتَجَابُ لَهَا ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি ঐ জ্ঞান হতে যা উপকার করে না, ঐ অন্তর হতে যা গলে না, ঐ মন হতে যা তৃপ্তি লাভ করে না এবং ঐ দু‘আ হতে যা কবুল হয় না’।[৫]

وَعَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ قَالَ لَوْ كَانَ لِابْنِ آدَمَ وَادِيَانِ مِنْ مَالٍ لَابْتَغَى إِلَيْهِمَا ثَالِثًا وَلَا يَمْلَأُ جَوْفَ ابْنِ آدَمَ إِلَّا التُّرَابُ وَيَتُوْبُ اللهُ عَلَى مَنْ تَابَ

২১. আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আদম সন্তানকে ধন-সম্পদে পরিপূর্ণ দু’টি উপত্যকাও যদি দেয়া হয়, সে তার সাথে তৃতীয়টির আকাক্সক্ষা করবে। বস্তুতঃ আদম সন্তানের পেট মাটি ছাড়া আর কিছুতেই পরিপূর্ণ করতে পারবে না। আর যে আল্লাহর কাছে তাওবাহ করবে আল্লাহ তার তাওবাহ কবুল করবেন।[৬]

হালাল রূযী তালাশ করা ও তা থেকে ভক্ষণ করার ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُلُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقۡنٰکُمۡ وَ اشۡکُرُوۡا لِلّٰہِ  اِنۡ  کُنۡتُمۡ اِیَّاہُ  تَعۡبُدُوۡنَ

‘হে মুমিনগণ, আমরা তোমাদেরকে যে হালাল রিযিক দিয়েছি তা থেকে আহার কর এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর, যদি তোমরা তাঁরই ইবাদত কর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৭২)। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلۡ مَنۡ حَرَّمَ زِیۡنَۃَ اللّٰہِ الَّتِیۡۤ  اَخۡرَجَ لِعِبَادِہٖ  وَ الطَّیِّبٰتِ مِنَ الرِّزۡقِ قُلۡ ہِیَ لِلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا فِی الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا خَالِصَۃً  یَّوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ   کَذٰلِکَ  نُفَصِّلُ الۡاٰیٰتِ  لِقَوۡمٍ  یَّعۡلَمُوۡنَ

‘বলুন, কে হারাম করেছে আল্লাহর সৌন্দর্যোপকরণ, যা তিনি তাঁর বান্দাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন এবং পবিত্র রিযিক? বলুন, তা দুনিয়ার জীবনে মুমিনদের জন্য, বিশেষভাবে ক্বিয়ামত দিবসে। এভাবে আমরা আয়াতসমূহ বিস্তারিত বর্ণনা করি এমন ক্বওমের জন্য, যারা জানে’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৩২)।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ اللهَ طَيِّبٌ لَا يَقْبَلُ إِلَّا طَيِّبًا وَإِنَّ اللهَ أَمَرَ الْمُؤْمِنِيْنَ بِمَا أَمَرَ بِهِ الْمُرْسَلِيْنَ فَقَالَ "یٰۤاَیُّہَا الرُّسُلُ کُلُوۡا مِنَ الطَّیِّبٰتِ وَ اعۡمَلُوۡا صَالِحًا إِنِّي بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ - وَإِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ"[المؤمنون : ৫১-৫২] وَقَالَ "یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا کُلُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا رَزَقۡنٰکُمۡ"[البقرة : ১৭২] ثُمَّ ذَكَرَ الرَّجُلَ يُطِيْلُ السَّفَرَ أَشْعَثَ أَغْبَرَ يَمُدُّ يَدَيْهِ إِلٰى السَّمَاءِ يَا رَبِّ يَا رَبِّ وَمَطْعَمُهُ حَرَامٌ وَمَشْرَبُهُ حَرَامٌ وَمَلْبَسُهُ حَرَامٌ وَغُذِيَ بِالْحَرَامِ فَأَنَّى يُسْتَجَابُ لِذٰلِكَ؟

২২. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, হে মানুষ সকল! নিশ্চয় আল্লাহ পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না। আল্ল­াহ তা‘আলা রাসূলগণকে যে আদেশ করছেন, মুমিনগণকেও সেই আদেশই করেছেন। অতঃপর মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে রাসূলগণ! আপনারা পবিত্র খাদ্য গ্রহণ করুন ও সৎ আমল করতে থাকুন আপনারা যা করেন সে বিষয়ে আমি পরিজ্ঞাত। আপনাদের এই উম্মত সব তো একই ধর্মের অনুসারী এবং আমি আপনাদের পালনকর্তা; অতএব আমাকে ভয় করুন।’ (সূরা আল-মুমিনূন : ৫১-৫২)। মুমিনগণকে লক্ষ্য করে অনুরূপই বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ! আমাদের দেয়া পবিত্র রিযিক হতে খাও’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৭২)। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) উল্লে­খ করলেন, এক ব্যক্তি দূর-দূরান্তের সফর করছে। তার মাথার চুল এলোমেলো, শরীরে ধূলা-বালি। এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি উভয় হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে কাতর স্বরে হে প্রভু! হে প্রভু! বলে ডাকছে। কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পানীয় হারাম, তার পোশাক হারাম, তার জীবিকা নির্বাহ হারাম, কিভাবে তার দু‘আ কবুল হবে?[৭]

وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ أَرْبَعٌ إِذَا كُنَّ فِيْكَ فَلَا عَلَيْكَ مَا فَاتَكَ مِنَ الدُّنْيَا حِفْظُ أَمَانَةٍ وَصِدْقُ حَدِيْثٍ وَحُسْنُ خَلِيْقَةٍ وَعِفَّةٌ فِيْ طُعْمَةٍ

২৩. আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যখন তোমার মধ্যে চারটি বস্তু বিদ্যমান থাকে, তখন দুনিয়ার যা কিছুই তোমার থেকে চলে যায় তাতে তোমার কোন ক্ষতি নেই। ১. আমানত রক্ষা করা, ২. সত্য কথা বলা, ৩. উত্তম চরিত্র এবং ৪. খানা-পিনায় সতর্কতা অবলম্বন করা।[৮]

আল্লাহভীতি অর্জন, সন্দেহপূর্ণ ও অন্তরে খটকা সৃষ্টিকারী বিষয় পরিহার করার ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

لَیۡسَ عَلَی الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جُنَاحٌ فِیۡمَا طَعِمُوۡۤا اِذَا مَا اتَّقَوۡا وَّ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ثُمَّ اتَّقَوۡا وَّ اٰمَنُوۡا ثُمَّ اتَّقَوۡا وَّ اَحۡسَنُوۡا وَ اللّٰہُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

‘যারা ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে তারা যা আহার করেছে তাতে কোন পাপ নেই, যখন তারা তাক্বওয়া অবলম্বন করল এবং ঈমান আনল আর নেক আমল করল, তারপর তাক্বওয়া অবলম্বন করল ও ঈমান আনল। এরপরও তারা তাক্বওয়া অবলম্বন করল এবং সৎকর্ম করল। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৯৩)। মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ کُلُوۡا مِمَّا فِی الۡاَرۡضِ حَلٰلًا طَیِّبًا وَّ لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ  اِنَّہٗ لَکُمۡ عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ.

‘হে মানুষ, যমীনে যা রয়েছে, তা থেকে হালাল পবিত্র বস্তু আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট শত্রু’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৬৮)। মহান আল্লাহ বলেন,

حُرِّمَتۡ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃُ وَ الدَّمُ وَ لَحۡمُ الۡخِنۡزِیۡرِ وَ مَاۤ اُہِلَّ لِغَیۡرِ اللّٰہِ بِہٖ وَ الۡمُنۡخَنِقَۃُ وَ الۡمَوۡقُوۡذَۃُ وَ الۡمُتَرَدِّیَۃُ وَ النَّطِیۡحَۃُ وَ مَاۤ اَکَلَ السَّبُعُ اِلَّا مَا ذَکَّیۡتُمۡ وَ مَا ذُبِحَ عَلَی النُّصُبِ وَ اَنۡ تَسۡتَقۡسِمُوۡا بِالۡاَزۡلَامِ ذٰلِکُمۡ فِسۡقٌ اَلۡیَوۡمَ  یَئِسَ الَّذِیۡنَ  کَفَرُوۡا مِنۡ دِیۡنِکُمۡ فَلَا تَخۡشَوۡہُمۡ وَ اخۡشَوۡنِ اَلۡیَوۡمَ اَکۡمَلۡتُ لَکُمۡ دِیۡنَکُمۡ وَ اَتۡمَمۡتُ عَلَیۡکُمۡ نِعۡمَتِیۡ وَ رَضِیۡتُ لَکُمُ الۡاِسۡلَامَ دِیۡنًا فَمَنِ اضۡطُرَّ فِیۡ مَخۡمَصَۃٍ غَیۡرَ   مُتَجَانِفٍ لِّاِثۡمٍ فَاِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ  رَّحِیۡمٌ

‘তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত প্রাণী, রক্ত ও শুকরের গোশত এবং যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে যবেহ করা হয়েছে; এবং গলা চিপে মারা জন্তু, প্রহারে মরা জন্তু, উঁচু থেকে পড়ে মরা জন্তু ও অন্য প্রাণীর শিঙের আঘাতে মরা জন্তু এবং যে জন্তুকে কোন হিংস্র প্রাণী খেয়েছে তা। তবে যা তোমরা যবেহ করে নিয়েছ তা ছাড়া, আর যা মূর্তি পুঁজার বেদিতে বলি দেয়া হয়েছে এবং জুয়ার তীর দ্বারা বণ্টন এগুলো গুনাহ। যারা কুফরী করেছে, আজ তারা তোমাদের দ্বীনের ব্যাপারে হতাশ হয়ে পড়েছে। সুতরাং তোমরা তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর। আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের উপর আমার নে‘মত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসাবে মনোনিত করলাম ইসলামকে। তবে যে তীব্র ক্ষুধায় বাধ্য হবে, কোন পাপের প্রতি ঝুঁকে নয় (তাকে ক্ষমা করা হবে), নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৩)। মহান আল্লাহ বলেন,

یُنَادُوۡنَہُمۡ  اَلَمۡ  نَکُنۡ مَّعَکُمۡ ؕ قَالُوۡا بَلٰی وَ لٰکِنَّکُمۡ فَتَنۡتُمۡ  اَنۡفُسَکُمۡ وَتَرَبَّصۡتُمۡ وَ ارۡتَبۡتُمۡ وَ غَرَّتۡکُمُ الۡاَمَانِیُّ حَتّٰی جَآءَ  اَمۡرُ اللّٰہِ  وَ غَرَّکُمۡ بِاللّٰہِ الۡغَرُوۡرُ

‘মুনাফিক্বরা মুমিনদেরকে ডেকে বলবে, আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? তারা বলবে ‘হ্যাঁ, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। আর তোমরা অপেক্ষা করেছিলে এবং সন্দেহ পোষণ করেছিলে এবং আকাক্সক্ষা তোমাদেরকে প্রতারিত করেছিল, অবশেষে আল্লাহর নির্দেশ এসে গল। আর মহা প্রতারক তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছিল’ (সূরা আল-হাদীদ : ১৪)। মহান আল্লাহ বলেন,

اِنَّمَا یَسۡتَاۡذِنُکَ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ ارۡتَابَتۡ قُلُوۡبُہُمۡ  فَہُمۡ  فِیۡ  رَیۡبِہِمۡ  یَتَرَدَّدُوۡنَ

‘নিশ্চয় সেসব লোক অনুমতি চায় যারা আল্লাহ ও আখিরাত দিবসে ঈমান রাখে না, আর তাদের অন্তরসমূহ সংশয়গ্রস্ত হয়ে গেছে। সুতরাং তারা তাদের সংশয়েই ঘুরপাক খেতে থাকে’ (সূরা আত-তাওবাহ : ৪৫)। মহান আল্লাহ বলেন,

لَا یَزَالُ بُنۡیَانُہُمُ الَّذِیۡ بَنَوۡا رِیۡبَۃً  فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ  اِلَّاۤ  اَنۡ تَقَطَّعَ قُلُوۡبُہُمۡ وَ اللّٰہُ عَلِیۡمٌ  حَکِیۡمٌ

‘তাদের নির্মিত গৃহ, তাদের অন্তরে সন্দেহের কারণ হয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না তাদের হৃদয় টুকরা টুকরা হয়ে যায়। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা আত-তাওবাহ : ১১০)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مَا تَفَرَّقُوۡۤا  اِلَّا مِنۡۢ  بَعۡدِ مَا جَآءَہُمُ الۡعِلۡمُ بَغۡیًۢا بَیۡنَہُمۡ وَ لَوۡ لَا کَلِمَۃٌ سَبَقَتۡ مِنۡ رَّبِّکَ  اِلٰۤی  اَجَلٍ مُّسَمًّی لَّقُضِیَ  بَیۡنَہُمۡ  وَ اِنَّ الَّذِیۡنَ اُوۡرِثُوا الۡکِتٰبَ مِنۡۢ  بَعۡدِہِمۡ لَفِیۡ شَکٍّ مِّنۡہُ مُرِیۡبٍ

‘তাদের কাছে জ্ঞান আসবার পরও তারা কেবল নিজেদের মধ্যকার বিদ্বেষের কারণে মতভেদ করেছে; একটি নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত অবকাশ সম্পর্কে আপনার রবের সিদ্ধান্ত না থাকলে তাদের বিষয়ে ফয়সালা হয়ে যেত। আর তাদের পরে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল, তারা সে সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর সন্দেহে রয়েছে’ (সূরা আশ-শূরা : ১৪)।

عَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ الْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيْرٌ مِّنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيْنِهِ وَعِرْضِهِ وَمَنْ وَقَعَ فِيْ الشُّبُّهَاتِ وَقَعَ فِيْ الْحَرَامِ كَالرَّاعِيْ يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوْشِكُ أَنْ يَّرْتَعَ فِيْهِ أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى أَلَا وَإِنَّ حِمَى اللهِ مَحَارِمُهُ أَلَا وَإِنَّ فِيْ الْجَسَدِ مُضْغَةً إِذَا صَلُحَتْ صَلُحَ الْجَسَدُ كُلُّهُ وَإِذَا فَسَدَتْ فَسَدَ الْجَسَدُ كُلُّهُ أَلَا وَهِيَ الْقَلْبُ

২৪. নু‘মান ইবনু বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, হালাল এবং হারাম সুুস্পষ্ট, আর উভয়ের মধ্যে অনেক সন্দেহজনক বিষয় রয়েছে। সে সম্পর্কে অনেকেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। অতএব যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বস্তুকে পরিহার করে চলবে, তার দ্বীন এবং সম্মান পবিত্র থাকবে। পক্ষান্তরে যে সন্দেহজনক কাজে লিপ্ত হবে, সে হারামে লিপ্ত হয়ে পড়বে। যেমন যে রাখাল তার পশুপালকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমার ধারে চরাবে, খুব সম্ভব তার পশু নিষিদ্ধ এলাকার ভিতরেও মুখ ঢুকিয়ে দিবে। সাবধান! প্রত্যেক বাদশাই নিজ পশুপালের চারণভূমি বানিয়ে রাখেন। অনুরূপ আল্লাহ তা‘আলার চারণভূমি তাঁর হারাম বস্তুসমূহকে নির্ধারণ করে রেখেছেন। মনে রেখো! মানুষের দেহের ভিতরে একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, যা সঠিক থাকলে সমস্ত দেহই সঠিক থাকে। আর সেই অংশের বিকৃতি ঘটলে সম্পূর্ণ দেহেরই বিকৃতি ঘটে। সেই গোশতের টুকরাটি হল অন্তর।[৯]

তিরমিযীর বর্ণনায় এসেছে,

اَلْحَلَالُ بَيِّنٌ وَالْحَرَامُ بَيِّنٌ وَبَيْنَ ذَلِكَ أُمُوْرٌ مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَدْرِيْ كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ أَمِنَ الْحَلَالِ هِيَ أَمْ مِنَ الْحَرَامِ فَمَنْ تَرَكَهَا اسْتِبْرَاءً لِدِيْنِهِ وَعِرْضِهِ فَقَدْ سَلِمَ وَمَنْ وَاقَعَ شَيْئًا مِنْهَا يُوْشِكُ أَنْ يُوَاقِعَ الْحَرَامَ كَمَا أَنَّهُ مَنْ يَرْعَى حَوْلَ الْحِمَى يُوْشِكُ أَنْ يُوَاقِعَهُ أَلَا وَإِنَّ لِكُلِّ مَلِكٍ حِمًى أَلَا وَإِنَّ حِمَى اللهِ مَحَارِمُهُ

‘হালালও স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর উভয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়। অনেকেই জানে না তা হালালের অন্তর্ভূক্ত, না হারামের অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যক্তি স্বীয় দ্বীন ও সম্মান বাঁচাতে গিয়ে তা পরিত্যাগ করল, সে নিরাপদ হল। আর যে ব্যক্তি এর কিছু অংশেও নিপতিত হয়, আশংকা হয়, সে হারামে নিপতিত হবে। যেমন, কেউ যদি সংরক্ষিত তৃণভূমির পাশে পশু চরায় তবে আশংকা আছে যে, সে তাতে নিপতিত হবে। সাবধান, প্রত্যেক বাদশাহের সংরক্ষিত এলাকা থাকে। সাবধান, আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হল তাঁর নির্ধারিত হারামসমূহ।[১০]

 (ইনশাআল্লাহ চলবে) 

* পিএইচ-ডি. গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৫৯৯০; তিরমিযী, হা/২৪৬৫, সনদ ছহীহ।
[২]. তিরমিযী, হা/২৩৭৬; দারেমী, হা/২৭৩০, সনদ ছহীহ।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪২০; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৪৬।
[৪]. তিরমিযী, হা/২৩৩৮, সনদ হাসান ছহীহ।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭২২।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৪৩৬, ছহীহ মুসলিম, হা/১০৪৮।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৫।
[৮]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৬৫৫২; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৮০১; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৭৩৩।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৯।
[১০]. তিরমিযী, হা/১২০৫, সনদ ছহীহ।




প্রসঙ্গসমূহ »: আমল
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৪র্থ কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (২য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ত্বাহারাত (১০ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে জিহাদ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে জিহাদ (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : বিবাহ ও এ সংক্রান্ত বিষয়াদীর ফযীলত - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : আহার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ