বিবাহ ও এ সংক্রান্ত বিষয়াদীর ফযীলত
মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*
দৃষ্টি অবনমিত রাখার ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَغُضُّوۡا مِنۡ اَبۡصَارِہِمۡ وَ یَحۡفَظُوۡا فُرُوۡجَہُمۡ ذٰلِکَ اَزۡکٰی لَہُمۡ اِنَّ اللّٰہَ خَبِیۡرٌۢ بِمَا یَصۡنَعُوۡنَ
‘মুমিন পুরুষদেরকে বলুন, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত’ (সূরা আন-নূর : ৩০)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ قُلۡ لِّلۡمُؤۡمِنٰتِ یَغۡضُضۡنَ مِنۡ اَبۡصَارِہِنَّ وَ یَحۡفَظۡنَ فُرُوۡجَہُنَّ وَ لَا یُبۡدِیۡنَ زِیۡنَتَہُنَّ اِلَّا مَا ظَہَرَ مِنۡہَا وَ لۡیَضۡرِبۡنَ بِخُمُرِہِنَّ عَلٰی جُیُوۡبِہِنَّ
‘আর মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ব্যতীত তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে’ (সূরা আন-নূর : ৩১)। মহান আল্লাহ বলেন,
فَلَمَّا رَاَیۡنَہٗۤ اَکۡبَرۡنَہٗ وَ قَطَّعۡنَ اَیۡدِیَہُنَّ وَ قُلۡنَ حَاشَ لِلّٰہِ مَا ہٰذَا بَشَرًا اِنۡ ہٰذَاۤ اِلَّا مَلَکٌ کَرِیۡمٌ
‘অতঃপর তারা যখন তাকে দেখল, তখন তাকে বিশাল সৌন্দর্যের অধিকারী মনে করল এবং তারা নিজেদের হাত কেটে ফেলল আর বলল, মহিমা আল্লাহর, এ তো মানুষ নয়! এ তো এক সম্মানিত ফেরেশতা!’ (সূরা ইউসুফ : ৩১)।
عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ حَيْدَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ثَلَاثَةٌ لَا تَرَى أَعْيُنُهُمُ النَّارَ عَيْنٌ حَرَسَتْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَعَيْنٌ بَكَتْ مِنْ خَشْيَةِ اللهِ وَعَيْنٌ كَفَّتْ عَنْ مَحَارِمِ اللهِ
১. মু‘আবিয়া ইবনু হায়দাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তিন শ্রেণির লোকের চোখকে তুমি জাহান্নামের আগুনে পুড়তে দেখবে না। ১. ঐ চোখ, যা আল্লাহর রাস্তায় পাহারা দেয়। ২. ঐ চোখ, যা আল্লাহর ভয়ে কাঁদে। ৩. ঐ চোখ, যা আল্লাহর হারামকৃত বিষয় থেকে বিরত থাকে।[১]
-----
وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ اضْمَنُوْا لِيْ سِتًّا مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَضْمَنْ لَكُمُ الْجَنَّةَ اصْدُقُوْا إِذَا حَدَّثْتُمْ وَأَوْفُوْا إِذَا وَعَدْتُمْ وَأَدُّوْا إِذَا ائْتُمِنْتُمْ وَاحْفَظُوْا فُرُوْجَكُمْ وَغُضُّوْا أبْصَارَكُمْ وَكُفُّوْا أيْدِيَكُمْ
২. উবাদা ইবনু ছামিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, তোমরা নিজেদের ব্যাপারে আমাকে ছয়টি বিষয়ের নিশ্চয়তা দিলে আমি তোমাদেরকে জান্নাতের নিশ্চয়তা দেব। ১. যখন কথা বলবে, সত্য বলবে। ২. যখন ওয়াদা করবে, তা পূর্ণ করবে। ৩. তোমার কাছে কেউ আমানত রাখলে, তা আদায় করবে। ৪. তোমাদের লজ্জাস্থানকে হেফাযত করবে। ৫. তোমাদের দৃষ্টি অবনত রাখবে এবং ৬. তোমাদের হাতকে (অনিষ্ট করা থেকে) বিরত রাখবে।[২]
----
وَعَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِيْ طَالِبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ لَهُ يَا عَلِيُّ إِنَّ لَكَ كَنْزًا مِنَ الْجَنَّةِ وَإِنَّكَ ذُوْ قَرْنَيْهَا فَلَا تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ فَإِنَّمَا لَكَ الْأُوْلَى وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَةُ
৩. আলী ইবনু আবি তালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, (একদা) নবী করীম (ﷺ) আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, হে আলী! নিশ্চয় তোমার জন্য জান্নাতে সঞ্চিত ধনভা-ার রয়েছে, তুমি তার অংশীদার হবে। অতএব তুমি কোন নারীর প্রতি আকস্মিক একবার দৃষ্টিপাতের পর আবার দৃষ্টিপাত কর না। কেননা তোমার জন্য প্রথমবারের অনুমতি আছে এবং দ্বিতীয়বারের অনুমতি নেই।[৩]
-----
বিবাহের ক্ষেত্রে অধিক সন্তান সম্ভবা ও দ্বীনদার নারীকে প্রাধান্য দেয়ার ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ لَقَدۡ اَرۡسَلۡنَا رُسُلًا مِّنۡ قَبۡلِکَ وَ جَعَلۡنَا لَہُمۡ اَزۡوَاجًا وَّ ذُرِّیَّۃً وَ مَا کَانَ لِرَسُوۡلٍ اَنۡ یَّاۡتِیَ بِاٰیَۃٍ اِلَّا بِاِذۡنِ اللّٰہِ لِکُلِّ اَجَلٍ کِتَابٌ
‘আর অবশ্যই তোমার পূর্বে আমরা রাসূলদের প্রেরণ করেছি এবং তাদের জন্য সৃষ্টি করেছি স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি। আর কোন রাসূলের জন্য এটা সম্ভব নয় যে, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন নিয়ে আসবে। প্রতিটি সময়ের জন্য রয়েছে একটি কিতাব’ (সূরা আর-রা‘দ : ৩৮)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ اَنۡکِحُوا الۡاَیَامٰی مِنۡکُمۡ وَ الصّٰلِحِیۡنَ مِنۡ عِبَادِکُمۡ وَ اِمَآئِکُمۡ اِنۡ یَّکُوۡنُوۡا فُقَرَآءَ یُغۡنِہِمُ اللّٰہُ مِنۡ فَضۡلِہٖ وَ اللّٰہُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ
‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার যারা বিবাহহীন নারী-পুরুষ এবং সৎকর্মশীল দাস-দাসী তাদের বিবাহ সম্পন্ন কর। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী’ (সূরা আন-নূর : ৩২)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ لَا تَنۡکِحُوا الۡمُشۡرِکٰتِ حَتّٰی یُؤۡمِنَّ وَ لَاَمَۃٌ مُّؤۡمِنَۃٌ خَیۡرٌ مِّنۡ مُّشۡرِکَۃٍ وَّ لَوۡ اَعۡجَبَتۡکُمۡ وَ لَا تُنۡکِحُوا الۡمُشۡرِکِیۡنَ حَتّٰی یُؤۡمِنُوۡا وَ لَعَبۡدٌ مُّؤۡمِنٌ خَیۡرٌ مِّنۡ مُّشۡرِکٍ وَّ لَوۡ اَعۡجَبَکُمۡ اُولٰٓئِکَ یَدۡعُوۡنَ اِلَی النَّارِ وَ اللّٰہُ یَدۡعُوۡۤا اِلَی الۡجَنَّۃِ وَ الۡمَغۡفِرَۃِ بِاِذۡنِہٖ وَ یُبَیِّنُ اٰیٰتِہٖ لِلنَّاسِ لَعَلَّہُمۡ یَتَذَکَّرُوۡنَ
‘এবং তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না , যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে এবং মুমিনা দাসী মুশরিক নারীর চেয়ে নিশ্চয় উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে এবং মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন মুমিন দাস মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম। যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে। তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহ্বান করে আর আল্লাহ তাঁর অনুমতিতে তোমাদেরকে জান্নাত ও ক্ষমার দিকে আহ্বান করেন এবং মানুষের জন্য তাঁর আয়াতসমূহ স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করতে পারে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২২১)।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ
৪. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, হে যুবসমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিয়ের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণকারী, যৌনাঙ্গের পবিত্রতা রক্ষাকারী। আর যার সামর্থ্য নেই সে যেন ছিয়াম পালন করে। কেননা ছিয়াম হচ্ছে যৌবনকে দমন করার মাধ্যম।[৪]
-----
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو بْنِ الْعَاصِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَخَيْرُ مَتَاعِ الدُّنْيَا الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ
৫. আব্দুল্লাহ ইবনু ‘আমর ইবনুল ‘আছ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, দুনিয়ার সকল জিনিসই ভোগের সামগ্রী। আর সর্বোত্তম ভোগের সামগ্রী হল সৎচরিত্রবান স্ত্রী।[৫]
-----
وَعَنْ إِسْمَاعِيْلِ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ عَنْ أَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ مِنْ سَعَادَةِ ابْنِ آدَمَ ثَلَاثَةٌ وَمِنْ شَقَاوَةِ ابْنِ آدَمَ ثَلَاثَةٌ مِنْ سَعَادَةِ ابْنِ آدَمَ الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ وَالْمَسْكَنُ الصَّالِحُ وَالْمَرْكَبُ الصَّالِحُ وَمِنْ شَقَاوَةِ ابْنِ آدَمَ الْمَرْأَةُ السُّوْءُ وَالْمَسْكَنُ السُّوْءُ وَالْمَرْكَبُ السُّوْءُ
৬. ইসমাইল ইবনু সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ তার পিতা থেকে, তিনি তার দাদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণনা করে বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তিনটি বিষয় আদম সন্তানের সৌভাগ্যের পরিচায়ক আর তিনটি বিষয় আদম সন্তানের দুর্ভাগ্যের পরিচায়ক। যে তিনটি বিষয় আদম সন্তানের সৌভাগ্যের পরিচায়ক তাহল, ১. সত্বী-সাধবী স্ত্রী। ২. ভাল বাসস্থান ৩. আরামদায়ক বাহন। আর যে তিনটি বিষয় আদম সন্তানের দুর্ভাগ্যের পরিচায়ক তাহল, ১. খারাপ স্ত্রী। ২. খারাপ বাসস্থান। ৩. খারাপ বাহন।[৬] ইবনু হিব্বানের বর্ণনায় এসেছে, তিনি (ﷺ) বলেন,
أَرْبَعٌ مِنَ السَّعَادَةِ الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ وَالْمَسْكَنُ الْوَاسِعُ وَالْجَارُ الصَّالِحُ وَالْمَرْكَبُ الْهَنِيءُ وَأَرْبَعٌ مِنَ الشَّقَاوَةِ الْجَارُ السُّوْءُ وَالْمَرْأَةُ السُّوْءُ وَالْمَرْكَبُ السُّوْءُ وَالْمَسْكَنُ الضَّيِّقُ
চারটি বিষয় সৌভাগ্যের পরিচায়ক। সত্বী-সাধবী স্ত্রী, প্রশস্ত বাসস্থান, সৎ প্রতিবেশি ও আরামদায়ক বাহন। আর চারটি বিষয় দুর্ভাগ্যের পরিচায়ক। খারাপ প্রতিবেশী, খারাপ নারী, খারাপ বাহন ও সংকীর্ণ বাসস্থান।[৭]
-----
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ رَزَقَهُ اللهُ امْرَأَةً صَالِحَةً فَقَدْ أَعَانَهُ عَلَى شَطْرِ دِيْنِهِ فَلْيَتَّقِ اللهَ فِي الشَّطْرِ الْبَاقِيْ
৭. আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা যাকে একজন সত্বী-সাধবী স্ত্রী দান করেন, তাকে মূলত দ্বীনের একটি অংশ পূরণে সহযোগিতা করেছেন। অতএব সে যেন অন্যান্য অংশগুলো পূরণে আল্লাহকে ভয় করে।[৮] অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,
إِذَا تَزَوَّجَ الْعَبْدُ فَقَدِ اسْتَكْمَلَ نِصْفَ الدِّيْنِ فَلْيَتَّقِ اللهَ فِي النِّصْفِ الْبَاقِيْ.
‘যখন কোন বান্দা বিবাহ করে তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূর্ণ করে। তার উচিত বাকী অর্ধেক সম্পর্কে আল্লাহকে ভয় করা’।[৯]
-----
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ثَلَاثَةٌ حَقٌّ عَلَى اللهِ عَوْنُهُمْ الْمُجَاهِدُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْمُكَاتَبُ الَّذِيْ يُرِيْدُ الْأَدَاءَ وَالنَّاكِحُ الَّذِيْ يُرِيْدُ الْعَفَافَ
৮. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা তিন প্রকার মানুষকে সাহায্য করা নিজের কর্তব্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন। ১. আল্লাহ তা‘আলার পথে জিহাদকারী, ২. মুকাতাব গোলাম- যে চুক্তির অর্থ পরিশোধের ইচ্ছা করে এবং ৩. বিবাহে আগ্রহী লোক, যে বিয়ের মাধ্যমে পবিত্র জীবন যাপন করতে চায়।[১০]
-----
وَعَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ عَلَى إِحْدَى خِصَالٍ ثَلَاثٍ تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ عَلَى مَالِهَا وَتُنْكَحُ الْمَرْأَةُ عَلَى جَمَالِهَا وَتُنْكَحُ الْمَرْأَةُ عَلَى دِيْنِهَا فَخُذْ ذَاتَ الدِّيْنِ وَالْخُلُقِ تَرِبَتْ يَمِيْنُكَ
৯. আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নারীকে তিনটির একটি কারণে বিয়ে করা হয়। নারীকে বিয়ে করা হয় তার অর্থ-সম্পদ দেখে, নারীকে বিয়ে করা হয় তার সৌন্দর্যতা দেখে এবং নারীকে বিয়ে করা হয় তার দ্বীনদারীর কারণে। তুমি দ্বীনদার ও চরিত্রবান মেয়েকে গ্রহণ কর, (অন্যথায়) তোমার ডান হাত ধূলিমলিন হোক।[১১]
-----
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لِأَرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَلِجَمَالِهَا وَلِدِيْنِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّيْنِ تَرِبَتْ يَدَاكَ
১০. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নারীকে চারটি কারণে বিয়ে করা হয়। তার অর্থ, তার বংশ মর্যাদা, তার সৌন্দর্য এবং তার দ্বীনদারীর কারণে। তুমি দ্বীনদার মেয়েকে অগ্রাধিকার দাও। (অন্যথায়) তোমার হাত ধূলিমলিন হোক।[১২]
-----
وَعَنْ مَعْقِلِ بْنِ يَسَارٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ إِنِّيْ أَصَبْتُ امْرَأَةً ذَاتَ حَسَبٍ وَمَنْصِبٍ وَمَالٍ إِلَّا أَنَّهَا لَا تَلِدُ أَفَأَتَزَوَّجُهَا؟ فَنَهَاهُ ثُمَّ أَتَاهُ الثَّانِيَةَ فَقَالَ لَهُ مِثْلَ ذَلِكَ ثُمَّ أَتَاهُ الثَّالِثَةَ فَقَالَ لَهُ تَزَوَّجُوا الْوَدُوْدَ الْوَلُوْدَ فَإِنِّيْ مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأُمَمَ
১১. মা‘ক্বিল ইবনু ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (ﷺ)-এর খিদমাতে উপস্থিত হয়ে বলল, আমি এক সম্ভ্রান্ত, মর্যাদাসম্পন্ন ও ধনবান নারীর সন্ধান পেয়েছি, কিন্তু সে বন্ধা, আমি কি তাকে বিয়ে করব? তিনি তাকে নিষেধ করলেন। অতঃপর লোকটি দ্বিতীয়বার এসেও তাঁকে জিজ্ঞেস করলে (তিনি তাকে নিষেধ করলেন। লোকটি তৃতীয়বার তাঁর নিকট এলে তিনি তাকে বললেন, এমন নারীকে বিয়ে কর যে প্রেমময়ী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারী। কেননা আমি অন্যান্য উম্মাতের কাছে তোমাদের সংখ্যাধিক্যের কারণে গর্ব করব।[১৩]
----
স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর অধিকার পূরণ ও তার সাথে ভাল আচরণ করা এবং স্ত্রী কর্তৃক স্বামীর অধিকার আদায় করা ও আনুগত্য করার ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا قُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ وَ اَہۡلِیۡکُمۡ نَارًا وَّ قُوۡدُہَا النَّاسُ وَ الۡحِجَارَۃُ عَلَیۡہَا مَلٰٓئِکَۃٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَّا یَعۡصُوۡنَ اللّٰہَ مَاۤ اَمَرَہُمۡ وَ یَفۡعَلُوۡنَ مَا یُؤۡمَرُوۡنَ.
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; যেখানে রয়েছে নির্মম ও কঠোর ফেরেশতাকূল, যারা আল্লাহ তাদেরকে যে নির্দেশ দিয়েছেন সে ব্যাপারে অবাধ্য হয় না। আর তারা তা-ই করে যা তাদেরকে আদেশ করা হয়’ (সূরা আত-তাহরীম : ৬)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ کَانَ یَاۡمُرُ اَہۡلَہٗ بِالصَّلٰوۃِ وَ الزَّکٰوۃِ وَ کَانَ عِنۡدَ رَبِّہٖ مَرۡضِیًّا
‘আর সে তার পরিবার-পরিজনকে ছালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল তার রবের সন্তোষপ্রাপ্ত’ (সূরা মারইয়ম : ৫৫)।
(ইনশাআল্লাহ চলবে)
*পিএইচ-ডি. গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. ত্বাবারানী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/১০০৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২১৩; নাসাঈ, হা/৩১১৭; হাকেম, হা/২৪৩২, সনদ ছহীহ।
[২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭৫৭; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২৭১, সনদ ছহীহ।
[৩]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৩৭৩, সনদ হাসান লি গাইরিহী।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/১৯০৫, ৫০৬৫, ৫০৬৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪০০; মিশকাত, হা/৩০৮০।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৬৭; মিশকাত, হা/৩০৮৩।
[৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৪৫।
[৭]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪০৩২; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৮২।
[৮]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৫১০১; ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৯৭২; হাকেম, হা/২৬৮১, সনদ হাসান লি গাইরিহী, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/১৯১৬।
[৯]. বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৫১০০; মিশকাত, হা/৩০৯৬; সনদ হাসান, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬২৫।
[১০]. তিরমিযী, হা/১৬৫৫; নাসাঈ, হা/৩১২০; ইবনু মাজাহ, হা/২৫১৮; মিশকাত, হা/৩০৮৯, সনদ হাসান।
[১১]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৭৬৫; সনদ ছহীহ; বাযযার, কাশফুল আসত্বার, হা/১৪০৩; মুসনাদে আবী ই‘আলা, হা/১০১২; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪০৩৭।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০৯০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৬৬; মিশকাত, হা/৩০৮২।
[১৩]. আবূ দাঊদ, হা/২০৫০; নাসাঈ, হা/৩২২৭, সনদ হাসান ছহীহ।
প্রসঙ্গসমূহ »:
আমল