ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত
-মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান
-অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*
(১৫তম কিস্তি)
মসজিদে নিয়মিত গমন করা এবং এক ছালাতের পর অন্য ছালাতের জন্য অপেক্ষা করার ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اصۡبِرُوۡا وَ صَابِرُوۡا وَ رَابِطُوۡا وَ اتَّقُوا اللّٰہَ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ.
‘হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য ধর ও ধৈর্যে অটল থাক এবং পাহারায় নিয়োজিত থাক। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ২০০)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ اصۡبِرۡ نَفۡسَکَ مَعَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ رَبَّہُمۡ بِالۡغَدٰوۃِ وَ الۡعَشِیِّ یُرِیۡدُوۡنَ وَجۡہَہٗ وَ لَا تَعۡدُ عَیۡنٰکَ عَنۡہُمۡ ۚ تُرِیۡدُ زِیۡنَۃَ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ لَا تُطِعۡ مَنۡ اَغۡفَلۡنَا قَلۡبَہٗ عَنۡ ذِکۡرِنَا وَ اتَّبَعَ ہَوٰىہُ وَ کَانَ اَمۡرُہٗ فُرُطًا.
‘আর আপনি নিজকে ধৈর্যশীল রাখুন তাদের সাথে, যারা সকাল-সন্ধ্যায় তাদের রবকে ডাকে, তাঁর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এবং দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য কামনা করে। আপনার দুচোখ যেন তাদের থেকে ঘুরে না যায়। আর ওই ব্যক্তির আনুগত্য করবেন না, যার অন্তরকে আমরা আমার যিকির থেকে গাফেল করে দিয়েছি এবং যে তার প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে এবং যার কর্ম বিনষ্ট হয়েছে’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ২৮)।
عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَلَا أَدُلُّكُمْ عَلَىْ مَا يَمْحُو اللهُ بِهِ الْخَطَايَا وَيَرْفَعُ بِهِ الدَّرَجَاتِ؟ قَالُوْا بَلَىْ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ عَلَىْ الْمَكَارِهِ وَكَثْرَةُ الْخُطَى إِلَىْ الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ فَذَالِكُمُ الرِّبَاطُ.
৬৩). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি কি তোমাদের বলে দিব না, যার মাধ্যমে আল্লাহ মানুষের গুনাহ মুছে দেন এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন? ছাহাবীগণ বললেন, অবশ্যই হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ১. কষ্ট সত্ত্বেও পূর্ণভাবে ওযূ করা ২. মসজিদ সমূহের দিকে অধিক পদচারণা ৩. এক ছালাতের পর পরবর্তী ছালাতের প্রতীক্ষায় থাকা। আর এটিই হচ্ছে রিবাত বা প্রহরী।[১]
---------
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَا يَزَالُ أَحَدُكُمْ فِيْ صَلَاةٍ مَا دَامَتِ الصَّلَاةُ تَحْبِسُهُ لَا يَمْنَعُهُ أَنْ يَنْقَلِبَ إِلَي أَهْلِهِ إِلَّا الصَّلَاةُ. وَلِلْبُخَارِيِّ : إِنَّ أَحَدَكُمْ فِىْ صَلَاةٍ مَا دَامَتِ الصَّلَاةُ تَحْبِسُهُ وَالْمَلَائِكَةُ تَقُوْلُ اللهم اغْفِرْ لَهُ وَارْحَمْهُ مَا لَمْ يَقُمْ مِنْ مُصَلَّاهُ أَوْ يُحْدِثْ.
৬৪). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত ছালাতের জন্য কোন ব্যক্তি অপেক্ষা করে এবং শুধু ছালাতের কারণেই সে ঘরে (পরিবার-পরিজনের কাছে) ফিরে যায় না ততক্ষণ পর্যন্ত সে যেন ছালাতরত অবস্থায়ই থাকে’।[২] (অর্থাৎ- যতক্ষণ পর্যন্ত সে ছালাতের জন্য অপেক্ষা করল ততক্ষণ সে ছালাত আদায় করল বলেই ধরে নেয়া হবে।)। ছহীহ বুখারীর বর্ণনায় এসেছে, ‘তোমাদের কেউ যতক্ষণ পর্যন্ত ছালাতে রত থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত ফেরেশতাগণ এ বলে দু‘আ করতে থাকে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করে দিন এবং হে আল্লাহ! তার প্রতি রহম করুন যতক্ষণ পর্যন্ত পর্যন্ত লোকটি ছালাত ছেড়ে না দাঁড়ায় কিংবা তার ওযূ ভঙ্গ না হয়’।[৩]
---------
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللهُ فِيْ ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ الإِمَامُ العَادِلُ وَشَابٌّ نَشَأَ فِيْ عِبَادَةِ رَبِّهِ وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسَاجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ اجْتَمَعَا عَلَيْهِ وَتَفَرَّقَا عَلَيْهِ وَرَجُلٌ طَلَبَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ فَقَالَ إِنِّيْ أَخَافُ اللهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ أَخْفَى حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِيْنُهُ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ خَالِيًا فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ.
৬৫). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা ছায়া দিবেন নিজের ছায়ায়, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত কোন ছায়া থাকবে না। (১) ন্যায়পরায়ণ শাসক (২) সেই যুবক, যে আল্লাহর ইবাদতে সময় অতিবাহিত করে (৩) সেই ব্যক্তি, যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সাথে লটকানো থাকে। যখন সেখান হতে বের হয়ে যায় অতঃপর ফিরে না আসে (৪) সেই দুই ব্যক্তি, যারা একে অন্যকে আল্লাহর জন্য ভালোবেসে একত্রিত হয় এবং পৃথক হয় (৫) এমন ব্যক্তি, যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার দুই চক্ষু থেকে অশ্রু বিসর্জন দেয় (৬) সেই ব্যক্তি, যাকে কোন সম্ভ্রান্ত বংশের সুন্দরী নারী তার দিকে আহ্বান করে, আর সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং (৭) সেই ব্যক্তি, যে দান করে, আর তা গোপন করে থাকে। এমনকি তার বাম হাত জানে না, তার ডান হাত কী দান করে।[৪]
---------
عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ إِسْبَاغُ الْوُضُوْءِ فِي الْمَكَارِهِ وَإِعْمَالُ الْأَقْدَامِ إِلَى الْمَسَاجِدِ وَانْتِظَارُ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ تَغْسِلُ الْخَطَايَا غَسْلًا.
৬৬). আলী ইবনু আবি ত্বালিব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘কষ্টের সময় পূর্ণাঙ্গভাবে ওযূ করা, মসজিদে যাতায়াত করা এবং এক ওয়াক্তের ছালাত আদায়ের পর পরবর্তী ওয়াক্তের ছালাতের জন্যে অপেক্ষারত থাকা (এই তিনটি কাজ) গুনাহসমূহকে ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করে দেয়’।[৫]
---------
عَنْ جَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا صَلَّى الْفَجْرَ تَرْبَّعَ فِيْ مَجْلِسِهِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ حَسَنًا.
৬৭). জাবির ইবনু সামুরাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফজরের ছালাত আদায় করার পর সূর্য ভালভাবে উদিত না হওয়া পর্যন্ত স্বীয় মুছাল্লায় মুরাব্বা‘[৬] হয়ে বসে থাকতেন’।[৭]
---------
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَا مِنْ رَجُلٍ كَانَ يُوَطِّنُ الْمَسَاجِدَ فَشَغَلَهُ أَمْرٌ أَوْ عِلَّةٌ ثُمَّ عَادَ إِلَى مَا كَانَ إِلَّا تَبَشْبَشَ اللهُ إِلَيْهِ كَمَا يَتَبَشْبَشُ أَهْلُ الْغَائِبِ بِغَائِبِهِمْ إِذَا قَدِمَ.
৬৮). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সর্বদা মসজিদে অবস্থান করে, অতঃপর কোন কাজের ব্যস্ততায় বাহিরে গেলেও, (কাজ শেষে) আবার ফিরে আসে, এতে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রতি সেরূপ আনন্দিত হন, প্রবাসী ব্যক্তি তাঁর পরিবারে ফিরে এলে তারা তাকে পেয়ে যেরূপ আনন্দিত হয়’।[৮]
---------
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِىْ جَمَاعَةٍ ثُمَّ قَعَدَ يَذْكُرُ اللهَ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ ثُمَّ صَلَّى رَكْعَتَيْنِ كَانَتْ لَهُ كَأَجْرِ حَجَّةٍ وَعُمْرَةٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَامَّةٍ تَامَّةٍ تَامَّةٍ.
৬৯). আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করেছে, অতঃপর সূর্যোদয় পর্যন্ত বসে আল্লাহকে স্মরণ করে তারপর দুই রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করে, তার জন্য হজ্জ ও ওমরার ছওয়াবের ন্যায় ছওয়াব আছে’। রাবী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, পূর্ণ, পূর্ণ, পূর্ণ অর্থাৎ পূর্ণ হজ্জ ও ওমরার ছওয়াব।[৯]
---------
عَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ لَأَنْ أَقْعُدَ أَذْكُرُ اللهَ تَعَالَي وَأُكَبِّرُهُ وَأَحْمَدُهُ وَأُسَبِّحُهُ وَأُهَلِّلُهُ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَعْتِقَ رَقَبَتَيْنِ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيْلَ وَمِنْ بَعْدِ الْعَصْرِ حَتَّى تَغْرُبَ الشَّمْسُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَعْتِقَ أَرْبَعَ رَقَبَاتٍ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ.
৭০). আবু উমামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘(ফজর ছালাতের পর) বসে বসে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহর যিকির, তাঁর বড়ত্ব ঘোষণা, তার প্রশংসা, তাসবীহ পাঠ ও ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ পাঠ করা আমার কাছে, ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম)-এর বংশের দুই জন গোলাম আজাদ করার চেয়েও উত্তম এবং আছরের পর থেকে সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত এসব পাঠ করা আমার কাছে, ইসমাঈল (আলাইহিস সালাম)-এর বংশের চার জন গোলাম আযাদ করার চেয়েও উত্তম’।[১০]
---------
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ خَرَجَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَنَحْنُ فِي الصُّفَّةِ فَقَالَ أَيُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَّغْدُوَ كُلَّ يَوْمٍ إِلٰى بُطْحَانَ أَوْ إِلَي الْعَقِيْقِ فَيَأْتِيْ مِنْهُ بِنَاقَتَيْنِ كَوْمَاوَيْنِ فِيْ غَيْرِ إِثْمٍ وَلَا قَطْعِ رَحِمٍ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نُحِبُّ ذَلِكَ قَالَ أَفَلَا يَغْدُوْ أَحَدُكُمْ إِلٰى الْمَسْجِدِ فَيُعَلِّمُ أَوْ يَقْرَأُ آيَتَيْنِ مِنْ كِتَابِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ نَاقَتَيْنِ وَثَلَاثٌ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ ثَلَاثٍ وَأَرْبَعٌ خَيْرٌ لَّهُ مِنْ أَرْبَعٍ وَمِنْ أَعْدَادِهِنَّ مِنَ الْإِبِلِ
৭১). ওক্ববা ইবনু আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বের হয়ে আসলেন আর আমরা মসজিদের একটি স্থানে উপবিষ্ট ছিলাম। অতঃপর তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে কে চায় যে, প্রত্যহ সকালে বুত্বহান অথবা ‘আক্বীক্ব নামক বাজারে যাবে আর বড় কুঁজের অধিকারী দুটি উটনী নিয়ে আসবে, কোন অপরাধ না করে ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করে? আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমরা প্রত্যেকেই তো এমন সুযোগ গ্রহণ করতে চাই। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তবে কেন তোমাদের কোন ব্যক্তি মসজিদে গিয়ে আল্লাহর কিতাবের দুটি আয়াত শিক্ষা দেয় না বা শিক্ষা গ্রহণ করে না? অথচ একাজ তার জন্য দুটি উটনী অপেক্ষা উত্তম! তিন আয়াত তিনটি উটনী অপেক্ষা উত্তম এবং চার আয়াত চারটি উটনী অপেক্ষা উত্তম। আর যতো আয়াত পড়বে বা পড়াবে ততো উটনী অপেক্ষা উত্তম হবে।[১১]
---------
বেশি সংখ্যক লোকের জামা‘আতে ছালাত আদায়ের ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
کَیۡ نُسَبِّحَکَ کَثِیۡرًا - وَّ نَذۡکُرَکَ کَثِیۡرًا.
‘যাতে আমরা বেশী করে আপনার তাসবীহ পাঠ করতে পারি, এবং অধিক পরিমাণে আপনাকে স্মরণ করতে পারি’ (সূরা ত্বো-হা : ৩৩-৩৪)। মহান আল্লাহ বলেন, وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ارۡکَعُوۡا مَعَ الرّٰکِعِیۡنَ ‘আর তোমরা ছালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকূ‘কারীদের সাথে রুকূ‘ কর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৪৩)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ اِذَا کُنۡتَ فِیۡہِمۡ فَاَقَمۡتَ لَہُمُ الصَّلٰوۃَ فَلۡتَقُمۡ طَآئِفَۃٌ مِّنۡہُمۡ مَّعَکَ وَ لۡیَاۡخُذُوۡۤا اَسۡلِحَتَہُمۡ ۟ فَاِذَا سَجَدُوۡا فَلۡیَکُوۡنُوۡا مِنۡ وَّرَآئِکُمۡ ۪ وَ لۡتَاۡتِ طَآئِفَۃٌ اُخۡرٰی لَمۡ یُصَلُّوۡا فَلۡیُصَلُّوۡا مَعَکَ.
‘আর যখন তুমি তাদের মধ্যে থাকবে। অতঃপর তাদের জন্য ছালাত কায়েম করবে, তখন যেন তাদের মধ্য থেকে একদল তোমার সাথে দাঁড়ায় এবং তারা তাদের অস্ত্র ধারণ করে। এরপর যখন সিজদা করে ফেলবে তখন তারা যেন তোমাদের পেছনে অবস্থান নেয়। আর অপর একটি দল যারা ছালাত আদায় করেনি তারা যেন তোমার সাথে এসে ছালাত আদায় করে’ (সূরা আন-নিসা : ১০২)।
عَنْ أُبَيِّ بْنِ كَعْبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ صَلَّى بِنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا الصُّبْحَ فَقَالَ أَشَاهِدٌ فُلَانٌ؟ قَالُوْا لَا قَالَ أَشَاهِدٌ فُلَانٌ؟ قَالُوْا لَا قَالَ إِنَّ هَاتَيْنِ الصَّلَاتَيْنِ أَثْقَلُ الصَّلَوَاتِ عَلٰى الْمُنَافِقِيْنَ وَلَوْ تَعْلَمُوْنَ مَا فِيْهِمَا لَأَتَيْتُمُوْهُمَا وَلَوْ حَبْوًا عَلَى الرُّكَبِ وَإِنَّ الصَّفَّ الْأَوَّلُ عَلٰى مِثْلِ صَفِّ الْمَلَائِكَةِ وَلَوْ عَلِمْتُمْ مَا فَضِيْلَتُهُ لَابْتَدَرْتُمُوْهُ وَإِنَّ صَلَاةَ الرُّجُلِ مَعَ الرَّجُلِ أَزْكٰى مِنْ صَلَاتِهِ وَحْدَهُ وَصَلَاتُهُ مَعَ الرَّجُلَيْنِ أَزْكٰى مِنْ صَلَاتِهِ مَعَ الرَّجُلِ وَكُلُّ مَا كَثُرَ فَهُوَ أَحَبُّ إِلَى اللهِ عَزَ وَجَلَّ.
৭২). উবাই ইবনু কা‘ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের ফজরের ছালাত আদায় করালেন। অতঃপর তিনি বললেন, অমুক ব্যক্তি উপস্থিত আছে কি? তারা বললেন, না। পুণরায় বললেন, অমুক ব্যক্তি উপস্থিত আছে কি? তারা বললেন, না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এই দুটি ছালাত মুনাফিক্বদের পক্ষে অতি ভারী। যদি তোমরা জানতে এই দুই ছালাতের মধ্যে কী নেকি আছে, তাহলে তোমরা অবশ্যই জানুর উপর হামাগুড়ি দিয়ে হলেও উপস্থিত হতে! নিশ্চয় প্রথম কাতার হচ্ছে ফেরেশতাদের কাতারের ন্যায়। যদি তোমরা জানতে প্রথম কাতারে মর্যাদা কী, তাহলে তার জন্য তাড়াতাড়ি করতে। নিশ্চয় কোন ব্যক্তির জামা‘আতে ছালাত আদায় করা অধিক উত্তম তার একাকী ছালাত আদায় করা হতে। নিশ্চয় দু’ব্যক্তির সাথে ছালাত আদায় অধিক উত্তম তার একাকী ছালাত আদায় করা হতে। জামা‘আতে লোক যত বেশি হবে আল্লাহ তা‘আলার নিকট তা ততোই অধিক প্রিয় হবে।[১২]
---------
এশা ও ফজরের ছালাত মসজিদে আদায়ের ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
تَتَجَافٰی جُنُوۡبُہُمۡ عَنِ الۡمَضَاجِعِ یَدۡعُوۡنَ رَبَّہُمۡ خَوۡفًا وَّ طَمَعًا ۫ وَّ مِمَّا رَزَقۡنٰہُمۡ یُنۡفِقُوۡنَ.
‘তাদের পার্শ্বদেশ বিছানা থেকে আলাদা হয়। তারা ভয় ও আশা নিয়ে তাদের রবকে ডাকে। আর আমি তাদেরকে যে রিযক দান করেছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে’ (সূরা আস-সাজদাহ : ১৬)। মহান আল্লাহ বলেন, وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ارۡکَعُوۡا مَعَ الرّٰکِعِیۡنَ ‘আর তোমরা ছালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকূ‘কারীদের সাথে রুকূ‘ কর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৪৩)। মহান আল্লাহ বলেন,
اِنَّ رَبَّکَ یَعۡلَمُ اَنَّکَ تَقُوۡمُ اَدۡنٰی مِنۡ ثُلُثَیِ الَّیۡلِ وَ نِصۡفَہٗ وَ ثُلُثَہٗ وَ طَآئِفَۃٌ مِّنَ الَّذِیۡنَ مَعَکَ ؕ وَ اللّٰہُ یُقَدِّرُ الَّیۡلَ وَ النَّہَارَ ؕ عَلِمَ اَنۡ لَّنۡ تُحۡصُوۡہُ فَتَابَ عَلَیۡکُمۡ فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنَ الۡقُرۡاٰنِ ؕ عَلِمَ اَنۡ سَیَکُوۡنُ مِنۡکُمۡ مَّرۡضٰی ۙ وَ اٰخَرُوۡنَ یَضۡرِبُوۡنَ فِی الۡاَرۡضِ یَبۡتَغُوۡنَ مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ ۙ وَ اٰخَرُوۡنَ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ۫ۖ فَاقۡرَءُوۡا مَا تَیَسَّرَ مِنۡہُ ۙ وَ اَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتُوا الزَّکٰوۃَ وَ اَقۡرِضُوا اللّٰہَ قَرۡضًا حَسَنًا ؕ وَ مَا تُقَدِّمُوۡا لِاَنۡفُسِکُمۡ مِّنۡ خَیۡرٍ تَجِدُوۡہُ عِنۡدَ اللّٰہِ ہُوَ خَیۡرًا وَّ اَعۡظَمَ اَجۡرًا ؕ وَ اسۡتَغۡفِرُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ .
‘অবশ্যই তোমার রব জানেন যে, তুমি রাতের দুই তৃতীয়াংশের কিছু কম, অথবা অর্ধরাত অথবা রাতের এক তৃতীয়াংশ দাঁড়িয়ে থাক (ইবাদাত করার জন্য) এবং তোমার সাথে যারা আছে তাদের মধ্য থেকে একটি দলও। (দাঁড়িয়ে ইবাদাত করে)। আর আল্লাহ রাত ও দিন নিরূপন করেন। তিনি জানেন যে, তোমরা তা করতে সক্ষম হবে না। তাই তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমা পরবশ হয়েছেন। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়। তিনি জানেন তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়বে। আর কেউ কেউ আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধানে পৃথিবীতে ভ্রমণ করবে, আর কেউ কেউ আল্লাহর পথে লড়াই করবে। অতএব তোমরা কুরআন থেকে যতটুকু সহজ ততটুকু পড়। আর ছালাত কায়েম কর, যাকাত দাও এবং আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। আর তোমরা নিজেদের জন্য মঙ্গলজনক যা কিছু অগ্রিম পাঠাবে তোমরা তা আল্লাহর কাছে পাবে উহাকে উৎকৃষ্টতর এবং প্রতিদান হিসাবে মহত্তর। আর তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয় আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল পরম দয়ালু’ (সূরা আল-মুযযাম্মিল : ২০)।
عَنْ عُثْمَانَ بْنِ عَفَّانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِى جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِىْ جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ. وَ فِيْ رِوَيَةٍ- مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِيْ جَمَاعَةٍ كَانَ كَقِيَامِ نِصْفِ لَيْلَةٍ وَمَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ وَالْفَجْرَ فِيْ جَمَاعَةٍ كَانَ كَقِيَامِ لَيْلَةٍ.
৭৩). ওছমান বিন ‘আফফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে এশার ছালাত আদায় করল সে যেন অর্ধরাত্রি পর্যন্ত ছালাতে রত থাকল। আর যে ব্যক্তি ফজরের ছালাত জামা‘আতের সাথে আদায় করল সে যেন সারা রাত্রি ছালাত আদায় করল’।[১৩] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি এশার ছালাত জামা‘আতে আদায় করল, সে যেন অর্ধরাত ইবাদাতে কাটালো। আর যে ব্যক্তি এশা ও ফজরের ছালাত জামা‘আতে আদায় করল, সে যেন সারা রাতই ইবাদাতে কাটালো’।[১৪]
---------
عَنْ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدَبٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ مَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فَهُوَ فِيْ جَمَاعَةٍ فَهُوَ فِيْ ذِمَّةِ اللهِ تَعَالَى.
৭৪). সামুরাহ বিন জুনদুব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জামা‘আতের সাথে ফজরের ছালাত আদায় করল সে মহান আল্লাহর যিম্মায় রইল’।[১৫]
---------
عَنْ أَبِىْ بَكْرِ بْنِ سُلَيْمَانَ بْنِ أَبِىْ حَثْمَةَ قَالَ إِنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فَقَدَ سُلَيْمَانَ بْنَ أَبِىْ حَثْمَةَ فِىْ صَلَاةِ الصُّبْحِ وَإِنَّ عُمَرَ غَدَا إِلٰى السُّوْقِ وَمَسْكَنُ سُلَيْمَانَ بَيْنَ الْمَسْجِدِ وَالسُّوقِ فَمَرَّ عَلٰى الشِّفَاءِ أُمِّ سُلَيْمَانَ فَقَالَ لَهَا لَمْ أَرَ سُلَيْمَانَ فِى الصُّبْحِ فَقَالَتْ لَهُ إِنَّهُ بَاتَ يُصَلِّي فَغَلَبَتْهُ عَيْنَاهُ قَالَ عُمَرُ لَهُ لَأَنْ أَشْهَدَ صَلَاةَ الصُّبْحِ فِىْ جَمَاعَة أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَقُوْمَ لَيْلَةً.
৭৫). আবূ বকর ইবনু সুলায়মান ইবনু আবূ হাছমা (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমার বাবা সুলায়মান ইবনু আবূ হাছমাকে ফজরের ছালাতে পেলেন না। ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সকালে বাজারে আগমন করলেন। আর সুলায়মানের ঘর মসজিদ ও বাজারের মধ্যবর্তী জায়গায় ছিল। ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সুলায়মানের মা শিফা-এর সাথে সাক্ষাত করে বললেন, ফজরের ছালাতে সুলায়মানকে দেখলাম না কী ব্যাপার? তিনি তাঁকে বললেন, সে রাতে নফল ছালাত আদায় করেছিল, ফলে নিদ্রার কারণে সে ফজরের ছালাতে যেতে পারেনি। অতঃপর ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমার নিকট সারারাত নফল ছালাত আদায় করা অপেক্ষা ফজরের ছালাতের জামা‘আতে উপস্থিত হওয়া অধিক পসন্দনীয়।[১৬]
---------
আবশ্যকীয়ভাবে নারীদের বাড়ীতে ছালাত আদায় করার ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ قَرۡنَ فِیۡ بُیُوۡتِکُنَّ وَ لَا تَبَرَّجۡنَ تَبَرُّجَ الۡجَاہِلِیَّۃِ الۡاُوۡلٰی وَ اَقِمۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ اٰتِیۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ اَطِعۡنَ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ ؕ اِنَّمَا یُرِیۡدُ اللّٰہُ لِیُذۡہِبَ عَنۡکُمُ الرِّجۡسَ اَہۡلَ الۡبَیۡتِ وَ یُطَہِّرَکُمۡ تَطۡہِیۡرًا.
‘আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা ছালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার! আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে’ (সূরা আল-আহযাব : ৩৩)।
عَنْ أُمِّ حُمَيْدٍ امْرَأَةِ أَبِيْ حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّهَا جَاءَتِ إِلَي النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّيْ أُحِبُّ الصَّلَاةَ مَعَكَ قَالَ قَدْ عَلِمْتُ أَنَّكِ تُحِبِّيْنَ الصَّلَاةَ مَعِيْ وَصَلَاتُكِ فِيْ بَيْتِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِيْ حُجْرَتِكِ وَصَلَاتُكِ فِيْ حُجْرَتِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِيْ دَارِكِ وَصَلَاتُكِ فِيْ دَارِكِ خَيْرٌ لَكِ مِنْ صَلَاتِكِ فِيْ مَسْجِدِ قَوْمِكِ وَصَلَاتُكِ فِيْ مَسْجِدِ قَوْمِكِ خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِكِ فِيْ مَسْجِدِيْ قَالَ فَأَمَرَتْ فَبُنِيَ لَهَا مَسْجِدٌ فِيْ أَقْصَى شَيْءٍ مِنْ بَيْتِهَا وَأَظْلَمِهِ وَكَانَتْ تُصَلِّيْ فِيْهِ حَتَّى لَقِيَتِ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ.
৭৬). আবূ হুমাইদ আস-সা‘দী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর স্ত্রী উম্মে হুমাইদ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, একদা তিনি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহ রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি আপনার সাথে ছালাত আদায় করতে পসন্দ করি। তিনি বললেন, জানতে পারলাম তুমি আমার সাথে ছালাত আদায় করতে পছন্দ করো অথচ তোমার হুজরা খানায় ছালাত আদায়ের চেয়ে তোমার নিজ কামরায় ছালাত আদায় করাই উত্তম। তোমার বাড়িতে ছালাত আদায় করার চেয়ে তোমার হুজরা খানায় ছালাত আদায় করাই উত্তম। তোমার সম্প্রদায়ের মসজিদে ছালাত আদায় করার চেয়ে বাড়িতে ছালাত আদায় করাই উত্তম। আর তোমার জন্য আমার এই মসজিদে ছালাত আদায় করার চেয়ে তোমার সম্প্রদায়ের মসজিদে ছালাত আদায় করাই উত্তম। রাবী বলেন, অতঃপর তিনি (উম্মে হুমাইদ) মসজিদ নির্মাণের জন্য নির্দেশ করল এবং তার জন্য ঘরের অভ্যন্তরে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হল। মৃত্যু পর্যন্ত তিনি এ মসজিদেই ছালাত আদায় করতেন।[১৭]
---------
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَلَاةُ الْمَرْأَةِ فِيْ بَيْتِهَا خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِهَا فِيْ حُجْرَتِهَا وَصَلَاتُهَا فِيْ حُجْرَتِهَا خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِهَا فِيْ دَارِهَا وَصَلَاتُهَا فِيْ دَارِهَا خَيْرٌ مِنْ صَلَاتِهَا فِيْ مَسْجِدِ قَوْمِهَا.
৭৭). রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিনী উম্মে সালামাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘নারীদের জন্য তার হুজরা খানায় ছালাত আদায় করার চেয়ে নিজ কামরায় আদায় করাই উত্তম। আবার বাড়ির আঙ্গিনায় ছালাত আদায়ের চেয়ে তার হুজরা খানায় ছালাত আদায় করাই উত্তম। আবার তার সম্প্রদায়ের মসজিদের ছালাত আদায়ের চেয়ে তার বাড়ির আঙ্গিনায় ছালাত আদায় করাই উত্তম’।[১৮]
---------
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَمْنَعُوْا نِسَاءَكُمُ الْمَسَاجِدَ وَبُيُوْتُهُنَّ خَيْرٌ لَهُنَّ.
৭৮). ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘তোমাদের স্ত্রীলোকদেরকে মসজিদে উপস্থিত হতে বাঁধা দিও না। তবে তাদের ঘর তাদের জন্য উত্তম’।[১৯]
---------
عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ وَإِنَّهَا إِذَا خَرَجَتِ مِنْ بَيْتِهَا اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ وَإِنَّهَا لَا تَكُوْنُ أَقْرَبَ إِلَى اللهِ مِنْهَا فِيْ قَعْرِ بَيْتِهَا.
৭৯). সালিম ইবনু আব্দুল্লাহ তিনি তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহিলারা হচ্ছে আওরাত (আবরণীয় বস্তু)। যখন সে তার বাড়ি হতে বাইরে বের হয়, তখন শয়তান তার দিকে চোখ তুলে তাকায়। নিশ্চয় মহিলারা বাড়ির অভ্যন্তরে থেকেই বেশি আল্লাহর নৈকট্য লাভে ধন্য হয়’।[২০]
---------
عَنْ عَبْدِ اللهِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ صَلَاةُ الْمَرْأَةِ فِىْ بَيْتِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِىْ حُجْرَتِهَا وَصَلَاتُهَا فِىْ مَخْدَعِهَا أَفْضَلُ مِنْ صَلَاتِهَا فِىْ بَيْتِهَا.
৮০). আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘মহিলাদের বাড়ীর ছালাত তার হুজরার ছালাত অপেক্ষা উত্তম। ক্ষুদ্র কক্ষের ছালাত তার বাড়ীর ছালাত অপেক্ষা উত্তম’।[২১]
---------
عَنْ أَبِيْ عَمْرٍو الشَّيْبَانِيِّ أَنَّهُ رَأَى ابْنَ مَسْعُوْدٍ يُخْرِجُ النِّسَاءَ مِنَ الْمَسْجِدِ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَيَقُوْلُ اخْرُجْنَ إِلَى بُيُوْتِكُنَّ خَيْرٌ لَكُنَّ.
৮১). আবূ আমর আশ-শাইবানী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি একদা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) -কে জুম‘আর দিন মসজিদ থেকে বের করে দিতে দেখলেন। তিনি (মহিলাদের উদ্দেশ্যে) বলছিলেন, ‘তোমরা বাড়িতে চলে যাও, বাড়িই তোমাদের জন্য উত্তম জায়গা’।[২২]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫১; মিশকাত, হা/২৮২।
[২]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬৪৯।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৩২২৯।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৮০৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৩১; তিরমিযী, হা/২৩৯১; মিশকাত, হা/৭০১।
[৫]. মুসনাদে আবু ইয়ালা, হা/৪৮৮; মুসনাদে বাযযার, হা/৫২৮; সনদ ছহীহ।
[৬]. এক পায়ের উপর আরেক পা আড়াআড়িভাবে রেখে বসা।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬৭০।
[৮]. ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/৩৫৯, সনদ হাসান; ইবনু হিব্বান, হা/১৬০৭।
[৯]. তিরমিযী হা/৫৮৬; মিশকাত, হা/৯৭১, সনদ হাসান।
[১০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২১৯৪, সনদ হাসান।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/৮০৩; মিশকাত, হা/২১১০।
[১২]. আবূ দাঊদ, হা/৫৫৪; নাসাঈ হা/৮৪৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১২৬৫; ইবনু খুযায়মাহ, হা/১৪৭৭; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২০৫৬; মিশকাত, হা/১০৬৬, সনদ হাসান।
[১৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/৬৫৬; মিশকাত, হা/৬৩০।
[১৪]. আবূ দাঊদ, হা/৫৫৫; তিরমিযী, হা/২২১, সনদ ছহীহ।
[১৫]. ইবনু মাজাহ, হা/৩৯৪৬, সনদ ছহীহ।
[১৬]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৪৩২; মিশকাত, হা/১০৮০, সনদ ছহীহ মওকূফ।
[১৭]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২৭০৯০; ইবনু খুযায়মাহ, হা/১৬৮৯; ইবনু হিব্বান, হা/২২১৭। উল্লেখ্য যে, এখানে হুজরা, বাইত, দ্বার প্রভৃতি শব্দগুলো কাছাকাছি অর্থ বহন করলেও একটির চেয়ে আরেকটি বিস্তৃত পরিসর বুঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে।
[১৮]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৯১০১, সনদ জাইয়্যিদ।
[১৯]. আবূ দাঊদ, হা/৫৬৭; মিশকাত, হা/১০৬২।
[২০]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/২৮৯০; তিরমিযী, হা/১১৭৩।
[২১]. আবূ দাঊদ, হা/৫৭০; ইবনে খুযায়মাহ, হা/১৬৯০; মিশকাত, হা/১০৬৩, সনদ ছহীহ।
[২২]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৯৪৭৫, সনদ হাসান।