সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ১১:৩৭ অপরাহ্ন

 আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ 

-মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান 
-অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ* 


(শেষ কিস্তি)  

বদান্যতা দেখানো ও দান করার ফযীলত

আল্লাহ তা‘আলা বলেন, بَلۡ یَدٰہُ مَبۡسُوۡطَتٰنِ یُنۡفِقُ  کَیۡفَ یَشَآءُ ‘বরং তাঁর দু’হাত প্রসারিত। যেভাবে ইচ্ছা তিনি দান করেন’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ৬৪)। মহান আল্লাহ বলেন, فَرَاغَ   اِلٰۤی  اَہۡلِہٖ   فَجَآءَ  بِعِجۡلٍ  سَمِیۡنٍ ‘অতঃপর সে দ্রুত চুপিসারে নিজ পরিবারবর্গের কাছে গেল এবং একটি মোটা-তাজা গো-বাছুর (ভাজা) নিয়ে আসল’ (সূরা আয-যারিয়াত : ২৬)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ  قَالَ لِفِتۡیٰنِہِ اجۡعَلُوۡا بِضَاعَتَہُمۡ فِیۡ رِحَالِہِمۡ لَعَلَّہُمۡ یَعۡرِفُوۡنَہَاۤ اِذَا انۡقَلَبُوۡۤا اِلٰۤی اَہۡلِہِمۡ لَعَلَّہُمۡ یَرۡجِعُوۡنَ

‘আর সে তার যুবক কর্মচারীদেরকে বলল, তাদের পণ্যমূল্য তাদের মালপত্রের মধ্যে রেখে দাও, যাতে পরিবারের নিকট ফিরে গিয়ে তারা তা চিনতে পারে। আশা করি তারা ফিরে আসবে’ (সূরা ইউসুফ : ৬২)।

৬০. وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ قَالَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْفِقْ أُنْفِقْ عَلَيْكَ وَقَالَ يَدُ اللهِ مَلْأَى لَا تَغِيْضُهَا نَفَقَةٌ سَحَّاءُ اللَّيْلَ وَالنَّهَارَ وَقَالَ أَرَأَيْتُمْ مَا أَنْفَقَ مُنْذُ خَلَقَ السَّمَاءَ وَالأَرْضَ فَإِنَّهُ لَمْ يَغِضْ مَا فِيْ يَدِهِ وَكَانَ عَرْشُهُ عَلَى الْمَاءِ وَبِيَدِهِ الْمِيْزَانُ يَخْفِضُ وَيَرْفَعُ

৬০. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তুমি খরচ কর। আমি তোমাকে দান করব’। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহ তা‘আলার হাত পরিপূর্ণ। রাতদিন অবিরাম খরচেও তা কমবে না। তিনি বলেন, তোমরা দেখ না, যখন থেকে (আল্লাহ) আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন, তখন থেকে কী পরিমাণ খরচ করেছেন? কিন্তু এত খরচ করার পরও তাঁর হতে সম্পদের কোন কমতি হয়নি। আর আল্লাহ তা‘আলার ‘আরশ পানির উপর ছিল। তাঁর হাতেই রয়েছে পাল্লা। তিনি ঝুঁকান, তিনি উপরে উঠান।[১]

৬১. وَعَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ كَانَ النَّبِيُّ ﷺ أَحْسَنَ النَّاسِ وَأَشْجَعَ النَّاسِ وَأَجْوَدَ النَّاسِ وَلَقَدْ فَزِعَ أَهْلُ الْمَدِيْنَةِ فَكَانَ النَّبِيُّ ﷺ سَبَقَهُمْ عَلَى فَرَسٍ وَقَالَ وَجَدْنَاهُ بَحْرًا.

৬১. আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, নবী করীম (ﷺ) সর্বাপেক্ষা সুশ্রী, সাহসী ও দানশীল ছিলেন। মদীনাবাসীগণ একবার ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল। নবী করীম (ﷺ) ঘোড়ায় চড়ে সবার আগে আগে অগ্রসর হয়ে বললেন, আমরা ঘোড়াটিকে একটি সমুদ্রের ন্যায় দ্রুত গতিসম্পন্ন পেয়েছি।[২]

৬২. وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ الْمُؤْمِنُ غِرٌّ كَرِيْمٌ وَالْفَاجِرُ خَبٌّ لَئِيْمٌ.

৬২. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ঈমানদার মানুষ সহজ-সরল ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও হীন চরিত্রের হয়।[৩]

৬৩. وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَثَلُ الْبَخِيْلِ وَالْمُتَصَدِّقِ مَثَلُ رَجُلَيْنِ عَلَيْهِمَا جُبَّتَانِ مِنْ حَدِيْدٍ قَدِ اضْطَرَّتْ أَيْدِيَهُمَا إِلَى تَرَاقِيْهِمَا فَكُلَّمَا هَمَّ الْمُتَصَدِّقُ بِصَدَقَتِهِ اتَّسَعَتْ عَلَيْهِ حَتَّى تُعَفِّيَ أَثَرَهُ وَكُلَّمَا هَمَّ الْبَخِيْلُ بِالصَّدَقَةِ انْقَبَضَتْ كُلُّ حَلْقَةٍ إِلَى صَاحِبَتِهَا وَتَقَلَّصَتْ عَلَيْهِ وَانْضَمَّتْ يَدَاهُ إِلَى تَرَاقِيْهِ فَسَمِعَ النَّبِيَّ ﷺ يَقُوْلُ فَيَجْتَهِدُ أَنْ يُوَسِّعَهَا فَلَا تَتَّسِعُ.

৬৩. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, কৃপণ ও দানশীল ব্যক্তির উদাহরণ এমন দুই ব্যক্তির ন্যয়, যারা লৌহ বর্ম পরিহিত। বর্ম দু‘টি এতো আঁটসাঁট যে, তাদের উভয়ের হাত কব্জায় আবদ্ধ রয়েছে। দানশীল ব্যক্তি যখন দান করতে ইচ্ছা করে, তখন বর্মটি তার শরীরের উপর প্রসারিত হয়, এমনকি তা তার পদচিহ্ন মুছে ফেলে (পায়ের তালু পর্যন্ত ঢেকে ফেলে)। আর কৃপণ ব্যক্তি যখন দান করতে ইচ্ছা করে তখন বর্মের কড়াগুলো পরস্পর গলে গিয়ে তার শরীরকে আঁকড়ে ধরে এবং তার উভয় হাত কণ্ঠের সাথে লেগে যায়। তারপর আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, তিনি নবী করীম (ﷺ)-কে বলতে শুনেছেন, সে হাত দু’টিকে প্রসারিত করতে চেষ্টা করে; কিন্তু প্রসারিত করতে পারে না।[৪]

৬৪. وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ بَيْنَا رَجُلٌ بِفَلَاةٍ مِّنَ الْأَرْضِ فَسَمِعَ صَوْتًا فِيْ سَحَابَةٍ اسْقِ حَدِيْقَةَ فُلَانٍ فَتَنَحَّى ذَلِكَ السَّحَابُ فَأَفْرَغَ مَاءَهُ فِيْ حَرَّةٍ فَإِذَا شَرْجَةٌ مِّنْ تِلْكَ الشِّرَاجِ قَدِ اسْتَوْعَبَتْ ذَلِكَ الْمَاءَ كُلَّهُ فَتَتَبَّعَ الْمَاءَ فَإِذَا رَجُلٌ قَائِمٌ فِيْ حَدِيْقَتِهِ يُحَوِّلُ الْمَاءَ بِمِسْحَاتِهِ فَقَالَ لَهُ يَا عَبْدَ اللهِ مَا اسْمُكَ؟ قَالَ فُلَانٌ لِلْاِسْمِ الَّذِيْ سَمِعَ فِي السَّحَابَةِ فَقَالَ لَهُ يَا عَبْدَ اللهِ لِمَ تَسْأَلُنِيْ عَنِ اسْمِيْ فَقَالَ إِنِّيْ سَمِعْتُ صَوْتًا فِي السَّحَابِ الَّذِيْ هَذَا مَاؤُهُ يَقُوْلُ اسْقِ حَدِيْقَةَ فُلَانٍ لِاِسْمِكَ فَمَا تَصْنَعُ فِيْهَا قَالَ أَمَّا إِذْ قُلْتَ هَذَا فَإِنِّيْ أَنْظُرُ إِلَى مَا يَخْرُجُ مِنْهَا فَأَتَصَدَّقُ بِثُلُثِهِ وَآكُلُ أَنَا وَعِيَالِي ثُلُثًا وَأَرُدُّ فِيْهَا ثُلُثَهُ.

৬৪. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণনা করে বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, এক ব্যক্তি মাঠে অবস্থান করছিল, এমন সময় মেঘের মধ্যে একটি শব্দ শুনতে পেল ‘অমুক ব্যক্তির বাগানে পানি দাও’। অতঃপর মেঘমালা সে দিকে সরে গেল এবং এক প্রস্তরময় স্থানে পানি বর্ষাল। তখন দেখা গেল সেখানকার নালাসমূহের এক নালা সমস্ত পানি নিজের মধ্যে পুরে নিল। তখন সে ব্যক্তি পানির অনুসরণ করল এবং দেখল যে, এক ব্যক্তি তার বাগানে দাঁড়িয়ে সেচনী দ্বারা পানি সেচছে। তখন সে তাকে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর বান্দা তোমার নাম কী? সে বলল, আমার নাম অমুক, যে নাম সে মেঘের মধ্যে শুনেছিল। লোকটি বলল, হে আল্লাহর বান্দা! তুমি কেন আমার নাম জিজ্ঞেস করলে? সে বলল, আমি মেঘের মধ্যে একটি শব্দ শুনেছি, যে নামটি ছিল তোমার। সে তোমার নাম উল্লেখ করে বলেছে, অমুকের বাগানে পানি দাও! তুমি এমন কী কাজ কর? সে বলল, যখন তুমি তা বললে তখন শোন, তাতে যা ফলে তার প্রতি আমি লক্ষ্য করি। আমি তার এক ভাগ ছাদাক্বাহ করি, এক ভাগ আমি ও আমার পরিবার খাই এবং অপর ভাগ তাতে লাগাই।[৫]

মুসলিমদের প্রয়োজন পূরণ করা, তাদের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়ার ফযীলত ও কারো সুপারিশে দান করা প্রসঙ্গে

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قَالَ رَبِّ بِمَاۤ  اَنۡعَمۡتَ عَلَیَّ  فَلَنۡ  اَکُوۡنَ  ظَہِیۡرًا  لِّلۡمُجۡرِمِیۡنَ.

‘তিনি (মূসা) বললেন, হে আমার রব! আপনি যেহেতু আমার প্রতি নে‘মত দান করেন, তাই আমি কখনো আর অপরাধীদের সাহায্যকারী হব না’ (সূরা আল-ক্বাছাছ : ১৭)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ یُطۡعِمُوۡنَ  الطَّعَامَ عَلٰی حُبِّہٖ مِسۡکِیۡنًا وَّ  یَتِیۡمًا  وَّ  اَسِیۡرًا-اِنَّمَا نُطۡعِمُکُمۡ لِوَجۡہِ اللّٰہِ لَا نُرِیۡدُ مِنۡکُمۡ جَزَآءً وَّ لَا شُکُوۡرًا- اِنَّا نَخَافُ مِنۡ رَّبِّنَا یَوۡمًا عَبُوۡسًا قَمۡطَرِیۡرًا-فَوَقٰہُمُ  اللّٰہُ  شَرَّ ذٰلِکَ  الۡیَوۡمِ وَ لَقّٰہُمۡ نَضۡرَۃً   وَّ  سُرُوۡرًا.

‘তারা খাদ্যের প্রতি আসক্তি থাকা সত্ত্বেও মিসকীন, ইয়াতীম ও বন্দীকে খাদ্য দান করে। তারা বলে, আমরা তো আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তোমাদের খাদ্য দান করি। আমরা তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান চাই না এবং কোন কৃতজ্ঞতাও নয়। আমরা আমাদের রবের পক্ষ থেকে এক ভয়ংকর ভীতিপ্রদ দিবসের ভয় করি। সুতরাং সেই দিবসের বিপত্তি হতে আল্লাহ তাদের রক্ষা করলেন এবং তাদের প্রদান করলেন উজ্জ্বল্য ও উৎফুল্লতা’ (সূরা আদ-দাহর/ইনসান : ৮-১১)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ جَآءَ مِنۡ اَقۡصَا الۡمَدِیۡنَۃِ  رَجُلٌ یَّسۡعٰی قَالَ یٰقَوۡمِ اتَّبِعُوا الۡمُرۡسَلِیۡنَ.

‘আর শহরের দূরপ্রান্ত থেকে এক ব্যক্তি দৌড়ে এসে বলল, হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা রাসূলদের অনুসরণ কর’ (সূরা ইয়াসিন : ২০)। মহান আল্লাহ বলেন,

قِیۡلَ ادۡخُلِ الۡجَنَّۃَ  قَالَ یٰلَیۡتَ قَوۡمِیۡ یَعۡلَمُوۡنَ.

তাকে বলা হল, জান্নাতে প্রবেশ কর। সে বলল, হায়! আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারত’ (সূরা ইয়াসিন : ২৬)। মহান আল্লাহ বলেন,

فَسَقٰی لَہُمَا ثُمَّ تَوَلّٰۤی اِلَی الظِّلِّ فَقَالَ رَبِّ اِنِّیۡ لِمَاۤ  اَنۡزَلۡتَ اِلَیَّ مِنۡ خَیۡرٍ  فَقِیۡرٌ.

‘তখন মূসা তাদের পক্ষে (পশুগুলোকে) পানি পান করিয়ে দিল। তারপর ছায়ায় ফিরে গেল এবং বলল, হে আমার রব! নিশ্চয় আপনি আমার প্রতি যে অনুগ্রহই নাযিল করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী’ (সূরা আল-ক্বাছাছ : ২৪)।

৬৫. عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِيْ حَاجَةِ أَخِيْهِ كَانَ اللهُ فِيْ حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.

৬৫. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার প্রতি অত্যাচার করবে না এবং তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজনে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন।[৬] অন্য বর্ণনায় এসেছে,

عَنِ بَعْضِ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ مَرْفُوْعًا وَمَنْ مَشَى مَعَ أَخِيْهِ الْمُسْلِمِ فِي حَاجَتِهِ حَتَّى يَثْبُتَهَا لَهُ ثَبَّتَ اللهُ قَدَمَهُ يَوْمَ تَزِلُّ الْأَقْدَامُ.

নবী (ﷺ)-এর কতিপয় ছাহাবা থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত, আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণের জন্য তার সাথে চলে, এমনকি তার প্রয়োজন পূরণ হয়, মহান আল্লাহ পদস্খলনের দিন (ক্বিয়ামত দিবসে) তাকে সুদৃঢ় রাখবেন’।[৭]

৬৬. وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِّنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِّنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ يَّسَّرَ عَلَىْ مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِىْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ فِىْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللهُ فِىْ عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِىْ عَوْنِ أَخِيْهِ.

৬৬. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মুমিনের দুনিয়ার কষ্টসমূহ হতে কোন কষ্ট দূর করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা তার ক্বিয়ামতের কষ্টসমূহের মধ্য হতে কোন কষ্ট দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্ত লোকের অভাব সহজ করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখেরাতে তাঁর অভাব সহজ করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা দুুনিয়া ও আখেরাতে তাঁর দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন। আল্লাহ তা‘আলা ততক্ষণ তাঁর বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ সে তাঁর ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।[৮]

৬৭. وَعَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ لِلهِ أَقْوَامًا اخْتَصَّهُمْ بِالنِّعَمِ لِمَنَافِعِ الْعِبَادِ يُقِرُّهُمْ فِيْهَا مَا يَبْذُلُوْنَهَا فَإِذَا مَنَعُوْهَا نَزَعَهَا مِنْهُمْ فَحَوَّلَهَا إِلٰى غَيْرِهِمْ.

৬৭. ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা নির্দিষ্ট কিছু সম্প্রদায়ের জন্য তাঁর অনুগ্রহকে অবধারিত করে দিয়েছেন, স্বীয় বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করার জন্য। তাদের প্রতি অনুগ্রহ অব্যাহত থাকে, যতক্ষণ তারা বান্দাদের প্রতি খরচ করতে থাকে। যখন তারা বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করা বন্ধ করে দেয়, আল্লাহও তাদের প্রতি অনুগ্রহ করা বন্ধ করে স্বীয় অনুগ্রহকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেন।[৯]

৬৮. وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَا مِنْ عَبْدٍ أَنْعَمَ اللهُ عَلَيْهِ نِعْمَةً فَأَسْبَغَهَا عَلَيْهِ ثُمَّ جَعَلَ شَيْئًا مِنْ حَوَائِجِ النَّاسِ إِلَيْهِ فَتَبَرَّمَ فَقَدْ عَرَّضَ تِلْكَ النِّعْمَةَ لِلزَّوَالِ.

৬৮. ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা কোন বান্দাকে যখন অফুরন্ত নে‘মত দান করেন, অতঃপর প্রয়োজনের তাকীদে মানুষেরা তাতে মুখাপেক্ষী হলে সে বিরক্তি প্রকাশ করে, তখন সেই নে‘মত বিলুপ্ত হতে থাকে।[১০]

৬৯. وَعَنْ زَيْدِ بْنِ ثَابِتٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ قَالَ لَا يَزَالُ اللهُ فِيْ حَاجَةِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِيْ حَاجَةِ أَخِيْهِ.

৬৯. যায়েদ ইবনু ছাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ বান্দার প্রয়োজনে সাড়া দেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সে তার ভাইয়ের প্রয়োজনে সাড়া দেয়।[১১]

৭০. وَعَنْ أَبِيْ مُوْسَى رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ عَلَى كُلِّ مُسْلِمٍ صَدَقَةٌ قِيْلَ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ يَجِدْ؟ قَالَ يَعْتَمِلُ بِيَدَيْهِ فَيَنْفَعُ نَفْسَهُ وَيَتَصَدَّقُ قَالَ قِيْلَ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ؟ قَالَ يُعِيْنُ ذَا الْحَاجَةِ الْمَلْهُوْفَ قَالَ قِيْلَ لَهُ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ؟ قَالَ يَأْمُرُ بِالْمَعْرُوْفِ أَوِ الْخَيْرِ قَالَ أَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ يَفْعَلْ؟ قَالَ يُمْسِكُ عَنِ الشَّرِّ فَإِنَّهَا صَدَقَةٌ.

৭০. আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (ﷺ) বলেন, প্রত্যেক মুসলিমের উপর ছাদাক্বাহ করা ওয়াজিব। প্রশ্ন করা হল, যদি ছাদাক্বাহ করার জন্য কিছু না পায়? তিনি বললেন, তবে সে নিজ হাতে উপার্জন করবে এবং নিজে উপকৃত হবে ও ছাদাক্বাহ করবে। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হল, যদি সে এতেও সক্ষম না হয় তবে কী হবে? তিনি বললেন, তাহলে সে অসহায় মানুষের সাহায্য করবে। রাবী বলেন, আবার জিজ্ঞেস করা হল, যদি সে এতেও সক্ষম না হয়? তিনি বললেন, তাহলে সৎকাজের কিংবা কল্যাণের আদেশ করবে। আবার জিজ্ঞেস করা হল, যদি সে তাও না করে? তিনি বললেন, তবে মন্দকাজ থেকে বিরত থাকবে। কেননা এটাও ছাদাক্বাহ।[১২]

৭১. وَعَنْ عُمَرَ  رَضِىَ اللهُ عَنْهُ مَرْفُوْعًا أَفْضَلُ الْأَعْمَالِ إِدْخَالُ السُّرُوْرَ عَلَى الْمُؤْمِنِ كَسَوْتَ عُرْيَهُ أَوْ أَشْبَعْتَ جَوْعَتَهُ أَوْ قَضَيْتَ لَهُ حَاجَةً.

৭১. ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে মারফূ‘ সূত্রে বর্ণিত, উত্তম আমল হল, ‘কোন মুমিনকে আনন্দিত করবে অথবা তাকে পোশাক পরাবে অথবা তার ক্ষুধা নিবারণ করবে অথবা তার কোন প্রয়োজন মিটাবে’।[১৩]

৭২. وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ  رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أنَّ رَجُلًا جَاءَ إِلَى رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ! أيُّ النَّاسِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ؟ فَقَالَ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَى اللهِ أنْفَعُهُمْ لِلنَّاسِ وَأَحَبُّ الْأَعْمَالِ إِلَى اللهِ عَزَّ وَجَلَّ سُرُوْرٌ تُدْخِلُهُ عَلَى مُسْلِمٍ تَكْشِفُ عَنْهُ كُرْبَةً أَوْ تَقْضِيْ عَنْهُ دَيْنًا أوْ تَطْرُدُ عَنْهُ جُوْعًا وَلَأَنْ أَمْشِيْ مَعَ أَخٍ فِيْ حَاجَةٍ أحَبُّ إليَّ مِنْ أنْ أعْتَكِفَ فِيْ هَذَا الْمَسْجِدِ يَعْنِيْ مَسْجِدَ الْمَدِيْنَةِ شَهْرًا ومَنْ كَظَمَ غَيْظَهُ وَلَوْ شَاءَ أنْ يُمْضِيَهُ أمْضاهُ مَلَأَ اللهُ قلْبَهُ يَوْمَ الْقَيَامَةِ رَضِيَ ومَنْ مَشَى مَعَ أَخِيْهِ فِيْ حَاجَةٍ حَتَّى يَقْضِيَها لَهُ ثَبَّتَ اللهُ قدَمَيْهِ يَوْمَ تَزُوْلُ الْأقْدَامُ.

৭২. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, একজন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকটে এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আল্লাহর নিকট কোন ব্যক্তি অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় সেই ব্যক্তি, যে মানুষের উপকার সাধন করে থাকে। আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল হল, কোন মুসলিমকে আনন্দিত করা, তার মুছিবত দূর করা, তার ঋণ পরিশোধ করা ও তার ক্ষুধা নিবারণ করা। আমার নিকটে কোন ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণ করা এই মসজিদে (মসজিদে নববী) বসে এক মাস ধরে ই‘তিকাফ করার চেয়ে অধিক প্রিয়। আর যে ব্যক্তি তার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও রাগকে নিয়ন্ত্রণ করল, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার অন্তরকে সন্তুষ্টি দিয়ে ভরে দিবেন। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণের জন্য চেষ্টা করে, এমনকি তার প্রয়োজন পূরণ হয়, মহান আল্লাহ পদস্খলনের দিন (ক্বিয়ামত দিবসে) তাকে সুদৃঢ় রাখবেন।[১৪]

৭৩. وَعَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ شَفَعَ شَفَاعَةً لِأَحَدٍ فَأَهْدَى لَهُ هَدِيَّةً عَلَيْهَا فَقَبِلَهَا فَقَدْ أَتَى بَابًا عَظِيْمًا مِنْ أَبْوَابِ الرِّبَا.

৭৩. আবূ উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি কারো জন্য সুপারিশ করল এবং সেই সুপারিশের প্রতিদান স্বরূপ তাকে কিছু উপহার দিল। যদি সে তা গ্রহণ করে, তাহলে সে সূদের দরজাসমূহের একটি বড় দরজায় উপস্থিত হল।[১৫]


* পিএইচ.ডি গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৬৮৪; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪২।

[২]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮২০; ছহীহ মুসলিম, হা/২৩০৭।

[৩]. আবূ দাঊদ, হা/৪৭৯০; তিরমিযী, হা/১৯৬৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯১০৭, সনদ হাসান।

[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৯১৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১০২১।

[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৮৪।

[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৪২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮০।

[৭]. ছহীহুল জামে‘, হা/১৭৬।

[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৯।

[৯]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১৩৯২৫; সনদ হাসান, ছহীহুল জামে‘, হা/২১৬৪; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৬১৭।

[১০]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৭৫২৯; সনদ হাসান, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৬১৮।

[১১]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৪৮০১; সনদ ছহীহ লি-গাইরিহী, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৬১৯।

[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪৪৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১০০৮।

[১৩]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৫০৮১; হাসান লি-গাইরিহী, ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৯৫৪।

[১৪]. ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/২৬২৩; হাসান লি-গাইরিহী। আল্লামা নাজী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতে (وأيُّ الأعمالِ أحبُّ إلى الله؟) ‘কোন্ আমলটি আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয়’ এই ইবারতটুকু আল্লামা আছবাহানী (রাহিমাহুল্লাহ)-এর পুরাতন নুসখাতে বিদ্যমান ছিল।

[১৫]. আবূ দাঊদ, হা/৩৫৪১, সনদ হাসান।




প্রসঙ্গসমূহ »: আমল
ফাযায়েলে আমল: ফাযায়েলে তাওহীদ (৭ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৩তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
যিলহজ্জ মাসের আমল ও ফযীলত - মুহাম্মাদ জাহিদুল ইসলাম
ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ত্বাহারাত (১০ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে রামাযান - মুহাম্মাদ আবূ সাঈদ
ফাযায়েলে আমল : আহার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে জিহাদ (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ