শাস্তি প্রয়োগ ও অন্যান্য বিধান
মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান
অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*
সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধের ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ
‘আর যেন তোমাদের মধ্য থেকে এমন একটি দল হয়, যারা কল্যাণের প্রতি আহ্বান করবে, ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ হতে নিষেধ করবে। আর তারাই সফলকাম’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১০৪)। মহান আল্লাহ বলেন,
کُنۡتُمۡ خَیۡرَ اُمَّۃٍ اُخۡرِجَتۡ لِلنَّاسِ تَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ تَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ لَوۡ اٰمَنَ اَہۡلُ الۡکِتٰبِ لَکَانَ خَیۡرًا لَّہُمۡ مِنۡہُمُ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ اَکۡثَرُہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
‘তোমরা হলে সর্বোত্তম উম্মত, যাদেরকে মানুষের জন্য বের করা হয়েছে। তোমরা ভাল কাজের আদেশ দেবে এবং মন্দ কাজ থেকে বারণ করবে, আর আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে। আর যদি আহলে কিতাব ঈমান আনত, তবে অবশ্যই তা তাদের জন্য কল্যাণকর হত। তাদের কতক ঈমানদার। আর তাদের অধিকাংশই ফাসিক’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১১০)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَالۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتُ بَعۡضُہُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ یُطِیۡعُوۡنَ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ اُولٰٓئِکَ سَیَرۡحَمُہُمُ اللّٰہُ اِنَّ اللّٰہَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ
‘আর মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা ছালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা আত-তওবাহ : ৭১)। মহান আল্লাহ বলেন,
اَلَّذِیۡنَ اِنۡ مَّکَّنّٰہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَوُا الزَّکٰوۃَ وَ اَمَرُوۡا بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ نَہَوۡا عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ لِلّٰہِ عَاقِبَۃُ الۡاُمُوۡرِ
‘তারা এমন যাদেরকে আমি পৃথিবীতে ক্ষমতা দান করলে তারা ছালাত কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ হতে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে’ (সূরা আল-হজ্জ : ৪১)। মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا عَلَیۡکُمۡ اَنۡفُسَکُمۡ لَا یَضُرُّکُمۡ مَّنۡ ضَلَّ اِذَا اہۡتَدَیۡتُمۡ اِلَی اللّٰہِ مَرۡجِعُکُمۡ جَمِیۡعًا فَیُنَبِّئُکُمۡ بِمَا کُنۡتُمۡ تَعۡمَلُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ, তোমাদের উপর তোমাদের নিজেদের দায়িত্ব। যদি তোমরা সঠিক পথে থাক তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহর দিকেই তোমাদের সকলের প্রত্যাবর্তন; তখন তিনি তোমরা যা আমল করতে তা তোমাদের জানিয়ে দেবেন’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ১০৫)।
১. عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيْمَانِ
১. আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তোমাদের কেউ কোন অপসন্দনীয় কিছু দেখলে সে যেন তা হাত দ্বারা বাধা প্রদান করে। যদি সে তাতে সক্ষম না হয়, তাহলে কথার মাধ্যমে যেন বাধা প্রদান করে। আর ইহাও করতে সক্ষম না হলে সে যেন অন্তর থেকে ঘৃণা করে। আর এটাই হচ্ছে ঈমানের দুর্বলতম শাখা।[১]
২. وَعَنْ عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَايَعْنَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فِي الْعُسْرِ وَالْيُسْرِ وَالْمَنْشَطِ وَالْمَكْرَهِ وَعَلَى أَثَرَةٍ عَلَيْنَا وَ أَنْ لَّا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنَ اللهِ فِيْهِ بُرْهَانٌ وَعَلَى أَنْ نَقُوْلَ بِالْحَقِّ أَيْنَمَا كُنَّا لَا نَخَافُ فِي اللهِ لَوْمَةَ لَائِمٍ
২. ওবাদা ইবনু ছামেত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এই মর্মে বায়‘আত করেছিলাম যে, আমরা মেনে চলব ও আনুগত্য করব কষ্টে, সহজে, সুখে ও দুঃখে, আমাদের ওপরে কোন ব্যক্তিকে প্রাধান্য দিলেও আমরা ধৈর্যধারণ করব, ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির বিরোধিতা করব না। কিন্তু যদি স্পষ্ট কুফরী দেখ, তোমাদের কাছে আল্লাহর তরফ থেকে যে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তাহলে আলাদা কথা। আর সত্যের ওপর অবিচল থাকব আমরা যেখানেই থাকি না কেন, আল্লাহর পথে কোন ভর্ৎসনাকারীর ভর্ৎসনাকে আমরা মোটেও পারোয়া করব না।[২]
৩. وَعَنْ أَبِيْ ذَرٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ نَاسًا قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ ذَهَبَ أَهْلُ الدُّثُوْرِ بِالْأُجُوْرِ يُصَلُّوْنَ كَمَا نُصَلِّيْ وَيَصُوْمُوْنَ كَمَا نَصُوْمُ وَيَتَصَدَّقُوْنَ بِفُضُوْلِ أَمْوَالِهِمْ قَالَ أَوَلَيْسَ قَدْ جَعَلَ اللهُ لَكُمْ مَا تَصَّدَّقُوْنَ؟ إِنَّ بِكُلِّ تَسْبِيْحَةٍ صَدَقَةً وَكُلِّ تَكْبِيْرَةٍ صَدَقَةً وَكُلِّ تَحْمِيْدَةٍ صَدَقَةً وَكُلِّ تَهْلِيْلَةٍ صَدَقَةً وَأَمْرٌ بِالْمَعْرُوْفِ صَدَقَةٌ وَنَهْيٌ عَنْ مُنْكَرٍ صَدَقَةٌ
৩. আবূ যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত যে, কয়েকজন ছাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! বিত্তবানরা ছওয়াব নিয়ে যাচ্ছে তারা আমাদের মত ছালাত আদায় করেন, আমাদের মত ছিয়াম সাধনা করেন এবং তারা নিজেদের-ধন সম্পদ হতে কিছু দান করে থাকেন। তিনি বললেন, তোমাদের জন্য কি আল্লাহ তা‘আলা ছাদাক্বাহ করার ব্যবস্থা করেননি? প্রতিটি তাসবীহ ছাদাক্বাহ, প্রতিটি তাকবীর ছাদাক্বাহ, প্রতিটি তাহমীদ ছাদাক্বাহ, প্রতিটি তাহলীল ছাদাক্বাহ, সৎকাজের আদেশ দেয়া ছাদাক্বাহ, অসৎকাজে বাধা দেয়া ছাদাক্বাহ।[৩]
৪. وَعَنِ النُّعْمَانِ بْنِ بَشِيْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَثَلُ الْقَائِمِ عَلَى حُدُوْدِ اللهِ وَالْوَاقِعِ فِيْهَا كَمَثَلِ قَوْمٍ اسْتَهَمُوْا عَلَى سَفِيْنَةٍ فَأَصَابَ بَعْضُهُمْ أَعْلَاهَا وَبَعْضُهُمْ أَسْفَلَهَا فَكَانَ الَّذِيْنَ فِيْ أَسْفَلِهَا إِذَا اسْتَقَوْا مِنَ الْمَاءِ مَرُّوْا عَلَى مَنْ فَوْقَهُمْ فَقَالُوْا لَوْ أَنَّا خَرَقْنَا فِيْ نَصِيْبِنَا خَرْقًا وَلَمْ نُؤْذِ مَنْ فَوْقَنَا فَإِنْ يَتْرُكُوْهُمْ وَمَا أَرَادُوْا هَلَكُوْا جَمِيْعًا وَإِنْ أَخَذُوْا عَلَى أَيْدِيْهِمْ نَجَوْا وَنَجَوْا جَمِيْعًا
৪. নু‘মান ইবনু বাশীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) নবী করীম (ﷺ) হতে বর্ণানা করেছেন, তিনি বলেছেন, যে মহান আল্লাহর নির্ধারিত সীমার মধ্যে প্রতিষ্ঠিত থাকে এবং যে সীমালঙ্ঘন করে, তাদের দৃষ্টান্ত সেই যাত্রীদলের মত, যারা লটারীর মাধ্যমে এক নৌযানে নিজেদের স্থান নির্ধারণ করে নিল। তাদের কেউ স্থান পেল উপর তলায় আর কেউ নীচ তলায় (পানির ব্যবস্থা ছিল উপর তলায়) কাজেই নীচের তলার লোকেরা পানি সংগ্রহ কালে উপর তলার লোকদের ডিঙ্গিয়ে যেত। তখন নীচ তলার লোকেরা বলল, উপর তলার লোকেদের কষ্ট না দিয়ে আমরা যদি নিজেদের অংশে একটি ছিদ্র করে নেই (তবে ভালো হয়) এমতাবস্থায় তারা যদি এদেরকে আপন মর্জির উপর ছেড়ে দেয় তাহলে সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে। আর যদি তারা এদের হাত ধরে (বিরত) রাখে তবে তারা এবং সকলেই রক্ষা পাবে।[৪]
৫. وَعَنْ عَبْدِ ا للهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَا مِنْ نَبِىٍّ بَعَثَهُ اللهُ فِيْ أُمَّةٍ قَبْلِيْ إِلَّا كَانَ لَهُ مِنْ أُمَّتِهِ حَوَارِيُّوْنَ وَأَصْحَابٌ يَأْخُذُوْنَ بِسُنَّتِهِ وَيَقْتَدُوْنَ بِأَمْرِهِ ثُمَّ إِنَّهَا تَخْلُفُ مِنْ بَعْدِهِمْ خُلُوْفٌ يَقُوْلُوْنَ مَا لَا يَفْعَلُوْنَ وَيَفْعَلُوْنَ مَا لَا يُؤْمَرُوْنَ فَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِيَدِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِلِسَانِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَمَنْ جَاهَدَهُمْ بِقَلْبِهِ فَهُوَ مُؤْمِنٌ وَلَيْسَ وَرَاءَ ذَلِكَ مِنَ الْإِيْمَانِ حَبَّةُ خَرْدَلٍ
৫. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমার পূর্বে আল্লাহ এমন কোন নবীকে তাঁর উম্মতের মধ্যে প্রেরণ করেননি, যাদের মধ্যে তাঁর জন্য ‘হাওয়ারী’ এবং সাথীবৃন্দ ছিল না। তারা তাদের নবীর সুন্নাত গ্রহণ করত এবং তাঁর আদেশ-নিষেধের অনুসরণ করত। অতঃপর এমন সব লোক তাদের স্থলাভিষিক্ত হবে, তারা এমন কথা বলবে, যা নিজেরা করবে না। এমন কাজ করবে, যা তাদের নির্দেশ দেয়া হয়নি। অতএব যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে নিজের হাত দ্বারা জিহাদ করবে, সে মুমিন। যে ব্যক্তি যবান দ্বারা জিহাদ করবে, সেও মুমিন এবং যে ব্যক্তি অন্তর দ্বারা জিহাদ করবে, সেও মুমিন। এরপর এক সরিষাদানা পরিমাণও ঈমান নেই।[৫]
৬. وَعَنْ جَرِيْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَايَعْتُ النَّبِيَّ ﷺ عَلَى السَّمْعِ وَالطَّاعَةِ فَلَقَّنَنِيْ فِيْمَا اسْتَطَعْتُ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ
৬. জারীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (ﷺ)-এর কাছে বায়‘আত করলাম শোনার ও মান্য করার ব্যাপারে। তিনি আমাকে বলে দিলেন, ‘আমার সাধ্যানুসারে’ একথাটিও বল। আর প্রত্যেক মুসলিমের কল্যাণ কামনার জন্য বায়‘আত করলাম।[৬]
৭. وَعَنْ عُمَرَ بْنِ سُلَيْمَانَ قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ الرَّحْمَنِ بْنَ أَبَانَ يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيْهِ قَالَ خَرَجَ زَيْدُ بْنُ ثَابِتٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ مِنْ عِنْدِ مَرْوَانَ نِصْفَ النَّهَارِ قَالَ قُلْتُ مَا بَعَثَ إِلَيْهِ هَذِهِ السَّاعَةَ إِلَّا لِشَيْءٍ سَأَلَهُ عَنْهُ فَسَأَلْتُهُ فقَالَ سَأَلَنَا عَنْ أَشْيَاءَ سَمِعْنَاهَا مِنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ نَضَّرَ اللهُ امْرَأً سَمِعَ مِنَّا حَدِيْثًا فَبَلَّغَهُ غَيْرَهُ فَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ إِلَى مَنْ هُوَ أَفْقَهُ مِنْهُ وَرُبَّ حَامِلِ فِقْهٍ لَيْسَ بِفَقِيْهٍ ثَلَاثٌ لَا يُغَلُّ عَلَيْهِنَّ قَلْبُ مُسْلِمٍ إِخْلَاصُ الْعَمَلِ لِلهِ وَمُنَاصَحَةُ وُلَاةِ الْأَمْرِ وَلُزُوْمُ الْجَمَاعَةِ فَإِنَّ دَعْوَتَهُمْ تُحِيْطُ مِنْ وَرَائِهِمْ وَمَنْ كَانَتِ الدُّنْيَا نِيَّتَهُ فَرَّقَ اللهُ عَلَيْهِ أَمْرَهُ وَجَعَلَ فَقْرَهُ بَيْنَ عَيْنَيْهِ وَلَمْ يَأْتِهِ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا مَا كُتِبَ لَهُ وَمَنْ كَانَتِ الْآخِرَةُ نِيَّتَهُ جَمَعَ اللهُ لَهُ أَمْرَهُ وَجَعَلَ غِنَاهُ فِيْ قَلْبِهِ وَأَتَتْهُ الدُّنْيَا وَهِيَ رَاغِمَةٌ
৭. ওমর ইবনে সুলায়মান (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি আব্দুর রহমান ইবনে আবানকে বলতে শুনেছি, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, কোন এক দ্বি-প্রহরে যায়েদ ইবনে ছাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মারওয়ানের নিকট থেকে বের হলেন। রাবী বলেন, আমি বললাম, এ সময়ে তার নিকটে যে প্রেরিত হয়, তাকে তিনি যে বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন, আমি তার কাছে তা জানতে চাই। তিনি বললেন, তিনি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে শুনেছি, এমন বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছেন। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার বক্তব্য শুনেছে, অতঃপর তার প্রচার করেছে, আল্লাহ তাকে হাস্যোজ্জ্বল ও সতেজ করুন। এমন কতক জ্ঞানের বাহক আছে, তারা যাদের নিকট তা বয়ে নিয়ে যায় তারা এই বাহকদের চেয়ে অধিক বুঝেন। আবার এমন অনেকেই আছেন, যারা প্রকৃতপক্ষে ফক্বীহ নন। তিনটি বিষয়ে মুসলিমের অন্তর প্রতারিত হতে পারে না; আল্লাহ তা‘আলার জন্য নিষ্ঠাপূর্ণ আমল, মুসলিমদের নেতৃবর্গের কল্যাণ কামনা এবং মুসলিম জামা‘আত অবলম্বন। কেননা তাদের দাওয়াত তাদেরকে পশ্চাৎ দিক থেকে পরিবেষ্টন করে রাখে। আর যার নিয়ত হবে দুনিয়া, আল্লাহ তার সবকিছুতে বিচ্ছিন্নতার সৃষ্টি করে দেবেন, আর দারিদ্র্যকে তার দু’চোখের সামনে রেখে দেবেন। আর সে দুনিয়ার কেবল সেই টুকুই লাভ করবে, যা তার তাকদীরে (নির্ধারিত) আছে। আর যার নিয়ত থাকবে আখিরাত, আল্লাহ তার সকল কাজ সুন্দর করে দেবেন, তার অন্তরে অভাবমুক্তি দান করবেন এবং দুনিয়া লাঞ্ছিত অবস্থায় তার সামনে হাজির হবে।[৭]
৮. وَعَنْ أَبِيْ بَكْرٍ الصِّدِّيْقِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّهُ خَطَبَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّكُمْ تَقْرَؤُوْنَ هِذِهِ الْآيَةَ وَتَضَعُوْنَهَا عَلَى غَيْرِ مَا وَضَعَهَا اللهُ "يَا أيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا عَلَيْكُمْ أَنْفُسَكُمْ لَا يَضُرُّكُمْ مَنْ ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ" سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا المُنْكَرَ بَيْنَهُمْ فَلَمْ يُنْكِرُوْهُ يُوْشِكُ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللهُ بِعِقَابِهِ
৮. আবূ বকর ছিদ্দীক্ব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, একদা তিনি সমবেত মানুষদেরকে উদ্দেশ্য করে খুৎবা দান কালে বললেন, হে মানুষেরা! তোমরা নিশ্চয় এই আয়াত পাঠ কর কিন্তু আল্লাহ যে উদ্দেশ্যে তা নাযিল করেছেন তার বিপরীত কাজ কর। আয়াতটি হল, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কর্তব্য হচ্ছে নিজেদেরকে রক্ষা করা। যদি তোমরা সৎপথে পরিচালিত হও, তাহলে যে পথভ্রষ্ট হয়েছে সে তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না’। কেননা নিশ্চয় আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, নিশ্চয় মানুষ যখন কোন অপসন্দ কথা বা কর্ম লক্ষ্য করে কিন্তু তা প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে না, হয়তো আল্লাহ তা‘আলা তাদের সকলকে ব্যাপকভাবে শাস্তি দিবেন।[৮]
৯. وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ كَيْفَ أَنْتَ يَا عَبْدَ اللهِ بْنَ عَمْرٍو إِذَا بَقِيْتَ فِيْ حُثَالَةٍ مِنَ النَّاسِ؟ قَالَ وَذَاكَ مَا هُمْ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ ؟ قَالَ ذَاكَ إِذَا مَرِجَتْ أَمَانَاتُهُمْ وَعُهُوْدُهُمْ وَصَارُوْا هَكَذَا وَشَبَّكَ بَيْنَ أَصَابِعِهِ قَالَ فَكَيْفَ تَرَى يَا رَسُوْلَ اللهِ؟ قَالَ تَعْمَلُ مَا تَعْرِفُ وَتَدَعُ مَا تُنْكِرُ وَتَعْمَلُ بِخَاصَّةِ نَفْسِكَ وَتَدَعُ عَوَامَّ النَّاسِ
৯. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, হে আব্দুল্লাহ ইবনু আমর! যখন তুমি নিকৃষ্ট লোকদের সাথে অবস্থান করবে, তখন তোমার অবস্থা কী হবে? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ঐ সময়ে কারা এমন হবে? নবী করীম (ﷺ) বললেন, যখন তাদের আমনত ও ওয়াদাহ লঙ্ঘিত হবে এবং তারা এমন হয়ে যাবে, এই বলে তিনি তার আঙ্গুলগুলোকে মুষ্টিবদ্ধ করলেন। রাবী বলেন, তখন আপনি কী করতে বলছেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)? নবী করীম (ﷺ) বললেন, যা তুমি সঠিক বলে জানবে তার উপরে আমল করবে, আর যা অসৎ মনে করবে তা পরিহার করবে। তুমি তোমার অন্তর থেকে আমল করবে এবং সাধারণভাবে সব মানুষের আমল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকবে।[৯]
মুসলিমের দোষ-ত্রুটি গোপন করার ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوا اجۡتَنِبُوۡا کَثِیۡرًا مِّنَ الظَّنِّ اِنَّ بَعۡضَ الظَّنِّ اِثۡمٌ وَّ لَا تَجَسَّسُوۡا
‘হে মুমিনগণ! তোমরা অধিক অনুমান থেকে দূরে থাক। নিশ্চয় কোন কোন অনুমান তো পাপ। আর তোমরা গোপন বিষয় অনুসন্ধান করো না’ (সূরা আল-হুজুরাত : ১২)। মহান আল্লাহ বলেন,
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَتَّبِعُوۡا خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ وَ مَنۡ یَّتَّبِعۡ خُطُوٰتِ الشَّیۡطٰنِ فَاِنَّہٗ یَاۡمُرُ بِالۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ لَوۡ لَا فَضۡلُ اللّٰہِ عَلَیۡکُمۡ وَ رَحۡمَتُہٗ مَا زَکٰی مِنۡکُمۡ مِّنۡ اَحَدٍ اَبَدًا وَّ لٰکِنَّ اللّٰہَ یُزَکِّیۡ مَنۡ یَّشَآءُ وَ اللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ
‘হে মুমিনগণ, তোমরা শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ কর না। আর যে শয়তানের পদাঙ্কসমূহ অনুসরণ করবে, তবে নিশ্চয় সে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজের নির্দেশ দেবে। আর যদি তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁর দয়া না থাকত, তাহলে তোমাদের কেউই কখনো পবিত্র হতে পারত না। কিন্তু আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন, পবিত্র করেন। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী’ (সূরা আন-নূর : ২১)। মহান আল্লাহ বলেন,
فَدَلّٰىہُمَا بِغُرُوۡرٍ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَۃَ بَدَتۡ لَہُمَا سَوۡاٰتُہُمَا وَ طَفِقَا یَخۡصِفٰنِ عَلَیۡہِمَا مِنۡ وَّرَقِ الۡجَنَّۃِ وَ نَادٰىہُمَا رَبُّہُمَاۤ اَلَمۡ اَنۡہَکُمَا عَنۡ تِلۡکُمَا الشَّجَرَۃِ وَ اَقُلۡ لَّکُمَاۤ اِنَّ الشَّیۡطٰنَ لَکُمَا عَدُوٌّ مُّبِیۡنٌ
‘অতঃপর সে তাদেরকে প্রতারণার মাধ্যমে পদস্খলিত করল। তাই তারা যখন গাছটির ফল আস্বাদন করল, তাদের সামনে তাদের লজ্জাস্থান প্রকাশিত হয়ে গেল। আর তারা জান্নাতের পাতা দিয়ে নিজেদেরকে ঢাকতে লাগল এবং তাদের রব তাদেরকে ডাকলেন যে, আমি কি তোমাদেরকে ঐ গাছটি থেকে নিষেধ করিনি এবং তোমাদেরকে বলিনি যে নিশ্চয় শয়তান তোমাদের জন্য স্পষ্ট শত্রু? (সূরা আল-আ‘রাফ : ২২)।
১০. عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ نَفَّسَ عَنْ مُؤْمِنٍ كُرْبَةً مِّنْ كُرَبِ الدُّنْيَا نَفَّسَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِّنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ يَّسَّرَ عَلَى مُعْسِرٍ يَسَّرَ اللهُ عَلَيْهِ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ فِيْ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللهُ فِيْ عَوْنِ الْعَبْدِ مَا كَانَ الْعَبْدُ فِىْ عَوْنِ أَخِيْهِ
১০. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি মুমিনের দুনিয়ার কষ্টসমূহ হতে কোন কষ্ট দূর করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা তার ক্বিয়ামতের কষ্টসমূহের মধ্য হতে কোন কষ্ট দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবগ্রস্ত লোকের অভাব সহজ করে দিবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখেরাতে তাঁর অভাব সহজ করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা দুুনিয়া ও আখেরাতে তাঁর দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন। আল্লাহ তা‘আলা ততক্ষণ তাঁর বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ সে তাঁর ভাইয়ের সাহায্যে থাকে।[১০]
১১. وَعَنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِيْ حَاجَةِ أَخِيْهِ فَإِنَّ اللهُ فِيْ حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ بِهَا كُرْبَةً مِنْ كُرَبِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
১১. আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার প্রতি অত্যাচার করবে না এবং তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজনে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন।[১১]
১২. وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ঃ أَنَّ النَّبِيَّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَا يَسْتُرُ عَبْدٌ عَبْدًا فِي الدُّنْيَا إِلَّا سَتَرَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
১২. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, যে দুনিয়াতে কোন বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।[১২]
১৩. وَعَنْ مَكْحُوْلٍ أَنَّ عُقْبَةَ بْنَ عَامِرٍ أَتَى مَسْلَمَةَ بْنَ مُخَلَّدٍ وَكَانَ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْبَوَّابِ شَيْءٌ فَسَمِعَ صَوْتَهُ فَأَذِنَ لَهُ فَقَالَ إِنِّيْ لَمْ آتِكَ زَائِرًا وَلَكِنْ جِئْتُكَ بِحَاجَةٍ أَتَذْكُرُ يَوْمَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ عَلِمَ مِنْ أَخِيْهِ سَيِّئَةً فَسَتَرَهَا سَتَرَ اللهُ عَلَيْهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ قَالَ نَعَمْ قَالَ لِهَذَا جِئْتُ
১৩. মাকহূল (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, একদা উক্ববা ইবনু ‘আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মাসলামা ইবনু মুখাল্লাদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) -এর নিকটে আসলেন, তার ও দ্বাররক্ষীর মাঝে কিছুটা দূরত্ব ছিল, মাসলামা তার আওয়াজ শুনে ভিতরে আসার অনুমতি দিলে উক্ববা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমি আপনার কাছে ভ্রমনের উদ্দেশ্যে আসিনি বরং বিশেষ একটি প্রয়োজন নিয়ে এসেছি, আপনার কি সেই দিনের কথা মনে আছে? যেদিন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছিলেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের কোন দোষ-ত্রুটি জানার পর তা গোপন রাখে, ক্বিয়ামতের আল্লাহ তা‘আলা তার দোষ-ত্রুটি গোপন রাখবেন। মাসলামা বললেন, হ্যাঁ। উক্ববা বললেন, একথাটি জানার জন্যই আমি আপনার নিকটে এসেছিলাম।[১৩]
১৪. وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ مَنْ سَتَرَ عَوْرَةَ أَخِيْهِ الْمُسْلِمِ سَتَرَ اللهُ عَوْرَتَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَمَنْ كَشَفَ عَوْرَةَ أَخِيْهِ الْمُسْلِمِ كَشَفَ اللهُ عَوْرَتَهُ حَتَّى يَفْضَحَهُ بِهَا فِيْ بَيْتِهِ
১৪. ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ﷺ) বলেন, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন (অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবে, আল্লাহ ক্বিয়ামতের দিন তার গুপ্ত (অপরাধের) বিষয় গোপন রাখবেন। আর যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবে, আল্লাহ তার গোপন বিষয় ফাঁস করে দিবেন, এমনকি এই কারণে তাকে তার ঘরে পর্যন্ত অপদস্থ করবেন।[১৪]
* পিএইচ.ডি গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৯।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৭০৫৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭০৯।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/১০০৬।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৯৩।
[৫]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫০।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/৭২০৪; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৬।
[৭]. ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৬৮০; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৯৫০।
[৮]. তিরমিযী, হা/২১৬৮; আবু দাঊদ, হা/৪৩৩৮; ইবনু মাজাহ, হা/৪০০৫; মুসনাদে আহমাদ, হা/৫৩; ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৩০৪, সনদ ছহীহ।
[৯]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৫৯৫১; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২০৫।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৯৯।
[১১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৪২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮০।
[১২]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৯০।
[১৩]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১০৬৭; সিলসিলা ছহীহাহ, ৫ম খ-, পৃ. ৪৫০।
[১৪]. ইবনু মাজাহ, হা/২৫৪৬, সনদ ছহীহ।