বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২০ অপরাহ্ন

ফাযায়েলে তাওহীদ

- শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘আবীলান
- অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ


 (৬ষ্ঠ কিস্তি)

তাক্বওয়া তথা আল্লাহভীতির ফযীলত, নিশ্চয় তা সফলতার মূল দরজা

মহান আল্লাহ বলেন,   ذٰلِکَ  الۡکِتٰبُ لَا رَیۡبَ  فِیۡہِ ہُدًی  لِّلۡمُتَّقِیۡنَ ‘এটি (আল্লাহর) কিতাব, এতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়াত’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,

اِنَّ اللّٰہَ مَعَ الَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا وَّ الَّذِیۡنَ ہُمۡ مُّحۡسِنُوۡنَ.

‘নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সাথে থাকেন, যারা তাক্বওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল’ (সূরা আন-নাহল : ১২৮)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اِنَّہُمۡ  لَنۡ  یُّغۡنُوۡا عَنۡکَ مِنَ  اللّٰہِ  شَیۡئًا وَ  اِنَّ الظّٰلِمِیۡنَ بَعۡضُہُمۡ  اَوۡلِیَآءُ  بَعۡضٍ وَ اللّٰہُ   وَلِیُّ   الۡمُتَّقِیۡنَ.

‘তারা আল্লাহর মুকাবিলায় তোমার কোন কাজে আসবে না। আর নিশ্চয় যালিমরা একে অপরের বন্ধু এবং আল্লাহ মুত্তাক্বীদের বন্ধু’ (সূরা আল-জাছিয়াহ : ১৯)। মহান আল্লাহ আরো বলেন,

کَیۡفَ یَکُوۡنُ لِلۡمُشۡرِکِیۡنَ عَہۡدٌ عِنۡدَ اللّٰہِ  وَ عِنۡدَ رَسُوۡلِہٖۤ  اِلَّا الَّذِیۡنَ عٰہَدۡتُّمۡ  عِنۡدَ  الۡمَسۡجِدِ  الۡحَرَامِ  فَمَا اسۡتَقَامُوۡا لَکُمۡ فَاسۡتَقِیۡمُوۡا لَہُمۡ اِنَّ اللّٰہَ  یُحِبُّ  الۡمُتَّقِیۡنَ.

‘কিভাবে মুশরিকদের জন্য অঙ্গীকার থাকবে আল্লাহর নিকট ও তাঁর রাসূলের নিকট? অবশ্য যাদের সাথে মসজিদে হারামে তোমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছ তাদের কথা আলাদা। অতএব যতক্ষণ তারা তোমাদের জন্য ঠিক থাকে, ততক্ষণ তোমরাও তাদের জন্য ঠিক থাক। নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাক্বীদের ভালবাসেন’ (সূরা আত-তওবাহ : ৭)। মহান আল্লাহ বলেন, 

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنۡ تَتَّقُوا اللّٰہَ یَجۡعَلۡ لَّکُمۡ فُرۡقَانًا وَّ یُکَفِّرۡ عَنۡکُمۡ سَیِّاٰتِکُمۡ وَ یَغۡفِرۡ لَکُمۡ وَ اللّٰہُ  ذُو الۡفَضۡلِ  الۡعَظِیۡمِ.

‘হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান প্রদান করবেন, তোমাদের থেকে তোমাদের পাপসমূহ দূর করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল’ (সূরা আল-আনফাল : ২৯)। মহান আল্লাহ বলেন,

فَاِذَا  بَلَغۡنَ  اَجَلَہُنَّ  فَاَمۡسِکُوۡہُنَّ بِمَعۡرُوۡفٍ اَوۡ فَارِقُوۡہُنَّ بِمَعۡرُوۡفٍ وَّ اَشۡہِدُوۡا  ذَوَیۡ عَدۡلٍ  مِّنۡکُمۡ وَ اَقِیۡمُوا الشَّہَادَۃَ  لِلّٰہِ ذٰلِکُمۡ یُوۡعَظُ بِہٖ  مَنۡ کَانَ یُؤۡمِنُ  بِاللّٰہِ  وَ الۡیَوۡمِ الۡاٰخِرِ وَ  مَنۡ یَّتَّقِ اللّٰہَ  یَجۡعَلۡ لَّہٗ  مَخۡرَجًا.

‘অতঃপর যখন তারা তাদের ইদ্দতের শেষ সীমায় পৌঁছবে, তখন তোমরা তাদের ন্যায়ানুগ প‎ন্থায় রেখে দেবে অথবা ন্যায়ানুগপ‎ন্থায় তাদের পরিত্যাগ করবে এবং তোমাদের মধ্য থেকে ন্যায়পরায়ণ দুইজনকে সাক্ষী বানাবে। আর আল্লাহর জন্য সঠিক সাক্ষ্য দেবে। তোমাদের মধ্যে যে আল্লাহ ও আখিরাত দিবসের প্রতি ঈমান আনে এটি দ্বারা তাকে উপদেশ দেয়া হচ্ছে। যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন’ (সূরা আত-ত্বালাক্ব : ২)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ الِّٰٓیۡٔ  یَئِسۡنَ مِنَ  الۡمَحِیۡضِ مِنۡ نِّسَآئِکُمۡ  اِنِ  ارۡتَبۡتُمۡ فَعِدَّتُہُنَّ  ثَلٰثَۃُ اَشۡہُرٍ وَّ الِّٰٓیۡٔ  لَمۡ یَحِضۡنَ وَ اُولَاتُ الۡاَحۡمَالِ  اَجَلُہُنَّ اَنۡ یَّضَعۡنَ حَمۡلَہُنَّ  وَ مَنۡ یَّتَّقِ اللّٰہَ  یَجۡعَلۡ لَّہٗ  مِنۡ  اَمۡرِہٖ یُسۡرًا.

‘তোমাদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ঋতুবতী হওয়ার কাল অতিক্রম করে গেছে, তাদের ইদ্দত সম্পর্কে তোমরা যদি সংশয়ে থাক এবং যারা এখনও ঋতুর বয়সে পৌঁছেনি তাদের ইদ্দতকালও হবে তিন মাস। আর গর্ভধারীণিদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন’ (সূরা আত-ত্বালাক্ব : ৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, ذٰلِکَ وَ مَنۡ یُّعَظِّمۡ شَعَآئِرَ  اللّٰہِ فَاِنَّہَا مِنۡ  تَقۡوَی  الۡقُلُوۡبِ ‘এটাই হল আল্লাহর বিধান; যে আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে সম্মান করে, নিঃসন্দেহে তা অন্তরের তাক্বওয়া থেকেই’ (সূরা আল-হজ্জ : ৩২)।

মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اتۡلُ عَلَیۡہِمۡ  نَبَاَ ابۡنَیۡ اٰدَمَ  بِالۡحَقِّ ۘ اِذۡ قَرَّبَا قُرۡبَانًا فَتُقُبِّلَ مِنۡ اَحَدِہِمَا وَ لَمۡ یُتَقَبَّلۡ مِنَ الۡاٰخَرِ ؕ قَالَ لَاَقۡتُلَنَّکَ ؕ قَالَ  اِنَّمَا یَتَقَبَّلُ  اللّٰہُ مِنَ  الۡمُتَّقِیۡنَ

‘আর তুমি তাদের নিকট সত্যসহ আদমের দুই পুত্রের সংবাদ বর্ণনা কর, যখন তারা উভয়ে কুরবানী পেশ করল। অতঃপর তাদের একজন থেকে গ্রহণ করা হল, আর অপর জন থেকে গ্রহণ করা হল না। সে বলল, ‘অবশ্যই আমি তোমাকে হত্যা করব’। অন্যজন বলল, ‘আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের থেকে কবুল করেন’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ২৭)।

عَنْ عَدِيِّ بْنِ حَاتِمٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ إِلَّا وَسَيُكَلِّمُهُ اللهُ يَوْمَ القِيَامَةِ لَيْسَ بَيْنَ اللهِ وَبَيْنَهُ تُرْجُمَانٌ ثُمَّ يَنْظُرُ فَلَا يَرَى شَيْئًا قُدَّامَهُ ثُمَّ يَنْظُرُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَتَسْتَقْبِلُهُ النَّارُ فَمَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَتَّقِيَ النَّارَ وَلَوْ بِشِقِّ تَمْرَةٍ.
৫৮). আদী ইবনু হাতিম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন তোমাদের প্রত্যেক লোকের সাথে আল্লাহ কথা বলবেন। আর সেদিন আল্লাহ ও বান্দার মাঝে কোন দোভাষী থাকবে না। অতঃপর বান্দা দৃষ্টিপাত করে তার সামনে কিছুই দেখতে পাবে না। সে আবার তার সামনে দৃষ্টি ফেরাবে। তখন তার সামনে হাজির হবে জাহান্নাম। তোমাদের মধ্যে যে জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ পেতে চায়, সে যেন এক টুকরা খেজুর দিয়ে হলেও নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করে।[১]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ الْجَنَّةَ؟ تَقْوَى اللهِ وَحُسْنُ الْخُلُقِ أَتَدْرُوْنَ مَا أَكْثَرُ مَا يُدْخِلُ النَّاسَ النَّارَ؟ الْأَجْوَفَانِ الْفَمُ وَالْفَرْجُ.
৫৯). আবু হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা কি জান কোন্ জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জান্নাতে প্রবেশ করায়? তা হল আল্লাহভীতি এবং উত্তম চরিত্র। তোমরা কি জান, কোন্ জিনিস মানুষকে সবচেয়ে বেশী জাহান্নামে প্রবেশ করায়? তাহল দু’টি ছিদ্র পথ। একটি মুখ এবং অপরটি লজ্জাস্থান।[২]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَا تَحَاسَدُوْا وَلَا تَنَاجَشُوْا وَلَا تَبَاغَضُوْا وَلَا تَدَابَرُوْا وَلَا يَبِعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَيْعِ بَعْضٍ وَكُوْنُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يَخْذُلُهُ وَلَا يَحْقِرُهُ التَّقْوَى هَاهُنَا وَيُشِيرُ إِلَى صَدْرِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ بِحَسْبِ امْرِئٍ مِنَ الشَّرِّ أَنْ يَحْقِرَ أَخَاهُ الْمُسْلِمَ كُلُّ الْمُسْلِمِ عَلَى الْمُسْلِمِ حَرَامٌ دَمُهُ وَمَالُهُ وَعِرْضُهُ.
৬০).  আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা পরস্পর হিংসা কর না, পরস্পর  ধোঁকাবাজি কর না, পরস্পর বিদ্বেষ পোষণ কর না, একে অপরের ক্ষতি করার উদ্দেশে আগোচরে শত্রুতা কর না এবং একে অন্যের ক্রয়-বিক্রয়ের উপর ক্রয়-বিক্রয়ের চেষ্টা করবে না। তোমরা আল্লাহর বান্দা হিসাবে ভাই ভাই হয়ে থাক। এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। সে তার উপর অত্যাচার করবে না, তাকে অপদস্ত করবে না এবং হেয় প্রতিপন্ন করবে না। তাক্বওয়া এখানে, এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তিনবার তাঁর বক্ষের প্রতি ইঙ্গিত করলেন। একজন মানুষের মন্দ হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে তার ভাইকে হেয় জ্ঞান করে। কোন মুসলিমের উপর প্রত্যেক মুসলিমের জান-মাল ও ইয্যত-আবরু হারাম’।[৩]

৬১). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত লোকদের সঙ্গে যুদ্ধ করার আদেশ দেয়া হয়েছে, যতক্ষণ না তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলে। আর যে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ বলবে সে তার জান ও মাল আমার হাত থেকে বাঁচিয়ে নিল। অবশ্য ইসলামের কর্তব্যাদি আলাদা, আর তাঁর হিসাব আল্লাহর উপর ন্যস্ত। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে অহংকারী এক জাতির কথা উল্লেখ করে এরশাদ করেন, اِنَّہُمۡ  کَانُوۡۤا  اِذَا  قِیۡلَ  لَہُمۡ  لَاۤ  اِلٰہَ   اِلَّا  اللّٰہُۙ یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ ‘তাদেরকে যখন বলা হত, ‘আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বূদ নেই’, তখন নিশ্চয় তারা অহঙ্কার করত’ (সূরা আছ-ছাফ্ফাত : ৩৫)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,

اِذۡ جَعَلَ  الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا فِیۡ  قُلُوۡبِہِمُ الۡحَمِیَّۃَ حَمِیَّۃَ  الۡجَاہِلِیَّۃِ  فَاَنۡزَلَ اللّٰہُ سَکِیۡنَتَہٗ  عَلٰی رَسُوۡلِہٖ وَ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ وَ اَلۡزَمَہُمۡ کَلِمَۃَ  التَّقۡوٰی وَ کَانُوۡۤا  اَحَقَّ بِہَا وَ اَہۡلَہَا وَ کَانَ  اللّٰہُ بِکُلِّ شَیۡءٍ عَلِیۡمًا - لَقَدۡ صَدَقَ اللّٰہُ  رَسُوۡلَہُ  الرُّءۡیَا بِالۡحَقِّ  لَتَدۡخُلُنَّ  الۡمَسۡجِدَ الۡحَرَامَ اِنۡ شَآءَ اللّٰہُ  اٰمِنِیۡنَ مُحَلِّقِیۡنَ  رُءُوۡسَکُمۡ وَ مُقَصِّرِیۡنَ لَا  تَخَافُوۡنَ فَعَلِمَ  مَا لَمۡ تَعۡلَمُوۡا فَجَعَلَ مِنۡ  دُوۡنِ ذٰلِکَ فَتۡحًا قَرِیۡبًا.

‘যখন কাফিররা তাদের অন্তরে আত্ম-অহমিকা পোষণ করেছিল, জাহেলী যুগের আহমিকা। তখন আল্লাহ তাঁর রাসূলের উপর ও মুমিনদের উপর স্বীয় প্রশান্তি নাযিল করলেন এবং তাক্বওয়ার বাণী তাদের জন্য অপরিহার্য করলেন, আর তারাই ছিল এর সর্বাধিক উপযুক্ত ও এর অধিকারী। আর আল্লাহ হলেন প্রত্যেক বিষয়ে সর্বজ্ঞ। অবশ্যই আল্লাহ তাঁর রাসূলকে স্বপ্নটি যথাযথভাবে সত্যে পরিণত করে দিয়েছেন। তোমরা ইনশাআল্লাহ নিরাপদে, তোমাদের মাথা মু-ন করে এবং চুল ছেঁটে নির্ভয়ে মসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে। অতঃপর আল্লাহ জেনেছেন যা তোমরা জানতে না। সুতরাং এ ছাড়াও তিনি দিলেন এক  নিকটবর্তী বিজয়’ (সূরা আল-ফাত্হ : ২৬-২৭)। ‘আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বূদ নেই’ এবং ‘মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল’ এ দু’টি বিষয়ে স্বীকৃতি দেয়া থেকে মুশরিকরা হুদায়বিয়ার দিন অহংকার প্রদর্শন করেছিল।[৪]

সৃষ্টিকর্তার ইবাদত ও সৃষ্টির প্রতি ইহসান করার ফযীলত, নিশ্চয় তা রহমত অবতীর্ণের চাবিকাঠি

মহান আল্লাহ বলেন, ہَلۡ جَزَآءُ  الۡاِحۡسَانِ  اِلَّا الۡاِحۡسَانُ ‘উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম ছাড়া আর কী হতে পারে?’ (সূরা আর-রহমান : ৬০)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ لَا تُفۡسِدُوۡا فِی الۡاَرۡضِ بَعۡدَ اِصۡلَاحِہَا وَ ادۡعُوۡہُ خَوۡفًا وَّ طَمَعًا اِنَّ رَحۡمَتَ اللّٰہِ قَرِیۡبٌ مِّنَ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

‘আর তোমরা যমীনে ফাসাদ কর না তার সংশোধনের পর এবং তাঁকে ডাক ভয় ও আশা নিয়ে। নিশ্চয় আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের নিকটবর্তী (সূরা আল-আ‘রাফ : ৫৬)। অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

لَنۡ یَّنَالَ اللّٰہَ  لُحُوۡمُہَا وَ لَا دِمَآؤُہَا وَ لٰکِنۡ یَّنَالُہُ التَّقۡوٰی مِنۡکُمۡ  کَذٰلِکَ سَخَّرَہَا لَکُمۡ لِتُکَبِّرُوا اللّٰہَ عَلٰی مَا ہَدٰىکُمۡ  وَ بَشِّرِ  الۡمُحۡسِنِیۡنَ

‘আল্লাহর কাছে পৌঁছে না; এগুলোর গোশত ও রক্ত বরং তাঁর কাছে পৌঁছে তোমাদের তাক্বওয়া। এভাবেই তিনি সে সবকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন, যাতে তোমরা আল্লাহর তাকবীর পাঠ করতে পার, এজন্য যে, তিনি তোমাদেরকে হেদায়াত দান করেছেন; সুতরাং তুমি সৎকর্মশীলদেরকে সুসংবাদ দাও’ (সূরা আল-হাজ্জ : ৩৭)।

মহান আল্লাহ বলেন, وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ یَعۡلَمُ مَا فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ فَاحۡذَرُوۡہُ  وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ حَلِیۡمٌ ‘আর জেনে রাখ নিশ্চয় তোমাদের অন্তরে যা রয়েছে, আল্লাহ তা জানেন। সুতরাং তোমরা তাকে ভয় কর এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, সহনশীল’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩৫)। মহান আল্লাহ বলেন, اَلَمۡ یَعۡلَمۡ بِاَنَّ اللّٰہَ یَرٰی  ‘সে কি জানে না যে, নিঃসন্দেহে আল্লাহ দেখেন’ (সূরা আল-আ‘লাক্ব : ১৪)। মহান আল্লাহ বলেন, یَعۡلَمُ خَآئِنَۃَ  الۡاَعۡیُنِ وَ مَا تُخۡفِی الصُّدُوۡرُ  ‘চক্ষুসমূহের খেয়ানত এবং অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে তিনি তা জানেন’ (সূরা আল-মুমিন : ১৯)। মহান আল্লাহ বলেন,

اَلَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ فِی السَّرَّآءِ وَ الضَّرَّآءِ وَ الۡکٰظِمِیۡنَ الۡغَیۡظَ وَ الۡعَافِیۡنَ عَنِ النَّاسِ وَ اللّٰہُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

‘যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের  ভালবাসেন’ (সূরা আলে ‘ইমরান : ১৩৪)। মহান আল্লাহ বলেন, وَ لَمَّا بَلَغَ اَشُدَّہٗۤ  اٰتَیۡنٰہُ حُکۡمًا وَّ عِلۡمًا  وَ کَذٰلِکَ نَجۡزِی الۡمُحۡسِنِیۡنَ ‘আর সে যখন পূর্ণ যৌবনে উপনীত হল, আমরা তাকে হিকমত ও জ্ঞান দান করলাম এবং এভাবেই আমি ইহসানকারীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি’ (সূরা ইউসুফ : ২২)। অন্যত্র মহান আল্লাহ বলেন,

لَیۡسَ عَلَی الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ جُنَاحٌ فِیۡمَا طَعِمُوۡۤا اِذَا مَا اتَّقَوۡا وَّ اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ ثُمَّ اتَّقَوۡا وَّ اٰمَنُوۡا ثُمَّ اتَّقَوۡا وَّ اَحۡسَنُوۡا  وَ اللّٰہُ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ

‘যারা ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে তারা যা আহার করেছে তাতে কোন পাপ নেই, যখন তারা তাক্বওয়া অবলম্বন করল এবং ঈমান আনল আর নেক আমল করল, তারপর তাক্বওয়া অবলম্বন করল ও ঈমান আনল। এরপরও তারা তাক্বওয়া অবলম্বন করল এবং সৎকর্ম করল। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন’ (সূরা আল-মায়েদাহ : ৯৩)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

یٰۤاَیُّہَا النَّاسُ اتَّقُوۡا رَبَّکُمُ الَّذِیۡ خَلَقَکُمۡ مِّنۡ نَّفۡسٍ وَّاحِدَۃٍ وَّ خَلَقَ مِنۡہَا زَوۡجَہَا وَ بَثَّ مِنۡہُمَا رِجَالًا کَثِیۡرًا وَّ نِسَآءً وَ اتَّقُوا اللّٰہَ الَّذِیۡ تَسَآءَلُوۡنَ بِہٖ وَ الۡاَرۡحَامَ  اِنَّ اللّٰہَ کَانَ عَلَیۡکُمۡ  رَقِیۡبًا

‘হে মানুষ! তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফ্স থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের নিকট চাও। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক’ (সূরা আন-নিসা : ১)।

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ شَدِيْدُ بَيَاضِ الثِّيَابِ شَدِيْدُ سَوَادِ الشَّعْرِ لَا يُرَى عَلَيْهِ أَثَرُ السَّفَرِ وَلَا يَعْرِفُهُ مِنَّا أَحَدٌ حَتَّى جَلَسَ إِلَى النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَأَسْنَدَ رُكْبَتَيْهِ إِلَى رُكْبَتَيْهِ وَوَضَعَ كَفَّيْهِ عَلَى فَخِذَيْهِ وَقَالَ يَا مُحَمَّدُ أَخْبِرْنِىْ عَنِ الْإِسْلَامِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الإِسْلَامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ وَتُقِيْمَ الصَّلَاةَ وَتُؤْتِىَ الزَّكَاةَ وَتَصُوْمَ رَمَضَانَ وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيْلًا قَالَ صَدَقْتَ قَالَ فَعَجِبْنَا لَهُ يَسْأَلُهُ وَيُصَدِّقُهُ قَالَ فَأَخْبِرْنِىْ عَنِ الْإِيْمَانِ قَالَ أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ قَالَ صَدَقْتَ قَالَ فَأَخْبِرْنِىْ عَنِ الإِحْسَانِ قَالَ أَنْ تَعْبُدَ اللهَ كَأَنَّكَ تَرَاهُ فَإِنْ لَمْ تَكُنْ تَرَاهُ فَإِنَّهُ يَرَاكَ قَالَ فَأَخْبِرْنِىْ عَنِ السَّاعَةِ قَالَ مَا الْمَسْئُوْلُ عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ قَالَ فَأَخْبِرْنِىْ عَنْ أَمَارَتِهَا قَالَ أَنْ تَلِدَ الْأَمَةُ رَبَّتَهَا وَأَنْ تَرَى الْحُفَاةَ الْعُرَاةَ الْعَالَةَ رِعَاءَ الشَّاءِ يَتَطَاوَلُوْنَ فِى الْبُنْيَانِ قَالَ ثُمَّ انْطَلَقَ فَلَبِثْتُ مَلِيًّا ثُمَّ قَالَ لِىْ يَا عُمَرُ أَتَدْرِىْ مَنِ السَّائِلُ؟ قُلْتُ اللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ قَالَ فَإِنَّهُ جِبْرِيْلُ أَتَاكُمْ يُعَلِّمُكُمْ دِيْنَكُمْ.
৬২). ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদিন আমরা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে উপস্থিত ছিলাম। এমতাবস্থায় সাদা ধবধবে পোশাক পরিহিত ও কুচকুচে কালো চুলওয়ালা একজন লোক আমাদের নিকটে আগমন করল। তাঁর মধ্যে ভ্রমণের কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না এবং আমাদের মধ্যে কেউ তাকে চিনতেও পারছিল না। আগন্তুক ব্যক্তিটি নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকটে এসে বসলেন এবং নিজের দুই হাঁটু নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর হাঁটুর সাথে মিলিয়ে ও নিজের দুই হাত নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দুই উরুর উপর রাখলেন এবং বললেন, হে মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাকে ‘ইসলাম’ সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘ইসলাম এই যে, তুমি সাক্ষ্য দিবে, আল্লাহ ব্যতীত কোন হক্ব মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রাসূল। তুমি ছালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে, রামাযানের ছিয়াম পালন করবে ও আল্লাহর ঘরে হজ্জ করবে, যদি তুমি পথ অতিক্রম করতে সমর্থ হও’। আগন্তুক বলল, আপনি সত্য বলেছেন। এতে আমরা বিস্মিত হলাম যে, তিনি প্রশ্ন করছেন, আবার সত্যায়নও করছেন। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, আমাকে ‘ঈমান’ সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি বিশ্বাস স্থাপন করবে আল্লাহর উপরে, তাঁর ফেরেশতাম-লীর উপরে, তাঁর কিতাবসমূহের উপরে, তাঁর রাসূলগণের উপরে ও শেষ দিবসের উপরে এবং তুমি বিশ্বাস স্থাপন করবে তাক্বদীরের ভাল ও মন্দের উপরে। আগন্তুক বলল, আপনি সত্য বলেছেন। অতঃপর তিনি বললেন, আপনি আমাকে ‘ইহসান’ সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি আল্লাহর ইবাদত করবে এমনভাবে, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর যদি তাঁকে দেখতে না পাও, তাহলে মনে করবে যেন তিনি তোমাকে দেখছেন। লোকটি বলল, আপনি আমাকে ‘ক্বিয়ামত’ সম্পর্কে বলুন। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, উত্তরদাতা প্রশ্নকারীর চাইতে অধিক জ্ঞাত নন। তখন লোকটি বলল, ক্বিয়ামতের আলামত সম্পর্কে কিছু বলুন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, বাঁদি তার মুনিবকে প্রসব করবে। এছাড়াও তুমি দেখবে যে, এককালে নগ্নপা, কাপড়হীন শরীর, নিঃস্ব, মেষপালকরা পরবর্তীকালে প্রাসাদসমূহ নির্মাণ করে পরস্পরে অহংকার করবে’। ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, অতঃপর লোকটি চলে গেল। আমি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, হে ওমর! তুমি কি জান কে এই প্রশ্নকারী? আমি বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই অধিক জ্ঞাত। তিনি বললেন, তিনি হলেন জিবরীল (আলাইহিস সালাম)। তিনি তোমাদেরকে দ্বীন শিক্ষা দেয়ার জন্য এসেছিলেন।[৫]

عَنْ حَنْظَلَةَ بْنِ الرَّبِيْعِ الْأُسَيْدِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ لَقِيَنِيْ أَبُوْ بَكْرٍ فَقَالَ كَيْفَ أَنْتَ يَا حَنْظَلَةُ؟ قُلْتُ نَافَقَ حَنْظَلَةُ قَالَ سُبْحَانَ اللهِ مَا تَقُوْلُ؟ قُلْتُ نَكُوْنُ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ كَأَنَّا رَأْيُ عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ وَالضَّيْعَاتِ نَسِيْنَا كَثِيْرًا قَالَ أَبُوْ بَكْرٍ فَوَ اللهِ إِنَّا لَنَلْقَى مِثْلَ هٰذَا فَانْطَلَقْتُ أَنَا وَأَبُوْ بَكْرٍ حَتَّى دَخَلْنَا عَلٰى رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقُلْتُ نَافَقَ حَنْظَلَةُ يَا رَسُوْلَ اللهِ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَمَا ذَاكَ؟ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ نَكُوْنُ عِنْدَكَ تُذَكِّرُنَا بِالنَّارِ وَالْجَنَّةِ كَأَنَّا رَأْيَ عَيْنٍ فَإِذَا خَرَجْنَا مِنْ عِنْدِكَ عَافَسْنَا الْأَزْوَاجَ وَالْأَوْلَادَ وَالضَّيْعَاتِ نَسِيْنَا كَثِيْرًا فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالَّذِيْ نَفْسِيْ بِيَدِهِ لَوْ تَدُوْمُوْنَ عَلٰى مَا تَكُوْنُوْنَ عِنْدِيْ وَفِي الذِّكْرِ لَصَافَحَتْكُمُ الْمَلَائِكَةُ عَلٰى فُرُشِكُمْ وَفِيْ طُرُقِكُمْ وَلَكِنْ يَا حَنْظَلَةُ سَاعَةً وَسَاعَةً ثَلَاثَ مَرَّاتٍ.
৬৩). হানযালা ইবনু রাবী‘ আল-উসাইদী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার সাথে আবুুবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সাক্ষাৎ হল। তিনি বললেন, কেমন আছ হানযালা? আমি বললাম, হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে। তিনি বললেন, সুবহানাল্লাহ! এ কী বল হানযালা? আমি বললাম, আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট থাকি, তিনি আমাদের জান্নাত-জাহান্নাম স্মরণ করিয়ে দেন যেন আমরা তাদের চোখে দেখি, কিন্তু আমরা যখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট হতে বের  হয়ে আসি এবং বিবি-বাচ্চা ও খেত-খামারে লিপ্ত হই, তার অনেকটা ভুলে যাই। তখন আবুুবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমরাও এরূপই অনুভব করি। অতঃপর আমি ও আবুুবকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট গেলাম এবং আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! হানযালা মুনাফিক হয়ে গেছে; তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ কেমন কথা? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমরা আপনার নিকট থাকি, আর আপনি আমাদেরকে জান্নাত-জাহান্নামের কথা স্মরণ করে দেন যেন তা আমাদের চোখে দেখা যায় কিন্তু যখন আমরা আপনার নিকট হতে বের হয়ে আসি এবং সন্তান-সন্ততি ও খেত-খামারে লিপ্ত হই, তখন এটার অনেকটা ভুলে যাই। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তাঁর কসম যাঁর হাতে আমার জান রয়েছে, যদি তোমরা সর্বদা ঐরূপ থাকতে, যেরূপ আমার নিকট থাক এবং সর্বদা যিকির-ফিকিরে থাকতে, নিশ্চয় ফেরেশতাগণ তোমাদের বিছানায় ও তোমাদের রাস্তায় তোমাদের সাথে মুছাফাহা করতেন; কিন্তু কখনও ঐরূপ আর কখনও এরূপ হবেই হানযালা! এটা তিনি তিনবার বললেন।[৬]

عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يَدْعُوْ لِأَخِيْهِ بِظَهْرِ الْغَيْبِ إِلَّا قَالَ الْمَلَكُ وَلَكَ بِمِثْلٍ.
৬৪). আবূ দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন মুসলিম বান্দা তার ভাইয়ের অনুপস্থিতিতে তার জন্য দু‘আ করলে একজন ফেরেশতা তার জবাবে বলে ‘আর তোমার জন্যও অনুরূপ’।[৭]

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ لَا يَظْلِمُهُ وَلَا يُسْلِمُهُ وَمَنْ كَانَ فِيْ حَاجَةِ أَخِيْهِ كَانَ اللهُ فِيْ حَاجَتِهِ وَمَنْ فَرَّجَ عَنْ مُسْلِمٍ كُرْبَةً فَرَّجَ اللهُ عَنْهُ كُرْبَةً مِنْ كُرُبَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَمَنْ سَتَرَ مُسْلِمًا سَتَرَهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ.
৬৫). আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই, সে তার প্রতি অত্যাচার করবে না এবং তাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে না। যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তার প্রয়োজনে সাহায্য করবেন। যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তার দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবে, আল্লাহ তার দোষ-ত্রুটি ঢেকে রাখবেন।[৮]

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِيْ هِرَّةٍ حَبَسَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ جُوْعًا فَدَخَلَتْ فِيْهَا النَّارَ قَالَ فَقَالَ وَاللهُ أَعْلَمُ لَا أَنْتِ أَطْعَمْتِهَا وَلَا سَقَيْتِهَا حِيْنَ حَبَسْتِيهَا وَلَا أَنْتِ أَرْسَلْتِهَا فَأَكَلَتْ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ.
৬৬). ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে আযাব দেয়া হয়। সে বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল, অবশেষে বিড়ালটি ক্ষুধায় মারা যায়। এ কারণে মহিলা জাহান্নামে প্রবেশ করল। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি [রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বলেন, আল্লাহ ভাল জানেন, বাঁধা থাকাকালীন তুমি তাকে না খেতে দিয়েছিলে, না পান করতে দিয়েছিলে এবং না তুমি তাকে ছেড়ে দিয়েছিলে, তা হলে সে যমীনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত।[৯]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بَيْنَمَا كَلْبٌ يُطِيْفُ بِرَكِيَّةٍ كَادَ يَقْتُلُهُ العَطَشُ إِذْ رَأَتْهُ بَغِيٌّ مِنْ بَغَايَا بَنِي إِسْرَائِيْلَ فَنَزَعَتْ مُوْقَهَا فَسَقَتْهُ فَغُفِرَ لَهَا بِهِ.
৬৭). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন যে, একবার একটি কুকুর এক কূপের চতুর্দিকে ঘুরছিল এবং অত্যন্ত পিপাসার কারণে সে মৃত্যুর কাছে পৌঁছেছিল। তখন বনী ইসরাঈলের ব্যভিচারীণিদের একজন কুকুরটির অবস্থা লক্ষ্য করল এবং তার পায়ের মোজা দিয়ে পানি সংগ্রহ করে কুকুরটিকে পান করাল। এ কাজের বিনিময়ে আল্লাহ‌ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দিলেন।[১০]

(চলবে ইনশাআল্লাহ)


এম.ফিল গবেষক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। 

তথ্যসূত্র : 
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৫৩৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১০১৬।
[২]. তিরমিযী, হা/২০০৪; ইবনু মাজাহ, হা/৪২৪৬; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৬৯৬; মিশকাত, হা/৪৮৩২, সনদ হাসান।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৬০৬৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৬৪।
[৪]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২১৮।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৫০; ছহীহ মুসলিম, হা/৯।
[৬]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৫০; মিশকাত, হা/২২৬৮।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৩২।
[৮]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৪২; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৮০; মিশকাত, হা/৪৯৫৮।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/২৩৬৫; ছহীহ মুসলিম, হা/২২৪২।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৬৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২২৪৫।




প্রসঙ্গসমূহ »: আমল
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১১ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (২য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে জিহাদ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৪তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৫তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : বিবাহ ও এ সংক্রান্ত বিষয়াদীর ফযীলত - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছাদাক্বাহ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ