মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন

ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত

-মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান
-অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*


(৪র্থ কিস্তি) 

وَعَنِ النَّوَّاسِ بْنِ سَمْعَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ الْبِرُّ حُسْنُ الْخُلُقِ وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِيْ صَدْرِكَ وَكَرِهْتَ أَنْ يَطَّلِعَ عَلَيْهِ النَّاسُ

২৫. নাওওয়াস ইবনু সাম‘আন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, নেকী হল উত্তম চরিত্র আর পাপ হল যে কাজ তোমার অন্তরে সংশয়-সন্দেহ সৃষ্টি করে এবং ঐ কাজ, যা তুমি জনসমাজে প্রকাশ হওয়া অপসন্দ কর।[১]
-----
وَعَنْ وَابِصَةَ بْنِ مَعْبَدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَتَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ وَأَنَا أُرِيْدُ أَنْ لَا أَدَعَ شَيْئًا مِنَ الْبِرِّ وَالْإِثْمِ إِلَّا سَأَلْتُهُ عَنْهُ وَحَوْلَهُ عِصَابَةٌ مِنَ الْمُسْلِمِيْنَ يَسْتَفْتُوْنَهُ فَجَعَلْتُ أَتَخَطَّاهُمْ فَقَالُوْا إِلَيْكَ يَا وَابِصَةُ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ  فُقُلْتُ دَعُوْنِيْ فَأَدْنُوَ مِنْهُ فَإِنَّهُ أَحَبُّ النَّاسِ إِلَيَّ أَنْ أَدْنُوَ مِنْهُ قَالَ دَعُوْا وَابِصَةَ ادْنُ يَا وَابِصَةُ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا قَالَ فَدَنَوْتُ مِنْهُ حَتَّى قَعَدْتُ بَيْنَ يَدَيْهِ فَقَالَ يَا وَابِصَةُ أُخْبِرُكَ أَمْ تَسْأَلُنِيْ؟ قُلْتُ لَا بَلْ أَخْبِرْنِيْ فَقَالَ جِئْتَ تَسْأَلُ عَنِ الْبِرِّ وَالْإِثْمِ؟ فَقَالَ نَعَمْ فَجَمَعَ أَنَامِلَهُ فَجَعَلَ يَنْكُتُ بِهِنَّ فِيْ صَدْرِيْ وَيَقُوْلُ اسْتَفْتِ قَلْبَكَ وَاسْتَفْتِ نَفْسَكَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ الْبِرُّ مَا اطْمَأَنَّتْ إِلَيْهِ النَّفْسُ وَالْإِثْمُ مَا حَاكَ فِيْ النَّفْسِ وَتَرَدَّدَ فِيْ الصَّدْرِ وَإِنْ أَفْتَاكَ النَّاسُ وَأَفْتَوْكَ

২৬. ওয়াবেছা ইবনু মা‘বাদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে আসলাম। আর আমি চাচ্ছিলাম তাঁকে ভাল ও মন্দ সম্পর্কে যাবতীয় প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করব। আর তাঁর চতুর্দিকে মুসলিমদের একটি দল উপস্থিত ছিল, যারা তাঁর কাছে বিভিন্ন বিষয়ে ফৎতয়া জিজ্ঞাসা করছিল। ফলে আমি তাদেরকে ডিঙ্গিয়ে সামনে যেতে লাগলাম। তখন তারা বলল, হে ওয়াবেছা! তুমি তোমার জায়গা থেকেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে কথা বল। ফলে আমি বললাম, তোমরা আমাকে ছাড় আমি তাঁর আরো নিকটবর্তী হতে চাই। কেননা সকল মানুষ অপেক্ষা আমি তাঁর নিকটবর্তী হতে সবচেয়ে ভালোবাসি। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমরা ওয়াবেছাকে ছেড়ে দাও। হে ওয়াবেছা কাছে চলে এস। একথা তিনি দুইবার অথবা তিনবার বললেন। ওয়াবেছা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এরপর আমি তাঁর খুব নিকটে চলে গেলাম এমনকি তাঁর একদম সামনে গিয়ে বসলাম। ফলে তিনি বললেন, হে ওয়াবেছা! আমি তোমাকে আগেই বলে দিব নাকি তুমি আমাকে জিজ্ঞেস করার পর বলব? আমি বললাম, না আমি জিজ্ঞেস করব না; বরং আপনিই আমাকে বলে দিন (আমি কেন এসেছি।) ফলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি ভাল ও মন্দ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে এসেছ? তিনি বললেন, হ্যাঁ। ওয়াবেছা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এরপর তিনি হাতকে মুষ্টিবদ্ধ করে আমার বুকে মৃদু আঘাত করে বললেন, হে ওয়াবেছা! তোমার অন্তরকে জিজ্ঞেস কর, তোমার মনকে জিজ্ঞেস কর। এ কথা তিনবার বলার পর বললেন, ভাল ও নেক কাজে মন স্থির থাকবে, অন্তর শান্ত ও দ্বিধামুক্ত থাকবে। মন্দ ও গুনাহের কাজে মনে খটকা লাগবে, অন্তরে দ্বিধা-সংশয় সৃষ্টি হবে যদিও জনগণ তোমার পক্ষে মত প্রকাশ করে, তারা তোমাকেই সমর্থন করে।[২]
----
وَعَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ مَرَّ النَّبِيُّ ﷺ بِتَمْرَةٍ فِيْ الطَّرِيْقِ فَقَالَ لَوْلَا أَنِّيْ أَخَافُ أَنْ تَكُوْنَ مِنَ الصَّدَقَةِ لَأَكَلْتُهَا
----
২৭. আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) রাস্তায় পড়া একটি খেজুরের নিকট দিয়ে যাওয়ার সময় বললেন, ছাদাক্বার খেজুর বলে যদি আমার সন্দেহ না হত, নিশ্চয় আমি তা খেতাম।[৩]

وَعَنِ الْحَسَنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَّسُوْلِ اللهِ ﷺ دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيْبُكَ

২৮. হাসান ইবনু আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর এই বাণীটি আমি ভালোভাবে স্মরণ রেখেছি যে, যে কাজে মনে খটকা লাগে, সে কাজ পরিহার করে খটকাহীন কাজ অবলম্বন কর।[৪]
----
وَعَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ كَانَ لِأَبِيْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ غُلَامٌ يُخْرِجُ لَهُ الْخَرَاجَ وَكَانَ أَبُوْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَأْكُلُ مِنْ خَرَاجِهِ فَجَاءَ يَوْمًا بِشَيْءٍ فَأَكَلَ مِنْهُ أَبُوْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فَقَالَ لَهُ الْغُلاَمُ أَتَدْرِيْ مَا هَذَا؟ فَقَالَ أَبُوْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ وَمَا هُوَ؟ قَالَ كُنْتُ تَكَهَّنْتُ لِإِنْسَانٍ فِي الْجَاهِلِيَّةِ وَمَا أُحْسِنُ الْكِهَانَةَ إِلَّا أَنِّيْ خَدَعْتُهُ فَلَقِيَنِيْ فَأَعْطَانِيْ بِذَلِكَ فَهَذَا الَّذِيْ أَكَلْتَ مِنْهُ فَأَدْخَلَ أَبُوْ بَكْرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَدَهُ فَقَاءَ كُلَّ شَيْءٍ فِيْ بَطْنِهِ.

২৯. আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর একজন গোলাম ছিল। তিনি তার জন্য রাজস্ব নির্ধারণ করেছিলেন। তিনি তাঁর রাজস্ব হতে খেতেন। একদিন সে কিছু সম্পদ নিয়ে আসে এবং আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) সেখান থেকে কিছু খান। তখন গোলাম তাঁকে বলল, আপনি এ খাদ্য সম্পর্কে কী জানেন? আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, এ কেমন খাদ্য? গোলাম বলল, আমি জাহেলী যুগে গণকী করতাম। আমি গণকী বিষয়ে ভাল জানতাম না শুধু মানুষকে ধোঁকা দিতাম। ঐ সময়ের এক লোকের সাথে দেখা হলে সে আমাকে এ খাদ্য প্রদান করে। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মুখের ভিতর হাত ঢুকিয়ে তার পেটে যা ছিল সব বমি করে দিলেন।[৫]
----
وَعَنْ أَبِيْ أُمَامَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا سَأَلَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ مَا الْإِيْمَانُ قَالَ إِذَا سَرَّتْكَ حَسَنَتُكَ وَسَاءَتْكَ سَيِّئَتُكَ فَأَنْتَ مُؤْمِنٌ قَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَمَا الْإِثْمُ قَالَ إِذَا حَاكَ فِى نَفْسِكَ شَىْءٌ فَدَعْهُ.

৩০. আবূ উমামা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করল, ঈমান কী? তিনি বললেন, যখন তোমার সৎকর্ম তোমাকে আনন্দ দিবে এবং তোমার অসৎকর্ম তোমাকে পীড়া দিবে, তখন তুমি মুমিন। লোকটি আবার বলল, গুনাহ কী? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, যখন কোন কাজে তোমার মনে বাধা সৃষ্টি হবে, তখন তুমি সেটা ছেড়ে দাও।[৬]
----
وَعَنْ حُذَيْفَةَ بْنِ الْيَمَانِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَضْلُ الْعِلْمِ خَيْرٌ مِنْ فَضْلِ الْعِبَادَةِ وَخَيْرُ دِيْنِكُمُ الْوَرَعُ

৩১. হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ইবাদতের মর্যাদার চেয়ে বিদ্যার মর্যাদা অনেক বেশি। তোমাদের দ্বীনের মাঝে সর্বোত্তম বিষয় হল পরহেযগারিতা।[৭] ওয়াছেলা  (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর সূত্রে বর্ণিত আছে, আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,

كُنْ وَرِعًا تَكُنْ أَعْبَدَ النَّاسِ وَكُنْ قَنِعًا تَكُنْ أَشْكَرَ النَّاسِ وَأَحِبَّ لِلنَّاسِ مَا تُحِبُّ لِنَفْسِكَ تَكُنْ مُؤْمِنًا وَأَحْسِنْ مُجَاوَرَةً مَنْ جَاوَرَكَ تَكُنْ مُسْلِمًا وَأَقِلَّ الضَّحِكَ فَإِنَّ كَثْرَةَ الضَّحِكِ تُمِيْتُ الْقَلْبَ

‘(হে আবূ হুরায়রা!) তুমি আল্লাহভীরু হয়ে যাও, তাহলে লোকেদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ইবাদতকারী হতে পারবে। তুমি অল্পে তুষ্ট থাক, তাহলে লোকেদের মধ্যে সর্বোত্তম কৃতজ্ঞ হতে পারবে। তুমি নিজের জন্য যা পসন্দ কর, অন্যদের জন্যও তাই পসন্দ করবে, তাহলে পূর্ণ মুমিন হতে পারবে। তোমার প্রতিবেশীর প্রতি সদাচারী ও দয়াপরবশ হও, তাহলে মুসলিম হতে পারবে। তোমার হাসি কমাও, কেননা অধিক হাসি অন্তরাত্মাকে ধ্বংস করে।[৮]

ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে বদান্যতা প্রদর্শন এবং উত্তমভাবে লেনদেন করার ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

قَالَ اِنِّیۡۤ  اُرِیۡدُ اَنۡ اُنۡکِحَکَ اِحۡدَی ابۡنَتَیَّ ہٰتَیۡنِ عَلٰۤی اَنۡ تَاۡجُرَنِیۡ ثَمٰنِیَ حِجَجٍ فَاِنۡ اَتۡمَمۡتَ عَشۡرًا  فَمِنۡ عِنۡدِکَ وَ مَاۤ  اُرِیۡدُ اَنۡ اَشُقَّ عَلَیۡکَ سَتَجِدُنِیۡۤ اِنۡ  شَآءَ  اللّٰہُ  مِنَ  الصّٰلِحِیۡنَ

‘সে বলল, আমি আমার এই কন্যাদ্বয়ের একজনকে তোমার সাথে বিয়ে দিতে চাই এই শর্তে যে, তুমি আট বছর আমার মজুরী করবে। আর যদি তুমি দশ বছর পূর্ণ কর, তবে সেটা তোমার পক্ষ থেকে (অতিরিক্ত)। আমি তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না। ইনশাআল্লাহ তুমি আমাকে সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত পাবে’ (সূরা আল-ক্বাছাছ : ২৭)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اِنۡ طَلَّقۡتُمُوۡہُنَّ مِنۡ قَبۡلِ اَنۡ تَمَسُّوۡہُنَّ وَ قَدۡ فَرَضۡتُمۡ لَہُنَّ فَرِیۡضَۃً فَنِصۡفُ مَا فَرَضۡتُمۡ  اِلَّاۤ  اَنۡ یَّعۡفُوۡنَ اَوۡ یَعۡفُوَا الَّذِیۡ بِیَدِہٖ عُقۡدَۃُ النِّکَاحِ وَ اَنۡ تَعۡفُوۡۤا اَقۡرَبُ لِلتَّقۡوٰی وَ لَا تَنۡسَوُا الۡفَضۡلَ بَیۡنَکُمۡ اِنَّ اللّٰہَ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ

‘আর যদি তোমরা তাদেরকে তালাক্ব দাও, তাদেরকে স্পর্শ করার পূর্বে এবং তাদের জন্য কিছু মোহর নির্ধারণ করে থাক, তাহলে যা নির্ধারণ করেছ, তার অর্ধেক (দিয়ে দাও)। তবে স্ত্রীরা যদি মাফ করে দেয়, কিংবা যার হাতে বিবাহের বন্ধন সে যদি মাফ করে দেয়। আর তোমাদের মাফ করে দেয়া তাক্বওয়ার অধিক নিকটতর। আর তোমরা পরস্পরের মধ্যে অনুগ্রহ ভুলে যেয়ো না। তোমরা যা কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩৭)।

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ رَحِمَ اللهُ عَبْدًا سَمْحًا إِذَا بَاعَ سَمْحًا إِذَا اشْتَرَى سَمْحًا إِذَا اقْتَضَى

৩২. জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি বিক্রয়কালে উদারচিত্ত, ক্রয়কালেও উদারচিত্ত এবং পাওনা আদায়ের তাগাদায়ও উদারচিত্ত আল্লাহ সেই বান্দার প্রতি দয়া করুন।[৯] তিরমিযীর বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, غَفَرَ اللهُ لِرَجُلٍ كَانَ قَبْلَكُمْ كَانَ سَهْلًا إِذَا بَاعَ سَهْلًا إِذَا اشْتَرَى سَهْلًا إِذَا اقْتَضَى ‘তোমাদের পূর্ববর্তী যুগের এক ব্যক্তিকে আল্লাহ তা‘আলা মাফ করে দিয়েছেন। সে বিক্রির ক্ষেত্রে ছিল উদার, ক্রয়ের ক্ষেত্রে ছিল উদার, তাগাদার ক্ষেত্রেও ছিল উদার’।[১০]
-----
وَعَنْ حُذَيْفَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أُتِيَ اللهُ بِعَبْدٍ مِنْ عِبَادِهِ آتَاهُ اللهُ مَالًا فَقَالَ لَهُ مَاذَا عَمِلْتَ فِيْ الدُّنْيَا؟ قَالَ "وَلَا يَكْتُمُوْنَ اللَّهَ حَدِيْثًا"[النساء : ৪২] قَالَ يَا رَبِّ آتَيْتَنِيْ مَالَكَ فَكُنْتُ أُبَايِعُ النَّاسَ وَكَانَ مِنْ خُلُقِيْ الْجَوَازُ فَكُنْتُ أَتَيَسَّرُ عَلَى الْمُوْسِرِ وَأُنْظِرُ الْمُعْسِرَ فَقَالَ اللهُ أَنَا أَحَقُّ بِذَا مِنْكَ تَجَاوَزُوْا عَنْ عَبْدِيْ. فَقَالَ عُقْبَةُ بْنُ عَامِرٍ الْجُهَنِيُّ وَأَبُوْ مَسْعُوْدٍ الْأَنْصَارِيُّ هَكَذَا سَمِعْنَاهُ مِنْ فِيْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ

৩৩. হুযায়ফা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর সমীপে তার এমন এক বান্দাকে উপস্থিত করা হল, যাকে তিনি প্রচুর সম্পদ দান করেছিলেন। আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করেন, দুনিয়ায় তুমি কী আমল করেছ? রাবী বলেন, (আল্লাহ তা‘আলার বাণী) ‘আল্লাহর নিকট তারা কোন কথা গোপন রাখতে পারে না’ (সূরা আন-নিসা : ৪২)। সে বলল, হে আমার রব! আপনি আপনার সস্পদ আমাকে দান করেছিলেন। আমি মানুষের সাথে ক্রয়-বিক্রয় করতাম। সুতরাং সচ্ছল ব্যক্তির সহিত আমি সহনশীলতা প্রদর্শন করতাম আর গরীবকে সময় দিতাম। আল্লাহ তা‘আলা বললেন, এ ব্যাপারে তোমার চেয়ে আমি অধিক যোগ্য। তোমরা আমার বান্দাকে মাফ করে দাও। উক্ববা ইবনু আমির আল-জুহানী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও আবূ মাসঊদ আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, এরূপই আমরা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মুখ থেকে শুনেছি।[১১]
-----
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَلَا أُخْبِرُكُمْ بِمَنْ يَحْرُمُ عَلَى النَّارِ أَوْ مَنْ تَحْرُمُ عَلَيْهِ النَّارُ؟ عَلَى كُلِّ قَرِيْبٍ هَيِّنٍ سَهْلٍ

৩৪. আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে সংবাদ দিব না, কে জাহান্নামের জন্য হারাম এবং কার জন্য জাহান্নাম হারাম? সে হল, যে মানুষের নিকটবর্তী, সহজ-সরল এবং কোমল।[১২] ছহীহ ইবনু হিব্বানের বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, إِنَّمَا يُحَرَّمُ عَلَى النَّارِ كُلُّ هَيِّنٍ لَيِّنٍ قَرِيْبٍ سَهْلٍ ‘মানুষের নিকটবর্তী, সহজ-সরল এবং কোমল মনের অধিকারী প্রত্যেক মানুষের জন্য জাহান্নাম হারাম।[১৩]
-----
وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ اسْمَحْ يُسْمَحْ لَكَ

৩৫. ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তুমি উদারতা দেখাও, তোমার প্রতিও উদারতা দেখানো হবে।[১৪]
-----
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلًا أَتَى النَّبِيَّ ﷺ يَتَقَاضَاهُ فَأَغْلَظَ لَهُ فَهَمَّ بِهِ أَصْحَابُهُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ دَعُوْهُ فَإِنَّ لِصَاحِبِ الْحَقِّ مَقَالًا ثُمَّ قَالَ أَعْطُوْهُ سِنًّا مِثْلَ سِنِّهِ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ لَا نَجِدُ إِلَّا أَمْثَلَ مِنْ سِنِّهِ قَالَ أَعْطُوْهُ فَإِنَّ مِنْ خَيْرِكُمْ أَحْسَنَكُمْ قَضَاءً.

৩৬. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি নবী (ﷺ)-এর নিকট এসে কঠোরতার সাথে প্রাপ্যের তাগাদা করল, তাতে ছাহাবীগণ তার প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। ফলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ছাহাবীগণকে বললেন, তাকে ছেড়ে দাও। কারণ পাওনাদার কঠোর উক্তি প্রয়োগ করতে পারে। অতঃপর বললেন, তোমরা তার প্রাপ্য পরিশোধের জন্য একটি উট দিয়ে দাও। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমরা তার প্রাপ্য উট অপেক্ষা বড় উট ছাড়া অন্য উট পাচ্ছি না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, বড়টিই তাকে দিয়ে দাও। কেননা তোমাদের মধ্যে উত্তম ঐ ব্যক্তি, যে অন্যের প্রাপ্য পরিশোধে উত্তম হয়।[১৫]

অনুরোধ রক্ষার্থে (তার সাথে করা) ক্রয়-বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করার ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

قَوۡلٌ مَّعۡرُوۡفٌ وَّ مَغۡفِرَۃٌ خَیۡرٌ مِّنۡ صَدَقَۃٍ یَّتۡبَعُہَاۤ  اَذًی وَ اللّٰہُ غَنِیٌّ حَلِیۡمٌ

‘উত্তম কথা ও ক্ষমা প্রদর্শন শ্রেয়, যে দানের পর কষ্ট দেয়া হয় তার চেয়ে। আর আল্লাহ অভাবমুক্ত, সহনশীল’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৬৩)।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ أَقَالَ مُسْلِمًا أَقَالَهُ اللهُ عَثْرَتَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

৩৭. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার মুসলিম ভাইয়ের অনুরোধ রক্ষার্থে (তার সাথে করা) ক্রয় বা বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহ ক্ষমা করবেন।[১৬]
----
وَعَنْ أَبِيْ شُرَيْحٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ أَقَالَ أَخَاهُ بَيْعًا أَقَالَهُ اللهُ عَثْرَتَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

৩৮. আবূ শুরাইহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি তার (মুসলিম) ভাইয়ের অনুরোধ রক্ষার্থে (তার সাথে করা) ক্রয় বা বিক্রয়ের চুক্তি বাতিল করবে, ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তার গুনাহ ক্ষমা করবেন।[১৭]
----
ক্রয়-বিক্রয় ও অন্যান্য ক্ষেত্রে নছীহত করার ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ الۡمُؤۡمِنٰتُ بَعۡضُہُمۡ اَوۡلِیَآءُ بَعۡضٍ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ وَ یُقِیۡمُوۡنَ الصَّلٰوۃَ  وَ یُؤۡتُوۡنَ الزَّکٰوۃَ وَ یُطِیۡعُوۡنَ اللّٰہَ وَ رَسُوۡلَہٗ  اُولٰٓئِکَ سَیَرۡحَمُہُمُ اللّٰہُ اِنَّ اللّٰہَ عَزِیۡزٌ  حَکِیۡمٌ

‘আর মুমিন পুরুষ এবং মুমিন নারীরা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় আর অন্যায় কাজ থেকে নিষেধ করে, আর তারা ছালাত ক্বায়িম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। এদেরকে আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা আত-তাওবাহ : ৭১)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ الَّذِیۡنَ  کَفَرُوۡا  بَعۡضُہُمۡ  اَوۡلِیَآءُ  بَعۡضٍ اِلَّا تَفۡعَلُوۡہُ  تَکُنۡ فِتۡنَۃٌ  فِی الۡاَرۡضِ وَ فَسَادٌ    کَبِیۡرٌ

‘আর যারা কুফরি করে, তারা একে অপরের বন্ধু। যদি তোমরা তা না কর, তাহলে যমীনে ফিতনা ও বড় ফাসাদ হবে’ (সূরা আল-আনফাল : ৭৩)। মহান আল্লাহ বলেন,

لَیۡسَ عَلَی الضُّعَفَآءِ وَ لَا عَلَی الۡمَرۡضٰی وَ لَا عَلَی الَّذِیۡنَ لَا  یَجِدُوۡنَ  مَا یُنۡفِقُوۡنَ حَرَجٌ  اِذَا نَصَحُوۡا لِلّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ مَا عَلَی الۡمُحۡسِنِیۡنَ مِنۡ سَبِیۡلٍ  وَ اللّٰہُ  غَفُوۡرٌ  رَّحِیۡمٌ

‘কোন দোষ নেই দুর্বলদের উপর, অসুস্থদের উপর ও যারা দান করার মত কিছু পায় না তাদের উপর, যদি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের হিতাকাক্সক্ষী হয়। সৎকর্মশীলদের উপর (অভিযোগের) কোন পথ নেই, আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু’ (সূরা আল-তাওবাহ : ৯১)।

عَنْ أَبِيْ سِبَاعٍ قَالَ اشْتَرَيْتُ نَاقَةً مِنْ دَارٍ وَاثِلَةَ بْنِ الْأَسْقَعِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ فَلَمَّا خَرَجْتُ بِهَا أَدْرَكَنِيْ وَاثِلَةُ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ وَهُوَ يَجُرُّ إِزَارَهُ فَقَالَ يَا عَبْدَ اللهِ اشْتَرَيْتَ؟ قُلْتُ نَعَمْ قَالَ بَيَّنَ لَكَ مَا فِيْهَا؟ قُلْتُ وَمَا فِيْهَا إِنَّهَا لَسَمِيْنَةٌ ظَاهِرَةُ الصِّحَّةِ؟ قَالَ أَرَدْتَ بِهَا سَفَرًا أَوْ أَرَدْتَ بِهَا لَحْمًا؟ قُلْتُ أَرَدْتُ بِهَا الْحَجَّ قَالَ فَارْتَجِعْهَا فَقَالَ صَاحِبُهَا مَا أَرَدْتَ إِلَّا هَذَا أَصْلَحَكَ اللهُ تُفْسِدُ عَلَيَّ قَالَ فَإِنِّيْ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ لَا يَحِلُّ لِأَحَدٍ أَنْ يَبِيْعَ شَيْئًا إِلَّا بَيَّنَ مَا فِيْهِ وَلَا يَحِلُّ لِمَنْ عَلِمَ ذَلِكَ إِلَّا بَيَّنَهُ

৩৯. আবূ সিবা‘ বলেন, আমি ওয়াছিল ইবনু আসকা‘ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বাড়ির উঠান থেকে একটি উটনি ক্রয় করেছিলাম। যখন আমি তা নিয়ে বের হলাম, ওয়াছিল আমাকে পেয়ে জিজ্ঞেস করলেন, এ সময় তার কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলছিল, হে আল্লাহর বান্দা! আপনি কি এটা ক্রয় করলেন? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, তারা কি এই উটনি সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিয়েছে? আমি বললাম, এর কোন সমস্যা নেই, এটি মোটাতাজা ও সুস্থ। তিনি বললেন, আপনি কি এটি সফরের জন্য কিনেছেন নাকি গোস্তের জন্য? আমি বললাম, আমি তো এটি হজ্জের উদ্দেশ্যে কিনেছি। তিনি বললেন, তাহলে এটি ফেরত দিন। অতঃপর এর মালিক বলল, আপনার উদ্দেশ্য যদি একমাত্র দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করা হয়, তাহলে আল্লাহ যেন আপনাকে সংশোধন করে দেন। ওয়াছিল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, কোন ব্যক্তির জন্য বিক্রিত পণ্যের দোষ-ত্রুটি স্পষ্ট না করে বিক্রয় করা বৈধ নয় এবং যে এ বিষয়ে অবগত আছে তার জন্যেও সেই ত্রুটি গোপন রাখা বৈধ নয়।[১৮]
-----
وَعَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ الْمُسْلِمُ أَخُو الْمُسْلِمِ وَلَا يَحِلُّ لِمُسْلِمٍ بَاعَ مِنْ أَخِيْهِ بَيْعًا فِيْهِ عَيْبٌ إِلَّا بَيَّنَهُ لَهُ

৪০. ঊক্ববা বিন ‘আমের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই। অতএব কোন মুসলিমের পক্ষে তার ভাইয়ের কাছে পণ্যের ক্রটি বর্ণনা না করে তা বিক্রয় করা বৈধ নয়।[১৯]

وَعَنْ تَمِيْمٍ الدَّارِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ الدِّيْنُ النَّصِيْحَةُ قُلْنَا لِمَنْ؟ قَالَ لِلهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُوْلِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِيْنَ وَعَامَّتِهِمْ

৪১. তামীম আদ-দারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নিশ্চয় নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, দ্বীন হল কল্যাণ কামনা। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, কার জন্য? তিনি বললেন, আল্লাহ তা‘আলার জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য, মুসলিমদের নেতৃত্বে অধিষ্ঠ ব্যক্তিদের জন্য এবং সকল মুসলিমের জন্য।[২০]

وَعَنْ زِيَادِ بْنِ عِلَاقَةَ قَالَ سَمِعْتُ جَرِيْرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ يَوْمَ مَاتَ الْمُغِيْرَةُ بْنُ شُعْبَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَامَ فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَقَالَ عَلَيْكُمْ بِاتِّقَاءِ اللهِ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَالْوَقَارِ وَالسَّكِيْنَةِ حَتَّى يَأْتِيَكُمْ أَمِيْرٌ فَإِنَّمَا يَأْتِيْكُمُ الْآنَ ثُمَّ قَالَ اسْتَعْفُوْا لِأَمِيْرِكُمْ فَإِنَّهُ كَانَ يُحِبُّ الْعَفْوَ ثُمَّ قَالَ أَمَّا بَعْدُ فَإِنِّيْ أَتَيْتُ النَّبِيَّ ﷺ قُلْتُ أُبَايِعُكَ عَلَى الْإِسْلاَمِ فَشَرَطَ عَلَيَّ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ فَبَايَعْتُهُ عَلَى هَذَا وَرَبِّ هَذَا الْمَسْجِدِ إِنِّيْ لَنَاصِحٌ لَكُمْ ثُمَّ اسْتَغْفَرَ وَنَزَلَ.

৪২. যিয়াদ ইবনু ঈলাকা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মুগীরাহ ইবনু শু‘বাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) যেদিন ইন্তিকাল করেন সেদিন আমি জারীর ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর নিকটে শুনেছি, তিনি (মিম্বারে) দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও ছানা বর্ণনা করে বললেন, তোমরা এক আল্লাহকে ভয় কর যার কোন অংশীদার নেই এবং নতুন কোন নেতার আগমন না হওয়া পর্যন্ত শৃঙ্খলা বজায় রাখ, অতি সত্বর তোমাদের নেতা আগমন করবেন। অতঃপর জারীর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, তোমাদের নেতার জন্য ক্ষমা চাও; কেননা, তিনি ক্ষমা করা পসন্দ করেন। অতঃপর বললেন, একদা আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর নিকটে এসে আরয করলাম, আমি আপনার নিকট ইসলামের বায়‘আত নিতে চাই। তিনি (অন্যান্য বিষয়ের সাথে) আমার উপর শর্ত দিয়ে বললেন, আর সকল মুসলিমের কল্যাণ কামনা করবে। অতঃপর আমি তাঁর নিকট এ শর্তের উপর বায়‘আত নিলাম। এ মসজিদের প্রতিপালকের শপথ! আমি তোমাদের কল্যাণকামনাকারী। অতঃপর তিনি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলেন এবং (মিম্বার হতে) নেমে গেলেন।[২১]

وَعَنْ جَرِيْرٍ أَيْضًا رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ بَايَعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ عَلَى إِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ وَالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ

৪৩. জারীর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর হাতে ছালাত প্রতিষ্ঠা, যাকাত প্রদান এবং প্রত্যেক মুসলিমের জন্য কল্যাণ কামনা করার অঙ্গীকার করে বায়‘আত করেছি।[২২]

وَعَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى يُحِبَّ لِأَخِيْهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ

৪৪. আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেছেন, কোন ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত সে (মুসলিম) ভাইয়ের জন্য তাই পসন্দ না করবে, যা সে নিজের জন্য পসন্দ করে।[২৩]

ব্যবসা-বাণিজ্যে সততার ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

وَ قُلۡ رَّبِّ اَدۡخِلۡنِیۡ مُدۡخَلَ صِدۡقٍ وَّ اَخۡرِجۡنِیۡ مُخۡرَجَ صِدۡقٍ وَّ اجۡعَلۡ لِّیۡ مِنۡ لَّدُنۡکَ سُلۡطٰنًا نَّصِیۡرًا

‘আর বলুন, হে আমার রব, আমাকে প্রবেশ করান উত্তমভাবে এবং বের করান উত্তমভাবে। আর আপনার পক্ষ থেকে আমাকে সাহায্যকারী শক্তি দান করুন’ (সূরা বনী ইসরাইল : ৮০)। মহান আল্লাহ বলেন, لِیَسۡـَٔلَ الصّٰدِقِیۡنَ عَنۡ صِدۡقِہِمۡ وَ اَعَدَّ  لِلۡکٰفِرِیۡنَ عَذَابًا  اَلِیۡمًا ‘সত্যবাদীদেরকে তাদের সত্যবাদিতা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য। আর তিনি প্রস্তুত করে রেখেছেন কাফিরদের জন্য যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি’ (সূরা আল-আহযাব : ৮)। মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا

‘হে মুমিনগণ, তোমরা পরস্পরের মধ্যে তোমাদের ধন-সম্পদ অন্যায়ভাবে খেয়ো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসার মাধ্যমে হলে ভিন্ন কথা। আর তোমরা নিজেরা নিজদেরকে হত্যা করো না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে পরম দয়ালু’ (সূরা আন-নিসা : ২৯)।

عَنْ حَكِيْمِ بْنِ حِزَامٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ الْبَيِّعَانِ بِالْخِيَارِ مَا لَمْ يَتَفَرَّقَا فَإِنْ صَدَقَا وَبَيَّنَا بُوْرِكَ لَهُمَا فِيْ بَيْعِهِمَا وَإِنْ كَذَبَا وَكَتَمَا مُحِقَتْ بَرَكَةُ بَيْعِهِمَا

৪৫. হাকীম ইবনু হিযাম (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ক্রেতা ও বিক্রেতার জন্য উভয়ের পৃথক না হওয়া পর্যন্ত অবকাশ থাকবে, তারা উভয়ে যদি সততা অবলম্বন করে এবং উভয়ে নিজ নিজ বস্তুর দোষ-ত্রুটি প্রকাশ করে দেয়, তাহলে তাদের ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত দান করা হবে। আর যদি তারা উভয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয় এবং দোষ-ত্রুটি গোপন রাখে, তাহলে উক্ত ক্রয়-বিক্রয়ে বরকত মুছে দেয়া হবে।[২৪]

 (ইনশাআল্লাহ চলবে)

* পিএইচ-ডি. গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৫৩।
[২]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮০৩০; দারেমী, হা/২৫৩৩, সনদ হাসান।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/২৪৩১; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৭১।
[৪]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭২৩; তিরমিযী, হা/২৫১৮; নাসাঈ হা/৫৭১১, সনদ ছহীহ।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৮৪২।
[৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২২৫৩, সনদ ছহীহ।
[৭]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৩৯৬০; মুসনাদে বাযযার, হা/২৯৬৯; ছহীহ আত-তারগীব ওয়াত তারহীব, হা/৬৮, সনদ ছহীহ লি-গাইরিহী।
[৮]. ইবনু মাজাহ, হা/৪২১৭, সনদ ছহীহ।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/২০৭৬; ইবনু মাজাহ, হা/২২০৩, সনদ ছহীহ।
[১০]. তিরমিযী, হা/১৩২০, সনদ ছহীহ ।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৬০।
[১২]. মুসনাদু আবী ইয়া‘লা, হা/৫০৫৩; তিরমিযী, হা/২৪৮৮, সনদ ছহীহ।
[১৩]. ছহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৪৬৯; সনদ ছহীহ লি-গাইরিহী, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৯৩৮।
[১৪]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৩৩; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৪৫৬।
[১৫]. ছহীহ বুখারী, হা/২৩৯০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬০১; তিরমিযী, হা/১৩১৭।
[১৬]. আবূ দাঊদ, হা/৩৪৬০; ইবনু মাজাহ, হা/২১৯৯, সনদ ছহীহ।
[১৭]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৮৮৯; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/২৬১৪।
[১৮]. মুসতাদরাক হাকেম, হা/২১৫৭; বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, হা/৪৯১২, সনদ হাসান।
[১৯]. ইবনু মাজাহ, হা/২২৪৬; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামে‘, হা/৬৭০৫।
[২০]. ছহীহ মুসলিম, হা/৫৫।
[২১]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৬।
[২২]. ছহীহ বুখারী, হা/৫৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৬।
[২৩]. ছহীহ বুখারী, হা/১৩; ছহীহ মুসলিম, হা/৪৫।
[২৪]. ছহীহ বুখারী, হা/২০৭৯, ২০৮২; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৩২।




প্রসঙ্গসমূহ »: ব্যবসা-বানিজ্য আমল
ফাযায়েলে হজ্জ ও ওমরাহ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছাদাক্বাহ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৩য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : আহার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল: ফাযায়েলে তাওহীদ (৭ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১১ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে জিহাদ (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৪র্থ কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক

ফেসবুক পেজ