ফাযায়েলে ছালাত
- মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান
- অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*
(১৩তম কিস্তি)
ফরয ছালাত আদায়ের ফযীলত
তাওহীদের পর ছালাতই হল সবচেয়ে বড় ফরয
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰہَ مُخۡلِصِیۡنَ لَہُ الدِّیۡنَ ۬ۙ حُنَفَآءَ وَ یُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ذٰلِکَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ
‘আর তাদেরকে কেবল এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ‘ইবাদত করে তাঁরই জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে ছালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয়; আর এটিই হল সঠিক দ্বীন’ (সূরা আল-বায়্যিনাহ : ৫)।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمَّا بَعَثَ مُعَاذًا رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَلَى اليَمَنِ قَالَ إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ أَهْلِ كِتَابٍ فَلْيَكُنْ أَوَّلَ مَا تَدْعُوْهُمْ إِلَيْهِ عِبَادَةُ اللهِ فَإِذَا عَرَفُوا اللهَ فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِيْ يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ فَإِذَا فَعَلُوْا فَأَخْبِرْهُمْ أَنَّ اللهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً مِنْ أَمْوَالِهِمْ وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ فَإِذَا أَطَاعُوْا بِهَا فَخُذْ مِنْهُمْ وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أَمْوَالِ النَّاسِ
৩৪). আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মু‘আয (ইবনু জাবাল) (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে শাসনকর্তা হিসাবে ইয়ামানে পাঠান, তখন বলেছিলেন, ‘তুমি আহলে কিতাব লোকদের নিকট যাচ্ছ। সেহেতু প্রথমে তাদের আল্লাহর ইবাদতের দা‘ওয়াত দিবে। যখন তারা আল্লাহর পরিচয় লাভ করবে, তখন তাদের তুমি বলবে যে, আল্লাহ দিন-রাতে তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করে দিয়েছেন। যখন তারা তা আদায় করতে থাকবে, তখন তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের ধন-সম্পদ হতে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হবে। যখন তারা এর অনুসরণ করবে তখন তাদের হতে তা গ্রহণ করবে এবং লোকের উত্তম মাল গ্রহণ করা হতে বিরত থাকবে’।[১]
-------
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بُنِىَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُوْلُ اللهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيْتَاءِ الزَّكَاةِ وَالْحَجِّ وَصَوْمِ رَمَضَانَ
৩৫). আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপরে প্রতিষ্ঠিত। (১) এই সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ছাড়া কোন হক্ব মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর রাসূল (২) ছালাত কায়েম করা (৩) যাকাত আদায় করা (৪) হজ্জ করা এবং (৫) রামাযান মাসে ছিয়াম পালন করা’।[২]
------
সময় মত ছালাত আদায়ের ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
فَاِذَا قَضَیۡتُمُ الصَّلٰوۃَ فَاذۡکُرُوا اللّٰہَ قِیٰمًا وَّ قُعُوۡدًا وَّ عَلٰی جُنُوۡبِکُمۡ ۚ فَاِذَا اطۡمَاۡنَنۡتُمۡ فَاَقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ ۚ اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا
‘অতঃপর যখন তোমরা ছালাত পূর্ণ করবে তখন দাঁড়ানো, বসা ও শোয়া অবস্থায় আল্লাহর স্মরণ করবে। অতঃপর যখন নিশ্চিন্ত হবে তখন ছালাত (পূর্বের নিয়মে) কায়েম করবে। নিশ্চয় ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয’ (সূরা আন-নিসা : ১০৩)। মহান আল্লাহ বলেন,
اَقِمِ الصَّلٰوۃَ لِدُلُوۡکِ الشَّمۡسِ اِلٰی غَسَقِ الَّیۡلِ وَ قُرۡاٰنَ الۡفَجۡرِ ؕ اِنَّ قُرۡاٰنَ الۡفَجۡرِ کَانَ مَشۡہُوۡدًا
‘সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত ছালাত কায়েম কর এবং ফজরের কুরআন। নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৭৮)।
عَنْ أَبِيْ عَمْرٍو الشَّيْبَانِيَّ يَقُوْلُ حَدَّثَنَا صَاحِبُ هَذِهِ الدَّارِ وَأَشَارَ إِلَى دَارِ عَبْدِ اللهِ قَالَ سَأَلْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَيُّ العَمَلِ أَحَبُّ إِلَى اللهِ؟ قَالَ الصَّلَاةُ عَلَى وَقْتِهَا قَالَ ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ ثُمَّ بِرُّ الوَالِدَيْنِ قَالَ ثُمَّ أَيٌّ؟ قَالَ الجِهَادُ فِي سَبِيْلِ اللهِ
৩৬). আবূ আমর শায়বানী (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর বাড়ীর দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, এ বাড়ীর মালিক আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন, আমি আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে জিজ্ঞেস করলাম, কোন্ আমল আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়? তিনি বললেন, ‘যথা সময়ে ছালাত আদায় করা। ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, অতঃপর কোন্টি? আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, অতঃপর আল্লাহর পথে জিহাদ করা’।[৩]
--------
পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত হেফাযতের ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন, حٰفِظُوۡا عَلَی الصَّلَوٰتِ وَ الصَّلٰوۃِ الۡوُسۡطٰی ٭ وَ قُوۡمُوۡا لِلّٰہِ قٰنِتِیۡنَ ‘তোমরা ছালাতসমূহ ও মধ্যবর্তী ছালাতের হেফাযত কর এবং আল্লাহর জন্য দাঁড়াও বিনীত হয়ে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩৮)। মহান আল্লাহ বলেন, اَلَّذِیۡنَ ہُمۡ عَلٰی صَلَاتِہِمۡ دَآئِمُوۡنَ ‘যারা তাদের ছালাতের ক্ষেত্রে নিয়মিত’ (সূরা আল-মা‘আরিয : ২৩)। মহান আল্লাহ বলেন,
وَ الَّذِیۡنَ ہُمۡ عَلٰی صَلَوٰتِہِمۡ یُحَافِظُوۡنَ -اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡوٰرِثُوۡنَ
‘আর যারা নিজেদের ছালাতসমূহ হেফাজত করে। তারাই হবে (জান্নাতের) ওয়ারিছ’ (সূরা আল-মুমিনুন : ৯-১০)।
عَنْ عُثْمَانُ حَدَّثَنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِنْدَ انْصِرَافِنَا مِنْ صَلَاتِنَا هَذِهِ قَالَ مِسْعَرٌ أُرَاهَا الْعَصْرَ فَقَالَ مَا أَدْرِيْ أُحَدِّثُكُمْ بِشَيْءٍ أَوْ أَسْكُتُ؟ فَقُلْنَا يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنْ كَانَ خَيْرًا فَحَدِّثْنَا وَإِنْ كَانَ غَيْرَ ذَلِكَ فَاللهُ وَرَسُوْلُهُ أَعْلَمُ قَالَ مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَتَطَهَّرُ فَيُتِمُّ الطُّهُوْرَ الَّذِيْ كَتَبَ اللهُ عَلَيْهِ فَيُصَلِّي هَذِهِ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ إِلَّا كَانَتْ كَفَّارَاتٍ لِمَا بَيْنَهَا. وَفيِْ رِوَايَةٍ- فَلَمَّا تَوَضَّأَ عُثْمَانُ قَالَ أَلَا أُحَدِّثُكُمْ حَدِيْثًا لَوْلَا آيَةٌ مَا حَدَّثْتُكُمُوْهُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ لَا يَتَوَضَّأُ رَجُلٌ يُحْسِنُ وُضُوْءَهُ وَيُصَلِّي الصَّلَاةَ إِلَّا غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهُ وَبَيْنَ الصَّلَاةِ حَتَّى يُصَلِّيَهَا
৩৭). ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন আমরা যখন এ (ওয়াক্তের) ছালাত শেষ করলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদেরকে বললেন। মিস‘আর বলেন, আমার মনে হয় তা ছিল ‘আছরের ছালাত। তিনি বললেন, আমি স্থির করতে পারছি না যে, তোমাদের একটি বিষয়ে কিছু বর্ণনা করব না-কি নীরব থাকব। তখন আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! যদি তা কল্যাণকর হয় তাহলে আমাদের বলুন। আর যদি অন্য কিছু হয়, তাহলে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই অধিক অবগত। তারপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, কোন মুসলিম যখন পবিত্রতা অর্জন করে এবং আল্লাহ তার উপর যে পবিত্রতা অপরিহার্য করেছেন তা পূর্ণাঙ্গরূপে আদায় করে পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করে, তাহলে এসব ছালাত মধ্যবর্তী সময়ের সব গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়’।[৪] অন্য বর্ণনায় এসেছে, ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ওযূ করে বললেন, আমি তোমাদের নিকট একটি হাদীছ পেশ করব। যদি একটি আয়াতে কারীমা না হত, তবে আমি তোমাদের নিকট এ হাদীছ বলতাম না। আমি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, যে কোন ব্যক্তি সুন্দর করে ওযূ করবে এবং ছালাত আদায় করবে, পরবর্তী ছালাত আদায় করা পর্যন্ত তার মধ্যবর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে’।[৫]
--------
عَنِ ابْنِ مُحَيْرِيْزٍ أَنَّ رَجُلًا مِنْ بَنِيْ كِنَانَةَ يُدْعَى الْمَخْدَجِيَّ سَمِعَ رَجُلًا بِالشَّامِ يُدْعَى أَبَا مُحَمَّدٍ يَقُوْلُ إِنَّ الْوِتْرَ وَاجِبٌ قَالَ الْمَخْدَجِيُّ فَرُحْتُ إِلَى عُبَادَةَ بْنِ الصَّامِتِ فَأَخْبَرْتُهُ فَقَالَ عُبَادَةُ كَذَبَ أَبُو مُحَمَّدٍ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ خَمْسُ صَلَوَاتٍ كَتَبَهُنَّ اللهُ عَلَى الْعِبَادِ فَمَنْ جَاءَ بِهِنَّ لَمْ يُضَيِّعْ مِنْهُنَّ شَيْئًا اسْتِخْفَافًا بِحَقِّهِنَّ كَانَ لَهُ عِنْدَ اللهِ عَهْدٌ أَنْ يُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَمْ يَأْتِ بِهِنَّ فَلَيْسَ لَهُ عِنْدَ اللهِ عَهْدٌ إِنْ شَاءَ عَذَّبَهُ وَإِنْ شَاءَ أَدْخَلَهُ الْجَنَّةَ
৩৮). ইবনু মুহাইরীয (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, বনু কিনানাহর আল-মুখদাজী সিরিয়াতে আবূ মুহাম্মাদ নামক এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেছেন, বিতর ওয়াজিব। মুখদাজী বলেন, আমি উবাদাহ ইবনুছ ছামিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছে গিয়ে বিষয়টি অবহিত করলে তিনি বললেন, আবূ মুহাম্মাদ মিথ্যা বলেছে। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যে ব্যক্তি তা যথাযথভাবে পালন করবে, আর অবহেলাহেতু এর কোনটি পরিত্যাগ করবে না, মহান আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর অঙ্গীকার করেছেন। আর যে ব্যক্তি তা (যথাযথভাবে) আদায় করবে না, তার জন্য আল্লাহর কাছে কোন প্রতিশ্রুতি নেই। তিনি ইচ্ছা করলে তাকে শাস্তি দিবেন কিংবা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন’।[৬]
---------
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خَمْسٌ مَنْ جَاءَ بِهِنَّ مَعَ إِيْمَانٍ دَخَلَ الْجَنَّةَ مَنْ حَافَظَ عَلَى الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ عَلَى وُضُوْئِهِنَّ وَرُكُوْعِهِنَّ وَسُجُوْدِهِنَّ وَمَوَاقِيْتِهِنَّ وَصَامَ رَمَضَانَ وَحَجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيْلًا وَأَعْطَى الزَّكَاةَ طَيِّبَةً بِهَا نَفْسُهُ وَأَدَّى الْأَمَانَةَ قَالُوْا يَا أَبَا الدَّرْدَاءِ وَمَا أَدَاءُ الْأَمَانَةِ قَالَ الْغُسْلُ مِنَ الْجَنَابَةِ
৩৯). আবুদ্দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে পাঁচটি কাজ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (১) যে ব্যক্তি উত্তমরূপে ওযূ ও রুকূ‘ সেজদাহ সহকারে নির্ধারিত সময়ে ছালাত আদায় করবে, (২) রমাযান মাসের ছিয়াম পালন করবে, (৩) পথ খরচের সামর্থ্য থাকলে হজ্জ করবে, (৪) সন্তুষ্টচিত্তে যাকাত আদায় করবে, এবং (৫) আমানত আদায় করবে। লোকেরা বলল, হে আবুদ্দারদা! আমানত আদায়ের অর্থ কী? তিনি বললেন, অপবিত্র হলে গোসল করা’।[৭]
--------
عَنْ عَمْرٍو بْنِ مُرَّةَ الْجُهَنِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرَأَيْتَ إِنْ شَهِدْتُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّكَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصَلَّيْتُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ وَأَدَّيْتُ الزَّكَاةَ وَصُمْتُ رَمَضَانَ وَقُمْتُهُ فَمِمَّنْ أَنَا؟ قَالَ مِنَ الصِّدِّيْقِيْنَ وَالشُّهَدَاءِ
৪০). ‘আমর ইবনু মুররা আল-জুহানী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একজন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি যদি স্বীকৃতি দেই যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই, আপনি আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করি, যাকাত আদায় করি, রামাযান মাসে ছিয়াম রাখি এবং ক্বিয়াম করি, তাহলে আমি কাদের দলভুক্ত হব? তিনি বললেন, (তুমি) ছিদ্দীক্ব ও শহীদদের দলভুক্ত হবে’।[৮]
---------
عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنَّ الْمُسْلِمَ يُصَلِّيْ وَخَطَايَاهُ مَرْفُوْعَةٌ عَلَى رَأْسِهِ كُلَّمَا سَجَدَ تَحَاطَّتْ فَيَفْرُغُ حِيْنَ يَفْرُغُ مِنْ صَلَاتِهِ وَقَدْ تَحَاتَتْ خَطَايَاهُ
৪১). সালমান ফারসী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘নিশ্চয় একজন মুসলিম যখন ছালাত আদায় করে, তখন তার গুনাহসমূহ মাথার উপর ঝুলানো থাকে। যখন সে সেজদা করে, গুনাহসমূহ খসে পড়ে। এভাবে যখন সে ছালাত শেষ করে, তার সকল গুনাহ ক্ষমা হয়ে যায়’।[৯]
---------
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ أَتَانِيْ رَبِّيْ فِيْ أَحْسَنِ صُوْرَةٍ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ قُلْتُ لَبَّيْكَ رَبِّيْ وَسَعْدَيْكَ قَالَ فِيْمَ يَخْتَصِمُ المَلَأُ الْأَعْلَى؟ قُلْتُ رَبِّ لَا أَدْرِيْ فَوَضَعَ يَدَهُ بَيْنَ كَتِفَيَّ فَوَجَدْتُ بَرْدَهَا بَيْنَ ثَدْيَيَّ فَعَلِمْتُ مَا بَيْنَ المَشْرِقِ وَالمَغْرِبِ فَقَالَ يَا مُحَمَّدُ فَقُلْتُ لَبَّيْكَ وَسَعْدَيْكَ قَالَ فِيْمَ يَخْتَصِمُ المَلَأُ الْأَعْلَى؟ قُلْتُ فِي الدَّرَجَاتِ وَالكَفَّارَاتِ وَفِي نَقْلِ الْأَقْدَامِ إِلَى الجَمَاعَاتِ وَإِسْبَاغِ الوُضُوْءِ فِي المَكْرُوْهَاتِ وَانْتِظَارِ الصَّلَاةِ بَعْدَ الصَّلَاةِ وَمَنْ يُحَافِظْ عَلَيْهِنَّ عَاشَ بِخَيْرٍ وَمَاتَ بِخَيْرٍ وَكَانَ مِنْ ذُنُوْبِهِ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ
৪২). আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আমার প্রতিপালক সর্বোত্তম চেহারায় আমার নিকট আসলেন। তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি বললাম, হে আমার রব! আমি উপস্থিত, আমি হাযির। তিনি প্রশ্ন করেন, ঊর্দ্ধ জগতের অধিবাসীরা কী নিয়ে বিবাদ করছে? আমি উত্তর দিলাম, প্রভু! আমি জানি না। তিনি তাঁর হাত আমার দুই কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন। এমনকি আমি এর শীতলতা আমার উভয় স্তনের মধ্যখানে (বুকে) অনুভব করলাম। পূর্ব-পশ্চিমের মাঝে যা কিছু আছে তা আমি জেনে নিলাম। অতঃপর তিনি বললেন, হে মুহাম্মাদ! আমি বললাম, হে আমার রব! আমি আপনার সামনে উপস্থিত আছি। তিনি আবার প্রশ্ন করলেন, ঊর্দ্ধলোকের অধিবাসীরা কী নিয়ে বিতর্ক করছে? আমি জবাব দিলাম, মর্যাদা বৃদ্ধি, কাফফারা লাভ, পদব্রজে জামা‘আতে যোগদান, কষ্টকর অবস্থায়ও উত্তমরূপে ওযূ করা এবং এক ওয়াক্তের ছালাত আদায় করার পর পরের ওয়াক্তের ছালাতের অপেক্ষায় থাকা ইত্যাদি বিষয়ে তারা বিতর্ক করছে (একে অপরকে অতিক্রম করার চেষ্টা করছে)। যে লোক এগুলোর হেফাযত করবে সে কল্যাণের মধ্যে বেঁচে থাকবে, কল্যাণময় মৃত্যুবরণ করবে এবং তার মা তাকে প্রসব করার সময়ের মত গুনাহ মুক্ত হয়ে যাবে’।[১০]
---------
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّهُ قَالَ مَنْ مَشَى فِيْ ظُلْمَةِ اللَّيْلِ إِلَى الْمَسَاجِدِ آتَاهُ اللهُ نُوْرًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ
أَخْرَجَ مَالِكٌ عَنْ نَافِعٍ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ كَتَبَ إِلَى عُمَّالِهِ "إِنَّ أَهَمَّ أَمْرِكُمْ عِنْدِي الصَّلَاةُ فَمَنْ حَفِظَهَا وَحَافَظَ عَلَيْهَا حَفِظَ دِيْنَهُ وَمَنْ ضَيَّعَهَا فَهُوَ لِمَا سِوَاهَا أَضْيَعُ
৪৩). আবুদ্দারদা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘যে ব্যক্তি রাতের অন্ধকারে মসজিদে গমন করে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তাকে নূর প্রদান করবেন’।[১১]
মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) নাফে‘ থেকে বর্ণনা করেন, ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) তাঁর (অধীনস্ত) কর্মকর্তাদের কাছে লিখেছেন, ‘আমার মতে তোমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে ছালাত। অতএব যে এটার রক্ষণাবেক্ষণ করল এবং (নিষ্ঠার সাথে) বরাবর পালন করল সে নিজের দ্বীনের হেফাযত করল, আর যে ছালাতকে নষ্ট করল, সে ছালাত ছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় দ্বীনী কাজেরও অধিক নষ্টকারী হবে’।[১২]
----------
পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত গুনাহ মাফের কারণ হওয়ার বর্ণনা
মহান আল্লাহ বলেন,
وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ طَرَفَیِ النَّہَارِ وَ زُلَفًا مِّنَ الَّیۡلِ ؕ اِنَّ الۡحَسَنٰتِ یُذۡہِبۡنَ السَّیِّاٰتِ ؕ ذٰلِکَ ذِکۡرٰی لِلذّٰکِرِیۡنَ
‘আর আপনি ছালাত কায়েম করুন দিবসের দুই প্রান্তে এবং রাতের প্রথম অংশে। নিশ্চয় ভালকাজ মন্দকাজকে মিটিয়ে দেয়। এটি উপদেশ গ্রহণকারীদের জন্য উপদেশ’ (সূরা হূদ : ১১৪)। মহান আল্লাহ বলেন,
اُتۡلُ مَاۤ اُوۡحِیَ اِلَیۡکَ مِنَ الۡکِتٰبِ وَ اَقِمِ الصَّلٰوۃَ ؕ اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لَذِکۡرُ اللّٰہِ اَکۡبَرُ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ
‘আপনার প্রতি যে কিতাব অহী করা হয়েছে, তা থেকে তেলাওয়াত করুন এবং ছালাত কায়েম করুন। নিশ্চয় ছালাত অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। আল্লাহ জানেন, যা তোমরা কর’ (সূরা আল-‘আনকাবূত : ৪৫)।
عَنْ أَنَسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّيْ أَصَبْتُ حَدًّا فَأَقِمْهُ عَليَّ قَالَ وَلَمْ يَسْأَلْهُ عَنْهُ قَالَ وَحَضَرَتِ الصَّلَاةُ فَصَلَّى مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا قَضَى النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الصَّلَاةَ قَامَ الرَّجُلُ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِنِّيْ أَصَبْتُ حَدًّا فَأَقِمْ فِىَّ كِتَابَ اللهِ قَالَ أَلَيْسَ قَدْ صَلَّيْتَ مَعَنَا قَالَ نَعَمْ قَالَ فَإِنَّ اللهَ قَدْ غَفَرَ لَكَ ذَنْبَكَ أَوْ حَدَّكَ
৪৪). আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি হদ্দ জারী করার মত অপরাধ করেছি। সুতরাং আমার উপর হদ্দ প্রয়োগ করুন। বর্ণনাকারী বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তার অপরাধ সম্পর্কে তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। এ সময় ছালাতের সময় হয়ে গেল। তখন সে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সাথে ছালাত আদায় করল। অতঃপর নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর ছালাত শেষ করা মাত্র লোকটি দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমি হদ্দ কায়েম করার মত অপরাধ করেছি, অতএব আমার প্রতি আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী নির্ধারিত হদ্দ প্রয়োগ করুন। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তুমি কি আমাদের সাথে ছালাত আদায় করনি? সে বলল, হ্যাঁ। নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমার গুনাহ অথবা হদ্দ আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করে দিয়েছেন।[১৩]
--------
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَرَأَيْتُمْ لَوْ أَنَّ نَهْرًا بِبَابِ أَحَدِكُمْ يَغْتَسِلُ فِيْهِ كُلَّ يَوْمٍ خَمْسًا هَلْ يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ؟ قَالُوْا لَا يَبْقَى مِنْ دَرَنِهِ شَيْءٌ قَالَ فَذلِكَ مَثَلُ الصَّلَوَاتِ الْخَمْسِ يَمْحُو اللهُ بِهِنَّ الْخَطَايَا
৪৫). আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘আচ্ছা বলত যদি তোমাদের কারো দরজায় একটি নদী থাকে, যাতে সে দৈনিক পাঁচবার গোসল করে, তাহলে কি তার শরীরে কোন ময়লা থাকে? ছাহাবীগণ বললেন, কোন ময়লা থাকবে না। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এরূপ উদাহরণ হচ্ছে পঁঁচ ওয়াক্ত ছালাতের। যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহ গুনাহ সমূহ মুছে দেন’।[১৪]
----------
عَنِ الْحَارِثِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ مَوْلَىْ عُثْمَانَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ جَلَسَ عُثْمَانُ يَوْمًا وَجَلَسْنَا مَعَهُ فَجَاءَهُ الْمُؤَذِّنُ فَدَعَا بِمَاءٍ فِيْ إِنَاءٍ أَظُنُّهُ سَيَكُوْنُ فِيْهِ مُدٌّ فَتَوَضَّأَ ثُمَّ قَالَ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَوَضَّأُ وُضُوْئِيْ هَذَا ثُمَّ قَالَ وَمَنْ تَوَضَّأَ وُضُوْئِيْ ثُمَّ قَامَ فَصَلَّى صَلَاةَ الظُّهْرِ غُفِرَ لَهُ مَا كَانَ بَيْنَهَا وَبَيْنَ الصُّبْحِ ثُمَّ صَلَّى الْعَصْرَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ صَلَاةِ الظُّهْرِ ثُمَّ صَلَّى الْمَغْرِبَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ صَلَاةِ الْعَصْرِ ثُمَّ صَلَّى الْعِشَاءَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ صَلَاةِ الْمَغْرِبِ ثُمَّ لَعَلَّهُ أَنْ يَبِيْتَ يَتَمَرَّغُ لَيْلَتَهُ ثُمَّ إِنْ قَامَ فَتَوَضَّأَ وَصَلَّى الصُّبْحَ غُفِرَ لَهُ مَا بَيْنَهَا وَبَيْنَ صَلَاةِ الْعِشَاءِ وَهُنَّ الْحَسَنَاتُ يُذْهِبْنَ السَّيِّئَاتِ قَالُوْا هَذِهِ الْحَسَنَاتُ فَمَا الْبَاقِيَاتُ يَا عُثْمَانُ؟ قَالَ هُنَّ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَسُبْحَانَ اللهِ وَالْحَمْدُ لِلهِ وَاللهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِالله
৪৬). ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর মুক্ত দাস হারেছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন ওছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বসে ছিলেন, আমরাও তাঁর সাথে বসেছিলাম। তখন তাঁর কাছে ঘোষণাকারী এল। তিনি এমন একটি পাত্রে করে পানি আনতে বললেন, যাতে আমার মনে হয়, এক মুদ পরিমাণ থাকতে পারে। অতঃপর তিনি ওযূ করলেন, তারপর বললেন, আমি যে রকম ওযূ করলাম, ঠিক এ রকম ওযূ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে করতে দেখেছি। ওযূ করে তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার এই ওযূর মত ওযূ করবে, তারপর দাঁড়িয়ে যোহরের ছালাত পড়বে, তার ফযর ও যোহরের মাঝখানে সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। তারপর (একই রকম ওযূ করে) আছরের ছালাত পড়লে তার যোহর ও আছরের মাঝখানের সমস্ত গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। তারপর মাগরিবের ছালাত পড়লে তার মাগরিব ও আছরের মাঝখানের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। তারপর এশার ছালাত পড়লে তার মাগরিব ও ইশার মাঝখানের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। তারপর হয়তো সে রাত্রে মুখ দিয়ে প্রচুর লালা ঝরাবে। তারপর যদি সে ঘুম থেকে উঠে ওযূ করে ও ফজরের ছালাত পড়ে, তার এশা ও ফজরের মাঝখানের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। এগুলো (ওযূ ও ছালাত) সৎকাজ, যা খারাপ কাজকে নষ্ট করে দেয়। লোকেরা বলল, (বুঝলাম) এগুলো সৎকাজ। তাহলে হে ওছমান, স্থায়ী কাজগুলো কী কী? তিনি বললেন, লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ। সুবহা-নাল্লা-হ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ (অর্থাৎ ছালাত শেষে নিয়মিত এ তাসবীহগুলো পাঠ করা)।[১৫]
-----------
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ تَحْتَرِقُوْنَ تَحْتَرِقُوْنَ فَإِذَا صَلَّيْتُمُ الْفَجْرَ غَسَلَتْهَا ثُمَّ تَحْتَرِقُوْنَ تَحْتَرِقُوْنَ فَإِذَا صَلَّيْتُمُ الظُّهْرَ غَسَلَتْهَا ثُمَّ تَحْتَرِقُوْنَ تَحْتَرِقُوْنَ فَإِذَا صَلَّيْتُمُ الْعَصْرَ غَسَلَتْهَا ثُمَّ تَحْتَرِقُوْنَ تَحْتَرِقُوْنَ فَإِذَا صَلَّيْتُمُ الْمَغْرِبَ غَسَلَتْهَا ثُمَّ تَحْتَرِقُوْنَ تَحْتَرِقُوْنَ فَإِذَا صَلَّيْتُمُ الْعِشَاءَ غَسَلَتْهَا ثُمَّ تَنَامُوْنَ فَلَا يُكْتَبُ عَلَيْكُمْ حَتَّى تَسْتَيْقِظُوْا
৪৭). আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তোমরা যে পাপ সংঘটিত করছ, যখন ফজরের ছালাত আদায় কর, তা পাপকে ধুয়ে-মুছে দেয়। আবার পাপ করতে থাক, অতঃপর যখন যোহরের ছালাত আদায় কর, তা পাপকে ধুয়ে-মুছে দেয়। তোমরা পাপ করতে থাক, অতঃপর যখন আছরের ছালাত আদায় কর, তা পাপকে ধুয়ে-মুছে দেয়। আবার তোমরা পাপ করতে থাক, অতঃপর যখন মাগরিবের ছালাত আদায় কর, তা পাপকে ধুয়ে-মুছে দেয়। আবার তোমরা পাপ করতে থাক, অতঃপর যখন এশার ছালাত আদায় কর, তা পাপকে ধুয়ে-মুছে দেয়। এরপর তোমরা ঘুমিয়ে পড়লে, জাগ্রত না হওয়া পর্যন্ত আর কোন পাপ লিখা হয় না’।[১৬]
-----------
ফরয ও আছরের ছালাত সময়মত আদায়ের ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন,
فَاصۡبِرۡ عَلٰی مَا یَقُوۡلُوۡنَ وَ سَبِّحۡ بِحَمۡدِ رَبِّکَ قَبۡلَ طُلُوۡعِ الشَّمۡسِ وَ قَبۡلَ الۡغُرُوۡبِ
‘অতএব এরা যা বলে তাতে আপনি ধৈর্যধারণ করুন এবং সূর্য উদয়ের পূর্বে ও অস্তমিত হওয়ার পূর্বে আপনি আপনার রবের প্রশংসাসহ তাসবীহ পাঠ করুন’ (সূরা ক্বাফ : ৩৯)। মহান আল্লাহ বলেন,
فَقَالَ اِنِّیۡۤ اَحۡبَبۡتُ حُبَّ الۡخَیۡرِ عَنۡ ذِکۡرِ رَبِّیۡ ۚ حَتّٰی تَوَارَتۡ بِالۡحِجَابِ
‘তখন সে বলল, ‘আমি তো আমার রবের স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে ঐশ্বর্যের প্রেমে মগ্ন হয়ে পড়েছি, এদিকে সূর্য পর্দার আড়ালে চলে গেছে’ (সূরা ছোয়াদ : ৩২)। মহান আল্লাহ বলেন,
حٰفِظُوۡا عَلَی الصَّلَوٰتِ وَ الصَّلٰوۃِ الۡوُسۡطٰی ٭ وَ قُوۡمُوۡا لِلّٰہِ قٰنِتِیۡنَ
‘তোমরা ছালাতসমূহ ও মধ্যবর্তী ছালাতের হেফাযত কর এবং আল্লাহর জন্য দাঁড়াও বিনীত হয়ে’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৩৮)। মহান আল্লাহ বলেন,
اَقِمِ الصَّلٰوۃَ لِدُلُوۡکِ الشَّمۡسِ اِلٰی غَسَقِ الَّیۡلِ وَ قُرۡاٰنَ الۡفَجۡرِ ؕ اِنَّ قُرۡاٰنَ الۡفَجۡرِ کَانَ مَشۡہُوۡدًا
‘সূর্য হেলে পড়ার সময় থেকে রাতের অন্ধকার পর্যন্ত ছালাত কায়েম কর এবং ফজরের কুরআন। নিশ্চয় ফজরের কুরআন (ফেরেশতাদের) উপস্থিতির সময়’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৭৮)।
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
তথ্যসূত্র :
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/১৪৫৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৮; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬; মিশকাত, হা/৪।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৮।
[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৩১।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/১৬০; ছহীহ মুসলিম, হা/২২৭।
[৬]. আবূ দাউদ, হা/১৪২০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭২০; নাসাঈ, হা/৪৬১; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/১৭৩২, সনদ ছহীহ।
[৭]. আবূ দাউদ, হা/৪২৯, সনন হাসান; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৪৫।
[৮]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৩৪৩৮; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/২২১২; বাযযার, হা/২৫, সনদ ছহীহ।
[৯]. ত্বাবারানী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/৬১২৫, সনদ ছহীহ; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৩৪০২।
[১০]. তিরমিযী, হা/৩২৩৪, সনদ ছহীহ।
[১১]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/২০৪৬; সনদ ছহীহ।
[১২]. মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৬।
[১৩]. ছহীহ বুখারী, হা/৬৮২৩; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৬৪; মিশকাত, হা/৫৬৭।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৫২৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৬৭; মিশকাত, হা/৫৬৫।
[১৫]. মুসনাদে আহমাদ, হা/৫১৩; আবূ ইয়ালা, হা/১৮৩; মুসনাদে বাযযার, হা/৪০৫, সনদ হাসান।
[১৬]. ত্বাবারানী, ছাগীর, হা/১২১; মু‘জামুল আওসাত, ২২২৪, সনদ ছহীহ।
প্রসঙ্গসমূহ »:
আমল