বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪১ অপরাহ্ন
ফাযায়েলে তাওহীদ
-মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-উবাইলান
-অনুবাদ : আল-ইখলাছ ডেস্ক

আমল ক্ববুল হওয়ার চাবিকাঠি ইখলাছের ফযীলত
মহান আল্লাহ বলেন, وَ مَاۤ اُمِرُوۡۤا اِلَّا لِیَعۡبُدُوا اللّٰہَ مُخۡلِصِیۡنَ لَہُ الدِّیۡنَ حُنَفَآءَ وَ یُقِیۡمُوا الصَّلٰوۃَ وَ یُؤۡتُوا الزَّکٰوۃَ وَ ذٰلِکَ دِیۡنُ الۡقَیِّمَۃِ ‘তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করবে, ছালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন’ (সূরা আল–বাইয়্যিনাহ : ৫)। মহান আল্লাহ বলেন, ہُوَ الۡحَیُّ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ فَادۡعُوۡہُ مُخۡلِصِیۡنَ لَہُ الدِّیۡنَ اَلۡحَمۡدُ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ ‘তিনি চিরঞ্জীব, তিনি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই। অতএব তাঁকে ডাক তাঁর একনিষ্ঠ ইবাদতের মাধ্যমে। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের পালনকর্তা আল্লাহর’ (সূরা আল-মুমিন : ৬৫)। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلۡ اِنِّیۡۤ اُمِرۡتُ اَنۡ اَعۡبُدَ اللّٰہَ مُخۡلِصًا لَّہُ الدِّیۡنَ

‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আমি একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর ইবাদত করতে আদিষ্ট হয়েছি’ (সূরা আয-যুমার : ১১)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اِذَا غَشِیَہُمۡ مَّوۡجٌ کَالظُّلَلِ دَعَوُا اللّٰہَ مُخۡلِصِیۡنَ لَہُ الدِّیۡنَ فَلَمَّا نَجّٰہُمۡ اِلَی الۡبَرِّ فَمِنۡہُمۡ مُّقۡتَصِدٌ وَ مَا یَجۡحَدُ بِاٰیٰتِنَاۤ اِلَّا کُلُّ خَتَّارٍ کَفُوۡرٍ

‘যখন তাদেরকে মেঘমালা সদৃশ তরঙ্গ আচ্ছাদিত করে নেয়, তখন তারা একনিষ্ঠ মনে আল্লাহকে ডাকতে থাকে। অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে স্থলভাগের দিকে উদ্ধার করে আনেন, তখন তাদের কেউ কেউ সরল পথে চলে। কেবল মিথ্যাচারী, অকৃতজ্ঞ ব্যক্তিই আমার নিদর্শনাবলী অস্বীকার করে’ (সূরা লুক্বমান : ৩২)। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلۡ اِنَّ صَلَاتِیۡ وَ نُسُکِیۡ وَ مَحۡیَایَ وَ مَمَاتِیۡ لِلّٰہِ رَبِّ الۡعٰلَمِیۡنَ – لَا شَرِیۡکَ لَہٗ وَ بِذٰلِکَ اُمِرۡتُ وَ اَنَا اَوَّلُ الۡمُسۡلِمِیۡنَ

‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আমার ছালাত, আমার কুরবানী এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যই। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল’ (সূরা আল-আন‘আম : ১৬২-১৬৩)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ لَقَدۡ ہَمَّتۡ بِہٖ وَ ہَمَّ بِہَا لَوۡ لَاۤ اَنۡ رَّاٰ بُرۡہَانَ رَبِّہٖ کَذٰلِکَ لِنَصۡرِفَ عَنۡہُ السُّوۡٓءَ وَ الۡفَحۡشَآءَ اِنَّہٗ مِنۡ عِبَادِنَا الۡمُخۡلَصِیۡنَ

‘নিশ্চয় মহিলা তার বিষয়ে চিন্তা করেছিল এবং সেও মহিলার বিষয়ে চিন্তা করত। যদি না সে স্বীয় পালনকর্তার মহিমা অবলোকন করত। এমনিভাবে হয়েছে, যাতে আমি তার কাছ থেকে মন্দ বিষয় ও লজ্জাহীন বিষয় সরিয়ে দেই। নিশ্চয় সে আমার মনোনীত বান্দাদের একজন’ (সূরা ইউসুফ : ২৪)। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلۡ اِنَّمَاۤ اَنَا بَشَرٌ مِّثۡلُکُمۡ یُوۡحٰۤی اِلَیَّ اَنَّمَاۤ اِلٰـہُکُمۡ اِلٰہٌ وَّاحِدٌ فَمَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّہٖ فَلۡیَعۡمَلۡ عَمَلًا صَالِحًا وَّ لَا یُشۡرِکۡ بِعِبَادَۃِ رَبِّہٖۤ اَحَدًا

‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আমি তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি অহী হয় যে, তোমাদের ইলাহই একমাত্র ইলাহ। অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ১১০)। মহান আল্লাহ বলেন,  الَّذِیۡ خَلَقَ الۡمَوۡتَ وَ الۡحَیٰوۃَ لِیَبۡلُوَکُمۡ اَیُّکُمۡ اَحۡسَنُ عَمَلًا وَ ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡغَفُوۡرُ  ‘যিনি সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়’ (সূরা আল-মুলক : ২)।

عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّمَا الْأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلٰى اللهِ وَرَسُوْلِهِ فَهِجْرَتُه إِلٰى اللهِ وَرَسُوْلِه وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلٰى دُنْيَا يُصِيْبُهَا أَوْ امْرَأَةٍ يَتَزَوَّجُهَا فَهِجْرَتُه إِلٰى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ

ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন যে, প্রত্যেক কাজ নিয়তের উপরই নির্ভরশীল। প্রত্যেকে মানুষের জন্য তাই-ই রয়েছে, যার জন্য সে সংকল্প করেছে। সুতরাং যে ব্যক্তির হিজরত আল্লাহর দিকে এবং তাঁর রাসূলের দিকে হবে, তার হিজরত আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের উদ্দেশ্যেই পরিগণিত হবে। কিন্তু যার হিজরত দুনিয়া লাভের আশায় কিংবা কোন মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে হবে, তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই গণ্য হবে- যার জন্য সে হিজরত করবে।[১]

عَنْ أَبِيْ مُوْسَىْ الأَشْعَرِيِّ رضى الله عنه أَنَّ رَجُلًا أَعْرَابِيًّا أَتَى النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم الرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلْمَغْنَمِ وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِيُذْكَرَ وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِيُرَى مَكَانُهُ فَمَنْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‏ ‏مَنْ قَاتَلَ لِتَكُوْنَ كَلِمَةُ اللهِ أَعْلَى فَهُوَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ.‏

আবূ মূসা আশ‘আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, জনৈক বেদুঈন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করল, হে আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! এক ব্যক্তি গনীমাত লাভের জন্য যুদ্ধ করে, অন্য এক ব্যক্তি স্মরণীয় হওয়ার জন্য, আর এক ব্যক্তি যুদ্ধ করে নিজের উচ্চমর্যাদা প্রদর্শনের জন্য। এগুলার মধ্যে কোন্টি আল্লাহর পথে বলে গণ্য হবে? তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কালিমা সমুন্নত করার উদ্দেশে যুদ্ধ করে সে ব্যক্তিই আল্লাহর পথে (যুদ্ধ করে)’।[২]
সুলায়মান ইবনু ইয়াসার (রাহিমাহুল্লাহ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা লোকজন যখন আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর নিকট থেকে বিদায় নিচ্ছিল, তখন সিরিয়াবাসী নাতিল (রাহিমাহুল্লাহ) বললেন, হে শায়খ! আপনি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট থেকে শুনেছেন এমন একটি হাদীছ আমাদেরকে শুনান। তিনি বলেন, হ্যাঁ! (শুনাবো)। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, ক্বিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হচ্ছে এমন একজন যে শহীদ হয়েছিল। তাঁকে উপস্থিত করা হবে এবং আল্লাহ তাঁর নে‘মতরাশির কথা তাকে বলবেন এবং সে তার সবটাই চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে।) তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এর বিনিময়ে‌ ‘কী আমল করেছিলে? সে বলবে, আমি আপনারই পথে যুদ্ধ করেছি এমনকি শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি বরং এ জন্যই যুদ্ধ করেছিলে, যাতে লোকে তোমাকে বলে, তুমি বীর; আর তা বলাও হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে। সে মতে তাকে উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার করা হবে, যে জ্ঞান অর্জন করেছে ও বিতরণ করেছে এবং কুরআন মাজীদ অধ্যয়ন করেছে। তখন তাকে হাযির করা হবে। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রদত্ত নে‘মতের কথা তাকে বলবেন এবং সে তা চিনতে পারবে (এবং যথারীতি তার স্বীকারোক্তিও করবে)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, এত বড় নে‘মত পেয়ে বিনিময়ে তুমি কী করলে? জবাবে সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি এবং তা শিক্ষা দিয়েছি এবং আপনারই সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে কুরআন অধ্যয়ন করেছি। জবাবে আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি তো জ্ঞান অর্জন করেছিলে এজন্য যে, যাতে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলে। কুরআন তেলাওয়াত করেছিলে এ জন্য যাতে লোকে বলে, তুমি একজন ক্বারী; আর তা বলাও হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে, সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

তারপর এমন এক ব্যক্তির বিচার হবে, যাকে আল্লাহ তা‘আলা সচ্ছলতা এবং সর্ববিধ বিত্ত-বৈভব দান করেছেন। তাকে উপস্থিত করা হবে এবং তাকে প্রদত্ত নে‘মতসমূহের কথা তাকে বলবেন। সে তা চিনতে পারবে (স্বীকারোক্তিও করবে)। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, ‘এসব নে‘মতের বিনিময়ে তুমি কী আমল করেছ? জবাবে সে বলবে, সম্পদ ব্যয়ের এমন কোন খাত নেই, যাতে সম্পদ ব্যয় করা আপনি পসন্দ করেন, আমি সে খাতে আপনার সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করেছি। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি বরং এ জন্য তা করেছিলে যে, যাতে লোকে তোমাকে ‘দানবীর’ বলে অভিহিত করে; আর তা বলাও হয়েছে। তারপর নির্দেশ দেয়া হবে। সে মতে তাকেও উপুড় করে হেঁচড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে এবং জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে’।[৩]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‏قَالَ اللهُ تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَا أَغْنَى الشُّرَكَاءِ عَنِ الشِّرْكِ مَنْ عَمِلَ عَمَلًا أَشْرَكَ فِيْهِ مَعِيْ غَيْرِيْ تَرَكْتُهُ وَشِرْكَهُ‏

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, মহান আল্লাহ বলেন, আমি শরীকদের শিরক হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। যদি কোন লোক কোন কাজ করে এবং এতে আমি ছাড়া অপর কাউকে শরীক করে, তবে আমি তাকে ও তার শিরকী কাজকে প্রত্যাখ্যান করি।[৪]
আব্দুর রহমান ইবনু আবান ইবনু ওছমান (রাহিমাহুল্লাহ) তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন, যায়েদ ইবনু ছাবিত (রাযিয়াল্লাহু আনহু) মারওয়ানের কাছ থেকে যখন বের হলেন, তখন তাকে বলা হল, সম্ভবতঃ কোন ব্যাপারে প্রশ্ন করার জন্যই এ সময়ে মারওয়ান আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তিনি বললেন, হ্যাঁ, তিনি আমার কাছে কয়েকটি কথা জিজ্ঞেস করেছেন, যা আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট শুনেছি। আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ তা‘আলা সেই ব্যক্তির চেহারা আনন্দ-উজ্জ্বল করুন, যে আমার কোন কথা শুনেছে, তারপর তা সঠিকভাবে মনে রেখেছে এবং সেভাবেই অন্যের নিকট পৌঁছে দিয়েছে।

অনেক জ্ঞানের বাহক এমন রয়েছে, যারা নিজেরাই জ্ঞানী নয়। অনেক জ্ঞানের বাহক যার নিকট জ্ঞান বহন করে নিয়ে যান তিনি তার (বাহকের) চাইতে বেশি বুদ্ধিমান হতে পারেন। যারা নিজেদের তুলনায় উচ্চতর জ্ঞানের অধিকারীর নিকট জ্ঞান পৌঁছে দিতে পারে। মুমিনের অন্তর তিনটি বিষয়ে খেয়ানত (অবহেলা) করতে পারে না। আল্লাহর জন্য নিষ্ঠাপূর্ণ আমল, মুসলিমদের নেতৃবর্গকে সদুপদেশ দান এবং মুসলিম জামা‘আত অবলম্বন। কেননা দাওয়াত তাদের পশ্চাৎকেও পরিবেষ্টন করে।[৫]

عَنِ ابْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ الْأَنْصَارِيِّ رضى الله عنه عَنْ أَبِيْهِ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‏ ‏مَا ذِئْبَانِ جَائِعَانِ أُرْسِلَا فِيْ غَنَمٍ بِأَفْسَدَ لَهَا مِنْ حِرْصِ الْمَرْءِ عَلَى الْمَالِ وَالشَّرَفِ لِدِيْنِهِ‏.‏

কা‘ব ইবনু মালিক আল-আনছারী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, দু’টি ক্ষুধার্ত নেকড়ে বাঘকে ছাগলের পালে ছেড়ে দেয়া হলে পরে তা যতটুকু না ক্ষতিসাধন করে, কারো সম্পদ ও প্রতিপত্তির লোভ এর চেয়ে বেশি ক্ষতিসাধন করে তার দ্বীনের।[৬]

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رضى الله عنه عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ تَعِسَ عَبْدُ الدِّيْنَارِ وَعَبْدُ الدِّرْهَمِ وَعَبْدُ الخَمِيْصَةِ إِنْ أُعْطِيَ رَضِيَ وَإِنْ لَمْ يُعْطَ سَخِطَ تَعِسَ وَانْتَكَسَ وَإِذَا شِيْكَ فَلَا انْتَقَشَ طُوْبَى لِعَبْدٍ آخِذٍ بِعِنَانِ فَرَسِهِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَشْعَثَ رَأْسُهُ مُغْبَرَّةٍ قَدَمَاهُ إِنْ كَانَ فِي الحِرَاسَةِ كَانَ فِي الحِرَاسَةِ وَإِنْ كَانَ فِي السَّاقَةِ كَانَ فِي السَّاقَةِ إِنِ اسْتَأْذَنَ لَمْ يُؤْذَنْ لَهُ وَإِنْ شَفَعَ لَمْ يُشَفَّعْ

আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, লাঞ্ছিত হোক দীনারের গোলাম, দিরহামের গোলাম এবং শালের গোলাম। তাকে দেয়া হলে সন্তুষ্ট হয়, না দেয়া হলে অসন্তুষ্ট হয়। এরা লাঞ্ছিত হোক, অপমানিত হোক। (তাদের পায়ে) কাঁটা বিদ্ধ হলে তা কেউ তুলে দিবে না। ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যে ঘোড়ার লাগাম ধরে জিহাদের জন্য প্রস্তুত রয়েছে, যার চুল উস্কুখুস্কু এবং পা ধূলিমলিন। তাকে পাহারায় নিয়োজিত করলে পাহারায় থাকে আর (দলের) পেছনে পেছনে রাখলে পেছনেই থাকে। সে কারো সাক্ষাতের অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেয়া হয় না এবং কোন বিষয়ে সুপারিশ করলে তার সুপারিশ কবুল করা হয় না’।[৭]
শিরক থেকে মুক্ত থাকার ফযীলত, নিশ্চয় তা জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের বড় কারণ

মহান আল্লাহ বলেন,

وَ اتَّبَعۡتُ مِلَّۃَ اٰبَآءِیۡۤ اِبۡرٰہِیۡمَ وَ اِسۡحٰقَ وَ یَعۡقُوۡبَ مَا کَانَ لَنَاۤ اَنۡ نُّشۡرِکَ بِاللّٰہِ مِنۡ شَیۡءٍ ذٰلِکَ مِنۡ فَضۡلِ اللّٰہِ عَلَیۡنَا وَ عَلَی النَّاسِ وَ لٰکِنَّ اَکۡثَرَ النَّاسِ لَا یَشۡکُرُوۡنَ

‘আমি আপন পিতৃপুরুষ ইবরাহীম, ইসহাক ও ইয়াকূবের দ্বীন অনুসরণ করছি। আমাদের জন্য শোভা পায় না যে, কোন বস্তুকে আল্লাহর অংশীদার করি। এটা আমাদের প্রতি এবং অন্য সব লোকের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ। কিন্তু অধিকাংশ লোক অনুগ্রহ স্বীকার করে না’ (সূরা ইউসুফ : ৩৮)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

ذٰلِکُمۡ بِاَنَّہٗۤ اِذَا دُعِیَ اللّٰہُ وَحۡدَہٗ کَفَرۡتُمۡ وَ اِنۡ یُّشۡرَکۡ بِہٖ تُؤۡمِنُوۡا فَالۡحُکۡمُ لِلّٰہِ الۡعَلِیِّ الۡکَبِیۡرِ

‘তোমাদের এ বিপদ এ কারণে যে, যখন এক আল্লাহকে ডাকা হত, তখন তোমরা কাফের হয়ে যেতে। আর যখন তার সাথে শরীককে ডাকা হত তখন তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করতে। এখন আদেশ তাই, যা আল্লাহ করবেন, যিনি সর্বোচ্চ, মহান’ (সূরা আল-মুমিন : ১২)। আল্লাহ বলেন,

وَ اِذَا ذُکِرَ اللّٰہُ وَحۡدَہُ اشۡمَاَزَّتۡ قُلُوۡبُ الَّذِیۡنَ لَا یُؤۡمِنُوۡنَ بِالۡاٰخِرَۃِ وَ اِذَا ذُکِرَ الَّذِیۡنَ مِنۡ دُوۡنِہٖۤ اِذَا ہُمۡ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ

‘যখন খাঁটিভাবে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন যারা পরকালে বিশ্বাস করে না, তাদের অন্তর সংকুচিত হয়ে যায়, আর যখন আল্লাহ ব্যতীত অন্য উপাস্যদের নাম উচ্চারণ করা হয়, তখন তারা আনন্দে উল্লসিত হয়ে উঠে’ (সূরা আয-যুমার : ৪৫)। মহান আল্লাহ বলেন,

وَ مَنۡ یَّدۡعُ مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ لَا بُرۡہَانَ لَہٗ بِہٖ فَاِنَّمَا حِسَابُہٗ عِنۡدَ رَبِّہٖ اِنَّہٗ لَا یُفۡلِحُ الۡکٰفِرُوۡنَ

‘যে কেউ আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, তার কাছে যার দলীল নেই, তার হিসাব তার পালনকর্তার কাছে আছে। নিশ্চয় কাফেররা সফলকাম হবে না’ (সূরা আল-মুমিনূন : ১১৭)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

لَقَدۡ کَفَرَ الَّذِیۡنَ قَالُوۡۤا اِنَّ اللّٰہَ ہُوَ الۡمَسِیۡحُ ابۡنُ مَرۡیَمَ وَ قَالَ الۡمَسِیۡحُ یٰبَنِیۡۤ اِسۡرَآءِیۡلَ اعۡبُدُوا اللّٰہَ رَبِّیۡ وَ رَبَّکُمۡ اِنَّہٗ مَنۡ یُّشۡرِکۡ بِاللّٰہِ فَقَدۡ حَرَّمَ اللّٰہُ عَلَیۡہِ الۡجَنَّۃَ وَ مَاۡوٰىہُ النَّارُ وَ مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ

‘তারা কাফের, যারা বলে যে, মারইমায়-তনয় মসীহ-ই আল্লাহ; অথচ মসীহ বলেন, হে বনী-ইসরাঈল! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, যিনি আমার পালনকর্তা এবং তোমাদেরও পালনকর্তা। নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ৭২)। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلِ ادۡعُوا الَّذِیۡنَ زَعَمۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِہٖ فَلَا یَمۡلِکُوۡنَ کَشۡفَ الضُّرِّ عَنۡکُمۡ وَ لَا تَحۡوِیۡلًا – اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ یَبۡتَغُوۡنَ اِلٰی رَبِّہِمُ الۡوَسِیۡلَۃَ اَیُّہُمۡ اَقۡرَبُ وَ یَرۡجُوۡنَ رَحۡمَتَہٗ وَ یَخَافُوۡنَ عَذَابَہٗ ؕ اِنَّ عَذَابَ رَبِّکَ کَانَ مَحۡذُوۡرًا

‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আল্লাহ ব্যতীত যাদেরকে তোমরা উপাস্য মনে কর, তাদেরকে আহ্বান কর। অথচ ওরা তো তোমাদের কষ্ট দূর করার ক্ষমতা রাখে না এবং তা পরিবর্তনও করতে পারে না। যাদেরকে তারা আহ্বান করে, তারা নিজেরাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য মধ্যস্থ তালাশ করে যে, তাদের মধ্যে কে নৈকট্যশীল। তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার শাস্তি ভয়াবহ’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ৫৬-৫৭)। মহান আল্লাহ বলেন,

لَہٗ دَعۡوَۃُ الۡحَقِّ وَ الَّذِیۡنَ یَدۡعُوۡنَ مِنۡ دُوۡنِہٖ لَا یَسۡتَجِیۡبُوۡنَ لَہُمۡ بِشَیۡءٍ اِلَّا کَبَاسِطِ کَفَّیۡہِ اِلَی الۡمَآءِ لِیَبۡلُغَ فَاہُ وَ مَا ہُوَ بِبَالِغِہٖ وَ مَا دُعَآءُ الۡکٰفِرِیۡنَ اِلَّا فِیۡ ضَلٰلٍ

‘সত্যের আহ্বান একমাত্র তাঁরই এবং তাঁকে ছাড়া যাদেরকে ডাকে, তারা তাদের কোন কাজে আসে না; ওদের দৃষ্টান্ত সেরূপ, যেমন কেউ দু’হাত পানির দিকে প্রসারিত করে যাতে পানি তার মুখে পৌঁছে যায়। অথচ পানি কোন সময় পৌঁছাবে না। কাফেরদের যত আহ্বান তার সবই পথভ্রষ্টতা’ (সূরা আর-রা‘দ : ১৪)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

قُلۡ مَنۡ رَّبُّ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ قُلِ اللّٰہُ قُلۡ اَفَاتَّخَذۡتُمۡ مِّنۡ دُوۡنِہٖۤ اَوۡلِیَآءَ لَا یَمۡلِکُوۡنَ لِاَنۡفُسِہِمۡ نَفۡعًا وَّ لَا ضَرًّا قُلۡ ہَلۡ یَسۡتَوِی الۡاَعۡمٰی وَ الۡبَصِیۡرُ اَمۡ ہَلۡ تَسۡتَوِی الظُّلُمٰتُ وَ النُّوۡرُۚ اَمۡ جَعَلُوۡا لِلّٰہِ شُرَکَآءَ خَلَقُوۡا کَخَلۡقِہٖ فَتَشَابَہَ الۡخَلۡقُ عَلَیۡہِمۡ قُلِ اللّٰہُ خَالِقُ کُلِّ شَیۡءٍ وَّ ہُوَ الۡوَاحِدُ الۡقَہَّارُ

‘জিজ্ঞেস করুন নভোম-ল ও ভূম-লের পালনকর্তা কে? বলে দিন, আল্লাহ! বলুন, তবে কি তোমরা আল্লাহ ব্যতীত এমন অভিভাবক স্থির করেছ, যারা নিজেদের ভাল-মন্দেরও মালিক নয়? বলুন, অন্ধ চক্ষুষ্মান কি সমান হয়? অথবা কোথাও কি অন্ধকার ও আলো সমান হয়। তবে কি তারা আল্লাহর জন্য এমন অংশীদার স্থির করেছে যে, তারা কিছু সৃষ্টি করেছে, যেমন সৃষ্টি করেছেন অল্লাহ? অতঃপর তাদের সৃষ্টি এরূপ বিভ্রান্তি ঘটিয়েছে? বলুন, আল্লাহই প্রত্যেক বস্তুর ¯্রষ্টা এবং তিনি একক, পরাক্রমশালী’ (সূরা আর-রা‘দ : ১৬)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

اَمِ اتَّخَذُوۡا مِنۡ دُوۡنِ اللّٰہِ شُفَعَآءَ قُلۡ اَوَ لَوۡ کَانُوۡا لَا یَمۡلِکُوۡنَ شَیۡئًا وَّ لَا یَعۡقِلُوۡنَ – قُلۡ لِّلّٰہِ الشَّفَاعَۃُ جَمِیۡعًا لَہٗ مُلۡکُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضِ ثُمَّ اِلَیۡہِ تُرۡجَعُوۡنَ

‘তারা কি আল্লাহ ব্যতীত সুপারিশকারী গ্রহণ করেছে? (হে নবী!) আপনি বলুন, তাদের কোন এখতিয়ার না থাকলেও এবং তারা না বুঝলেও? ‘বলুন, সমস্ত সুপারিশ আল্লাহরই ক্ষমতাধীন, আসমান ও যমীনে তাঁরই সাম্রাজ্য। অতঃপর তাঁরই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে’ (সূরা আয-যুমার : ৪৩-৪৪)। মহান আল্লাহ বলেন,

اِنۡ تَدۡعُوۡہُمۡ لَا یَسۡمَعُوۡا دُعَآءَکُمۡ وَ لَوۡ سَمِعُوۡا مَا اسۡتَجَابُوۡا لَکُمۡ وَ یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ یَکۡفُرُوۡنَ بِشِرۡکِکُمۡ وَ لَا یُنَبِّئُکَ مِثۡلُ خَبِیۡرٍ

‘তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। ক্বিয়ামতের দিন তারা তোমাদের শিরক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহর ন্যায় তোমাকে কেউ অবহিত করতে পারবে না’ (সূরা আল-ফাতির : ১৪)। আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন, اِنَّہُمۡ اِنۡ یَّظۡہَرُوۡا عَلَیۡکُمۡ یَرۡجُمُوۡکُمۡ اَوۡ یُعِیۡدُوۡکُمۡ فِیۡ مِلَّتِہِمۡ وَ لَنۡ تُفۡلِحُوۡۤا اِذًا اَبَدًا  ‘তারা যদি তোমাদের খবর জানতে পারে, তবে পাথর মেরে তোমাদেরকে হত্যা করবে, অথবা তোমাদেরকে তাদের ধর্মে ফিরিয়ে নেবে। তাহলে তোমরা কখনই সাফল্য লাভ করবে না’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ২০)।

মহান আল্লাহ বলেন, وَّ اَنَّ الۡمَسٰجِدَ لِلّٰہِ فَلَا تَدۡعُوۡا مَعَ اللّٰہِ اَحَدًا  ‘নিশ্চয় মসজিদসমূহ আল্লাহ তা‘আলা। অতএব তোমরা আল্লাহ তা‘আলার সাথে কাউকে ডেকো না’ (সূরা আল-জিন : ১৮)।

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ رضى الله عنه قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ مَنْ لَقِيَ اللهَ لَا يُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا دَخَلَ الْجَنَّةَ وَمَنْ لَقِيَهُ يُشْرِكُ بِهِ دَخَلَ النَّارَ

জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে কাউকেও শরীক না করে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তার সম্মুখে উপস্থিত হবে এমন অবস্থায় যে, সে আল্লাহর সাথে শরীক স্থির করে, তাহলে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে’।[৮]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ نَاسًا مِنْ أَهْلِ الشِّرْكِ كَانُوْا قَدْ قَتَلُوْا وَأَكْثَرُوْا وَزَنَوْا وَأَكْثَرُوْا فَأَتَوْا صلى الله عليه وسلم فَقَالُوْا إِنَّ الَّذِيْ تَقُوْلُ وَتَدْعُوْ إِلَيْهِ لَحَسَنٌ لَوْ تُخْبِرُنَا أَنَّ لِمَا عَمِلْنَا كَفَّارَةً فَنَزَلَ {وَ الَّذِیۡنَ لَا یَدۡعُوۡنَ مَعَ اللّٰہِ اِلٰـہًا اٰخَرَ وَ لَا یَقۡتُلُوۡنَ النَّفۡسَ الَّتِیۡ حَرَّمَ اللّٰہُ اِلَّا بِالۡحَقِّ وَ لَا یَزۡنُوۡنَ} [الفرقان: ৬৮] وَنَزَلَتْ { قُلۡ یٰعِبَادِیَ الَّذِیۡنَ اَسۡرَفُوۡا عَلٰۤی اَنۡفُسِہِمۡ لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰہِ} [الزمر: ৫৩].

ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, মুশরিকদের কিছু লোক বহু হত্যা করে এবং বেশি বেশি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়। তারপর তারা মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এলো এবং বলল, আপনি যা বলেন এবং আপনি যেদিকে আহ্বান করেন, তা অতি উত্তম। আমাদের যদি অবগত করতেন, আমরা যা করেছি, তার কাফ্ফারা কী? এর প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয় ‘এবং যারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন ইলাহকে ডাকে না, আল্লাহ যাকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন, তাকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার করে না’ (সূরা আল-ফুরকান : ৬৮)। আরো অবতীর্ণ হল, ‘হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের প্রতি অন্যায় করে ফেলেছ, আল্লাহ্র অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না’ (সূরা আয-যুমার : ৫৩)।[৯]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا أَنَّ رَجُلًا قَالَ لِلنَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مَا شَاءَ اللهُ وَشِئْتَ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَجَعَلْتَنِيْ وَاللهَ عَدْلًا بَلْ مَا شَاءَ اللهُ وَحْدَهُ.
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে উদ্দেশ্য করে বলল, আল্লাহ এবং আপনি যা চান। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেন, তুমি কি আমাকে আল্লাহ তা‘আলার সমকক্ষ সাব্যস্ত করতে চাচ্ছো? বরং (তুমি বলো) একমাত্র মহান আল্লাহ যা চান’।[১০]
عَنِ عِمْرَانُ بْنُ حُصَيْنٍ رضى الله عنه أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَبْصَرَ عَلَى عَضُدِ رَجُلٍ حَلْقَةً أُرَاهُ قَالَ مِنْ صُفْرٍ فَقَالَ وَيْحَكَ مَا هَذِهِ؟ قَالَ مِنَ الْوَاهِنَةِ؟ قَالَ أَمَا إِنَّهَا لَا تَزِيْدُكَ إِلَّا وَهْنًا انْبِذْهَا عَنْكَ فَإِنَّكَ لَوْ مِتَّ وَهِيَ عَلَيْكَ مَا أَفْلَحْتَ أَبَدًا.
ইমরান ইবনু হুছাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) আমার কাছে এমর্মে সংবাদ দিয়েছেন যে, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ব্যক্তির হাতে তামার আংটির দেখে বললেন, ‘ধ্বংস তোমার, এটা কী? সে বলল, অহিনা অর্থাৎ এক প্রকার হাড়, যার অংশ বিশেষ তাবীযে ব্যবহার করা হয়। তিনি বললেন, মনে রেখ! এটা তোমার দুর্বলতা ব্যতীত কিছুই বৃদ্ধি করবে না, এটা তোমার থেকে ছুড়ে মার, কারণ তুমি যদি মারা যাও আর এটা তোমার উপর থাকে, তুমি কখনো সফল হবে না’।[১১]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)

[১]. ছহীহ বুখারী, হা/১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০৭; মিশকাত, হা/১।

[২]. ছহীহ বুখারী, হা/১২৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০৪; ইবনে মাজাহ, হা/২৭৮৩।

[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০৫; মিশকাত, হা/২০৫।

[৪]. ছহীহ মুসলিম, হা/২৯৮৫; মিশকাত, হা/৫৩১৫।

[৫]. মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৬৩০; ছহীহ ইবনু হিব্বান হা/৬৭, সনদ ছহীহ।

[৬]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৮২২; তিরমিযী, হা/২৩৭৬; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৩২২৮; মিশকাত, হা/৫১৮১, সনদ ছহীহ।

[৭]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮৮৭; মিশকাত, হা/৫১৬১।

[৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৯৩।

[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৮১০; ছহীহ মুসলিম, হা/১২২।

[১০]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৮৩৯, সনদ হাসান।

[১১]. ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬০৮৫।




প্রসঙ্গসমূহ »: তাওহীদ আমল
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৪তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৫ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : বিবাহ ও এ সংক্রান্ত বিষয়াদীর ফযীলত - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছাদাক্বাহ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : আহার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল: ফাযায়েলে তাওহীদ (৭ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে জিহাদ (শেষ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (২য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৪র্থ কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে রামাযান - মুহাম্মাদ আবূ সাঈদ
ফাযায়েলে আমল : ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৫তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ