শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন

ফাযায়েলে জিহাদ

- মূল : শায়খ আব্দুল্লাহ ইবনু ছালিহ আল-‘উবাইলান
- অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ*


একনিষ্ঠচিত্তে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার ফযীলত

মহান আল্লাহ বলেন,

اِنَّ اللّٰہَ اشۡتَرٰی مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ اَنۡفُسَہُمۡ وَ اَمۡوَالَہُمۡ بِاَنَّ لَہُمُ الۡجَنَّۃَ ؕ یُقَاتِلُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ فَیَقۡتُلُوۡنَ وَ یُقۡتَلُوۡنَ وَعۡدًا عَلَیۡہِ حَقًّا فِی التَّوۡرٰىۃِ وَ الۡاِنۡجِیۡلِ وَ الۡقُرۡاٰنِ وَ مَنۡ اَوۡفٰی بِعَہۡدِہٖ مِنَ اللّٰہِ فَاسۡتَبۡشِرُوۡا بِبَیۡعِکُمُ الَّذِیۡ بَایَعۡتُمۡ بِہٖ وَ  ذٰلِکَ ہُوَ الۡفَوۡزُ  الۡعَظِیۡمُ

‘নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের থেকে তাদের জান ও মাল ক্রয় করে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে লড়াই করে। অতএব তারা মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে এ সম্পর্কে সত্য ওয়াদা রয়েছে। আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক কে হতে পারে? সুতরাং তোমরা (আল্লাহর সঙ্গে) যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং সেটাই মহাসাফল্য’ (সূরা আত-তওবাহ : ১১১)। মহান আল্লাহ বলেন,

یٰۤاَیُّہَا  الَّذِیۡنَ  اٰمَنُوۡا ہَلۡ اَدُلُّکُمۡ عَلٰی تِجَارَۃٍ  تُنۡجِیۡکُمۡ مِّنۡ عَذَابٍ اَلِیۡمٍ - تُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ تُجَاہِدُوۡنَ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ  بِاَمۡوَالِکُمۡ وَ اَنۡفُسِکُمۡ ذٰلِکُمۡ  خَیۡرٌ  لَّکُمۡ  اِنۡ کُنۡتُمۡ  تَعۡلَمُوۡنَ

‘হে ঈমানদারগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসায়ের সন্ধান দেব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক আযাব থেকে রক্ষা করবে? তোমরা আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে’ (সূরা আছ-ছফ্ফ : ১০-১১)। মহান আল্লাহ বলেন,

قُلۡ اِنَّمَاۤ  اَنَا بَشَرٌ  مِّثۡلُکُمۡ  یُوۡحٰۤی  اِلَیَّ اَنَّمَاۤ  اِلٰـہُکُمۡ  اِلٰہٌ  وَّاحِدٌ فَمَنۡ کَانَ یَرۡجُوۡا لِقَآءَ رَبِّہٖ فَلۡیَعۡمَلۡ عَمَلًا صَالِحًا وَّ لَا یُشۡرِکۡ بِعِبَادَۃِ  رَبِّہٖۤ  اَحَدًا

‘বলুন, আমিও তোমাদের মতই একজন মানুষ, আমার প্রতি প্রত্যাদেশ হয় যে, তোমাদের ইলাহই একক ইলাহ। অতএব, যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন, সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ১১০)।

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ سُئِلَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ أَيُّ الْعَمَلِ أَفْضَلُ؟ قَالَ إِيْمَانٌ بِاللهِ  وَرَسُوْلِهِ قِيْلَ ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ أَلْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ قِيْلَ  ثُمَّ مَاذَا؟ قَالَ حَجٌّ مَبْرُوْرٌ

১. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল সর্বশ্রেষ্ঠ আমল কোন্টি? তিনি বললেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। অতঃপর জিজ্ঞেস করা হল তারপর কী? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা। পুনরায় জিজ্ঞেস করা হল, তারপর কী? তিনি বললেন, কবুলযোগ্য হজ্জ।[১]
----
وَعَنْ أبيْ مُوْسَى رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَجُلًا أَعْرَابِيًّا أَتَى النَّبِيَّ ﷺ فَقَالَ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ! الرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِلْمَغْنَمِ وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِيُذْكَرَ وَالرَّجُلُ يُقَاتِلُ لِيُرَى مَكَانُهُ فَمَنْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ؟ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ مَنْ قَاتَلَ لِتَكُوْنَ كَلِمَةُ اللهِ هِيَ الْعُلْيَا فَهُوَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ

২. আবূ মূসা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, এক বেদুইন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! এক লোক গনীমতের সম্পদ পাওয়ার আশায় যুদ্ধ করে, আরেক লোক খ্যাতি বা প্রসিদ্ধির জন্য যুদ্ধ করে এবং আরেক লোক বীরত্ব প্রদর্শনের জন্য যুদ্ধ করে। তাদের মধ্যে কে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে? নবী করীম (ﷺ) বললেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে সেই আল্লাহর পথে জিহাদকারী।[২]
---
وَعَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ الْخُدْرِيِّ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَتَى رَجُلٌ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَقَالَ أَيُّ النَّاسِ أَفْضَلُ؟ قَالَ مُؤْمِنٌ يُجَاهِدُ بِنَفْسِهِ وَبِمَالِهِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ تَعَالَى قَالَ ثُمَّ مَنْ؟ قَالَ ثُمَّ مُؤْمِنٌ فِيْ شِعْبٍ مِنَ الشِّعَابِ يَعْبُدُ اللهَ وَيَدَعُ النَّاسَ مِنْ شَرِّهِ.

৩. আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একজন লোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট এসে জিজ্ঞেস করল, মানুষের মধ্যে কে উত্তম? রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, সেই মুমিন যে নিজ জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। সে আবার জিজ্ঞেস করল, অতঃপর কে উত্তম? তিনি বললেন, অতঃপর সেই মুমিন যে আল্লাহর ভয়ে পাহাড়ের কোন গুহায় অবস্থান নিয়ে আল্লাহর ইবাদত করে এবং স্বীয় অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে নিরাপদ রাখে’।[৩]
----
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ تَضَمَّنَ اللهُ لِمَنْ خَرَجَ فِيْ سَبِيْلِهِ لَا يُخْرِجُهُ إِلَّا جِهَادٌ فِيْ سَبِيْلِيْ وَإِيْمَانٌ بِيْ وَتَصْدِيْقٌ بِرُسُلِيْ فَهُوَ ضَامِنٌ أَنْ أُدْخِلَهُ الْجَنَّةَ أَوْ أَرْجِعَهُ إِلَى مَنْزِلِهِ الَّذِيْ خَرَجَ مِنْهُ نَائِلًا مَا نَالَ مِنْ أَجْرٍ أَوْ غَنِيْمَةٍ وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ مَا مِنْ كَلْمٍ يُكْلَمُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ إِلَّا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ كَهَيْئَتِهِ يَوْمٍ كُلِمَ لَوْنُهُ لَوْنُ دَمٍ وَرِيْحُهُ مِسْكٌ وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى الْمُسْلِمِيْنَ مَا قَعَدْتُ خِلَافَ سَرِيَّةٍ تَغْزُوْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ أَبَدًا وَلَكِنْ لَا أَجِدُ سَعَةً فَأَحْمِلَهُمْ وَلَا يَجِدُوْنَ سَعَةً وَيَشُقُّ عَلَيْهِمْ أَنْ يَتَخَلَّفُوْا عَنِّيْ وَالَّذِيْ نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَوَدِدْتُ أَنْ أَغْزُوْ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَأُقْتَلُ ثُمَّ أَغْزُوْ فَأُقْتَلُ ثُمَّ أَغْزُوْ فَأُقْتَلُ

৪. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তা‘আলা সে ব্যক্তির দায়িত্ব স্বহস্তে তুলে নিয়েছেন যে ব্যক্তি তাঁরই রাস্তায় ঘর থেকে বের হয়। আমারই রাস্তায় জিহাদ, আমার প্রতি ঈমান এবং আমার রাসূলের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসই তাকে ঘর থেকে বের করে তখন আমারই যিম্মায় বর্তায় যে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেব নতুবা সে তার যে বাসস্থান থেকে বেরিয়েছিল, তার প্রাপ্য সাওয়াব গনীমতসহ তাকে সেখানে ফিরিয়ে আনব। কসম সে পবিত্র সত্তার যার হাতে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর প্রাণ! আল্লাহ তা‘আলার পথে যে ব্যক্তি যে পরিমাণই যখম হয় না কেন, ক্বিয়ামতের দিন সে ঠিক যখম অবস্থায়ই আসবে; তার বর্ণ হবে রক্ত বর্ণ আর ঘ্রাণ হবে কস্তুরীর। কসম সে পবিত্র সত্তার যার হাতে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর প্রাণ! যদি মুসলিমদের জন্য কষ্টকর না হতো তবে আমি কখনো আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের অভিযানে লিপ্ত দলে যোগদান না করে ঘরে বসে থাকতাম না। কিন্তু আমার কাছে এমন সামর্থ্য নেই যে, যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেন তাঁদের সকলকে বাহন দান করব, আর তাঁদের নিজেদেরও সে সঙ্গতি নেই (যে, নিজেরাই নিজেদের বাহন নিয়ে বের হবে)। আর তাদের জন্যে এটা খুবই কষ্টকর হবে যে, (আমি যুদ্ধে বেরোবার পর আমার সঙ্গে না গিয়ে) তারা পিছনে পড়ে থাকবে। কসম সে পবিত্র সত্তার যার হাতে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর প্রাণ! আমার একান্ত ইচ্ছা হয় আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করি আর তাতে শহীদ হই, তারপর আবার জিহাদ করি, আবারও শহীদ হই, আবার জিহাদ করি, আবারও শহীদ হই।[৪]
----
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَيْضًا قَالَ قِيْلَ لِلنَّبِيِّ ﷺ مَا يَعْدِلُ الْجِهَادَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ؟ قَالَ لَا تَسْتَطِيْعُوْنَهُ قَالَ فَأَعَادُوْا عَلَيْهِ مَرَّتَيْنِ أَوْ ثَلَاثًا كُلُّ ذَلِكَ يَقُوْلُ لَا تَسْتَطِيْعُوْنَهُ وَقَالَ فِيْ الثَّالِثَةِ مَثَلُ الْمُجَاهِدِ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ كَمَثَلِ الصَّائِمِ الْقَائِمِ الْقَانِتِ بِآيَاتِ اللهِ لَا يَفْتُرُ مِنْ صِيَامٍ وَلَا صَلَاةٍ حَتَّى يَرْجِعَ الْمُجَاهِدُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ تَعَالَى.

৫. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একদা নবী করীম (ﷺ)-কে জিজ্ঞেস করা হল, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের তুল্য আর কী আছে? তিনি বললেন, কেউ তা লাভ করতে পারবে না। রাবী বলেন, প্রশ্নকারীরা কথাটা দু’বার বা তিনবার পুনরাবৃত্তি করলেন। প্রত্যেকবারই তিনি বললেন, কেউ তা পারবে না। তৃতীয়বার তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর দৃষ্টান্ত হচ্ছে অবিরাম ছিয়াম পালনকারী, কিয়ামকারী, ছালাতে দ-ায়মান, আল্লাহর আয়াতসমূহের পূর্ণ অনুগত, ছিয়ামে বা ক্বিয়ামে যে ক্লান্তিবোধ করে না (এমনভাবে ইবাদত করতে থাকে) যতক্ষণ না আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ তা থেকে প্রত্যাবর্তন করে।[৫]
----
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ إِنَّ فِيْ الْجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ أَعَدَّهَا اللهُ لِلْمُجَاهِدِيْنَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ

৬. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে ১০০ টি মর্যাদার স্তর প্রস্তুত রেখেছেন। দু’টি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দুরত্বের সমান।[৬]
----
وَعَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ مَنْ رَضِيَ بِاللهِ رَبًّا وَبِالْإِسْلَامِ دِيْنًا وَبِمُحَمَّدٍ رَسُوْلًا وَجَبَتْ لَهُ الْجَنَّةُ فَعَجِبَ لَهَا أَبُوْ سَعِيْدٍ فَقَالَ أَعِدْهَا عَلَيَّ يَا رَسُوْلَ اللهِ ﷺ فَأَعَادَهَا عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ وَأُخْرَى يَرْفَعُ اللهُ بِهَا الْعَبْدَ مِائَةَ دَرَجَةٍ فِيْ الْجَنَّةِ مَا بَيْنَ كُلِّ دَرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ قَالَ وَمَا هِيَ يَا رَسُوْلَ الله ﷺ؟ قَالَ الْجِهَادُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ

৭. আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে প্রতিপালক হিসাবে, ইসলামকে দ্বীন হিসাবে এবং মুহাম্মাদ (ﷺ)-কে রাসূল হিসাবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নেয়, তার জন্য জান্নাত অবধারিত। এই কথাগুলো শ্রবণ করে আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) অত্যধিক আনন্দিত হয়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! উপরিউক্ত কথাটি আমার সামনে পুনরাবৃত্তি করুন; রাসূলুল্লাহ (ﷺ) পুনরায় তা বললেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, এছাড়া আরও একটি বস্তু আছে, যার দ্বারা আল্লাহ তাঁর বান্দাকে জান্নাতের মধ্যে একশ’ গুণ উচ্চাসনের মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন। যার  প্রতিটি স্তরের ব্যবধান আসমান ও যমীনের দুরত্বের সমান। আবূ সাঈদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! ঐ বস্তুটি কি? তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ।[৭]
----
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ قَالَ ثَلَاثَةٌ حَقٌّ عَلَى اللهِ عَوْنُهُمْ الْمُجَاهِدُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ وَالْمُكَاتَبُ الَّذِيْ يُرِيْدُ الْأَدَاءَ وَالنَّاكِحُ الَّذِيْ يُرِيْدُ الْعَفَافَ

৮. আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, তিন ব্যক্তিকে সাহায্য করা আল্লাহর হক্ব। ১. ‘মুকাতাব’ যে দাস তার মুক্তিপণ আদায় করতে চায় ২. বিবাহকারী, যে চরিত্রকে রক্ষা করতে চায় এবং ৩. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী অর্থাৎ মুজাহিদ।[৮]
----
وَعَنْ فَضَالَةَ بْنَ عُبَيْدٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ أَنَا زَعِيْمٌ وَالزَّعِيْمُ الْحَمِيْلُ لِمَنْ آمَنَ بِيْ وَأَسْلَمَ وَهَاجَرَ بِبَيْتٍ فِيْ رَبَضِ الْجَنَّةِ وَبِبَيْتٍ فِيْ وَسَطِ الْجَنَّةِ وَأَنَا زَعِيْمٌ لِمَنْ آمَنَ بِيْ وَأَسْلَمَ وَجَاهَدَ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ بِبَيْتٍ فِيْ رَبَضِ الْجَنَّةِ وَبِبَيْتٍ فِيْ وَسَطِ الْجَنَّةِ وَبِبَيْتٍ فِيْ أَعْلَى غُرَفِ الْجَنَّةِ فَمَنْ فَعَلَ ذَلِكَ فَلَمْ يَدَعْ لِلْخَيْرِ مَطْلَبًا وَلَا مِنَ الشَّرِّ مَهْرَبًا يَمُوْتُ حَيْثُ شَاءَ أَنْ يَمُوْتَ

৯. ফাযালা ইবনু উবায়দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, আমি সে ব্যক্তির যামিন হলাম, যে আমার প্রতি ঈমান আনল এবং ইসলাম গ্রহণ করল এবং হিজরত করল, এমন একটি ঘরের, যা জান্নাতের আঙ্গিনায় (বহির্ভাগে) হবে, আর একটি ঘরের, যা জান্নাতের মধ্যভাগে। আর আমি যামিন হলাম ঐ ব্যক্তির জন্য, যে আমার প্রতি ঈমান আনয়ন করেছে এবং ইসলাম গ্রহণ করেছে এবং জিহাদ করেছে আল্লাহর রাস্তায় এমন ঘরের, যা জান্নাতের বহির্ভাগে এবং একটি ঘরের, যা জান্নাতের মধ্যভাগে হবে এবং একটি ঘরের, যা জান্নাতের কক্ষসমূহের উপরিভাগে হবে। সে যেখানে কল্যাণের সন্ধান পায়, সেখান থেকে কল্যাণ সন্ধান করবে এবং মন্দ থেকে রক্ষার জন্য যেখানে ইচ্ছা পলায়ন করবে। সে যেখানে ইচ্ছা মৃত্যুবরণ করুক, (জান্নাত তার জন্য অবধারিত)।[৯]
----
وَعَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ جِيءَ بِأَبِيْ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ وَقَدْ مُثِّلَ بِهِ وَوُضِعَ بَيْنَ يَدَيْهِ فَذَهَبْتُ أَكْشِفُ عَنْ وَجْهِهِ فَنَهَانِيْ قَوْمِيْ فَسَمِعَ صَوْتَ صَائِحَةٍ فَقِيْلَ ابْنَةُ عَمْرٍو أَوْ أُخْتُ عَمْرٍو فَقَالَ لِمَ تَبْكِيْ أَوْ لَا تَبْكِيْ مَا زَالَتِ الْمَلَائِكَةُ تُظِلُّهُ بِأَجْنِحَتِهَا

১০. জাবির ইবনু আব্দিল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, উহুদের যুদ্ধ শেষে আমার পিতাকে (তার লাশ) নবী করীম (ﷺ)-এর নিকট অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা অবস্থায় আনা হল এবং তাঁর সামনে রাখা হল। আমি তাঁর চেহারা খুলতে চাইলাম আমার গোত্রের লোকেরা আমাকে নিষেধ করল। এমন সময় তিনি কোন বিলাপকারিণীর বিলাপ ধ্বনি শুনতে পেলেন। বলা হল, সে ‘আমরের কন্যা বা ভগ্নি। অতঃপর নবী করীম (ﷺ) বললেন, সে কাঁদছে কেন? অথবা বলেছিলেন, সে যেন না কাঁদে। ফেরেশতাম-লী তাকে ডানা দ্বারা ছায়াদান করছেন।[১০]

وَعَنْ أَبِيْ بَكْرِ بْنِ أَبِيْ مُوْسَى الْأَشْعَرِيِّ قَالَ سَمِعْتُ أَبِيْ وَهُوَ بِحَضْرَةِ الْعَدُوِّ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ إِنَّ أَبْوَابَ الْجَنَّةِ تَحْتَ ظِلَالِ السُّيُوْفِ فَقَامَ رَجُلٌ رَثُّ الْهَيْئَةِ فَقَالَ يَا أَبَا مُوْسَى آنْتَ سَمِعْتَ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ يَقُوْلُ هَذَا؟ قَالَ نَعَمْ قَالَ فَرَجَعَ إِلَى أَصْحَابِهِ فَقَالَ أَقْرَأُ عَلَيْكُمُ السَّلَامَ ثُمَّ كَسَرَ جَفْنَ سَيْفِهِ فَأَلْقَاهُ ثُمَّ مَشَى بِسَيْفِهِ إِلَى الْعَدُوِّ فَضَرَبَ بِهِ حَتَّى قُتِلَ.

১১. আবূ বাকার ইবনু আবূ মূসা (রাহিমাহুমাল্লাহ) বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, তিনি একবার শত্রু বাহিনীর উপস্থিতিতে বললেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, জান্নাতের দরজাসমূহ তলোয়ারের ছায়াতলে রয়েছে। এ কথা শুনে একজন জীর্ণশীর্ণ প্রকৃতির লোক দাঁড়িয়ে বলল, হে আবূ মূসা! আপনি কি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে এ কথা বলতে শুনেছেন? আবূ মূসা বললেন, হ্যাঁ। রাবী বলেন, অতঃপর লোকটি তার সাথীদের নিকট এসে বলল, আমি তোমাদেরকে সালাম জানাচ্ছি। এ কথা বলে সে তলোয়ারের খাপ ভেঙ্গে ফেলল এবং তলোয়ার নিয়ে শত্রুদের দিকে অগ্রসর হল। তা দ্বারা অনেক শত্রুকে হত্যা করল এবং শেষে নিজেও শত্রুদের আঘাতে শহীদ হল।[১১]

(ইনশাআল্লাহ চলবে)

* এম.ফিল গবেষক, আরবী বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
[১]. ছহীহ বুখারী, হা/২৬, ছহীহ মুসলিম, হা/৮৩; মিশকাত, হা/২৫০৬।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮১০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০৪; মিশকাত, হা/৩৮১৪।
[৩]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৮৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৮।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৭৬।
[৫]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৮৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৭৮।
[৬]. ছহীহ বুখারী, হা/২৭৯০; মিশকাত, হা/৩৭৮৭।
[৭]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৮৪; মিশকাত, হা/৩৮৫১।
[৮]. তিরমিযী, হা/১৬৫৫; নাসাঈ, হা/৩১২০; ইবনু মাজাহ, হা/২৫১৮; মিশকাত, হা/৩০৮৯, সনদ হাসান।
[৯]. নাসাঈ, হা/৩১৩৩; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৪৬১৯, সনদ ছহীহ।
[১০]. ছহীহ বুখারী, হা/২৮১৬; ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৭১।
[১১]. ছহীহ মুসলিম, হা/১৯০২; মিশকাত, হা/৩৮৫২।




প্রসঙ্গসমূহ »: আমল
ফাযায়েলে আমল : ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (৩য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১১ম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছাদাক্বাহ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ক্রয়-বিক্রয়ের ফযীলত (৪র্থ কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে জিহাদ - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে তাওহীদ (২য় কিস্তি) - আল-ইখলাছ ডেস্ক
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে ছালাত (১৪তম কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : আহার ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : কুরআন তেলাওয়াতের ফযীলত - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
আত্মীয়তার সম্পর্ক, সদাচরণ ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ
ফাযায়েলে আমল : ফাযায়েলে জিহাদ (৩য় কিস্তি) - অনুবাদ : আব্দুল্লাহ বিন খোরশেদ

ফেসবুক পেজ