শিক্ষার্থীর শিষ্টাচার
-শায়খ ড. ছালেহ ইবনু ফাওযান আল-ফাওযান
-অনুবাদ : জাহিদ বিন মাসঊদ*
(শেষ কিস্তি)
প্রশ্ন : কতগুলো প্রশ্ন রয়েছে যেগুলো কোন ব্যক্তি বা দলের সাথে সম্পৃক্ত। আমরা আপনার কাছে ঐ সকল ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ চাই, যারা জ্ঞান অন্বেষণের প্রারম্ভে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে কথাবার্তার মাধ্যমে তাদের শিক্ষাজীবন শুরু করে।
উত্তর : এগুলো ফিতনা। মানুষকে নিয়ে মন্তব্য করা, তাদের দোষ-ত্রুটি এবং ভুল-ভ্রান্তি অন্বেষণে ব্যস্ত থাকা নিঃসন্দেহে ফিতনার অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদেরকে এ বিষয়গুলো তাদের পূর্ণ জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ফলশ্রুতিতে তারা মানুষকে ঘৃণা করতে থাকে এবং ইলমে দ্বীন অর্জনে অনিহা প্রকাশ করে। সুতরাং এগুলো ফিতনা এবং এ সমস্ত কাজ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। যুবকদের উপর অপরিহার্য যে, তারা যেন জ্ঞান অন্বেষণের প্রতি আগ্রহী হয় এবং মানুষের কথার দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে। কেননা এগুলো দু’ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে।
প্রথমতঃ জ্ঞান অন্বেষণ করা তার কাছে সবচেয়ে ঘৃণ্য কাজে পরিণত হয় এবং তাকে তা যথাযথভাবে অর্জনে বিরত রাখে। দ্বিতীয়তঃ এই কাজগুলো করার মাধ্যমে সে পাপী হয়। কেননা যখন কারো ব্যস্ততা মানুষের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণে সীমাবদ্ধ থাকে, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার ইলমে দ্বীন অন্বেষণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় এবং পাপীষ্ঠ হয়। অথচ সে অনুগ্রহপ্রার্থী। সুতরাং তার উচিত হল, এই ধরনের অপ্রীতিকর মন্তব্য এবং গুজবের প্রতি দৃষ্টিপাত না করে জ্ঞান অন্বেষণে মনোযোগী হওয়া।
-------
প্রশ্ন : আমি নির্ধারিত মূল্যে স্বর্ণ ক্রয় করেছিলাম। অতঃপর এক বছর পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পরে মূল্যের তারতম্য ঘটে। সুতরাং আমি কি বর্তমান মূল্যানুযায়ী যাকাত আদায় করব, না-কি যে মূল্যে ক্রয় করেছিলাম সে অনুযায়ী যাকাত আদায় করব?
উত্তর : যদি তুমি ব্যবসার উদ্দেশ্যে স্বর্ণ ক্রয় কর এবং বিক্রয়ের পূর্বেই একবছর পূর্ণ হয়ে যায়, তাহলে সেটা ক্রয়কৃত মূল্যের কম, বেশি অথবা সমান হোক না কেন বর্তমান মূল্যানুযায়ী যাকাত আদায় কর। এই ফৎওয়াটা কেবল ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রে যোগ্য, যে ব্যবসার উদ্দেশ্যে স্বর্ণ ক্রয় করে। পক্ষান্তরে যদি কেউ সম্পত্তি হিসাবে স্বর্ণ ক্রয় করে, তাহলে সে স্বর্ণের নির্ধারিত যাকাত দিবে। অর্থাৎ সে চল্লিশ ভাগের এক ভাগ সমান স্বর্ণ যাকাত দিবে।
-------
প্রশ্ন : মুসাফিরদের জন্য চার রাক‘আত ছালাত কছর করার বৈধতা রয়েছে। তবে আমি পূর্ণ ছালাত আদায় করতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি। সুতরাং এক্ষেত্রে কি আমি পাপী হব না উত্তম কোন কিছু পরিত্যাগকারী হিসাবে গণ্য হব?
উত্তর : বৈধতাকে গ্রহণ করে মুসাফির অবস্থায় তোমার জন্য ছালাত কছর করাই উত্তম। মহান আল্লাহ বৈধতাকে ভালোবাসেন যেমন পাপকে ঘৃণা করেন। কিন্তু যদি কছর ছালাত পূর্ণ আদায় কর, তাহলে তুমি উত্তম কোন কিছুকে ছেড়ে দিলে; তবে তোমার ছালাত বিশুদ্ধ হবে।
-------
প্রশ্ন : বিতরের ছালাত ঘুমানোর পূর্বে আদায় করা উত্তম, না-কি ফজরের পূর্বে ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে আদায় করা উত্তম?
উত্তর : যদি তুমি নিশ্চিত হও যে, ফজরের পূর্বেই জাগ্রত হয়ে বিতরের ছালাত আদায়ে সক্ষম হবে, তাহলে পরেই আদায় কর। কেননা বিতরের ছালাত শেষ রাতে আদায় করাই উত্তম। পক্ষান্তরে যদি তুমি নিশ্চিত হতে না পার, তাহলে ঘুমানোর পূর্বে প্রথম রাতেই আদায় কর।
-------
প্রশ্ন : শিক্ষার্থীদের দ্রুত বিবাহ সম্পন্ন করা প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন রয়েছে। এমন কতিপয় সালাফ আছেন, যারা জ্ঞান অন্বেষণের জন্য দেরি করে বিয়ে করেছে, তাদের বিষয়ে আপনার মতামত কী? আর বর্তমান যুগ তো ফিতনার যুগে পরিণত হয়েছে। সুতরাং শিক্ষার্থীরা যখন দেরি করে বিবাহ সম্পন্ন করবে, তখন তাদের ফেতনায় পড়ার আশঙ্কা থেকেই যায়। এ ব্যাপারে তাদের জন্য আপনার নাছীহাহ কী?
উত্তর : প্রথমতঃ বিয়ে করলে পড়ালেখার কোন ক্ষতি হয় না। বরং এটা তোমাকে জ্ঞান অন্বেষণে সাহায্য করবে এবং আগ্রহ যোগাবে। কেননা তুমি স্ত্রীর সাথে আনন্দে ও প্রফুল্ল অবস্থায় দিন অতিবাহিত করছ।
তবে জানা দরকার বিয়ে করা ওয়াজিব না মুস্তাহাব? এটা অবস্থার উপর নির্ভর করে। যখন তোমার ফিতনায় পড়ার আশঙ্কা থাকে, তাহলে ফিতনা থেকে বাঁচার জন্য বিয়ে করা ওয়াজিব। আর যখন তোমার ফিতনায় পড়ার আশঙ্কা নেই তখন বিয়ে করা মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়।
-------
প্রশ্ন : ঘরের মধ্যে কুরআনের আয়াত ঝুলানোর বিধান কী?
উত্তর : এ ধরনের কাজ সালাফগণ করেননি। তারা কুরআনের আয়াত ঘরে, দেয়ালে, গাড়িতে কিংবা যানবাহনে ঝুলিয়ে রাখেননি। দেখা যায় কতিপয় ব্যক্তি এই আয়াতগুলো (الحروز) তথা তাবীয আকারে বাড়িতে সংরক্ষণ করে। যেটা এক প্রকার তাবীযেরই অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং এটা বৈধ নয়। কাজেই আমার মনে হয় এ ধরনের কাজ পরিত্যাগ করার মাধ্যমে অধিক সর্তকতা অবলম্বন করাই শ্রেয়।
-------
প্রশ্ন : জেদ্দায় অবস্থানরত ব্যক্তিরা কি মসজিদে হারামের স্থায়ী বাসিন্দা বলে গণ্য হবে?
উত্তর : জেদ্দাবাসী মসজিদে হারামের স্থায়ী বাসিন্দাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা তারা হারাম এরিয়ার বাহিরের অধিবাসী।
-------
প্রশ্ন : জেদ্দাবাসীদের জন্য (طواف الوداع) তথা বিদায়ী ত্বাওয়াফ এর বিধান কী?
উত্তর : তারাও (طواف الوداع) অর্থাৎ বিদায়ী ত্বাওয়াফ করবে। কেননা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাজীদের এমন নির্দেশ দিয়েছেন যে, তাদের মধ্যে কেউ যেন বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ না করা অবধি প্রস্থান না করে (ছহীহ মুসলিম, হা/১৩২৭)। সুতরাং জেদ্দাবাসী হোক অথবা অন্য কেউ সকলেই বিদায়ী ত্বাওয়াফ করবে।
-------
প্রশ্ন : জেদ্দাবাসী যদি হজ্জে তামাত্তুর নিয়ত করে এবং (عمرة التمتع) বা ওমরাহ সম্পন্ন করে, তাহলে তাদের জন্য কি জেদ্দায় ফিরে যাওয়া বৈধ হবে?
উত্তর : জেদ্দায় ফিরে যাওয়া তাদের জন্য বৈধ হবে। তবে তাদের পক্ষ থেকে তামাত্তুর ফিদিয়া রহিত হবে কিনা এ বিষয়ে ইখতিলাফ হয়েছে? প্রাধান্যযোগ্য মত হল, তা রহিত হবে না। কেননা বর্তমানে জেদ্দা কছরের ব্যবধানের অন্তর্ভুক্ত নয়। আর যে মতের ভিত্তিতে ফিদিয়া রহিত হয়ে যায়, সেই মত হল- ‘যদি হজ্জ এবং ওমরার মাঝে কছরের ব্যবধান থাকে’। আর বর্তমানে জেদ্দা কছরের ব্যবধানের অন্তর্ভুক্ত নয়। সুতরাং তামাত্তু অবশিষ্ট থাকবে এবং তাদেরকে ফিদিয়া দিতে হবে। কাজেই তাদের জন্য হজ্জ এবং ওমরার মাঝে জেদ্দায় ফিরে আসার বৈধতা রয়েছে। এখানে কোন বিধিনিষেধ নেই।
* অধ্যয়নরত : ছানাবিয়াহ ২য় বর্ষ, দারুল হুদা ইসলামী কমপ্লেক্স, বাউসা হেদাতীপাড়া, বাঘা, রাজশাহী।