মসজিদে করণীয় ও বর্জনীয় কাজসমূহ
-মুহাম্মাদ ফাহিমুল ইসলাম*
ভূমিকা
‘মসজিদ’ শব্দের অর্থ সিজদা করার স্থান বা জায়গা’।[১] টয়লেট, গোসলখানা এবং কবরস্থান ব্যতীত পৃথিবীর যে কোন স্থানে মানুষ সিজদা করে সেটাই তার জন্য ‘মসজিদ’। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কয়েকটি জিনিস গণীমত হিসাবে দেয়া হয়েছে, যা অন্য কোন নবীকে দেয়া হয়নি। তন্মধ্যে মসজিদ অন্যতম। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, جُعِلَتْ لِىَ الْأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُوْرًا فَأَيُّمَا رَجُلٍ مِنْ أُمَّتِىْ أَدْرَكَتْهُ الصَّلَاةُ فَلْيُصَلِّ ‘সমস্ত যমীনকেই আমার জন্য পবিত্র ও ছালাত আদায়ের উপযোগী করা হয়েছে। কাজেই আমার উম্মতের যে কোন লোক ওয়াক্ত হলেই ছালাত আদায় করতে পারবে’।[২]
তবুও আমরা পৃথিবীতে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করার লক্ষ্যে নির্মিত ঘরকেই ‘মসজিদ’ হিসাবে গণ্য করে থাকি। এই মসজিদকে সম্মান প্রদর্শনের নিমিত্তে এমন কিছু কাজ রয়েছে, যা সেখানে করা ঠিক নয়। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনার প্রয়াস পাব, ইনশাআল্লাহ।
১. মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় দু‘আ পাঠ না করা
মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময় নির্ধারিত দু‘আ পড়া সুন্নাত। আবূ উসাইদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে, তখন সে যেন বলে,
اَللّٰهُمَّ افْتَحْ لِىْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
উচ্চারণ : ‘আল্ল-হুম্মাফ্তাহলী আব্ওয়া-বা রহমাতিকা’।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আপনি আপনার করুণার দরজা আমার জন্য খুলে দিন’। আর যখন তোমাদের কেউ মসজিদ থেকে বের হয়, তখন সে যেন বলে,
اَللّٰهُمَّ إِنِّىْ أَسْأَلُكَ مِنْ فَضْلِكَ
উচ্চারণ : ‘আল্ল-হুম্মা ইন্নী আস্আলুকা মিং ফায্লিক’।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি’।[৩]
২. তাহিইয়্যাতুল মসজিদ ছালাত আদায় না করা
মসজিদে প্রবেশ করে বসার পূর্বে দু’রাক’আত ছালাত আদায় করা সুন্নাত, যাকে তাহিইয়্যাতুল মসজিদ বলে। অথচ বিষয়টি অধিকাংশ মানুষ অবহেলা করে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلَا يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّىَ رَكْعَتَيْنِ ‘তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দু’রাক‘আত ছালাত আদায় করার পূর্বে বসবে না’।[৪]
৩. আযানের পরে মসজিদ থেকে বের হওয়া
বিনা ওযরে আযানের পরে মসজিদ থেকে বের হওয়া ঠিক নয়। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, إِذَا أَذَّنَ الْمُؤَذِّنُ فَلَا يَخْرُجْ أَحَدٌ حَتَّى يُصَلِّيَ ‘যখন মুওয়াযযিন আযান দেয়, তখন কেউ যেন ছালাত আদায় না করে মসজিদ থেকে বের না হয়’।[৫]
৪. মসজিদকে রাস্তা হিসাবে গ্রহণ না করা
তাসবীহ-তাহলীল, যিকির-আযকার ও ইবাদত ব্যতীত কেবল চলাচলের জন্য মসজিদকে রাস্তা হিসাবে গ্রহণ করতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিষেধ করেছেন। তিনি বলেন, لَا تَتَّخِذُوْا الْمَسَاجِدَ طُرُقًا إِلَّا لِذِكْرٍ أَوْ صَلَاةٍ ‘তোমরা মসজিদকে রাস্তা হিসাবে গ্রহণ কর না। সেটা কেবল যিকির ও ছালাতের জন্য’।[৬]
৫. মসজিদে কণ্ঠস্বর উঁচু না করা ও শোরগোল না করা
আল্লাহর নিকট সর্বাধিক পসন্দনীয় স্থান হল মসজিদ এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা হল বাজার। সুতরাং মসজিদে কোন ধরনের হৈচৈ করা যাবে না। এটি হচ্ছে ইবাদতের জায়গা, এখানে ইবাদত ছাড়া অন্য কিছু করা উচিত নয়। আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
اِعْتَكَفَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِى الْمَسْجِدِ فَسَمِعَهُمْ يَجْهَرُوْنَ بِالْقِرَاءَةِ فَكَشَفَ السِّتْرَ وَقَالَ أَلَا إِنَّ كُلَّكُمْ مُنَاجٍ رَبَّهُ فَلَا يُؤْذِيَنَّ بَعْضُكُمْ بَعْضًا وَلَا يَرْفَعْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ فِى الْقِرَاءَةِ أَوْ قَالَ فِى الصَّلَاة
‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মসজিদে ই‘তিকাফকালে ছাহাবীদেরকে উচ্চৈঃস্বরে ক্বিরাআত পড়তে শুনে পর্দা সরিয়ে বললেন, জেনে রেখ! তোমাদের প্রত্যেকেই স্বীয় রবের সাথে গোপনে মুনাজাতে রত আছ। কাজেই তোমরা পরস্পরকে কষ্ট দিও না এবং পরস্পরের সামনে ক্বিরাআতে অথবা ছালাতে আওয়ায উঁচু করো না’।[৭]
আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) ও আব্দুল্লাহ ইবনু আনাস আল-বায়াযী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তারা বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
خَرَجَ عَلَى النَّاسِ وَهُمْ يُصَلُّوْنَ وَقَدْ عَلَتْ أَصْوَاتُهُمْ بِالْقِرَاءَةِ فَقَالَ إِنَّ الْمُصَلِّيَ يُنَاجِيْ رَبَّهُ فَلْيَنْظُرْ بِمَا يُنَاجِيْهِ بِهِ وَلَا يَجْهَرْ بَعْضُكُمْ عَلَى بَعْضٍ بِالْقُرْآنِ
‘রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একদল লোকের নিকট আগমন করলেন, সে সময় তারা ছালাত আদায় করছিল এবং উচ্চকন্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করছিল। তখন তিনি বললেন, ছালাত আদায়কারী ছালাতরত অবস্থায় তার প্রতিপালকের সাথে মুনাজাত করে। তাই তার উচিত সে কিরূপে মুনাজাত করে তার প্রতি লক্ষ্য রাখা। অতএব একজনের কুরআন তেলাওয়াতের শব্দ অন্যজনের কানে যেন না পৌঁছে’।[৮]
অনুরূপভাবে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, গল্প-গুজব, হৈচৈ থেকে বিরত থাকা যরূরী। সায়িব ইবনু ইয়াযীদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মসজিদে নববীতে দাঁড়িয়েছিলাম। এমন সময় একজন লোক আমার দিকে একটা কাঁকর নিক্ষেপ করল। আমি তাঁর দিকে তাকিয়ে দেখলাম যে, তিনি ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু)। তিনি বললেন, যাও, এ দু’জনকে আমার নিকট নিয়ে এসো। আমি তাদেরকে নিয়ে তাঁর নিকটে আসলাম। তিনি বললেন, তোমরা কারা? অথবা তিনি বললেন, তোমরা কোথাকার লোক? তারা বলল, আমরা ত্বায়েফের অধিবাসী। তিনি বললেন,
لَوْ كُنْتُمَا مِنْ أَهْلِ الْمَدِيْنَةِ لَأَوْجَعْتُكُمَا تَرْفَعَانِ أَصْوَاتَكُمَا فِى مَسْجِدِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
‘তোমরা যদি এই মদীনার বাসিন্দা হতে তবে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মসজিদে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলার কারণে আমি দু’জনকেই কঠোর শাস্তি দিতাম’।[৯]
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,لِيَلِيَنِيْ مِنْكُمْ أُوْلُو الْأَحْلَامِ وَالنُّهَى ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ، ثَلَاثًا وَإِيَّاكُمْ وَهَيْشَاتِ الْأَسْوَاقِ ‘তোমাদের মধ্যে যারা বয়স্ক ও বুদ্ধিমান তারাই যেন আমার নিকটে দাঁড়ায়, অতঃপর যারা তাদের নিকটবর্তী। তিনি একথা তিনবার বললেন। অতঃপর বললেন, সাবধান! মসজিদে বাজারের ন্যায় হৈচৈ করা হতে বেঁচে থাক’।[১০] কিন্তু অপ্রিয় হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে অনেক মসজিদে দেখা যায়, এমন সব লোকেরা ইমামের কাছাকাছি স্থানে অবস্থান করেন যারা ইমামের কোন সমস্যা হলে তার মোকাবিলা করার জ্ঞান রাখে না। মসজিদে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা, গল্প-গুজব, হৈচৈ থেকে বেঁচে থাকা আবশ্যক। এমনকি উচ্চৈঃস্বরে কুরআন পাঠ করা থেকে বিরত থাকতে হবে।[১১]
৬. অপবিত্র অবস্থায় মসজিদে অবস্থান না করা
গোসল ফরয হওয়ার পর অর্থাৎ জুনুবী, হায়েয এবং নেফাস অবস্থায় মসজিদে অবস্থান করা সমীচীন নয়।
৭. মসজিদকে অপরিচ্ছন্ন করা থেকে বিরত থাকা
ময়লা-আবর্জনা ও থুথু ফেলে মসজিদ নোংরা করা নিষেধ। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মসজিদে ছিলাম, এসময় এক বেদুইন আগমন করল এবং মসজিদে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে লাগল। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবীগণ বলে উঠলেন, থাম! থাম! তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তার পেশাব বন্ধ কর না, বরং তাকে তার অবস্থায় ছেড়ে দাও। সুতরাং তাঁরা তাকে ছেড়ে দিলেন যতক্ষণ পর্যন্ত তার পেশাব শেষ না হল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে ডাকলেন এবং বললেন,
إِنَّ هَذِهِ الْمَسَاجِدَ لَا تَصْلَحُ لِشَيْءٍ مِّنْ هَذَا الْبَوْلِ وَالْقَذِرِ إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّوَجَلَّ وَالصَّلَاةِ وَقِرَاءَةِ الْقُرْآنِ
‘দেখ এই মসজিদসমূহ পেশাব ও নোংরা করার জায়গা নয়। এটা শুধু আল্লাহর যিকির, ছালাত ও কুরআন পাঠের জন্য’। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদের মধ্যে একজনকে হুকুম দিলেন। সে এক বালতি পানি আনল এবং তার উপর ঢেলে দিল।[১২]
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ أَمَرَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبِنَاءِ المَسَاجِدِ فِي الدُّوْرِ وَأَنْ تُنَظَّفَ وَتُطَيَّبَ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাড়ায় পাড়ায় মসজিদ নির্মাণ করতে, তা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং সুগন্ধিযুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।[১৩]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ بَيْنَمَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَخْطُبُ يَوْمًا إِذْ رَأَى نُخَامَةً فِيْ قِبْلَةِ الْمَسْجِدِ فَتَغَيَّظَ عَلَى النَّاسِ ثُمَّ حَكَّهَا قَالَ وَأَحْسَبُهُ قَالَ فَدَعَا بِزَعْفَرَانٍ فَلَطَّخَهُ بِهِ وَقَالَ إِنَّ اللهَ قِبَلَ وَجْهِ أَحَدِكُمْ إِذَا صَلَّى فَلَا يَبْزُقْ بَيْنَ يَدَيْهِ
ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্ববাহ দানকালে মসজিদের ক্বিবলার দিকে কফ দেখতে পেয়ে তিনি লোকদের উপর অসন্তুষ্ট হন এবং পরে তিনি তা তুলে ফেলেন। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, পরে তিনি জাফরান আনিয়ে সেখানে তা লাগিয়ে দিয়ে বলেন, ‘ছালাত আদায়কালে মহান আল্লাহ তোমাদের সামনেই থাকেন। কাজেই ছালাত আদায়ের সময় কেউ যেন সামনে থু থু না ফেলে’।[১৪]
عَنْ أَبِيْ سَهْلَةَ السَّائِبِ بْنِ خَلَّادٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ أَحْمَدُ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنَّ رَجُلًا أَمَّ قَوْمًا فَبَصَقَ فِي الْقِبْلَةِ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَنْظُرُ فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِيْنَ فَرَغَ لَا يُصَلِّي لَكُمْ فَأَرَادَ بَعْدَ ذَلِكَ أَنْ يُصَلِّيَ لَهُمْ فَمَنَعُوْهُ وَأَخْبَرُوْهُ بِقَوْلِ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ ذَلِكَ لِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ نَعَمْ وَحَسِبْتُ أَنَّهُ قَالَ إِنَّكَ آذَيْتَ اللهَ وَرَسُوْلَهُ
আবূ সাহলা আস-সাইব ইবনু খাল্লাদ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত, ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিনি ছিলেন নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ছাহাবী। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের ইমামতিকালে ক্বিবলার দিকে থুথু ফেললে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা লক্ষ্য করলেন। লোকটি ছালাত শেষ করলে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (উপস্থিত লোকদেরকে উদ্দেশ্য করে) বললেন, এ ব্যক্তি তোমাদের ছালাত আদায় করাবে না (আর ইমামতি করবে না)। পরবর্তীতে লোকটি তাদের ইমামতি করতে চাইলে তারা তাকে নিষেধ করে এবং তার সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উক্তিও অবহিত করে। অতঃপর লোকটি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে এ বিষয়ে অবহিত করলে তিনি বললেন, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, আমার ধারণা, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ কথাও বলেছেন, ‘তুমি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দিয়েছ’।[১৫] আবূ যার (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী করীম (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,
عُرِضَتْ عَلَىَّ أُمَّتِىْ بِأَعْمَالِهَا حَسَنِهَا وَسَيِّئِهَا فَرَأَيْتُ فِىْ مَحَاسِنِ أَعْمَالِهَا الْأَذَى يُنَحَّى عَنِ الطَّرِيْقِ وَرَأَيْتُ فِىْ سَيِّئِ أَعْمَالِهَا النُّخَاعَةَ فِى الْمَسْجِدِ لَا تُدْفَنُ
‘আমার উম্মতের ভাল ও মন্দ কার্যাবলী আমার সামনে পেশ করা হলে, আমি তাদের ভাল কার্যাবলীর মধ্যে যাতায়াতের পথ থেকে তাদের কষ্টদায়ক বস্তু সরানোও অন্তর্ভুক্ত দেখতে পেলাম এবং তাদের নিকৃষ্ট কষ্টদায়ক বস্তুর মধ্যে মসজিদে থুথু ফেলাও অন্তর্ভুক্ত দেখতে পেলাম যা (মাটি দিয়ে) ঢেকে দেয়া হয়নি।[১৬]
আনাস ইবনু মালেক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, اَلْبُزَاقُ فِى الْمَسْجِدِ خَطِيْئَةٌ وَكَفَّارَتُهَا دَفْنُهَا ‘মসজিদে থুথু ফেলা পাপের কাজ। আর তার কাফ্ফারা হল তাকে মাটিতে পুঁতে দেয়া’।[১৭]
৮. সুগন্ধি মেখে ও বেপর্দা অবস্থায় মহিলাদের মসজিদে না আসা
মহিলারা মসজিদে গিয়ে ছালাত আদায় করতে পারে। তবে তাদের জন্য কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। যেমন- (ক) সুগন্ধি না মাখা। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,إِذَا شَهِدَتْ إِحْدَاكُنَّ الْمَسْجِدَ فَلَا تَمَسَّ طِيْبًا ‘তোমাদের মধ্যে কোন নারী মসজিদে গেলে সে যেন সুগন্ধি ব্যবহার না করে’।[১৮] (খ) বেপর্দা হয়ে না আসা এবং সৌন্দর্য প্রকাশ না করা (সূরা আন-নূর : ৩০; সূরা আল-আহযাব : ৩৩)।
(ইনশাআল্লাহ আগামী সংখ্যায় সমাপ্য)
* দাওরায়ে হাদীছ, মাদরাসা দারুল হাদীস সালাফিইয়াহ, পাঁচরুখী, আড়াইহাজার, নারায়ণগঞ্জ।
তথ্যসূত্র :
[১]. ড. মুহাম্মাদ ফজলুর রহমান, আল-মু‘জামুল ওয়াফী (ঢাকা : রিয়াদ প্রকাশনী, ১৯তম মুদ্রণ, ফেব্রুয়ারী ২০১৬ খ্রি.) পৃ. ৯৪১।
[২]. ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৫; তিরমিযী, হা/৩১৭; নাসাঈ, হা/৪৩২; ইবনু মাজাহ, হা/৫৬৭; মিশকাত, হা/৫৭৪৭।
[৩]. ছহীহ মুসলিম, হা/৭১৩; আবূ দাঊদ, হা/৪৬৫; নাসাঈ, হা/৭২৯; ইবনু মাজাহ, হা/৭৭২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৬৫৬; মিশকাত, হা/৭০৩।
[৪]. ছহীহ বুখারী, হা/১১৬৩; ছহীহ মুসলিম, হা/৭১৪; নাসাঈ, হা/৭৩০; ইবনু মাজাহ, হা/১০১৩; মুসনাদে আহমাদ, হা/২২৭০৫।
[৫]. শু‘আবুল ঈমান, হা/২৬০৩; ছহীহুল জামে‘, হা/২৯৭, সনদ ছহীহ।
[৬]. ত্বাবারাণী, আল-মু‘জামুল কাবীর, হা/১৩০৪১; আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/৩১; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১০০১; ছহীহুল জামে‘, হা/৭২১৫, সনদ হাসান।
[৭]. আবূ দাঊদ, হা/১৩৩২; মুসনাদে আহমাদ, হা/১১৯১৫; ছহীহ ইবনু খুযায়মাহ, হা/১১৬২; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৫৯৭, ১৬০৩, সনদ ছহীহ।
[৮]. মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯০৪৪; মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/২৬৪; মিশকাত হা/৮৫৬; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/১৬০৩।
[৯]. ছহীহ বুখারী, হা/৪৭০; মিশকাত, হা/৭৪৪।
[১০]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৩২; মিশকাত, হা/১০৮৯।
[১১]. সুনানুল কুবরা, হা/৮০৩৭; আল-মু‘জামুল আওসাত্ব, হা/২৩৬২; ছহীহুল জামে‘, হা/৩৭১৪।
[১২]. ছহীহ বুখারী, হা/২২১; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৫; মিশকাত, হা/৪৯২।
[১৩]. আবূ দাঊদ, হা/৪৫৫; তিরমিযী, হা/৫৯৪, সনদ ছহীহ।
[১৪]. ছহীহ বুখারী, হা/৭৫৩; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৪৭; আবূ দাউদ, হা/৪৭৯।
[১৫]. আবূ দাঊদ, হা/৪৮১, সনদ হাসান; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/১৬৩৬।
[১৬]. আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/২৩০; ইবনু মাজাহ, হা/৩৬৮৩, সনদ ছহীহ।
[১৭]. ছহীহ বুখারী, হা/৪১৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৫২; মিশকাত হা/৭০৮।
[১৮]. ছহীহ মুসলিম, হা/৪৪৩; নাসাঈ, হা/৫১২৯; মিশকাত, হা/১০৬০।